রানা! সাবধান!! – ১১

কাজী আনোয়ার হোসেন

এগারো

বেলজিয়ামের ফেব্রিক ন্যাশনালের তৈরি করা থ্রী-টু ক্যালিবার, স্ট্রেট ব্লো ব্যাক অ্যাকশন, হ্যামারলেস্ ব্রাউনিং পিস্তলটা গর্জে উঠল দু’বার। ঠুস করে ফাটল কাঁচের জারটা- সব অ্যাসিড পড়ে গেল মাটিতে, ছিটকে পাঁচ হাত দূরে পড়ল ললিতার হাতে ধরা পিস্তলটা। দ্বিতীয় গুলিটা ওর বাম বাহুর বেশ খানিকটা মাংস ছড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ব্যথায় কুঁচকে গেছে ললিতার বীভৎস মুখ।

চমকে চাইল সবাই পাহাড়ের দিকে। একটা গাছের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধোপদুরস্ত জামা-কাপড় পরা সাড়ে ছয়ফুট লম্বা একজন লোক। চওড়া কাঁধ, প্রকাণ্ড মাথা, মাথা ভর্তি ব্যাকব্রাশ করা কোঁকড়া চুল। পিস্তলটা শোল্ডার হোলস্টারে ঢুকিয়ে রাখছে লোকটা এখন। প্রথম দর্শনেই চিনতে পারল রানা- কবীর চৌধুরী! পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ইণ্ডিয়ান সিক্রেট সার্ভিসের বর্তমান অ্যাসিস্ট্যান্ট-চীফ জেনারেল গোবিন্দ রাজলু। সামরিক ইউনিফরম তার পরনে।

ধীরে ধীরে নেমে এল কবীর চৌধুরী এবং গোবিন্দ রাজলু। খটাখট বুটের শব্দ তুলে স্যালুট করল সিপাইগুলো।

‘আপনি…আপনি এখানে এলেন কি করে!’ ভীত কণ্ঠে বলল ললিতা। কয়েক সেকেণ্ড ললিতার ভয়ঙ্কর মুখের দিকে চেয়ে রইল কবীর চৌধুরী। কোন উত্তর না দিয়ে ফিরল রানার দিকে।

‘মাসুদ রানা! বহুদিন পর দেখা। চিনতে পারো? মনে আছে রাঙামাটির পাহাড়ের নিচে সেই বিস্ফোরণের কথা? আমার সারা জীবনের সাধনা, অক্লান্ত পরিশ্রমকে পণ্ডশ্রমে পরিণত করেছিলে তুমি। বুক কাঁপছে না আমাকে দেখে?

‘না। আমি অন্যায় প্রতিরোধ করেছিলাম। তখন বুক কাঁপেনি, এখন কাঁপবে কেন? মৃত্যুর বেশি তো আর কিছু হতে…’

‘পারে। তার চেয়েও ভয়ঙ্কর অনেক কিছু আছে এই পৃথিবীতে। এ ব্যাপারে পরে আলাপ করা যাবে, আপাতত কয়েকটা কাজ সেরে নিই। নাও, শুরু করো, রাজলু।’

‘একে খুন করবার অধিকার কে দিয়েছে তোমাকে, কর্নেল বটব্যাল?’

‘একে বন্দী করে ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছিলাম, স্যার, ও পালাবার চেষ্টা করেছিল তাই…’

‘আমি নিজের চোখে সব দেখেছি, কর্নেল।’

‘আমি লিখিতভাবে এক্সপ্লেনেশন দেব, স্যার। আমি…আসলে…’

‘থাক। এখন কিছু শুনতে চাই না আমি। সাদেক খান আর ডক্টর ফৈয়াজ কোথায়?’

‘ট্রাকে। ক্লিনিকে ফেরত নিতে যাচ্ছিলাম আমি ওদের।’

‘এই টিলার ওপাশে আমার হেলিকপ্টারে তুলবার আদেশ দাও ওদেরকে। তোমাকেও অ্যারেস্ট করে নিয়ে যেতাম, কিন্তু জায়গা হবে না। কম্পিউটার ধ্বংস থেকে শুরু করে বারোটা চার্জ আছে তোমার বিরুদ্ধে ইলোরে ফিরে উপযুক্ত কৈফিয়ৎ তৈরি করবার চেষ্টা করো গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায়। মাসুদ রানাকে নিয়ে যাচ্ছি আমরা ক্লিনিকে।’

‘কিন্তু স্যার…যদি আমাকে…’ কিছু বলতে যাচ্ছিল ললিতা সেদিকে কর্ণপাত না করে ঘুরে দাঁড়াল গোবিন্দ রাজলু।

‘ওই ওপাশ দিয়ে একটা ভাল রাস্তা আছে। চলো, চৌধুরী, একটু ঘুরেই যাই। আসুন মেজর মাসুদ রানা, ক্লিনিকে ফিরে যেতে হবে আপনাকে আজ রাতের জন্যে। কাল সকালে নিয়ে যাওয়া হবে আপনাকে নয়াদিল্লী। অনেক কথা জানবার আছে আমাদের, কি বলো, চৌধুরী?’

নিবিষ্ট চিত্তে সিগারেট টানছে কবীর চৌধুরী, মুচকি হাসল একটু।

.

ছোট লঞ্চটা দাঁড়িয়ে আছে ঘাটে। হেলিকপ্টার সবাইকে নামিয়ে দিয়ে গোবিন্দ রাজলুকে নিয়ে চলে গেল হায়দ্রাবাদ। বিকেল সাড়ে পাঁচটা। সারাদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি একটিবারও। কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ। দূরে আবছা মত দেখা যাচ্ছে ওঙ্কার দ্বীপ। বাতাসের বেগ বেড়েছে, বড় বড় ঢেউ উঠছে দু’শো চল্লিশ বর্গমাইল জোড়া প্রকাণ্ড কোলায়ের লেকের গভীর হৃদয় মন্থন করে। ঢেউয়ের মাথায় সাদা ফেনা। রানা ভাবল ঝড় আসবে না তো আবার?

বাম পা-টা সামান্য টেনে টেনে লঞ্চে উঠল কবীর চৌধুরী রানার পিছন পিছন।

‘আমাদের ক্লিনিকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে কেন?’ জিজ্ঞেস করল রানা। ‘ললিতার প্রতিহিংসা থেকে রক্ষা করবার জন্যে। শহরে রাখা মোটেই নিরাপদ হত না। কাল সকালে দিল্লী থেকে জেট এসে নামবে ইলোর এয়ার স্ট্রিপে। তাতে করেই তোমাদের নিয়ে যাওয়া হবে দিল্লী।

‘শুধু আমাকে, না ডক্টর ফৈয়াজদেরও?’

‘সবাইকে।

‘কেন? কম্পিউটারের শখ মিটে গেছে তোমাদের?’

‘না। রিসার্চ চলবে এবার দিল্লীতে। এই দ্বীপটা খালি করা হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। তোমার বোমাটা ফাটতেই বোঝা গেছে এতবড় প্রজেক্টের পক্ষে ভয়ঙ্কর ছিল ওঙ্কার দ্বীপ।

‘ভয়ঙ্কর ছিল মানে?’

‘কয়েক দিনের মধ্যে ডুবে যাবে দ্বীপটা পানির তলায়। কম্পিউটার রূম থেকে প্রচণ্ড বেগে পানি উঠছে ওপরে। কয়েকটা ফাটল সৃষ্টি হয়েছে পুরো দ্বীপটার বুক চিরে। দ্রুত ইভাকুয়েট করা হচ্ছে দ্বীপ।

ঠিক সাড়ে ছয়টায় পৌঁছল লঞ্চ ওঙ্কার দ্বীপে। পুরো চব্বিশ ঘণ্টাও হয়নি, মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল রানা এখান থেকে বেরিয়ে। কপাল খারাপ, আবার আসতে হলো ফিরে। লক্ষ করল রানা দ্বীপের ওপর গার্ড এবং লোকজনের স্বল্পতা। লম্বা সার বাঁধা ব্যারাকগুলো অন্ধকার। ল্যাবরেটরি এলাকার দুটো গেটই খোলা। একটা গার্ড কেবল দাঁড়িয়ে আছে দ্বিতীয় গেটে।

সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ব্লকের ধ্বংসাবশেষ ভৌতিক দেখাচ্ছে। আশপাশের কয়েকটা দালানেরও দরজা জানালা পোড়া। জানালার কাঁচগুলো ভেঙে গেছে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের ঝাঁকুনিতে।

এগিয়ে এল ক্যাপ্টেন খান্না।

‘স্বাগতম, মাসুদ রানা, ডক্টর ফৈয়াজ। যেখানকার জল সেখানেই এলেন ফিরে- মাঝের এই দৌড়াদৌড়ির সত্যিই কোন প্রয়োজন ছিল কি? আসুন, আপনাদের ঘরে পৌঁছে দিই।’

ক্যাপ্টেন খান্নার হাতে ওদের ছেড়ে দিয়ে কবীর চৌধুরী চলে গেল ওর নির্দিষ্ট ঘরে। একটা খালি ওয়ার্ডে নিয়ে এল খান্না রানাদের। সুইচ টিপতেই ম্লান হলুদ আলো জ্বলে উঠল ঘরের মধ্যে।

‘আমাদের এঞ্জিনিয়াররা সবাই চলে গেছে দ্বীপ ছেড়ে- ইমার্জেন্সী জেনারেটারটা কেবল চালু আছে। আশাকরি এত কম আলোয় অসুবিধা হবে না আপনাদের। আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি। ইচ্ছে করলে সান সেরে নিতে পারেন আপনারা। আর দয়া করে দ্বিতীয়বার পালাবার চেষ্টা করবেন না। দশজন গার্ড পাহারা দিচ্ছে এই ওয়ার্ডটা। যদি ওদের চোখে ধুলো দেয়া সম্ভব হয়ও, দ্বীপ ছেড়ে আজ আর কোথাও যাবার উপায় নেই। লঞ্চটা ফিরে গেছে পনেরোজন পেশেন্ট আর দশজন স্টাফ নিয়ে- আজ রাতে আর আসবে না।

‘পেশেন্টদেরও সরিয়ে ফেলা হয়েছে?’ জিজ্ঞেস করল শায়লা।

‘বেশির ভাগই। শুধু ছয়জন বদ্ধ-পাগল খুনের আসামী রয়েছে, কাল সকালে পার করা হবে ওদের কড়া পাহারা দিয়ে। দ্বীপে এখন পাঁচজন মেইল নার্স, দশজন সশস্ত্র গার্ড আর আমরা ছাড়া কেউ নেই। কালই খালি হয়ে যাবে সব। যাক, আপনারা বিশ্রাম করুন, আধঘণ্টার মধ্যেই খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।

সাদেক খানকে শুইয়ে দেয়া হয়েছে একটা বেডের ওপর। দ্রুত শ্বাস- প্রশ্বাস চলছে ওর। ডক্টর ফৈয়াজ পরীক্ষা করে দেখছেন ওকে আর নৈরাশ্যব্যঞ্জক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ছেন এদিক-ওদিক। ক্যাপ্টেন খান্না বেরিয়ে যেতেই রানার পাশে চলে এল শায়লা।

‘অনেক চিন্তা করে দেখলাম, রানা। এখান থেকে পালানো অসম্ভব। কোনও উপায় নেই।’ শায়লার কণ্ঠে হতাশা।

‘এখনও তুমি পালাবার কথা ভাবছ?’ বলল রানা মৃদু হেসে। ‘আরও কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে তোমাদের। দিল্লীতে গবেষণা চলতে থাকুক, দেখবে ঠিক সময় মত পৌঁছে যাবে আমাদের লোক।’

‘কিন্তু সেই লোকের জন্যে কান্না আসবে না যে!’ টপটপ করে কয়েক ফোঁটা পানি পড়ল ওর গাল বেয়ে।

শায়লার একটা হাত তুলে নিল রানা নিজের হাতে। মৃদু চাপ দিল। তারপর চাপা স্বরে বলল, ‘যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। চোখের পানি আগে থেকেই সব খরচ করে ফেলো না, শায়লা। হাল আমি ছাড়িনি। প্ল্যানও ঠিক বের করে ফেলব একটা। আচ্ছা, থিসিসের শেষের অংশটুকু কোথায় রেখেছেন তোমার আব্বা?

‘হুইল চেয়ারের ডানদিকের হাত রাখবার জায়গাটা ফাঁপা…’

হঠাৎ চিৎকার করে উঠলেন ডক্টর ফৈয়াজ।

‘রানা! জলদি এসো এদিকে। শায়লা, সিরিঞ্জ নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি।’

চোখ উল্টে গোঁ-গোঁ করছে সাদেক খান, উঠে বসবার চেষ্টা করছে। ওকে ধরে রাখতে পারছেন না ডক্টর ফৈয়াজ।

‘কি হয়েছে ওর?’ দুই কাঁধ ধরে বিছানার সাথে চেপে রেখে জিজ্ঞেস করল রানা।

‘লোকটা বোধহয় মারাই যাচ্ছে, রানা। এমনিতে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, তার ওপর ছয়-ছয়টা ইঞ্জেকশন পড়েছে আজ।

ছুটে গিয়ে ওষুধ আর সিরিঞ্জ নিয়ে এল শায়লা। ইঞ্জেকশন পড়তেই ঝিমিয়ে এল সাদেক খান। ঘরে প্রবেশ করল কবীর চৌধুরী।

‘এক্ষুণি লোকটাকে হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার,’ বললেন ডক্টর ফৈয়াজ।

‘সেটা কোনমতেই সম্ভব নয়। কালকের আগে কিছুই সম্ভব নয়। দেখুন, ততক্ষণ বাঁচিয়ে রাখতে পারেন কিনা।’

চট করে চাইল শায়লা রানার চোখের দিকে। অর্থাৎ, মাইক্রোফোন আছে এই ওয়ার্ডেও। ডক্টর ফৈয়াজের ডাক শুনেই ছুটে চলে এসেছে কবীর চৌধুরী, জানে, লোকটা মারা যাচ্ছে।

‘আমার তো মনে হয় দুই ঘণ্টাও টিকবে কিনা সন্দেহ,’ মাথা দোলালেন ডক্টর ফৈয়াজ।

‘তাতে কি বিশেষ ক্ষতিবৃদ্ধি আছে, ডক্টর ফৈয়াজ? ওর সাহায্য ছাড়াও তো আপনি তৈরি করতে পারেন কম্পিউটারটা, তাই না?’

‘পারব। কিন্তু অসুবিধে হবে।’

‘প্ল্যানের শেষের অংশটুকু কোথায়?’

‘কেন?’ জিজ্ঞেস করল রানা। ‘ওটুকু পেয়ে গেলেই নিশ্চিন্তে এদের খুন করা যায়, তাই না? খবরদার, ডক্টর ফৈয়াজ! ওইটাই আপনার হাতের টেক্কা। ওটা আপনার হাত থেকে খসিয়ে নিতে পারলেই ওদের কাছে এক কানাকাড়ি মূল্যও থাকবে না আর আপনার।

রানার দিকে চেয়ে মৃদু হাসল কবীর চৌধুরী। হঠাৎ মট করে ভেঙে ফেলল হুইল চেয়ারের একটা হাতল। ব্রাউনিং পিস্তলটা ধরা আছে রানার বুকের দিকে। বেরিয়ে গেল সে ঘর থেকে এক পা এক পা করে পিছিয়ে গিয়ে।

সংবিৎ ফিরে পেয়ে ধাওয়া করতে যাচ্ছিল রানা, বাধা দিল শায়লা।

‘তোমার কোন দোষ নেই, রানা। কেন শুধু শুধু প্রাণ দেবে ওটার জন্যে। আব্বাজী, একটু আগে আমিই বলেছিলাম রানাকে থিসিসের শেষ অংশটা কোথায় আছে। এই ওয়ার্ডেও যে ওরা মাইক্রোফোন লাগিয়েছে বুঝতে পারিনি আমি।’ ক্ষোভে বুজে এল শায়লার কণ্ঠস্বর।

শীর্ণ একটা হাত বাড়িয়ে শায়লার হাত ধরলেন বদ্ধ। শান্ত কণ্ঠে বললেন, ‘দুঃখ করিস নে, মা। কয়েকদিন এগিয়ে এল মৃত্যুটা, এছাড়া তো আর কিছুই ক্ষতি হয়নি।

কোন ভরসাই আর রইল না। শায়লার মনে হলো মহাপ্রলয়ের আগের রাতে একসাথে জড়ো হয়েছে যেন ওরা তিনজন। মৃত্যু ওদের অনিবার্য। কোন আশা নেই- সম্পূর্ণ নিরুপায় ওরা। কোন অনুনয়, কোন প্রার্থনাই আর মঞ্জুর হবে না ওদের। মরতেই হবে। ফাঁসীর আসামীর ফাঁসীর ঠিক আগের রাতে কেমন অনুভূতি হয় বুঝতে পারল শায়লা। ডুকরে কেঁদে উঠতে ইচ্ছে করল ওর।

অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। রাত এগারোটা। বিছানার ওপর এপাশ ওপাশ ফিরছে রানা কেবল, কিছুতেই কোন বুদ্ধি খেলছে না মাথায়। উদ্ভট সব প্ল্যান আসছে, যেগুলো বাস্তবায়িত করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।

এমনি সময় চিৎকার করে উঠল সাদেক খান। তড়াক করে খাট থেকে নেমে এগিয়ে গেল রানা। ছুটে এল শায়লাও। ডক্টর ফৈয়াজও আসছেন।

ছটফট করছে সাদেক খান। ফেনা বেরোচ্ছে মুখ দিয়ে। লাল চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে বাইরে।

‘একজন গার্ডকে ডাকো, রানা। এক্ষুণি! ল্যাবরেটরি থেকে একটা ওষুধ আনতে হবে।’

ছুটে গিয়ে দরজায় টোকা দিল রানা জোরে জোরে। কোন সাড়া-শব্দ নেই। দরজার হাতল ধরে টান দিল রানা। আশ্চর্য, খুলে গেল দরজাটা! বেরিয়ে এল সে বাইরে। একজন গার্ড দরজার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে।

কাঁধ ধরে ঝাঁকি দিল রানা। ‘ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পাহারা দিচ্ছ নাকি, হে। কোনও সাড়া নেই। কাঁধটা ছেড়ে দিতেই কাৎ হয়ে পড়ে গেল গার্ডটা মাটিতে। রানা দেখল রক্তে ভিজে গেছে খাকি ইউনিফরমটা পিঠের কাছে। কে মারল একে!

সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াল রানা। কয়েক গজ দূরে মাটিতে পড়ে আছে আরেকজন সেনট্রি। ব্যাপার কি!

ঠিক এমনি সময় মাথার ওপরে দেয়ালের গায়ে বসানো একটা স্পীকার থেকে ভেসে এল একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর।

‘রানা! সাবধান!! দ্বীপের সবাইকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি আমি, একটি গার্ডও বেঁচে নেই। ভয়ঙ্কর পাগলগুলোকে ছেড়ে দিয়েছি। দ্বীপময় ঘুরে বেড়াচ্ছে ওরা! এখন কি বাইরে বেরোনো ঠিক হচ্ছে?’

‘ললিতা!’ অস্ফুট কণ্ঠে উচ্চারণ করল রানা।

‘না। আমি ললিতা নই, ললিতার অশরীরী প্রোা। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করব আমি আজ। প্রস্তুত হও, আসছি আমি, রানা! অন্ধকারে খুঁজে বের করে খুন করব আমি তোমাকে…’

দপ করে নিভে গেল দ্বীপের সমস্ত বাতি।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন