সেই ফুলের দল – ১১

অভীক মুখোপাধ্যায়

এই দ্বীনদুনিয়ার সমস্ত পরিবার একই রকম। হ্যাঁ, একই রকম। এই ধরুন, আপনার পরিবার, আমার পরিবার, অমিতাভ বচ্চনের পরিবার কিংবা গান্ধী পরিবার। ইউরোপের ফ্যামিলি আর ভারতের পরিবারের বাহ্যিক কিছু অমিল থাকলেও মূল ধারণা একই। কেউ তর্ক করলেও করতেই পারেন যে, ভারতীয় পরিবারের প্রতিটা সম্পর্কের মধ্যে যে আঠা আছে, যে সুতো আছে, তা ইউরোপের বা আমেরিকার ফ্যামিলিতে নেই। বণ্ডিং খারাপ। কিন্তু তেমন ভাবার কারণ নেই। তারা তাদের মতো। নিজেদের জায়গায় সঠিক। আপনি হিসেব করতে বসলে আমাদের দেশের গান্ধী পরিবার আর আমেরিকার কেনেডি ফ্যামিলির মধ্যে কোনো বেসিক তফাত দেখতেই পাবেন না। আই রিপিট, পাবেন না।

সমাজের নিম্নতম বর্গ থেকে উচ্চতম বর্গ পর্যন্ত প্রতিটা পরিবারই আসলে একটা করে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। আমার গ্রামের বারুজীবীর পরিবারের প্রত্যেক সদস্য একসঙ্গে পান বোনে, আপনার শহরের অম্বানি ফ্যামিলি রুটিরুজির টানে একই পদ্ধতিতে বিজনেস করে। আমেরিকার কেনেডি ফ্যামিলি সত্তায় আসার জন্য ইলেকশনে লড়ে, ভারতের ভোটে দাঁড়ায় গান্ধী-নেহরু পরিবার।

গান্ধী পরিবার। মতিলাল নেহরুর শাখাপ্রশাখা। জওহরলালের কিংবদন্তী। ইন্দিরা গান্ধীর প্রতাপ। আর তারপর? তারপরে পূর্ণ সম্ভাবনা ছিল যে এই পরিবার মতভেদের চাপে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে। কারণ ইন্দিরার দুই তনয়। রাজীব এবং সঞ্জয়। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে দ্বিখণ্ডিত হল না তখন। রাজীবের যে রাজনীতিতে রুচি ছিল না। তাই কোনো বিবাদ জন্ম নিল না। সঞ্জয়ই সব। রাজনীতির আঙিনায় ইন্দিরা গান্ধীর এক এবং অদ্বিতীয় উত্তরাধিকারী। কিন্তু এটুকুই কি সব? ছেলেপুলে থাকলে সংসারে যে তা(দে)র বউও আসবে। এলও।

এক্ষেত্রেও একটা প্রাথমিক সুবিধে হল। পরিবারের এক বউমা হল বিদেশি। ভারতের রাজনীতিতে তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না। মনে রাজনীতি নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না।

সোনিয়া। আসল নামটাম লিখলাম না, বাপু। জানতে গেলে গুগল করে নাও। সূত্র বলে, সোনিয়ার পিতার নামটা মুসোলিনির বাহিনীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তিনি সোভিয়েত সেনার হাতে বন্দিও হয়েছিলেন। রাশিয়াতে দীর্ঘদিন ছিলেন। একটা প্রভাব পড়েছিল রাশিয়ান সংস্কৃতির। তিন মেয়ের নাম রাখলেন অনৌস্কা, সোনিয়া আর নাদিয়া। পরে সোনিয়ার পিতা ইতালিতে নিজের গ্রাম লুসিয়ানাতে ফিরেও যান। আল্পস পর্বতের কোলে ছোট্ট গ্রাম। ওখানে জানলাতে কাঠের শাটার থাকে। তাকে ‘মৈনি’ বলে। সেই থেকেই সারনেম ‘মাইনো’।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালির অবস্থা তখন নাজেহাল। গরিব দেশ। আমেরিকা সাহায্য পাঠাচ্ছে। বাচ্চাদের পড়াশোনা বন্ধ। আর সব দেশেই মেয়েদের লেখাপড়ার দিকটা অবহেলিতই হয়। গ্রামে মিডল স্কুল ছিল না। তাহলে সোনিয়া পড়বে কী করে? সোনিয়াকে একটি খ্রিস্টান আবাসিক স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হল। বাড়ি থেকে অনেক দূরে।

পরবর্তী কালে সোনিয়াকে কেমব্রিজে পাঠানো হল। ইংরেজি পড়ার জন্যে। কম খরচের স্কুলে। তবে ইংরেজিতে একটা কমজোরি থেকেই গেল। ওই শহরেই দেখা হয়ে গেল ইন্দিরা তনয় রাজীবের সঙ্গে। সোনিয়া— একটি ইতালিয়ান তন্বী, সুন্দরী, আর বিপরীতে রাজীব— ভারতের সবথেকে শক্তিশালী পরিবারের নয়নমণি। রাজীব অসম্ভব স্মার্ট। সুদর্শন। গড়গড় করে ইংরেজি বলেন। দুন স্কুলের প্রাক্তণী। পড়তে গেছেন ট্রিনিটি কলেজে। ওখানেই পড়েছিলেন রাজীবের দাদুভাই জওহরলাল।

সোনিয়া ট্রিনিটির গ্রীক রেস্তোরাঁতে প্রায়ই যেতেন। কারণ ওখানে ইতালিয়ান খাবারের কাছাকাছি খাবার দাবার তৈরি হতো। সোনিয়া সেখানে কাজেও লেগে যান। পরবর্তীতে এক ইতালিয়ান বন্ধুর সঙ্গে রাজীব সেখানে খেতে গেলে সোনিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রথম দেখাতেই প্রণয়। সম্ভবত ১৯৬৫ সালের কথা।

দেখা সাক্ষাৎ বেড়ে গেল দুজনের মধ্যে। কেমব্রিজে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা খুব কম ছিল। ১২:১। অত অল্প সংখ্যক ছাত্রীদের মধ্যে সোনিয়া ছিলেন সবথেকে বেশি সুন্দরী। আর রাজীবের সঙ্গে তাঁর জুটিটা ছিল অন্য সকল জুটির মধ্যে সুন্দরতম।

রাজীব রোজ সাইকেল নিয়ে সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। উইকেন্ডে নিজের সেকেণ্ড হ্যান্ড ফোক্সওয়াগন গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন লং ড্রাইভে। রাজীব সোনিয়াকে নিয়ে যখন বেরোতেন, তখন সোনিয়ার পরনে থাকত সুন্দর গাউন। চোখ বন্ধ করলে কল্পনা করা যায় অমলিন সেসব ছবি। প্রেম ঘন হচ্ছিল ক্রমশ। রাজীব তখন ওদেশের একটি বেকারিতে পার্টটাইমে কাজ করছিলেন।

এসব যে সময়ের কথা, তখন ইন্দিরা গান্ধী তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। একবার ইংল্যান্ডে গেলেন। সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করালেন রাজীব। আগেই লিখেছি যে সোনিয়ার ইংরেজি তেমন আহামরি দরের ছিল না। কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে দেখে ইন্দিরা গান্ধী ফ্রেঞ্চ বলতে শুরু করলেন। সোনিয়া চোস্ত ফ্রেঞ্চ বলতে পারতেন বলে তরতর করে কথা শুরু হল দুজনের মধ্যে।

কিছুদিনের মধ্যে সঞ্জয় গান্ধী রোলস রয়েস কোম্পানিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ইংল্যান্ডে চলে গেলেন। সোনিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হল। আস্তে আস্তে গান্ধী-পরিবারের ভাবটা জমাট বাঁধছিল বিলেতের মাটিতেও।

সোনিয়ার পিতার দিক থেকে সামান্য কিছু আপত্তি ছিল। ভদ্রলোক একটু রক্ষণশীল প্রকৃতির। রাজীব নিজেই ইতালি চলে গেলেন। বোঝাতে তো হবেই।

কথোপকথন কেমন ছিল একটু আন্দাজ করা যাক—

‘তোমার মা রাজনেতা? তুমি কী করো?’

‘আমি পাইলটের ট্রেনিং নিচ্ছি। ভারতে গিয়ে লাইসেন্স পেয়ে যাব।’

‘দেখো, আমার মেয়ে কিন্তু এখনো নাবালিকা। কিছুদিনের মধ্যেই অবশ্য সাবালিকা হয়ে যাবে। ততদিন তোমরা একটু আলাদা-আলাদা থাকো। তারপরেও প্রেমটা টিকে থাকলে ও ভারতে চলে যাবে। কোনো সমস্যা নেই।’

১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে সোনিয়া প্রথম ভারতে এলেন। দিল্লি এয়ারপোর্টে। সেদিন তিনজন গিয়েছিলেন সোনিয়াকে রিসিভ করতে। সঞ্জয় গান্ধী, রাজীব গান্ধী, এবং রাজীবের প্রিয় এক বন্ধু।

সোনিয়া নামতেই রাজীব নিজের বন্ধুর সঙ্গে তাঁকে আলাপ করিয়ে দিলেন ‘আমার বন্ধু— অমিতাভ। বিয়ের আগে তুমি ওঁর বাড়িতেই থাকবে…’

.

সোনিয়া ইতালির স্কুলে পড়ার সময় কখনো ভারতের নামও পর্যন্ত শোনেননি। আর রাজীব, সঞ্জয় কিংবা ইন্দিরা গান্ধীকে ভারত নামক দেশের প্রতিনিধি হিসেবে লণ্ডনে দেখে ভারতের ব্যাপারে কোনো রকম আন্দাজ করাটাও কঠিন ছিল। রাজাকে দেখে কি আর প্রজার অবস্থার কথা বোঝা যায়? যায় কি?

রাজীব আর সঞ্জয়ের ছোটবেলা কেটেছে বিশাল তিন মূর্তি ভবনে, দাদুর সঙ্গে। তাঁদের চলায়-বলায় আভিজাত্য। সোনিয়া ভারতে এসে প্রথম যে ভারতীয়কে চিনলেন, তিনি ছিলেন অমিতাভ। ভবিষ্যতের সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন। তবে তিনিও হাইফাই ভারতীয়। বচ্চনের সঙ্গে লুটিয়েন্স দিল্লি পার করে উইলিংডন ক্রেসেন্টের যে বাংলোতে গিয়ে সোনিয়া উঠলেন, সেটা কেবল দিল্লির নয় ভারতের সবথেকে পশ এলাকার মধ্যেই পড়ত বা পড়ে। তাই সত্যি বলতে কী, সোনিয়ার পা ভারতের মাটিতে পড়েনি, পড়েছিল ইন্ডিয়ার বুকে। ইতালির একটি ছোট্ট গ্রামের কন্যা সোনিয়ার কাছে ভারতের এই নগরী ইন্দ্রজালের চেয়ে কম কিছু ছিল না। পারতপক্ষে এত আভিজাত্য, এত বিলাসে সোনিয়া অভ্যস্ত ছিলেন না।

এ তো গেল একটা সমস্যা। আরেকটা দিক ছিল ভাষার। আগেই বলেছি, সোনিয়া কেমব্রিজের ল্যাংগোয়েজ স্কুলে ইংরেজি শিখতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ওই অল্প সময়ের মধ্যে আর শিখবেনই বা কী? এদিকে ভারতে শুধু ভাষাই নয়, রীতিনীতিও নতুন, সোনিয়া ঠিক করলেন এবার এখানে হিন্দিটাই শিখে ফেলি। সুবিধেও ছিল। ভারতে যেটা সোনিয়ার বাপের বাড়িতে পরিণত হয়েছিল, সেটা ছিল বচ্চনের বাড়ি। না, অমিতাভের কথা বলছি না। হরিবংশ রাই বচ্চনের কথা বলছি। হিন্দির বিখ্যাত কবি। একবার একটি সাক্ষাৎকারে সোনিয়া বলেছিলেন, ‘তেজি বচ্চন (অমিতাভের মা) আমার তৃতীয় মা। প্রথম মা রয়েছেন ইতালিতে, দ্বিতীয় মা হলেন ইন্দিরা, আর তৃতীয় মা তেজি বচ্চন।’

তেজি বচ্চনই সোনিয়াকে ভারতীয় খাবার দাবার, শৃঙ্গার, ভাষা, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন। আর একটা ব্যাপারও ছিল। তেজি ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন। তাই ইন্দিরার মেজাজের দিকটা ভালো করেই জানতেন। তিনি বুঝেছিলেন শাশুড়ি হিসেবে মারাত্মক কড়াই হবেন ইন্দিরা। ডমিনেটিং। তাই ইন্দিরার হ্যাঁয়ে হ্যাঁ মিলিয়ে চললেই ভালো এবং সুবিধে হবে এটা তিনি সোনিয়াকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।

ভারতে আসার প্রায় একমাস পরে ১৯৬৮ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি রাজীব আর সোনিয়ার চার হাত এক হয়ে গেল। তবে সোনিয়ার বাবা নারাজ ছিলেন। বিয়েতে আসেননি।

প্রধানমন্ত্রী আবাসে একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে রাজীব আর সোনিয়ার বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। জরি বসানো শাড়িতে সোনিয়াকে ভারী সুন্দর দেখাচ্ছিল সেদিন। বেদের মন্ত্রে আবহ হয়ে উঠেছিল পবিত্র। সানাই বাজছিল। মালা বদল হয়ে গেল। ফিরোজ এবং ইন্দিরার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গই উপস্থিত ছিলেন। সোনিয়ার কাকা অ্যাঞ্জেলো প্রেদেবোন কন্যাদান করেছিলেন।

ইন্দিরা ততদিনে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছিলেন। বাসস্থান তখন ১, সফদরজং রোডে। আর ১, আকবর রোডের বাড়িতে অফিস। সেইসময়ে আজকের দিনের মতো অমন মারাত্মক কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকত না। দরজা টরজা খোলাই থাকত দিনের বেলায়। লনে অনেক চেনাজানা মানুষ গিয়ে বসে থাকতেন। খুসবন্ত সিং, পুপুল জয়করদের মুখ হামেশাই দেখা যেত।

ইতালিজাত আরেকটা ব্যাপারও তখন ভারতে খুব চলছিল। ল্যাম্বুেটা স্কুটার। পরে ইতালি এই স্কুটার বানানো বন্ধ করে দিলে পরে আবার সুইৎজারল্যান্ড বানাতে শুরু করে দেয়। তবে ল্যাম্ব্রেটা ভারতের জন্য আনফিট। হঠাৎ হঠাৎ খারাপ হয়ে যেত। রাজীবের কাছে একটা ল্যাম্ব্রেটা ছিল। সোনিয়াকে পেছনের সিটে বসিয়ে চলো দিল্লি, মানে দিল্লি ঘুরতে চলো। ইন্ডিয়া গেটের দিকে প্রায়ই যেতেন। সঞ্জয় যেতেন। অমিতাভও যেতেন। এমনও বহুবার হয়েছে স্কুটার বন্ধ হয়ে গেছে বা স্টার্ট নিচ্ছে না, তখন তাঁরা ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ঠেলে আবার চালু করতেন।

যাই হোক, মোটামুটি এক ছাদের নীচে ছোট পরিবার-সুখী পরিবার কনসেপ্টে ভালোই চলছিল। সোনিয়া মিতবাক। সুগৃহিণী। রান্নাবান্না করতে খুব ভালোবাসতেন। সারাদিন রান্নাঘরে ব্যস্ত। দুই সন্তানের জননী তখন। তাদের দেখাশোনা করতে দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কেটে যেত। ইন্দিরা গান্ধীর শাড়ি কিন্তু সোনিয়া নিজে পছন্দ করে কিনতেন। হাই প্রোফাইল ফ্যামিলির বউমা হলে কী হবে, সেলিব্রিটি ব্যাপারটা তখনো আসেনি। সোনিয়া নিজে দিল্লির খান মার্কেট থেকে সবজি কিনে আনতেন। রাজীব তখন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সে কো-পাইলট হিসেবে চাকরি করছেন। সপ্তাহে বেশ ক’দিন এমনিতেই গায়েব থাকতে হতো। সোনিয়ার আশেপাশে ভারতের রাজনীতি চলাফেরা করলেও সোনিয়া রাজনীতির কিছুই বুঝতেন না। অবশ্য ভারতের রাজনীতি কে-ই বা কবে সহজে বুঝেছে? সোনিয়া তখন আবাসে আগত নেতামন্ত্রীদের খাবার দাবার তৈরি করতেই ব্যস্ত থাকতেন। শুধু কাজ কাজ আর কাজ। কথা বলার মতও সঙ্গীও ছিল না সোনিয়ার। ঝগড়া করার জন্য তো কেউ ছিলই না।

আর তার পরেই এল দেবর-বধূ, তন্বী, গৌরী, দিব্য সুন্দরী, নাজুক ফুলের মতো একটি মডেলকন্যা— মানেকা আনন্দ। ভারতবাসী এঁকে চেনে সঞ্জয় গান্ধীর বউ, মানেকা গান্ধী রূপে।

.

সোনিয়া গান্ধী আর মানেকা গান্ধীর মধ্যে বিরাট ফারাক ছিল। রাজীব আর সোনিয়ার সাক্ষাৎ হয়েছিল একটি রেস্তোরাঁয়। সেখানে সোনিয়া কাজ করতেন। আর মানেকা? মানেকাকে সঞ্জয় প্রথমবার দেখেছিলেন বোম্বে ডাইং-এর একটি বিজ্ঞাপনে। সোনিয়া ইতালির কন্যে। মানেকা দিল্লির পঞ্জাবি। সোনিয়া চুপচাপ। মানেকা প্রাণোচ্ছ্বল। সোনিয়া সুন্দরী, আর মানেকা বিউটি কুইন। সোনিয়ার দৌড় দিল্লির খান মার্কেটের সব্জির দোকান। মানেকা তখন গ্ল্যামার বৃত্তের বিন্দুতে। সোনিয়া ভারতীয় ভাষা শিখতে নাজেহাল, একটা পূর্ণ বাক্য বলতেই কালঘাম ছুটে যায় তাঁর; আর মানেকার নাকমুখ দিয়ে ছুটছে তুখোড় ইংরেজির তুবড়ি। সোনিয়া একলা, ঘরোয়া, রান্নাঘরেই দিনের বেশিরভাগটা কাটে, আর মানেকা মানে গ্রেটার কৈলাশের খোলা আবহের পার্টি-গার্ল। সোনিয়া— এক সৌম্য অনুশাসিত পাইলটের স্ত্রী, আর মানেকা— এক উড়নচণ্ডীর প্রিয়তমা। মানেকা যেখানে ভারতীয় হয়েও প্রগতিশীল ফিরিঙ্গি মেজাজের, সেখানে সোনিয়া বিদেশিনী হয়েও ভারতীয় পরিবারের আদর্শ গৃহিণী।

এত ফারাক, দ্বন্দ্ব ছিল না?

ছিল, ভাই। আলবাত ছিল!

সঞ্জয় ছিলেন দুন স্কুলের ড্রপ আউট। ইংল্যান্ডে যে কোর্স করতে গিয়েছিলেন, সেটাও পূর্ণ করতে পারেননি। সঞ্জয়ের এক বন্ধু বীনু কপূরের লতায়পাতায় বোন ছিলেন মানেকা। মানেকাও ড্রপ আউট। মডেলিং করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। বীনুর বাড়িতে এক ককটেল পার্টিতে দুজনের মোলাকাত হয়। চোরি চোরি জব নজরেঁ মিলি তো মোলাকাত বঢ়নে লগি। এসব সেই ‘৭৩ সালের কথা। তখন মানেকা সপ্তদশী। মানেকার বাড়িতে জানতে পারল যে মেয়ের প্রেম চলছে। মানেকার শিখ অভিভাবক মানেকাকে পাঠিয়ে দিলেন ভোপালে। তাঁরা চাইছিলেন না বিয়েটা হোক। কিন্তু যখন মিয়াঁ বিবি রাজি, তখন আর কাজী কী করবে? আঠেরোতে পা-দিয়েই মানেকা দিল্লি ফিরে এলে পরে শুরু হয়ে গেল বিয়ের তোড়জোড়।

প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বরযাত্রী যাবে সেই গ্রেটার কৈলাশ? না, ওসব হবে না। তাহলে উপায়?

হাফ কিলোমিটার দূরে মহম্মদ ইউনুসের বাংলো। হরিবংশ রাই বচ্চনের বাংলোর ঠিক পাশেই। সেখানেই মণ্ডপ তৈরি হয়ে গেল। সোনিয়ার জন্য যেমন অমিতাভের বাড়িটা বাপের বাড়ি হয়ে উঠেছিল, তেমনি মানেকার বাপের বাড়ি হয়ে গেল ইউনুস সাহেবের বাংলো। ‘৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিয়ে মিটে গেল।

সঞ্জয় মানেকার থেকে বছর দশেকের বড় ছিলেন। আর মানেকা শিক্ষায় দীক্ষায় সঞ্জয়ের থেকে এগিয়ে। বিয়ের পর একেবারে আদর্শ ভারতীয় পরিবারের আবহে লালিত হচ্ছিল মানেকার বধূ-জীবন। বাড়ির বড় বউমার হাতে হেঁশেল, সংসার; অবশ্য এসব নিয়ে মানেকা মোটেই চিন্তার কোনো কারণ দেখেননি। রান্নাবান্না করাতে তাঁর আগ্রহ কোনোকালেই ছিল না। অল্প বয়েসের ওসব কারই বা ভালো লাগে?

তবে মানেকার আবার অন্য একটা বিষয়ে বেশ ইন্টারেস্ট ছিল। পলিটিক্সে। ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণের জন্য মানেকা ইংরেজির ভালো শব্দ বেছে দিতেন, উদ্ধৃতি খুঁজতেন। সঞ্জয়ের মতোই রাজনীতিতে বেশ দখল রাখতে আরম্ভ করেছিলেন মানেকাও। এরপরই তো এমারজেন্সি এল, তখন সঞ্জয় গান্ধীর হুকুমেই তো দেশ চলছিল।

রাজীব আর সোনিয়া তখন নেপথ্যে। সাইড ক্যারেক্টার। ‘৭৫ সালে ইন্দিরা প্রথমবার রাজীব আর সোনিয়াকে মঞ্চে তোলেন। বাবা-মায়ের ছায়ায় তখন স্টেজে উঠেছিল ছোট্ট রাহুল আর প্রিয়াংকাও। তবে জোর করেই তোলা হয়েছিল রাজীবদের। কারণ লুটিয়েন্স দিল্লির সাংবাদিক মহলে জানে যে রাজীব গান্ধী এমারজেন্সির পক্ষে ছিলেন না। আর ইন্দিরার চাল ছিল অন্য লেভেলের। জয়প্রকাশ নারায়ণের আন্দোলনের বিরুদ্ধে নিজের পরিবারকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে আমাদের ফ্যামিলি দেশের জন্য পূর্ণ রূপে সমর্পিত- প্রাণ। রাজীব আর সোনিয়াকে যতই মঞ্চে তোলা হোক না কেন, রাজনৈতিক লাগাম কিন্তু তখনো সঞ্জয় আর মানেকার হাতেই ছিল। শুধু রাজনৈতিক বললে ভুল বলা হবে, ব্যবসায়িক দিকটাও। মানেকার ফ্যামিলি ছিল বিজনেস-মাইন্ডেড। রাজনীতিক আর ব্যবসায়ী পাশাপাশি এসে গেলে অনেক কিছু ঘটতে থাকে। মানেকার মা অমতেশ্বর আনন্দ ইন্দিরা গান্ধীর খাস দোস্ত বনে গিয়েছিলেন অল্প সময়ের মধ্যেই।

এমারজেন্সি এল। এমারজেন্সি গেল। ইন্দিরা গান্ধী ‘৭৭ সালের ভোটে হারলেন। গোহারাই হারলেন। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে তাঁকে বেরিয়ে যেতে হল। জানি না আজকের প্রজন্ম ইন্দিরা গান্ধীকে কোন চোখে দেখে? কিন্তু সেই সময়ের মানুষ কল্পনাও করতে পারবেন না যে ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর থাকার জন্য নিজস্ব কোনো বাসস্থান নেই। তিন মূর্তি ভবনে ততদিনে সংগ্রহালয় তৈরি করা হয়েছে। তাহলে থাকবে কোথায় ইন্দিরার পরিবার? যে বাড়িতে সঞ্জয়ের বরযাত্রীরা গিয়েছিলেন। মহম্মদ ইউনুসের বাংলোয়। অমিতাভের বাংলোর ঠিক পাশে।

পরিবারের বাইরে যখন সমীকরণ বদলায়, ভেতরেও তার ছাপ পড়ে। যৌথ পরিবারের যুগের লোকেরা জানেন, যখন পরিবারের আয় উপার্জনে রদবদল হয়, তখন পরিবারে ভাঙ্গন ধরে। কারো ভালো হয়, কারো মন্দ। ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবন তলানিতে এসে ঠেকেছিল। জনতা পার্টির পক্ষ থেকে হুজুগ উঠল ইন্দিরাকে দেশের প্রেসিডেন্ট বানিয়ে কিসসা খতম করা হোক। ইন্দিরা সেসব ধার মাড়ালেন না। লড়াই চালিয়ে আবার নিজের জয়ের ভূমি প্রস্তুত করলেন। জনতা পার্টি তখন তাসের ঘরের মতো ভাঙছে। সোনিয়া অজান্তেই জড়িয়ে গেলেন সঞ্জয়ের মারুতির জালে। ওদিকে নিয়তি বোধ হয় হাসছিল। সবার অজান্তে মানেকার এক বন্ধু তৈরি হচ্ছিল।  গ্বালিয়রের রাজ-নন্দিনী। নামটি তাঁহার বসুন্ধরা।

.

স্বাধীনতার পরে তিরিশ বছর… হ্যাঁ টানা তিরিশ বছর ধরে কংগ্রেস এই দেশে শাসন করেছে। তখন কংগ্রেস অজেয় ছিল। প্রাথমিক সতেরো বছর নেহরুজি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে যে দুনিয়ার বহুদেশে একনায়করা শাসন করলেও সেখানে তারা এধরণের দীর্ঘ শাসনকাল পায়নি। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে এত দীর্ঘ সময়কাল ধরে একটাই রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকবে, এবং সেখানে বিপক্ষ নামক কোনো বস্তু থাকবে না, এটা কি অষ্টম আশ্চর্য হতে পারে না? আর এতকিছুর পরে যদিওবা বিপক্ষ জন্ম নিল, সেও জগাখিচুড়ি মার্কা। সেই দল জিতল। সেই সরকার দুবছরও টিকল না। আবার এল কংগ্রেস। এবারে দশ বছরের জন্য সরকার গঠন করল। বিপক্ষ দাঁত ফোটাতে পারল না। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে যত বড় বড় বচন, কিন্তু ঠিক মতো হিসেব করতে বসলে দেখা যাবে যে এদেশের সংসদীয় রাজনীতিতে একটা মোটামুটি মানের বিপক্ষ দলের জন্ম নিতেই পঞ্চাশ-ষাট বছর সময় লেগে গেছে। বিপক্ষ ছাড়া কীসের গণতন্ত্র? কেমন গণতন্ত্র?

এমারজেন্সির পরে যখন শ্রীমতি গান্ধী দেশে ইলেকশন ঘোষণা করলেন, হারলেন এবং এদেশে জনতা পার্টির সরকার গঠন হল তা ভারতের গণতন্ত্রে বিপক্ষের অস্তিত্ব প্রমাণিত করল। সেটা অল্প কয়েক মাসের জন্য হলেও নগণ্য নয়। একটা বার্তা গেল কংগ্রেসের কর্মকর্তাদের কাছে, যে তারাই সবকিছু নয়। আবার বিরোধীরাও সন্দেশ পেল যে ক্ষমতায় আসার থেকেও বড় হল ক্ষমতাকে রক্ষা করা।

ভারতে জনতা পার্টির সরকার গঠন হওয়াটা একটা প্রতিশোধের খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমারজেন্সির সময়ে যে অত্যাচার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে হয়েছিল, তার হিসেব নিকেশ করার জন্য জনতা পার্টির সরকারের পক্ষ থেকে শাহ কমিশন বসানো হল। ইন্দিরা গান্ধীর নাম জড়াল, সঞ্জয় গান্ধীর নাম এল, বিদ্যাচরণ শুক্লার নাম উঠল। প্রতিশোধ মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারলেও সমৃদ্ধ করতে পারে না। জনতা পার্টির সরকার কোনও ক্রিয়েটিভিটি দেখাতেই পারল না।

১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে শ্রী মোরারজি দেশাই প্রধানমন্ত্রী রূপে শপথ নিলেন। এপ্রিল মাসে সঞ্জয় গান্ধীর মারুতি প্রোজেক্ট নিয়ে গুপ্তা এনকোয়ারি কমিশন বসল। মে মাসের অন্তিম সপ্তাহে গঠিত হল পূর্বে উল্লেখিত শাহ কমিশন। জুনে মানেকা গান্ধীর পিতা এক্স লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনন্দ নিজেকে নিজে গুলি মেরে আত্মহত্যা করলেন। তিনি আত্মহত্যা করার আগে নোটে কী লিখেছিলেন তা আগেই বলেছি। ইতিহাস এধরণের প্রতিশোধস্পৃহা এবং তার মুখে পড়ে জর্জরিত ব্যক্তিদের অবস্থা আগেও দেখেছে। হিটলার ভুল করে থাকুন বা ঠিক সেকথা বলতে যাব না। শুধু ইতিহাস ঘেঁটে বলি, ১৯৪৫ সালে যখন রেড আর্মি জার্মানিতে প্রবেশ করেছিল, তখন হিটলার, গোয়েবলস, হিমলার সমেত প্রায় একহাজার নাৎসি আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁদের মনে একটাই ভয় ছিল, কৃত কর্মের জন্য মোকদ্দমা ঠুকে দেওয়া হবে, বিচারের নামে প্রহসন চলবে, যাতনা দেওয়া হবে, যার থেকে মৃত্যু শ্রেয়। অতএব আত্মহত্যা।

একটি পলিটিক্যাল স্যাটায়ার মুভিকে নিয়ে এই এমারজেন্সি পিরিয়ডে বেশ হুজ্জতি হয়ে যায়। সিনেমাটার নাম ছিল ‘কিসসা কুর্সি কা’। সেখানে এমন কিছু দেখানো হয়েছিল, যার ফলে সঞ্জয় গান্ধী, রুখসানা সুলতান, কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারীর ইমেজ আহত হয়েছিল। সিনেমার রীল জ্বালিয়ে দেন সঞ্জয় গান্ধী। জনতা পার্টি এই ইস্যুতেই একটি কোর্ট কেসে সঞ্জয়কে তিহাড় জেলে পাঠায়। সেটা ১৯৭৮ সালের কথা।

১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে সঞ্জয় গান্ধীর বিশেষ সহযোগী তথা দিল্লির পূর্বতন উপরাজ্যপাল কৃশন চন্দ নিজের দক্ষিণ দিল্লির নিবাসস্থল থেকে একজন উকিল বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য বেরোন। তিনি বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করলেন না। আবার বাড়িতেও ফিরলেন না। বাড়ি থেকে দু কিলোমিটার দূরে একটি জায়গায় একটা কুয়োর মধ্যে তাঁর লাশ পাওয়া গেল। এর কিছুদিন আগেই এই ভদ্রলোককে শাহ কমিশনের সামনে হাজিরা দিতে হয়েছিল। তিনি সেখানে বলেছিলেন, সঞ্জয় গান্ধীর নির্দেশ এলে আমি কাউকে গ্রেফতার করার আদেশ দিতাম। আর এখন সবাই মিলে আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে।

ব্যাপারটা আত্মহত্যা বলেই জানা যায়। ভদ্রলোকের সুইসাইড নোটে লেখা ছিল –’জীনা জিল্লৎ সে হ্যাঁয়, তো মরনা উসসে অচ্ছা হ্যাঁয়।’ এটাই ছিল এমারজেন্সির পরে দেশের দ্বিতীয় সবথেকে হাই প্রোফাইল সুইসাইড।

১৯৭৮ সালেই মারুতি ঘোটালা নিয়ে গুপ্তা কমিশনের রিপোর্ট এসে গেল। কমিশনের মতে, সঞ্জয় গান্ধী ‘মারুতি টেকনিক্যাল সার্ভিসেজ’ নাম দিয়ে একটা জাল কোম্পানি তৈরি করেছিলেন। ওই কোম্পানি মারুতি লিমিটেডের থেকেই প্রতি মাসে বেতন নিত, গাড়ির খরচ নিত। দশ লক্ষ টাকা অগ্রিম নিয়েছিল। কিন্তু, একটাও গাড়ি বানায়নি।

আজব ব্যাপার ছিল এই পুরো ঘটনায় সঞ্জয় গান্ধীর পার্টনার হিসেবে সোনিয়া গান্ধীর নাম জড়াল। তিনিও নাকি মাস-মাইনে পেতেন। অথচ সোনিয়া গান্ধী নিজে বলেছেন যে তিনি এধরণের কোনো বেতনই কখনো পাননি। ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে এসবের অস্তিত্বও মেলেনি। কমিশন বলল, সোনিয়া একজন বিদেশিনী, তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমতি না-নিয়ে তিনি কোনো দেশীয় কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হতেও পারেন না।

.

সঞ্জয় গান্ধীকে যেমন জেলে যেতে হয়েছিল, তেমনই জেলযাত্রা জুটেছিল ইন্দিরা গান্ধীর কপালেও, আগেই বলেছি সে কথা। তখন ইন্দিরা গান্ধীর বাড়িতে বেশ টেনশন চলছে। প্রধানমন্ত্রীত্ব হারিয়ে বাসভবন খোওয়াতে হয়েছে। ছোট্ট বাড়ি। বহুদিনের পুরোনো খানসামা মারা গেছে, সোনিয়া নিজের হাতেই রান্না করছেন। এমনিও ইন্দিরা যার তার হাতে খেতেন না। রাজনৈতিক কারণেই বিশেষ ঘনিষ্ঠ মানুষদের বাদ দিলে বাকিদের হাতে খাওয়ার সময় তাঁর মনে সন্দেহ কাজ করত। অল্পেই বিরক্ত হয়ে যেতেন। খিটখিটে মেজাজ হয়ে থাকায় সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়াও হয়ে যেত। একদিন তো সামান্য একটা ডিমসেদ্ধ খেতে গিয়ে দেখলেন সেটা ঠিকঠাক সেদ্ধ হয়নি। তাই নিয়ে সঞ্জয় আর সোনিয়ার ওপরে বেশ রেগে গিয়েছিলেন। মানে চূড়ান্ত ডিপ্রেসড একটা দশা।

এহেন অবস্থায় মিসেস গান্ধীর মুখে হাসি ফোটালেন ছোট বউমা মানেকা। তখন মানেকা সবে একটা খবরের কাগজ বের করতে আরম্ভ করেছেন। নাম: ‘সূরিয়া’।

‘সূরিয়া’–মানে সূর্য। আর এই নতুন সূর্যের আলোতেই ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সেক্স স্ক্যান্ডাল সামনে এল। রাজনীতি। নীতির রাজা নাকি রাজার নীতি? যাই হোক না কেন, যখন তার ঘৃণ্যতম অবতার জন্ম নেয়, তখন আদর্শের চিতা জ্বলে।

স্বাধীন ভারতের যত দলিত নেতা এসেছেন, তাঁদের মধ্যে জগজীবন রাম ছিলেন অন্যতম হেভিওয়েট একজন। ইন্দিরা-সরকারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর ভূমিকা পালন করেছেন। এমারজেন্সির ঠিক পর পরই কংগ্রেস ছেড়ে জনতা পার্টিতে নাম লিখিয়েছেন। সেখানেও আবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সামলেছেন। এক অর্থে জগজীবন রাম ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বেইমানি করেছিলেন। আর ইন্দিরা গদ্দারকে শাস্তি দিতে ভুলতেন না। সাম দাম দণ্ড ভেদের শিক্ষা দিয়ে রাজনীতির রসাতলে নামিয়ে না- দেওয়া পর্যন্ত ইন্দিরা গান্ধীর শান্তি হতো না।

জগজীবন রামকে চেনাতে গেলে এখনকার মীরা কুমারের কথা তুলতে হয়। পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে, ভারতের লোকসভায় প্রথম মহিলা স্পীকার কে হয়েছিলেন। উত্তর হল শ্রীমতি মীরা কুমার। এই মীরা কুমারের পিতা ছিলেন জগজীবন রাম। জগজীবন রামের সুপুত্র ছিলেন সুরেশ রাম। তখন বয়েস চল্লিশ বছর। সুরেশ রাম আবার গয়ার বিধায়ক ছিলেন। পরে দিল্লি চলে যান। বাবার সঙ্গেই থাকতে শুরু করেন। খুব রেলায় থাকতেন। লাল বাতি লাগানো গাড়িতে চড়ে ঘুরতেন। বিবাহিত পুরুষ হলেও বাইরে একটু প্রেম পিরিতি করতে পিছপা হতেন না। সত্যবতী কলেজের এক সুন্দরীর প্রেমে পড়লেন। মেয়েটির নাম সুষমা চৌধুরী। বয়েস কুড়ি বছর। জাতে জাট। এই ঘটনাটার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়া এই কারণে দরকার যে ঠিক ওই সময়ে জনতা পার্টি ভাঙব ভাঙব করছে। দলিত নেতা জগজীবন রাম আর জাট নেতা চৌধুরী চরণ সিং-এর মধ্যে তখন প্রধানমন্ত্রীত্বের রেস চলছে।

বেশিরভাগ সূত্র থেকে জানা যায় যে চৌধুরী চরণ সিং এবং রাজ নারায়ণ মিলে এই যৌন কেলেঙ্কারিটাকে কাজে লাগানোর সবরকম সম্ভাব্য প্রয়াস করেছিলেন। বলা হয়, এঁরাই নাকি সুরেশ রাম আর সুষমা চৌধুরীর বিবাহ বহির্ভূত এই সম্পর্কটাকে সকলের সামনে তুলে ধরার জন্যে স্টিং অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেন। তখনকার দিনে ভিডিওগ্রাফি করাটা সহজ কাজ ছিল না, কিন্তু পোলারয়েড ক্যামেরা ছিল। সুরেশ আর সুষমার বেডরুম থেকে ছবি বেরিয়ে এল। যেভাবেই সেইসব ছবি বেরিয়ে আসুক না কেন, তা প্রতিপক্ষের লোকদের কাছে তখন গুপ্তধনের সামিল। তখন খবরের কাগজে বেরিয়েছিল চৌধুরী চরণ সিং-এর ঘনিষ্ঠ কে সি ত্যাগী একজন বন্ধুর সাহায্য নিয়ে সুরেশ রামের মার্সিডিজ গাড়ির মধ্যে থেকে ওই ছবিগুলোকে হাতিয়েছিলেন। কে সি ত্যাগী পরবর্তীকালে জনতাদল ইউনাইটেডে যোগ দেন।

আপত্তিকর অবস্থার ছবি রাজ নারায়ণের হাতে এসে গেল। তিনি হাফ সন্ন্যাসী টাইপের মানুষ। রামায়ণ পাঠ করতেন। সাংবাদিক আর চিত্র সাংবাদিকদের সামনে ছবি টবি তুলে ধরে একেবারে কাব্যি করার স্টাইলে কমেন্ট্রি করতে লাগলেন। মোরারজি দেশাই এসব দেখে ক্ষেপে গিয়ে বলেছিলেন— ‘এসব কী হচ্ছে? হটাও আমার সামনে থেকে…’

ছবিগুলো ঘুরেফিরে গিয়ে পড়ল খুসবন্ত সিং-এর হাতে। বুঝতেই পারছেন এহেন বস্তু তাঁর কাছে ট্রেজার ট্রোভ। খুসবন্ত দেখে মন্তব্য করেছিলেন— ‘কামসূত্রের চৌষট্টি কলার মধ্যে ন’টা এখানেই দেখতে পাচ্ছি।’

জগজীবন রাম প্রমাদ গণলেন। রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে এসব ছবি বাইরে এলে। তিনি খবর পাঠালেন। যদি ছবিগুলোকে না-ছাপা হয়, তাহলে তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে হাত মেলাবেন। ইন্দিরা ছুঁদে রাজনীতিকের মতো বলে দিলেন, আগে জনতা পার্টির হাত ছাড়ো, ইস্তফা দাও।

ন’টা ছবি ছিল। মানেকা গান্ধী ন’খানা ছবিই সূর্যা ম্যাগাজিনে ছাপিয়ে দিলেন। লাখ-লাখ কপি বিক্রি হল। দিল্লি স্টেশনে নাকি এক একটা ছবির কপি পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। লখনউ জুড়ে পোস্টার পড়ে গেল। জগজীবন রাম যে ভয়টা পাচ্ছিলেন সেটাই ঘটল। ওই ন’টা ছবি তাঁর পলিটিক্যাল কেরিয়ারের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ল। তবে শুধু ওঁর একার নয়। জনতা পার্টিরও।

মানেকা গান্ধী নিজের কাগজে হেডলাইনে লিখিয়েছিলেন— ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে কি তথ্য লিক হয়েছে? চিনের দূতাবাসে সেই তথ্য পাচার হয়ে গেছে?’ হতেই পারত। যার বাবা দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে তাঁর যাতায়াত অবাধ। হানি ট্র্যাপের কথা কেউ তুলতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন তুললেই হল না। যে যার মতো ডিফেন্ড করবেন তো বটেই। সুরেশ রামও করলেন। তিনি বললেন, আমাকে অপহরণ করে মাদক দিয়ে এসব ছবি তুলিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

ইন্দিরা গান্ধী বলুন বা মানেকা গান্ধী, সেদিন সুরেশ রামের সঙ্গে তাঁরা একটি মেয়ের নাম জড়িয়ে দিয়েছিলেন। সুরেশ রাম কিন্তু সেই মেয়ের কপাল থেকে কলঙ্ক মোছার জন্য পদক্ষেপ নিলেন। নিজের পিতার অমতে তিনি সুষমাকে বিয়ে করলেন। এই ঘটনার ছ’বছরের মধ্যে সুরেশ রামের মৃত্যু হয়। সুষমা হারিয়ে যান অনামী অন্ধকারে।

তবে ওই যে একটা প্রবাদ আছে, পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। কর্ম ফিরে ফিরে আসে। মানেকা গান্ধী সেদিন এই মোহমায়ার খেলায় জিতেছিলেন বটে, তবে অদৃষ্ট হাসছিল। তখন কে আর জানত যে, এর অনেক বছর পরে নিয়তি মানেকাকে কর্মফল মনে করিয়ে দেবে। মানেকা-পুত্র বরুণ গান্ধীর নাম সেক্স স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে যাবে। আর সেখানেও বলা হবে, ডিফেন্স সিক্রেট লিক হয়ে যায়নি তো?

.

জনতা পার্টির সরকার পড়ে গেল। চৌধুরী চরণ সিং আর মোরারজি দেশাইয়ের মধ্যেকার ঠাণ্ডা লড়াইতে শেষমেশ ইন্দিরা গান্ধীর সমর্থন নিয়ে চরণ সিং প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, কিন্তু যে ইন্দুজির বিরুদ্ধে এত লড়াই, তিনি কি আর এই সরকার টিকিয়ে রাখতেন? ১৯৭৯ সালের আগস্ট মাসে জনতা পার্টির সরকার ভাঙল। ভোটের ঘোষণা হয়ে গেল ততদিনে। জনগণ বুঝে গেছে বংশগৌরব, কৌলীন্য ইত্যাদির মধ্যে আলাদা ধরণের কিছু একটা ব্যাপার নিশ্চয়ই রয়েছে। ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে ইন্দিরা কংগ্রেস বিপুল সিট নিয়ে জয় লাভ করল। সঞ্জয় গান্ধী অমেঠি থেকে প্রথমবার জিতলেন। ইন্দিরা গান্ধী দু জায়গা থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। রায়বরেলি আর মেডক। মেডক অন্ধ্রপ্রদেশের সিট ছিল। দুটো জায়গা থেকেই তিনি জিতলেন। পরে অবশ্য রায়বরেলি সিটটাকে তিনি নিজের আত্মীয় অরুণ নেহরুকে ছেড়ে দেন।

তখন সমস্ত দিক থেকেই হাওয়া শ্রীমতি গান্ধীর অনুকূলে বইছিল। মার্চ মাসের ১৩ তারিখে সঞ্জয় আর মানেকার পুত্র বরুণের জন্ম হল। ইন্দিরা বরুণকে খুব ভালোবাসতেন, মানতেন বরুণই তাঁর লাকি চার্ম। পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য হিসেবে অল্পদিনের মধ্যেই বরুণ সকলের প্রিয় হয়ে উঠছিল। গান্ধী পরিবার তদ্দিনে নিজেদের পুরোনো ঠিকানায় ফিরে এসেছিল— সফদর জং রোডের বাড়িতে।

ইন্দিরা গান্ধীর এই জয়ের পর কিন্তু সঞ্জয় গান্ধীর একটা আলাদা ইমেজ তৈরি হচ্ছিল। সকলে মানছিল সঞ্জয় গান্ধীর ক্যারিশমা আছে। পার্টির লোকজনের চোখে সম্মান বেড়েছিল। উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস শাখা থেকে দাবি করা হচ্ছিল তাঁকেই যেন মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয়। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর লক্ষ্য ছিল আরো বড় কিছু, অন্য কিছু। তিনি সঞ্জয়কে ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী রূপে দেখার ইচ্ছে পোষণ করছিলেন। নিজের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ছোট ছেলের হাতে দিয়ে যাওয়াই ছিল তাঁর এক এবং অদ্বিতীয় লক্ষ্য। অল্পকালের মধ্যেই সঞ্জয়কে কংগ্রেসের মহাসচিব পদে অভিষিক্ত করা হল। মেনকাও তখন রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। অ্যানিম্যাল রাইটস বা পশু-অধিকার নিয়ে তিনি বেশ ভালো কাজ করছিলেন। এই দিকটায় পরে আবার একটু আলো ফেলা যাবে, বন্ধুরা। বরুণ গান্ধীর সমস্ত দেখভাল তখন সোনিয়া গান্ধী নিজের হাতে করতেন।

রাজীব এবং সঞ্জয়, দুজনেরই বিমান নিয়ে বেশ উন্মাদনা ছিল। দুজনেই বিমান চালাতে জানতেন। রাজীব পাইলট রূপে কর্মরতও ছিলেন। তবে সঞ্জয়ের সঙ্গে তাঁর বিমান চালনার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য ছিল। রাজীব ধীরেসুস্থে প্রোটোকল মেনে প্লেন ওড়াতেন। আর ভাই সঞ্জয় ছিলেন রেকলেস পাইলট। থ্রিল চাইতেন। আকাশে কলাবাজি দেখিয়ে সঞ্জয় গান্ধী কিছু প্রাইজও পেয়েছিলেন। জনতা পার্টির সরকার আসার পর তাঁর লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। মা ইন্দিরার সরকার গঠন হতেই সঞ্জয়ের লাইসেন্সও ফেরত এসে গেল। সঞ্জয় আবার প্লেন ওড়াতে শুরু করলেন। ইন্দিরা একটা নতুন প্লেন কিনেছিলেন। ছোট। গতিময়। পিট টু-এ। প্লেনটা ১৯৮০ সালের জুন মাসে লাইসেন্স পায়। তখন রাজীব দেশে নেই। সপরিবারে গেছেন শ্বশুরবাড়ি। ২১শে জুন, শনিবার সঞ্জয় মানেকাকে সঙ্গে নিয়ে প্লেন ওড়ালেন। পাক্কা আধা ঘণ্টা। মানেকা গান্ধী সিমি গ্রেওয়ালকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এই পর্বের কথা বলেছেন। সেদিন সন্ধ্যায় প্লেনে চড়ার পর সঞ্জয়ের বিমান চালনা দেখে মানেকা এতটাই ভয় পেয়েছিলেন যে তিনি কাঁদতে শুরু করেন। বিপদ নিয়ে খেলার একটা অদ্ভুত নেশা সঞ্জয়ের মধ্যে কাজ করত। তিনি প্লেন নিয়ে নোজডাইভ করে মাটির দিকে নেমে আসতেন এবং তারপর প্লেনটাকে মাটির খুব কাছ থেকে আবার ওপরে তুলতেন। ওই মুহূর্তগুলোতে ভয়ে ভীত মানেকার দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল। বিমান থেকে নামার পর মানেকা কাঁদতে-কাঁদতে সোজা বাড়ি চলে যান। সেখানে গিয়ে শাশুড়িকে বলেন- ‘জীবনে তোমার কাছে কিচ্ছু চাইনি। আজ চাইছি যে তুমি সঞ্জয়কে বলো, ওই প্লেনটা যেন ও কখনও না ওড়ায়। অনয় যে কোনও প্লেন ওড়ায় ওড়াক, কিন্তু ওইটা নয়।’ ইন্দিরা সঞ্জয়ের দিকে দেখলেন। সেখানে ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারীও উপস্থিত ছিলেন। ইন্দিরা বলেন— ‘আমেরিকার জিনিসপত্র বিরাট আহামরি কিছু হয় না। ও যখন যেতে মানা করছে তো যেও না।’ সঞ্জয় ব্যাপারটাতে বেশ বিরক্তি বোধ করে শুধু একটা অভিব্যক্তিমূলক শব্দ করেন— ‘ওহো!’ মানেকা বুঝতে পারছিলেন যে তাঁর কথা সঞ্জয় শুনবেন না। তিনি তখন শঙ্কিত অবস্থায় ইন্দিরার পেছনে দাঁড়িয়ে। আস্তে-আস্তে বলে চলেছেন- ‘প্লিজ মা!’ আর তখনই ঘরে ঢুকলেন ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিগত সচিব আর কে ধাওয়ান। ধাওয়ান ঘরে ঢুকতে-না-ঢুকতেই বুঝে গেলেন কী নিয়ে কথা চলছে। তিনি বললেন— ‘ইয়ে তো মর্দো কা জাহাজ হ্যাঁয়। সিরফ মর্দ হি ইসপে চঢ় সকতে হ্যাঁয়। মানেকাজি অ্যায়সি বোল রহি হ্যাঁয় কিঁউ কি উয়ো অওরত হ্যাঁয়। এরপর ‘মর্দো কা জাহাজ’ নিয়ে তিনি কিছুক্ষণ বলতেই থাকেন। ইন্দিরা তখন আবার বলেন— ‘সঞ্জয়, ইজ ইট সেফ?’ সঞ্জয় কোনও উত্তর দেওয়ার আগেই মানেকা বলে ওঠেন— ‘মা, ইটজ আ হরিবল প্লেন, বিলিভ মি ইটজ আ হরিবল প্লেন!’ সঞ্জয় তখন নিজের মায়ের উদ্দেশ্যে বলেন— ‘দু-তিনদিনে সব ঠিক হয়ে যাবে, মা। ওর অভ্যেস হয়ে গেলেই ভয় কেটে যাবে।’ মানেকা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও সফল হলেন না। হবেন কী করে? নিয়তি কাউকে বাধ্য করলে তার গতি রোধ করে এমন সাধ্যি কার আছে?

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন