৬.
প্রাণ দিলো দেশপ্রেমিকেরা মুক্তি পাগল সেনা
স্বাধীন বাংলাদেশটি মোদের রক্ত দিয়ে কেনা।।
বাংলা মায়ের সন্তানেরা হয়ে একতা
যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনলো দেশের স্বাধীনতা
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, মানচিত্রে ঠিকানা।।
নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে মোদের স্বাধীন বাংলাদেশ
শস্যশ্যামল সবুজ ঘেরা মধুর পরিবেশ
সকল দেশের সাথে এ দেশ করছে লেনাদেনা।।
[রচনাকাল: ১০-১০-১৯৭৬]
৭.
লালনের একতারায়,
আর কানাইশীলের দোতারায়,
মনের কথা কয়, আমার ভাবের কথা কয়,
দেশের কথা কয়, বাংলাদেশের কথা কয়।।
বাংলাদেশের কৃষ্টিতে আর সৃষ্টিতে পাই
হাসনরাজা কালুশাহ ফকির আরো সিরাজ সাঁই,
দেশকে তারা ভালোবেসে,
বাউল গানের সুরে মিশে,
গানে গানে প্রাণে প্রাণে স্মৃতি হয়ে রয়।।
বানুশাহ আর বিজয় সরকার করতো গানের চাষ,
রাধারমণের মধুর গানের আছে ইতিহাস।
নাম না-জানা বাউলের গান,
শুনলে সবার জুড়ায় পরান,
মনসুর কয়, সে গানের কথা জানে বিশ্বময়।।
[রচনাকাল: ০১-০৩-১৯৯৪; সুরকার: জাহিদ মনসুর]
৮.
এইতো আমার দেশ, প্রাণের বাংলাদেশ
যে দেশে লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, গুণীর সমাবেশ।।
যে দেশে কবি নজরুল, জসীমউদ্দীন, হাসন, রাধারমণ,
কাব্য, গান, সাহিত্য দিয়ে ভরে সবার মন,
তারা বাংলা সংস্কৃতির বিকাশ করলো দেশ-বিদেশ।।
যে দেশে লালনের একতারা, কানাইশীলের দোতারায়,
আব্বাসউদ্দীন, আব্দুল আলীম কণ্ঠে সুর ছড়ায়,
সেই দেশেরই গুণের কথা বললে না হয় শেষ।।
[রচনাকাল: ১৮-০৯-১৯৮৮]
৯.
বাংলা দেশের মতো এমন দেশ এইতো কোথাও নাই,
বারো মাসে ছয়টি ঋতু যেথায় দেখতে পাই।।
গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি পেলে ফসলের বীজ বোনে,
মাঠে মাঠে ঢেউ খেলে যায় ধান, পাট, কাউনে।
বর্ষা এলে নদীর জলে,
বাদাম তোলা নৌকা চলে,
খালে বিলে ঝাঁকি জালে মাছ ধরতে যাই।।
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যখন নতুন জোয়ার আসে,
ছলছলাইয়া নদীর পানি খলখলাইয়া হাসে।
শীত-বসন্তে কোকিল ডাকে,
রবিশস্য ফসল পাকে,
ফলায় ক্ষেতে বুট, খেসারি, মসুরি, কলাই।।
[রচনাকাল: ১৬-০৪-১৯৯৪]
১০.
হীরা-মানিক, সোনা-চান্দি যতই বলো খাঁটি,
সোনার চেয়ে খাঁটি সোনা বাংলাদেশের মাটি,
আমার জন্মভূমির মাটি।।
বারো মাসে তেরো ফসল এই মাটিতে হয়,
গাছ-গাছালি, ফুল-ফসলে তাইতো ভরে রয়।।
সোনার মাটি আবাদ কর সোনা ভাই চাষী,
সোনার ফসল ঘরে এলে ফুটবে মুখে হাসি।।
[রচনাকাল: ০৩-১১-১৯৮৩]
১১.
প্রিয় বাংলাদেশ আমাদের,
সবুজ বাংলাদেশ।
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া,
সবুজের নাই শেষ।।
অপরূপ এই দেশটি সবুজ লতাপাতায় ঘেরা,
প্রাণের চেয়ে প্রিয় এ দেশ, সকল দেশের সেরা।
ছয়টি ঋতুর দেশটি মোদের,
মধুর পরিবেশ,
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।।
সবুজ গাঁয়ের আঁকাবাঁকা মেঠো পথে চলি,
জন্মভূমি বাংলাদেশে বাংলায় কথা বলি।
মায়ের বুকের আদর মাখা,
বোনের কাজল কেশ,
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।।
[রচনাকাল: ০৩-০৭-২০০১]
১২.
প্রাণ জুড়ানো এ দেশ আমার,
চোখ ধাঁধানো দেশ।
চিরসবুজ দেশের কথা,
বললে না হয় শেষ।।
ফুল বাগিচার দেশটি মোদের, সবুজ ধানের মাঠ,
রাখালিয় বাউল কবির চম্পাবতীর ঘাট।
ছয়টি ঋতুর দেশটি মোদের, মধুর পরিবেশ।।
নদী-নালার বাংলাদেশটি শ্যামল মাঠের তীর,
ফুল-মুকুলের সুবাস ঘেরা, পাখ-পাখালির নীড়।
মায়ের বুকের আদর মাখা, বোনের কাজল কেশ।।
[রচনাকাল: ১৮-০৮-১৯৭৯]
১৩.
আমার দেশের ছয়টি ঋতুর গল্প দাদু কয়,
ছয় ঋতুতে দাদুর জীবন অনেক রকম হয়।।
গ্রীষ্মকালে শুকায় দাদুর চক্ষু-গলা-মুখ,
জলপিপাসায় হায় হায় শুধু কাঁপে দাদুর বুক।
বর্ষাকালে জানলা খুলে একলা কথা কয়।।
শরতকালে দেখে ভোরে শিশির ভেজা ঘাস,
মনের সুখে দীঘির জলে ভাসায় দাদীর হাঁস।
সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে তাড়াই দুঃখ-ভয়।।
হেমন্তে আর রয় না ঘরে, মাঠে কাটে ধান,
দাদী বানায় তালের পিঠা, দাদু করে গান।
শীতের কালে হাড় কাঁপে তার, বসন্তে সুখ হয়।।
[রচনাকাল: ১.৯.১৯৮০]
১৪.
পুবের আকাশ লাল হলো
ঐ রঙিন দেখা যায়,
আঁধার কেটে সূর্য ওঠে
নীল আকাশের গায়।
রাত পোহালে দীঘির জলে শাপলা ফুলের হাসি,
ফুলের বনে ফুটলো ফুল, উড়ছে মৌমাছি।
শিশির ভেজা ঘাসের উপর রোদের আলো ঝিলমিলায়।।
প্রাণ জুড়ানো ভোরের হাওয়া বইছে ধীরে ধীরে,
মন মাতানো সুরে পাখি গাইছে বসে নীড়ে।
অলস ভেঙে রাখাল ছেলে মাঠের পানে ধায়।।
[রচনাকাল: ০১.০৫.১৯৮৩]
১৫.
এই তোমরা একতারা বাজাও,
এই তোমরা দোতারা বাজাও,
একতারা, দোতারা, মন্দিরা বাজাইলে
কি যে লাগে খুশি,
তখন মনে পইড়া যায় আমি বাংলাদেশি,
আমি বাংলাদেশি।।
ছাপার শাড়ি পিন্দিয়া মাথার চুল বান্ধিয়া,
পিঠা-পায়েস রান্ধিয়া খাও সকল বাঙালি।
ছাপার শাড়ি পিন্দিলে, ঘোমটা মাথায় থাকিলে,
কি যে লাগে খুশি,
তখন মনে পইড়া যায় আমি বাংলাদেশি,
আমি বাংলাদেশি।।
মারফতি-মুর্শিদি গাও, জারি-সারি, কীর্তন গাও,
মন্দিরা আর ঢোল বাজাও, গাও ভাটিয়ালী।
কবিগান ধরিলে আর পুঁথিপাঠ করিলে,
কি যে লাগে খুশি,
তখন মনে পইড়া যায় আমি বাংলাদেশি,
আমি বাংলাদেশি।।
[রচনাকাল: ০৭-০৩-১৯৯১; সুরকার: জাহিদ মনসুর]
১৬.
জন্মভূমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি প্রাণে,
এমন দেশটি খুঁজে না পাই
অন্য কোনোখানে।।
সকল দেশের সেরা, চিরসবুজ বাংলাদেশ,
মাঠে মাঠে ফুল-ফসলে সবুজের নাই শেষ।
রাতের বেলা জোনাক বাতি জ্বলে বাঁশবাগানে,
এমন দেশটি খুঁজে না পাই
অন্য কোনোখানে।।
ছড়ায় কত সুবাসিত গন্ধ ফুলে ফুলে,
প্রজাপতি, ফড়িং সেথা নাচে দুলে দুলে।
তখন একতারা-দোতারা বাজে বাউলের গানে,
এমন দেশটি খুঁজে না পাই
অন্য কোনোখানে।।
[রচনাকাল: ০৯-০৯-২০০০]
১৭.
একতারা-দোতারা আমায় বাউল করেছে,
বাউল করেছে রে আমায় পাগল করেছে,
একতারা-দোতারা আমায় পাগল করেছে।
দেশমাতাকে জাগায় প্রাণে,
একতারা-দোতারার গানে,
রাখালিয় বাঁশির টানে,
মন ভরেছে আমার মন ভরেছে।
একতারা-দোতারা আমায় পাগল করেছে।
গাঁয়ের সবুজ গাছের শাখে,
কিচির-মিচির পাখি ডাকে,
দোয়েল, কোয়েল মধুর সুরে গান ধরেছে,
একতারা-দোতারা আমায় পাগল করেছে।
[রচনাকাল: ১৬-১০-২০০২]
১৮.
সোনার বাংলাদেশটা মোরা
গড়বোই এবার গড়বো,
ফুলে-ফলে, ধান-চাউলে
ভরবোই গোলা ভরবো।
সারা দেশের মানুষ মোদের কোটি কোটি হাতে,
একসাথে করবো কাজ, মরবো না কেউ ভাতে।
এই তোমার-আমার সুখের স্বপ্ন
বাস্তবায়ন করবো।
খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আরও বাসস্থান,
আয়-উন্নতি হলে মোদের বাড়বে দেশের মান।
গরিব-দুঃখীর মুখে হাসি
ফুটাতে চেষ্টা করবো।
[রচনাকাল: ০২-১১-১৯৯৪]
১৯.
কৃষক-শ্রমিক, কামার-কুমার,
এই তোমার-আমার বাংলাদেশ,
সবাই সবার কর্ম দিয়ে
গড়ে এইতো সোনার দেশ।
এই মাটিতে খাটনি কর, লাঙল ধরো কশিয়া,
সময় মতো বীজ বুনাইও, থাইকো না কেউ বসিয়া।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল ফলাও জমিতে,
বৃক্ষরোপণ করে বানাও সুখী, সুন্দর পরিবেশ।।
কোটি কোটি মানুষের কোটি কোটি হাতে,
যার যে কাজ কর ভাই, মরবে না কেউ ভাতে।
উন্নয়নের আন্দোলন কর দেশের জনগণ,
অধিক বাড়লে উৎপাদন
থাকবে না দুঃখ-ক্লেশ।।
[রচনাকাল: ০৩-০৭-১৯৯০]
২০.
চাষী ভাই, জেলে ভাই,
কথা নাই কাজ চাই,
কাজে দিও মন,
কাজ করিলে শান্তি মিলে,
সুখী হয় জীবন।
আলান-পালান বাড়ির পাশে,
তামাক লাগাও ভাদ্র মাসে,
শাক-সবজি ডাটা বুনো,
মুলা বুনো কথা শোনো।
লাঙল ধরো, আবাদ করো,
চালাও কৃষি আন্দোলন,
চাষী ভাই কাজে দিও মন।
বর্ষার পানি লাগলে ভাটা,
পুকুরেতে ফালাও কাটা,
পুকুর ভরা মাছ পাবে,
বিক্রি করে টাকা পাবে।
মনসুর বলে, ঘুচে যাবে অভাব-অনটন,
চাষী ভাই কাজে দিও মন।
[রচনাকাল: ১৩-০৫-১৯৯৯]
২১.
(৬ দফা আন্দোলনের গান)
১৯৬৬ সালের ৭ই জুন,
শোনেন দেশের জনগণ,
এই দিবসটি স্মরণ রাখা
সবারই খুব প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধু ৬ দফা করলেন যখন রচনা,
বাঙালিদের বাঁচার দাবি তখনই হয় ঘোষণা।
৬ দফার উদ্দেশ্য ছিল সোনার বাংলা গড়া,
লাঞ্ছিত, বঞ্চিত বাংলা শোষণমুক্ত করা,
সেই ন্যায্য দাবি আদায় করতে
শুরু হয় আন্দোলন।
আওয়ামী লীগের আহ্বানে হরতাল ডাকা হলো,
রাজবন্দী আর বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চেয়েছিল।
৬ দফার দাবিতে যখন এ আন্দোলন করে,
আন্দোলনে বাঙালিরা সব ঝাঁপিয়ে পড়ে।
পাকবাহিনীর গুলিতে মরে
নিরীহ জনগণ।
তেজগাঁওয়ের মনু মিয়া শ্রমিক নেতা ছিল,
পাকবাহিনীর গুলিতে সেও শহীদ হলো।
নারায়ণগঞ্জ, মুক্তাগাছা, বিভিন্ন শহরে,
নিরস্ত্র মানুষ পাকবাহিনীর গুলি খেয়ে মরে।
নির্মম হত্যা চালায় ওরা,
বাঙালি দেয় জীবন।
[রচনাকাল: ০৪-০৪-১৯৯৮]
২২.
জ্বলছে আগুন মায়ের কলিজায় রে,
পুত্রশোকে মায়ে কান্দে
পাগলিনী হইয়া রে।
জুলুমকারী জঙ্গি শাসক ইয়াহিয়া খানে,
বাংলাদেশের মা-ভগ্নিরে
দাগ লাগাইলো প্রাণে রে।
সাড়ে সাত কোটি বাঙালির দুঃখের কথা বলি,
বিনা দোষে বাঙালিরা
খাইয়াছিলো গুলি রে।
মনসুর বলে, বাংলার মানুষ কত জুলুম সইয়া,
বাংলাদেশটা স্বাধীন করলো
অস্ত্র হাতে লইয়া রে।
[রচনাকাল: ০১-০৩-১৯৭৩; প্রথম কণ্ঠশিল্পী: কুটি মনসুর]
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন