স্ট্যানফোর্ডের আকাশ

স্ট্যানফোর্ডের আকাশ

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে হাঁটছি। বিকেলের স্ট্যানফোর্ড অসম্ভব সুন্দর। সারি সারি পামট্রি। সবুজ ঘাস। পুরোনো পুরোনো ভবন। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম ব্যাকম্যান রিসার্চ সেন্টারের দিকে। সে সেন্টারের সামনে থরে থরে উত্তীর্ণ করা আছে কত কত বিজ্ঞানীর সাফল্যগাথা। কোনটা ফেলে কোনটা পড়ব অবস্থা। সে পথে হাঁটলেই শরীরে কেমন শিহরণ জাগে।

আমেরিকার দুটি প্রধান অংশ হলো ইস্ট কোস্ট ও ওয়েস্ট কোস্ট। ইস্ট কোস্ট বলা হয় আটলান্টিকের তীরের অংশকে। ওয়েস্ট কোস্ট বলা হয় প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী অংশকে। এই দুই তীরেই আমেরিকার সেরা স্কুলগুলো। ইস্ট কোস্টে আছে এমআইটি, হার্ভার্ড, প্রিন্সটন, কর্নেল, ইউপেন, কলাম্বিয়া। ওয়েস্ট কোস্টে আছে ক্যালটেক, স্ট্যানফোর্ড, ইউসি-বার্কলে, ইউসি এলএ ইত্যাদি। দুই তীরের এই শহরগুলো হলো আমেরিকার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। আর এর পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখছে এই স্কুলগুলো।

ক্যালিফোর্নিয়া হলো আমেরিকার ওয়েস্ট কোস্টের শহর। সেখানে গড়ে উঠেছে সিলিকন ভ্যালি। গড়ে উঠেছে শত শত বায়োট্যাক কোম্পানি। ব্যবসা-বাণিজ্য, টেকনোলজি এসবের এক জীবন্ত জায়গা হলো ক্যালিফোর্নিয়া। ওখানে দেখা একুশের তরুণেরা কোম্পানি খুলে বসে আসেন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হচ্ছে। নতুন নতুন আইডিয়া, উদ্ভাবন প্রচার, প্রসার, বাণিজ্য–এই চলছে সেখানে।

ক্যালিফোর্নিয়া ও তার আশপাশের শহরগুলোকে বদলে। দিয়েছে এসব স্কুল। হাজার হাজার মেধাবী তরুণ বেরিয়ে। পড়ছেন। তাঁদের মাথায় আইডিয়া ভরা। যে যার মতো নানান বিষয়ে ভাবছে। সেই ভাবনা কাজে লাগাচ্ছে। আর এই ভাবনার উৎস কী? উন্নত শিক্ষা ও গবেষণা!

স্ট্যানফোর্ডের ছেলেমেয়েরা ছাত্রলীগ-ছাত্রদল নিয়ে ব্যস্ত নয়। সেখানের ছেলেমেয়েদের নোংরামি শেখানো হয় না। তাদের জগজয়ের কথা শোনানো হয়। সেই পথ দেখানো হয়। তারা ব্যস্ত প্রজেক্ট নিয়ে। সেমিনার-সিম্পোজিয়াম নিয়ে। সারা দুনিয়ার গবেষকেরা যাচ্ছেন সেখানে। লেকচার দিচ্ছেন। ভাবনার আদান-প্রদান হচ্ছে প্রতিদিন। এই তো তাদের কাজ! তাদের শিক্ষকেরা রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত নন। শিক্ষকেরা তাদের চাকরি টিকিয়ে রাখতে দিন-রাত খেটে মরছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নেতারা দখল করে রাখেননি সেখানে। মেধাবীদের ভয়ে নেতারা কাঁপছেন! বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বসে বসে রাজনৈতিক কলাম লেখা নিয়ে ব্যস্ত নন। নিজের প্রতিষ্ঠানকে কী করে পৃথিবীর বুকে আরও তুলে ধরা যায়, তা নিয়েই তাঁর সকাল-সন্ধ্যা কাটে।

শিক্ষার্থীরা শুধু পড়ছেন, গবেষণা করছেন আর জীবনকে উপভোগ করছেন। তাঁদের কোনো শঙ্কা নেই। নেই কোনো সংকোচ! ক্ষুদ্র জগতে তারা নিজেদের বন্দী করে রাখেন না। কুড়ির তরুণ ব্যাচেলর শেষ করে কোম্পানি খুলে বসে আছেন। একুশের তরুণ গবেষণায় উন্মুখ হয়ে আছেন। বাইশের তরুণ। তার বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে হয়তো ইউরোপের কোনো দেশে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে গবেষণা করছেন। আমাদের মতো আদুভাই বানিয়ে ওদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করানো হয় না। আমরা ৪০-এ করব পিএইচডি–এই হলো জাতীয় ট্রেন্ড! স্ট্যানফোর্ডে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে এল। তাতে সেখানের কালো কমেনি এতটুকু। সে আকাশে কান পাতলেই শোনা যায়। চস ফিস করছেন তারা। যাদের জন্য পৃথিবী আজ এত দূর। কত কত নাম সে তালিকায়। তাদের সৃষ্টির কিরণে সে আকাশ চির-উজ্জ্বল! অন্ধকারের সেখানে নেই প্রবেশ!

সকল অধ্যায়

১. একটি সাবমেরিন বনাম পাঁচ হাজার জানালা
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘশ্বাসটুকু শুনুন
৩. চিত্ত যেথা ভয়যুক্ত, নিচু যেথা শির
৪. একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়
৫. কোটা নাকি মেধা? জন্ম নাকি কর্ম?
৬. কর্মে হোক জন্ম জয়
৭. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষ্পাপ প্রাণগুলো
৮. দেশটা যেভাবে হেরে যায়
৯. সজাগ হও, হে তারুণ্য!
১০. সেশনজটে ক্ষয়ে যায় সমাজ
১১. থেমে থেকো না
১২. সম্ভাবনাকে জাগতে দিন
১৩. উন্নত সমাজের মূলমন্ত্র
১৪. লক্ষ্য হোক দক্ষতা অর্জন
১৫. কোথায় ছুড়ছ তোমার সোনালি যৌবন?
১৬. দয়া করে ওদের ঠকাবেন না
১৭. বাংলাদেশ কি মেধাবীদের ফিরিয়ে নেবে?
১৮. নেতায় নেতাচ্ছন্ন এক দেশ
১৯. সহজাত মেধা যেন ক্ষয়ে না যায়
২০. মগজের ধ্বংসযজ্ঞ
২১. দাঁড়াতে হলে শিখতে হয়
২২. প্যারালাইজড মাইন্ড!
২৩. সম্ভাবনা খুন হয়ে যায়
২৪. অন্তরে বাহিরে দাসত্বের রজ্জু
২৫. মেধাবীদের কত দিন দূরে রাখবে সমাজ?
২৬. ব্রেইন ড্রেইন নাকি ব্রেইন গেইন?
২৭. শিক্ষার আলোয় জাগুক স্বদেশ
২৮. সম্ভাবনার দুয়ারে আছ দাঁড়িয়ে
২৯. আলোকিত সমাজের মূলমন্ত্র
৩০. দ্য রাইট পারসন
৩১. নিজেকে আবিষ্কার করো
৩২. সত্যিকারের নায়ক
৩৩. যা আছে তা-ই দিয়ে করো সংগ্রাম
৩৪. চুরি বিদ্যা ও বিদ্যা চুরি
৩৫. অনন্য, অপ্রতিরোধ্য দক্ষিণ কোরিয়া
৩৬. একটা বিপ্লব হচ্ছে নীরবে
৩৭. জাগরণের কাল
৩৮. একজন ভিসি ও দীর্ঘশ্বাস
৩৯. কিশোর-কিশোরীর জ্ঞানানন্দ
৪০. ভারত কেন পারছে?
৪১. জাপান থেকে শেখো
৪২. অধিকারবঞ্চিত হতভাগ্য শিক্ষার্থীরা
৪৩. স্ট্যানফোর্ডের আকাশ
৪৪. প্রস্তুতির শ্রেষ্ঠ সময়
৪৫. ডিজিটাল ইগনোরেন্স
৪৬. প্রিয় অভিভাবকগণ, একটু শুনুন
৪৭. মাত্র এক শ কোটি টাকা
৪৮. ফড়িংয়ের চোখ তৈরি করো
৪৯. ছোট দেশের বড় স্বপ্ন
৫০. মনিরুল ইসলামেরা কেন ফিরতে পারেন না?
৫১. ড্রাইভিং ফোর্স
৫২. অন্তরালের নায়ক
৫৩. উদ্ভাবনে আমরা কেন পিছিয়ে?
৫৪. আত্মঘাতী নীতিমালা
৫৫. এমন যদি হতো
৫৬. চারিত্রিক সনদ
৫৭. চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি
৫৮. আত্মহনন কোরো না হে প্রাণ
৫৯. আমাদের সম্ভাবনাময়ী মেয়েরা
৬০. উপাচার্যদের উপাচার্য
৬১. কেমন হয় একটা বিশ্ববিদ্যালয়?
৬২. হৃত কৌতূহলী মগজ
৬৩. জিনিয়াস মাইন্ড

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন