শোধ – ১১

শিবব্রত বর্মন

বিকেলবেলা দূরে একটা কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানের মাইক বাজছে। ঘুলঘুলি দিয়ে আসছে সেই আবছা আওয়াজ। সুরটা চেনা চেনা লাগে। আফসান চৌধুরী বিছানায় শুয়ে থেকে গানটা চেনার চেষ্টা করেন। একবার মনে হয়, কোথাও কোনো মাইক বাজছে না আসলে। পুরোটাই তাঁর কানের ভেতরে তৈরি হচ্ছে। মগজের ভেতরে।

‘দিস ইজ স্যাড। রিয়েল স্যাড, স্যার,’ লেফটেন্যান্ট শাকিল বলে। ‘আপনি একটু সহযোগিতা করলেই…’

সে আফসানের বিছানার পাশের টুলটায় বসে আছে। গলা নামিয়ে সে ফিসফিস করে বলে, ‘আর এই লোকটা, মেজর সামির, জাস্ট আ ব্রুট। বউ পালিয়েছে এক কাজিনের সঙ্গে। সেইটার… আমি চাই না এরা আপনাকে ওর হাতে তুলে দিক। সামিরের হাতে। আরও তো লোক আছে। মেজর সাদ, অনেক হিউমেন। আরিফ আছেন। এরা অ্যাট লিস্ট সাইকোপ্যাথ না। দে নো, হোয়াট দে আর ডুইং।’

কথা বলতে বলতে লেফটেন্যান্ট শাকিল টুল ছেড়ে উঠে নানা রকম কাজকর্ম করতে থাকে। সে ঘরের মধ্যে এ-দেয়াল থেকে ও-দেয়াল পর্যন্ত টানা একটা দড়িতে রাখা ট্রাউজার পেড়ে আনে। সেটা বিছানায় রাখে। বাথরুমে উঁকি দিয়ে সেখান থেকে একটা টুথব্রাশ বের করে। সেটায় টুথপেস্ট লাগায়।

এসব করতে করতে লেফটেন্যান্ট বলে, ‘সবচেয়ে ভালো মেজর সাকলায়েন, জানেন। উনি কোনো ইন্সট্রুমেন্টই ইউজ করেন না। পুরা সাইকোলজিক্যালি ডিল করেন। ইন্টারোগেশন যে একটা আর্ট, মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। শেখার আছে। এখন নিন। উঠে পড়ুন। কর্নেল নাদিম ডেকেছেন। প্রফেসর, আই রিকোয়েস্ট, এবার আর গোঁয়ার্তুমি করবেন না। এই যে এটা নিন। ব্রাশ করে ফেলুন। প্রোপারলি। কর্নেল নাদিম কিন্তু ফাউল মাউথ একেবারে সহ্য করতে পারেন না।’

.

প্রায় প্রথম দিনের দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি। তবে আজ মেজর সামির বসেছে কর্নেল নাদিমের বাঁ পাশে। আগের দিন ডান পাশে বসা ছিল।

আফসান চৌধুরী আজ ঠিকমতো বসেই থাকতে পারছেন না। চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে গা এলিয়ে কোনোভাবে বসে আছেন তিনি। তাঁর মনে হচ্ছে হাতলঅলা চেয়ার হলে ভালো হতো বা কেউ তাঁকে যদি ধরে রাখতে পারত। তাঁর চিবুক ঝুলে বুকের সঙ্গে লেগে থাকছে। মাঝে মাঝে জোর করে মাথা তুলে তাকাচ্ছেন।

কর্নেল নাদিম আজ সামরিক টুপি পরেছেন। তাঁকে চকচকে লাগছে। মনে হচ্ছে একটু আগে গোসল করে এসেছেন।

আজও কিছুক্ষণ নিবিষ্টমনে ফাইলওয়ার্ক করে নিয়ে কর্নেল তাকান আফসান চৌধুরীর দিকে। তাঁর চোখে কোনো সমবেদনা নেই। আজ তিনি কিছুটা রূঢ় এবং কথা কম বলছেন।

‘আমাদের কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না, প্রফেসর। আপনি সহযোগিতা করছেন না। আজ দ্বিতীয় সেশন। আশা করি আজ কিছু প্রগ্রেস আমরা করতে পারব। বিফোর আই বিগিন, লেট মি অফার মাই অ্যাপোলজিস…প্রফেসর, সরি ফর দ্য থিংস উই হ্যাড টু গো থ্রু দ্য ডে বিফোর। মেজর সামির, রেকর্ড!’

সামির উঠে গিয়ে কোনার টেবিলে রাখা ম্যাগনেটিক টেপ রেকর্ডার অন করে। আজও কয়েকবারের চেষ্টায় সেটা ঘুরতে শুরু করে।

কর্নেল আজ আসন থেকে উঠে পায়চারি করতে থাকেন। ‘নাও, প্রফেসর…আমার দিকে তাকান। এই তো। আপনি ইতিহাসের অধ্যাপক। সাকসেসফুল। জনপ্রিয়। আপনার পাণ্ডিত্যের খুব চর্চা হয় ক্যাম্পাসে। ঠিক?’

আফসান ক্লান্ত এবং প্রায় অশ্রুত গলায় বলেন, ‘আমাকে রেহাই দিন।’

‘আপনি কো-অপারেট করুন, আমরা আপনাকে ছেড়ে দেব। একটু মনোযোগ দিয়ে শুনুন। “জেসপেনস্টারডিভিশিওন”। আমি রিপিট করছি। ‘জেসপেনস্টারডিভিশিওন’। শব্দটা শুনেছেন আপনি?’

আফসান চৌধুরী ক্লান্ত প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে থাকেন।

‘ডাজ ইট রিং অ্যানি বেল, প্রফেসর? হ্যালো..’

আফসান চৌধুরীর মাথা নুয়ে পড়ছে দেখে কর্নেল হাততালি দিয়ে জাগিয়ে তোলেন।

‘ডাজন্ট? ওকে। তাহলে ‘গোস্ট ডিভিশন’?

আফসান চৌধুরী কষ্ট করে মাথা তুলে রাখেন। কোনো কথা বলেন না।

‘জেসপেনস্টারডিভিশিওন একটা জার্মান শব্দ। সামরিক জারগন। এর ইংরেজি করলে দাঁড়ায় গোস্ট ডিভিশন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাবাহিনীর একটা ডিভিশনের এই ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল। ওই ডিভিশনের আনুষ্ঠানিক নাম ছিল সেভেনথ প্যানজার ডিভিশন আপনি জার্মান প্যানজার ট্যাংকের নাম শুনেছেন তো, না? খুব বিখ্যাত। ওই ট্যাংকের নামে নাম। এই ডিভিশনের কমান্ডার ছিলেন একজন বিখ্যাত মিলিটারি স্ট্র্যাটেজিস্ট। তাঁর নাম ফিল্ড মার্শাল এরউইন…অথবা এরভিন, যেভাবে বলেন…রোমেল। বলা যায়, নেপোলিয়নের পর সবচেয়ে বড় সামরিক স্ট্র্যাটেজিস্ট ছিলেন রোমেল। ইনফ্যাক্ট, শুধু মিলিটারি স্ট্র্যাটেজির পয়েন্ট অব ভিউ থেকে যদি দেখেন, পুরো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধটাকে আপনি রোমেলের যুদ্ধ হিসেবে দেখতে পাবেন। পুরোটাই রোমেলের নিজের উদ্ভাবিত সামরিক কৌশল আর সেগুলো ঠেকাতে মিত্রবাহিনীর পাল্টা কৌশল।’

আফসান বলেন, ‘আমাকে বলছেন কেন?’

‘বলতে দিন। ধৈর্য হারাবেন না। সবকিছুর সঙ্গে সবকিছুর যোগ আছে। কিছুই যাবে না ফেলা। ১৯৪০ সালে ফ্রান্সের পূর্ব সীমান্তে যুদ্ধে যোগ দেয় রোমেলের সেভেনথ প্যানজার ডিভিশন। রোমেল এখানে এমন এক অদ্ভুত কৌশল নিয়েছিলেন যে প্রায় অদৃশ্য এক ভূতের মতো তাঁর বাহিনী শত্রুপক্ষের ব্যাটললাইন ভেদ করে ঢুকে গিয়েছিল। তাঁর ডিভিশনের নাম হয়ে যায় গোস্ট ডিভিশন। কথা হলো, এই শব্দগুলো— রোমেল, সেভেনথ প্যানজার ডিভিশন, গোস্ট ডিভিশন—এগুলো সেনাবাহিনীর ভেতর একেবারেই অপরিচিত কোনো শব্দ নয়। আপনি মিলিটারি একাডেমির ক্লাসরুমে যান। মুখে মুখে শুনবেন এসব শব্দ। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের করিডরে এই শব্দগুলো আপনি শুনবেন না। শোনার কোনো কারণ নেই। বিশেষ করে ইতিহাসের একজন আলাভোলা শিক্ষকের মুখে তো নয়ই। এইটা…’

কর্নেল নাদিম এবার থেমে ফাইল ঘেঁটে তার ভেতর থেকে একটা নোটবই বের করে সেটা মেলে ধরেন। ‘আপনার একটা নোটবই, আপনারা বাঙালিরা যাকে বলেন নোটখাতা। এখানে পাতায় পাতায় রোমেল আর তাঁর সামরিক স্ট্র্যাটেজির কথা লেখা হয়েছে। আপনি প্যানজার ডিভিশনের কথা লিখেছেন। লিখেছেন ডেজার্ট ফক্সের কথা। রোমেলের উত্তর আফ্রিকা অভিযানের কথা লেখা আছে কয়েকবার। ইনফ্যান্ট্রি অ্যাটাক নিয়ে রোমেলের বিখ্যাত বইটা… কী যেন নাম…ধেত্তেরি!…ওইটা আপনার বুকশেলফে পাওয়া গেছে। তাতে পাতার পর পাতা আপনি দাগ দিয়েছেন। মার্জিনে নোট নিয়েছেন। ক্লজেভিটসের মিলিটারি স্ট্র্যাটেজির বইটা, সেটাও আপনার তাকে আছে। ইচ্ছেমতো দাগানো, নোট নেওয়া। ইনফ্যাক্ট আপনার বুকশেলফে গোটা পনেরো বই মিলিটারি স্ট্র্যাটেজির ওপর। যা-তা বই না, চোস্ত সব বই। মিলিটারি স্ট্র্যাটেজি, কমব্যাট স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আপনার এত কৌতূহল কেন?’

‘শখ। ছোটবেলা থেকে।’

‘সির্ফ শখ?’

‘ইয়েস।’

‘ইনফ্যাক্ট, আমি, বলতে পারেন, মুগ্ধ আপনার নোটখাতা দেখে। গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, অ্যাবোটাবাদ মিলিটারি একাডেমির যেকোনো শিক্ষকের চেয়ে আপনি ভালো শেখাতে পারবেন ক্যাডেটদের। একটুও বাড়িয়ে বলছি না।’

আফসান চৌধুরীর বিধ্বস্ত মুখে আতঙ্কের ছায়া পড়ে।

‘না, আমি আপনার প্রশংসাই করছি। নির্ভয়ে থাকুন।’

এ সময় কোথাও থেকে একটা যান্ত্রিক ক্যাচক্যাচ শব্দ উঠলে দুজনে সচকিত হয়। শব্দটা রেকর্ডিং যন্ত্র থেকে আসছে। ফিতা জড়িয়ে যাওয়ার মতো শব্দ।

নাদিম থেমে গিয়ে বিরক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘দিস সান অব আ বিচ! সামির!’ মেজর হাতে নোট নিচ্ছিল। তড়িঘড়ি উঠে গিয়ে রেকর্ডিং যন্ত্র ঠিক করার চেষ্টা করে। সে দেখে, ফিতা ঘুরছে না। আটকে গেছে। সামির দুবার যন্ত্রে থাপ্পড় কষে। কিছু হয় না। সামির ফিতার রিল খুলে সেটা গোছাতে থাকে ডিস্কে।

কর্নেল বলেন, ‘ক্যান ইউ ফিক্স ইট অর নট?’

‘টাইয়িং স্যার। লেটস সি।’

‘কুছ রেকর্ড হুয়া অওর নেহি?’

‘চেকিং, স্যার।’

মেজর ক্যাসেট বের করে জড়ানো ফিতা ম্যানুয়ালি ঘুরিয়ে সেটার মধ্যে পোরে। তারপর ক্যাসেট ভেতরে দিয়ে কিছু দূর রিওয়াইন্ড করে প্লে বাটন চাপে। তাতে একটু আগের কথাবার্তার রেকর্ড বাজতে থাকে, ‘ইনফ্যাক্ট, আমি, বলতে পারেন, মুগ্ধ আপনার নোটখাতা দেখে। গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, অ্যাবোটাবাদ মিলিটারি একাডেমির যেকোনো শিক্ষকের চেয়ে আপনি ভালো শেখাতে পারবেন ক্যাডেটদের…’

নাদিম যেন নিজের কণ্ঠস্বর শুনে একটু মুগ্ধ হন। একটু লজ্জিতও দেখায় তাঁকে। তিনি সপ্রতিভভাবে বলেন, ‘ওকে। স্টপ। নাও গো টু দ্য এন্ড অব দ্য রেকর্ডেড পার্ট। স্টার্ট অ্যাগেইন। বিওয়্যার, নাথিং ইজ ইরেজড ডিউ টু ইয়োর স্টুপিডিটি।’

‘ওকে স্যার।’

সামির আবার রেকর্ড চালিয়ে দেয়।

কর্নেল আবার পায়চারি শুরু করেন। তিনি চিবুক একটু উঁচু করে কিছুটা ছাদের দিকে ছুড়ে দিতে থাকেন তাঁর কথাগুলো। একটু আগে নিজের গলার রেকর্ড শোনার পর থেকে খানিকটা সচেতন হয়ে উঠেছেন তিনি। ফলে আরেকটু সতর্ক উচ্চারণ তাঁর গলায়। দুটি বাক্যাংশের মধ্যে সুচিন্তিত পর্ববিরতি।

কর্নেল বলেন, ‘ডিফেন্স ইকুইপমেন্ট নিয়েও আপনার কৌতূহল আমরা দেখতে পেয়েছি। এগুলো কোনো ব্যাপার না। অনেকের থাকে। কিন্তু হোয়াট মেড আস রিয়ালি রিয়ালি ওরিড, ইজ দ্য লাস্ট ফিউ পেজেস অব ইয়োর নোটবুক…নোটখাতা প্রফেসর। শেষ পৃষ্ঠাগুলোর এন্ট্রিজ আর মেড অন মোর রিসেন্ট ডেইজ। ধরুন, মে-জুন মাস। সেখানে আমরা কী দেখছি? আমরা দেখছি একেবারে ভিন্ন ধরনের কতগুলো শব্দের এন্ট্রি। এমন কিছু, যেগুলো নন-কনভেনশনাল ওয়ারফেয়ার ট্যাকটিকসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কী বলছি বুঝতে পারছেন? নন-কনভেনশনাল ওয়ারফেয়ার। অনেক ধরন আছে নন-কনভেনশনাল ওয়ারের। যার আরেকটা বাজারচলতি নাম হলো গেরিলা ওয়ারফেয়ার।

রেকর্ডারে আবার শব্দ হতে থাকে।

কর্নেল নাদিম ‘মাদারচোদ’ বলে গালি দেন। সেটা এমন আচমকা যে বোঝা যায় না গালিটা ত্রুটিযুক্ত রেকর্ড যন্ত্র নাকি আফসান চৌধুরীর উদ্দেশে বর্ষিত।

মেজর সামির দ্রুত ছুটে যায় টেপরেকর্ডারের কাছে, ‘লেট মি চেক অ্যাগেইন, স্যার।’

কর্নেল একটা চেয়ারে বসে পড়ে বলেন, ‘নো নিড। জাস্ট সুইচ ইট অফ অ্যান্ড থ্রো দিস পিসাশিট আউট অব দ্য উইন্ডো। দিস ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট ইজ গেটিং হরেন্ডাস। আমি কমপ্লেইন করব। এত করে বললাম, টেলিফাংকেন কোম্পানির রেকর্ডার কিনতে। সাউন্ড রেকর্ডে জার্মানদের ওপরে কেউ আছে দুনিয়ায়? বাট, দে ওন্ট লিসেন।’

মেজর সামির রেকর্ডার বন্ধ করে আবার আগের জায়গায় গিয়ে বসে।

কর্নেল মেজাজ আগের জায়গায় আনার চেষ্টা করে আবার শুরু করেন, ‘ইউ জাস্ট কিপ টেকিং নোটস…সো, অন রিসেন্ট ডেইজ, ইয়োর ফোকাস হ্যাজ বিন শিফটেড টুয়ার্ডস গেরিলা ওয়ারফেয়ার ট্যাকটিকস, প্রফেসর। অ্যান্ড ইট জাস্ট কোইনসাইডেড উইথ দ্য রাইজ অব দিজ সো কল্ড অ্যানার্কিস্টস, দিজ মিসক্রিয়েন্টস। ডু ইউ আস্ক আস টু টেক ইট জাস্ট অ্যাজ আ শিয়ার কোইনসিডেন্স, প্রফেসর?’

‘ইয়েস, কোইনসিডেন্স।’

‘ওকে। মানলাম। এবার মাসখানেক আগে, টু বি প্রিসাইস, ১৭ জুলাই, কলাবাগানে লেক সার্কাস রোডে, একটা তিনতলা বাড়িতে, বাড়িটার হোল্ডিং নাম্বার…’

কর্নেল নাদিম একটা ফাইল হাতে নিয়ে সেটা ঘেঁটে দেখেন, ‘হ্যাঁ, ফিফটিন-বি, এই ফিফটিন-বির দ্বিতীয় তলায় আপনি কেন গিয়েছিলেন?’

আফসান চৌধুরী মাথা নিচু করে থাকেন।

‘ওই দিন ওই বাসায় আপনি দেড় ঘণ্টা অবস্থান করেছেন। ওখানে আপনার কোনো কাজ থাকার কথা নয়।

আফসানের কোনো সাড়া নেই। নিশ্চল বসে আছেন। নিশ্বাস নিচ্ছেন কি না, সন্দেহ হয়।

‘আমি ওয়েট করছি, প্রফেসর। ওই দিন কলাবাগানেই ওই বাসায় আপনি কেন গিয়েছিলেন?’

‘আমার এক আত্মীয়ের বাসা।’

‘ওই বাসা, অ্যাকর্ডিং টু আ টিপ অফ, ওই বাসা মিসক্রিয়েন্টদের একটা ডেন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। কয়েক দিন আগে সেখানে একটা রেইড হয়েছে। কাউকে পাওয়া যায়নি। ফসকে গেছে। টিপটপ। ক্লিন। এমনকি যে ব্ল্যাকবোর্ডে আপনি ঢাকা শহরের ম্যাপ এঁকে গেরিলা হামলার স্ট্র্যাটেজি বুঝিয়েছেন, সেই বোর্ডটাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’

আফসান চুপ করে থাকেন।

নাও, টেল আস, কেন গিয়েছিলেন ওখানে? কোইনসিডেন্স?’

‘কোইনসিডেন্স।’

কর্নেল রাগে ফুঁসতে থাকেন। তাঁর ফরসা গাল রক্তিম হয়ে ওঠে। ‘কোইনসিডেন্স’ শব্দটায় যেন তিনি অপমানিত হয়েছেন। তিনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান।

‘আপনার কী ধারণা? এখানে আমরা ঘোড়ার ঘাস কাটছি? দুধের শিশু আমরা? এখানে এই এত বড় ফ্যাসিলিটিজটায় আমরা আঙুল চুষছি? ইউ মাদারফাকার…!’

মেজর সামিরকে হতবাক করে কর্নেল নাদিম ছুটে এসে আফসান চৌধুরীর চেয়ারের পায়ায় লাথি কষেন। চেয়ারসহ আফসান চৌধুরী ছিটকে পড়েন।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন