কাজী আনোয়ার হোসেন
হাঁ হয়ে গেছে সন্তোষ মুখার্জীর মুখ। চোখ দুটো বিস্ফারিত। পকেটের মধ্যে ছুরির বাঁটটা চেপে ধরল রানা। ব্যস্তসমস্ত লোকজন আর কুলি, সবার নজর রাস্তার দিকে। চশমাধারী টিকেট বিক্রেতা অমনযোগী দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওর দিকে।
‘আপনি এখানে কি করছেন?’ জিজ্ঞেস করল সন্তোষ ফ্যাশফেঁশে শুষ্ক কণ্ঠে।
‘সেরে গেছি,’ বলল রানা। পরিষ্কার বুঝল কোন রকম গুল মেরে ধুলো দিতে পারবে না সে সন্তোষ মুখার্জীর চোখে। একমাত্র উপায় এখন ছুরিটা।
‘অসম্ভব!’ বলল প্রফেসর।
‘অসম্ভব কেন হবে? আপনি বলেছিলেন দুইদিনে সেরে যাব। এক ডোজ ওষুধ পড়তেই সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে সেরে উঠেছি আমি। আপনি হেলিকপ্টার নিয়ে চলে যাওয়ায় ক্যাপ্টেন খান্না হায়দ্রাবাদ যেতে বললেন ট্রেনে করে- ওখান থেকে যাব দিল্লী। কয়েকটা জরুরী কথা মনে পড়েছে আমার…’
‘পালিয়েছ!’ বলল মুখার্জী চাপা কণ্ঠে। চট্ করে ওর চোখটা রাস্তার দিকে গেল একবার। ধূর্ত হাসি ফুটে উঠল ওর ঠোঁটের কোণে। ‘দু’জন পুলিস আসছে এদিকেই
রানা পিছন ফিরে চাইল না, কিন্তু বুঝল কথাটা মিথ্যে নয়।
আবার কথা বলল মুখার্জী। ‘কোনও ভাবে পালিয়েছ তুমি ক্লিনিক থেকে। আমি যা বলব তাই যদি করো তাহলে কিছুই অসুবিধায় পড়তে হবে না তোমাকে। নইলে এক্ষুনি পুলিস ডাকব আমি। আমার সঙ্গে দ্বীপে ফিরে যেতে হবে তোমাকে।’
কোন জবাব দিল না রানা। পিছনে ভারি বুটের শব্দ শুনতে পেল সে।
আবার হাসল সন্তোষ মুখার্জী। ‘তুমি বড় কঠিন ফাঁদে পা দিয়েছ এবার, মাসুদ রানা। কঠিন শিক্ষা দেয়া হবে তোমাকে। এসপিয়োনাজে এখনও তোমরা কতখানি পিছিয়ে আছ সেটা টের পাবে মিস্ বটব্যালের সাথে দেখা হলেই।’
‘মিস বটব্যাল?’
‘হ্যাঁ। সমস্ত প্ল্যানের পেছনে আছে একটি মাত্র ব্রেন। কর্নেল বটব্যাল। বিনা বাধায় এতদূর পর্যন্ত আসতে পেরে ভেবেছ তোমাদের বুদ্ধিমত্তার তুলনা নেই। দ্বীপে ফিরে গিয়েই টের পাবে সব। যাক, একটা উপকার করেছ তুমি আমার। তোমাকে ধরে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেই ক্লিনিকের হেড বানিয়ে দেয়া হবে আমাকে।’
অনেক কাছে চলে এসেছে বুটের শব্দ। পকেট থেকে হাতটা বেরিয়ে এল রানার। মুখ খুলল প্রফেসর পুলিস ডাকবার জন্যে। ঠিক সেই সময় রানার হাঁটুটা দ্রুত একবার উঠেই নেমে গেল। ব্যাপারটা এতই দ্রুত এবং সহজ ভঙ্গিতে ঘটে গেল যে কেউ লক্ষই করল না, শুধু টের পেল সন্তোষ মুখার্জী। তলপেটে প্রচণ্ড আঘাত লাগতেই ব্যথায় কুঁকড়ে গেল সে। যেন ওকে সাহায্য করছে এমনিভাবে বাম হাতে ওর পিঠ জড়িয়ে ধরল রানা, সেইসঙ্গে ডানহাতে ধরা চার ইঞ্চি ব্লেডের ছুরিটা সোজা ঢুকে গেল ওর হৃৎপিণ্ড বরাবর। লোকটাকে হত্যা করবার ইচ্ছে ছিল না রানার–কিন্তু উপায় নেই, কেবল রানার নয়, শায়লা, ডক্টর ফৈয়াজ এবং সাদেক খানের নিরাপত্তার ভারও এখন রানার ওপর।
অস্ফুট একটা গোঙানির শব্দ শুনতে পেল রানা, তারপরই সব চুপ রানার ওপরই হেলে পড়ল প্রফেসর সন্তোষ। ওকে ধরে এদিক-ওদিক চাইল রানা। জোরে জোরে বলল, ‘অজ্ঞান হয়ে গেছে মানুষটা।’
টিকেট কাউন্টার থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এল চশমাধারী। ছুরির বাঁটটা দেখা যাচ্ছে- ওটা হাতের তালু দিয়ে চেপে আরেকটু ঢুকিয়ে দিল রানা, তারপর কোটটা টেনে দিল তার ওপর।
‘বেঁচে আছে, এক্ষুণি বাসায় নিয়ে যেতে হবে ওকে। একটা ট্যাক্সি ডাকুন না মশাই, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি তামাশা দেখছেন?’
একজন যাত্রী ছুটল ট্যাক্সি ডাকতে। কিংবা কেটে পড়ল সে।
‘কি হয়েছে?’ প্রশ্ন করল একজন রানার ঘাড়ের ওপর দিয়ে ঝুঁকে। রানা ঘাড় ফিরিয়ে দেখল পুলিস।
‘হার্ট অ্যাটাক,’ বলল রানা। ‘বাড়ি নিয়ে যেতে পারলেই ঠিক হয়ে যাবে।
আরও কাছে ঘেঁষে এল পুলিস দু’জন। একজন বলে উঠল, ‘আরে। এ তো প্রফেসর সন্তোষ। একে চিনি, ওঙ্কার দ্বীপের লোক।
‘হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন,’ বলল রানা। ‘আমিও ওখানকার লোক। এই দেখুন আমার আইডেন্টিটি কার্ড। কিন্তু জলদি করুন, নইলে মারা যাবেন প্রফেসর।
‘আমি ধরছি পায়ের দিকটা,’ বলল একজন পুলিস।
‘তার দরকার হবে না। আপনি ট্যাক্সির ব্যবস্থা করুন, ট্যাক্সি ডাকতে গেল একজন। ঝুঁকে পড়া দেহটা টেনে সোজা করল রানা। বলল, ‘আমারই দোষ। গতরাতে দ্বীপে একটা দুর্ঘটনায় আমাদের ল্যাবরেটরি চুরমার হয়ে গেছে। সেই খবর দেবার জন্যে পাঠানো হয়েছে আমাকে। কিন্তু খবরটা শুনেই যে উনি এমন মুষড়ে পড়বেন তা বুঝতে পারিনি।’
‘আমরাও বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। আগুনও দেখা গেছে ইলোর থেকে। আমাদের এস.পি. আইন ভেঙে রেডিও মারফত যোগাযোগ করবার চেষ্টা করেছিলেন- কোনও জবাব পাওয়া যায়নি দ্বীপ থেকে,’ বলল দ্বিতীয় পুলিস।
‘কেউ জখম হয়নি। ভগবানের কৃপা। সন্তোষ মুখার্জীর ডানহাতটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে ডাক্তারী ভঙ্গির অনুকরণ করে বলল রানা, ‘কোনও ভয় নেই, স্যার, এক্ষুণি ঠিক হয়ে যাবেন বাসায় গেলেই। চোখে মুখে ঠাণ্ডা জল…’
‘আমি ধরছি আরেক হাত,’ বলল দ্বিতীয় পুলিস।
বাম হাতটা উঁচু করেই চমকে ছেড়ে দিল সে। কোটটা সরে গিয়েছিল হাতটা তুলতেই- ছয় ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা রক্তে ভিজে লাল হয়ে গেছে সাদা শার্ট। মৃতদেহটার দিকে চাইল সে বিস্মিত দৃষ্টিতে।
তারপরই রানা, চশমাধারী আর কনস্টেবল্ তিনজনেরই চোখ পড়ল দেড় ইঞ্চি বেরিয়ে থাকা ছুরির বাঁটের ওপর। আঁতকে উঠল চশমাধারী, ডাণ্ডাটা ডানহাতে নিল কনস্টেবল।
ধাক্কা দিয়ে সন্তোষ মুখার্জীকে ফেলল রানা পুলিসটার ওপর। দৌড় দিতে গিয়ে দেখল ওর জামা টেনে ধরেছে চশমাধারী টিকেট বিক্রেতা। এক থাবড়া দিয়ে দাদার আমলের চশমাটা ওর নাকের ওপর ভেঙে বসিয়ে দিয়ে ছুটল রানা রাস্তার দিকে। ফিরে আসছিল প্রথম পুলিসটা গেটের সামনে ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে। ওকে পাশ কাটিয়ে দৌড় দিল রানা। কিন্তু পাশ থেকে ল্যাঙ মারল সে রানার পায়ে।
দড়াম করে শানের ওপর আছড়ে পড়ে পিছলে কয়েক হাত সামনে এগিয়ে গেল রানার দেহটা মাটিতে মুখ গুঁজে।
.
‘গর্দভ, বুদ্ধু, উল্লুক কোথাকার!’ জ্বলে উঠল মুখোশের অন্তরালে ললিতার চোখ দুটো। মেকি হাসিটা লেগেই আছে মুখোশের ঠোঁটে। মাথা নামাল ক্যাপ্টেন খান্না। ‘তোমাকে কতবার করে সাবধান করেছি, ভয়ঙ্কর ধূর্ত লোক ওই মাসুদ রানা। সাবধানতার এই নমুনা দেখালে শেষ পর্যন্ত!’
‘কিন্তু আপনিই তো ওকে ছেড়ে রাখতে বলেছিলেন,’ বলল খান্না ভয়ে ভয়ে।
‘ছেড়ে রাখতে বলেছিলাম, ছেড়ে দিতে বলিনি!’
‘কিন্তু কম্পিউটার রূম কি করে ধ্বংস করল…আ র্য! দুঃস্বপ্নের মত লাগছে ব্যাপারটা আমার কাছে।
‘দুঃস্বপ্ন মাত্র আরম্ভ হয়েছে, খান্না। কম্পিউটার শেষ, মাসুদ রানা, সাদেক খান, ডক্টর ফৈয়াজ গায়েব; সত্যিকার দুঃস্বপ্ন দেখার এখনও বাকি আছে তোমার। সরকার যদিও ছাড়ে, কবীর চৌধুরী তোমাকে ছেড়ে দেবে ভেবেছ? আসছে সে শিকারি বাজপাখির মত।’
‘কিন্তু আমি কি করব বলুন? আপনি বললেন প্রথম রাতে বিশ্রাম নেবে মাসুদ রানা, কিছুই করবে না- প্রফেসর সন্তোষ বললেন ডক্টর ফৈয়াজ ওষুধ দিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে বারো ঘণ্টার জন্যে- আমার চোরা মাইক্রোফোনগুলোতেও সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া গেল না। আমার দোষটা কোথায়?’
‘এসব যুক্তি-তর্ক আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই, কবীর চৌধুরীকে দেখিয়ো। খবর পেয়েই রওনা হয়ে গেছে সে দ্বীপের উদ্দেশে। এখন বলো, নতুন কি সংবাদ পেয়েছ?’
‘আপনার কথামত সমস্ত রাস্তাঘাট ব্লকের ব্যবস্থা হয়েছে। যাদের জঙ্গলে খুঁজতে পাঠানো হয়েছিল ওদের কাছ থেকে কোন সংবাদ পাইনি এখনও। আজই দশটার মধ্যে বিজয়ভদ থেকে স্পেশাল ফোর্স পৌঁছে যাবে। সমস্ত নদী পথেও কড়া পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনি যে গুহাটার কথা বলেছিলেন ওখানে পাওয়া যায়নি কাউকে, এখন খালের অন্য পাড়টার জঙ্গল খোঁজা হচ্ছে তন্ন তন্ন করে।
‘কালই শেষ করে দিতাম আমি ব্যাটাকে, হেলিকপ্টার থেকে হ্যাণ্ড গ্রেনেড ফেলে, কিন্তু হঠাৎ খেয়াল হলো, তাহলে সাদেক খান আর ডক্টর ফৈয়াজও শেষ হয়ে যাবে, মাঝখান থেকে বিপদে পড়ব আমি। মেশিনগানে চেষ্টা করলাম, পারা গেল না,’ বলল ললিতা ক্ষোভের সঙ্গে। ‘ধরা ওদের পড়তেই হবে। এখন বাধা দিতে গিয়ে গুলি খেয়ে মারা না পড়লেই বাঁচা যায়।
‘আমি বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছি সবাইকে, কাউকে যেন পারতপক্ষে প্রাণে মারা না হয়। সার্চ পার্টিতে আমিই থাকতাম, কিন্তু এই দ্বীপ ভ্যাকেট করার ব্যাপারে আমার এখানে না থাকলেও আবার চলে না।’
ঠিক এমনি সময় বেজে উঠল রেডিও টেলিফোন। রিসিভার তুলে নিল ললিতা বটব্যাল। খবরটা শুনেই চমকে উঠল সে। হাত কাঁপছে ওর থর থর করে।
‘কি রকম দেখতে লোকটা? চেহারার বর্ণনা দিন। মন দিয়ে শুনল সে বৰ্ণনাটা।
‘হ্যাঁ, আমাদের লোক। কিন্তু আর সবাই? ওর সঙ্গে আরও তিনজন ছিল, তারা কোথায়?’
উত্তরটা শুনে একটু যেন হতাশ হলো ললিতা।
‘ঠিক আছে। আমি আধঘণ্টার মধ্যে আসছি।
রিসিভার নামিয়ে রেখে ফিরল সে ক্যাপ্টেন খান্নার দিকে।
‘ধরা পড়েছে মাসুদ রানা। সন্তোষকে খুন করে ইলোর রেল স্টেশন থেকে পালাবার চেষ্টা করছিল সে- ধরে ফেলেছে পুলিস। আটকে রেখেছে হাজতে। এখন আর চিন্তার কিছুই নেই খান্না, বাকি তিনটেকে বের করতে অসুবিধে হবে না। আমার কথাই ঠিক, গুহায় ঢোকেনি যদিও- গুহার পাশ দিয়েই ছ’মাইল হেঁটে চলে গেছে ওরা ইলোর। খালের এপাশের জঙ্গল মিছেমিছি না খুঁজিয়ে এই জায়গাটায় সৈন্য পাঠাও- অনায়াসে ধরতে পারবে ওদের। একটা ম্যাপের ওপর আঙুল দিয়ে দেখাল কর্নেল ললিতা বটব্যাল।
‘আমি এক্ষুণি ইন্স্টাকশন দিচ্ছি। আপনি কি ইলোর যাচ্ছেন?
‘হ্যাঁ। কিন্তু কবীর চৌধুরী যদি জিজ্ঞেস করে, আমি কোথায় গেছি, বলবে না। মাসুদ রানা যে ধরা পড়েছে সেকথাও যেন ও জানতে না পারে। বুঝেছ?
‘বুঝেছি।’
.
দুইঘণ্টা অপেক্ষা করল ওরা রানার জন্যে। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিল। অস্থির হয়ে উঠল শায়লা। রাজামুন্দ্রির টেস্ন ছেড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেল ওরা। নিশ্চয়ই কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে।
কাছেই গুলির শব্দ শোনা গেল একটা। বসে বসে ঝিমোচ্ছিল, তড়াক করে উঠে দাঁড়াল সাদেক খান। চোখে-মুখে ওর আতঙ্কের চিহ্ন।
‘বাম দিক থেকে এল শব্দটা,’ বললেন ডক্টর ফৈয়াজ। ‘এখান থেকে সরে যেতে হবে আমাদের।’
‘কিন্তু লোকটাকে বিপদের মুখে ঠেলে পাঠিয়ে দিয়ে এভাবে সরে যাওয়া কি ঠিক হচ্ছে, আব্বাজী? যে লোকটা আমাদের জন্যে এতবড় বিপদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল হাসি মুখে, তাকে সাহায্যের চেষ্টা করব না?’
‘করব, শায়লা। আমাদের সাধ্যমত সব করব আমরা। কিন্তু আপাতত আত্মরক্ষা করতে হবে। ধরা পড়ে গেলে কাউকে কোন সাহায্যই করতে পারব না। চলো সাদেক, সরে যাই জঙ্গলের ভিতর।’
‘অ্যাঁ? ও, চলুন। কিন্তু তাড়াহুড়োর কিছুই নেই। গুলি ছুঁড়ে সঙ্কেত দিল লেফটেন্যান্ট সবাইকে একসাথে জড়ো হওয়ার জন্যে। গুহা পর্যন্ত এসে ফিরে গিয়েছিল এরা। এবার আরও দুই মাইল বাম দিকে সরে গিয়ে কাজ শুরু করবে। তন্ন তন্ন করে প্রত্যেকটা ঝোপঝাড় খুঁজতে খুঁজতে এগোবে এদিকে যাতে একটা খরগোশও নজর না এড়ায়।’
‘আব্বাজী! অত ভাবছি কেন? সাদেক খানই তো বলতে পারবে রানা কোথায়। হঠাৎ বলে উঠল শায়লা।
‘রানা? রানা কে?’ জিজ্ঞেস করল সাদেক খান ভুরু কুঁচকে।
‘মাসুদ রানা। যে আমাদের পালাতে সাহায্য করছে। ও গিয়েছিল আমাদের জন্যে রেলের টিকেট করতে। হয়তো ধরা পড়েছে। ও কোথায় আছে বলতে পারবেন?’ বলল শায়লা সাদেক খানের কাছে গিয়ে।
শায়লার একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরল সাদেক খান। ‘ওর কোন দরকার নেই। আমিই তোমাদের নিয়ে যাব পাকিস্তানে। কোন চিন্তা নেই। পাকিস্তানে ফিরে বিয়ে করব আমি তোমাকে। তোমাকে ভালবাসি আমি…’ একটা হাত শায়লার কাঁধের উপর রাখল সাদেক খান।
‘সাবধান, শায়লা!’ বললেন ডক্টর ফৈয়াজ অস্ফুট কণ্ঠে।
‘রানা কোথায় আছে বলতে পারবেন?’ বলল আবার শায়লা। ভীতি চেপে রাখবার চেষ্টা করছে সে প্রাণপণে। ‘হাত ছাড়]ন।’
‘কেন? আমাকে পছন্দ হচ্ছে না?’ বলল সাদেক খান চোখ পাকিয়ে। পর-মুহূর্তে ভাব পরিবর্তন হয়ে গেল ওর। ‘কী নরম তোমার শরীর! উহ্, একেবারে মাখনের মত। গলায়, থুতনিতে হাত বুলাল একটু, তারপর খেপে উঠল ভয়ানকভাবে। ‘ভয় পাচ্ছ কেন আমাকে? আমি বাঘ না ভাল্লুক?’
‘ভয় পাইনি,’ বলল শায়লা ভীত কণ্ঠে।
‘আবার মিছে কথা! মনে করছ আমার মাথা খারাপ, কিছুই টের পাই না আমি! মিছেকথা বললে দোজখে যাবে তা জানো?’ খামচে ধরল সে শায়লার কাঁধের মাংস। নখগুলো বসে গেছে নরম মাংসের মধ্যে। ব্যথায় বিকৃত হয়ে গেল শায়লার মুখ।
হঠাৎ কাপড় ধরে টানাটানি শুরু করল সাদেক খান। ছিঁড়ে গেল ব্লাউজ। হাতটা ছাড়াবার চেষ্টা করল শায়লা, কিন্তু দশটা হাতীর শক্তি এখন সাদেক খানের গায়ে। উত্তেজনায় হাঁপাচ্ছে সে। মুখের দুই কষা বেয়ে লালা গড়াচ্ছে।
নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে চিৎকার বন্ধ করল শায়লা। এখন চিৎকার করলেই শুনতে পাবে সৈন্যরা। হাতটা ছেড়ে দিয়ে মট্ করে ডাল ভেঙে নিল সাদেক খান একটা গাছ থেকে।
‘পিটিয়ে লাস করে ফেলব, হারামজাদী। লোভ দেখাচ্ছিস আমাকে? দাঁড়া!’
দাঁড়িয়ে রয়েছে শায়লা বিবর্ণ মুখে। ঠিক এইভাবেই খুন করেছিল সাদেক খান ক্লিনিকের সেই নার্সটাকে। এবার কাপড় ধরে টানাটানি আরম্ভ করল লোকটা। দুনিয়াটা দুলে উঠল শায়লার চোখের সামনে! আব্বাজী করছে কি, ভাবল একবার সে আবছা ভাবে। চড়াৎ করে পিঠের ওপর পড়ল লাঠির বাড়ি।
‘খুন করে ফেলব তোকে, হারামজাদী…’
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন