সত্যিকারের নায়ক

সত্যিকারের নায়ক

ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলে কয়টি দেশ? ১২-১৪টি। ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ছাড়া ইউরোপের কোনো দেশ ক্রিকেট খেলে না। বোঝেও না। উত্তেজনাও নেই। ক্যারেবিয়ান কিছু দ্বীপ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা ক্রিকেটশূন্য। তারপরও আমরা ক্রিকেট খেলি। খেলব। ক্রীড়ায় ভালো করা, একটা দেশের গৌরব। ক্রিকেটাররা। আমাদের পতাকা বহন করেন। তাদের নিয়ে গল্প হয়। ফিচার হয়। তাদের নিয়ে মহাকাব্য লেখা হয়। তাদর পুরস্কার দেওয়া হয়। জাতীয় বীর ঘোষণা করা হয়। যে দেশে হেক্টর-একিলিস আগামেমনন নেই, সে দেশে ক্রিকেটাররা হয়ে ওঠেন মহানায়ক।

গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় কয়টা দেশ? প্রায় শত দেশ। ব্রাজিলে যে ৫৮তম প্রতিযোগিতা হলো, সেখানে প্রায় ১০০টি দেশ অংশ নিয়েছে। ছিল উত্তর আমেরিকা-দক্ষিণ আমেরিকার দেশ। ছিল। ইউরোপের প্রায় সব দেশ। ছিল চীন-জাপান-ভারতসহ এশিয়ার দেশ। সেখানে প্রতিযোগিতাটা কেমন, ভাবতে পারেন? পারেন না। কারণ সেটা দিনভর খেলা না। সেটা টিভিতে প্রচার করা হয় না। ধারাভাষ্যকার আবেগপ্রবণ শব্দে বর্ণনা দেন না। দর্শকের হইচই থাকে না। পত্রিকাগুলো গালভরা কতগুলো আবেগীয় গল্প লেখে না। কিন্তু সে প্রতিযোগিতাটাও অনেক কঠিন। ভয়াবহ কঠিন। ১০০টা দেশের ১৭-১৮ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্য থেকে সোনা-রুপা নিয়ে আসা, হেলাফেলা কথা নয়। গণিত অলিম্পিয়াডে যারা ভালো করে, আমেরিকার স্কুলগুলো তাদের ছোবল মেরে নেওয়ার জন্য বসে। থাকে। এমআইটি, হার্ভাড, প্রিন্সটন, ক্যালটেক, স্টানফোর্ড এমন। সব দুনিয়াখ্যাত প্রতিষ্ঠান টুপ করে এই ছেলেমেয়েদের নিয়ে নেয়। সেসব স্কুল এই তরুণ মাথাগুলোকে দিয়ে জগৎসেরা উদ্ভাবন করে।

বাংলাদেশের তরুণেরা এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেন। তাঁরা সোনা জেতেন। তারা রুপা জেতেন। ব্রোঞ্জ পান। তারা জাতীয় পতাকা বুকে নিয়ে সেখানে দাঁড়ান। অথচ তাদের নিয়ে আমরা গালভরা গল্প লিখি না। তাদের জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ হয় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন না, অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতির জন্য পাঁচ কোটি টাকার। বরাদ্দ হবে। সারা দেশের ছেলেমেয়েদের যদি খুব ভালো ক্যাম্পিং করে, ট্রেনিং দিয়ে অলিম্পিয়াডগুলোতে পাঠাই, তাহলে কী কাণ্ড হবে, ভাবতে পারেন! ফিজিকস, কেমেস্ট্রি, গণিত, বায়োলজি অলিম্পিয়াড, জুনিয়র অলিম্পিয়াড–এগুলোতে যদি আমরা গৌরব বয়ে আনি, তাহলে কি দুনিয়ায় আমাদের পরিচিতি কম হবে? তার চেয়ে বড় কথা, এই ছেলেমেয়েগুলোকে দেখে দেশে একটা বিজ্ঞান প্রজন্ম গড়ে উঠবে। সবচেয়ে বড় সুফল এটা। দেশের আনাচকানাচের ছেলেমেয়েরা গণিত ও বিজ্ঞান নিয়ে ভাববে। জটিল। জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য মুখিয়ে থাকবে। তাদের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসবে ভবিষ্যতের বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক।

শিক্ষা বা বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের অধীন অলিম্পিয়াডের জন্য পৃথক। অফিস চালু করে জাতীয় বরাদ্দ দেওয়া হোক। জাতীয় অলিম্পিয়াডের মধ্য দিয়ে সারা দেশ থেকে মেধার অনুসন্ধান (Talent Hunt) অব্যাহত থাকুক। গণমাধ্যমকে বলব, অলিম্পিয়াড থেকে ফিরে আসা তরুণদের নিয়ে আপনারা লিখুন। তাঁদের নিয়ে অনুষ্ঠান করুন। টিভিতে প্রচার করুন। অলিম্পিয়াডের জন্য জাতীয় বরাদ্দ দিতে সরকারকে সোচ্চার করুন। অলিম্পিয়াডের তরুণেরাও এ দেশের নায়ক। সত্যিকারের নায়ক!

সকল অধ্যায়

১. একটি সাবমেরিন বনাম পাঁচ হাজার জানালা
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘশ্বাসটুকু শুনুন
৩. চিত্ত যেথা ভয়যুক্ত, নিচু যেথা শির
৪. একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়
৫. কোটা নাকি মেধা? জন্ম নাকি কর্ম?
৬. কর্মে হোক জন্ম জয়
৭. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষ্পাপ প্রাণগুলো
৮. দেশটা যেভাবে হেরে যায়
৯. সজাগ হও, হে তারুণ্য!
১০. সেশনজটে ক্ষয়ে যায় সমাজ
১১. থেমে থেকো না
১২. সম্ভাবনাকে জাগতে দিন
১৩. উন্নত সমাজের মূলমন্ত্র
১৪. লক্ষ্য হোক দক্ষতা অর্জন
১৫. কোথায় ছুড়ছ তোমার সোনালি যৌবন?
১৬. দয়া করে ওদের ঠকাবেন না
১৭. বাংলাদেশ কি মেধাবীদের ফিরিয়ে নেবে?
১৮. নেতায় নেতাচ্ছন্ন এক দেশ
১৯. সহজাত মেধা যেন ক্ষয়ে না যায়
২০. মগজের ধ্বংসযজ্ঞ
২১. দাঁড়াতে হলে শিখতে হয়
২২. প্যারালাইজড মাইন্ড!
২৩. সম্ভাবনা খুন হয়ে যায়
২৪. অন্তরে বাহিরে দাসত্বের রজ্জু
২৫. মেধাবীদের কত দিন দূরে রাখবে সমাজ?
২৬. ব্রেইন ড্রেইন নাকি ব্রেইন গেইন?
২৭. শিক্ষার আলোয় জাগুক স্বদেশ
২৮. সম্ভাবনার দুয়ারে আছ দাঁড়িয়ে
২৯. আলোকিত সমাজের মূলমন্ত্র
৩০. দ্য রাইট পারসন
৩১. নিজেকে আবিষ্কার করো
৩২. সত্যিকারের নায়ক
৩৩. যা আছে তা-ই দিয়ে করো সংগ্রাম
৩৪. চুরি বিদ্যা ও বিদ্যা চুরি
৩৫. অনন্য, অপ্রতিরোধ্য দক্ষিণ কোরিয়া
৩৬. একটা বিপ্লব হচ্ছে নীরবে
৩৭. জাগরণের কাল
৩৮. একজন ভিসি ও দীর্ঘশ্বাস
৩৯. কিশোর-কিশোরীর জ্ঞানানন্দ
৪০. ভারত কেন পারছে?
৪১. জাপান থেকে শেখো
৪২. অধিকারবঞ্চিত হতভাগ্য শিক্ষার্থীরা
৪৩. স্ট্যানফোর্ডের আকাশ
৪৪. প্রস্তুতির শ্রেষ্ঠ সময়
৪৫. ডিজিটাল ইগনোরেন্স
৪৬. প্রিয় অভিভাবকগণ, একটু শুনুন
৪৭. মাত্র এক শ কোটি টাকা
৪৮. ফড়িংয়ের চোখ তৈরি করো
৪৯. ছোট দেশের বড় স্বপ্ন
৫০. মনিরুল ইসলামেরা কেন ফিরতে পারেন না?
৫১. ড্রাইভিং ফোর্স
৫২. অন্তরালের নায়ক
৫৩. উদ্ভাবনে আমরা কেন পিছিয়ে?
৫৪. আত্মঘাতী নীতিমালা
৫৫. এমন যদি হতো
৫৬. চারিত্রিক সনদ
৫৭. চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি
৫৮. আত্মহনন কোরো না হে প্রাণ
৫৯. আমাদের সম্ভাবনাময়ী মেয়েরা
৬০. উপাচার্যদের উপাচার্য
৬১. কেমন হয় একটা বিশ্ববিদ্যালয়?
৬২. হৃত কৌতূহলী মগজ
৬৩. জিনিয়াস মাইন্ড

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন