মৌরি মরিয়ম
হালিমা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আব্বাস ও মুকুলকে আলাদা করে দেবেন। কিন্তু মোকসেদ এতে একমত নন। হালিমা তাকে বললেন, ‘হোনেন একখান কতা কই, একজনের টাহা দিয়া পুরা গুষ্টি পাললে কয় দিন পর না খাইয়া মরা লাগবে। মামুন এত কষ্টের চাকরি কইরা টাহা পাড়ায়, হেইয়া দিয়া পুরা গুষ্টি খাওয়াইলে অর উপ্রে অবিচার করা অইবে।’
মোকসেদ এবার বললেন, ‘কয় দিন আগপর্যন্ত তো আব্বাসের পয়সায় এতজনের সংসার চলছে। হেলে তো এত দিন আব্বাসের ওপরে অবিচার করছি।’
‘কী যে কন আমনে! আব্বাস কয় টাহা দিত আর মামুন কতগুলা টাহা দেয়! দুইডা কি এক অইলো? আর বড় পোলা হিসাবে অরই তো দায়িত্ব পুরা সংসার চালানের। হ্যা ত পারতেয়াছে না, অন্তত নিজেরডা চালাউক। আর মুকুইল্যা ত আরেক বাদাইম্মা। আলাদা না করলে আজীবন বাদাইম্মাগিরি কইরাই চলবে।’
‘মুই তোমার কতার কোনো আগা-মাতা পাই না।’
‘পাওয়া লাগবে না। আব্বাস আর মুকুলের হাঁড়ি আলাদা অইবে, এইডাই শ্যাষ কতা।’
.
সত্যি সত্যিই একদিন কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই আব্বাস ও মুকুলের হাঁড়ি আলাদা করা হলো। রেনু প্রচণ্ড ভেঙে পড়লেও আব্বাস শক্ত রইলেন। যেন কিছুই হয় নি। সে তার জীবনে এ রকম ঘটনা আশপাশে বহু দেখেছ, শুধু জানত না তার সাথেও একদিন এমন হবে!
এদিকে মিনা পাগলের মতো কাঁদছে। তার কিচ্ছু নেই। মুকুলের কাজ নেই। ছেলেকে দুবেলা কীভাবে খাওয়াবে, সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে। সন্ধ্যা হলেই তো খেতে চাইবে মধু। কী করবে তখন? মুকুল বাড়ি ফিরলে তাকেই-বা কী খেতে দেবে? এ কোন বিপদে পড়ল সে!
সন্ধ্যার পর দেবদূতের মতো এসে ভাত-তরকারি দিয়ে গেল রেনু। কিন্তু এভাবে তো প্রতিদিন চলবে না।
মুকুল বাড়ি ফিরল যথারীতি অনেক রাতে। মিনাকে জেগে থাকতে দেখে অবাক হলো।
বলল, ‘কী অইছে, তুমি এহনো হজাগ?’
মিনা ছুটে গিয়ে মুকুলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
মুকুল কিছুটা ঘাবড়ে গেল, “ঘটনা কী? কান্দ ক্যা?’
মিনা সবকিছু খুলে বলতেই মুকুল হতাশ গলায় বলল, ‘আমার লগে নায় ঠিকাছে কিন্তু ভাইজানের লগে এমন ক্যামনে করল!’
মিনার কানে একটা সোনার দুল আছে তার বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া। সেটা খুলে মুকুলের হাতে দিয়ে বলল, ‘এইডা বেইচ্চা কাইল বাজার আইন্না দিয়ো।’
বাজারের কথা শুনে মুকুলের খেয়াল হলো। সে জিজ্ঞেস করল, ‘মধু কি আইজ না খাইয়া ঘুমাইছে?’
‘না। আইজ ভাবি ভাত দিয়া গ্যাছে।’
মুকুল রেনুর কথা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর দুলটা আবার ফেরত দিয়ে বলল, ‘এইডা লাগবে না। কাইল ব্যানে বাজার আইন্না দিমুয়ানে।’
‘কিদ্দা আনবা? তোমার ধারে পয়সা আছে?’
‘বাহি আনমু।’
‘পরে শোধ করবা ক্যামনে? ধারদেনার দরকার নাই। এইডা ব্যাচো। কী অইবে এইয়া দিয়া?’
‘আমি একটা কাম পাইছি, মিনা। ভাবছিলাম টাহা পাইলে তারপর তোমারে কমু।’
মিনার মুখে বিশ্বজয়ের হাসি।
সে বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ। কামডা কী?’
‘কাঠের কাম। ইশকুলের টেবিল, চেয়ার, আলমারি—এইসব বানাইতে অইবে। ভালোই, ম্যালা দিনের কাম।’
‘আল্লাহ মুখ তুইল্যা চাইছে।’
মুকুল মিনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আলাদা হইলেও ভাবির দিকে খেয়াল রাইখো, মিনা।’
‘আচ্ছা। তুমি ভাইবো না।’
মিনা আসলে সবচেয়ে বেশি খুশি মুকুলকে স্বাভাবিক হতে দেখে। তার অনেক দিনের কষ্ট আজ দূর হয়েছে।
সবকিছু চুপচাপ যে দেখল, সে রেহানা। আব্বাস-রেনু, মিনা-মুকুল কারও জন্যই তার কোনো সহানুভূতি নেই। তবে শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি একটা ঘৃণা জন্ম নিল। সে পারলে এক্ষুনি মামুনকে বলে দিত এক পয়সাও না পাঠাতে কিন্তু সে মাথা গরম করে কাজ করে না। মামুন আর তার সম্পর্ক সে কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেবে না। ঝোপ বুঝে কোপ মারবে।
পটুয়াখালী জজকোর্টের জাঁদরেল উকিল আলমগীর মৃধা। জনশ্রুতি আছে, ফাঁসির আসামিকেও নির্দোষ প্রমাণ করে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরত নিয়ে এসেছেন তিনি। হারুন ব্যাপারী তার শরণাপন্ন হয়ে মামলা করেছেন জয়নাল মির্জার নামে। তিনি তার জমি পুনরুদ্ধারের জন্য আরজি দাখিলের পর জয়নাল মির্জার নামে একটি সমন জারি হলো।
সমনপত্র গ্রহণ করে কাছারিঘরে বসে আছেন জয়নাল মির্জা। জালাল বাড়ি নেই। জব্বার আছে সাথে। সে বলল, ‘দেখলেন তো আব্বা। আমি কইছিলাম হারুন ব্যাপারীর মতলব ভালো না। আমি হেরে উকিলের কাছে যাইতে দেখছি, হেই কতাখানও কইছিলাম। আমনে তো আমার কতা আমলেই লন নাই। ‘
‘কিন্তু জব্বার, তুমি হেরে উকিলের কাছে যাইতে দ্যাখছ আরও চার-পাঁচ মাস আগে। হেকালে মামলা না কইরা এহন করল ক্যা, কও দেহি?’
‘হেইয়া আমি ক্যামনে কমু?’
‘এই ঘিলু লইয়া রাজনীতি করবা?’
জব্বার মুখ কুঁচকে ফেলল। পান থেকে চুন খসলেই তার বাবা তাকে এই খোঁটাখানা দেয়, যা তার একেবারেই অপছন্দ। জয়নাল মির্জা পানের পিক ফেলে বললেন, ‘হারুন ব্যাপারী তহন মামলা করনের লাইগা যায় নাই। হে গেছে তথ্য জোগাড় করতে। মামলা করার প্রস্তুতি নিতেয়াছিল। মাঝখান দিয়া রঞ্জু-জেসমিনের ঘটনা আসায় সে ভাবছিল আত্মীয়তা কইরা ঝামেলা মিটাইবে। এই জন্য এত দিন থাইমা আছিল। কিন্তু এহন যহন দ্যাখল আত্মীয়তা কামে লাগান যাইতেয়াছে না, অমনে যাইয়া মামলা দিল।’
‘আব্বা, আমনে কি আগেইত্যাই জানতেন হে মামলা দেবে?’
‘জানতাম। কইতে পারো আমি অপেক্ষাই করতেয়াছিলাম। কারণ, সে মামলা না দিলে আমি আমার চালডা দিতে পারতেয়াছিলাম না।’
‘তহেলে জেসমিনরে ওই বাড়ি বিয়া দেলেন ক্যা?’
‘ভাবছিলাম আত্মীয়তা কইরা ঝামেলা মিটামু, ব্যাপারীও যে একই চিন্তা করছে, হেইয়া তো বুজতে পারি নাই।’
‘আব্বা, অরা যদি জেসমিনরে অত্যাচার করে?’
‘মাইয়া আমার ধানি মরিচ। অরে কেউ অত্যাচার করতে পারবে না। রঞ্জু- জেসমিন আশা করি নিজেগো সামলাইয়া লইতে পারবে। রঞ্জুর মতো জামাই লাখে একটা, আশপাশের চাইর গেরামেও এমন শিক্ষিত পোলা নাই। হেরপরেও সমেস্যা অইলে বিয়া ভাঙতে কতক্ষণ? জেসমিনরে শহরে নিয়া আরও ভালো আরও শিক্ষিত পোলার লগে বিয়া দিমু। এই বয়সী পোলাপানের প্রেম ভাঙা মুশকিল, আবেগ বেশি। কিন্তু বিয়া হইলেই আবেগটা কইম্যা যায়। বিয়া ভাঙা কোনো বিষয় না। চুল-দাড়ি পাকাইয়া হালাইসি, কম তো আর দেখলাম না।
.
আলমগীর মৃধার চেম্বারে বসে আছেন জয়নাল মির্জা। তিনি গোপনীয়তা চান। চেম্বারের সকলকে বের করে দিলেন আলমগীর মৃধা। জয়নাল মির্জা বললেন, ‘হারুন ব্যাপারী কত দিছে? আমি তার চেয়ে বেশি দিমু। মামলায় আমারে জিতাইয়া দিবেন।’
আলমগীর মৃধা হেসে বললেন, ‘হারুন ব্যাপারী কত দিছে জাইন্যা আমনে কী করবেন? আমনে পাঁচ হাজার দেবেন। হেলে আমি কেস এমনভাবে সাজামু, যাতে আমি হারি, আমনের উকিল জেতে। ব্যাপারডা বোজ্জেন?’
টাকার অঙ্ক শুনে জয়নাল মির্জার মেজাজ বিগড়ে গেছে। বিরক্তমুখে তিনি বললেন, ‘উকিল সাব, আমনের কি মাতা আউলাইয়া গ্যাছে? পাঁচ হাজার টাহা কি ভাইস্যা আহে?’
‘টাহা ক্যামনে আইবে, হেইডা আমনের বিষয়। না দেতারলে বাড়ি যান। এ কেস আমনে এমনেও হারবেন। সমন পাইয়াও কোর্টে আহেন না। ওদিকে বাদীপক্ষ নিয়মিত কোর্টে আহে। তথ্যপ্রমাণ সব আমনের বিপক্ষে নেওয়া আমার দুই মিনিটের কাম। আমনের দারে যে একখান জাল দলিল আছে, হেইয়া কোর্টে পেশ করলে আমনের উল্টা জেল হবে। আমনের বাঁচার একমাত্র উপায় আমার ইচ্ছাকৃত হারা। কেস হারলে হেইডা আমার রেপুটেশনের ব্যাপার। পাঁচ হাজার না হইলে পোষায় না।’
জয়নাল মির্জা আর কথা বাড়ালেন না। এই সামান্য কাজে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করার কোনো মানেই হয় না। এর চেয়ে সহজ সমাধান তার জানা আছে।
রঞ্জু ক্লাস করে হলে ফিরতেই জেসমিনের চিঠি পেল। রুম পর্যন্ত যাওয়ার ধৈর্য নেই। হলের সামনেই মাঠে বসে চিঠি খুলল।
প্রিয় রঞ্জু সাহেব,
কেমন আছ? আশা করি আল্লাহর রহমতে তুমি ভালো আছ। আমিও ভালো আছি।
পর সমাচার এই যে আমি এখনো আমাদের বাড়িতেই আছি। বাবা বলতেছেন, তোমাদের বাড়িতে একা গিয়ে কী করব, তুমি আসলে যেন যাই। মাঝে আমার আব্বাকে না জানিয়ে একদিন তোমাদের বাড়ি গেছিলাম। বাবা-মায়ের সাথে দেখা করে আসছি। আমি যাওয়াতে তারা খুব খুশি হইছিলেন। কামিনী ফুলের গাছটার কাছেও গেছিলাম। ওই গাছে এখন আর ফুল ফোটে না। আমি জিগাইলাম, কী গো কামিনী, ফুল দেও না ক্যা? কামিনী কইল, তোমরা নাই, তাই ফুল দেই না। তোমরা আসো, ভালোবাসায় ভরায়া রাখো এই ঘরখান। তোমাদের ভালোবাসার সুবাস আবার যখন পাব, তখনই ফুল দিব।
দুই মাস হইয়া গেল তোমারে দেখি না। আর কত দিন না দেখে থাকতে হবে? তুমি কবে ফিরবা? তোমার ওই পাষাণ মন কি কাঁদে না তোমার এই ফুলের জন্য? পড়াশোনা বাদ দিয়া চইলা আসো। নাইলে আমারে ঢাকা নিয়া যাও। তোমারে ছাড়া একটা দিনও থাকতে পারমু না আর। বাড়ি আসো। বাড়ি আসো। বাড়ি আসো। বাড়ি আসো। বাড়ি আসো। আমার নাইয়র আর শেষ হয় না।
ইতি তোমার ফুল
রেনু প্রতিদিনের মতোই ভোরবেলা উঠে পুরো বাড়ির উঠোন ঝাড়ু দিল। হাঁস- মুরগিদের খোপ থেকে বের করে খাবার দিল। এসব দেখে আব্বাস তাকে ঘরে ডেকে বলল, ‘এইগুলা করতেয়াছ ক্যা?’
রেনু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কোনগুলা?’
‘এই যে উঠান ঝাড়ু দিলা, হাঁস-মুরগির খাওন দিলা।’
‘ও মা, পেরতেকদিনই তো করি। মুই না করলে করবে কেডা? বেইন্যাকালে মিনার ঘুমেইত্তা উঠতে ইট্টু দেরি হয়। হেইলাইগ্যা মুই করি। বিয়ালে মিনা করে।’
‘রেনু, আইজগোইত্যা মোগো নতুন জীবন শুরু। কোনো কিছু আর আগের মতো নাই। সাবধান করতেয়াছি তোমারে। এহনেইত্তা তুমি খালি তোমার ঘরের সামনের উঠান ঝাড়ু দিবা। হাঁস-মুরগির মালিকও আর তুমি বা মিনা নাই, তাই খাওন দেওনের দায়িত্বও তোমাগো না। এরপর যদি কোনো দিন হাঁস-মুরগিগো খাওন দিতে দেহি, তয় তোমার খবর আছে কইলাম। মিনারেও মানা কইরা দেবা।’
রেনু এতক্ষণে ব্যাপারটা ধরতে পারল। কিছু বলতে চাইলেও পারল না। আব্বাস সাধারণত রাগে না। কিন্তু রেগে গেলে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।
আব্বাস কিছুক্ষণ থেমে বলল, ‘পান্তা আছে?’
রেনু বলল, ‘আছে।’
‘দেও, খাইয়া কামে বাইর অই।’
রেনু খাবার বাড়তে গেল। আব্বাস ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। যন্ত্রণায় তার ভেতরটা কুঁকড়ে যাচ্ছে কাল থেকে। নিজের আয়ের সর্বস্ব ঢেলে দিয়েছে সে এই পরিবারের জন্য। এক কানাকড়িও জমানো নেই তার। কীভাবে সে সামনের দিনগুলো পার করবে, জানে না। কীভাবে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেবে, কীভাবে মেয়ে বিয়ে দেবে, কিছুই জানে না। শুধু আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে শক্ত রয়েছে। তিনি কোনো দিন অভুক্ত রাখেননি। সকল বিপদ থেকে তিনি রক্ষা করেছেন। এবারও নিশ্চয়ই তিনি কোনো ব্যবস্থা করবেন।
.
হালিমা ঘুম থেকে উঠে দেখেন রাতের বাসনকোসন এখনো নোংরা পড়ে রয়েছে। তিনি ঘুম থেকে ওঠার আগেই মিনা এসব পরিষ্কার করে ফেলে। কিন্তু কাল থেকে যেহেতু তারা আলাদা, এখানে খায় নি, এসব তো তার পরিষ্কার করার কথাও না। কিন্তু রেনুটা ভালো, কী সুন্দর হাঁস-মুরগিদের খোপ থেকে বের করে খাবার দিয়ে দিয়েছে।
হালিমা রেহানাকে ডেকে বললেন, ‘যাও বউ, থালাবাসনগুলা ধুয়া নিয়া আহো।’
গতকাল বললেও রেহানা হয়তো কাজটা করত কিন্তু আজ সে স্পষ্ট বলল, ‘মুই পারমু না, আম্মা। মোর হাত দেহেন। আমনের কী মনে অয়, মুই কোনো দিন এগুলা করছি?
রেহানা নিজের দুই হাত সামনে মেলে ধরল। হালিমা অবাক হয়ে বললেন, ‘কোনো দিন করো নাই, তাতে অইছেডা কী? কোনো দিনের লগে এহনের তুলনা কইরো না। বউ অইছো, কাম তো করাই লাগবে, নায় সংসার ক্যামনে চলবে?’
‘তাইলে তো কামের মানুষ আনা লাগত, আম্মা। বউ আনছেন ক্যা?’
হালিমার মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ হলো। তিনি রেগে গিয়ে বললেন, ‘তুমি যে এত বড় বেয়াদব, এইডা আগে জানলে তো আনতাম না। তোমার মায়ে তোমারে কিছু হিকায় নাই?’
‘আম্মা, আমনে যা খুশি ভাবতে পারেন। মোর বাপের বাড়িতে সব সময় তিনখান কামের মানুষ। কোনো দিন একখান থাল ধুইয়া খাইতে অয় নাই। এইখানেও কোনো কাম করতে পারমু না। ঘরের কাম করোনের অভ্যাস মোর নাই। আমনের আসলে গরিব ঘর থিকা একখান মাইয়া আনা লাগদো। আমনের ঘরের সব কাম কইরা দিত।
হালিমা ধমকে উঠে বললেন, ‘খবরদার, বাপের পয়সার গরম দেহাবি না। আগের সংসার এই দেমাগের লাইগ্যাই টিকাইতে পারোস নাই এহন বুঝতেয়াছি। মোরা না আনলে তোর মতো সংসারভাঙা কালীরে কেডা বিয়া করত?’
রেহানা হেসে বলল, ‘আম্মা, মোরে এই সব খোঁটা দিয়া বেশি সুবিধা করতে পারবেন না। মুই আমনের অন্য দুই বউয়ের মতো না। রান্দা অইলে ডাক দিয়েন, খিদা লাগসে।’
রেহানা নিজের ঘরে ঢুকে গেল। হালিমা রাগে জ্বলন্ত কয়লার মতো জ্বলতে লাগলেন।
.
মধু পাশের বাড়ির ছেলেমেয়েদের সাথে খেলতে গিয়েছিল। সন্ধ্যা হতেই ফিরে এল। হাত-পা কাদামাটিতে একাকার। মিনা তাকে পুকুরে নিয়ে হাত-পা ধুয়ে কোলে করে ঘরে নিয়ে এল। সোজা বিছানায় বসিয়ে গামছা দিয়ে হাত-পা মুছে দিচ্ছিল। মধু তখন তার মায়ের নাকের ফুলটা খুঁটছিল। এই তার এক বদভ্যাস। সুযোগ পেলেই মায়ের নাকফুল, কানের দুলে এসব খুঁটতে থাকে। কী যে মজা পায় কে জানে। কিছু বললেই হে হে করে হাসে।
হাত-পা মুছে মধুকে পড়তে বসাল মিনা। আজ বসেছে আরবি নিয়ে। বই খুলে মিনা আরবি হরফের ওপর মধুর আঙুল রেখে বলল, “বাবা, কও আলিফ…।’
মধু এক টানে সুর করে করে বলল, ‘আলিফ বে তে ছে, মুন্সি ওঠসে বরইগাছে, ছবক দেবে কে?’
মিনার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। সে বলল, ‘এই বান্দরের ঘরের বান্দর। একটা ছড়া তো এহনো মুখস্থ করাইতে পারলাম না। অ আ এহন পর্যন্ত পারোছ না। এই সব হাবিজাবি কইত্তা হেকছস।’
মধু দাঁত বের করে হে হে করে হাসল। মিনা একটা চড় মারল। মধু ভ্যাঁ করে কেঁদে দিল। এরপর আর কিছুই পড়ানো গেল না তাকে। শেষমেশ পড়াশোনার পাট তুলে রেখে ছেলেকে ভাত খাওয়াতে বসল মিনা। মার খেয়ে এখন ভাত খেতে চাইছে না ছেলে। এমন সময় শব্দ শুনে মিনা বাইরে তাকাল। ঘর থেকেই দেখতে পেল কল চেপে হাত-মুখ ধুচ্ছে মুকুল। সন্ধ্যাবেলা মানুষটাকে বাড়ি ফিরতে দেখে ভেতরে-ভেতরে মিনা খুশিতে দিশাহারা হয়ে গেল।
মুকুলও বাইরে থেকে মা-ছেলের কথা শুনছিল। ঘরে ঢুকেই বলল, ‘কী ব্যাপার, আব্বা, ভাত খাইতে চাও না ক্যা?’
মধু লাফিয়ে উঠে বলল, ‘আব্বা আইছে! আব্বা আইছে! আব্বার হাতে ভাত খামু।’
এত দিন মধুর সঙ্গে মুকুলের দেখা হয়েছে কেবল ভোরে। রাতে মুকুল ফেরার আগেই মধু ঘুমিয়ে পড়ত। আজ রাতে বাবাকে দেখে সে-ও ভীষণ খুশি।
মিনা বলল, ‘আব্বা হপায় কামেইত্তা আইছে, জিরাইতে দেও।’
‘সমেস্যা নাই, দেও খাওয়াই দেই।’
এ কথা বলেই মুকুল বসে পড়ল ছেলেকে খাওয়াতে। মধু ভদ্র ছেলের মতো সুরসুর করে বাবার হাতে পুরোটা ভাত খেয়ে নিল। খেতে খেতেই সে ঘুমে ঢলে পড়ছিল। খাওয়া শেষে টুপ করে ঘুমিয়ে পড়ল। মিনা মশারি টানাতে টানাতে বলল, ‘তোমারে এহনই ভাত দিয়া দিমু?’
‘দেও। খিদা লাগছে।’
মিনা ভাত বেড়ে দিল। মুকুল খেতে শুরু করতেই সে একদৃষ্টে চেয়ে রইল। মুকুল খেতে খেতে বলল, ‘তুমিও খাও। বইয়া রইছ ক্যা?’
মিনা এবার নিজের জন্য ভাত বাড়তে বাড়তে জিজ্ঞেস করল, ‘আইজ এত হকালে আইলা? রাগ গেছে তাইলে?’
মুকুল সলজ্জে হেসে বলল, ‘খাওনের সময় এত কতা কয় না। চুপ কইরা খাও তো।’
হারুন ব্যাপারী আসরের নামাজ পড়ার জন্য পুকুর থেকে অজু করে এলেন। এসে দেখেন ধুনারি (লেপ-তোশক বানানোর কারিগর) এসে উঠানে বসে আছে। তিনিই ডেকেছেন নতুন লেপ বানানোর জন্য। পুরোনো লেপগুলো অল্প দিনেই ভারী হয়ে গেছে। গায়ে দিতে কষ্ট হয়। তুলা ভালো পড়ে নি। তাকে দেখেই হারুন ব্যাপারী বললেন, ‘কি হে ধুনারি, তোমাকে বলছিলাম সকালে আসতে। এটা একটা আসার সময় হইল?’
‘বেইন্যাবেলায় ম্যালা কাম আছিল, ব্যাপারী সাব। মাফ করবেন।’
‘দাঁড়াও, তোমার চাচিরে ডেকে দেই। সে যেমন লেপ চায়, তেমন করেই বানাইয়া দিয়ো। খরচ বেশি পড়লে দাম বেশি নিবা। জিনিস যেন ভালো হয়।’
‘জিনিস নিয়া আমনে কোনো চিন্তা কইরেন না, সাব। খুব ভালো কইরা বানাইয়া দিমু।’
.
হারুন ব্যাপারী ভেতরে ঢুকতেই তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম এসে বললেন, ‘আবদুর রহমান আসছে। আপনের সাথে দেখা করতে চায়। বলল খুব জরুরি।’
‘নামাজটা পড়ে যাইতেছি। ধুনারি আসছে, উঠানে বসা। যাও, তারে মাপঝোপ সব বুঝাইয়া দাও।’
‘আচ্ছা।’
হারুন ব্যাপারী নামাজটা সেরে কাছারিঘরে গেলেন। আবদুর রহমান তার মাছের আড়তের এক কর্মচারী। খুব বিশ্বস্ত লোক। তাকে দেখামাত্র উঠে দাঁড়াল, চোখেমুখে আতঙ্ক। তিনি বললেন, ‘বসো আবদুর রহমান। আমি তো একটু পরেই আড়তে যাইতাম। কী এমন জরুরি খবর যে এত দূর থেকে বাড়ি আসলা?’
‘সর্বনাশ অইয়া গেছে, চাচা।’
হারুন ব্যাপারী ভ্রু কুঁচকে বললেন, ‘কী সর্বনাশ? সরাসরি বলো।’
‘উকিল সাব খুন অইছে।’
চমকে উঠলেন হারুন ব্যাপারী। নিজের অজান্তেই তার মুখ থেকে বের হলো, ‘আলমগীর মৃধা খুন হয়েছে?’
‘জি চাচা। রাইতের অন্ধকারে গলা কাইটা হ্যার বাড়ির রাস্তায় ফালাইয়া রাখছে। আমনেরে কইছিলাম জয়নাল মির্জা দরকারে খুনও করতে পারে। এর আগেও হে এরম অনেক কাম করছে।’
হারুন ব্যাপারী একটুও সময় নষ্ট না করে তৎক্ষণাৎ পটুয়াখালী রওনা দিলেন।
জেসমিন দুপুরবেলা গোসল করে এসে পৌষের মিষ্টি রোদে বসে চুল ঝাড়ছিল। তখন মতি এল রঞ্জুর চিঠি নিয়ে। রঞ্জুকে চিঠি পাঠানোর এক দিন পর থেকেই নিয়মিত মতিকে পোস্ট অফিসে পাঠায় সে। চিঠি না আসা পর্যন্ত পাঠাতে থাকে। চিঠিটা হাতে নিয়ে জেসমিন সোজা নিজের ঘরে ঢুকল। দরজা লাগিয়ে বিছানার ওপর আয়েশ করে পা ঝুলিয়ে বসে চিঠি খুলে পড়তে শুরু করল :
তুমি নেই সঙ্গে সখী
তুমি নেই চোখেরও সমীপে,
আছ তুমি অঙ্গে সখী
আছ পরশ ও প্রতাপে।
যে অঙ্গসুধা এনেছি ভরে হৃদয়কোটর,
ফুরাবে না গেলে সহস্র কোটি বছর।
তুমি নেই বক্ষে সখী
তুমি নেই কক্ষে,
আছ তুমি রোমন্থনে
আছ স্মৃতির দংশনে।
প্ৰিয় জেসমিন,
তোমার চিঠি পেয়েছি। আশা করি তুমিও ভালোই আছ। গত সপ্তাহে বাবার চিঠি পেয়েছিলাম। তিনি জানিয়েছেন যে তুমি আমাদের বাড়ি গিয়েছ। তুমি যাওয়াতে তারা দুজনেই খুব খুশি হয়েছেন।
তোমার কামিনীগাছ দেখি ভালোই কথা শিখেছে। এরপর গেলে তাকে বলো, খুব দ্রুতই তার কাছে আমাদের ভালোবাসার সুবাস পৌঁছাবে।
আর শোনো মেয়ে, কামিনী শীতে ফোটে না। এটা বর্ষার ফুল। বর্ষা আসলেই আবার ফুটবে, তুমি-আমি থাকি বা না থাকি।
জেসমিন, আর কটা দিন একটু কষ্ট করো। আমি এখন বাড়ি গেলে এই ক’মাস আমার ঢাকা থাকা বৃথা। কারণ, আমার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষাগুলো দিয়ে চলে আসব। এর পর থেকে আর ক্লাস করব না, শুধু পরীক্ষার সময় এসে পরীক্ষা দেব। তোমাকে ছেড়ে থাকাটা আমার জন্য কতটা কষ্টের, আশা করি বুঝবে। একটু ধৈর্য ধরো, লক্ষ্মী বউ আমার। খুব শীঘ্রই তোমার নাইয়র শেষ হবে।
ভালোবাসা নিয়ো।
ইতি তোমার রঞ্জু
আলমগীর মৃধার মৃত্যুর আগেই মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছিল। হারুন ব্যাপারী আলমগীর মৃধার সহকারীর কাছ থেকে সকল তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে শুনানির দিনে আদালতে উপস্থিত হন। বাদীপক্ষের উকিল জীবিত না থাকায় আদালতে উপস্থিত হতে পারেন নি। কিন্তু তার রেখে যাওয়া সকল তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করা হয়েছে। বিবাদীপক্ষ সমনপত্র গ্রহণ করেও আদালতে উপস্থিত না হওয়াতে সকল তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে কালিশুরির জমির দখল হারুন ব্যাপারীকে হস্তান্তর করেছে আদালত। উক্ত জমিটি এত দিন অন্যায়ভাবে ভোগদখলের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ জয়নাল মির্জাকে জরিমানা করা হলে হারুন ব্যাপারী জানালেন, তিনি ক্ষতিপূরণ চান না। জমি ফেরত পেলেই তিনি খুশি। হারুন ব্যাপারী ভীষণ আনন্দিত। অবশেষে তার স্বপ্নের জমিখানা তার হলো। জয়নাল মির্জাকে কোনো উচ্চবাচ্য করতে দেখা গেল না। তিনি বিনা বাক্যে জমির দখল ছেড়ে দিলেন।
মাঘ মাস। টানা কদিন রোদের দেখা ছিল না। এমন দিনে রেনুর হাতে পায়ের গিঁটে গিঁটে বাতের ব্যথা হয়। বিরক্তির শেষ থাকে না। আজ কড়া রোদ উঠেছে। শরীরটাও তাই ভালো। সকালের কাজ গুছিয়ে রান্না চড়াতে যাবে, এমন সময় দেখে হালিমা মাছ কুটছেন কিন্তু মাছটা বড় হওয়াতে তার কষ্ট হচ্ছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের জোর কমে গেছে। রেনুর বড় মায়া হলো।
সে গিয়ে বলল, ‘আম্মা, আমনের কষ্ট হইতেয়াছে। মোর ধারে দেন। মুই কুইট্টা দেই।’
হালিমা সঙ্গে সঙ্গে সরে গিয়ে বললেন, ‘দে মা, দে। তোর বাপ-মা যে শিক্ষা তোরে দিছে, আইজকাইলকোর পোলাপানের হেই শিক্ষা নাই।’
রেনু এ বিষয়ে কথা বলল না। সে মাছ কুটতে কুটতে হালিমা মসলা গুছিয়ে এনে বললেন, ‘ইট্টু মসল্লা বাইড্ডা দিবি, মা?’
রেনু মসলা বেটে তরকারি কুটে সব গুছিয়ে বলল, ‘আম্মা, রান্দা বহাই দিমু?’
হালিমার মনে হলো, এত বড় মাছ দেখে রেনুর বুঝি লোভ হলো। তাই রাঁধতে চাচ্ছে। আব্বাস ঘরে মাছ আনে না কত দিন কে জানে! রাঁধলে আবার তাকে ভাগ দিতে হয় যদি!
তাই বললেন, ‘না, মুই রানতে পারমু। তুই তোর কামে যা। তোর তো সব কাম পইড়া রইছে।’
‘আচ্ছা। আমনে এত কাম একলা একলা করেন, আম্মা। কষ্ট অইলে মোরে ডাক দিয়েন।’
হালিমা দাঁত বের করে হাসলেন। রেনু নিজের রান্নাঘরে এসে রান্নার জোগাড় শুরু করল। রান্নাঘর বলতে ঘরের পাশে খোলা জায়গায় কদিন আগে পাতা দুমুখো মাটির চুলা। চুলাটিকে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে আব্বাস ওপরে পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েছে। বলেছে দ্রুত একটি ছাউনির ব্যবস্থা করে দেবে।
রেনুর আজকের মেনু ডাল, ভাত আর কাঁচাকলার নিরামিষ। ঘরে বাজার নেই। উঠানের মাটির এমন দশা যে কোনো শাকসবজিও হয় না। জঙ্গলের কলাগাছ থেকে এক কাঁদি কলা নিয়ে এসে কুটতে বসেছে। এমন সময় মিনা এল। রেনু বলল, ‘জলচকিডা টাইন্না বয়। শইলডা বালো?’
‘আমি তো বালো। তোমার বাতের ব্যতা কোমছে?’
রেনু হেসে বলল, ‘হয়। আইজ ব্যতা নাই।’
মিনা রাগি গলায় বলল, ‘হেইলাইগ্যাই কামলা দিতে গেছিলা বুজি? এত কিছুর পরেও তুমি ক্যামনে পারো, ভাবি? এত দরদ কইত্যা আহে?’
রেনু হেসে বলল, “ধুর পাগল। বুড়া মানুষ একলা কি এত পারে? কষ্ট অইতেয়াছিল।
‘হে কি তোমার কষ্ট দেহে?’
রেনু আবারও হেসে বলল, ‘আমার আল্লায় দেহে।’
এবার মিনা হেসে দিল। জলচৌকি টেনে বসল। তার হাতে মাছভর্তি বাঁশের খালই।
সেটাকে মাটিতে রেখে বলল, ‘তোমার দেওরে মাছ ধরছে। ভাইজানের পছন্দমতো রাইন্দা দিয়ো।’
‘ও বাবা, এত মাছ! সব লইয়াইছস দি? তোরা খাবি কী?’
মিনা ভেংচি কেটে বলল, ‘কইছে তোমারে! ম্যালা মাছ কোপাইছে আইজ। অর্ধেক আনছি।’
রেনুর চোখে জল এসে গেল। আলাদা হওয়ার পর থেকে এমন দিন কখনোই আসে নি যে ঘরে রান্না করার মতো কিছু নেই। আজই প্রথম এমন দিন এল আর আজই এত মাছ! সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা নুইয়ে এল। কার রিজিক কোথায় লেখা আছে, তা শুধু তিনিই জানেন।
.
রেহানার চিঠি হাতে বসে আছে মামুন। মনটা প্রচণ্ড বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। না, কোনো খারাপ খবর নয়। সে লিখেছে মামুনহীন তার একাকিত্বের কথা। যা পড়ে অস্থির লাগছে মামুনের। সে অবাক হয়ে ভাবছে, যাকে বিয়েই করতে চায় নি, সেই রেহানার জন্যই তার এখন এতটা উতলা লাগে। যে মুখটা তার পছন্দ হয় নি তখন, সেই মুখটা দেখার জন্যই এখন হাঁসফাঁস লাগে! কেমন মায়ার বাঁধনে বেঁধেছে সে তাকে? এ কোন মায়া?
মামুন তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিল, রেহানাকে তার কাছে নিয়ে আসবে। এখন সে মেসে থাকে। রেহানাকে আনলে ভালো পরিবেশে একটা ঘর নিতে হবে। তাই নেবে সে। দ্বিগুণ খরচ হবে। তা একটু হোক। টাকা অনেক আসবে- যাবে, কিন্তু জীবন থেকে এই দিনগুলো হারিয়ে গেলে আর ফিরে আসবে না।
.
আজ মুকুল ফেরার আগেই মিনা মধুকে ঘুম পাড়িয়ে দিল। তারপর একটু সাজগোজ করল। আজকের দিনটা খুব বিশেষ। অনেক দিন অপেক্ষা করেছে সে এমন একটা দিনের জন্য।
মুকুল ফিরে মিনাকে দেখেই দুষ্টু হেসে বলল, ‘ঘটনা কী? আইজ নায়িকার মন এত ফুরফুরা ক্যা?’
মিনা ভেংচি কেটে বলল, ‘এহ্, মুই বুঝি নায়িকা?’
মুকুল কাছে এসে মিনার গাল টিপে বলল, ‘হয়, নায়িকাগো মতোই তো সাজছ।
মিনা বলল, ‘তয় আইজ মোর মন সত্যই ফুরফুরা, এইল্লাইগ্যাই সাজছি। তোমার লাইগ্যা একটা সুখবর আছে।’
মুকুল দুহাত মিনার দুই কাঁধের ওপর রেখে বলল, “তাই নাকি? হকালে কও?’
মিনা মাথা নিচু করে হেসে বলল, ‘তুমি আবার বাপ হবা।’
মুকুল খুশি হলো বটে, তবে হারিয়ে ফেলা বাচ্চাটার কথা মনে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই বুকের ভেতর একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল। মিনার চোখকে ফাঁকি দিতেই তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ। খুব খুশি হইছি।’
মিনা মুকুলের বুকে মাথা রেখে জানতে চাইল, ‘এইবার কী চাও, পোলা, না মাইয়া?’
মুকুল একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বলল, ‘আল্লাহ যা দেয়।’
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন