কঙ্কালে কঙ্কালে ভাইভাই

দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

আমরা যাকে বলি ‘আগুন’। হিন্দিভাষীরা তাকেই বলে ‘আগ’। এই দুটো কথার মধ্যে খুব মিল রয়েছে। তার মানে, একই কথা থেকে এই দুটো কথা এসেছে। সেই কথাটা হলো অগ্নি, সংস্কৃত কথা। তার থেকেই বাংলায় হয়েছে ‘আগুন’, হিন্দিতে ‘আগ’। তার জন্যেই ‘আগুন’ আর ‘আগ’ এই দুটো কথার মধ্যে অতোখানি মিল, যেন ভাই-ভাই ভাব। প্রাণীদের বেলাতেও অনেকটা এই রকম। ধরো একটা শিম্পাঞ্জী আর একটা মানুষ। এদের মধ্যে কি খুব বেশি মিল আছে? যদি থাকে তাহলে মানতে হবে এদের মধ্যেও যেন একরকম ভাই-ভাই সম্পর্ক। তার মানে একই জানোয়ার থেকে এসেছে এই দু-রকমের জানোয়ার। যেমন, ‘অগ্নি’ থেকে এসেছে ‘আগুন’ আর আগ, দুটো কথাই । 

কিন্তু মিল কোথায়? এমনিতে চেয়ে দেখলে মনে হয় একদম আলাদা। শিম্পাঞ্জীর গায়ে লোম, চারপায়ে হাঁটে। মানুষের লোমও নেই, আবার হাঁটে দু-পায়ে। তাহলে? আসলে কিন্তু তা নয়। এমনিতে যতো তফাতই মনে হোক না কেন, এদের দুজনের দুখানা কঙ্কাল দেখো। দুটো কঙ্কালের গড়নই অনেকখানি একরকম। কঙ্কালে কঙ্কালে যেন ভাইভাই সম্পর্ক। 

তার থেকে কী প্রমাণ হয়? প্রমাণ হয় যে, এদের দু-জনেরই পূর্বপুরুষ এক ছিল। আমার জোঠতুতো ভাইয়ের সঙ্গে আমার যে-রকম সম্পর্ক অনেকটা সেই রকমই; আমাদের দু-জনেরই ঠাকুর্দা এক। 

মানুষ আর শিম্পাঞ্জীর সেই যে এক পুর্বপুরুষ সে হলো এক রকমের বনমানুষ। সেরকম বনমানুষ আজকাল আর দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু সেই বনমানুষের বংশধররাই নানান ভাবে বদলাতে বদলাতে শেষ পর্যন্ত কেউ বা হয়েছে। শিম্পাঞ্জী, কেউ বা হয়েছে মানুষ। তাই মানুষের সঙ্গে শিম্পাঞ্জীর কঙ্কালের এমন ভাই-ভাই ভাব। কিন্তু ধরো, একটা মানুষ আর একটা ব্যাঙ। এমনিতে তো মনে হয় দুজনের মধ্যে কোনো রকমই মিল নেই। কিন্তু তাই বললেই কি হয়? তাদের কঙ্কাল দুটো ভালো করে দেখো, দুজনের কঙ্কালের গড়নে যে মিল রয়েছে তা মানতে বাধ্য হবে। তার মানে, ব্যাঙের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক রয়েছে; কিন্তু সেটা হলো বড়ই দূর সম্পর্ক। যেমন ধরো, তোমার ঠাকুর্দার ঠাকুর্দার যে জ্যেঠতুতো ভাই তার নাতির নীতির সঙ্গে তোমার যেমন সম্পর্ক। কাছে-পিঠের সম্পর্ক নিশ্চয়ই নয়; তবু সম্পর্ক যে একেবারে নেই তাও তো বলা চলবে না। 

তার মানে, আমাদের অনেক অনেক আগেকার এক পূর্বপুরুষ আর ব্যাঙদের পুর্বপুরুষ একই ছিল। সেই পুর্বপুরুষদের নাম শুনলে তুমি চমকে উঠবে। তাদের নাম মাছ। কেননা মাছরাই হলো পৃথিবীর প্রথম শিরদাঁড়াওয়ালা প্রাণী। অনেক লক্ষ বছর ধরে এই শিরদাঁড়াওয়ালা প্রাণীদের নানান দল নানান দিকে বদলাতে কেউ বা হয়েছে ব্যাঙ, কেউ বা হয়েছে খরগোস, কেউ বা গণ্ডার, আবার কেউ বা হয়েছে বাঁদর। এই রকম কতোই রকম। তারমানে, এই সব জানোয়ারদের মধ্যে আত্মীয়তা রয়েছে, সম্পর্ক রয়েছে। কারোর কারোর বেলায় সম্পৰ্কটা খুব দূর সম্পর্ক। মানুষের সঙ্গে গণ্ডারের সম্পর্কটা নেহাতই দূর সম্পর্ক। কিন্তু গণ্ডারের সঙ্গে শুয়োরের সম্পর্কটা বেশ কাছে পিঠের সম্পর্ক, যে রকম কাছে পিঠের সম্পর্ক হলো মানুষের সঙ্গে গেরিলা আর শিম্পাঞ্জ আর ওরঙ ওটাঙ-এর সম্পর্ক। 

এদের সবাইকার কঙ্কালগুলো ভালো করে মিলিয়ে দেখলে কথাটা না-মেনে আর উপায় থাকে না। 

সকল অধ্যায়

১. শূন্য নিয়ে ছেলেখেলা?
২. বুড়ি পৃথিবীর বয়েস কতো?
৩. সে এক তুমুল কান্ড
৪. প্ৰাণের জন্ম
৫. এই দুনিয়ার এমন মজা
৬. এক যে ছিল অবাক ছেলে
৭. কঙ্কালে কঙ্কালে ভাইভাই
৮. তোমার যখন লেজ
৯. পাহাড়ের বই
১০. খুদেদের রাজত্ব
১১. মাছ আর মাছখেকো মানুষ
১২. ডাঙায় ওঠার পালা
১৩. দুঃস্বপ্নের যুগ
১৪. ডিম নয় আর
১৫. চার পা ছেড়ে দু-পা
১৬. পরে বলবো
১৭. পৃথিবীকে জয় করা
১৮. বন্য থেকে সভ্য
১৯. মানুষ যখন ছেলেমানুষ ছিলো
২০. নাচ, ছবি আর ইন্দ্ৰজাল
২১. মানুষের শত্রু মানুষ
২২. সিপাই-শারী পাণ্ডা-পুরুত
২৩. মনের মতো কথা
২৪. নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন
২৫. পিরামিড আর মমির রহস্য
২৬. সিন্ধু আর গঙ্গার কিনারায়
২৭. গ্রীসের গৌরব
২৮. রোমের দম্ভ
২৯. রোমের পতন
৩০. পাথরের দুর্গ আর বীর পুরুষের বল্লম
৩১. চলো যাই শহরে
৩২. বোম্বেটেদের দল
৩৩. মানুষ চাই
৩৪. মেজাজ বদল
৩৫. এপিঠ-ওপিঠ
৩৬. মুনাফার জন্মকথা
৩৭. বিপদ! বিপদ!
৩৮. আকাশে শকুন
৩৯. বিজ্ঞান : কী ও কেন
৪০. পৃথিবীতে নতুন পৃথিবী
৪১. মরিয়ার শেষ কামড়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন