চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি

চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি

২০-২২ বছর বয়স হলো এক্সপ্লোর করার বয়স। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার বয়স। নিজেকে পরীক্ষা করার বয়স। তাই দুনিয়ার। উন্নত দেশের স্কুলগুলো ছেলে-মেয়েদের তাদের আগ্রহ, মেধা ইত্যাদি এক্সপ্লোর করার সুযোগ দেয়। স্টকহোম ইউনিভার্সিটিতে। গিয়ে দেখি ক্লাসমেটরা কেমিস্ট্রির পাশাপাশি কেউ পলিটিক্যাল সায়েন্স পড়ছে। কেউ পড়ছে নিউরোসায়েন্স। কেউ পড়ছে গ্রিক ল্যাঙ্গুয়েজ। কী অদ্ভুত বিষয়!

আমি যখন দেশে ব্যাচেলর করি, কেমিস্ট্রির বাইরে অন্য কিছু পড়ার সুযোগ ছিল না। সাহিত্যের প্রতি আমার নেশা ছিল তীব্র। সাহিত্যের বই কিনে ঘর ভরেছি। কিন্তু আমি চাইলেই সাহিত্যের একটি কোর্স করতে পারতাম না। সেই সুযোগ নেই আমাদের। ইউরোপ-আমেরিকায় ছেলেমেয়েরা প্রচুর কোর্স করেন। ব্যাচেলর পড়ার সময় তারা বহু এরিয়ার কোর্স করেন। যে বিষয়ের ওপর ডিগ্রি (মেজর) নিতে চান, সেই বিষয়ে অ্যাডভান্স কোর্স করলেই সে ডিগ্রি পেয়ে যান। এসব দেশে যারা কেমেস্ট্রিতে ব্যাচেলর করছেন, তাঁরা বায়োকেমেস্টি, মেডিসিনাল কেমেস্ট্রি, টাক্সকোলজি, জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এস্ট্রোকেমেস্ট্রি এমন বহু শাখার কোর্স করেন। পরে একটি কোর্সকে মেজর হিসেবে চিহ্নিত করেন। ওদের সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা টের পাই।

১৮ বছরে একটি স্টুডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে গিয়েই বলে দিতে পারেন না তিনি ভবিষ্যতে কী পড়তে পছন্দ করবেন। তাই তাঁর। সামনে অনেক অপশন রাখতে হয়। চার-পাঁচ বছর সময় নিয়ে। তিনি একটা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বাকি জীবন তিনি সেটা। এনজয় করেন। আমরা বাংলা পড়তে গিয়ে উপলব্ধি করি, ইকোনমিকসে আমার আগ্রহ। কিংবা ডাক্তারি পড়তে গিয়ে উপলব্ধি করি মহাকাশ বিজ্ঞানে আমার নেশা! কিন্তু যে যেটাতে বন্দী হয়ে যান, সেখান থেকে মুক্তির উপায় থাকে না ( জ্ঞানকে আমরা নিয়মের মধ্যে বেঁধে রেখেছি। মেধাকে বেঁধে রেখেছি জিপিএ এবং রেজাল্টের ফ্রেমে।

ইউনিভার্সিটিগুলো কি চাইলে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও উন্মুক্ত পদ্ধতি চালু করতে পারে না? একটা স্টুডেন্টকে অনেক কোর্স করার সুযোগ দিতে পারে না? ছেলেমেয়েরা অন্তত বছর-দুবছর তাদের পছন্দমতো কোর্স করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, সে কী পড়তে পছন্দ করে। পছন্দের বিষয়ে কয়েকটি অ্যাডভান্স কোর্স করলে তাকে সে বিষয়েই স্নাতক ডিগ্রি দেওয়া হোক। দুনিয়ার এত এত বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি এমনটি সম্ভব হয়, আমাদের দেশে সম্ভব নয় কেন?

আমাদের নিয়মটাই হলো চাপিয়ে দেওয়া। আমরা পড়া চাপিয়ে দিই। লক্ষ্য চাপিয়ে দিই। কাজ চাপিয়ে দিই। ইচ্ছা। চাপিয়ে দিই। জীবনসঙ্গীকেও চাপিয়ে দিই। ভালোবেসে, ভালো লাগার মাধ্যমে, নিজের ইচ্ছায় কিছু করার সংস্কৃতিটা পুরোপুরি এখনো চালু হয়নি।

সকল অধ্যায়

১. একটি সাবমেরিন বনাম পাঁচ হাজার জানালা
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘশ্বাসটুকু শুনুন
৩. চিত্ত যেথা ভয়যুক্ত, নিচু যেথা শির
৪. একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়
৫. কোটা নাকি মেধা? জন্ম নাকি কর্ম?
৬. কর্মে হোক জন্ম জয়
৭. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষ্পাপ প্রাণগুলো
৮. দেশটা যেভাবে হেরে যায়
৯. সজাগ হও, হে তারুণ্য!
১০. সেশনজটে ক্ষয়ে যায় সমাজ
১১. থেমে থেকো না
১২. সম্ভাবনাকে জাগতে দিন
১৩. উন্নত সমাজের মূলমন্ত্র
১৪. লক্ষ্য হোক দক্ষতা অর্জন
১৫. কোথায় ছুড়ছ তোমার সোনালি যৌবন?
১৬. দয়া করে ওদের ঠকাবেন না
১৭. বাংলাদেশ কি মেধাবীদের ফিরিয়ে নেবে?
১৮. নেতায় নেতাচ্ছন্ন এক দেশ
১৯. সহজাত মেধা যেন ক্ষয়ে না যায়
২০. মগজের ধ্বংসযজ্ঞ
২১. দাঁড়াতে হলে শিখতে হয়
২২. প্যারালাইজড মাইন্ড!
২৩. সম্ভাবনা খুন হয়ে যায়
২৪. অন্তরে বাহিরে দাসত্বের রজ্জু
২৫. মেধাবীদের কত দিন দূরে রাখবে সমাজ?
২৬. ব্রেইন ড্রেইন নাকি ব্রেইন গেইন?
২৭. শিক্ষার আলোয় জাগুক স্বদেশ
২৮. সম্ভাবনার দুয়ারে আছ দাঁড়িয়ে
২৯. আলোকিত সমাজের মূলমন্ত্র
৩০. দ্য রাইট পারসন
৩১. নিজেকে আবিষ্কার করো
৩২. সত্যিকারের নায়ক
৩৩. যা আছে তা-ই দিয়ে করো সংগ্রাম
৩৪. চুরি বিদ্যা ও বিদ্যা চুরি
৩৫. অনন্য, অপ্রতিরোধ্য দক্ষিণ কোরিয়া
৩৬. একটা বিপ্লব হচ্ছে নীরবে
৩৭. জাগরণের কাল
৩৮. একজন ভিসি ও দীর্ঘশ্বাস
৩৯. কিশোর-কিশোরীর জ্ঞানানন্দ
৪০. ভারত কেন পারছে?
৪১. জাপান থেকে শেখো
৪২. অধিকারবঞ্চিত হতভাগ্য শিক্ষার্থীরা
৪৩. স্ট্যানফোর্ডের আকাশ
৪৪. প্রস্তুতির শ্রেষ্ঠ সময়
৪৫. ডিজিটাল ইগনোরেন্স
৪৬. প্রিয় অভিভাবকগণ, একটু শুনুন
৪৭. মাত্র এক শ কোটি টাকা
৪৮. ফড়িংয়ের চোখ তৈরি করো
৪৯. ছোট দেশের বড় স্বপ্ন
৫০. মনিরুল ইসলামেরা কেন ফিরতে পারেন না?
৫১. ড্রাইভিং ফোর্স
৫২. অন্তরালের নায়ক
৫৩. উদ্ভাবনে আমরা কেন পিছিয়ে?
৫৪. আত্মঘাতী নীতিমালা
৫৫. এমন যদি হতো
৫৬. চারিত্রিক সনদ
৫৭. চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি
৫৮. আত্মহনন কোরো না হে প্রাণ
৫৯. আমাদের সম্ভাবনাময়ী মেয়েরা
৬০. উপাচার্যদের উপাচার্য
৬১. কেমন হয় একটা বিশ্ববিদ্যালয়?
৬২. হৃত কৌতূহলী মগজ
৬৩. জিনিয়াস মাইন্ড

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন