জাগরণের কাল

জাগরণের কাল

সীমাহীন আনন্দ লাগে যখন দেখি ছেলেমেয়েরা ছড়িয়ে পড়ছেন। জ্ঞানান্বেষণে। জানার জন্য তারা বেরিয়ে পড়ছেন দিগবিদিক। চলে যাচ্ছেন চীন, জাপান, কোরিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া। মনে হচ্ছে একটা জাগরণ তৈরি হয়েছে। সে জাগরণের কালে তাদের আর রোধ করা যাবে না। বাঙালিকে। বলা হয় হুজুগে জাতি। কিন্তু এই হুজুগ যদি ভালো কাজে লাগানো যায়, তাহলে দাঁড়াতে সময় লাগে না। পৃথিবী থেকে নেওয়ার যে হুজুগ বাংলাদেশি ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে তৈরি হয়েছে, সেটা অসম্ভব আলোকিত এক দিক।

চীনের জেইজিয়াং ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী বললেন, শুধু তার ক্যাম্পাসেই তারা প্রায় ৪০ জন বাংলাদেশি গবেষক। আমি শুনে শিহরিত হলাম। জেইজিয়াং ইউনিভার্সিটি হলো চীনের C-9 প্রতিষ্ঠান। আমেরিকায় যেমন আইভিলিগ স্কুল, ইংল্যান্ডের যেমন গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল, তেমনি চায়নাতে হলো C-9। পিিকং ইউনিভার্সিটি, ইউএসটিসি, ফদান ইউনিভার্সিটি, জেইজিয়াং ইনিভার্সিটি, এগুলো হলো C-9 প্রতিষ্ঠান। চীন থেকে আমাদের জ্ঞানবিজ্ঞান নিতে হবে। সে দেশের প্রথম সারির কু? বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি প্রতিবছর আমরা কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে পাঠিয়ে দিতে পারি, সেটা দেশের জন্য অনেক কাজে আসবে। চীন সরকারের কাছ থেকে এমন সুযোগ তৈরির চেষ্টা করা উচিত।

টেক্সাস থেকে একজন বললেন, তারা সেখানে ৫০-এর অধিক। বাংলাদেশি গবেষক। কী দারুণ কথা! যে আমেরিকায় ট্রাম্প আসার কারণে ভিসা পাওয়াটাই কঠিন হয়ে গেছে, সে আমেরিকায়ও বাংলাদেশের বহু ছেলেমেয়ে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত যাচ্ছে। মানুষ জাগলে তাকে রোখা)কঠিন! ১০ বছর আগে যে পরিমাণ ছেলেমেয়ে দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেন, এখন সে সংখ্যা পঁচগুণ বেড়েছে। অথচ গত ১০ বছরে দুনিয়ার রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। ভিসা পাওয়া কঠিন হয়েছে।

বাড়ির পাশে ভারতের আইআইটিগুলোতে ছেলেমেয়েদের যেতে হবে। তরুণদের ধ্যান হলো, পৃথিবী থেকে শিখে নেয়া। যত পারো নিয়ে নাও। বিশ্বজোড়া এক পাঠশালা। একজন তরুণ দাঁড়াতে পারলে, তাঁর পরিবার দাঁড়ায়। সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তার অর্জিত জ্ঞান, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সমাজের কাজে আসে। একজন মানুষকে পুরো দেশ বদলে দিতে হয় না। প্রত্যেকে যদি নিজেকে বদলানোর ব্রত নিয়ে লেগে থাকে, সেটাই অনেক বড় দেশপ্রেম। ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন। অথচ ইসরায়েল থেকে আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান নিতে পারতাম। সে বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনা যায় কি না, ভাবতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ গবেষণায় প্রচুর ব্যয় করছে। আমাদের শিখতে হবে সেসব দেশ থেকেও।

আমাদের এক অকৃত্রিম বন্ধু জাপান। সে দেশটির কাছে। আমাদের ঋণের শেষ নেই। জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। আরও বেশি বেশি বাংলাদেশি তরুণদের সে দেশে পাঠিয়ে দক্ষ করার চেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশের আরও কিছু অকৃত্রিম বন্ধু হলো কানাডা, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ইতালিসহ এমন আরও অনেক দেশ। গবেষণায় তারা বিশ্বমানের। তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে। সুইডেন-তে ফিনল্যান্ড এগুলো ছোট দেশ, তবে প্রচুর শিক্ষাপ্রতিঠান খুলে রেখেছে। ইউরোপিয়ানরা সেসব দেশে ফ্রি পড়েন। সরকারের উচিত সেসব দেশ থেকে বেশি বেশি সুযোগ সৃষ্টির পথ তৈরি করা।

দেশে প্রায় পাঁচ লাখ ছেলেমেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দে দুনিয়ার বহু দেশে পাঁচ লাখ তরুণও নেই। এই ছেলে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দরকার। জ্ঞান দরকার। সারা দুনিয়া দেশগুলো দাঁড়িয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞান ধার করে। অন্যদের থেকে শেখে। আমাদেরও সে সম্ভাবনা আছে। তরুণদের উঠে, পড়ে লাগতে হবে। সুযোগগুলো নিতে হবে। ১৪০০ বছর পরে হিউয়েন সাং চীন থেকে বাংলায় আসতে পেরেছে। আর আজকে জিপিএসের কালে চীন, ভারত, কোরিয়া, জাপান যেতে পারবে না। তুমি? ইন্টারনেট একটা বড় রিসোর্স। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। চীনা ভাষা শেখো, জাপানি শেখো, কোরিয়ান শেখো। জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ শেখো। সুযোগগুলো লুফে নাও। এখনই! জাগরণের কালে হাত গুটিয়ে বসে থাকাটাই সবচেয়ে বড়ো মূর্খতা!

সকল অধ্যায়

১. একটি সাবমেরিন বনাম পাঁচ হাজার জানালা
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘশ্বাসটুকু শুনুন
৩. চিত্ত যেথা ভয়যুক্ত, নিচু যেথা শির
৪. একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়
৫. কোটা নাকি মেধা? জন্ম নাকি কর্ম?
৬. কর্মে হোক জন্ম জয়
৭. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষ্পাপ প্রাণগুলো
৮. দেশটা যেভাবে হেরে যায়
৯. সজাগ হও, হে তারুণ্য!
১০. সেশনজটে ক্ষয়ে যায় সমাজ
১১. থেমে থেকো না
১২. সম্ভাবনাকে জাগতে দিন
১৩. উন্নত সমাজের মূলমন্ত্র
১৪. লক্ষ্য হোক দক্ষতা অর্জন
১৫. কোথায় ছুড়ছ তোমার সোনালি যৌবন?
১৬. দয়া করে ওদের ঠকাবেন না
১৭. বাংলাদেশ কি মেধাবীদের ফিরিয়ে নেবে?
১৮. নেতায় নেতাচ্ছন্ন এক দেশ
১৯. সহজাত মেধা যেন ক্ষয়ে না যায়
২০. মগজের ধ্বংসযজ্ঞ
২১. দাঁড়াতে হলে শিখতে হয়
২২. প্যারালাইজড মাইন্ড!
২৩. সম্ভাবনা খুন হয়ে যায়
২৪. অন্তরে বাহিরে দাসত্বের রজ্জু
২৫. মেধাবীদের কত দিন দূরে রাখবে সমাজ?
২৬. ব্রেইন ড্রেইন নাকি ব্রেইন গেইন?
২৭. শিক্ষার আলোয় জাগুক স্বদেশ
২৮. সম্ভাবনার দুয়ারে আছ দাঁড়িয়ে
২৯. আলোকিত সমাজের মূলমন্ত্র
৩০. দ্য রাইট পারসন
৩১. নিজেকে আবিষ্কার করো
৩২. সত্যিকারের নায়ক
৩৩. যা আছে তা-ই দিয়ে করো সংগ্রাম
৩৪. চুরি বিদ্যা ও বিদ্যা চুরি
৩৫. অনন্য, অপ্রতিরোধ্য দক্ষিণ কোরিয়া
৩৬. একটা বিপ্লব হচ্ছে নীরবে
৩৭. জাগরণের কাল
৩৮. একজন ভিসি ও দীর্ঘশ্বাস
৩৯. কিশোর-কিশোরীর জ্ঞানানন্দ
৪০. ভারত কেন পারছে?
৪১. জাপান থেকে শেখো
৪২. অধিকারবঞ্চিত হতভাগ্য শিক্ষার্থীরা
৪৩. স্ট্যানফোর্ডের আকাশ
৪৪. প্রস্তুতির শ্রেষ্ঠ সময়
৪৫. ডিজিটাল ইগনোরেন্স
৪৬. প্রিয় অভিভাবকগণ, একটু শুনুন
৪৭. মাত্র এক শ কোটি টাকা
৪৮. ফড়িংয়ের চোখ তৈরি করো
৪৯. ছোট দেশের বড় স্বপ্ন
৫০. মনিরুল ইসলামেরা কেন ফিরতে পারেন না?
৫১. ড্রাইভিং ফোর্স
৫২. অন্তরালের নায়ক
৫৩. উদ্ভাবনে আমরা কেন পিছিয়ে?
৫৪. আত্মঘাতী নীতিমালা
৫৫. এমন যদি হতো
৫৬. চারিত্রিক সনদ
৫৭. চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি
৫৮. আত্মহনন কোরো না হে প্রাণ
৫৯. আমাদের সম্ভাবনাময়ী মেয়েরা
৬০. উপাচার্যদের উপাচার্য
৬১. কেমন হয় একটা বিশ্ববিদ্যালয়?
৬২. হৃত কৌতূহলী মগজ
৬৩. জিনিয়াস মাইন্ড

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন