রানা! সাবধান!! – ১০

কাজী আনোয়ার হোসেন

দশ

‘থামো!’ নেমে এল ললিতা সিঁড়ি বেয়ে। ‘কি করছ?’

মুখোশটা মুখে লাগানো আছে দেখে অনেকটা আশ্বস্ত হলো ঘটোৎকচ। বলল, ‘হাতটা ভাঙছিলাম স্যার, থুড়ি, ম্যাডাম।

‘ওটা একটু পরে ভাঙলেও চলবে, নতুন একটা প্ল্যান এসেছে মাথায়। দেয়াল থেকে ওই মুগুরটা পেড়ে আনো।

একটু অবাক হলো ঘটোৎকচ, কিন্তু আদেশ মত দেয়ালে টাঙানো একটা মুগুর নিয়ে এল। এটা দিয়েই বোধহয় ছাতু করে দেয়া হবে ওর মাথাটা, ভাবল রানা।

‘দাও ওটা আমার হাতে। এবার এর হাত পায়ের সমস্ত বাঁধন খুলে দাও। কি নাম যেন বলেছিলে তোমার?’

‘ঘটোৎকচ। রানার হাত পায়ের বাঁধন খুলতে খুলতে বলল সে। এই লোকটার বাঁধন খুলে দেয়া উচিত হচ্ছে বলে মনে হলো না ওর, কিন্তু ললিতার কথার ওপর কোন কথা বলবার সাহস হলো না।

‘ঠিক আছে। এইবার লোকটাকে তুলে দাঁড় করাও। দুই হাতে শক্ত করে ধরে রাখবে যেন নড়তে না পারে। হ্যাঁ। এবার আমার দিকে পিছন ফিরে দাঁড়াও।

‘ধাঁই করে পড়ল মুগুরটা ঘটোৎকচের ন্যাড়া মাথার ওপর। একটা তীক্ষ্ণ যন্ত্রণাধ্বনি বেরোল ওর মুখ থেকে। ছেড়ে দিল সে রানাকে। আবার পড়ল মুগুর। হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল ঘটোৎকচ। তৃতীয় আঘাতেই শুয়ে পড়ল জ্ঞান হারিয়ে।

‘জলদি চলো, রানা! সময় নেই হাতে!’

‘কি ব্যাপার, ললিতা…?’

‘ললিতা নয়, শায়লা ফৈয়াজ। জলদি। এক্ষুণি ভাগতে হবে আমাদের!’ রানার দুই চোখে বিস্ময় আর অবিশ্বাস দেখে মুখোশটা খুলে দেখাল শায়লা।

রানা দেখল শায়লার কপালে একটা কাটা দাগ দেখা যাচ্ছে, বাম গালে স্পষ্ট হয়ে আছে পাঁচ আঙুলের দাগ। জিজ্ঞেস করল, ‘কি হয়েছিল? ধরা পড়েছিলে?’ ডান হাতটা কয়েকবার ভাঁজ করল রানা। কমে যাচ্ছে ব্যথাটা।

‘না। পরে বলব সবকথা। এখন যে-কোন লোক যে-কোন মুহূর্তে এসে পড়তে পারে। আমার আগে আগে চলো মাথা নিচু করে।’ মুখোশটা পরে নিল শায়লা আবার।

‘এখান থেকে বেরোবে কেমন করে? ঢুকলেই বা কি করে? আৰ্য!’ রওনা হলো সিঁড়ি বেয়ে ওপর দিকে।

ওদের বলব, তুমি তোমার সঙ্গীদের ধরিয়ে দিতে রাজি হয়েছ, তাই নিয়ে যাচ্ছি আমি। কোনও গোলমাল করতে সাহস পাবে না পুলিস। ললিতার ক্ষমতা সাংদঘাতিক।’

‘কোথায় সে এখন?’

‘এস.পি.-র অফিস রূমের অ্যাটাচড বাথরূমে পড়ে আছে। এস.পি.-র হান্টারটা ভেঙেছি আমি ওর মাথার ওপর। এইবার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলো- ভাব দেখাবে যেন কঠোর নির্যাতনে আধমরা হয়ে গেছ। তার ওপর সব কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়ে লজ্জায় মিশে যাচ্ছ মাটির সঙ্গে।

আগে আগে ঢুকল রানা এস.পি.-র অফিস রূমে, পিছন পিছন শায়লা। চট্ করে বাথরূমের বন্ধ দরজার ওপর থেকে একবার ঘুরে এল রানার চোখ- এর মধ্যে বাথরূমের দরজা খোলেনি তো কেউ?

দু’জন লোকের সঙ্গে কথা বলছিল এস.পি.। রানাকে দেখে অবাক চোখে চাইল, কিন্তু পিছনে শায়লাকে দেখেই তড়াক করে উঠে দাঁড়াল চেয়ার ছেড়ে।

‘স্বীকার করেছে। ওর সাথের তিনজন কোথায় আছে দেখিয়ে দিতে রাজি হয়েছে। এক্ষুণি একটা জীপের ব্যবস্থা করুন।

‘নিশ্চয়ই। এক্ষুণি ব্যবস্থা করছি। ইশারা করতেই একজন লোক ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। ‘ঘটোৎকচ কোথায়?’

‘নিচেই আছে। রক্তটক্ত পরিষ্কার করে আসবে এক্ষুণি। লোকটা ভাল, কিন্তু এত সহজে সব কথা স্বীকার করে ফেলায় মন খারাপ হয়ে গেছে ওর।’ হাসল এস.পি.। বলল, ‘মাদ্রাজের কুস্তি চাম্পিয়ান লোকটা। যাক, আপনার গাড়ি এসে যাবে এক্ষুণি। সঙ্গে লোক দেব কয়জন? আপনি কি একা সামলাতে পারবেন একে?’

‘নিশ্চয়ই। লোকের দরকার নেই। ব্যাটার হাতে একটা হ্যাণ্ডকাফ পরিয়ে চাবিটা আমার কাছে দিয়ে দিন। কোনও রকম গোলমাল করবার মনোবলই নেই ওর এখন। আর বাকি ক’জনকে গ্রেফতার করা তো জলের মত সহজ। এই ব্যাপারে সমস্ত বাহাদুরি আমি নিজেই নিতে চাই।’

রানার হাতে হাতকড়া পরিয়ে চাবিটা দেয়া হলো শায়লার হাতে।

‘ধন্যবাদ। আপনার সহযোগিতার কথা আমার বিস্তারিত রিপোর্টে দিল্লী পৌঁছবে।’

‘সেটা আপনার দয়া,’ হাত কচলে বলল এস.পি. বিগলিত কণ্ঠে।

‘এখন আরেকটা জিনিস দরকার আমার। গর্ত থেকে ইঁদুরগুলোকে বের করতে খানিকটা ধোঁয়ার প্রয়োজন হতে পারে। একটা অটোমেটিক কারবাইন আর গোটা কয়েক হ্যাণ্ড গ্রেনেড তুলে দিন জীপে।’

এস.পি.–র ইঙ্গিতে দ্বিতীয় লোকটাও চলে গেল ঘর থেকে দ্রুত পায়ে। অল্পক্ষণের মধ্যেই রানাকে ধাক্কা দিয়ে ওঠানো হলো গাড়ির পিছন সীটে। স্টিয়ারিং ধরল শায়লা। সাঁ করে বেরিয়ে গেল জীপটা ইলোরের পুলিস হেড কোয়ার্টারের গেট দিয়ে।

বেশ খানিকটা গিয়ে মুখোশটা একটানে খুলে ফেলল শায়লা। বলল, ‘ছি! বিচ্ছিরি গন্ধ এই মুখোশে। আর মাগো, কী ভয়ঙ্কর মেয়েলোকটার মুখের চেহারা!’ শিউরে উঠল শায়লা ললিতার চেহারা কল্পনা করে।

‘তোমার আব্বা কোথায়?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

‘তোমার জন্যে দুইঘণ্টা অপেক্ষা করে আধমাইল ভিতরে সরে গিয়েছিলাম আমরা। ফিরতে না দেখেই বুঝেছি আমরা কোন বিপদে পড়েছ তুমি।’

‘কিন্তু আমি কোথায় আছি জানলে কি করে তুমি?’

‘সাদেক খানকে দিয়ে খুঁজিয়েছি। ও-ই খুঁজে বের করেছে তোমাকে…’

‘সাদেক খান!’ হঠাৎ বুঝতে পারল রানা। শায়লার কপাল আর গালের দিকে দৃষ্টি গেল ওর। ‘গোলমাল হয়েছিল কিছু?’

‘তেমন কিছু না,’ একটু দ্বিধা করে বলে ফেলল, ‘হঠাৎ আক্রমণ করে বসেছিল ও আমাকে। আব্বাজী একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে না ঠেকালে, মেরেই ফেলত। হাত-পা বেঁধে নিয়ে আবার একটা স্টিমুল্যান্ট ইঞ্জেকশন দিয়ে জাগানো হয়েছে ওকে। তোমার আর ললিতার চিন্তা ওর মুখ থেকে শুনে সব ব্যাপার জানতে পারলাম আমরা। আরও জানতে পারলাম কবীর চৌধুরীর ভয়ে ভেতর ভেতর থরহরিকম্প হয়ে রয়েছে ললিতা বটব্যাল।’

পাকা সড়ক ছেড়ে জঙ্গলের একটা সরু পথ ধরে চলল এবার গাড়িটা। রাস্তার পাশে একটা লরীর বনেট খুলে এঞ্জিন পরীক্ষা করছে ড্রাইভার- কৌতূহলী দৃষ্টিতে চেয়ে দেখল সে রানাদের।

কিন্তু এত তাড়াতাড়ি শহরে পৌঁছলে কি করে?’ জিজ্ঞেস করল রানা। ‘হেঁটে গেলে তো আধঘণ্টার পথ।’

‘একটা কাঠ বোঝাই টাকের পেছনে উঠে পড়েছিলাম। জানতাম, দেরি করলে আর তোমাকে বাঁচানো যাবে না। শহরে নেমেই ছুটে গিয়ে একটা পাবলিক টেলিফোন বুদ থেকে ফোন করলাম পুলিস হেডকোয়ার্টারে, বললাম, আমি কবীর চৌধুরীর প্রাইভেট সেক্রেটারি বলছি; এক্ষুণি কর্নেল ললিতা বটব্যালের সঙ্গে কথা বলতে চান কবীর চৌধুরী, অত্যন্ত জরুরী ব্যাপার, এই মুহূর্তে যেন ডেকে দেয়া হয় তাকে। হাসল শায়লা। ‘জানতাম এস.পি.-র ঘরে আছে টেলিফোন, ঘরটা চেনা ছিল- দ্বীপে যাবার আগে আমাদের রিপোর্ট করতে হয়েছিল ইলোর পুলিস হেডকোয়ার্টারে- আর এ-ও জানতাম ফোনটা ধরবার সময় ওই ঘরে একা থাকবে ললিতা। পেছন দিকের আঙিনাটা ডিঙিয়ে উঁকি দিলাম এস. পি.-র ঘরের জানালা দিয়ে। ঘর খালি। জানালা টপকে লুকিয়ে পড়লাম কপাটের আড়ালে টেবিলের ওপর থেকে হান্টারটা তুলে নিয়ে। তারপরের ঘটনা তো তুমি জানোই

সাফল্যের স্মিথ হাসি শায়লার মুখে। হাতকড়া খুলে দিল সে রানার। বিস্মিত দৃষ্টিতে চেয়ে রইল রানা দুঃসাহসী মেয়েটার দিকে। এমন সহজভাবে কথাগুলো বলে গেল, যেন রানাকে নিতি মৃত্যুর হাত থেকে জ্যান্ত ফিরিয়ে আনা এমন কিছুই কঠিন কাজ ছিল না।

‘এই বিপদের মুখে যাচ্ছ দেখে বাধা দেননি ডক্টর ফৈয়াজ?

‘আব্বা বাধা দেবেন কেন?’ আ র্য হলো শায়লা। ‘তুমি চেনো না আব্বাকে। এই সমস্ত প্ল্যানই তো আব্বার। উনিই তো পাঠালেন আমাকে।

গাড়ি থামাল শায়লা। একটা ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন ডক্টর ফৈয়াজ। একগাল হাসি তাঁর মুখে। এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন দু’জনকে দুই হাতে।

‘দেখলি, শায়লা, বলেছিলাম না এত সহজে মৃত্যু হবে না মাসুদ রানার! শুধু শুধুই কেঁদে ভাসাচ্ছিলি তুই। খোদা বলে একজন আছে তো মাথার ওপর…’

‘কেঁদে ভাসাচ্ছিল!’ ভ্রু কুঁচকে চাইল রানা শায়লার মুখের দিকে।

‘যাহ্। আব্বাজী বলল আর অমনি বিশ্বাস করলেন উনি।’ লজ্জায় লাল হয়ে গেল শায়লার গাল। ‘আমি কাঁদিনি।’

‘হ্যাঁ, কেঁদেছিস!’ চেপে ধরলেন বদ্ধ।

‘না, কাঁদিনি।’

‘হ্যাঁ, কেঁদেছিস!’

‘ওর জন্যে কাঁদিনি।

‘তবে কার জন্যে শুনি?’

‘কারও জন্যে না। ইচ্ছে হয়েছে কেঁদেছি, ব্যস।

হাসিমুখে বাপ-বেটির তর্কাতর্কি শুনল রানা, তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘সার্চ পার্টি কতদূর?’

‘আরও আধমাইল আছে,’ বললেন বদ্ধ। ‘এক্ষুণি রওনা হওয়া দরকার। কিন্তু যাব কোনদিকে আমরা?’

‘পুলিসের গাড়ি যখন পাওয়া গেছে, রোড ব্লক এড়ানো যায় কি-না দেখি চেষ্টা করে,’ বলল রানা।

সাদেক খানকে তোলা হলো জীপের পিছনে। ডক্টর ফৈয়াজকেও তুলে বসিয়ে দিল রানা পিছনের সীটে। ওঁর কাজ পিছন দিকে নজর রাখা। অটোমেটিক কারবাইন আর হ্যাণ্ড গ্রেনেড নিয়ে রানার পাশে তৈরি থাকবে শায়লা। রানা চালাবে গাড়ি।

হঠাৎ একটা শব্দ শুনে খাড়া হয়ে গেল রানার কান।

‘গাড়ির এঞ্জিন!’ বলল শায়লা।

একলাফে উঠে বসল রানা ড্রাইভিং সীটে। ওরা যে পথে এসেছে সেই পথে বিশ গজ তফাতে মোড় ঘুরছে একটা ল্যাণ্ডরোভার।

‘এস.পি.!’ চিৎকার করে বললেন ডক্টর ফৈয়াজ। ‘পাশে বসে আছে ললিতা বটব্যাল। কয়েকজন পুলিসও আছে।

‘এদিক দিয়ে সোজা গেলে কি বড় রাস্তায় পড়া যাবে?’ জিজ্ঞেস করেই বুঝতে পারল রানা, উত্তরটা এদের কারও জানবার কথা নয়। রাস্তাটা যেখানেই গিয়ে মিশুক, এই পথেই যেতে হবে এখন। ছুটল সে সামনের দিকে। ‘জংলা পথে ওদের কাটিয়ে দিতে পারলে হয়।

সাব-মেশিনগান গর্জে উঠল পিছনের জীপ থেকে। কয়েকটা ফুটো হয়ে গেল ক্যানভাসে।

‘শুয়ে পড়নি!’ বলল রানা পিছনে না ফিরে। টিপে ধরল অ্যাক্সিলারেটার যতটা যায়। স্পীডমিটারের কাঁটা উঠতে থাকল ওপরে। হঠাৎ ডান দিকে একটা বাঁক দেখতে পেল রানা। সোজা না গিয়ে মোড় নিল সে ডাইনে। একটু দেরি হয়ে গেল মোড় নিতে। প্রকাণ্ড একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেতে যাচ্ছে গাড়িটা। অ্যাক্সিলারেটার টিপে রেখেই বাঁ পায়ে ব্রেক চাপল রানা। স্কিড করে জীপের পিছন দিকটা বাঁয়ে চলে এল খানিকটা। মৃদুভাবে ধাক্কা খেল একটা মাটির ঢিবিতে। ব্রেক ছেড়ে দিতেই সোজা ছুটল গাড়ি রাস্তা ধরে। আবার বাঁয়ে মোড়। সেকেণ্ড গিয়ার দিতেই গর্জন করে উঠল জীপের শক্তিশালী এঞ্জিন। মোড় ঘুরবার ফাঁকে দুটো গুলি ছুঁড়ল শায়লা কারবাইন থেকে।

সামনের রাস্তাটা চওড়া হলো একটু, ক্রমেই উঁচু হয়ে যাচ্ছে এঁকেবেঁকে। হঠাৎ দেখতে পেল রানা সামনে খাদ। ভুল পথে এসেছে সে। ডানধারে কয়েক হাত নিচে দেখা যাচ্ছে ঠিক রাস্তাটা। ছোট ছোট ঝোপ ঝাড় রয়েছে ঢালু জায়গাটায়। ল্যাণ্ডরোভারটা রাস্তা ভুল করেনি, ছুটে আসছে সেটা ফুলস্পীড়ে। আর চিন্তা করবার সময় নেই, পাগলের মত স্টিয়ারিং কাটল রানা ডানদিকে। ঝোপঝাড় মাড়িয়ে এগিয়ে চলল জীপ, শেষের তিনফুট প্রায় খাড়াভাবে লাফিয়ে নামল সেটা রাস্তার ওপর। প্রাণপণে বাঁয়ে কাটল রানা স্টিয়ারিং। গর্জে উঠল পিছন থেকে সাব মেশিনগান। জবাব দিল শায়লা অটোমেটিক কারবাইন দিয়ে।

রানার কানের পাশ দিয়ে ঠুস করে সামনের উইণ্ডস্ক্রীনটা ঝাপসা চৌচির করে দিয়ে বেরিয়ে গেল একটা বুলেট। স্পীড না কমিয়েই এক হাতে হুইল ধরে অন্যহাতে ভেঙে ফেলল রানা সামনের কাঁচ।

আবার উঁচুতে উঠছে জংলা পথ। বেশ অনেকটা কাছে চলে এসেছে ল্যাণ্ডরোভার।

‘একটা গ্রেনেড ফেলো, শায়লা,’ বলল রানা চট্ করে একবার পিছন ফিরে চেয়ে।

ছাতের একটা রড ধরে বেশ খানিকটা বাইরে বেরিয়ে পিন্‌টা দাঁতে কেটে ছুঁড়ে মারল শায়লা পিছন দিকে। অনেকটা সামনে পড়ল গ্রেনেড। ব্রেক চাপল এস.পি.। ধোঁয়ায় ঢেকে গেল পিছনের রাস্তাটা।

‘লেগেছে?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

‘ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। একটু যেন আগে পড়ল বলে মনে হলো, ‘ বললেন ডক্টর ফৈয়াজ। একটু থেমেই বললেন, ‘নাহ্। লাগেনি। আবার দেখা যাচ্ছে জীপ।’

দ্বিতীয় গ্রেনেডটা ফাটলই না। রেগে গিয়ে দেহের অর্ধেকটা বাইরে বের করে তৃতীয় গ্রেনেডের পিন বের করল শায়লা দাঁত দিয়ে। তারপর ছুঁড়ে মারল পিছন দিকে। আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পেল রানা ল্যাণ্ডরোভারের ঠিক সামনে দুই চাকার তলায় এখন ওটা।

হঠাৎ আর্তনাদ করে উঠল শায়লা। রানা দেখল ব্যথায় বিকৃত হয়ে গেছে শায়লার মুখ। রক্ত দেখতে পেল কনুইয়ের কাছে। বাম হাতটা ছেড়ে দিয়ে পড়ে যাচ্ছিল সে বাইরের দিকে। স্টিয়ারিং ছেড়ে দুই হাতে টেনে নিয়ে এল রানা ওকে ভিতরে। আরেকটা মোড় এসে গেছে, সামলাতে পারল না রানা। ব্রেক চাপল প্রাণপণে। সোজা গিয়ে একটা মোটা গাছের গুঁড়ির সঙ্গে গুতো খেল জীপ

ঠিক সেই মুহূর্তেই ফাটল শায়লার হ্যাণ্ড গ্রেনেড। শূন্যে উঠে গেল ল্যাণ্ডরোভারের সামনের অংশটুকু। তারপর উল্টেপাল্টে গড়িয়ে পড়ে গেল গাড়িটা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বিশ ফুট নিচে। দাউ দাউ করে আগুন ধরে গেল গাড়িতে। রাস্তার ওপর থেকে বিস্ফোরণের ধোঁয়াটা সরে যেতেই স্পষ্ট দেখতে পেল রানা ললিতা বটব্যালের বীভৎস মুখ। বিস্ফোরণের আগেই লাফিয়ে নেমে গিয়েছিল সে গাড়ি থেকে- এখন মাথা উঁচু করে একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে রানার দিকে। এমনি সময় চোখ পড়ল রানার লরীটার ওপর। এতক্ষণ দেখতে পায়নি ওরা- জীপের পিছন পিছন এতক্ষণ ধরে আসছিল সৈন্যভর্তি একটা মিলিটারি লরী।

এঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল- গিয়ার নিউট্রাল করে আবার স্টার্ট দিল রানা। ব্যাক গিয়ার দিয়ে পিছিয়ে এল কয়েক হাত। তারপর ছুটল আবার।

‘হাত ছাড়া আর কোথাও লেগেছে গুলি?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

‘না,’ জবাব দিল শায়লা। ‘মাাক কিছু নয়, এদিক দিয়ে ঢুকে ওদিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে।

‘পিছনে মিলিটারি লরী। থামতে পারছি না যে!’ বলল রানা।

‘থামতে হবে না,’ বললেন ডক্টর ফৈয়াজ। ‘আমি তিন মিনিটে ব্যাণ্ডেজ করে দিচ্ছি।’ মেডিকেল কিট খুলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বের করে ফেলেছেন তিনি ততক্ষণে। ‘আয় তো মা, এপাশে চলে আয়।

জঙ্গলের আঁকাবাঁকা পথ ছেড়ে বড় রাস্তায় উঠে এল জীপ। ডান দিকে পঁচিশ মাইল গেলেই রাজামুন্দ্রি। টপ গিয়ারে দিয়ে অ্যাক্সিলারেটার পুরো টিপে ধরে পিছন ফিরে চাইল রানা। ডক্টর ফৈয়াজের বুকে মাথা রেখে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ পড়ে আছে শায়লা।

‘এখন কেমন বোধ করছ, শায়লা?’

‘ভাল। হাতে কোন অনুভূতিই নেই, কাজেই ব্যথাও নেই।’

সামনেই রোড ব্লক। একটা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে রাস্তা। কয়েকজন সশস্ত্র সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার দুই পাশে। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এল, সাইরেনের বাটনটা টিপে দিল রানা, গাড়ির গতি কমাল না একটুও।

কাজ হলো সাইরেনে। পুলিসের জীপ সাইরেন বাজাতে বাজাতে ফুলস্পীডে আসছে, নিশ্চয়ই জরুরী কোন ব্যাপারে যাচ্ছে। বাঁশ তুলে দিল একজন। একরাশ ধুলো উড়িয়ে সাঁ করে বেরিয়ে গেল জীপটা ওদের সামনে দিয়ে।

একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হলো রানা- রাস্তার ওপর যে-সব চেক পোস্ট বসানো হয়েছে সেগুলোকে এখনও ওয়্যারলেসে জানানো হয়নি যে পুলিসের জীপ নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে ওরা। খুব সম্ভব জ্ঞান ফিরে আসতেই এস.পি.-কে নিয়ে ছুটেছে ললিতা রানাদের পিছনে, খবর দেবার সময় পায়নি।

কিন্তু আসলে খবর দেয়ার যে কোন প্রয়োজনই ছিল না সেকথা বুঝতে পারল রানা অল্পক্ষণের মধ্যেই। দু’ধারে পাহাড়ী জঙ্গল, শাল পিয়াল মহুয়ার গাছ, মাঝখান দিয়ে মসৃণ পীচ ঢালা সড়ক। মাঝে মাঝে পাহাড়ের গা বেয়ে উঁচুতে উঠে যাচ্ছে পথটা, আবার নেমে আসছে ঢাল বেয়ে। কালো মেঘ জমে মুখভার হয়ে আছে আকাশের। হু-হু করে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকছে ভাঙা উইণ্ডস্ক্রীন দিয়ে। আর পনেরো মাইল যেতে পারলেই হয়। নদী পেরোলেই রাজামুন্দ্রি। নদীটা পেরোবার দরকার নেই। জীপটা কোথাও লুকিয়ে রেখে নৌকো জোগাড় করে নিতে হবে ওকে। সেটা খুব বেশি অসুবিধা হবে না। শুধু জলপুলিসের হাত থেকে বাঁচবার কোন কৌশল বের করতে হবে।

ঠিক এমনি সময় লাফিয়ে উঠল রাস্তাটা রানার চোখের সামনে। বিশ গজ সামনে পড়েছে বোমাটা। ব্রেক চাপল রানা। মস্ত একটা গর্ত সৃষ্টি হয়েছে রাস্তার মধ্যেখানে। গাড়ি নিয়ে গর্ত ডিঙিয়ে ওপাশে যাওয়ার উপায় নেই। মাথার উপর দিয়ে গাড়িটার পিছনে চলে গেল হেলিকপ্টার। গর্তের কাছে এসে থেমে গেল জীপ। বিশ গজ পিছনে পড়ল দ্বিতীয় বোমা। এইবার ধীরে ধীরে নামছে হেলিকপ্টার নিরাপদ দূরত্বে।

সাদেক খানের বাহু থেকে সূচটা বের করে নিয়ে মেডিকেল কিটের মধ্যে সিরিঞ্জ পুরে রাখলেন ডক্টর ফৈয়াজ। বললেন, ‘ওরা রাস্তাটা ধ্বংস করছে, গাড়িটা নয়।’

‘হ্যাঁ। গাড়িতে সাদেক খান আর আপনি না থাকলে শুধু শুধু রাস্তা নষ্ট করত না- গাড়িতেই ফেলত বোমা।’ তিক্তকণ্ঠে বলল রানা কথাগুলো। কালো হয়ে গেছে ওর মুখ পরাজয়ের গ্লানিতে। অটোমেটিক কারবাইনটা পাশের সীট থেকে তুলে নিয়ে নেমে পড়ল রানা জীপ থেকে। ‘জলদি, সবাই নামো গাড়ি থেকে।’

সবচেয়ে আগে নামল সাদেক খান। টকটকে লাল চোখে ভীত দৃষ্টিতে এদিক ওদিক চাইতে চাইতে, শায়লা নামল হুইল চেয়ারটা হাতে নিয়ে, ডক্টর ফৈয়াজকে কোলে তুলে নামিয়ে বসিয়ে দিল রানা চেয়ারে। কিন্তু যাবে কোন্ দিকে? দু’পাশে উঁচু পাহাড়। হেলিকপ্টারটাকে কোথাও দেখতে পেল না রানা।

‘আসছে!’ রানার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল সাদেক খান। ‘আসছে ওরা! অনেক লোক!’

‘কোথায়?’ বলেই চোখ পড়ল রানার পিছন দিকে। ধোঁয়া সরে গেছে রাস্তার ওপর থেকে। তিন ট্রাক বোঝাই সৈন্য এসে দাঁড়িয়েছে পিছনের গর্তটার সামনে। ট্রাকের ওপর থেকে তিনটে স্প্যানডাউ মেশিনগান স্থির হয়ে আছে ওদের দিকে মুখ করে। ঝপাং ঝপাং লাফিয়ে নেমে পড়েছে স্টেনগান হাতে জনা চল্লিশেক সৈন্য, ছড়িয়ে পড়েছে ওরা রাস্তাটা জুড়ে। অর্ধেক সৈন্য উঠে যাচ্ছে দু’পাশের পাহাড়ে জীপটাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলার জন্যে। রানা বুঝল এখন একটা গুলি করলেই দুই সেকেণ্ডে মৃত্যু ঘটবে ওদের সব কয়জনের। কিছুই করবার নেই এখন আর আসমর্পণ ছাড়া। জিভটা শুকিয়ে গেল ওর।

‘কারবাইন ফেলে দাও মাটিতে!’ তীক্ষ্ণ নারী কণ্ঠে আদেশ এল। রানা চেয়ে দেখল একটা ট্রাক থেকে নেমে আসছে ললিতা বটব্যাল। ডানহাতে পিস্তল ধরা, বাম হাতটা ব্যাণ্ডেজ করে ঝোলানো আছে গলায় বাঁধা ফিতের ওপর।

ম্লান ভাবে হাসল রানা। ললিতার হাতেই মৃত্যু লেখা ছিল ওর। হঠাৎ ভাবল, দেবে নাকি শেষ করে? তাহলে সবাই মারা পড়বে, কিন্তু মারা তো এমনিতেও পড়বে, কাউকেই জ্যান্ত রাখবে না ওরা, কাজ ফুরালেই মেরে ফেলবে। দেবে সে ললিতাকে খতম করে? বহুকষ্টে সংযত করল রানা নিজেকে। ডক্টর ফৈয়াজ আর শায়লাকে এক্ষুণি হত্যা করবে না ওরা- হয়তো ওদের মুক্তির অন্য কোনও সুযোগ আসতেও পারে এর মধ্যে… রানার কোন অধিকার নেই নিজের ভাগ্যের সঙ্গে ওদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়ার। হাত থেকে ফেলে দিল সে কারবাইন।

‘আসমর্পণ করলে, রানা?’ বলে উঠলেন বিস্মিত বৈজ্ঞানিক।

‘হ্যাঁ?’ চাপা কণ্ঠে বলল রানা। ‘আমার মৃত্যুতেই সব শেষ হয়ে যাবে না, ডক্টর ফৈয়াজ। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবেন। দেখবেন আবার একজন আসবে পাকিস্তান থেকে, আবার সুযোগ পাবেন আপনারা পালিয়ে যাবার। দোয়া করি, আমার চেয়ে ভাল ভাগ্য নিয়ে যেন আসে সেই লোক। আমি পারলাম না, শুধু শুধুই কষ্ট দিলাম আপনাদের, কিন্তু দেখবেন, আমার পরে যে আসবে সে ঠিক পারবে।

যেন বহুদূর থেকে বলছে রানা কথাগুলো। অদ্ভুত নরম শোনাল ওর কণ্ঠস্বর। ডুকরে কেঁদে উঠল শায়লা। মৃদুহাসি ফুটে উঠল রানার ঠোঁটে। বলল, ‘এখন বুঝলাম, সকালে আমারই জন্যে কেঁদেছিলে তুমি, শায়লা।’

এসে গেছে সৈন্যরা। কলার ধরে এক হ্যাঁচকা টান মেরে মাটিতে ফেলে দিল ওরা রানাকে। দড়াম করে পাঁজরের ওপর লাথি পড়ল একটা। আরেকজন লাথি চালাল ওর মুখ লক্ষ্য করে। চুল টেনে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো ওকে আবার। সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ললিতা বটব্যাল।

‘এই তিনটেকে ট্রাকে নিয়ে যাও,’ হুকুম দিল ললিতা। ‘আর ঘটোৎকচ কোথায় গেল, ডাকো ওকে। গোল হয়ে ঘিরে দাঁড়াও তোমরা।’

ছেঁচড়ে টেনে নিয়ে গেল তিনজন লোক শায়লা, ডক্টর ফৈয়াজ আর সাদেক খানকে। রানা বুঝল এটাই ওর বধ্যভূমি। গোল করে ওকে ঘিরে দাঁড়াচ্ছে স্টেনগান হাতে সৈন্যদল। কয়েকজন লোকের মাথার ওপর দিয়ে ঘটোৎকচের বেল-মাথা দেখতে পেল রানা। সগর্বে উঁচু হয়ে রয়েছে মাথার ওপর টিকিটা। এগিয়ে এল ঘটোৎকচ। ওর প্রকাণ্ড ধড়টার পাশে সেনাবাহিনীর স্বাস্থ্যবান লোকগুলোকেও নিতান্তই দুর্বল লাগছে দেখতে।

ঘটোৎকচের বিশাল, বিপুল চেহারাটার দিকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে চাইল ললিতা।

‘শুনলাম মাদ্রাজের সেরা কুস্তিগীর তুমি, তাই সঙ্গে এনেছি তোমাকে ঘটোৎকচ। বাচ্চা ছেলেরা যেমন ফড়িং-এর পাখা ছেঁড়ে তেমনি করে এর হাত-পা ছিঁড়ে ফেলতে হবে তোমার। কি, পারবে না?’

হাসি ফুটে উঠল ঘটোৎকচের মুখে। দিনের আলোয় এত লোকজনের মধ্যে সবরকমের ভয়-ভীতি কাটিয়ে উঠেছে সে। মাথা নাড়ল রানার দিকে চেয়ে।

‘কিন্তু এই লোকটাও খুবই শক্তিশালী। বাইরে থেকে দেখে বুঝবার উপায় নেই। ওকেও সুযোগ দেয়া হবে আরক্ষার। প্রাণপণে যুদ্ধ করবে ও, খেয়াল রেখো। আরও একটা কথা। বেমক্কা কোথাও মেরে হঠাৎ খুন করে ফেলো না- রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করতে চাই আমি ওর মৃত্যুটা।

রানা বুঝল, এই দৈত্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে ওর। মাদ্রাজের সেরা কুস্তিগীর। জোরে ওর সঙ্গে পারার কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। রানার একমাত্র অস্ত্র জুজুৎসু এবং কারাতের মাঝারি গোছের দক্ষতা। তাতে কি কাজ হবে?

হাফপ্যান্ট খুলে ল্যাংগোঠটা আরেকটু এঁটে নিল ঘটোৎকচ। ভীমের গদার মত দুই উরুতে চাপড় দিল দুটো। প্রস্তুত হয়ে নিল রানাও। বুঝল, প্রথম কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়ে যাবে।

গোল হয়ে ঘুরতে আরম্ভ করল ওরা দু’জন হাত দুটো সামনে বাড়িয়ে ঘাড়টা একটু কুঁজো করে। রানার গতিবিধি দেখেই টের পেল ঘটোৎকচ, এ লোককে চিৎ করা সহজ হবে না, বিদ্যুতের মত দ্রুত এর চালচলন!

হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে কারাত যুদ্ধের ভঙ্গিতে চিৎকার করে উঠল রানা, ‘কি…ইয়া!’ দেহের সমস্ত পেশী টান হয়ে গেছে ওর। পরমুহূর্তেই আঙুলগুলো সোজা রেখে লাফিয়ে এসে প্রচণ্ড একটা দাও চালানো কারাতের কোপ মারল সে ঘটোৎকচের ঘাড়ের ওপর। সেইসঙ্গে বাম হাঁটুটা ভয়ানক এক গুঁতো মারল ওর তলপেটে।

হঠাৎ চিৎকার শুনে আধ সেকেণ্ডের জন্যে হকচকিয়ে গিয়েছিল ঘটোৎকচ, আঘাত ফেরাবার উপায় ছিল না ওর। জবাইয়ের খাসীর মত গগনভেদী এক আর্তনাদ করে ধড়াশ করে পড়ল সে চিৎ হয়ে পড়ার আগেই নাকের হাড়টার ঠিক নিচে কারাতের একটা আপার কাট ঝেড়ে দিয়েছে রানা।

গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে ঘটোৎকচের নাক দিয়ে। কয়েক ঘণ্টার জন্যে ওকে সম্পূর্ণ অকেজো করে দিতে হলে নিয়ম মাফিক স্পাইনাল কর্ড আর ক্রোনিয়ামের জংশনে আরেকটা আঘাত করতে হয়। টিকির গোছা ধরে টান দিল রানা, টিকি ছিঁড়ে এল, কিন্তু নড়ানো গেল না ওকে একচুলও। নিশ্চিন্তে জ্ঞান হারিয়েছে প্যাহেলওয়ান।

‘দাঁড়াও!’ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চিৎকার করে উঠল ললিতা। ঠুন করে একটা শব্দ হতেই চেয়ে দেখল রানা একটা তরল পদার্থ ভর্তি কাঁচের জারের সীল করা মুখটা ভেঙে ফেলেছে ললিতা পিস্তলের নল দিয়ে টোকা মেরে। পিস্তলটা পিঙে ঝোলানো বাম হাতে চলে গেছে ওর, অ্যাসিডের জারটা ডানহাতে। এগিয়ে এসেছে সে কয়েক পা। ‘আমারই ভুল হয়েছিল ওকে তোমার যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা। এসো, এবার আমার সঙ্গে এসো।

ঠিক তিন হাত দূরে দাঁড়িয়ে কাঁচের জারটা তুলল ললিতা, রানার মুখ লক্ষ্য করে।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন