ডিম নয় আর

দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

এদিকে, ইতিমধ্যেই পৃথিবীর বুকে আর এক রকম জানোয়ার দেখা দিয়েছে। ইঁদুরের মতো ছোট্ট তাদের চেহারা। তার মানে ডাইনোসরদের তুলনায় একেবারে কিছু নয়। তবুও, ওই বিরাট বিরাট জানোয়ারদের সঙ্গে এক রকম জ্ঞাতি সম্পর্ক। কেননা, সরীসৃপদেরই এক আদিম বংশধরের দল নানানভাবে বদলাতে বদলাতে শেষপর্যন্ত এই নতুন ধরনের জানোয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এই যে নতুন ধরনের জনোয়ার এদের নাম স্তন্যপায়ী। 

এদের শরীরে অনেক রকম নতুন সুবিধে। এদের গাগুলো লোমে ঢাকা, আর তাছাড়া এদের রক্তকে বলে গরম-রক্ত। গরম-রক্ত 

কাকে বলে জানো? আসলে জন্তু জানোয়ারদের রক্ত দু-রকমের। এক রকম জানোয়ার আছে যাদের রক্ত সব সময় সমান গরম থাকে। তার মানে, বাইরের আবহাওয়াটা গরমই হোক আর ঠাণ্ডাই হোক তাতে বিশেষ কিছু এসে যায় না, শরীরের ভেতরকার রক্তটা সমান গরমই থাকে। কিন্তু আর একরকম জানোয়ারদের বেলায় অন্য রকম। আবহাওয়ার সঙ্গে তাদের রক্তের তাপ ওঠানামা করে। তার মানে, আবহাওয়াটা খুব ঠাণ্ডা হলে তাদের রক্তও খুব ঠাণ্ডা হয়ে যায়; আবহাওয়াটা বেশ গরম থাকলে তবেই শরীরে রক্তটা গরম থাকে। এদের বলে ঠাণ্ডা-রক্তওয়ালা জানোয়ার। 

পৃথিবীর বুকে বাঁচতে গেলে ঠাণ্ডা-রক্তর চেয়ে গরম-রক্ত ঢের বেশি সুবিধের। শীতের সময় রক্ত যদি হিম হয়ে যায় তাহলে তো মহা বিপদ! পৃথিবীর আবহাওয়া তো সমান নয়। কোথাও খুব ঠাণ্ডা, কোথাও বা খুব গরম। কখনো খুব ঠাণ্ডা, কখনো-বা খুব গরম। 

স্তন্যপায়ীদেরে আগে পর্যন্ত পৃথিরীতে যতো রকমের জানোয়ার তাদের সবাইকার রক্তই ঠাণ্ডা-রক্ত। এমন কি ওই বিরাট বিরাট ডাইনোসরদেরও তাই। আর তাই প্রায় আট কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুকে যখন ওই রকম রসাতল কাণ্ড শুরু হলো, স্যাঁতস্যাঁতে আর গরম হাওয়ার বদলে বইতে শুরু করলো হিম শুকনো হাওয়া—তখন স্তন্যপায়ীর দল বেঁচে গেল। তাদের গায়ের ওপরটা লোমে ঢাকা, তাদের গায়ের ভেতরটা গরম-রক্ত। 

অবশ্য এছাড়াও স্তন্যপায়ীদের আরো নানান সুবিধে ছিল। ওদের মাথার মধ্যেকার মগজগুলো অনেক ভালো, তাই ওরা অনেক বেশি হুশিয়ার আর অনেক বেশি সজাগ। ওদের দাঁতগুলো, ওদের পা গুলো অনেক ভালো, শরীরের মধ্যে নিঃশ্বাস নেবার ব্যবস্থাটাও অনেক ভালো। 

আর তাছাড়াও আরো একটা সুবিধে। মস্ত বড় সুবিধে সেইটা। স্তন্যপায়ীদের বেলায় শেষ হলো ডিম পড়বার পালা। ডিম পড়বার বদলে একেবারে তৈরি বাচ্চা পড়বার ব্যবস্থা। 

সরীসৃপরা পর্যন্ত সমস্ত জীবজন্তই ডিম পাড়তো। সেই ডিম ফুটে বাচ্চা বেরুতো। কিন্তু ডিম পড়বার নানান হাঙ্গামা। ডিমগুলো একটু-আধটুতেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ডিম পাড়বার জন্যে সুবিধেমতো জায়গা পাওয়া চাই। তারপর ডিম পড়বার পরই তো আর হাঙ্গামা চোকে না। ডিমগুলো দেখাশুনা করা, নিয়ম করে তা দেওয়া, তা দিয়ে দিয়ে বাচ্চা ফোটানো। 

এতো সবের বদলে, যদি একেবারে তৈরি বাচ্চা পাড়া যায় তাহলে কতো সুবিধে ভেবে দেখো। তাছাড়াও কিন্তু আরো ব্যাপার আছে! ডিম না হয় পাড়া গেল, ডিমের ওপর তা দিয়ে না হয় বাচ্চাও ফোটানো গেল। কিন্তু তারপর? বাচ্চাগুলোকে খাওয়াতে হবে তো। তার মানে, বাচ্চা ফোটাবার পর বাচ্চাদের জন্যে আবার খাবার জোগাড় করো রে! কিন্তু স্তন্যপায়ীদের বেলায় এ-হাঙ্গামা নেই। কেননা স্তন্যপায়ীদের মায়ের শরীরের মধ্যেই বাচ্চাদের জন্যে দুধ তৈরি হবার ব্যবস্থা। সেই দুধ খেয়েই বাচ্চারা বড় হবে। আসলে, স্তন্যপায়ী নামটার মানেই তাই। মা-র বুক থেকে দুধ খেয়ে বড় হয়, তাই ওই নাম। 

অবশ্য, শুরুর দিকের স্তন্যপায়ীদের চেহারা নেহাতই তুচ্ছ। কিন্তু ওদের শরীরে এতো রকম সুবিধে বলেই দেখতে দেখতে পৃথিবী জুড়ে ওদের দাপট শুরু হলো। সরীসৃপদের যুগের পর স্তন্যপায়ীদের যুগ শুরু। 

সর্বপ্রথম যে-সব স্তন্যপায়ীরা দেখা দিলো তাদের বংশধররা নানান দিকে নানানভাবে বদলাতে বদলাতে শেষ পর্যন্ত হরেক রকম জানোয়ার হয়ে গেল। আকাশে বাদুড়, ডাঙায় সিংহ, হাতি, জেবরা, জিরাফ, জলের তলায় মাছখেকো মাছ : শুধু তাই নয়। স্তন্যপায়ীদের একদল বংশধর গাছের ডালে বাসা বাঁধলো। 

স্তন্যপায়ীদের এই বংশধরগুলির নাম দেওয়া হয়। প্ৰাইমেট। প্রাইমেটদের আবার নানান রকম বংশধর। একদিকে হরেক রকমের বাঁদর আর হরেক রকমের বনমানুষ। অন্যদিকে একদল যারা আধা বনমানুষ আধা মানুষ। এই আধা মানুষদের নাম হলো হোমিনিড। এই বনমানুষদের আবার হরেক রকম বংশধর। কারুর নাম ওরঙ ওটাঙ, কারুর নাম শিম্পাঞ্জী, কারুর নাম গরিলা। আর ওই আধা মানুষ হোমিনিডদের বংশধর শুধু মানুষ। তার মানে আমরা । 

সকল অধ্যায়

১. শূন্য নিয়ে ছেলেখেলা?
২. বুড়ি পৃথিবীর বয়েস কতো?
৩. সে এক তুমুল কান্ড
৪. প্ৰাণের জন্ম
৫. এই দুনিয়ার এমন মজা
৬. এক যে ছিল অবাক ছেলে
৭. কঙ্কালে কঙ্কালে ভাইভাই
৮. তোমার যখন লেজ
৯. পাহাড়ের বই
১০. খুদেদের রাজত্ব
১১. মাছ আর মাছখেকো মানুষ
১২. ডাঙায় ওঠার পালা
১৩. দুঃস্বপ্নের যুগ
১৪. ডিম নয় আর
১৫. চার পা ছেড়ে দু-পা
১৬. পরে বলবো
১৭. পৃথিবীকে জয় করা
১৮. বন্য থেকে সভ্য
১৯. মানুষ যখন ছেলেমানুষ ছিলো
২০. নাচ, ছবি আর ইন্দ্ৰজাল
২১. মানুষের শত্রু মানুষ
২২. সিপাই-শারী পাণ্ডা-পুরুত
২৩. মনের মতো কথা
২৪. নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন
২৫. পিরামিড আর মমির রহস্য
২৬. সিন্ধু আর গঙ্গার কিনারায়
২৭. গ্রীসের গৌরব
২৮. রোমের দম্ভ
২৯. রোমের পতন
৩০. পাথরের দুর্গ আর বীর পুরুষের বল্লম
৩১. চলো যাই শহরে
৩২. বোম্বেটেদের দল
৩৩. মানুষ চাই
৩৪. মেজাজ বদল
৩৫. এপিঠ-ওপিঠ
৩৬. মুনাফার জন্মকথা
৩৭. বিপদ! বিপদ!
৩৮. আকাশে শকুন
৩৯. বিজ্ঞান : কী ও কেন
৪০. পৃথিবীতে নতুন পৃথিবী
৪১. মরিয়ার শেষ কামড়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন