একটি সাবমেরিন বনাম পাঁচ হাজার জানালা

চাইনিজ ভাষায় আমেরিকার নাম হলো ‘মেইগুয়ো’। শব্দটির অর্থ। বিউটিফুল কান্ট্রি–সুন্দর দেশ। আমেরিকার কী দেখে ওরা সুন্দর। দেশ নামে ডাকতে শুরু করেছিল, সে তথ্য অবশ্য জানা নেই। তবে একজন চাইনিজ সত্যিকার অর্থে আমেরিকাকে কী দৃষ্টিতে দেখে, সেটা জানতে হলে তার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব থাকতে হবে আপনার।

আমেরিকার সঙ্গে চীনের একটা রাজনৈতিক সমস্যা হলো। তাইওয়ান নিয়ে। তাইওয়ান বস্তুত দাঁড়িয়ে আছে আমেরিকার প্রত্যক্ষ সমর্থনে। চীন অবশ্য সম্মুখ শত্রুতায় যায় না সহজে। ওরা। খুবই কৌশলী জাতি। আর পরিশ্রমী জাতি হিসেবে ওদের খ্যাতি সারা দুনিয়ায়। ওদের লক্ষ্য একটাই–দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।

চীন সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেটি আমেরিকার তৈরি। গুগল, ফেসবুক ইত্যাদি কিছুই ব্যবহার করে না (জাতীয়ভাবে) তাদের নিজেদের মতো করে তারা এগুলো তৈরি করেছে। অন্যের কাছ থেকে জ্ঞান ধার করা ছাড়া ওরা অন্যকিছু সহজে ধার করে না। আফিম-যুদ্ধ (Opium War) নামে চাইনিজরা। একটা যুদ্ধ করেছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। সে যুদ্ধটার সূত্রপাত– হয়েছিল কেন জানেন? ব্রিটিশ সরকার পণ্য রপ্তানি করতে চেয়েছিল চীনে। চীনের রাজা কোনো পণ্যই আমদানি করতে চাননি। প্রত্যাখ্যান করেছিল সব। এদিকে চীন থেকে চা আমদানি করে ব্রিটিশদের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ব্রিটিশরা চীনের দক্ষিণাঞ্চলে আফিম বিক্রি শুরু করে। একসময় চাইনিজরা আফিম-আসক্ত হয় গেলে, চীনের সরকার ব্রিটিশদের এই অনৈতিক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। চীন সে যুদ্ধে হেরে যায়। পরিণামে হংকং দ্বীপ ব্রিটিশদের অধীনে চলে যায় শত বছরের জন্য। বিদেশি পণ্য আমদানির বিরুদ্ধে কোনো দেশের এমন শক্তিশালী মনোভাব পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই।

কিন্তু এই দেশটি সারা দুনিয়ায় তাদের মানুষ পাঠায়। পুরো দুনিয়া থেকে তারা শেখে। আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি তরুণ গবেষক পাঠায় যে দেশটি, সেটা হলো চীন। শুধু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রায় ১০ হাজার চীনা ছেলেমেয়ে প্রতিবছর আমেরিকায় আসে। তারা সব প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। গবেষণার অভিজ্ঞতা নেয়। এটাকে আমি বলি ইন্টিলেকচুয়াল স্ক্যানিং। হাজার হাজার ছেলেমেয়ে পাঠিয়ে এখানে গবেষণার যত ডিজাইন, অ্যারেঞ্জমেন্ট, টুলস-টেকনিক আছে, সেগুলো স্ক্যান করে নিয়ে যাওয়া। চীন তার দেশের ছেলেমেয়েদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সহস্র মেধাবী প্রকল্প (Thousand Talent Plan) চালু করেছে। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে মেধাবী তরুণদের ফিরিয়ে নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা তাদের দেওয়া হয়। তরুণেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে গবেষণা করতে থাকেন। এমন একটি প্রকল্প মাত্র কুড়ি বছর চালু থাকলে, কুড়ি হাজার গবেষক তৈরি হয়ে যায়। কী দূরদর্শী ও টেকসই পরিকল্পনা তাদের! চীন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। যে দেশটি সারা দুনিয়া থেকে শেখে, তাদের কাছ থেকে আমরা প্রচুর জ্ঞান বিজ্ঞান নিতে পারি। কিন্তু জাতীয়ভাবে সেটা কি আমরা করছি? এই চীন থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা দিয়ে সরকার জাহাজ কিনেছে। দুই যুগের পুরোনো জাহাজ। অথচ সরকার চীনকে বলতে পারত, আমরা আগামী পাঁচ বছর পাঁচ হাজার তরুণকে তোমার দেশে পাঠাব। তারা কেউ কাজ করবেন মেডিসিন নিয়ে। কেউ এরো-ইঞ্জিনিয়ারিং, কেউ পারমাণবিক গবেষণা কিংবা কেউ অ্যাস্ট্রোফিজিকস (Astrophysics) নিয়ে গবেষণা করবেন। বিনিময়ে দেড় হাজার কোটি টাকাই আমরা দেব। চীন যে টাকা। পাওয়ার, সেটাই পেত। আর আমরা পেতাম কতগুলো জানালা। সে জানালা দিয়ে নতুন নতুন দিক দেখতে পেতাম আমরা। দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে শত হাজার কোটি টাকার সম্ভাবনা তৈরি করা যেত। একটা জাহাজ কখনো পাঁচ হাজার জানালা খুলে দিতে পারে না। কোনো দিন না। রাষ্ট্র যদি একটু বুঝতে চাইত!

অধ্যায় ১ / ৬৩

সকল অধ্যায়

১. একটি সাবমেরিন বনাম পাঁচ হাজার জানালা
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘশ্বাসটুকু শুনুন
৩. চিত্ত যেথা ভয়যুক্ত, নিচু যেথা শির
৪. একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়
৫. কোটা নাকি মেধা? জন্ম নাকি কর্ম?
৬. কর্মে হোক জন্ম জয়
৭. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষ্পাপ প্রাণগুলো
৮. দেশটা যেভাবে হেরে যায়
৯. সজাগ হও, হে তারুণ্য!
১০. সেশনজটে ক্ষয়ে যায় সমাজ
১১. থেমে থেকো না
১২. সম্ভাবনাকে জাগতে দিন
১৩. উন্নত সমাজের মূলমন্ত্র
১৪. লক্ষ্য হোক দক্ষতা অর্জন
১৫. কোথায় ছুড়ছ তোমার সোনালি যৌবন?
১৬. দয়া করে ওদের ঠকাবেন না
১৭. বাংলাদেশ কি মেধাবীদের ফিরিয়ে নেবে?
১৮. নেতায় নেতাচ্ছন্ন এক দেশ
১৯. সহজাত মেধা যেন ক্ষয়ে না যায়
২০. মগজের ধ্বংসযজ্ঞ
২১. দাঁড়াতে হলে শিখতে হয়
২২. প্যারালাইজড মাইন্ড!
২৩. সম্ভাবনা খুন হয়ে যায়
২৪. অন্তরে বাহিরে দাসত্বের রজ্জু
২৫. মেধাবীদের কত দিন দূরে রাখবে সমাজ?
২৬. ব্রেইন ড্রেইন নাকি ব্রেইন গেইন?
২৭. শিক্ষার আলোয় জাগুক স্বদেশ
২৮. সম্ভাবনার দুয়ারে আছ দাঁড়িয়ে
২৯. আলোকিত সমাজের মূলমন্ত্র
৩০. দ্য রাইট পারসন
৩১. নিজেকে আবিষ্কার করো
৩২. সত্যিকারের নায়ক
৩৩. যা আছে তা-ই দিয়ে করো সংগ্রাম
৩৪. চুরি বিদ্যা ও বিদ্যা চুরি
৩৫. অনন্য, অপ্রতিরোধ্য দক্ষিণ কোরিয়া
৩৬. একটা বিপ্লব হচ্ছে নীরবে
৩৭. জাগরণের কাল
৩৮. একজন ভিসি ও দীর্ঘশ্বাস
৩৯. কিশোর-কিশোরীর জ্ঞানানন্দ
৪০. ভারত কেন পারছে?
৪১. জাপান থেকে শেখো
৪২. অধিকারবঞ্চিত হতভাগ্য শিক্ষার্থীরা
৪৩. স্ট্যানফোর্ডের আকাশ
৪৪. প্রস্তুতির শ্রেষ্ঠ সময়
৪৫. ডিজিটাল ইগনোরেন্স
৪৬. প্রিয় অভিভাবকগণ, একটু শুনুন
৪৭. মাত্র এক শ কোটি টাকা
৪৮. ফড়িংয়ের চোখ তৈরি করো
৪৯. ছোট দেশের বড় স্বপ্ন
৫০. মনিরুল ইসলামেরা কেন ফিরতে পারেন না?
৫১. ড্রাইভিং ফোর্স
৫২. অন্তরালের নায়ক
৫৩. উদ্ভাবনে আমরা কেন পিছিয়ে?
৫৪. আত্মঘাতী নীতিমালা
৫৫. এমন যদি হতো
৫৬. চারিত্রিক সনদ
৫৭. চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি
৫৮. আত্মহনন কোরো না হে প্রাণ
৫৯. আমাদের সম্ভাবনাময়ী মেয়েরা
৬০. উপাচার্যদের উপাচার্য
৬১. কেমন হয় একটা বিশ্ববিদ্যালয়?
৬২. হৃত কৌতূহলী মগজ
৬৩. জিনিয়াস মাইন্ড

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন