খুদেদের রাজত্ব

দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

কোন প্রাণীর চেহারা সবচেয়ে খুদে তা বলতে পারো? হাতির চেয়ে ঘোড়ার চেহারাটা অনেক ছোটো, ঘোড়ার চেয়ে ঢের ছোটো চেহারা হলো কোলাব্যাঙের। আবার কোলাব্যাঙের চেয়ে মশার চেহারা আরো ছোটো। কিন্তু অণুবীক্ষণ দিয়ে যদি দেখো তাহলে দেখবে এই মশার শরীরেরও অনেক অনেক কোষ। অজস্র কোষ মিলে গড়ে তুলেছে একটা মশা, প্রত্যেকটি কোষই কিন্তু এক একটি জীবন্ত জিনিস, এক একটি প্রাণী। 

তাহলে, সবচেয়ে ছোটো চেহারার প্রাণীটা কে? যদি কারো পুরো শরীরটা শুধুমাত্র একটা কোষ দিয়ে তৈরী হয় তাহলে নিশ্চয়ই তাকেই বলবো সবচেয়ে খুদে প্রাণী। আজকের দিনেও এই রকমের প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়; কিন্তু আজকের দিনে পুরো পৃথিবী জুড়ে তাদের রাজত্ব নিশ্চয়ই নয়। কেননা, আজকের দিনে পৃথিবীতে অনেক মস্ত মস্ত চেহারার প্রাণীও রয়েছে। বটগাছ, হাতি, ঘোড়া, মানুষ, কতোই না। কোটি কোটি কোষ মিলে তৈরি করেছে। এদের সব শরীর, তাই এদের চেহারা এমন বিরাট বিরাট। পৃথিবীর বয়েস হয়েছে, ৪৫০ কোটি বছর। খুব সম্ভব তার মধ্যে প্রথম ১০০ কোটি বছর সময়ে পৃথিবীতে কোনো রকম প্রাণীরই চিহ্ন ছিল না। তার মানে, পৃথিবীতে প্রাণী দেখা দিয়েছে পৃথিবীর জন্ম হবার অনেক অনেক পরে। কিন্তু সেই যে প্রথম প্রাণী তাদের চেহারা নেহাতই খুদে খুদে। কেননা, মাত্র একটা করে কোষ দিয়ে তাদের পুরো শরীরটুকু গড়া। অনেক অনেক কোটি বছর ধরে পুরো পৃথিবী জুড়ে শুধু এই খুদে খুদে প্রাণীদের রাজত্ব! 

আজকের দিনেও এই রকমের খুদে খুদে প্রাণী রয়েছে আর নানানভাবে দেখতে পাওয়া গিয়েছে তাদের হালচাল। কী রকম হালচাল জানো? 

তাদের না আছে মুখ, না আছে পেট, না হাত-পা-মাথা-মুণ্ডু। কিংবা, তাদের পুরো শরীরটাকেই পা বলতে পারো, পুরো শরীরটাকেই পেট বলতে পারো, মুখও বলতে পারো। কেননা এগিয়ে চলবার যখন দরকার হয়, তখন তারা শরীরের যে কোনো অংশকে সামনের দিকে একটুখানি যেন ঠেলে দেয় তারপর বাকি শরীরটা যেন গড়িয়ে যায়। এই ঠেলে দেওয়া অংশটার মধ্যে যখন একটা খাবারের দানা জোটে, তখন তারা পুরো শরীরটা দিয়ে এঁকেবেঁকে তালগোল পাকিয়ে যেন জড়িয়ে ধরে খাবারটুকুকে, তারপর খাবারটুকু শুষে নেয় শরীরের মধ্যে। তাই পুরো শরীরটাই মুখ, পুরো শরীরটাই পেট। আবার এই সব প্রাণীদের বাচ্চাও হয়। কিন্তু কিরকমভাবে জানো? বাইরের থেকে খাবার দাবার জোগাড় করে শরীরের তো পুষ্টি জোগালো। শরীরটা বেশ বড়সড় হলো। মোটাসোটা হলো। তারপর হলো কি, পুরো শরীরটা আস্তে আস্তে দুভাগে ভাগ হয়ে গেল। ফলে হয়ে গেল দুটো আলাদা আলাদা প্রাণী। একটা থেকে জন্ম হলো দুটোর।

ছবিটা মনে আছে তো? 

অনেক অনেক বছর ধরে পৃথিবীর বুক জুড়ে শুধু এই ধরনের খুদে খুদে জীব, যাদের পুরো শরীর বলতে শুধু একটি করে কোষ। তারপর হলো কি,—সে এক ভারি মজার কাণ্ড। এই সব খুদে খুদে জীবগুলো যেন দল পাকাতে শুরু করলো, একজোট হতে লাগলো। যতো দিন যায় ততোই দেখা যায় নতুন নতুন ধরনের প্রাণী হচ্ছে, তাদের শরীর আর শুধু একটা কোষ দিয়ে তৈরি নয়, একটার বদলে যেন একদল কোষ। আর যতোই দল পাকায় ততোই শরীরটাকে চালাবার জন্যে কাজের ভার যেন আলাদা আলাদা হয়ে যায়। তার মানে, যতোদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র একটা কোষ দিয়ে পুরো শরীরটা গড়া, ততোদিন পর্যন্ত পুরো শরীরটা দিয়েই খাওয়া-দাওয়া, চলা-ফেরা, বাচ্চা-পাড়া—সব রকমের কাজ। তখন নানান রকম কোষের ঘাড়ে নানান রকম কাজের দায় : একদলের ওপর খাওয়াদাওয়ার ভার, একদলের ওপর চলাফেরার ভার, একদলের ওপর বাচ্চা পাড়ার ভার-এই রকম। হরেক রকম, আর এইভাবেই ক্রমশ তৈরি হলো সেই খুদে খুদে জীব থেকে বড় বড় জীবের শরীর। 

ওই সব অল্প কোষ তৈরি আদিম খুদে খুদে প্রাণীদের ফসিল কিন্তু পাওয়া গেছে। সেগুলো প্ৰায় ৩৫০ কোটি বছরের পুরনো। আর অনেকগুলো কোষ দিয়ে বানানো বড় বড় যে-সব প্রাণীদের ফসিল পাওয়া গেছে তাদের বয়স অতো বেশি নয়। বড়জোর ১০০ কোটি বছর হবে। 

সকল অধ্যায়

১. শূন্য নিয়ে ছেলেখেলা?
২. বুড়ি পৃথিবীর বয়েস কতো?
৩. সে এক তুমুল কান্ড
৪. প্ৰাণের জন্ম
৫. এই দুনিয়ার এমন মজা
৬. এক যে ছিল অবাক ছেলে
৭. কঙ্কালে কঙ্কালে ভাইভাই
৮. তোমার যখন লেজ
৯. পাহাড়ের বই
১০. খুদেদের রাজত্ব
১১. মাছ আর মাছখেকো মানুষ
১২. ডাঙায় ওঠার পালা
১৩. দুঃস্বপ্নের যুগ
১৪. ডিম নয় আর
১৫. চার পা ছেড়ে দু-পা
১৬. পরে বলবো
১৭. পৃথিবীকে জয় করা
১৮. বন্য থেকে সভ্য
১৯. মানুষ যখন ছেলেমানুষ ছিলো
২০. নাচ, ছবি আর ইন্দ্ৰজাল
২১. মানুষের শত্রু মানুষ
২২. সিপাই-শারী পাণ্ডা-পুরুত
২৩. মনের মতো কথা
২৪. নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন
২৫. পিরামিড আর মমির রহস্য
২৬. সিন্ধু আর গঙ্গার কিনারায়
২৭. গ্রীসের গৌরব
২৮. রোমের দম্ভ
২৯. রোমের পতন
৩০. পাথরের দুর্গ আর বীর পুরুষের বল্লম
৩১. চলো যাই শহরে
৩২. বোম্বেটেদের দল
৩৩. মানুষ চাই
৩৪. মেজাজ বদল
৩৫. এপিঠ-ওপিঠ
৩৬. মুনাফার জন্মকথা
৩৭. বিপদ! বিপদ!
৩৮. আকাশে শকুন
৩৯. বিজ্ঞান : কী ও কেন
৪০. পৃথিবীতে নতুন পৃথিবী
৪১. মরিয়ার শেষ কামড়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন