২৯৩
ও দয়াল মুর্শিদ রে,
ওরে ও প্রাণের বান্ধব রে,
আমি কি দিয়া ভজিবো রে এই তোমারে।
সবরী কলা দিয়া রে মুর্শিদ ভজিবো এই তোমারে,
গাছে থাকতে পাকা কলা আগে খায় বাদুরে রে,
আমি কি দিয়া ভজিবো রে এই তোমারে।
দই-দুগ্ধ দিয়া রে মুর্শিদ ভজিবো এই তোমারে,
গাই পানাইতে গাভীর দুগ্ধ আগে খায় বাছুর রে,
আমি কি দিয়া ভজিবো রে এই তোমারে।
আসল খুঁজলে নকল মিলে এই ভবের বাজারে,
কুটি মনসুর কয়, মোর মুর্শিদ বিনে আসল নাই সংসারে রে,
আমি কি দিয়া ভজিবো রে এই তোমারে।
[রচনাকাল: ২১-০২-১৯৬৫; প্রথম কণ্ঠশিল্পী: মমতাজ]
২৯৪
দয়াল মুর্শিদ, এই তোমার চরণ বিনে
আমার অন্য আশা নাই,
আমি আর কোন ধন চাইনা রে মুর্শিদ,
যদি এই তোমার দেখা পাই।
প্রাণ সইপাছি এই তোমার কাছে,
আমার বলতে আর কি আছে,
এই তোমায় দেবার কিছু নাই।
আমি এই তোমার প্রেমে মন মজাইয়া,
আমার সর্বস্ব হারাই।
সর্বহারা শূন্য দেহ,
তুমি ছাড়া নাই আর কেহ,
আমি কার ছায়ায় দাঁড়াই?
এই তোমার নামের মালা গলায় পইড়া,
মুর্শিদ আমি মরতে চাই।
তুমি দয়া করো যারে,
অভাব নাই তার এ সংসারে,
আমি এই তোমার দয়া চাই।
কুটি মনসুর বলে, মরণকালে
এই তোমায় সামনে যেন পাই।
[রচনাকাল: ০৯-০৫-১৯৮০]
২৯৫
ধ্যানযোগে থাকিবে, এক নামে ডাকিবে,
রূপের ছবি রাখিবে বুকে ধরিয়া,
ভালবেসে অন্তরে ডাকো তারে প্রাণ ভরে,
টানো প্রেমের রসি ধরে আদর করিয়া।
ভক্তিপূর্ণ বিশ্বাসে ডাকো প্রতি নিঃশ্বাসে,
রূপের সাথে রূপ মিশে যাও হারাইয়া।
হয়ে গেলে একাকার, ভয় কি থাকে আর?
আত্মায় আত্মার খবর নিবে গেলে মরিয়া।
‘আমি-তুমি’ কেবা কয়, ‘তুমি-আমি’ ভিন্ন নয়,
দুগ্ধে মাখন মিশে রয় যেমন করিয়া।
আমি যখন আমার নাই, তার সাথে মিশে যাই,
কুটি মনসুর হারাই মুর্শিদ-রূপ ধরিয়া।
[রচনাকাল: ১৮-০২-১৯৮৮]
২৯৬
কও রে মুর্শিদ, আমার উপায় হবে কি?
ও মুর্শিদ, আমি যে অধম পাতকী।
এ ভব-সাগরে কিনার কি পাবো রে,
পইড়াছি ফাঁপরে, করি কি?
মুর্শিদ আমি যে গুনাহগার,
ডাকি এই তোমায় বারেবার,
তুমি বিহনে আমার ভরসা কি?
চলে গেল যেই দিন, আসিবে না সেই দিন,
সামনে কয়দিন আছে বাকি?
আমি হইয়াছি কাঙাল,
নাই কোন পথের সম্বল,
তরাইয়া তুমি দয়াল নিবে নাকি?
পারঘাটায় বসি কান্দি দিবানিশি,
দোষী বলে দয়াল এই তোমায় ডাকি।
আমি কেমনে হব ভব-পার,
কাণ্ডারী কেউ নাই আমার,
মনসুর কয়, দয়াল এই তোমার আশায় থাকি।
[রচনাকাল: ১১-১০-১৯৬১; প্রথম কণ্ঠশিল্পী: নুরুন্নাহার আউয়াল]
২৯৭
এই তোমায় নিদানকালে ডাকি রে,
তোমায় অসময়ে ডাকি রে
দয়াল মুর্শিদ রে।
মুর্শিদ তুমি মালেকুল,
নিবেদন করিও কবুল,
তুমি অকুলেরই কূল,
শুনি পাপী-তাপী তরাও সকল।
আমি এই তোমার আশায় থাকি রে
দয়াল মুর্শিদ রে।
তুমি রহমানুর রাহিম,
এই তোমার দয়া যে অসীম,
তুমি সেরাতুল মোস্তাকিম,
তুমি সর্বজীবের শ্রেষ্ঠ হাকিম,
এই তোমায় অন্তিমকালে যেন দেখি রে
দয়াল মুর্শিদ রে।
ওস্তাদ কুটি মনসুর কয়,
মুর্শিদ তুমি দয়াময়,
তরাইও নিদানের সময়,
এই তোমার চরণ-ধুলি দিও আমায়,
দিও সর্ব অঙ্গে মাখি রে
দয়াল মুর্শিদ রে।
[রচনাকাল: ২০-১১-১৯৬১; প্রথম কণ্ঠশিল্পী: নুরুন্নাহার আউয়াল]
২৯৮
কিসের দোকান করলি রে মন আইসা ভবে
লাভ-লোকশানের হিসাব-নিকাশ
করবি কবে।
ষোল আনা পুঞ্জি লইয়া আইসাছিলি,
মহাজনের আসল খাইয়া লোকসান দিলি,
হইলো না ব্যাপার করা,
আখেরে পড়বি ধরা,
সঙ্গী-সাথী আপন বলতে কেউ না রবে।
আন্ধার মেলা, ধান্ধার খেলা খেলবি কতদিন?
আজ বুঝবি না, সময় গেলে বুঝবি রে একদিন।
রং-তামাশায়, লোভ-লালসায় মগ্ন হইলি,
দয়াল মুর্শিদের কথা ভুইলা রইলি।
আসিলে পরোয়ানা,
ছাড়তে হবে বালাখানা,
মনসুর কয়, কবরখানায় থাকতে হবে।
[রচনাকাল: ০৭-০৩-১৯৭৬; প্রথম কণ্ঠশিল্পী: নারায়ন চন্দ্র শীল]
২৯৯
মুর্শিদ রে, রহমতিয়া, দরদিয়া,
তুই রে আলেক সাঁই,
তুই বিহনে ভব-সিন্ধু
পারের বন্ধু নাই।
রব্বেকুল, জলিল, জালাল,
দয়ার ভান্ডার তুই রে দয়াল,
আমি যে এই তোর দয়ার কাঙাল,
তাইতো দয়া চাই।
দয়াল-দাতা নামটি যে এই তোর সর্বশাস্ত্রে শুনি,
এই তোর মতো আর কেউতো নাই রে
এমন গুণের গুণী।
ইব্রাহিমকে অগ্নি হতে
বাঁচাইলি এই তোর নিজ কুদরতে,
অকুলের কূল এ জগতে
এই তোর মতো কেউ নাই।
[রচনাকাল: ২৯-০২-১৯৮৭]
৩০০
সাবধানে চালাও তরী বাইয়া, সুজন নাইয়া,
অকূল নদী ভয়ংকর, সময় থাকতে পাড়ি ধর,
ঘূর্ণিপাকে মরবি চুবনি খাইয়া।
পারে যদি যেতে চাও, মুর্শিদ ধনকে সঙ্গে নাও,
বাদাম দাও মুর্শিদের নাম লইয়া।
হইয়া মুর্শিদ কর্ণধার, নেয় যদি করিয়া পার তারে,
রাইখো নৌকার হাইল মাচায় বসাইয়া।
মুর্শিদ ধন থাকলে সঙ্গে, ভয় কি রে মন অকূল গাঙে?
প্রেম-তরঙ্গে যাওগো তরী বাইয়া।
দ্বীনহীন মনসুর বলে, প্রেমের তরী উজান চলে,
একবার মুর্শিদ নামের নিশান দাও উড়াইয়া।
[রচনাকাল: ০৭-০৪-১৯৬৯; কণ্ঠশিল্পী: নীনা হামিদ, নুরুন্নাহার আউয়াল, নারায়ন চন্দ্র শীল]
৩০১
আমার মুর্শিদ আমার কাছে, অন্য কোথাও নাই,
স্বরূপ সাজে হৃদয় মাঝে,
ধ্যান করিলে পাই।
রাইখা মুর্শিদ আপন ঘরে,
খোঁজো কেন দেশ দেশান্তরে?
চেনার ঘরে চৈতন্য মুর্শিদ খুঁইজা নেরে ভাই।
কুল বিল মোমিন আরশে আল্লাহ,
নূরের ভিতর নূর তাজিল্লা,
হায়াতুন্নবী রাসুলুল্লার ভক্ত হওয়া চাই।
আল্লাহ-রাসুল সত্য জেনে,
বিশ্বাস করে মনে প্রাণে,
কুটি মনসুর কয়, ধ্যানে-জ্ঞানে খুঁজলে তারে পাই।
[রচনাকাল: ২৪-০৫-১৯৭৯]
৩০২
তুমি দাও না দেখা ও দয়াল,
তুমি কও না কথা ও দয়াল,
আমি এই তোমার আশায় থাকবো রে কতকাল।
দুঃখে দুঃখে জনম যায় মোর, দুঃখেরই কপাল।
আমি দিন ভিখারি কাইন্দা মরি,
হইলাম রে পথের কাঙাল।
আমি যে ডাল ধরি, ভাইঙ্গা পরি, হইলো কি জঞ্জাল,
এই তোমার লাইগা কাইন্দা কাইন্দা
ঘুইরা ফিরি তাল বেতাল।
তুমি দেখা দেও না, খুইজা পাই না, হইয়াছি বেহাল।
মনসুর বলে, এই তোমায় পাইলে
আমি সুখী হইতাম চিরকাল।
[রচনাকাল: ৯.০১.১৯৫৯]
৩০৩
তুমি কোথায় রইলা দয়াল মুর্শিদ,
দয়া করো আসিয়া,
এই তোমার দয়া পাইতে দিবা রাইতে,
আমি কান্দি বসিয়া।
হইলাম ভবের অপরাধী, ডাকি এই তোমায় নিরবধি,
একবার চাও না ফিরিয়া।
আমি অধম বলে যাইও না ফেলে,
আমার সমন দেখিয়া।
আমার মতো চিরদুঃখী আর এই তো কেউরে নাহি দেখি,
এই ভবে আসিয়া।
এই তোমায় একবার পাইলে হৃদকমলে
দুঃখ যাইতো মুছিয়া।
তুমি দয়া করলে মোরে অভাব-দুঃখ যাইত দূরে,
দয়াল ও দরদিয়া।
অধীন মনসুর কয়, এই তোমার চরণের আশায়
আমি রইলাম বসিয়া।
[রচনাকাল: ১৩.০৮.১৯৭৮]
৩০৪
আমারে কি হালে রাইখাছো রে মুর্শিদ,
একবার দেইখা যাও আসিয়া,
আমার জীবন-যৌবন ক্ষয় করিলাম মুর্শিদ,
এই তোমায় ভালোবাসিয়া।
মুর্শিদ এই তোমায় পাইবার আশে,
নিশি জেগে রইলাম বসে গো,
এই তোমায় না পাইয়া চোখের জলে,
কাইন্দা বক্ষ যায় ভাসিয়া।
সুখের সংসার সকল তেগী,
ঘুইরা ফিরি এই তোমার লাগি গো,
আমি খুঁইজা বেড়াই পথে পথে,
কাটাই গাছতলায় বসিয়া।
মনসুর কয় মোর প্রাণ সখা,
জীবন বাঁচাও দিয়া দেখা গো,
আমায় অকূলে ভাসাইলা একা,
মুর্শিদ চাইলা না ফিরিয়া।
[রচনাকাল: ২৩.০৩.১৯৭০]
৩০৫
দয়াল মুর্শিদও আমার
ভবনদী কেমনে হবো পার?
এই তোমার নামে ধরলাম পাড়ি,
না জানি সাঁতার।
অজয় নদীর বিজয় তুফান, কাঁপে যে হৃদয়,
মেঘলা আকাশ, পাগলা বাতাস, দেইখা লাগে ভয়।
ডুবলো তরী, প্রাণে মরি,
দয়াল, দেখলা না একবার।
হাল ভেঙ্গেছে, পাল ছিঁড়েছে, উথাল-পাতাল ঢেউ,
মাঝি-মল্লা ছিলো যারা, নাই যে তারা কেউ।
এখন সাথীহারা তুমি ছাড়া,
মুর্শিদ, কে আছে আমার?
[রচনাকাল: ১০.০১.১৯৮৩]
৩০৬
দয়ার কাঙাল হইয়া ওরে দয়াল,
মুর্শিদ এই তোমায় ডাকি।
তুমি দয়া করিও, ত্বরাইয়া নিও গো,
মুর্শিদ, আমি যেন এই তোমার পাশে থাকি।
মায়াজালে বন্দি হইয়া, পুঞ্জিহারা কান্দি বইয়া গো,
আমি কাঙাল বলে যাইও না ফেলে,
মুর্শিদ, আমি এই তোমারি দয়ার আশায় থাকি।
শেষের দিনে যাত্রা পথে, দয়াল মুর্শিদ থাইকো সাথে গো,
সেই পুলছিরাতে পার হইতে,
মুর্শিদ, এই তোমায় যেন আমি সামনে দেখি।
[রচনাকাল: ১৯.১০.১৯৮০]
৩০৭
ভক্তি পথে চলো রে মন, কিসের ভাবনা?
ভক্তির জোরে যাবে ত্বরে,
ভবপারের ভয় রবে না।
ভাবে মজে ভাবনা করো, সরল ভাবে স্বভাব গড়ো,
মুর্শিদ নাম জপনা করো,
কাল শমনে ছোঁবে না।
প্রেম-ভক্তিতে মুক্তি মিলে, মনের সাথে মন মিশিলে,
মিলবে রতন সাধন বলে,
অসাধনে মিলবে না।
কেটে মায়া জালের ফাঁসি, মুর্শিদের হইয়া দাসী,
মনসুর কয়, দিবানিশি,
ঐ নাম কর জপনা।
[রচনাকাল: ১১.০৯.১০৬৭]
৩০৮
আসল গুরু মন, এই তোমার,
কারো কথায় কান দিও না আর।
মন-মুর্শিদের সাধন ছাড়া,
কেউ পায় না খোদার দিদার।
আসল থুইয়া নকল গুরুর আমদানি বাড়াইলা,
গুরু নামের ব্যবসা কইরা আসল ধন হারাইলা।
পরের দরগায় বাতি দিলা,
নিজের দরগায় অন্ধকার।
গুরু বলতে হিসাবেতে তিনশত ষাট জন,
তার ভিতরে সবার উপর প্রধান গুরু মন এই তোমার।
মন গুরুকে বাধ্য করলে,
অনায়াসে হবে পার।
মাতা গুরু, পিতা গুরু, গুরু জ্যেষ্ঠ ভাই,
তার চাইতে অধিক গুরু ভজন করলে পাই।
নিজের ভজন না থাকিলে,
গুরু ভজন হয় না তার।
আপন জ্ঞানে ধ্যান কইরা বইসা আছে যারা,
স্বরূপ রূপে আপন মুর্শিদ পাইছে ভবে তারা।
কুটি মনসুর বলে, হৃদমহলে,
যার যার মুর্শিদ আছে তার।
[রচনাকাল: ০৩-০৮-১৯৮০]
৩০৯
লাগাম ছাড়া পাগলা ঘোড়া, বেঁধে রাখা বিষম দায়,
গুরু ছাড়া শিষ্য যেমন, বিপদগামী হয়ে যায়।
চেতন গুরুর সঙ্গ ধরো, হও প্রেমের প্রেমিক,
মদন রাজার সাধন কর, মনটা রাখো ঠিক।
তরিকা ছাড়া দিশাহারা,
কুপথে মন যেতে চায়।
নয় ঋপু দেহের শত্রু, এদের দমন রাখো,
মুর্শিদের পায়রবি করে সোজা পথে থাকো।
আগে মন ঘোড়াকে বেঁধে রাখো,
যাবে না সে ডাইনে-বাঁয়।
ছয়টি ঋপু, দশটি ইন্দ্র, ষোল জন প্রহরী,
মুর্শিদ ছাড়া এমন তত্ত্ব জানবে কেমন করি?
কুটি মনসুর কয়, থেকো সদায়
মুর্শিদের চরণ সেবায়।
[রচনাকাল: ০৬-০৮-১৯৮০]
৩১০
সত্য পথে রাইখো দয়াল, এই মিনতি করি,
এই তোমার হইয়া আমি যেন ঈমান লইয়া মরি।
দয়াল এই মিনতি করি।
এই তোমায় স্মরণ করি দিনে রাতে,
আমার জীবন-মরণ এই তোমার হাতে,
দয়াল, দয়া করো, আমি যাতে বিপদে না পড়ি।
দয়াল এই মিনতি করি।
তুমি ছাড়া সঙ্গের সাথী কেউ তো আমার নাই,
সময়কালে দয়াল আমি এই তোমার দয়া চাই।
এই তোমার নাম ভরসা কইরা,
আশায় রইলাম জনম ভইরা
কুটি মনসুর বলে, আছি এই তোমার,
নামের রশি ধরি দয়াল এই মিনতি করি।
[রচনাকাল: ২৫-০৬-১৯৮৬]
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন