অভীক মুখোপাধ্যায়
২৩শে জুন সক্কাল সক্কাল সঞ্জয় গান্ধী ফ্লাইং ক্লাবে আবার ওই প্লেনটাকে নিয়েই উড়বেন বলে বেরোচ্ছিলেন। বেরোনোর সময় অবশ্য ইন্দিরা এবং মানেকা দুজনেই সঞ্জয়কে বাধা দেন। সঞ্জয় একরোখা প্রকৃতির ছিলেন। কারো কথা শুনলেন না। একটা ম্যাটাডোর ছিল সঞ্জয়ের। সেটা চালিয়ে সোজা চলে যান ফ্লাইং ক্লাবের ইন্সট্রাক্টরের বাড়ি। ফ্লাইং ক্লাবের ইন্সট্রাক্টর তখন সুভাষ সাক্সেনা।
সুভাষ সঞ্জয়কে বলেছিলেন, ‘আজ আমি প্লেন ওড়াব না।’
‘ঠিক আছে, চিন্তা নেই। তুমি শুধু পাশে বসে থেকো,’ সঞ্জয় সুভাষকে সঙ্গে চাইছিলেন।
এরপর সুভাষ ফ্লাইং ক্লাবে গিয়ে চায়ের কাপটি হাতে নিয়ে চুমুক দিতে যাবেন কি এমন সময় একজন চাপরাশি হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল, ‘সাহাব জলদি বুলা রহে হ্যাঁয়।’
‘সাহাব’ মানে সঞ্জয় গান্ধী। তিনি ততক্ষণে ওই টু-সিটার প্লেনটার পেছনের সিটে গিয়ে বসেছেন। পরনে চিরপরিচিত কুর্তা-পায়জামা। পায়ে কোলাপুরী চপ্পল। ইচ্ছে না-থাকলেও সেদিন সুভাষকে প্লেনের সামনের সিটে গিয়ে বসতে হয়েছিল। রাজীব নিজে একজন লাইসেন্সড পাইলট ছিলেন। নিজের শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতার নিরিখে ছোট ভাই সঞ্জয়কে বার বার বলেছিলেন যে, যখনই প্লেন ওড়াবে, তখন অবশ্যই ভালো জুতো পরবে। সঞ্জয় এসব ব্যাপারকে গুরুত্ব দিতেন না। ওইদিনও দেননি।
সকাল ৭:৫৮ -তে প্লেন টেক অফ করল। ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ৫,০০০ ফুট উচ্চতার নীচে যেন ফ্লাই না করা হয় এমন একটা বিধিনিষেধ খুব কঠোর ভাবে আরোপিত ছিল। কিন্তু বিমানচালকের নাম যখন সঞ্জয় গান্ধী, তখন অনিয়মটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়াবে একথা বলাই বাহুল্য। সঞ্জয় বিমান নিয়ে শূন্যে রীতিমতো থ্রিলিং সব খেলা দেখাতে ভালোবাসতেন। সঞ্জয়ের শেষ ফ্লাইটটাকে যে চাপরাশি দেখছিলেন, তিনি জানান যে প্লেনটাকে দিয়ে সঞ্জয় তিনটে অসাধারণ লুপ সৃষ্টি করেন এবং চতুর্থ বার লুপ বানাতে গিয়ে প্লেনটা সেই যে নেমে আসে, তাকে আর টেনে তুলতে পারেননি। জনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যেই বিমানটি ভেঙে পড়ে। ক্র্যাশ পয়েন্ট ছিল হোটেল অশোকার ঠিক পেছনদিকটাতেই। ওই চাপরাশি সঙ্গে সঙ্গে একটি সাইকেলে চেপে দুর্ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দিয়েছিলেন।
ভদ্রলোক দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন প্লেনটা গাছের ওপরে পড়ে ঝুলে রয়েছে। সঞ্জয় গান্ধী বিমান থেকে ছিটকে বাইরে গিয়ে পড়েছিলেন। সুভাষ সাক্সেনার পা প্লেনে আটকে দেহটা ঝুলছে, মাথা নীচের দিকে। দুজনেই অসম্ভব রকমের আহত হলেও সম্ভবত তখনো দেহে প্রাণ ছিল।
৮:২০ নাগাদ ইন্দিরা গান্ধীকে খবর দেওয়া হয়। তিনি তৎক্ষণাৎ দৌড়ে যান। মেডিক্যাল টিম ততক্ষণে দুজনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করার কাজে লেগে পড়েছিল। দেহ বলা ভুল হবে, দেহাংশ বলা উচিত। কারণ শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এবং দুজনেই ততক্ষণে মারা গেছেন। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে ডাক্তার ইন্দিরা এবং মানেকা দুজনকেই শবদেহ দেখাতে রাজী হননি। প্রথমে সঞ্জয় গান্ধীর দেহাংশ দুর্ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করে সেলাই দিয়ে জোড়া হয়, তারপর দুপুরে তা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পাঠানো হয়েছিল।
আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কেউ বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, তবে ইন্দিরা গান্ধী কিন্তু অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ মহিলা ছিলেন। তিনি জ্যোতিষীর কথাকে গুরুত্ব দিতেন। সঞ্জয় গান্ধীর দুর্ঘটনায় পড়া এবং তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে বলতে গিয়ে শ্রীমতি মানেকা গান্ধী একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে সম্ভবত কোনও জ্যোতিষী জানিয়েছিলেন যে বায়ুতে সঞ্জয়ের কোনও বিপদ ঘটতে পারে। এবং তারপর থেকেই তিনি সঞ্জয়ের জন্য প্রত্যেক মঙ্গলবার পবনপুত্র হনুমানজির (বজরংবলি) নামে উপোস করতে শুরু করেন। সঞ্জয়ের মৃত্যু হয়েছিল সোমবার। তার পরদিন মঙ্গলবার মানেকা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘মা, আপনি আজ উপোস করবেন না?’ ইন্দিরা উত্তর দিয়েছিলেন— ‘তার আর কোনও প্রয়োজন নেই।’
যখন সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যু ঘটে, তখন রাজীব সপরিবারে ইতালি গিয়েছিলেন। তিনি তড়িঘড়ি দেশে ফেরেন। সঞ্জয়ের মুখাগ্নি তিনিই করেছিলেন। পণ্ডিত নেহরুজির সমাধির পাশে সঞ্জয় গান্ধীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। হাজার-হাজার সমর্থক সঞ্জয়ের সমর্থনে ভিড় করেছিলেন সেদিন। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে স্লোগান উঠছিল— ‘জব তক সুরজ চান্দ রহেগা, সঞ্জয় তেরা নাম রহেগা।’
সঞ্জয় গান্ধী চলে গেলেন। ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক ওয়ারিশ চলে গেল। তাহলে? এবার কে? কংগ্রেস গান্ধী-পরিবারের বাইরে কাউকে নিয়ে ভাবার ক্ষমতা এই সময় থেকেই হারিয়ে ফেলেছিল। তাহলে কি রাজীব?
রাজীব রাজনীতিতে আগ্রহী ছিলেন না। তাঁকে পলিটিক্যাল প্রশ্ন করা হলে তিনি বলতেন— ‘আস্ক মাই মম!’ খবরের কাগজে তা শুনে হেডলাইন ছাপা হতো— মাম্মি সে পুছো। আবার ইন্দিরাও ব্যাটন ট্রান্সফার করার জন্য উত্তরাধিকারী বানাতে চাইছিলেন রাজীবকেই। তিনি নিজের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের রাজীবকে সম্মত করানোর কাজে নিয়োজিত করে দিলেন। নটবর সিং এই ব্যাপারটায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন।
রাজীবের ওপরে চাপ বাড়ানো হচ্ছিল। রাজীব তখন বললেন, ‘আমি কিন্তু সঞ্জয় নই, আর সঞ্জয় হতেও পারব না। আমি একজন সাধারণ পাইলট। আমার বেতনই আমার উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম।
তবে শেষমেশ রাজীবকে রাজী করানো গেল। তিনি পাইলটের চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেন। ১৯৮১ সালের মে মাসে রাজীব কংগ্রেস পার্টির সদস্যতা পদ গ্রহণ করলেন। কিন্তু দলের অনেক তরুণ সদস্যদের চোখে রাজীব কিছুতেই সঞ্জয়ের জায়গা নিতে পারছিলেন না। তাঁদের মনে হতো সঞ্জয়ের বিকল্প একমাত্র মেনকাই হতে পারেন। অবশ্য এই ধারণাতে যে বিরাট ভুল কিছু ছিল তা-ও বলা চলে না। মানেকার বয়েস মাত্র ২৪ বছর হলেও তিনি কিন্তু রাজনীতির গণিতটা তখন রাজীবের থেকে ভালোই বুঝতেন। অভিজ্ঞতা রাজনীতির সবথেকে বড় অস্ত্র। মানেকার তৃণীরে অভিজ্ঞতার তির ছিল।
২৩শে জুন, ১৯৮০ সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যু হয়। সঞ্জয় জীবিত থাকলে ভারতের রাজনীতি হয়তো অন্য খাতে বইত। অন্যপ্রকার হতো সমস্ত সমীকরণ। কিন্তু এসবই ‘হয়তো’র বন্ধনীতে ভরে দিতে হবে। ফুরফুরে সমীরণ বয়েছে অন্যভাবে। ফুল ফুটেছে বাগানে। নতুন ফুল। নতুন গন্ধে মাতোয়ারা হয়েছে দেশ এবং দেশবাসী।
ঘটনা-পরম্পরার বিচার করতে হলে আমাদের একটু পিছিয়ে যেতে হবে, সুধী পাঠক। খুব বেশি নয়। আমরা ১৯৮০ সালের জুন মাসে ছিলাম। চলে যাব ১৯৮০’রই এপ্রিলে। জনতা পার্টির খিচুড়ি সরকারের অন্যতম প্রধান দল জনসঙ্ঘের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ থেকে আনুষ্ঠানিক দূরত্ব স্বীকার করে নিচ্ছেন। দুই উদীয়মান রাজনীতিক— লালকৃষ্ণ আডবানি এবং অটলবিহারী বাজপেয়ী স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দিকে পা রাখছেন।
আডবানি এবং বাজপেয়ী। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন বন্ধন বিরল। নিজেদের মধ্যে শত-শত ঘাত-প্রতিঘাত হয়েছে, তবুও অটুট সম্পর্ক। ভারতবাসী যে রাজনৈতিক বাজপেয়ীজিকে দেখেছে, সেই বাজপেয়ীজি কূটনীতিতে প্রাজ্ঞ, জিহ্বায় সরস্বতীর ধারক ও বাহক এবং সোশ্যালিস্ট চিন্তাধারায় সমৃদ্ধ। বুঝে পা-ফেলাতে অভ্যস্ত অটলবিহারী সর্বদলের কাছেই সমান ভাবে গ্রহণযোগ্য ছিলেন।
আর আডবানি? তাঁর মহিমা?
ধীরে ধীরে উন্মোচিত হবে তিনি বৈপ্লবিক। তিনি ধর্মের ধ্বজাবাহক। তিনি রামমন্দিরের অগ্রদূত।
প্রথমজনের ছবি ঔদার্যের। দ্বিতীয় পুরুষের ইমেজ অর্থোডক্স। কিন্তু যদি এই দুজনের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, তাহলে অবাক হতে হবে। অতীত বলছে, দুজনে ঠিক এর বিপরীত ছিলেন।
.
সঞ্জয় চলে যাওয়ার পরে সবকিছু বদলে যাচ্ছিল। কংগ্রেস পার্টি পালটাচ্ছিল। পরিবারে রদবদল আসছিল। মানেকা গান্ধীর তখন কতই বা বয়েস— তেইশ কি চব্বিশ। বিধবা নারী। তাও আবার ভারতীয় বিধবা, যার দিকে সারা দেশ তাকিয়ে রয়েছে। এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করা, সার্বজনীন পার্টিতে অংশ নেওয়া এসব সম্ভব ছিল না। তবে কেউ কেউ বলেছেন যে মানেকা পার্টি অ্যাটেন্ড করতেন, সঞ্জয়ের মৃত্যুর পরেও। বাড়িতে সহানুভূতির পরিবেশ যে ছিল না তা নয়, তবুও একাকীত্বে ভুগতে আরম্ভ করেছিলেন সঞ্জয়ের প্রিয়তমা। প্রিয় ছেলে সঞ্জয় চলে যাওয়ার শোকটা ইন্দিরা গান্ধীও ভুলতে পারছিলেন না। অল্পেতেই রেগে উঠতেন, তিরিক্ষি মেজাজ। মানেকার ওপরে ঝাল ঝাড়তেন।
ভবিষ্যতের চিন্তা চলছিল। শুধু কংগ্রেসের মধ্যেই নয়, চলছিল গান্ধী- পরিবারের অভ্যন্তরেও। আর মানেকার মা অমতেশ্বর আনন্দ মানেকার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সামনে দুটো শর্ত রাখলেন—
১. মানেকাকে যুব কংগ্রেসের অধ্যক্ষ করে দেওয়া হোক।
২. অমেঠির সীট যেন ভবিষ্যতে মেনকাই পায়।
দ্বিতীয় শর্তটা তৎক্ষণাৎ পূরণ করা এমনিতেও সম্ভব ছিল না। লোকসভার ভোটে দাঁড়ানোর জন্য ন্যূনতম বয়ঃসীমা যেহেতু পঁচিশ বছর ছিল, তাই মানেকার পক্ষে অমেঠি কেন অন্য কোনও লোকসভা সীটেও দাঁড়ানো যেত না। ইন্দিরা রাজীবকে রাজনীতিতে চাইছিলেন। অমেঠি থেকে ভোটে দাঁড় করানোর অভীপ্সা ছিল। ওদিকে সোনিয়া এবং মানেকার মধ্যে দূরত্ব বাড়ছিল। মানেকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে সোনিয়া পছন্দ করছিলেন না।
ইন্দিরা গান্ধির সামনে তখন দুটো বিকল্প উঠে আসছিল। একটাকে পছন্দ করলে অন্যটাকে দূরে সরিয়ে দিতে হচ্ছিল। দুটো অপশনকেই একসঙ্গে বেছে নিলে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে আরম্ভ হয়ে যেত পাওয়ার গেম। কংগ্রেস ভেঙে যেত। ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ-বৃত্ত যেমন পুপুল জয়কর, আর কে ধাওয়ান, ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারী, খুশবন্ত সিং প্রমুখরা সঞ্জয়ের উত্তরসূরী কে হবে তা নিয়ে ইন্দিরাকে মন্ত্রণা দিয়ে চলেছিলেন।
ভারতের রাজনীতির এক অদ্ভুত মায়া আছে। যে যখন উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে চেয়েছে, তখনই তাকে পাওয়ার পয়েন্ট থেকে সরে যেতে হয়েছে। মানেকার মধ্যেও উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল। ভারতীয় রাজনীতির ট্র্যাডিশন মেনে ইন্দিরা তাই প্রমাদ গণলেন। মানেকার মায়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ইন্দিরাকে ভীত করে তোলার জন্য যথেষ্ট ছিল। তিনি তাঁকে নিজের বাড়িতে আসতে মানাই করে দিলেন। মানেকা নিজের বাপের বাড়িতে গিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করে আসতেন।
রাজীবকে রাজনীতির ব্ল্যাক করিডরে পা রাখতেই হল। সিদ্ধান্ত হল, অমেঠিতে দাঁড়াবেন রাজীব। অমেঠির রাজকুমার সঞ্জয় সিং রাজীবের পাশে- পাশে থাকলেন। রাজীব তখন নভিশ। সাংবাদিকরা খিল্লি করছিল, মজা নিচ্ছিল। রাজনীতিতে প্রায় জ্ঞানশূন্য রাজীবকে ঘিরে ফেলছিল মিডিয়া। রাজীবকে প্রশ্ন করলে রাজীব একইরকমের উত্তর দিতেন— ‘ম্যায় আপকো কেয়া বতাউঁ?’ একবার তো একটা নয়, দুটো নয় পরপর পনেরোটা প্রশ্নের এই একই উত্তর দিয়েছিলেন রাজীব।
একজন সাংবাদিক সবশেষে প্রশ্ন করলেন— ‘পঞ্জাবের ব্যাপারে আপনার কী অভিমত?’
‘ম্যায় আপকো কেয়া বতাউঁ?’ এই বাঁধাধরা উত্তর এল রাজীবের দিক থেকে।
সাংবাদিক বললেন— ‘কিঁউ কি ইয়ে রাষ্ট্রীয় মুদ্দা হ্যাঁয়।’
‘তো মন্মি সে পুছিয়ে… মেরা মতলব হ্যাঁয় প্রধানমন্ত্রীজি সে পুছিয়ে।’
পরেরদিন খবরের কাগজের শিরোনামে ছাপা হল— ‘মম্মি সে পুছিয়ে!’
এই শিরোনাম একটাই দিকে ইঙ্গিত করছিল— রাজীব গান্ধী রাজনীতি এবং দেশের ব্যাপারে কোনও জ্ঞানই রাখেন না। দলের পরিচালনা তাঁর দ্বারা সম্ভব ছিল না। রাজনীতির ময়দানে তিনি অজ্ঞ। কিন্তু জনতা কী বলছিল? অন্য কথা। অমেঠির জনগণ ততদিনে রাজীব গান্ধীর সাদাসিধে ভাবে বিভোর হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে জন এফে কেনেডি আর ববি কেনেডির কথা। জনকে লোকে খুব পছন্দ করতেন, কারণ তিনি সহজ ভাবে সব শ্রেণীর মানুষের সাথে মিশতেন। আর সঞ্জয় ঠিক ববি কেনেডির প্রতিরূপ। হুড়হুড় হুড় দাবাং দাবাং…
সঞ্জয় গান্ধীর থেকে রাজীব গান্ধী যে আলাদা, তা গ্রামের মানুষ বুঝে গিয়েছিল। ওই যে বললাম, সঞ্জয় দাবাং গোছের ছিলেন। যেখানে যেতেন, রোয়াব নিয়ে যেতেন। রাজীব গেলে চুপচাপ সকলের কথা শুনতেন। দুঃখ কষ্টের নিবারণ না-করতে পারলেও মানুষ একজন সমব্যথীকে পাচ্ছিল। রাজীব গান্ধী কখন যে গ্রামবাসীদের রাজীব ভাইয়া হয়ে উঠেছিলেন তা তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি। একবার রাজীব যখন অমেঠিতেই ছিলেন, তখন সেখানকার কিছু ঝুপড়িতে আগুন লেগে যায়। সেদিন রাজীবের লখনউ ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু অমন পরিস্থিতিতে তিনি নিজের শিডিউল ক্যান্সেল করে দেন। গাড়ি চালিয়ে সোজা চলে যান ঘটনাস্থলে। প্রত্যেকটা বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন। গরিব মানুষগুলো নিজেদের কাঁধে প্রধানমন্ত্রীর ছেলের হাতের পরশ পেয়ে নিজেদের ধন্য বোধ করল, সাহস পেল। সঞ্জয় গান্ধী ভোটে জিতেছেন, কিন্তু মন জিততে পারেননি এভাবে। ওই গরিবগুরবো মানুষগুলোর কাঁধে কখনও কোনও নেতা হাত রাখেননি। এদিক থেকে দেখলে রাজীব গান্ধী এবং আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডির দারুণ মিল দেখা যায়। রাজীবের জন্য জয়ের পথ সুপ্রশস্ত হচ্ছিল। একতরফা জিত আসতে চলেছিল। যদিও তার পাশাপাশি এবং তার পরে এই প্রশ্নও উঠছিল যে, এদেশের যুবরাজ এই প্রথমবার মাটিতে পা-রেখে দারিদ্র্যের দেখছিলেন, কিন্তু দারিদ্র্যের ব্যাপারটা নিয়ে কী ভাবলেন, কী করলেন? অমেঠির জনতা সেদিনও যেমন গরিব ছিল, আজও তেমনই গরিব রয়ে গিয়েছে।
রাজীব নাহয় সংসদে চলে গেলেন। ওদিকে সংসারে কী হচ্ছিল? সেখানে কিন্তু সেই শাশুড়ি-বউমার গল্প। সঞ্জয়ের মৃত্যুর কয়েক মাস পর গান্ধী-পরিবার নাইরোবি ঘুরতে যায়। রাজীব যেহেতু সাংসদ, তাই তাঁর এবং তাঁর পুরো পরিবারের জন্য ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট ছিল। কিন্তু মানেকার সাধারণ পাসপোর্ট। মানেকাকে আম আদমির মতো লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল। মানেকা এটাকে ইস্যু বানিয়েছিলেন যে, রাহুল প্রিয়াঙ্কার অবধি ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট, আর তিনি ওদের আয়ার মতো সাধারণ পাসপোর্টে যাচ্ছেন! কিন্তু এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে যখন পিতা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট পাবেন, তখন তাঁর সন্তানেরাও তা পাবেই। মানেকা যেহেতু কোনও ধরনের সাংবিধানিক পদে ছিলেন না, তাই তিনি এর হকদার হতে পারতে না। রাজীব তো অমেঠির সাংসদ ছিলেন।
ইন্দিরা গান্ধী ব্যালান্স করতে চাইছিলেন। তিনি মানেকাকে নিজের ব্যক্তিগত সচিব বানিয়ে দিলেন। চব্বিশ বছরের একটি মেয়ের পক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাজ সামলানো এবং সবকিছু এত কাছ থেকে দেখার এই অভিনব সুযোগ কিন্তু কম কিছু ছিল না। এটা এক ধরণের অ্যাপ্রেন্টিসশিপ বলা চলে। রাজীব সাংসদ হয়েও রাজনৈতিক গতিবিধ থেকে দূরে থাকছিলেন। সোনিয়া আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন। নিজের স্বামীর থেকে নিজের জায়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি তাঁকে ভয় পেতে বাধ্য করছিল। সোনিয়া গান্ধী চাইছিলেন না মানেকা রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠুন। একটা শীতযুদ্ধ চলছিল। পরিবারের ভেতরকার দ্বন্দ্ব এবার বাইরে আসছিল। আমরা যেমন গলার শিরা ফুলিয়ে ঝগড়া করি, বড়-বড় লোকেদের ভালোবাসা বলুন বা ঝগড়া সবকিছু চিঠি লিখে। এভরিথিং শুড বি ডকুমেন্টেড। ইন্দিরা এবং সোনিয়ার মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছিল। কেন মানেকা নয়, কেন মানেকাকে নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রাথমিক ভাবে ইন্দিরা চাইছিলেন একাকীত্ব কাটানোর জন্যে মানেকাকে নিজের আপ্ত সহায়ক করে নেওয়া যাক, সঙ্গে থাকবে, লিখবে, ঘুরবে। কিন্তু সোনিয়া বাধ সাধছিলেন। সোনিয়ার পত্রাঘাতেই হোক কিংবা রাজীব ও পরিবারের কথা ভেবে ইন্দিরা নিজের ভাবনা তথা সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেন। তবে বলা হয়, সোনিয়া যেমন রাজনীতিতে মানেকার উন্নতি আটকাতে চেয়েছিলেন, তেমনই তিনি চাননি রাজীব রাজনীতির মধ্যে জড়াক। হিংস্র বাঘিনীর মতোই রাজীবকে আটকাতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, হয় রাজনীতি করবে, নয় সংসার। কিন্তু ওই যে… নিয়তি। কে তাকে কবে বদলাতে পেরেছে?
যাই হোক, মানেকাকে সিঙ্গেল আউট বা একঘরে করার কাজ আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল। কোনও বড় অনুষ্ঠানে গোটা পরিবার একসঙ্গে খেতে বসলেও মানেকাকে আলাদা করে খেতে বসিয়ে দেওয়া হতো। বলা হতো, রাজীব বিদেশী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসছেন, মানেকা যখন সচিব তো তিনি অফিসের লোকেদের সঙ্গেই বসুন।
তবে বরুণের সঙ্গে কোনও ধরণের বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হতো না। বরুণকে ইন্দিরা গান্ধী নিজের ঘরে শোওয়াতেন। কারণ বরুণের দেহে সঞ্জয়ের রক্ত ছিল। সব মিলিয়ে মানেকার মনে প্রভাব পড়ছিল। কিন্তু বড় ঘরের এসব কথা শেয়ার করাও যায় না। মানেকার জীবনে অর্থের অভাব ছিল না, কিন্তু তিনি কংগ্রেসের সুতো নিজের হাত থেকে ছাড়তে চাইছিলেন না। তাছাড়া বরুণের ভবিষ্যৎ নিয়েও মানেকা বিশেষ চিন্তিত ছিলেন। একটা কথা তাঁর মাথায় ঘুরছিল, তাঁর নিজের সঙ্গে যে ধরণের আচরণই করা হোক না কেন, ইন্দিরা গান্ধীর হাত মাথায় থাকলে বরুণের রাজনৈতিক কেরিয়ারের গ্রাফ ঊর্দ্ধমুখী হতে বাধ্য হবে।
মানেকার একটা ভালো বন্ধু সার্কেল ছিল। বিশেষ বন্ধু ছিলেন আকবর ‘ডাম্পি’ আহমেদ। আর ছিলেন প্রিয় বান্ধবী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। বসুন্ধরা নিয়মিত মানেকার কাছে যেতেন। এবং সম্ভবত মানেকা নিজের মনের কথা বসুন্ধরার কাছে বলতেন। এই আদানপ্রদান আরও পোক্ত হল, যখন একটা বড় ডিল হল।
শিবির তৈরি হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাজীব গান্ধীর আশেপাশে তাঁর দুন স্কুলের প্রাক্তণীরা ঘুরঘুর করছিলেন। আর মানেকার চারিধারে সঞ্জয়ের অনুগামী যুব কংগ্রেসের ছেলেপুলেরা।
মিডিয়া এই দুই শিবিরের লড়াইকে একটা পোশাকি নামও দিল— দুনস্ ভার্সেস গুনস্।
.
ভারতের রাজনীতির খেলা কে, কবে বুঝেছে? বাইরের লোকে কখন এসে ঘর ভেঙে দিয়ে যায়, আর ঘরের লোক কখন গিয়ে বাইরের লোকের হাত ধরে, তা বোঝা ভীষণ কঠিন। অবশ্য ফলাফল একই হবে— ক্ষতি। সঞ্জয়ের মৃত্যু এবং রাজীবের রাজনীতিতে আসার পর ইন্দিরা গান্ধীর পরিবারের মধ্যে বিদ্রোহ আরম্ভ হয়ে গেল। খুসবন্ত সিং লিখলেন, ‘এক ছাদের নীচে দুই দুর্গা।’ তৈরি হয়ে গেল পক্ষ এবং প্রতিপক্ষ। প্রত্যেকে বুঝেসুঝে পা ফেলছিল। তৎকালীন ভারতে গান্ধী পরিবারে এহেন বিদ্রোহ অভাবনীয়? অসম্ভব গোছের একটা ব্যাপার। কিন্তু কীভাবে সম্ভব হল? কে করল? কে-ই বা করাল বা বলা ভালো যে, কারা করাল? আসুন, দিল্লি থেকে নজর সরাই। চলে যাই দিল্লি থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে গ্বালিয়র, মধ্যপ্রদেশ।
গ্বালিয়রের কথা আগেও লিখেছি। অটলবিহারী বাজপেয়ীজির প্রসঙ্গক্রমে। কিন্তু এবার একটু অন্য সমীকরণ বুঝব। সিন্ধিয়াদের গণিত।
যদি গান্ধী-নেহরু পরিবারকে স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের কূটনীতির পাঠশালার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকারী বলা যায়, তাহলে বলতে হয় শ্বালিয়রের সিন্ধিয়া রাজবংশ স্বাধীনতা-পূর্ব ভারত থেকে এই কূটনীতির বিশ্ববিদ্যালয়টিকে চালিয়ে আসছে। রাজা হয়ে রাজত্ব করেছে সিন্ধিয়ারা। ব্রিটিশরা এসেছে, তখনো তারা থেকেছে। ব্রিটিশরা চলে গেছে, আজও সিন্ধিয়ারা রাজত্ব করে চলেছে। স্বাধীনতার পর যেখানে ভারতের অন্যান্য রাজবংশগুলির অস্তিত্ব বিলুপ্ত, সেখানে স্বমহিমায় ভাস্বর এই রাজপরিবারের প্রজন্মের পর প্রজন্ম রাজনীতির মসনদে আসীন হয়ে চলেছে। যে যখন ক্ষমতাবান হয়েছে, তখন তার হাতে ধরে নিয়েছে সিন্ধিয়ারা।
আজকের রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে অনেক আগে। ফিরে দেখতে হবে হিন্দুত্বের অবধারণা।
হিন্দুত্ব। আজকের ভারতে দাঁড়িয়ে একটি অমোঘ শব্দ। কিছুদিন আগেও হোয়াটসঅ্যাপে হিন্দু ধর্মের প্রতীক রূপে কোনও ইমোজি ছিল না। ইসলামের জন্য কাবার পবিত্র পাথর ছিল, জাপানিদের শিন্টো ধর্মের জন্যে চিহ্ন ছিল, খ্রিস্টানদের জন্যে ছিল, ইহুদিদের জন্যে ছিল, শুধু হিন্দু ধর্মের জন্যে কিছুই ছিল না। এক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন ওঠে— তবে কি হিন্দু নামক কোনও ধর্মই নেই? বারে বারে এই প্রশ্ন ভারতের তথাকথিত হিন্দু সমাজকে ধাক্কা দিয়েছে। হিন্দুত্ব আসলে কি তবে একটি সংস্কৃতির নাম? এক যাপনের নাম? সনাতনী প্রথার পোশাকি নাম?
যে ভূমি থেকে ইসলাম এসেছে, যে ভূমি থেকে ইহুদি ধর্ম এসেছে, যে ভূমি থেকে খ্রিষ্ট ধর্ম এসেছে, সেই ভূমি থেকে বেরিয়ে তারা ছড়িয়ে পড়লেও নিজ-নিজ ধর্মের কোনও না কোনও ব্যক্তি, কোনও না কোনও ধর্মগ্রন্থের নামে তারা কিন্তু একত্রিত হন। কিন্তু হিন্দু ধর্মের ব্যপ্তি এত বিশাল যে এই প্রকার কোনও বিন্দুই মেলে না যাকে কেন্দ্র করে হিন্দুরা একত্রিত হতে পারবে। মুসলিমদের খলিফা ছিলেন, হিব্রু বাইবেল ইহুদিদের সমাজের রাজনৈতিক কাঠামোর জন্ম দিয়েছে, খ্রিস্টানদের জন্যে রয়েছে নিউ টেস্টামেন্ট। আর হিন্দুদের জন্যে? কিছু নেই। থাকবে কী করে? ভারতের বাসিন্দাদের মধ্যে ৮০% হলেন হিন্দু। তাদের মধ্যে ৩,০০০ জাতি; ২৫,০০০ সাবকাস্ট; এইসব মানুষেরা ১৯,০০০ ভাষায় কথা বলেন, উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষার কথা নাহয় বাদই দেওয়া গেল।
ধর্ম আর রাজনীতি ওতপ্রত ভাবে জড়িয়ে থাকে। প্রতিটা ধর্ম রাজনীতির জন্ম দেয়, প্রত্যেক রাজনীতিক ধর্মকে হাতিয়ার করে লড়ে। সনাতনী ধর্মের জন্মভূমি ভারতে একটা সময়ে সনাতন ধর্মের ধারক-বাহকরা এই সত্যটা অনুধাবন করলেন। তখনই জন্ম নিল হিন্দুত্বের অবধারণা। যাকে কেন্দ্র করে হিন্দুরা একত্রিত হবে। হিন্দু রাজনীতিকরা খুঁজতে শুরু করলেন এমন কোনও শব্দ, যা হিন্দুদের / সনাতনীদের এক ছাতার তলায় জড়ো করে ফেলতে পারবে। যে সনাতন ধর্ম নিয়ে সনাতনীদের এহেন অহংকার, সেই ধর্মে এমন শব্দ মিলবে না এটা ভাবাও অবশ্য বোকামি। বাল্মীকি রামায়ণ থেকে বেছে নেওয়া গেল একটি শব্দবন্ধ— ‘রামরাজ্য’। রামরাজ্য— যেখানে সকলে মহানন্দে বাস করবে। ভয় থাকবে না। সকলে ধর্মের পথে চলবে। রাজত্বের অবধারণা পাওয়া গেল। এবার চাই আইকন। এমন একজনের মুখ, যাকে দেখলে আম জনতা উদ্বুদ্ধ হবে। যার চারিত্রিক গুণাবলী এবং জীবনের কর্ম হিন্দুত্বের অবধারণার সঙ্গে মেলে, ভারতের আত্মা রূপে যাকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
এমন কোন নায়ক ছিলেন যিনি হিন্দুত্বের অবধারণার কাছাকাছি কাজ করেছিলেন?
রাজা শিবাজী। ছত্রপতি শিবাজী। মরাঠা সাম্রাজ্যের স্থাপক মহারাজা শিবাজী। তিনি হিন্দু-পাদ-পাদশাহীর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তাঁর পিতা বিজাপুরের সলতনৎ-এর অধীনস্থ ছিলেন। শিবাজী বিদ্রোহ করলেন। মরাঠিদের নানা জাতিকে একত্রিত করলেন। নিজেকে রাজা বলে ঘোষণা করে তিনদিক থেকে শত্রুর আক্রমণ ঠেকিয়ে রাখলেন। তাঁর পরে তাঁর বংশধরেরা এবং মরাঠা সাম্রাজ্যের মন্ত্রণা প্রদানকারী পেশোয়ারা মরাঠা সাম্রাজ্যকে রক্ষা করা এবং তাকে পরিবর্ধিত করার কাজটা চালিয়ে গেলেন। একসময়ে মরাঠা সাম্রাজ্যের আয়তন গিয়ে দাঁড়াল ২৫,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। গোয়া থেকে দিল্লি, আরব সাগরের বালুকাবেলা থেকে ভারত মহাসাগরের পাড় পর্যন্ত। ইতিহাস বইতে পড়ানো হয় যে মোগলদের হাত থেকেই ব্রিটিশরা এদেশের রাজদণ্ডকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। একথা কতটা সত্য তা ইতিহাস খুঁজে দেখলেই বোঝা যাবে। আসলে ভারত শাসনের ক্ষমতা মরাঠাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল লালমুখোর দল।
রাজা শিবাজী দ্বারা স্থাপিত মরাঠা সাম্রাজ্যের হিন্দুত্ববাদী মোড়কই আজকের হিন্দু-ভারতের জনক। ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করে তোলার পক্ষে বিপক্ষ যত যুক্তি আসে, তার কেন্দ্রে শিবাজী রাজার ‘হিন্দু-পাদ-পাদশাহীর’ চিন্তাভাবনা। রাজা শিবাজীর ভাবনা চিন্তাতেও কিছু খামতি ছিল। নতুন ভারত চাইছিল সেই খামতি দূর করে একটি সুপরিকল্পিত ভাবধারাকে জন্ম দেবে। হিন্দুত্বকে ছায়াদানের জন্য চারাগাছেরা ততদিনে মহীরূহের রূপ ধারণ করতে চলেছিলেন। একজন হলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং অন্যজন অবশ্যই লালকৃষ্ণ আডবানি।
*****
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন