সহযাত্রী ● কেয়া চ্যাটার্জী

বিশ্বরূপ মজুমদার

সহযাত্রী – কেয়া চ্যাটার্জী

ট্রেনটা চলতে চলতে থেমে গেল একটা ক্যাঁচ শব্দ তুলে। বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির কারণে বা লাইন বদলের দরুন থেমে গেছে দূরপাল্লার একটা ট্রেন। এসি কামরার ভেতরে মর্গের নিস্তব্ধতা। সারি সারি বাঙ্কের ওপর সাদা চাদর টেনে শুয়ে আছে যাত্রীরা। মাঝে মাঝে কারও কারও সুতীব্র নাসিকা গর্জন কামরাটিতে প্রাণের স্পন্দনের জানান দিচ্ছে। কয়েকটি পায়ের শব্দে নিজের চাদর সরিয়ে বিপ্রদাসবাবু দেখলেন তিনটি অল্পবয়সী ছেলে ব্যাগপত্র নিয়ে গুছিয়ে বসেছে তার নীচের বাঙ্কে। একজন বাইরে তাকিয়ে বলল, “বৃষ্টিটা জোর শুরু হল রে বিকাশ। চাকা কখন গড়াবে কে জানে?” আরেকটি ছেলে ব্যাগের ভেতর কিছু একটা হাতড়াচ্ছিল, সেই কাজটি অব্যাহত রেখেই বলল, “যখন গড়াবে তখন গড়াবে। আমাদের তো আর পিছুটান নেই। স্টেশনে নামতে ভোর রাত হত। তার চেয়ে সকাল সকাল পৌঁছনোই ভালো। গাড়ি ঘোড়ার দেখা পাব।” আরেকটি ছেলে নিজের ব্যাগ থেকে একটি ফ্লাস্ক বের করে কাগজের কাপে ঢালতে ঢালতে বলল, “এরকম ওয়েদারে কিন্তু ভূতের গল্প ভালো জমবে। কি বলিস বিকাশ?” দ্বিতীয় ছেলেটি প্রথম ছেলেটির দিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসি হাসল। বিপ্রদাসবাবু বুঝলেন এই ছেলেটিই বিকাশ। হাবভাব দেখে মনে হয় দলের লিডার। প্রথম ছেলেটি ভীষণ একটা তেড়ে উঠে বলল, “এই, এই তোরা এসব করলে কিন্তু আমি এখুনি ট্রেন থেকে নেমে যাব। তোরা খুব ভালো করেই জানিস আমি এগুলো পছন্দ করি না।” বিকাশ ও তৃতীয় ছেলেটি দু’জন দু’জনকে ঠ্যালাঠেলি করে হেসে উঠল। তৃতীয় ছেলেটি বলে উঠল, “অবিনাশ তোকে তো এইজন্যই এনেছি।” প্রথম ছেলেটি বলল, “সত্য খুব খারাপ হবে কিন্তু।”

বিপ্রদাসবাবু এখন তিনটি ছেলেরই নাম জেনে গেছেন। প্রথম ছেলেটির নাম অবিনাশ, দ্বিতীয় জন বিকাশ ও তৃতীয় ছেলেটির নাম সত্য। উপরতলার বাঙ্ক থেকে তিনি মুচকি মুচকি হাসি নিয়ে তিনজনকে নিরীক্ষণ করছিলেন। হঠাৎ ওদের কথার মাঝে বলে উঠলেন, “ভূতে বুঝি ভাইটির খুব ভয়?” ওরা তিনজন চকিতে ওপরে তাকাল। বিপ্রদাসবাবুর চেহারা দেখে বিকাশ ফিক করে হেসে ফেলল। তার মাথায় চাপানো একটি মাঙ্কিটুপি। সেই টুপির ফাঁক গলে উঁকি মারছে তার কাঁচা পাকা দাড়ি গোঁফ ও ভ্রূ আর মোটা ফ্রেমের কালো চশমা। গায়ে ঘিয়ে রঙের চাদর। তার নীচে দেখা যাচ্ছে হলুদ খয়েরি চেক শার্ট আর ঢলা পাজামা। বিপ্রদাস বিকাশের হাসি অবজ্ঞা করে তিনতলার বাঙ্ক থেকে নেমে এলেন। সত্যের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হবে নাকি এক কাপ?” সত্য বিপ্রদাসের দিকে এককাপ চা এগিয়ে দিতেই তিনি তৃপ্তি ভরে একটা চুমুক দিয়ে বলতে শুরু করলেন, “তোমরা হয়তো ভাবছ কোত্থেকে এই বুড়ো শিং ভেঙে বাছুরের দলে এসে জুটল। তাইতো, নাকি?” এখানে বলে রাখা দরকার বিপ্রদাসবাবুর বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। আর তিনজন যুবক বাইশ তেইশ হবে। বিপ্রদাসের কথায় সত্য বিনয়ভরে মাথা নেড়ে বলল, “না না। তা কেন ভাবব। আমরা তো সহযাত্রী।” সত্যর কথায় বিপ্রদাস বেশ পুলকিত হয়ে আরও গুছিয়ে বসলেন সিটের ওপর। বললেন, “হ্যাঁ তা ঠিক বলেছ। সহযাত্রী। মানে একই পথের যাত্রী। আমি নামব মোঘলসরাই। তোমরা?” বিকাশ বলল, “ইচ্ছে আছে জব্বলপুর। তবে তার আগে যদি কোনও জায়গা দেখে পছন্দ হয় নেমে যাব।” বিপ্রদাস এই কথায় আরও পুলকিত হয়ে বললেন, “বাহ, বাহ, এই তো, এই তো… ইয়াং ব্লাডের মতো কথা। ওরকম নির্দিষ্ট জায়গা বেছে আডভেঞ্চার হয় নাকি! নিরুদ্দেশে গিয়েই তো জীবনকে এক্সপ্লোর করা যায়। গুড ভেরি গুড।” যুবকরা সমীহ সূচক হেসে নিজের নিজের ব্যাগ থেকে পাম্প বালিশ বের করে ফোলাতে শুরু করল। বিপ্রদাস চারিদিক দেখে চায়ে শেষ চুমুকটা দিয়ে সিটের নীচে কাপটা চালান করে বললেন, “তা ভায়ারা শুয়ে পড়বে নাকি?” অবিনাশ বলল, “হ্যাঁ, রাত তো হল আর আপনিও তো ঘুমাচ্ছিলেন।” বিপ্রদাস বুঝলেন তার উপস্থিতি যুবকরা খুব একটা পছন্দ করছে না। তবুও একটা নট নড়ন-চড়ন ভাব দেখিয়ে বললেন, “হ্যাঁ তা আমার ট্রেনে চড়লে বেশ ভালোই ঘুম হয়। তবে কিনা ওই ভূত শব্দটা শুনলেই আমার মস্তিষ্কের মধ্যে কেমন একটা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আসলে অনেক ছোটবেলা থেকে। এই ধরো তোমাদের থেকেও ছোট বয়স থেকে অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় পেয়ে বসেছিল আমায়। তখন থেকে ঘুরে চলেছি। ভারতবর্ষের খুব কম জায়গাই অবশিষ্ট আছে যা আমি এই চর্মচক্ষে দেখিনি। কত অভিজ্ঞতাই না হয়েছে। বন্যজন্তু, যুদ্ধ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, ভূমিকম্প, সুনামি। মহাপ্রলয়েও আমি বাড়িতে মুখ লুকিয়ে বসে থাকিনি। তার মধ্যে এই ভূত বাবাজিও আছেন। তবে অন্যান্যদের তুলনায় তার ব্যাপারে আমার আগ্রহটা একটু বেশি।” অবিনাশ বিরক্ত হয়ে বলল, “কেন আপনার সঙ্গে কি তার অহরহ দেখা হয় নাকি?” বিপ্রদাস মুখ কুঁচকে বললেন, “ওটাই তো মুশকিল হে ভায়া। যতবার তার দেখা পেতে গেছি সে আমার সঙ্গে রীতিমতো লুকোচুরি খেলেছে। দেখেছি কিন্তু ধরতে পারিনি।” বিকাশ এবার গুছিয়ে বসে বলল, “বাহ্ বেশ ইন্টারেস্টিং তো! আপনি বুঝি ওই ভূতের কথা শুনে নেমে এলেন।” বিপ্রদাস মুচকি হেসে বললেন, “একদম ঠিক। এই যে অবিনাশ ভূতের কথায় ভয় পায়। তা একেবারেই অমূলক। ভূত পুত আছে কি নেই সে তর্কে যাব না। তবে থাকলেও তাকে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। আমি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলতে পারি।” বিকাশ এবার উৎসাহ নিয়ে বলল, “তাই নাকি? তাহলে বলুন আপনার একখানা কীর্তির কথা।” বিপ্রদাস যেন এই মুহূর্তটারই অপেক্ষা করছিলেন। বেশ উৎসাহ নিয়ে বলতে শুরু করলেন, “শোনো হে অবিনাশ ভায়া। প্রথমেই বলেছি আমি নানান জায়গায় ঘুরে বেড়াই। বিয়ে থা করিনি ওই ঘোরার জন্য। বিয়ে মানেই সংসার, সংসার মানেই খাঁচা। আমি বাপু খাঁচায় থাকার জন্য জন্মাইনি। তা এরকমই একদিন, তা প্রায় বছর চারেক আগে, ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে গেছি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের রঙ্গতে। আন্দামান বেড়াতে গেলে খুব কম ট্যুরিস্টই রঙ্গত, ডিগলিপুর ঘুরতে আসে। আসলে ওখানে দর্শনীয় তেমন কিছু নেই।

কিন্তু আমি তো শুধু ছবি তোলার জন্য বা চোখের দেখা দেখার জন্য ওখানে যাইনি। আমি গেছি জায়গাটার জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি বুঝতে। তা বিট্যাং পেরিয়ে। জারোয়াদের শান্তি ও জীবনযাত্রাতে কোনওরকম ব্যাঘাত না ঘটিয়ে দুটো ফেরি পাল্টে এসে পৌঁছলাম রঙ্গত। ফেরিঘাট থেকে কয়েক পা হাঁটলেই সারি সারি হোটেল ও থাকা-খাওয়ার জায়গা। জমজমাট এলাকা। তবে আমার জমজমাট নয়, নিরিবিলি জায়গা পছন্দ। তাই আরও কিছুক্ষণ হাঁটা লাগিয়ে এসে পৌঁছলাম ফেরিঘাট থেকে ঘণ্টাখানেক দূরের একটি জায়গায়। সেখানে প্রচুর খাবারের দোকান। একটু বেশি টাকা দিলে থাকার ব্যবস্থাও করে দেয় ওরাই। ওদের সকলের বাড়িতেই একটা করে বাড়তি ঘর থাকে। ভাবতে পারবে না ওরকম দেশী মুরগির ঝোল আমি আজ পর্যন্ত কোথাও খাইনি। এখনও যেন মুখে লেগে আছে। যাই হোক, সেখানেই আমার পরিচয় ঘটল কৌশিকের সঙ্গে। কৌশিক বটব্যাল। তখন তার বয়স এই তোমাদের মতোই, কী একটু বেশি। কল্যাণীর বাসিন্দা। সে-ও আমার মতোই ভবঘুরে। তবে তার নেশা একটু আলাদা। সে ভারতবর্ষের চার্চ ও মিশনারি ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছিল। কোথায় যায়নি? গোয়া থেকে কলকাতা। উত্তর থেকে দক্ষিণ সারা ভারতের নতুন পুরোনো চার্চের ইতিহাস, গঠনশৈলী তার নখদর্পণে। এখন মূল ভূখন্ড ছেড়ে এসেছেন দ্বীপপুঞ্জে ইংরেজ মিশনারিজের ইতিহাস ও প্রভাব জানতে।

এটা তো সর্বজনবিদিত যে রাজ্যের বাইরে বাঙালি দেখলেই, বাঙালি জাতির বাঙালিয়ানা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তবে আন্দামানে হিন্দিভাষী যেমন আছে, বাঙালিও কিন্তু সমান পরিমাণে বাস করে। দেশভাগের পরে বাংলাদেশ থেকে একটা বিরাট অংশের মানুষ চলে এসেছিল বা তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই আন্দামানে। তাই ওখানে গিয়ে কোনও বাঙালির এক মুহূর্তের জন্যও মনে হবে না যে সে তার রাজ্যের বাইরে এসেছে। আমারও বাঙালিয়ানা বেড়ে গিয়ে কৌশিকের সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। আশা করি তারও সেরকম অনুভূতি হয়েছিল। নাহলে আমি তার সঙ্গে ভিড়ে যাওয়ার প্রস্তাব পাড়তে সে তা নাকচ করেনি।

এই কৌশিকের কাছে জানলাম রঙ্গত থেকে প্রায় আট ঘণ্টা দূরত্বে আছে একটা দ্বীপ― রস এন্ড স্মিথ আইল্যান্ড। এই দ্বীপে প্রায় দেড়শো বছর পুরোনো একটি চার্চ রয়েছে। বহু বছর তা পরিত্যক্ত। তাছাড়া সুনামির আঘাতেও তার বেশ কিছু অংশ ভগ্নপ্রাপ্ত। এই চার্চটি তার কারুকার্য ও বিদেশি উপকরণের জন্য একসময় বিখ্যাত ছিল। তবে সেটি কুখ্যাতও বটে। কৌশিককে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কুখ্যাত কেন?’ বলল, ‘বিশেষ কিছু জানি না। তবে অনেকেই নাকি ওখানে ভূত দেখেছে। কী ভূত, কেমন ভূত সেই স্পষ্ট বিবরণ কিন্তু কারুর কাছেই পাইনি।’ প্রশ্ন করলাম, ‘কোনও মৃত্যুর খবর আছে?’ কৌশিক উত্তর দিল, ‘না, তাও নেই। তবে ওখান থেকে সন্ধের আগেই চলে আসার এক অলিখিত নিয়ম চালু আছে।’ তারপর আমার দিকে উৎসাহী দৃষ্টি হেনে বলল, ‘যাবেন নাকি একবার?’ যেমন কথা, তেমন কাজ। পরের দিনই ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে রওনা দিলাম। রঙ্গত থেকে এলাম ডিগলিপুর। সেখানে বিশ্রাম নিয়ে, খাওয়া-দাওয়া করে, আবার রওনা দিলাম। ফেরি পেরিয়ে আরো কয়েক মাইল বাস-যাত্রার পর আরেকটি ফেরিঘাটে একটি স্পিডবোট ভাড়া করলাম। তখন প্রায় দুপুর দুটো। বোটের চালক টুথপিক দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে নিস্পৃহভাবে বলল, ‘যেতে পঁয়তাল্লিশ মিনিট, আসতে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। আইল্যান্ডে থাকতে পারবেন আধ ঘণ্টা। চারটের পরে আর ওদিকে কোনও বোট অ্যালাউড নয় স্যার।’ আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম। আমাদের তো উদ্দেশ্য অন্য। বললাম, ‘তা ওখানে হোটেল আছে? থাকা-খাওয়ার জায়গা?’ লোকটা এবার আমাদের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। মুখ দেখে বুঝলাম সে আমাদের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল। মনে মনে ভাবলাম, যাক এবার একটু নাহয় সম্মান দিয়ে কথা বলবে। কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে নিজেকে সামলে বলল, ‘হ্যাঁ আছে। কিন্তু একটু ভেতরে, বস্তির দিকে হেঁটে যেতে হবে। ট্যুরিস্ট পার্টি তো সকালেই আসে। তাই বস্তির কেউই আর বিচে থাকে না সন্ধেবেলা।’ আমরা তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলাম যে সে যেন বিচে নেমেই আমাদের কোনও একজন বাসিন্দার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয়। মনমতো রফা হলেই তার কাজ শেষ। আবার পরেরদিন সকালে সে যেন আমাদের আবার সেই ফেরিঘাটে পৌঁছে দেয়। চালক রাজি হল। বদলে টাকাটা একটু বেশিই চাইল। সে যাই হোক, আমি আর কৌশিক এমন সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে মহানন্দে চড়ে বসলাম বোটে। নীল, সবুজ কোরাল সমন্বিত সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করতে করতে সে বোট এসে পৌঁছল রস এন্ড স্মিথ আইল্যান্ড। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন কোনও চিত্রকর তার ক্যানভাসে আইল্যান্ডটা খুব যত্ন নিয়ে এঁকেছেন। এখানে বালির রং। আমাদের দীঘা-পুরীর হলুদ ঘোলাটে বালি না। অত স্বচ্ছ জল আমি আগে দেখিনি। সমুদ্রে পা ডোবালে পা স্পষ্ট দেখা যায়। জামাকাপড়ে বালির চিহ্ন থাকে না। কলকাতার পানীয় জলও অত স্বচ্ছ নয়।

আইল্যান্ডে নৌকা ভেড়ানোর কোনও ঘাট নেই। তাই মোটামুটি একটা চর পেয়েই সেখানে বোট থামিয়ে দিল চালক। আমরা হাঁটু অবধি প্যান্ট গুটিয়ে নেমে পড়লাম জলে। বিচের ধারে সার সার খাবারের দোকান। টেবিল চেয়ার সাজানো। নানা রকম মাছ, কাঁকড়া ভাজা হচ্ছে। ভাতের পদও পাওয়া যাচ্ছে, মেনুচার্ট টাঙিয়ে। বিষ্ণু, আমাদের বোট চালক এক দোকানির কানের কাছে ফিসফিস করে কিছু বলল। সেই লোকটি আবার আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকাল। আমরা বুঝলাম আমাদের নিয়েই কথা হচ্ছে। তাই বিন্দুমাত্র দেরি না করে এগিয়ে গেলাম তার দিকে। সে অবাক চোখে বলল, ‘আপনারা আজ এখানে থাকবেন?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, কোনও অসুবিধা আছে নাকি?’ সে ইতস্তত ভাবে বলল, ‘না তেমন কোনও অসুবিধা নেই। তবে একটাই ঘর পাবেন কিন্তু।’ আমি কৌশিকের দিকে তাকালাম। সে মাথা নেড়ে বলল, ‘কোনও প্রবলেম নেই বিপ্রদা।’ লোকটির সঙ্গে থাকা খাওয়ার রফা করে আমরা ভাত-ডাল-সবজি আর সুরমাই মাছের ঝাল নিয়ে খেতে বসলাম। সুরমাই আন্দামানের জাতীয় মাছ। তারপর সেই দোকানির কাছেই চার্চে যাওয়ার পথনির্দেশ জেনে রওনা হলাম। তবে দোকানি বারবার সতর্ক করে দিল সাড়ে চারটে থেকে পাঁচটার মধ্যে যেন আমরা অতি অবশ্যই বিচে ফিরে আসি।

চার্চটা একটা টিলার ওপর। সমুদ্র সৈকত থেকে বেশ খানিকটা দূরে। তবে চারিদিক বেশ সাজানো গোছানো। যত ওপরে উঠতে শুরু করলাম, গাছ গাছালির পরিমাণ বাড়তে শুরু করল। ক্রমে তা ঘন থেকে ঘনতর হয়ে উঠল। আমি আর কৌশিক বেশ খানিকটা ওপরে উঠে এসেছি। পথে দেখা মিলল দুটি হরিণের। নারী ও পুরুষ। শিং দেখে হরিণদের আলাদা ভাবে চেনা যায়। যার শিং আছে সে পুরুষ, যার শিং নেই সে নারী। পশুদের জগৎ মানুষদের তুলনায় আলাদা। মনুষ্য সমাজে মহিলারা সুন্দরী আর পশু সমাজে পুরুষরা। চলতে চলতে চোখে পড়ল ইংরেজ কোয়ার্টার, অফিস, ক্লাব, কনফারেন্স হল, রিক্রিয়েশন ক্লাব, স্কুল বিল্ডিং আরও কত কী! কিন্তু সবই পরিত্যক্ত ও ভাঙাচোরা। একসময় এগুলোই জমজমাট ছিল। গমগম করত মানুষের হাসির হিল্লোলে। সবক’টা বাড়ির দেওয়ালের গায়ে জমেছে শ্যাওলা, আগাছার জঙ্গল। তবে জায়গাটা বেশ পরিষ্কার ও সুসজ্জিত। অবহেলার চিহ্ন নেই। এই জরাজীর্ণতাই যেন স্থানটিকে আরও মহিমান্বিত করে তুলেছে।

হাঁটতে হাঁটতে আরও কিছুটা যাওয়ার পরে চোখে পড়ল চার্চের ত্রিভুজাকৃতি চূড়া। একইভাবে শ্যাওলা আর আগাছায় ভরে গেছে। আরেকটু এগোতে কানে এল সমুদ্রের গর্জন। বুঝলাম আমরা দ্বীপের একেবারে শেষের দিকে এসে পড়েছি। এবার শুরু হল উতরাই। আর এই সময়েই গোটা চার্চটার প্রতিচ্ছবি ধরা দিল আমাদের কাছে। আমরা পা চালাতে শুরু করলাম। কৌশিকের উৎসাহ স্বাভাবিকভাবেই আমার থেকে বেশি। সে প্রায় দৌড়ে পৌঁছে গেল চার্চের কাছে। আমিও পা চালিয়ে তার কাছাকাছি এসে পৌঁছলাম। দেখলাম কৌশিক একটা ফলকের সামনে দাঁড়িয়ে। আরও কাছে যেতে বুঝলাম সে ওই ফলকে খোদাই করা লেখাগুলি নিজের ডায়েরিতে মন দিয়ে নথিবদ্ধ করছে। ফলকটি পড়ে যা বুঝলাম, চার্চটি সপ্তদশ শতকে নির্মিত। চার্চটির দেওয়াল পাথর গেঁথে তৈরি। বর্মী কাঠ দিয়ে জানলা, দরজা, কড়ি বর্গা নির্মিত ও নক্সা করা কাচ ও জানলার রঙিন কাচগুলি ইটালি থেকে এনে লাগানো হয়েছে। কৌশিক পুঙ্খানুপুঙ্খ লিখে নিচ্ছে ফলকের বয়ান। আমি ব্যাঙ্গাত্মক হাসি হেসে বললাম, ‘যা লিখছ তার কিন্তু কিছুই অবশিষ্ট নেই ভায়া। চেয়ে দ্যাখো, শুধুই পাথর। নো কাঠ, নো কাচ।’ কৌশিকও আমার কথা শুনে হেসে ফেলে বলল, ‘তা যা বলেছ বিপ্রদা। তবে এসব জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে খুব সাধ হয় সেই সময়টায় চলে যেতে। সেই প্রাচীন দিনগুলোকে চোখের সামনে দেখতে।’ কথা শেষ করেই সে নিজের ডিজিটাল ক্যামেরায় পটাপট কিছু ছবি তুলে নিল। আর সঙ্গে সঙ্গে যেন প্রায় মাটি ফুঁড়ে একজন ভদ্রলোক রে রে করে তেড়ে এলেন। তার এমন হঠাৎ আগমনে আমরা দু’জন একটু চমকেই গেছিলাম। কই কিছুক্ষণ আগেও তো লোকটাকে ধারে কাছে কোথাও দেখলাম না। কৌশিক অবাক হয়ে বলল, ‘কী ব্যাপার বলুন তো?’ ভদ্রলোক একইরকম অসন্তোষ নিয়ে বললেন, ‘ছবি তুলবেন না। ছবি তোলা বারণ।’ আমি এদিক ওদিক দেখে বললাম, ‘কই সেরকম তো কোনও নোটিশ দেখছি না?’ ভদ্রলোক যেন আরও রেগে গিয়ে বললেন, ‘লিখিত নোটিশ লাগবে? আপনারা জানেন না, কোনও প্রতিষ্ঠানেরই বিনা অনুমতিতে ছবি তোলা যায় না?’ কৌশিক এবার আরেকটু চোটপাট দেখিয়ে বলল, ‘আপনি কে হে আপনার কাছে অনুমতি নিতে হবে?’ লোকটি এবার গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘আমি এখানকার ফাদার।’ কৌশিক এবার আরো মেজাজ দেখিয়ে বলল, ‘ভাঙা চার্চের আবার ফাদার?’ লোকটি এবার হাসলেন। আমরাও পূর্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম। হ্যাঁ। ফাদারের পোশাকই বটে। কিন্তু লোকটির মেজাজের সঙ্গে তার কর্ম খাপ খায় না। লোকটি আবার হেসে বললেন, ‘তা বলতে পারেন। চার্চটি বহু বছরই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কিন্তু যতদিন ভগবান থাকেন, ততদিন ভক্তরাও থাকে। তাই যতদিন চার্চের ভেতর ঈশ্বর যিশুর ক্রুশবিদ্ধ মূর্তিখানি থাকবে ততদিন আমরাও থাকব।’ কৌশিক উৎসাহী হয়ে বলল, ‘চার্চের ভেতর মূর্তি আছে বুঝি? সেই শতাব্দী প্রাচীন মূর্তি?’ লোকটি হেসে মাথা নাড়লেন, ‘হ্যাঁ। এই দ্বীপে আরেকটিও ক্যাথলিক চার্চ আছে। এটি প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ। সেখানেও একটি মূর্তি আছে। পর্যটকরা কাছাকাছি এই চার্চটি দেখেই ফিরে যান। জঙ্গলের ভেতরে ঢুকতে চায় না।’ কৌশিক প্রায় লাফিয়ে লোকটির সামনে এসে বলল, ‘যাব। যাব। আমরা যাব। আপনি আমাদের নিয়ে যাবেন?’ লোকটিও সমান উৎসাহ দেখিয়ে বলল, ‘নিশ্চয়ই চলুন না।’ আমি এবার একটু বিপদের গন্ধ পেলাম। কৌশিককে খোঁচা দিয়ে যথাসম্ভব ইশারায় বলার চেষ্টা করলাম, এসব জায়গা ভালো নয়। যদি কোনও প্রকারে চোর ডাকাতের পাল্লায় পড়ে যাই তো বিদেশ বিভুঁইয়ে সর্বস্ব খোয়াব। কিন্তু কৌশিক তখন কোনও কথা শোনার পর্যায়ে নেই। আমার হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল লোকটির পিছন পিছন।

জঙ্গল এখানে বেশ ঘন। উঁচু উঁচু পাইন, ইউক্যালিপ্টাস, নারকেল গাছ এবং আরও অনেক অজানা গাছের মাঝ দিয়ে সরু রাস্তা চলে গেছে। চারিদিকে আগাছার জঙ্গল। পা আটকে যাচ্ছে। ফাদার যতটা অবলীলায় হাঁটছেন আমরা পারছি না। যেতে যেতে শুনতে পেলাম ফাদার বলছেন, ‘আপনাদের সঙ্গে তো পরিচয় পর্বটিই সাড়া হল না। আমি এনড্রু নরেন মন্ডল। আমার ঠাকুরদাদা বাংলাদেশ থেকে সপরিবারে এই দ্বীপে এসে এই মিশনারিজদের কাছে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। তারপর থেকে আমরা সবাই এই ক্যাথলিক চার্চের অনুগত। সমুদ্রের ধারের চার্চটি অপেক্ষাকৃত নবীন। ক্যাথলিক চার্চটি অনেক পুরনো। সেখানে ভগবানের মূর্তিটি সেসময়ের একটি নিদর্শন। ক্রুসের ওপর গাঁথা রয়েছে পাঁচটি বহুমূল্যবান পাথর।’ আমি হোঁচট সামলে বললাম, ‘কিন্তু এত গভীর জঙ্গলে আপনারা কোথায় থাকেন?’ নরেন বাবু হেসে বললেন, ‘ভগবানই স্থান জুগিয়ে দিয়েছেন।’ ব্যস তারপর সবাই চুপ। হেঁটেই চলেছি। কতক্ষণ যে হেটেছি খেয়াল নেই। জঙ্গলের গভীরতার জন্যই হোক বা সন্ধের আঁধারের জন্যই হোক চারিদিক দৃশ্যপটের বাইরে চলে গেছে। শুধু ফাদারের সাদা পোশাকটুকুই চোখে পড়ছে। সেটুকুই অনুসরণ করে চলেছি। কৌশিকের হাতটা আমার হাতের মধ্যেই ধরা ছিল। একটা চিমটি কেটে বললাম, ‘আর এগিয়ে লাভ নেই। ফিরে চলো। আমার কিন্তু এদের চালচলন বেগতিক ঠেকছে।’ অন্ধকারে কৌশিকের অভিব্যক্তি দেখতে পেলাম না। তবে সেও বলল, ‘হ্যাঁ। আমারও খুব অস্বস্তি করছে। মনে হচ্ছে যেন কারা আমাদের এই গাছের আড়াল থেকে দেখছে। বুকের উপর খুব চাপ অনুভূত হচ্ছে।’ কৌশিকের কথায় প্রমাদ গুণলাম। একে তো চোর ডাকাতের ভয়, তার উপর অসুস্থ অচেনা মানুষ নিয়ে নাকাল হতে হবে। বাঁ হাতে কৌশিকের হাতটা ধরে রেখে, ডানহাতে ব্যাগ হাতড়ে টর্চটা বের করলাম। কিন্তু অনেকবার ঠোকাঠুকিতেও আলো জ্বলল না। আশ্চর্য কালই ব্যাটারি ভরলাম। তখন তো ভালোই জ্বলছিল। এদিকে আমাদের পা চলছে। অবাক হলাম এই ভেবে যে, যেখানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আমরা দু’জন পরস্পরকে দেখতে পারছি না, সেখান থেকে পাঁচ হাত দূরে ফাদারের সাদা পোশাক কিভাবে নজরে আসছে। লোকটার চলন এতই সাবলীল যেন মনে হচ্ছে তিনি হাঁটছেন না, ভেসে যাচ্ছেন। সত্যি বলতে এবার ভয় করল। জঙ্গলে কত কিছুই তো হয়। আরেকবার টর্চটা নিয়ে চেষ্টা শুরু করলাম। এবার একটা দৃশ্যে আমার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। কৌশিকের কথাই ঠিক। একটু দূরে একটা গাছের আড়ালে যেন দুটো বড় বড় লাল চোখ আমাদের দিকে নজর রাখছে। আমরা যত এগোচ্ছি চোখ দুটোও আমাদের আগে আগে চলছে। এক গাছের গুঁড়ি থেকে আরেক গাছের গুঁড়ির আড়ালে অবস্থান পাল্টাচ্ছে। গলাটা শুকিয়ে এল। তবু হাঁক ছাড়লাম, ‘ফাদার আর কত দূর।’ কোনও উত্তর এল না। এবার আমরা থমকালাম। আর আমাদের দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ফাদারের অবয়বটিও থেমে গেল। আশ্চর্যজনকভাবে টর্চটা চারিদিক আলো করে জ্বলে উঠল। আমি সামনের দিকে আলো ফেলতেই হাড় হিম হয়ে গেল। এ কী! সামনে তো কেউ নেই। একেবারে ফাঁকা। চারিদিকে আলো ফেললাম, ঘন জঙ্গল। কোথায় সেই লাল চোখ? হঠাৎ কৌশিকের আর্তনাদে পিছন ফিরে দেখি সে দরদর করে ঘামছে। আর দু’হাত দূরে পরে আছে একটা করোটি। এল ফেলে দেখলাম এরকম আরও কঙ্কাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চারিদিকে। আমরা যেদিক দিয়ে এসেছিলাম সেদিকে ছুট লাগালাম। কিন্তু এতক্ষণ অন্ধকারে পেরিয়ে আসা পথ আলোয় চিনতে পারছি না। ঠিক করলাম সমুদ্রের শব্দ অনুসরণ করব। সেই মতোই ছুটে চলেছি প্রাণপণ। একটি বাঁকে কৌশিক থমকে দাঁড়াল। সামনে দাঁড়িয়ে ফাদার এনড্রু নরেন মন্ডল। আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। সেই হাসিতে একটা পৈশাচিক আনন্দ আছে। কৌশিক যেন কেমন দুর্বল হয়ে পড়েছে মনে হল। ওকে একটা হ্যাঁচকা টানে সোজা করে আবার ছুট লাগালাম। এরপর থেকে যেন ফাদারের প্রেতাত্মা আমাদের পিছু নিল। প্রত্যেকটা বাঁকেই তিনি তার পৈশাচিক হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে। একটা সময় জঙ্গল শেষ হয়ে এল। আমরা আবার এসে পৌঁছলাম সেই ভাঙা চার্চের কাছে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার তবু তার মধ্যেও যেন মনে হল ওই চার্চের কাছে সারিবদ্ধ কালো কালো অবয়ব নিশ্চল দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের চোখ ভাটার মতো জ্বলছে।

আমরা এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে চড়াই উঠতে শুরু করলাম। একে এতখানি জঙ্গল পেরিয়ে এসে হাঁফ ধরে গেছিল। তারপর এই চড়াই ওঠা আরওও মুশকিল হয়ে পড়ল। বেশ কিছুটা ওঠার পর মনে হল যেন ঝড় শুরু হয়েছে। সমুদ্রের দিক থেকে আসছে হাওয়াটা। এদিকে সামনের গাছগুলো নিস্পন্দ। আমরা প্রাণপণ এগিয়ে চলেছি। হঠাৎ মনে হল যেন ওই হাওয়া আমাদের প্রায় উড়িয়ে নিয়ে চলেছে। তারপর দুম করে দু’জনকে মাটিতে আছড়ে ফেলল। তারপর আমাদের আর কিছুই মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল তখন সূর্য মাথার ওপর উঠে গেছে। আমাদের অনেকগুলি মানুষ ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের মধ্যে বিষ্ণু এবং সেই দোকানিও ছিল। কৌশিকের হাতটা ভেঙে গেছিল। মোটামুটি শুশ্রূষা করে ও আমাদের চা জল খাইয়ে ওরা এই বলে আশ্বস্ত করল যে প্রাণে বেঁচেছি এই অনেক। হাত তো পরেও জুড়ে যাবে। আমরা সেদিনই পোর্টব্লেয়ার রওনা দিই। কৌশিকের সঙ্গে মাঝে মধ্যে কথা হয়। আর বারবার ফিরে আসে ওই রাতের ঘটনা।”

বিপ্রদাস বাবু থামলেন। তিন মূর্তি চুপ করে বসে আছে। শুধু পাশের বাঙ্কের ভদ্রমহিলার নাক ডাকার শব্দ আর ট্রেনের একটানা ঘরঘর আওয়াজ। অবিনাশ প্রথম মুখ খুলল, “তাহলে ভূত আছে বলুন?” বিপ্রদাস মাথা নাড়লেন, “তা আছে বটে। তবে নার্ভ শক্ত রাখলে কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।” সত্য বলল, “আপনার নার্ভ তো বেশ স্ট্রং। আর আপনার তাহলে ভূত দেখার ক্ষমতাও আছে!” বিপ্রদাস হেসে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই বিকাশ বাঁকা হেসে বলল, “ওঁর ভূত দেখার ক্ষমতা না থাকলে কি আমাদের দেখতে পেতেন?” বিকাশের কথাটা শেষ হতেই অবিনাশ আর সত্যের ঠোঁটে একটা অন্যরকম হাসি ফুটে উঠল। চোখের তারাদুটো চিকচিক করে উঠল। বিপ্রদাসবাবু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “মানে?” সঙ্গে সঙ্গে তার চোখে সামনে তিনটি যুবক অদৃশ্য হয়ে গেল। বিপ্রদাস কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলেন, তারপর… মূর্চ্ছা গেলেন।

.

কেয়া চ্যাটার্জী

জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায়। আপাদমস্তক বাংলা মিডিয়ামের শিক্ষার্থী। অনেক বাধা পাওয়া সত্ত্বেও ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। কয়েক বছর শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে বর্তমানে এক পুত্র সন্তানের জননী হওয়ায় কর্মজীবন স্থগিত রয়েছে। লেখালেখির থেকেও পড়তে বেশি ভালোবাসেন। মানুষের মনের কথা ও ছোটদের রঙিন জীবন নিয়ে লিখতে বেশি পছন্দ করেন। ভালো লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন প্রতি মুহূর্তে।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন