আশাপূর্ণা দেবী
দেবব্রতবাবু!
সে তো চম্পা তখনও বলতো!
বলতো, ‘এই যে দেবব্রতবাবু এলেন!’
বলতো, ‘ওরে বাবা, দেবব্রতবাবু কি তাহলে রক্ষে রাখবেন?’
সেই ছন্দের সঙ্গে আজকের ছন্দের মিল আছে।
তবে দেবু যে প্রথম প্রথম বলতো, ‘চেহারায় একটা সাদৃশ্য অনেক মানুষের মধ্যে থাকে।’ …বলতো, ‘শেষ অবধি দেখো, তোমায় ভুলিয়ে ভালিয়ে বেশ কিছু বাগিয়ে নিয়ে চম্পট দেবে’ তেমন আর বলে না। ক্রমশঃ দেবুও যেন চন্দ্রভূষণের ভাবে ভাবিত, আর চন্দ্রভূষণের রসে জারিত হয়ে গেছে।
কাজেই ‘ও কে?’ এ প্রশ্ন আর ওঠেনি।
অনেকদিন পরে আজ একবার উঠল।
চন্দ্রভূষণই ওঠালেন।
চম্পা উঠে গেলে চন্দ্রভূষণ বলেন, ‘তোর আর কোনো সন্দেহ আছে দেবু?’
দেবু মাথা নেড়ে বলে, ‘এখন আর নেই।’
‘প্রথম প্রথম ছিল, কি বলিস?’
‘তা’ ছিল একটু একটু।’
‘আমার ছিল না’—চন্দ্রভূষণ পরিতৃপ্তির হাসি হাসেন, ‘প্রথম দিনও না। তবু তো তখন গেরুয়া জড়ানো ছিল—’
‘যাই বলিস তোর খুব সাহস—’ দেবু বলে, ‘যদি ভুল হতো, স্রেফ মার খেতিস গাড়িতে!’
‘ভুল অমনি হলেই হলো?’ চন্দ্রভূষণ আরো পরিতৃপ্তির হাসি হাসেন, ‘ভুল হয় না রে!’
তখন চম্পার কথাই সত্যি লাগে, বোকাবোকাই দেখায় চন্দ্রভূষণকে। আগেকার সেই ধারালো ছেলে চন্দ্রভূষণকে।
প্রেমের সঙ্গে বোকামির বোধকরি একটা নিকট সম্পর্ক আছে। অথবা এটাই সত্যি, বুদ্ধির গোড়ায় বৌ এসে জেঁকে না বসলে—
তা’ সেটাও তো চম্পার কথা।
তীক্ষ্ন বুদ্ধিশালিনী চম্পার। যে চম্পা অনায়াসে বলে, ‘তোমার মন সংসারী, তোমার মন সামাজিক, তুমি সবাইকে নিয়ে পূর্ণ হতে চাও, তুমি পারবে না শুধু এক অশরীরী প্রেমের সঞ্চয় নিয়ে নতুন করে জীবন গড়তে।’
চন্দ্রভূষণ অস্বীকার করতে পারেন না, চন্দ্রভূষণ অসহায়ের মত বলেন, ‘তবে তুমিই বল কি করা উচিত আমার?’
চম্পা একবার ওই নেমে যাওয়া সিঁড়িটার দিকে তাকায়, একবার চন্দ্রভূষণের মুখের দিকে তাকায়, তারপর বলে, ‘আমাকে একটা কাশীর টিকিট কিনে দেওয়া হচ্ছে প্রথম উচিত—’
‘তোমাকে কাশীর টিকিট কিনে দেওয়া!’
যন্ত্রচালিতের মত উচ্চারণ করেন চন্দ্রভূষণ।
চম্পা অন্যদিকে ঘাড়টা ফিরিয়ে সহজের মত করে বলে, ‘হ্যাঁ, তাছাড়া আর উপায় কি? এখন তো আর গেরুয়ার ভেক নেই যে, রেল কোম্পানি অমনি চড়াবে? এখন টিকিট চাই।’
‘ওঃ তার মানে তুমি চলে যেতে চাইছ?’
ক্রুদ্ধ শোনায় চন্দ্রভূষণের গলা।
চম্পা কষ্টে হেসে বলে, ‘তা’ তুমি চলে যাওয়ার থেকে আমার চলে যাওয়াই বরং কম কষ্টের।’
‘আমি চলে যাবো বলেছি?’
‘বলনি? যাচ্ছিলে তো?’
‘আমি আর এই একটা অদ্ভুত অবস্থায় কাটাতে পারছি না চম্পা! আমি তোমাকে এই অসম্মানের মধ্যে ফেলে রাখতে পারছি না।’
‘অসম্মান নয় গো, এই আমার পরম সম্মান’, চম্পা বলে, ‘এতো পাবো, এই বা কবে ভেবেছি বল? কিন্তু ভাবছি আর বেশী পাওয়ার লোভ কি ভাল? তোমাকে এতদিন রোজ দেখলাম, তোমাকে হাতে করে খাওয়ালাম, তোমার কাছে বসে কথা কইলাম, এর বেশী আর কি চাইতে পারতাম? সারাজীবন ধরে তো শুধু এই স্বপ্নই দেখেছি—’
‘বাজে কথা,’ চন্দ্রভূষণ বলেন, ‘আমি নাহয় তোমার’ সন্ধান জানতাম না, তুমি তো আমার সন্ধান জানতে? কত চিঠির ঠিকানা লিখেছ! মামীর চিঠির ঠিকানা তো তুমিই—’
চম্পা মৃদু হেসে বলে, ‘তোমার বাড়ির ঠিকানা জানতাম, ‘তোমার, ঠিকানা জানতাম কি? এই পাপীয়সীর চিঠি হাতে পেলে সে চিঠি আগুনে ফেলে দিয়ে গঙ্গাজলে হাত ধোবে কি না নিশ্চয়তা ছিল কিছু?’
‘ছিল বৈকি! শুধু তোমার সেটা অনুভব করবার মত অনুভূতি ছিল না।’ চন্দ্রভূষণ বলে ওঠেন, ‘না হয় তাই হতো। না হয় দিতাম ফেলে আগুনে। তবু একটা চিঠি দিলেও দিতে পারতে। দাওনি সেটা, তার মানে আমার ওপর বিশ্বাস ছিল না!’
‘এখন ভাবছি তাই—’ চম্পা বলে, ‘এখন অস্বীকার করছি না। সত্যিই ছিল না অতটা বিশ্বাস! যাক যে দিনটা চলে গেছে, আর তো আসবে না? তবু যে দিনটা আসছে, তাকেই ম্যানেজ করতে হবে! কাশীর টিকিটটা ভুলো না।’
‘মনে রাখতে আমার দায় পড়েছে—’ বলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যান চন্দ্রভূষণ।
রাগ রাগ করেই গাড়িতে গিয়ে ওঠেন, যে গাড়িটা নিজেই তিনি চালিয়ে আসেন।
রাগ রাগ করে ভাবতে থাকেন, কাশীর টিকিট! কাশী চলে যাবেন উনি! তার মানে, আবার সেই হাঁড়ির হাল, আবার সেই কষ্ট! মাঝখানে কিছুদিন হারিয়ে গিয়ে ভেসে বেড়িয়েছে বলে সাপের পা দেখেছে? যা খুশি করবে? ওর ওপর আমার জোর নেই?…দেখি ও কেমন করে কাশী যায়!
কাশী যাবেন!
‘কাশীর বুড়ী’ হয়ে ভিক্ষে করে খাবেন! ওঃ ভারী একেবারে!
চিরদিন সকলের চিন্তা করে এসেছেন বলেই হয়তো চম্পার এই ‘নিজ চিন্তাটা’ গায়ে জ্বালা ধরাচ্ছে চন্দ্রভূষণের।
অথচ গায়ে জ্বালা ধরবার মত অবস্থার অভাব নেই ইহসংসারে।
পরদিন তেমনি এক জ্বালার মুখোমুখিই তো পড়তে হলো।
সকালে।
তবে একেবারে সকালে নয়, বাজার করতে যাবার সময়ও আগুনটা ছিটকে এসে চোখে মুখে লাগেনি—সুনন্দার ওই নতুন তোলা—উনুনটার গনগনে আগুন!
বাজার করতে যাবার সময় যথারীতিই গিয়েছিলেন। মন ভাল নেই বলে অভ্যস্ত কাজে অবহেলা করবেন এমন স্বভাব নয় চন্দ্রভূষণের। তা’ছাড়া সকালে উঠে মনটা তত ভারাক্রান্তও ছিল না। ঘুমন্ত বাড়িটার দিকে তাকিয়ে সংসারের ‘আঘাত’গুলো অলীক মনে হচ্ছিল, আর চম্পাকে কিছুতেই কাশী যেতে দেবেন না স্থির করায় একটা নিশ্চিন্ততা এসেছিল।
গতরাত্রে ফিরে এসে দেখেছেন সিন্ধুর একটা চিঠি এসেছে, এবং সে চিঠিতে বাড়ি থেকে গিয়ে কি কি অসুবিধে হয়েছে সিন্ধুর, তারই বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হয়েছে।
বড় ভাল লেগেছিল চিঠিটা, বুকপকেটে রেখে দিয়েছেন। আর মনে মনে হেসে ভেবেছেন, নির্ঘাৎ বাবু অফিস থেকে চিঠিটি লিখেছেন, নচেৎ এ চিঠি আমার ছোটবৌমার চোখে পড়লে আর ডাকবাক্সে উঠতে হতো না চিঠিকে!
সিন্ধু যে অফিস থেকেই লিখেছে, সেটা স্থির করে নিলেন, আর মনে হলো ওই ছোট ভাইটা যেন বৌকে লুকিয়ে চুপিচুপি তাঁর কাছে বসে দুঃখের কথা জানাচ্ছে।
সিন্ধুটার নাকি পেট ভাল থাকছে না, অথচ পাতিলেবু পাওয়া যায় না ওখানে। আশ্চর্য! পাতিলেবু পাওয়া যায় না, এমন দেশ! ডজন কতক পাতিলেবু পার্শেল করা এমন কিছু কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। কিনে ফেললেন বেছে বেছে বড় বড় তাজা তাজা একশো পাতিলেবু।
একশোই ভাল, হ্যাঙ্গামা করে পাঠানোই হচ্ছে যখন।
আলাদা করে নিলেন সেগুলো।
এসেই সেজবৌমার হাতে দিতে হবে, সে—ই গোছালো মেয়ে, জলে ভিজিয়ে ঠিক করে রাখবে। চন্দ্রভূষণ দুপুরের দিকে পার্শেলের ব্যবস্থা করবেন।
একশো নিয়েও মনে হচ্ছিল আরও বেশী কিছু নিলে হতো! পাওয়া যখন যায় না, তখন পাড়ায় দু’দশটা না বিলোলে কি হবে? তা’ আবার একবার পাঠালেও মন্দ হবে না, টাটকা হবে।
এসে ডাকলেন, ‘সেজবৌমা!’
সাড়া পেলেন না।
কী ব্যাপার, কাল বোনের বাড়ি থেকে ফেরেনি নাকি?
রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালেন, আর সহসা একটা আগুনের আঁচের ধাক্কায় ঝলসে গেলেন।
তবু ফোসকা পড়বার আগে পর্যন্ত ঠিক বুঝতে পারেন নি। পারলেন একটু পরে।
রান্নাঘরের একটা দেয়ালের ধারে খানকয়েক নতুন ইঁট দিয়ে সীমারেখা নির্দিষ্ট করে তার গণ্ডির মধ্যে নতুন তোলা—উনুন জ্বেলে সেজবৌমার মহোৎসাহে রান্না করতে বসার তাৎপর্য অনুভবে এল, অনেকটা সময় তাকিয়ে থেকে।
সেজবৌমার বাসনপত্র সব নতুন, ছোট হালকা হালকা কাচ, এলুমিনিয়ম, এনামেল। সাবেকী সংসারের বীরভদ্র কাঁসা পেতল নয়।
কাছে বসে কোলের ছেলেটা টিনের একটা কৌটো ঠুকছে ঠক—ঠকিয়ে।
চন্দ্রভূষণ কি নিজে কিছু বলেছিলেন?
না বলেননি। বলার অবস্থা ছিল না। তবু তাঁর স্খলিত স্বর থেকে ঝরে পড়েছিল ‘সেজ—বৌমা এ কী?’
হয়তো ঝরেই পড়েছিল।
তাই তাতে না ছিল বিস্ময়, না ছিল তীব্রতা।
সেজবৌমা উত্তর দিলেন না।
সেজবৌমা সহসা ‘মেজদি’র পদ্ধতিতে ভাসুর দেখে ঘোমটা দিলেন।
শুধু ছোট ছেলেটা ছুটে এসে চন্দ্রভূষণের হাঁটুটা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো, ‘জানো জ্যাঠাবাবু, আজ কী মজা! আজ আমাদের আলাদা রান্নাঘরে রান্না হবে। মা ইঁট দিয়ে নতুন রান্নাঘর বানিয়েছে!’
চন্দ্রভূষণ চিরঅভ্যাসে ছেলেটাকে কোলে তুলে নিলেন না, আস্তে আস্তে চলে গেলেন।
চন্দ্রভূষণ কি এখন তাঁর সেজভাইকে ডেকে কৈফিয়ত চাইবেন, ‘বাড়ির মধ্যে এতবড় একটা দুর্ঘটনা ঘটালে তোমরা, আমাকে একবার জানাবার প্রয়োজনও অনুভব করলে না কোন সাহসে?’
চন্দ্রভূষণ আগের চেয়ে বোকা হয়ে গেছেন বলে কি এতই বোকা হয়ে গেছেন?
চন্দ্রভূষণের সেজভাই কি তা’হলে এ উত্তর দেবে না, ‘ঘটনাটাকে এত বড় করে দেখবার কি আছে তাও তো বুঝছি না দাদা! রান্নাঘরটা মেয়েদের ডিপার্টমেন্ট, সেখানের সুবিধে অসুবিধে মেয়েরাই বুঝবে, এটাই তো স্বাভাবিক।’
বলবেই।
এই ধরনের গাঝাড়া কথাই কইছে আজকাল ওরা।
এরপরও যদি কথা চালাতে হয় তো চন্দ্রভূষণকে বলতে হবে, ‘আমার আনা বাজার তা’হলে আর তোমার রান্নাঘরে নেবে না?’
হ্যাঁ, এই প্রশ্নটাই তো ভারী হাতুড়ীর মত ভয়ংকর শব্দে ঘা মেরে চলেছে চন্দ্রভূষণের মাথায়, বুকে, হয়তো বা মেরুদণ্ডে!
চন্দ্রভূষণ সেই হাতুড়ির শব্দটাই শুনতে লাগলেন বসে বসে।
বিন্দুভূষণ দাড়ি কামাতে কামাতে, কাগজ পড়তে পড়তে, অনেকক্ষণ সচেতন আর সতর্ক হয়ে রইলো কৈফিয়তের মুখোমুখি পড়বে বলে, তারপর একটু আশ্চর্য্য হয়ে স্নান করতে চলে গেল।
দাদা কি টের পাননি?
দাদা কি ঠিক অনুধাবন করতে পারেননি?
খাবার টেবিলে সিন্ধুর জায়গাটা শূন্য হয়ে গিয়েছিল ক’দিন, আজ বিন্দুর জায়গাটাও খাঁ—খাঁ করতে লাগলো।
শুধু ইন্দুভূষণ একধারে নিঃশব্দে ঘাড় গুঁজে বসে খেয়ে উঠে গেল।
চন্দ্রভূষণ তাঁর নির্দিষ্ট আসনটায় এসে বসলেন না। বললেন না, ‘কিছু না খাস, মাছ দুখানা খা ভাল করে, কিসে পুষ্টি হবে?’
তা’ পুষ্টি নিয়ে যে মাথা ঘামায় না ইন্দু, তার প্রমাণ পাওয়া গেল আর ক’টা দিন পরেই।
হঠাৎ একদিন বাড়িতে যাগযজ্ঞের আভাস পাওয়া গেল। পুজোর ঘরে নয়, ইন্দুভূষণের শোবার ঘরে যেন কিসের একটা আয়োজন চলছে।…ঝাঁকায় করে ফল এলো, প্যাকেটে মোড়া কাপড় এলো। বোধ করি হোমের কাঠও এলো।…আরো কত কি যেন এলো ভাঁড়ে করে, ঠোঙায় করে।
ইন্দুভূষণ যে বাজারের রাস্তা চেনে, এই প্রথম দেখতে পেলেন চন্দ্রভূষণ। অফিস কামাই করে বাজার ঘর করছে ইন্দু সকাল থেকে! কীসের আয়োজন? ছেলের পৈতের?
না, ইন্দুকে অতটা নীচ ভাবা উচিত হয়নি চন্দ্রভূষণের! বড় ভাইকে না জানিয়ে ছেলের পৈতে দেবে, এতই অসভ্য সে?
সে সব কিছু নয়, সস্ত্রীক দীক্ষা নিচ্ছে সে।
গুরু আসবেন—হোম হবে!
মহাপুরুষ গুরু, ভারী কঠোর তাঁর নিয়ম। ইন্দুভূষণের শ্বশুরকুলের সকলেই ওঁর কাছে বিক্রীত, দুই শালী, ভায়রা—ভাই সব। শেফালীই পেরে উঠছিল না ভাসুরের ভয়ে।
যে দীক্ষা নিলে নিরামিষ খেতে হয়, সে দীক্ষামন্ত্রকে চৌকাঠ ডিঙোতে দেবেন না চন্দ্রভূষণ, এমন আশঙ্কা ছিল। সহসা আশঙ্কাটা হাস্যকর হয়ে গেছে। কাকে ভয় করে মরছে শেফালী?
আর ভয়ই বা কেন?
ইহকাল আগে, না পরকাল আগে?
তা’ছাড়া এখন যে আর চন্দ্রভূষণ বড়গলায় বলে উঠবেন না, ‘তুইও কি ক্ষেপলি নাকি ইন্দু? তোর ওই শ্বশুরবাড়ির ‘বাবা’র ক্ষুরে মাথা মুড়োবি?’ এ—কথা নিশ্চিত।
বলবেন না।
এতদিন সে ভয় ছিল।
নিরামিষ খেয়ে ধর্ম করতে হবে শুনলে রসাতল করবেন চন্দ্রভূষণ, এতে আর সন্দেহ ছিল না।
রাগ করবেন, বিদ্রূপ করবেন, অগ্রাহ্য করবেন, জোর করে পাতে মাছ তুলে দেবেন, এমন ভাবা যেত।
কিন্তু এখন আর সে ভয় নেই।
এখন আর বলতে আসবেন না, ‘আচ্ছা মেজবৌমা, তোমাকেও বলি, তোমার বাপের বাড়ির গুরু তুমি পূজা কর, ইন্দুটার সুদ্ধু পরকাল ঝরঝরে করছ কেন? মাছ নইলে ভাত মুখে করতে পারে না ও, মাংস মুরগীকেই সবচেয়ে ভজে, জানো না তুমি?’
অতএব এখন নিশ্চিন্তে মাথা মুড়নো যায়। বরকে আশ্বাস দিয়েছে, ‘দেখো মনেও পড়বে না ওই সব ছাইপাঁশ খেতে ভালবাসতে! জামাইবাবুকে দেখলাম তো! যে মানুষ শাকপাতকে ‘গরুর খাদ্য’ বলে ঘেন্না দিতেন, সেই মানুষ চাঁদমুখ করে দিশী কুমড়োর ঘণ্ট দিয়ে ভাত খেয়ে যাচ্ছেন!’
তবে আর একটা ঘটনা ঘটলো। মানে ওরাই ঘটালো।
শেফালী কর্তব্য ঠিক করতে পারেনি।
শেফালী ভাবছিল, হলেই বা গুরুজন, এতবড় একটা পুণ্যদিনে একজন অপবিত্র লোককে পা ছুঁয়ে প্রণাম করবো?
কিন্তু শেফালীর মা নির্দেশ দিলেন।
মেয়ের দীক্ষা উপলক্ষ্যে সকালবেলাই এসেছেন। তিনিই বললেন, ‘যার ধর্ম তার কাছে, তোমার এই শ্বশুরকুলের উনিই একমাত্র গুরুজন। গুরুদীক্ষা নেবার আগে ওঁর পায়ের ধুলো নেওয়া কর্তব্য। দুজনেই নেবে। একত্রে গিয়ে প্রণাম করবে।’
কর্তব্য ঠিক হলো অতএব।
চন্দ্রভূষণ যখন স্নান সেরে তিনতলায় ঠাকুরঘরে উঠছেন সুষমার সেই ঠাকুরের সংসারের তদারক করতে, গরদের শাড়ি পরে দুজনে এসে প্রণাম করলো।
চন্দ্রভূষণ থতমত খেলেন।
চন্দ্রভূষণ এটা আশা করেননি।
চন্দ্রভূষণ ইতিমধ্যে এটুকু অনুমান করেছিলেন, ছেলের পৈতে নয়। ছেলেটার যে আট বছর পার হয়নি! এ কোনো ব্রতটতর ব্যাপার। কিন্তু সে ব্রতে যে চন্দ্রভূষণের এতখানি প্রাপ্য ছিল তা ভাবেননি।
থতমত খেয়ে বললেন, ‘কী ব্যাপার?’
শেফালী ঘোমটাটা একটু টানলো। ইন্দুভূষণ বললো, ‘ইয়ে আর কি, ভাবা গেল দীক্ষাটা নিয়েই ফেলা যাক, তাই আর কি। ইয়ে, গুরুদেব এসে গেছেন, তাই আগে একবার—’
চন্দ্রভূষণ ‘গুরুদেব’ বলে অবজ্ঞা করে উঠলেন না, চন্দ্রভূষণ বললেন না, ‘দীক্ষা নিয়ে ওই আলোচাল কাঁচকলা ভজবি তাহলে?’
চন্দ্রভূষণ শুধু নিজেই হাত তুলে কাকে যেন একটু নমস্কার করে বললেন, ‘তা’ যা ঠাকুরঘরে, মার ঠাকুরকে একবার প্রণাম করে আয়।’
ওরা অবাক হয়, ওরা অপ্রতিভ হয়। হয় বৈকি, ওরা তো আর ‘পাজী’ নয়, ওরা শুধু সাধারণ মানুষ।
দীক্ষা উপলক্ষে লোকজনও খেল।
আর এই প্রথম চন্দ্রভূষণের বাজার করা ব্যতীতই যজ্ঞি হল বাড়ীতে।
এই সব ঘটনার মধ্যে কি বেলেঘাটায় এ ক’দিন যাননি চন্দ্রভূষণ?
দুঃখে লজ্জায় যাওয়াটা ছেড়ে দিয়েছেন?
নাকি চম্পার কাশীর টিকিট কেনা হয়ে গেছে?
দূর, কিছুই না!
যা হচ্ছিল, হচ্ছে। চন্দ্রভূষণ শুধু ওই বাজার করাটা ছেড়েছেন, আর সবই যথাপদ্ধতিতে চলছে। এমনকি সেদিনের সেই পাতিলেবুগুলোও যথাসময়ে পার্শেল করে এসেছিলেন।
অতএব রাস্তা থেকে উঠে যাওয়া সেই সিঁড়িটা ধরে উঠছেন নিত্য নিয়মেই।
প্রচণ্ড রৌদ্রের পথে গাছতলায় এসে বসার মত।
চম্পা বলে, ‘সব কিছু নিয়েই এত কষ্ট পাও কেন বলতো? এসব তো সংসারের স্বাভাবিক ঘটনা!’
চন্দ্রভূষণ বলেন, ‘তুমি ঠিক বুঝবে না চম্পা, যদি কোনদিন যেতে, তো বুঝতে পারতে খাবার দালানের ওই প্রকাণ্ড টেবিলটা শূন্য পড়ে থাকাটা কী ভয়ানক!’
চম্পা তবু হাসে।
হেসে হেসে বলে, ‘তোমার দিকে তা’হলে কেউ নেই? তুমি একঘরে?’
‘আছে—ইন্দুর ছোট মেয়ে তিনটে আছে। ওরা কিছুতেই নিরিমিষ খেতে চায় না। বড় দুটোকে রপ্ত করাচ্ছে। ওদেরও নাকি দীক্ষা দেবে।’
চম্পা বলে, ‘ওদের? কত বয়েস ওদের?’
‘ষোল আর চোদ্দ বোধহয়!’
তা’ ভাল! সখীকুঞ্জের আখড়ার থেকে কিছু কম যায় না। তা’ ভালই তো, বাড়িতে পুণ্যের চাষ হচ্ছে। খোল করতাল বাজে না?’
‘এখনো শুনিনি।’
‘শুনবে, শুনতে কতক্ষণ! রান্নাঘরে তা’হলে আরও একটা ইঁটের দেওয়াল উঠেছে?’
‘জানি না। ওদিকে আর যাই না।’
একসময় আবার চম্পা সুর ফেরায়।
বলে, ‘আমার জন্যেই তোমার এই দুর্গতি হলো! এসে কী চেহারা দেখলাম, আর এখন কী দেখছি!’
চন্দ্রভূষণ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, ‘তা ঠিক নয় চম্পা, হয়তো এগুলো ঘটতোই। হয়তো আগে থেকে প্রস্তুতি চলছিল। আমার বাপ জ্যাঠারও তো দেখলাম! কোনখানে যে কে বসে সিঁদ কাটে বোঝা শক্ত। চলতে চলতে হঠাৎ চোখে পড়ে প্রকাণ্ড এক গর্ত!…তবু ভাবি যাই ভাগ্যিস তুমি আছ!…কাউকে কিছু বলতে না পারাও তো সোজা কষ্ট নয়!’
চম্পা আবহাওয়া হালকা করতে চায়, চম্পা হেসে হেসে বলে, ‘ভাবিতে উচিত ছিল প্রতিজ্ঞা যখন।’ কবে কোন জন্মে লক্ষ্মীছাড়া একটা মেয়ে ছিল, তার জন্যে জীবন নষ্ট! ছিঃ! সময়ে বিয়ে করলে এতদিনে একখানা দজ্জাল গিন্নী নিয়ে—’
মাঝে মাঝেই একথা বলে চম্পা।
আর কি বলবে?
কথা ছাড়া আর কি দেবে?
আর কী দেওয়া সম্ভব?
সংসার?
সন্তান?
আশ্রয়?
তাই কি সম্ভব আর এখন?
তবু আছে একটা জায়গা। সিন্ধু আছে। দূরে থেকে যে অবিরত লেখে, বাড়ি থেকে চলে গিয়ে কত কষ্টে আছে। ওই লেখাটা কি একটা আর্ট?
চন্দ্রভূষণ ভাবেন না কোনোদিন সে কথা। চন্দ্রভূষণ ওর কষ্টগুলো নিয়ে ভাবেন।
আরো একবার পাতিলেবু পাঠালেন সিন্ধুকে, আর একবার পটল আর আনারস। তারপরই এই চিঠিখানা এল।
সিন্ধু লিখেছে, সে তো বাইরেই থাকছে, বাড়িতে তার অংশটা তো পড়েই আছে, দাদা যদি সেটার দখল নিয়ে ন্যায্য টাকাটা দেন সিন্ধুকে, সিন্ধু কোম্পানির একটা শেয়ার কিনতে পারে। বিরাট ভবিষ্যৎ তাতে!
উকিল ডেকে চুলচেরা হিসেব করতে সে চায় না, দাদার বিবেচনাই শিরোধার্য করে নেবে। তবে মনে হয়, বর্তমানে কলকাতায় জমির যা দাম, এবং বাড়িটার যা আয়তন, তাতে সব সমেত লাখ দুইয়ের কম হবে না। অতএব এক একজনের ভাগে হাজার পঞ্চাশ মত হবে। অবশ্য একসঙ্গে সবটা না দিলেও চলবে, হাজার চল্লিশ তার দরকার হচ্ছে এখন। শেষে একথাও লিখেছে, কলকাতায় গেলে দাদা তো আছেনই! বাড়ির ভাগ গেলেই বা কি, থাকলেই বা কি?
এ চিঠিটাও বুকপকেটে রেখে দিলেন চন্দ্রভূষণ। একথাটুকু তো আছে, ‘বাড়ির ভাগ থাকলেই বা কি গেলেই বা কি! কলকাতায় গেলে তুমি তো আছ!’
কিন্তু বুকের সেই অংশটায় কাঁটা ফুটতেই থাকলো খচখচ করে।
সিন্ধু কেন বললো না, ‘দাদা এই টাকাটা আমায় যোগাড় করে দিতে হবে! ভীষণ ভাল চান্স পাচ্ছি, ভবিষ্যতে বিস্তর উন্নতির আশা!’
চন্দ্রভূষণ তা’হলে তাঁর ব্যবসা লাটে তুলেও সে টাকা দিতেন যোগাড় করে। চন্দ্রভূষণের বুকপকেটে রাখা ওই চিঠির নীচেটায় এমন করে কাঁটা ফুটতো না তা’হলে।
কিন্তু সিন্ধু তা বলেনি।
সিন্ধু দাদার বিবেচনার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করেও বাড়িটার দাম কষেছে। সিন্ধু বাড়িতে নিজের অংশের কথা ভেবেছে।
চন্দ্রভূষণকেও তাই হঠাৎ ভেবে ফেলতে হচ্ছে, এতদিন রোজগার করছো, সংসারে তো এক পয়সা খরচ হয়নি, গেল কোথায় সে সব?…একবার দরকার পড়তেই ভিটে বেচতে ইচ্ছে করছে?
অথচ কিছুদিন আগেও চন্দ্রভূষণ এমন নীচ কথা কিছুতেই ভাবতে পারতেন না!
এ কি নীচ সংসর্গের ফল? চন্দ্রভূষণ নীচ সংসর্গ করছেন তাই?
চিঠিখানা রইলো পড়ে বুকপকেটে, দেখালেন না কাউকে, টাকার যোগাড় করে বেড়াতে লাগলেন।
চিরদিন দু’হাতে খরচ করেছেন, টাকা জমাতে হয় তা’ ভাবেননি। হঠাৎ একটু দিশেহারা হলেন। তবু হয়ে যাবে। ব্যাঙ্কের সামান্য কটা টাকা বাদেও লাইফ—ইনসিওর থেকে ধার নিলে আর গাড়িখানা বেচে ফেললেই—
গাড়িখানা! গাড়িখানা বেচে ফেলবেন?
যেখানা চম্পার সিঁড়িকে সহজ করে রেখেছে! হোক! হোকগে! বাস ট্রাম তো আছেই! যদি চম্পা অনুযোগ করে, যদি বলে, ‘গাড়িটা কি বলে বেচলে? আসতে এত কষ্ট—’
চন্দ্রভূষণ বলবেন, ‘সেটাই তো ভালবাসার পরীক্ষা জানো না? বিল্বমঙ্গল সাপ বেয়ে চিন্তামণির ছাদে উঠেছিলেন!’
টাকা যোগাড় হলো। চুপিচুপি পাঠিয়ে দেবেন ঠিক করেছেন মনে মনে। হঠাৎ দুই ভাই একসঙ্গে ঘরে এসে ঢুকলো। ইন্দুভূষণ আর বিন্দুভূষণ।
চন্দ্রভূষণের ঘরে ওরা কদাচ আসে।
আসতো সিন্ধু। অনবরত আসতো।
দাদার শেভিং সেটটা, দাদার আরশিটা, দাদার জানলার আলোটা, দাদার সব কিছুই তার পছন্দ ছিল।
আর নয়তো বা বুঝতো, দাদা এতে কৃতার্থ হয়, তাই পছন্দর ভান করতো। দাদার ওপর তার মমতা ছিল। ইঁটটা ছুঁড়েছে, সেটা না বুঝে।
হয়তো বা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে।
সে যাক, এরা এলো।
একসঙ্গে এলো।
দেখে অবাক হলেন চন্দ্রভূষণ, ব্যস্তও হলেন। বিন্দু বসলো খাটের ধারে, ইন্দু দাঁড়িয়ে থাকলো। ইন্দু ম্লেচ্ছাচারের সংস্পর্শ বাঁচিয়ে চলে। আর দাদা তো স্রেফ ম্লেচ্ছ! তবে কথা বললো ইন্দুই।
বললো, ‘দাদা, সিন্ধুর কোনো চিঠি পাওনি?’
চন্দ্রভূষণ এই প্রশ্নের মধ্যে যেন কৈফিয়ত তলবের সুর পেলেন। তাই কেঁপে উঠলেন। এ সুর কেন!
আস্তে বললেন, ‘পেয়েছি।’
‘কবে?’
‘ক’দিন হলো যেন।’
‘আশ্চর্য্য! আমাদের বলনি তো কই? বলা উচিত ছিল!’
চন্দ্রভূষণ হঠাৎ সোজা হয়ে বসলেন।
খুব শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় বললেন, ‘কেন? উচিত ছিল কেন? আমার কোনো চিঠি এলে তোমাদের বলা উচিত, হঠাৎ এ নিয়ম হলো কেন?’
চন্দ্রভূষণ কি এ ভাষায় কথা কয়েছেন কখনো?
কননি।
আজ কইলেন।
চন্দ্রভূষণের হঠাৎ মনে হলো, এ ঔদ্ধত্যের সৃষ্টিকর্তা তিনিই। আর এ ঔদ্ধত্যের প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না।
তাই চন্দ্রভূষণ কঠিন হলেন আজ।
ইন্দুভূষণ ঈষৎ থতমত খেল। তারপর গম্ভীর হলো। গড়গড়িয়ে বলে গেল, ‘এ চিঠিটায় সকলের স্বার্থ জড়িত বলেই বলছি। আমাদেরও চিঠি দিয়েছে। বাড়ির ব্যাপার নিয়ে লিখেছে, ওর শেয়ারটা ও বিক্রি করে দিতে চায়। ওভাবে একটা পোর্শন তো বাইরের লোক কিনবে না, তাই বলেছে আমরা যদি কেউ রাখি। তোমাকে নাকি লিখেছিল, তার জবাব পর্যন্ত পায়নি লিখেছে।’
ইন্দুর কথার ধরন চিরদিনই কাঠখোট্টা, ইদানীং ‘দৈনিক হাজার জপ’ করার সূত্রে, আর হয়তো বা কৃচ্ছ্বসাধনের সূত্রেও, চেহারাটাও কাঠখোট্টা হয়ে গেছে, তাই একটু যেন বেশী রুক্ষ শোনালো কথাগুলো।
চন্দ্রভূষণ বললেন, ‘জবাব দেবার কি আছে? টাকাটাই যোগাড় করা হচ্ছিল—’
‘টাকাটা যোগাড়!’
ইন্দু বলে ওঠে, ‘ওঃ! তার মানে ওর পোর্শনটা তুমিই রাখছ?’
চন্দ্রভূষণ নির্নিমেষ দৃষ্টিতে একবার ওর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, আমিই রাখছি।’
‘তা ভাল! তবে আমাদের জানালেও কোনো ক্ষতি ছিল না। তা’ছাড়া—’ ইন্দু একটু ব্যঙ্গহাসি হেসে বলে, ‘না জানিয়ে তো আর ব্যাপারটা মিটবে না?’
চন্দ্রভূষণ এবার আর ততটা স্থির থাকতে পারেন না, বলেন, কেন? না জানালে মিটবে না কেন? উকিল ডেকে ঠাকুর্দার ভিটেটা চার টুকরো করতে হবে?’
ইন্দুও উত্তেজিত হয় অতএব, বলে, ‘তা করতে হবে বৈকি! তোমাদের দুজনের মধ্যেই তো চুক্তিপত্র সম্পাদন হয়ে যেতে পারে না? কী ‘বেসিসে’ টাকাটা দেবে তুমি ওকে?’
চন্দ্রভূষণ অবাক হয়ে ওই উত্তেজিত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকেন। এত বেশী অবাক হন যে, বলতে ভুলে যান, ‘যে ‘বেসিসে’ এযাবৎ চালিয়ে এলাম তোমাদের সংসার!’
বিন্দু এবার কথা বলে।
আস্তে বলে, ‘চেঁচামেচি করবার কোনো কারণ নেই মেজদা, যা কিছু করা হবে, তা আইনসংগতভাবেই করতে হবে।’
না, বিন্দুভূষণ তার মেজদার সঙ্গে একসঙ্গে এঘরে ঢুকেছে বলেই যে তার দলের, তা’ নয়।
সে তৃতীয় দল।
আর সে উত্তেজিতও হয় না, রূঢ়ও হয় না। শুধু বলে, ‘যা করতে হবে, তা আইনসংগতভাবেই করতে হবে।’
কিন্তু চন্দ্রভূষণ ক্রমশঃ মেজাজ হারাচ্ছেন। কারণ চন্দ্রভূষণের স্নায়ু শিরার উপর অনেকদিন থেকে চাপ পড়েছে।
চন্দ্রভূষণ আপন পরিমণ্ডলে সুখে ছিলেন। চন্দ্রভূষণ ভেবেছিলেন, আপন উদারতা দিয়ে সেই সুখের দুর্গ চিরদিন খাড়া রাখবেন!
তা’ হলো না।
চন্দ্রভূষণের দীর্ঘকালের সাধনা শুধু চন্দ্রভূষণকে ব্যঙ্গ করে শূন্যের সঞ্চয় দিয়ে বিদায় নিল।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন