অনবগুন্ঠিতা – ৪

আশাপূর্ণা দেবী

এখন এক একসময় ভাবেন চন্দ্রভূষণ, আশ্চর্য, ইন্দুর ওই বড় মেয়েটার নাকি পনেরো বছর বয়স। এযুগে বুদ্ধির এত বাড়, শিক্ষার এত বাড়, কিন্তু মনটা কি করে থাকে অপরিণত?

চম্পার ষোলো বছর বয়েস ছিল তখন।

মামী চেষ্টা করেছিল, ওকে ‘বালিকা’ ভাবতে। চেষ্টা করেছিল, ওর মনে চেতনা না জাগাতে। তাই মামী ওকে—’কি হয়েছে, ছেলেমানুষ তো’—বলে জামিরের কাছে পড়তে দিচ্ছিল। কিন্তু যে জাগাবার সেই জাগায়। কে জানে একালেও হয়তো একই হয়। শুধু শাড়ী পরে না বলে ধরা পড়ে না।

ওই জামিরটাও ছিল একটা দুশ্চিন্তা! দেবু ওকে দেবতা দেখে, মামী নিজের ছেলের মত, চম্পাও যদি ওইরকম কোনো নতুন চক্ষে দেখে?

কথাটা ভেবে লজ্জিত হলো চন্দ্রভূষণ। ভাবলো, এ আমি কী পাপ করছি! সেই ছোট্ট থেকে চম্পা আমাকে—

ভাবলো, কেবলমাত্র তুচ্ছ একটু চক্ষুলজ্জায় জীবন নষ্ট করা যায় না। দু’ দুটো জীবন! তবু চিঠি লিখতে দ্বিধা হয়, লজ্জা আসে, ভয় করে।

চন্দ্রভূষণের আমলে যে ভাবে ভাবা সম্ভব, যে পদ্ধতিতে চলা সম্ভব, তাই করলো চন্দ্রভূষণ এবং শেষ পর্যন্ত সম্মতি আদায় করলো।

জেঠামশাই বললেন, ‘বেশ, তবে অপর কেউ সেই মেয়েকে ‘দত্তক’ নেওয়ার মত করে আগে গোত্রান্তর করুক, তারপর—’

এই মর্মে চিঠি লিখলেন চন্দ্রভূষণের মা তাঁর ভাইকে।

সে চিঠির উত্তর এলো না।

তবে হয়তো পৌঁছয়নি চিঠি ডাকের গোলমালে, তাই এবার ভাজকে দিলেন, সে চিঠিরও একই ফলাফল।

দু’ দুখানা চিঠি পৌঁছবে না? আর যে দুখানাতেই নাকি জীবন—মরণ সমস্যা!

চন্দ্রভূষণ অপেক্ষা করতে করতে অধীর হয়ে উঠে একটা মিথ্যাভাষণ দিল।

বললো, ‘একটা চাকরির ইনটারভিউ দিতে কুচবিহার যাচ্ছি। ফিরতে দু’চার দিন দেরি হতে পারে।’

দেরি কেন?

‘আহা যাচ্ছিই যখন, একটু বেড়াব না?’ চন্দ্রভূষণকে কেউ ষ্টেশনে তুলে দিয়ে আসবে এমন আশঙ্কা নেই। চন্দ্রভূষণ অতএব ‘কুচবিহার’ শব্দটাকে সরিয়ে ফেলে অন্যত্র যাবার ব্যবস্থা করলো।

অবশ্যই রাজাশাহী।

কিন্তু সেখানে গিয়ে কোন স্মৃতির সুরভি সঞ্চয় করে এনেছিল চন্দ্রভূষণ?

নিতান্ত প্রিয়জনের মৃত্যুসংবাদই কি এমন মর্মান্তিক?

আশ্চর্য!

আশ্চর্য!

জগতে তা’হলে বিশ্বাস করবার কিছু নেই? কোথাও কিছু?

‘কই আর,’ দেবু মুখ বাঁকিয়ে বলে, ‘বিশ্বাস’ কথাটাই উঠে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। নইলে চম্পা এই কাজ করে? বাবার মুখে চুনকালি! শীগ্গিরই রিটায়ার করছেন বাবা! অসময়েই করছেন।’

চন্দ্রভূষণ ওর গলার কলার চেপে ধরে ভীষণ স্বরে বলে, ‘না, বিশ্বাস করি না আমি! যাচ্ছি মামীর কাছে—’

‘এই খবরদার! মার সামনে তার নাম আনিসনি। এমন করে মানুষ করলো মা, আর ও কিনা শেষটায় একটা মোছলমানের ছেলের সঙ্গে—’

‘তাকে তুমিই বাড়ির মধ্যে এনেছিলে— ‘ক্রুদ্ধ চন্দ্রভূষণ ওর জামার কলারটা আর একবার চেপে ধরে—’সেই পাজী শয়তানটাকে তুমি প্রশ্রয় দিয়ে অন্দরে ঢুকিয়েছিলে! একশোবার সাবধান করে দিইনি আমি? মনে পড়ছে সে কথা? বল বল কী হলো শেষ অবধি?’

দেবু এ অপমান সহ্য করে।

কারণ দেবুর মধ্যে রয়েছে এই অভিযোগের অপরাধবোধ। তাই দেবু তার সমবয়সী পিসতুতো ভাইয়ের জামার কলার চেপে ধরতে পারে না। পারে না চীৎকার করে প্রতিবাদ তুলতে।

দেবু আমতা আমতা করে বলে, ‘শেষ আর কি! জন্মাষ্টমীর মেলা দেখতে গিয়েছিল আমাদের সঙ্গে, তারপর ভিড়ের মধ্যে থেকে দলছাড়া হয়ে হাওয়া!’

‘দলছাড়া হয়ে হাওয়া? তার মানে হারিয়ে গেছে? তবে যে বললি শুয়োর, মোছলমানের ছেলের সঙ্গে—’

‘আরে বাবা গলা ছাড়, বলছি সব। আছে প্রমাণ। সেই সন্ধ্যে থেকে জামিরটাকেও পাওয়া যাচ্ছে না—’

‘তার মানেই তাই? দুটো আলাদা আলাদা ঘটনা হতে পারে না?’

দেবু মুখ বাঁকিয়ে বলে, ‘ভেবে আনন্দ পেতে চাইলে হতে পারে। তবে আরো অকাট্য প্রমাণ আছে। ইদানীং জামিরটার সঙ্গে ফুসফুস গুজগুজের ঘটাটা যা বেড়েছিল—’

‘চুপ!’

দেবু থতমত খায়।

দেবু মিনমিনে গলায় বলে, ‘বাঃ আমার কি দোষ?’

দেবু মিনমিনে গলায় কথা বলছে!

দেবুর মুখের রেখায় অধঃপতনের ছাপ। তার মানে দেবু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

দেবুর বাবার একটা ভাগ্নে ভেড়ার গোয়ালে থাকলে মানুষ হবে না বলে ভাগ্নেটাকে নিজের কাছে এনে ফেলেছিলেন না দেবুর বাবা?

দেবুর বারণ শোনেনি চন্দ্রভূষণ।

মামীর সঙ্গে দেখা করেছিল। চম্পার নাম মুখে এনেছিল।

মামী যখন শুকনো মুখে বলেছিলেন, ‘থাকবে তো দু’দিন?’ ‘থাকবো, থাকতে হবে—’ চন্দ্রভূষণ হঠাৎ অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে স্পষ্ট গলায় বলেছিল, ‘চম্পাকে খোঁজার দরকার তো—’

মামী গম্ভীর গলায় বলেছিলেন, ‘না, আর দরকার নেই। ধরে নাও সে মরে গেছে। হ্যাঁ, সেই কথাই ভাবছি আমি। তোমাকেও ভাবতে হবে মরে গেছে চম্পা।’

চন্দ্রভূষণের সঙ্গে সেই শেষ কথা মামীর।

মামী আর দাঁড়াননি। থাকতেও বলেননি, খেতেও বলেননি।

চন্দ্রভূষণ ওই পাথর হয়ে যাওয়া মানুষটার ধাতব কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত শব্দটা উচ্চারণ করে, ‘মরে গেছে, মরে গেছে, ধরে নাও মরে গেছে।’

তার মানে দেবুর কথাই ঠিক।

ঠিক না হলে মামী আছড়ে পড়তো, কেঁদে বলতো, ‘তাই কর বাবা চানু, খুঁজে বার কর তাকে।’

মামী তা বলেনি।

মামী জানে আসলে কী হয়েছে।

আর সেই জানার পর মামী ধরে নিয়েছে ‘চম্পা’ মরে গেছে।

মামার রান্নাঘরের পিছনের সেই বাগানটায় এসে দাঁড়াল চন্দ্রভূষণ। নেহাৎ শশা কুমড়োর বাগান। তবু এ এক পরমতীর্থ ছিল তাদের কাছে। তার আর চম্পার। একদা এইখানেই তো সহসা উদঘাটিত হয়ে পড়েছিল তাদের দু’জনের হৃদয়রহস্য!

চন্দ্রভূষণ ভেবেছিল, সেই জায়গাটায়, যেখানে সেদিন চম্পা বসে বসে গাছের গোড়া খুঁড়ছিল, সেখানটা কুপিয়ে খুঁড়ে পদদলিত করে চলে যাবে জন্মের শোধ, কিন্তু এসে দাঁড়াতেই আর এক হৃদয়রহস্যে সহসা তার আত্মমর‍্যাদাজ্ঞানহীন চোখ দুটো থেকে একটা তপ্ত বাষ্পোচ্ছ্বাস তরল হয়ে গড়িয়ে পড়ল।

কিন্তু এ জল কি দুঃখের?

না দাহের?

দাহ, বড় তীব্র দাহ!

জ্বলে যাচ্ছে ভিতরটা!

এতটুকু একটা মেয়ে এতখানি অপমান করে গেল তাকে? এতটা প্রবঞ্চনা?

এ যে যতটা অবিশ্বাস্য, ততটা নিষ্ঠুর!

সেই জামিরটা—ইতর ছোটলোক, নীচ পাজী জামিরটা কি না চম্পাকে—আর চম্পা কি না তাকে—

তার মানে চতুর মেয়েটা চন্দ্রভূষণের সঙ্গে ভালবাসার ভান করে এসেছে এতদিন। আর ওই জামিরটার সঙ্গে করেছে ষড়যন্ত্র। অথচ মূর্খ চন্দ্রভূষণ সেই ভানটাকেই পরম সত্য ভেবে হাস্যাস্পদ হয়েছে বসে বসে!

তাই। হাস্যাস্পদই।

এখনও হয়তো জামিরের সঙ্গে বসে চন্দ্রভূষণের বোকামি নিয়ে কত হাসাহাসি করছে ছলনাময়ী মেয়েটা, ‘চম্পা’ নামের সুন্দর একটি খোলস এঁটে যে এই বাগানে, এই বাড়ীতে, ঘুরে বেড়াতো!

আশ্চর্য, কিছুতেই যেন মিলানো যাচ্ছে না চম্পার সঙ্গে একটা কুলত্যাগিনী মতলববাজ মেয়েকে।

অনেকক্ষণ ঘুরে বেড়ালো চন্দ্রভূষণ, অনেকগুলো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে লাগলো, অবশেষে দিশেহারা হলো।

অবিশ্বাসিনীই যদি, তবে সেই শেষ রাত্রের ঘটনাটা কি?

মামা যা বলেছেন তাই?

শুধু অসংযম?

না কি একজনকে কবলিত করতে পারল না বলে আর একজনকে গিয়ে ধরলো?

তবু—সমস্ত বিরুদ্ধ চিন্তা আর তীব্র বিদ্বেষ ছাপিয়ে মনের সামনে ভেসে ভেসে ওঠে—ছাত থেকে নেমে আসা সেই হতাশ হতাশ মুখ, বাগান থেকে ফিরে গিয়ে ঘুরে বেড়ানো সেই অভিমানাহত মুখ।

ভান এত গভীর হয়?

তবে কি এই ভয়ঙ্কর পরিণামের জন্য দায়ী চন্দ্রভূষণ নিজেই? চন্দ্রভূষণের অবহেলার ফলেই অভিমানের ঝোঁকে এমন একটা ভয়ানক কাজ করে বসলো সে?

কিংবা সবটাই দেবুর বুদ্ধিহীন মস্তিষ্কের কল্পনা? আসলে ও গোলমালের সুযোগে কোথাও গিয়ে আত্মহত্যা করেছে!

অনেকগুলো জলের ফোঁটা চোখের কোলে এসে ভীড় করে, ঝরে পড় পড় হয়, কষ্টে তাদের শুকিয়ে ফেলে চন্দ্রভূষণ।

ভাবে, মিথ্যে আশা করছি, জামিরের সঙ্গে মেশামিশি তো স্বচক্ষেই দেখেছি আমি। জামিরের কাছে নইলে অঙ্ক শেখা হয় না, জামিরের লেখা পদ্য মুখস্থ করতে ইচ্ছে হয়!

খুব একটা আকর্ষণ ছাড়া এসব হয় নাকি?

চম্পা, চম্পা, ছি ছি, তুমি এই!

আমার কথা দূরে যাক, তোমার মাসীমা—মেসোমশাইয়ের কথাটাও ভাবলে না একবার? ভেবে দেখলে না, কী ভাবে মুখ পোড়ালে তুমি তাঁদের!

সেই মামীমা, দেবীর মত মেয়ে, কী দশা করেছো তুমি তাঁর, দেখে গেলে বুঝতে।

কী অদ্ভুতভাবে বদলে গেছেন তিনি!

আমি এসেছি, বুঝলে চম্পা, আমি এসেছি, অথচ আমাকে খেতে বললেন না তিনি, বললেন না ‘আয় বোস।’

বললেন না, ‘চানু ভাল আছিস তো?’

মামার সঙ্গে সুদ্ধু কথা বলছেন না।

খাওয়া দাওয়াও নাকি প্রায় বন্ধ।

মামা আমাকে কাছে ডেকে বৈঠকখানা ঘরে বসিয়েছিলেন।

বলেছিলেন, ‘তোর মামীর ব্যবহারে কিছু মনে করিস না বাবা! সেই দুর্ঘটনার পর থেকে—কেমন একরকম হয়ে গেছে তোর মামী। শকটা খুব বেশী লেগেছে।’

মামার মুখের রেখায় রেখায় চিন্তা আর বার্ধক্যের ছাপ।

এই ক’টা দিনে মামা এত বুড়ো হয়ে গেলেন!

চন্দ্রভূষণ হতাশ কঠিন অভিযোগ করে, ‘এরকম একটা কিছু হবে এ আমি বুঝেছিলাম। যখনই ওই পাজীটাকে বাড়ির মধ্যে এনে আদর করতে দেখেছি, তখনই—’

মামা গম্ভীর ভারী গলায় থামিয়ে দেন ওকে। বলেন, ‘ওকথা আমি মানি না চানু! চম্পা যদি ভাল মেয়ে হতো, সৎ মেয়ে হতো, জামিরের কী সাধ্য ছিল তাকে—আসলে ওর মধ্যেই ছিল অসংযম, তাই—’

মামা কথা শেষ করেন না, পায়চারি করতে থাকেন।

আর চন্দ্রভূষণের চোখের সামনে থেকে যেন একটা পর্দা সরে যায়।

ঠিক!

ঠিকই তো!

ওর মধ্যেই ছিল অসংযম।

নইলে জামিরের কী সাধ্য ছিল—

চম্পার অসংযমের কথা এবার মনে পড়লো চন্দ্রভূষণের।

ওর মধ্যে অসংযম না থাকলে সেই রাত্রে চন্দ্রভূষণের ঘরে আসে ও?

এবার সমাজনীতির ছাঁচের মধ্যে থেকে চম্পাকে দেখলো চন্দ্রভূষণ! দেখলো নির্লজ্জ অসংযম!

বাংলাদেশের রক্ষণশীল ঘরের একটা অনূঢ়া যুবতী মেয়ের রাত্রে একজন অনাত্মীয় পুরুষের ঘরে আসবার সাহস হয় কোথা থেকে?

আর কোথা থেকে? নির্লজ্জ বাসনার বেপরোয়া অসংযম থেকে। তার মানে প্রলুব্ধ করতে এসেছিল চন্দ্রভূষণকে। ঈশ্বর রক্ষা করেছেন চন্দ্রভূষণকে! হ্যাঁ, মামার গলা দিয়ে ঈশ্বর কথা বলেছিলেন সেদিন!’

যদি ঈশ্বর সদয় না হতেন, যদি তখন মামা না ডাক দিতেন, কী ঘটে যেত কে জানে! কী না ঘটে যেতে পারতো!

নিশ্চয় জামিরটার সঙ্গেও করতে গেছে তেমনি ছলাকলা, আর ওই শয়তানের বংশধর সেই সুযোগটা গ্রহণ করেছে!

কী ঘৃণা, কী ঘৃণা!

কী লজ্জা, কী লজ্জা!

মন মোহমুক্ত হয়ে গেল।

বিষাক্ত বাষ্পের তীব্র স্পর্শে মিলিয়ে গেল সদ্যোন্মেষিত চম্পার সৌরভ।

বিয়ে না করার ইতিহাস এই।

একটা ষোলো বছরের মেয়ে আর একটা একুশ বছরের ছেলের ইতিহাসও এইখানেই শেষ।

তবু আর কোনোদিন বিয়েতে রাজী করানো গেল না চন্দ্রভূষণকে।

চন্দ্রভূষণের মা মাথা খুঁড়লেন, বাপ জেঠা ধিক্কার দিলেন, ঠাকুমা পিসি বাক্যযন্ত্রণা দিলেন, ছোট বোনেরা মিনতি করলো, দিদি জবরদস্তি করতে চেষ্টা করলো, বন্ধুরা বোঝাতে এলো।

চন্দ্রভূষণ টললো না।

চন্দ্রভূষণ বললো, ‘বেশ তো আছি বাবা, সুখে থাকতে ভূতের কিল খাই কেন?’

হাসিখুশী চন্দ্রভূষণ, কৌতুকপ্রিয় চন্দ্রভূষণ, তার স্বভাবের পরিবর্তন হতে দিল না, যা রইলো তার মনের গভীরেই রইলো। সে ওদের সকলের সঙ্গে লড়লো কৌতুকের হাতিয়ার নিয়ে।

হয়তো বা সেই হাতিয়ারটাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার মানুষের। ঝকমকে মজবুত! সব আক্রমণ ঠেকাতে পারে।

ঠাকুমাকে বললো, ‘এই বুড়োবয়সে তোমার একটা খিদমদগার তো দরকার ঠাকুমা, কেনা চাকরটাকে অন্য মনিবের কাছে বিলিয়ে দিতে চাইছ কেন?’

ঠাকুমা বললেন, ‘চাকরে দরকার নেই আমার।’

চন্দ্রভূষণ বললো, ‘ওরে বাবা, তোমারই বেশী দরকার!’

পিসিমাকে বললো, ‘তোমার ‘শেষরক্ষা’র ভার আমি নেব ঠিক করেছিলাম পিসিমা, সেটা তা’হলে করতে দেবে না?’

পিসি রেগে বলেন, ‘কেন, বিয়ে করলে আর কেউ মা পিসিকে দেখে না?’

‘প্রাণ থেকে দেখে না, চক্ষুলজ্জায় দেখে। সে দেখা কি দেখা?’

বোনেদের বললো, ‘ভবিষ্যৎকালে বাপের বাড়ি বলে একটা জায়গা তোদের থাকে, এটা বুঝি চাস না?’

ওরা বললো, ‘কেন, বিয়ে করেই দরজা বন্ধ করে দেবে?’

চন্দ্রভূষণ বললো, ‘আমি দেব কেন, যে দেবার সে দেবে। জানিস না—ভাইয়ের ভাত, ভাজের হাত!’

মাকে বললো, ‘একটা ছেলে তোমার নিজস্ব থাক না মা!’

মা বললেন, ‘এ মতি তো আগে ছিল না তোর। বিয়ের জন্যে তো ক্ষেপেছিলি, লাজলজ্জা বিসর্জন দিয়েছিলি—’

‘দুর্মতি হয়েছিল। ভগবান রক্ষা করলেন।’

বাপকে চন্দ্রভূষণ কিছু বললো না, তিনিই বললেন, ‘হ্যাঁ, ভীষ্মদেব শুকদেব শুনতে ভাল, নিজেকে ঠিক রাখতে পারলেই হলো।’

সরাসরি বলেননি, তবু মোড় ঘুরে কথাটা চন্দ্রভূষণের কানে এসে পৌঁছলো বৈকি! চন্দ্রভূষণ ব্যঙ্গের হাসি হাসলো। বোধকরি ভাবলো, ‘আচ্ছা দেখো!’

কিন্তু দেখাতে কি পেরেছে চন্দ্রভূষণ?

ঊর্ধ্বলোক থেকে যদি এই মর্তলোক পর্যন্ত দৃষ্টি পৌঁছয়, চন্দ্রভূষণের সেদিনের অভিভাবকরা দেখতে পাচ্ছেন না, তাঁদের শুকদেব ছেলে যৌবনটা সব পার করে ফেলে প্রায় প্রৌঢ়ত্বের দরজায় পা দিয়ে চরিত্র খারাপ করে বসেছে?

লজ্জার বালাই না রেখে নিত্য যাচ্ছে সেই প্রেয়সীর কাছে এবং সেই যাওয়ার মধ্যে যেন প্রেমে বিভোর নবযুবকের ভঙ্গী।

উদিতা বলে, ‘বটঠাকুর যখন বেলেঘাটায় যাবার জন্যে বেরোন, মুখের ভাবটা কি রকম দেখায় জানো? ঠিক যেন নতুন বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে কোনো ইয়ং ছেলে! দেখি তো ওপরের বারান্দা থেকে?’

সুনন্দা হেসে গড়ায়, ‘যা বলেছিস, যেন টগবগ করতে করতে চলেছেন!’

ওটাই যে চন্দ্রভূষণের ভঙ্গী, তিনি যখন বাড়ির সব ছোট ছেলে মেয়ে কটাকে কুড়িয়ে নিয়ে বেড়াতে বেরোন, তখন যে ওই ভঙ্গীতেই যান, যখন মনিব্যাগের পেট ভরতি করে নিয়ে বাজার করতে বেরোন, ভঙ্গীটা যে অবিকল ওই, তা’ মনে থাকে না ওদের।

হেসে হেসে ভাসুরের অভিসার যাত্রার নকল করে।

শেফালী অবশ্য হাসে না।

মুখ বাঁকিয়ে বলে, ‘একদিন তো এমন সুবিধে হয় না যে, পিছু নিয়ে গিয়ে দেখে আসি, সেটি কেমন মাল! যার জন্যে মানুষ বুড়োবয়সে জাত খোওয়াতে পারে, ঘৃণা লজ্জা মান সব খোওয়াতে পারে!’

কিন্তু সত্যিই যদি যেত শেফালী, তা’হলে যে আরও মুখ বাঁকাতো, তাতে আর সন্দেহ কি! বলতো, ‘এই জন্যে এই! ছি ছি!’

না, বুড়োর মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারে এমন রূপ যৌবন নেই চন্দ্রভূষণের নায়িকার।

স্রেফ সাধারণ! সাধারণ, মাঝারি!

রং গড়ন মুখশ্রী, এমন কি বয়েসটা পর্যন্ত সবই মাঝারি। খুঁজে পেতে দেখলে হয়তো দেখা যাবে চোখ দুটো একটু বড়, হয়তো হাসলে দেখা যাবে হাসিটা একটু মিষ্টি।

তার বেশী নয়।

তা’ সেটা আর এমন কি দুর্লভ?

তা’ তো নয়, ওটা উপলক্ষ মাত্র।

মূল কারণ প্রকৃতির প্রতিশোধ!

তুচ্ছ একটা ঝোঁকের মাশুল দিতে জীবনকে রেখে এসেছেন বঞ্চিত করে, এখন তার খেসারত দিচ্ছেন।

এটাই কারণ।

বঞ্চিত বাসনাই তো ডেকে আনে যত বিকার বিকৃতি!

এসব কথা শেফালীও বলে তার বরের কাছে। কারণ শেফালী অনেক বই পড়ে। পড়ে পড়ে অনেক শিখেছে সে।

তা’ বলে হয়তো খুব ভুলও নয়।

চিত্তের বিকার না হলে চন্দ্রভূষণ ওই খারাপ মেয়েমানুষটাকে ডাকেন ‘চম্পা’ বলে?

অর্থাৎ চিরদিনের ডাকার পিপাসা মেটান!

সে আপত্তি করেছে, অবাক হয়েছে, কারণ জানতে চেয়েছে, অবশেষে হাল ছেড়েছে।

কিন্তু শুধু প্রথমা প্রিয়ার নাম ধরে ডেকে আর কি হবে? প্রথম বয়সের ব্যাকুল আবেগ কোথায় পাবেন? চন্দ্রভূষণের ভাদ্রবৌরা যতই তাঁর অভিসার যাত্রার উন্মাদনার নকল করুক, অর্থহীন প্রেমের কাকলী, অথবা নীরব গভীর হৃদয়গুঞ্জনের ভূমিকা অভিনীত হয় না এখানে।

ছোট্ট একটা দোতলা বাড়ি, নীচতলায় দোকান, পাশ দিয়ে উঠে গেছে সিঁড়ি। একটা বাচ্চা চাকর বসে থাকে সেখানে, সসম্ভ্রমে পথ ছেড়ে দেয়। চন্দ্রভূষণও উঠে যান সেই সিঁড়ি দিয়ে।

উঠে আসেন স্বচ্ছন্দ পদক্ষেপে। নিজের ঘরবাড়ির মত জুতোটা খোলেন সিঁড়ির ধারের র‍্যাকে, আর ঠিক এই সময় চন্দ্রভূষণের কলঙ্কনায়িকা ঘর থেকে বেরিয়ে আসে হাস্যবদনে।

কিছু বলে না, শুধু এসে দাঁড়ায়, শুধু হাসে। আর তখনই মনে হয় হাসিটা খুব সুন্দর তো! এখনো, এই বয়সে আছেও সুন্দর!

চন্দ্রভূষণ বলেন, ‘চম্পা!’

ও বলে, ‘আজ্ঞে বলুন।’

‘বলছি না কিছু, শুধু বলছি এত পা টিপে টিপে আসি, তবু টের পাও কি করে বল তো?’

কে জানে কি নাম তার, নতুন নামকরণ হয়েছে যার চম্পা, সে হেসে বলে, ‘কি করে টের পাই নিজেই জানি না। কিন্তু পা টিপে টিপে আসবার হেতু?’

‘তোমায় ঠকাবার ইচ্ছে!’

‘ইচ্ছেটা সফল করতে পারছো না?’

‘কোনো দিন না।’

চন্দ্রভূষণ কথায় জোর দেন। যেন কোনো একদিনও ওকে ঠকাতে না পেরে নিতান্ত ক্ষুব্ধ।

ওর যখন নাম জানা নেই, আর ওকে যখন ‘মহিলা’টিও বলতে বাধছে, তখন নাহয় ওকে চন্দ্রভূষণের দেওয়া নামটাতেই ডাকা হোক! বলা হোক চম্পা!

চম্পা এই ক্ষোভ দেখে হেসে উঠে বলে, ‘বেশ একদিন ঠকবো।’

‘দূর, বলে কয়ে ঠকায় আবার মজা আছে নাকি?’

‘তবে আর হলো না। টের আমি পাবোই।’

‘সত্যি আশ্চর্য!’

‘আশ্চর্য পরে হয়ো, চলো বসবে চলো। তোমার প্রত্যাশায় চায়ের জল তিনবার গরম হলো, তিনবার ঠাণ্ডা হলো।’

‘খাওনি তো একবারও? খেলে পারতে!’

‘থাক খুব ভদ্রতা হয়েছে।’

‘দেখ, এটা কিন্তু খুব অন্যায় তোমার,’ চন্দ্রভূষণ ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলেন, ‘রোজ বলি তুমি ঠিক সময়ে একবার চাটা খেয়ে নেবে। পরে বরং—আমার কি সবদিন ঠিক ঘড়ির কাঁটায় আসা হয়? তাছাড়া বৌমাদের পাল্লায় পড়ে আমাকে তো খেতেই হয় একবার চা! এটা বাড়তি!’

‘বাড়তিটাই মিষ্টি—’ নকল চম্পা মিষ্টি হেসে বলে, ‘যেমন মাইনের থেকে এলাউয়েন্স, টাকার থেকে সুদ, ন্যায্যের থেকে ঘুষ!’

কথা বেশ বলতে পারে মেয়েটা।

আর পারবে নাই বা কেন? কথাই তো ওদের জীবিকা!

চন্দ্রভূষণ যে ঘরটায় এসে ঢোকেন, সেটাই শোবার এবং বসবার ঘর, কারণ সেটাই একমাত্র ভাল ঘর। পাশের ছোট ঘরটায় ভাঁড়ার থাকে, আর নাকি চম্পার পুজোর ঠাকুর থাকে।

ঠাকুর রাখাটাও নাকি এদের একটা পদ্ধতি। চম্পাই বলেছিল সে কথা, ‘ঠাকুরঘর একটা দরকার বৈকি, ঠাকুর না থাকলে চলবে কেন? ওটা আমাদের চাইই চাই। পাপের ভরা নামাবার ঠাঁই!’

ভেজানো দরজার ওপারের ওই ঘরটায় চন্দ্রভূষণকে কোনোদিন উঁকি মারতে দেয়নি চন্দ্রভূষণের চম্পা। চন্দ্রভূষণ একদিন তো প্রায় জোরই করেছিলেন, ‘দেখি না তোমার ঠাকুর—’

চম্পা মৃদু হেসে দরজায় হাত রেখেছিল, ‘পাগল! গুরু আর ইষ্ট—ও কি কারুর সামনে প্রকাশ করতে আছে?’

‘আমিও তা’হলে ‘যে কেউ’য়ের দলে?’

অভিমানে মুখ ভারী হয়ে গিয়েছিল চন্দ্রভূষণের।

হ্যাঁ, এমন অদ্ভুত ধৃষ্টতাই করে বসেন চন্দ্রভূষণ। অথচ এইতো ক’দিনের দেখাশোনা! হঠাৎ একদিন রেলগাড়িতে দেখে ভাল লেগে গেল, ভার নিয়ে বসলেন তার। এনে প্রতিষ্ঠিত করলেন এই বাড়িটিতে। নীচতলার ওই হার্ডওয়ারের দোকানটাও বসিয়েছেন চন্দ্রভূষণই। তাতে আর একজনকে পোষা হতো। ইদানীং আবার ইলেকট্রিকের সরঞ্জামও রাখছেন কিছু কিছু, ওই দোকানের আয়েই যাতে চলে যায় মেয়েলোকটার। যাতে না আর অন্নচিন্তায় উঞ্ছবৃত্তি করে বেড়াতে হয়।

শুভদৃষ্টি বড় সর্বনেশে জিনিস, তা’ নইলে, চলন্ত রেলগাড়ির কামরায় সেই ‘দেখা’র ফল কিনা এই!

হয়তো ওই মানুষটাও উঞ্ছবৃত্তি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল, তাই বলেছিল, ‘কেউ যদি এমন ভার নেয়, তো বেঁচে যাই বর্তে যাই! লোক ঠকাতে সাধু সেজে বেড়াতে বেড়াতে কাহিল হয়ে গেছি।’

তা’ কথাটা সত্যি।

রেলগাড়িতে ওর পরনে ছিল গেরুয়া।

ও বলেছিল, ‘গেরুয়া ধারণে ট্রেনের টিকিট লাগে না, সেকথা জানা নেই আপনার? আশ্চর্য তো! আমাদের ভারতবর্ষের এতবড় একটা খবর, রেল কোম্পানির এমন একটা বদান্যতা, জানা ছিল না?’

সত্যিই হয়তো জানা ছিল না চন্দ্রভূষণের, অথবা জেনেও না জানার ভান করছিলেন। তবে সেবারের সেই যাত্রাটা যে চন্দ্রভূষণের নিতান্ত অযাত্রা হয়েছিল তা’তে আর সন্দেহ কি!

চন্দ্রভূষণ অবশ্য কবিত্ব করে বলেন, ‘ওটাই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ যাত্রা!’

কবিত্বটবিত্ব একটু বোঝে মেয়েমানুষটা, তাই না এত শখ চন্দ্রভূষণের।

কিন্তু কবিত্ব বাদ দিলে, অযাত্রা ছাড়া আর কি?

গিয়েছিলেন চন্দ্রভূষণ ব্যবসার সম্প্রসারণ উদ্দেশ্যে, ফেরার সময় ওই ঘটনা। ওই অতি সাধারণ চেহারার এক গেরুয়াধারিণী, গেরুয়াটা যার ভেক মাত্র, তাকে দেখে মন কেন বলে উঠলো, ‘এই তো সেই! একেই তো খুঁজে বেড়াচ্ছি জীবনভোর!’

তাই এক মুহূর্তে বলে উঠলেন, ‘এসো আমার সঙ্গে’—

‘এসো আমার সঙ্গে—’

তার মানে, নিয়ে এসো কলঙ্ক, নিয়ে এসো লজ্জা, নিয়ে এসো অখ্যাতি! আর নিয়ে এসো নেশার সুখ! এসেছে সেই সব।

তবে?

অযাত্রা ছাড়া আর কি?

অথবা সুযাত্রা!

যে কাজে গিয়েছিলেন সে কাজে বেশ সাফল্য হ’ল দেখে মনটা বেশ ভাল ছিল, সেকেণ্ড ক্লাশ একটা কামরায় চড়ে আসছেন, হঠাৎ চোখে পড়ল সিটের একেবারে শেষ প্রান্তে জানলার ধারে এক গেরুয়াধারিণী বৈষ্ণবী। নাকে তিলক কাটা, গলায় কণ্ঠি, হাতে এক গেরুয়ার পুঁটুলি।

ও কে?

ও কখন উঠল?

আগে থেকে উঠে বসেছিল, না চন্দ্রভূষণের চোখ এড়িয়ে চোখের সামনে দিয়ে—

চন্দ্রভূষণের মনে হ’ল এই বৈষ্ণবী যেন তাঁর চির চেনা।

পূর্বজন্ম মানবেন চন্দ্রভূষণ? ভাববেন কোন এক অতীত জন্মে ও চন্দ্রভূষণের নিকট—আত্মীয় ছিল? তা নইলে কেন এমন হচ্ছে? কেন মনে হচ্ছে এগিয়ে এগিয়ে ওর কাছে গিয়ে বসি?

চন্দ্রভূষণ একটা সভ্য—ভব্য শিক্ষিত ভদ্রলোক। চন্দ্রভূষণের চলন—বলন, সাজ—সজ্জা, সবকিছু মার্জিত পরিচ্ছন্ন, অথচ চন্দ্রভূষণ একটা ভেক নেওয়া বৈষ্ণবীকে দেখে আকৃষ্ট হচ্ছেন, এর চাইতে আশ্চর্য ঘটনা আর কি আছে?

অনেকক্ষণ চেষ্টা করলেন নিজেকে নিবৃত্ত করতে, শেষ অবধি চেষ্টা পরাজিত হ’ল। সুযোগও এল, বোষ্টমীর সামনে বসা লোকটা উঠে গেল। চন্দ্রভূষণ লোক—লজ্জার মাথা খেয়ে নিজের জায়গা থেকে উঠে এসে সেই খালি সিটটায় বসলেন।

আর লোকলজ্জাই বা কি?

রেলগাড়ীতে সর্বক্ষণই তো এ ঘটনা ঘটছে। যারা মাল মোটের ভারে বিব্রত, তারা হয়তো একবার পেয়ে যাওয়া জায়গাটি ছাড়ে না। কিন্তু যারা ঝাড়া হাত পা, তারা তো করছেই এখান ওখান। জানালার ধারটি পেলে তো কথাই নেই।

অতএব লোকলজ্জারও প্রশ্ন নেই।

তা’ তারপর যদি কথাই শুরু করে থাকেন, তাতেই বা কে তাকাচ্ছে? ‘গেরুয়ার প্রতি মোহ বহু লোকেরই থাকে, চেনা হওয়াও বিচিত্র নয়। কাজেই কেউ চোখ ফেলল না চন্দ্রভূষণের উপর।

চন্দ্রভূষণ নিরঙ্কুশ প্রশ্ন করলেন, ‘কে আপনি?’

ও প্রথমে বলেছিল, ‘কী সর্বনাশ, এ যে জবর প্রশ্ন! ‘আমি কে’ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই তো কোটি বছর পার করে ফেলল মানুষ, তবু পাচ্ছে না উত্তর। আর আমি চট করে উত্তর দিয়ে বসবো?’

‘বাজে কথা রাখুন,’ চন্দ্রভূষণ প্রায় ধমকে উঠেছিলেন, ‘বলুন আপনি কে?’

বৈষ্ণবী তখন বলেছিল, ‘তা’ সেকথা যদি আমার জানাও থাকে, আপনাকে বলতে যাব কেন?’

তারপর কথার পিঠে কথা চড়তে তাকে। আশ্চর্য যে, বৈষ্ণবী রাগ করে ওঠে না। হয়তো—বৈষ্ণবী বলেই করে না। আর চন্দ্রভূষণও ক্লান্ত হন না। চন্দ্রভূষণই কথার জনক।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন