স্বপ্নযন্ত্রণা ● মোনালিসা সাহা দে

বিশ্বরূপ মজুমদার

স্বপ্নযন্ত্রণা – মোনালিসা সাহা দে

গভীর রাত। কলকাতার এক অখ্যাত তুলনামূলক ফাঁকা এলাকায় পুরনো আমলের দোতলা বাড়িতে বিছানায় শুয়ে বন্ধ চোখে মেয়েটা ছটফট করছে। স্বপ্ন দেখতে চায় না সে কিছুতেই। তবু স্বপ্ন তার পিছু ছাড়ে না। একটার পর একটা পিঁপড়ে ঘিরে ধরেছে তার শরীর। যেমন তেমন পিঁপড়ে নয়, বড় বড় পিঁপড়ে। কিছু একটা বলতে চাইছে সেই মেয়ে…

“কেউ আমার ঘুম ভাঙিয়ে দাও প্লিজ।”

কিন্তু কেউ নেই তার পাশে। তাই স্বপ্নটা তাকে দেখতেই হবে। আজ আবার অতিরিক্ত অত্যাচার! দুটো পিঁপড়ে প্রবেশ করল তার কানের অতলে, একটা নাকের ভিতরে যাত্রা শুরু করেছে…

“উফ্, মা গো! আমার ঘুম ভাঙাও প্লিজ।”

কিন্তু শব্দ বের হচ্ছে না গলা বেয়ে। মনে হচ্ছে গলার ভিতরে যেন এক পিঁপড়ে আটকে রয়েছে। কষ্টটা দলা পাকিয়ে কান্না হয়ে প্রকাশ পেতে চাইছে আজ।

এবারে একটা পিঁপড়ে তার সুডৌল পা বেয়ে যোনিদ্বারের উদ্দেশে যাত্রা করেছে।

উঠতে হবে, তাকে উঠতেই হবে। কিন্তু পিঁপড়েটা ঢুকে গেল ভেতরে। শুরু হল দংশন। “উফ্! কী কষ্ট! মা-আ-আ-আ…” চিৎকার গলার বাইরে বেরিয়ে এল।

হঠাৎই চোখ দুটো খুলে গেল।

ধড়মড় করে উঠে বসল মেয়েটি। কই? ঘুমের ওষুধ খেয়েও তো কাজ হয়নি! দরদর করে ঘামছে সে। জল প্রয়োজন, একটু জল। পাশেই রাখা আছে জলের বোতল। জলের বোতল নিয়েই শোওয়া তার বহুদিনের অভ্যেস। ঢকঢক করে জল খেল সে। এই মাসেও স্বপ্ন তাহলে পিছু ছাড়ল না তার!

* * * * *

পরের দিন সকাল। পুরনো বাড়িটির বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবেশীরা দেখছে মেয়েটির অদ্ভুত সব কার্যকলাপ। বোতল বোতল ফিনাইল ঢেলে ঢেলে পুরো বাড়িটি ঝাঁটা বালতি দিয়ে ধুচ্ছে মেয়েটি। মুখে বলে চলেছে কীসব বিড়বিড় কথা…

“পারবি না তোরা আমাকে জব্দ করতে। দ্যাখ কেমন মজা দেখাই তোদের!”

ঘরে চলে গেল মেয়েটি, বাড়ির বাইরে পড়ে রইল কয়েকটা মরা পিঁপড়ে।

—             “এই কয়েকটা পিঁপড়ের জন্য এত ধোয়া মোছা করল ও? এটুকু তো সব বাড়িতেই থাকে।” পাশ দিয়ে বলে উঠল এক প্রতিবেশী।

—             “আরে না না। ওর ওই প্রেমিক হাওয়া হয়ে যাওয়ার পর থেকেই মনে হয় ওর মাথায় কিছু গোলমাল হয়েছে। আমার মনে হয় সে ব্যাটা আসলে একে ফেলে অন্য কোথাও গিয়ে সংসার বেঁধেছে। তারপর থেকেই তো এ মেয়ে প্রায়ই অদ্ভুত অদ্ভুত কার্যকলাপ করে। দেখলে না গত মাসে কীরকম করে তিন-চারটে মরা ইঁদুর ফেলে গিয়েছিল? যেন কোনও যুদ্ধ জয় করতে পেরেছে!”

—             “হ্যাঁ, মনে আছে। তার আগের মাসে তো মশা মেরে জমানো শুরু করেছিল। একসঙ্গে সব মৃত মশা বাইরের রাস্তায় কাগজে মুড়িয়ে পুড়িয়েছিল! কী আজব!”

—             “হ্যাঁ, তারপর থেকে কতরকম ধোঁয়া বের হয় দেখেছেন ওই বাড়িটা থেকে? জানলা দরজা যদিও বন্ধ করে রাখে সবসময়ই, তবু ধোঁয়ার আভাস পাওয়া তো যায় একটু আধটু। মনে হয় ওসবই ওই মশা তাড়ানোর ধূপের ধোঁয়া!”

—             “কী জানি বাবা! আমি তো আর ওই বাড়ির পাশ দিয়েও যাই না। খোকাকেও বলে দিয়েছি ওদিকে যেন না যায়।”

—             “সবাই মিলে চেষ্টা করে ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয় না?”

—             “সে চেষ্টা তো ও-পাড়ার পিন্টুর বাবা-মা একবার করেছিল। কিন্তু ওই মেয়েই তো তেড়ে গিয়েছিল ওদের দিকে।”

কথার পিঠে কথা চলছে। কখনও আলোচনা, কখনও সমালোচনা। কিন্তু কেউই কোনও সমাধানে পৌঁছতে পারেনি এখনও অবধি।

আলোচনার কেন্দ্রীয় মেয়েটির নাম শ্রেয়া। বছর দুই আগে যার বাবা-মা মাত্র ছ’মাসের ব্যবধানে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে তাদের মেয়েকে ছেড়ে চলে যায়, তার সঙ্গে রেখে যায় অগাধ সম্পত্তি। বরাবরই এ-বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের যাতায়াত তেমন দেখা যায়নি। শোনা গিয়েছে মেয়েটি ভালো ছাত্রী, চাকরিও করছিল তখন এক বেসরকারী সংস্থায়, যদিও মা-বাবার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারাটা কঠিনই ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই সে চাকরি ছেড়ে দেয় এবং প্রায় তখন থেকেই এক তরুণের সঙ্গে সে এই বাড়িতে লিভ টুগেদার করতে শুরু করে। পাড়ার লোকেরা প্রথম প্রথম উষ্মা প্রকাশ করেছিল, কিন্তু তা আদপে ধোপে টেকেনি। তরুণটি কে, কোথায় বাড়ি তার, কেউই কিছু জেনে উঠতে পারেনি। কোনওদিনই ওই বাড়ি থেকে বাইরে বের হত না সেই তরুণ, তবু ঘরের জানালা বা ব্যালকনিতে তাকে দূর থেকে দেখা যেত বৈকি। যতটুকু বাইরে বের হওয়ার, মেয়েটিই হত। আস্তে আস্তে ওই বাড়ির ব্যাপারে সকলের মনেই এক বিতৃষ্ণা জন্মে উঠেছিল। যদিও গত ছয় মাস ধরে আর সেই তরুণকে আর দেখা যায়নি। এক অতি উৎসাহী প্রতিবেশিনী এ ব্যাপারে প্রশ্ন করায় শুধু এটুকুই উত্তর পেয়েছিল… ‘ও চলে গিয়েছে।’

* * * * *

কিছুদিন কেটে গিয়েছে। আবার এক মধ্যরাত। এ পাড়ার প্রায় সকলেই ঘুমের দেশে, শুধু একজন বাদে। সে এখন ঘুমাতে ভয় পায়। যদিও ঘুম তো এসেই যায়। তবু সে চেষ্টা করে যতটা সম্ভব না ঘুমিয়ে থাকার। হোম ডেলিভারিতে খাবার আনিয়ে খাওয়াই বছর দুয়েক ধরে তার অভ্যাস। যদিও ডেলিভারি বয়টিও মেয়েটিকে একটু ভয়ই পায়। কোনওরকমে খাবার দিয়ে পালাতে পারলেই যেন সে বাঁচে। নেহাত মাস গেলে টাকা পেতে কখনও দেরি হয় না, তাই এই আজব মেয়েকে খাবার দিতে আসে সে।

“কেউ বোঝে না আমায়, কেউ না। প্রতি মাসে দু’-একটা করে এমন স্বপ্ন দেখলে ভালো থাকা যায় নাকি? বাবার প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে দেখিয়ে জোগাড় করা ঘুমের ওষুধও সব শেষ হয়ে গিয়েছে। যদিও ওগুলো খেলেই যে স্বপ্ন আসত না, তাও তো না। তুমি ফিরে এসো প্লিজ।”

মোবাইলের এপাশে কাউকে কাঁদতে কাঁদতে বলে চলেছে সেই মেয়ে। একটু পরে সে মোবাইলটা ছুড়ে খাটে রেখে দিল সে।

এভাবে বাঁচা যায়? মাসে একবার হলেও বিচ্ছিরি এক স্বপ্ন সে দেখবেই। এক এক বার এক এক ধরনের। স্বপ্ন তো নয়, যেন ঘোর বাস্তব। স্বপ্নের মধ্যের প্রতিটা মুহূর্তের ভয়াবহতা সে অনুভব করতে পারে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পরেও।

মশা বা ইঁদুর বা পিঁপড়ে, প্রত্যেকেই তার স্বপ্নে অন্যরকম এবং ভয়াবহ। সকলেই তাকে কষ্ট দিতে চায়। সকলেই যেন তাকে তার যোনিপথকে উদ্দেশ্য করেই নিজের জীবন অতিবাহিত করতে এসেছে। নাঃ। ‘ও’ কেন এরকম করল? কেন ‘ও’ চলে গেল? ‘ও’ থাকলে এরকম হত না কখনওই। কত সুখের রাত, কত আনন্দের সময় তারা একসঙ্গে কাটিয়েছে। এখন আর কাউকে সহ্য হয় না!

কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েই পড়ল শ্রেয়া। তার কিছুক্ষণ পরেই স্বপ্নে টিকিটিকির দল এসে পড়ল তার শরীর স্পর্শ করতে। জিব বের করে একটা মোটা টিকটিকি তার স্তনবৃন্তে নিজের লালারস মাখিয়ে যাচ্ছে। ছটফট করছে শ্রেয়া। ঘুম ভেঙে উঠতেই হবে। কিন্তু সে নিরুপায়। এত তাড়াতাড়ি তার ঘুম ভাঙার নয়।

দলের সবথেকে মোটা টিকটিকিটা তার পা বেয়ে এগিয়ে চলেছে। শ্রেয়া পা নড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু তার যাবতীয় প্রতিরোধ ক্ষমতাই যেন লোপ পেয়েছে। টিকটিকিটা তার যোনিতে বসে চাটতে শুরু করল। নিজের দু’-হাতের সকল শক্তি সঞ্চয় করে সে টিকটিকিটাকে ধরে ফেলতে যাওয়ার আগের মুহূর্তেই যোনিতে প্রবেশ করে ফেলল টিকটিকি।

“ও মা-আ-আ-আ-আ-আ-আ…”

ঘুম ভেঙে গেল শ্রেয়ার।

* * * * *

পরের দিন সকাল থেকে সেই পুরনো দোতলা বাড়িতে যত টিকটিকি আছে, যতটা সম্ভব তাদের খুঁজে খুঁজে মেরে ফেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজই করে চলেছে সেই মেয়ে। প্রায় বারোটা টিকটিকির নিধন করে বাইরে বেরিয়ে চিৎকার করতে করতে সেগুলো ফেলে গেল সে।

—             “ওই দ্যাখ রে, আবার মাথাটা বিগড়েছে।”

—             “সকাল থেকেই এ বাড়ির ভেতর থেকে ওর চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। তখনই বুঝেছিলাম আজ আবার একটা কিছু ঘটতে চলেছে।”

—             “এটা তো এখন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু করার নেই।”

ওদিকে যাকে নিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে কথা চলছে, সেই হাসতে হাসতে ঢুকে গেল বাড়ির ভেতরে। বন্ধ করে দিল দরজা সশব্দে।

—             “দেখলেন ব্যবহারটা?”

—             “না দেখে আর উপায় আছে?”

—             “ওই বাড়িতে কখনও ঢুকেছেন আপানি?”

—             “হ্যাঁ, একবার গিয়েছিলাম। অনেক পুরনো আমলের আদি ঘরানার বাড়ি। ওই মেয়ের মা, বাবা বেঁচে থাকতে একবার গিয়েছিলাম। যদিও ওরা কোনওদিনই তেমন কারও সঙ্গেই মিশতেন না, তবু আমার মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে যেতে তো হতই। তখনই দেখেছিলাম বাড়ির ভেতরটা। কেমন যেন অদ্ভুত সব ঘরগুলো। ঘরের ভিতর ঘর, অনেক অনেক ঘর। দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনও অন্ধকোটর। তবে আমাকে অবশ্যি চা-বিস্কুট খাইয়েছিলেন ওনারা। মেয়েটি সেই সময় তার মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজ করছিল। মিথ্যা বলব না, অসম্মান কিছু করেননি। যদিও আমার মেয়ের বিয়েতে ওনারা আসেনওনি। ভদ্রলোক আগেই বলে দিয়েছিলেন অনুষ্ঠান বাড়িতে ওনারা যান না। তবু্ পরের দিন সকালে এসে একটা সোনার দুল দিয়ে গিয়েছিলেন আমার মেয়ের হাতে।”

—             “বলেন কী? সোনা?”

—             “হ্যাঁ। ওদের তো অনেক সম্পত্তি শুনেছিলাম। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত। ভদ্রলোক কিছু একটা ভালো পদে চাকরিও করতেন।”

আবার কথার পিঠে কথা। আসলে যত দিন যাচ্ছে, এ বাড়ি নিয়ে কৌতূহল লোকের মনে বেড়েই চলেছে। সেই যে প্রথমে মেয়েটির বাবা, তার কিছুদিন পরে মেয়েটির মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল, কিন্তু দুই প্রচেষ্টাই বিফলে যায়… সেই থেকেই মেয়েটির আচরণে পরিবর্তন আসতে থাকে, যা এখন সকলের আড্ডার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।

* * * * *

বেশ কিছুদিন হল সময়টা এখন বেশ ভালো যাচ্ছে। স্বপ্নগুলো অনেকদিন হল জ্বালাতন করেনি তাকে। শ্রেয়ার মন বেশ ফুরফুরে আজ। হোম ডেলিভারির ছেলেটা এসে একটু আগেই খাবার দিয়ে গেল শ্রেয়াকে।

রুটি আর চিকেনকষা খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলল শ্রেয়া। হালকা মিউজিক চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল শ্রেয়া।

রাত প্রায় তিনটে। শ্রেয়া আবার ছটফট করতে শুরু করেছে। স্বপ্নের ভিতরে এক নরকঙ্কাল উঠে আসছে শ্রেয়ার শরীরের উপর। তার হাতে রয়েছে শ্রেয়ারই বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা খারাপ মোবাইলটা, যেটা নিয়ে এখনও শ্রেয়া কথা বলে চলে এর-ওর সঙ্গে একতরফা।

রাতের পোশাক খুলে দিয়ে শ্রেয়ার উন্মুক্ত শরীরে কঙ্কালটি লেপটে রয়েছে। শ্রেয়া চেষ্টা করছে তাকে সরিয়ে দেওয়ার, কিন্তু বরাবরের মতোই অপারগ সে এখন।

শ্রেয়ার যোনিপথ চেটে চলেছে কঙ্কালটির করোটি থেকে বের হওয়া এক লাল টুকটুকে জিভ।

আর পারা যাচ্ছে না। মনের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে শ্রেয়া নিজের ঘুম ভাঙাতে সক্ষম হল। দরদর করে ঘেমে চলেছে সে এখন। একটা বোতল থেকে সম্পূর্ণ জল খেয়ে ঘেমে ওঠা শরীরে আর একটা বোতলের জলটুকু ছিটাতে লাগল সে। সঙ্গে শুরু হল হাউ হাউ কান্না।

* * * * *

পরের দিন সকাল নয়টা। রাস্তার ট্যাপ কলে স্নান করতে এসেছেন শ্রেয়ার প্রতিবেশী এক প্রৌঢ়… বহুদিনের অভ্যাস। দু’-তিনজন বাজারের ঝোলা হাতে নিয়ে রওনা দিয়েছে সবেমাত্র বাজারের উদ্দেশে, এমন সময় শ্রেয়া চিৎকার করে নামতে নামতে এক নরকঙ্কাল ও তার নিজের মোবাইলটা নিয়ে এসে ফেলে দিল বাইরে।

ঘটনার আকস্মিকতায় সকলে শঙ্কিত এবং হতভম্ব!

এখনও চিৎকার থামেনি তার…

“এই যে ফেলে দিয়ে গেলাম তোমাকে। আমি সম্পূর্ণ একা থাকতে চাই, বুঝলে? ইঁদুর, মশা, পিঁপড়ে, টিকটিকি, খারাপ হওয়া মোবাইল বা তুমি, কাউকেই লাগবে না আমার। আমাকে ঠকাতে এসেছিলে, তাই না? শুধু সম্পত্তির লোভে আমার সঙ্গ তুমি পেতে চেয়েছিলে, তাই তো? সব বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম আমি। তাই তো উচিত শিক্ষাও দিয়েছি তোমায়। হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ! মাথায় এক লাঠির বাড়ি আর শেষ! একটুও রক্ত বের হল না, তবু তুমি শেষ! তাও তোমার প্রতি মায়া কাটাতে পারিনি আমি, তাই এতদিন ধরে ভেতরের উঠানের গর্তেই তোমাকে মাটি চাপা দিয়ে রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু আর না! এই তোমার সব মায়া কাটিয়ে তোমাকে বের করে ফেলে গেলাম আমি।”

ততক্ষণে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে থানায় ফোন করে দিয়েছেন কলতলার সেই লোকটি, কথা চলছে… “হ্যালো স্যার, আমাদের এখানে এক বাড়ি থেকে একটি কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে… হ্যাঁ হ্যাঁ, মানুষের কঙ্কাল… আরে আরে পরে শুনবেন সব… এক পাগল মেয়ের ঢ্যামনামি যতসব… আগে আসুন আপনি তাড়াতাড়ি…”

শ্রেয়া লোকটিকে উদ্দেশ করে চিৎকার করে বলে উঠল, “ভিতরে আর একটা লাশও আছে। বলে দিন আপনি।”

বলেই ছুটে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল সে।

—             “আরে ধর ধর, মেয়েটাকে ধর। পালিয়ে যাবে নাহলে।”

পিছনে ছুটল এক যুবক। যদিও একটু পরেই অন্ধকারে পথ গুলিয়ে ফেলে ফিরেই এল…

—             “বুঝলে কাকা, বাড়ির ভেতরটা বেশ জটিল। আগে বরং পুলিশ আসুক।”

* * * * *

পাড়ায় ভিড় উপচে পড়ছে। আধ ঘণ্টা পরে পুলিশ এসে বাড়ির ভেতরে ঢুকে উদ্ধার করল গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়া শ্রেয়ার দেহ। ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে বললেন, “মনে হচ্ছে গত ভোররাতেই তার প্রাণ চলে গিয়েছে।”

দু’জন উপস্থিত প্রতিবেশী আতঙ্কে জ্ঞান হারাল তখনই।

.

মোনালিসা সাহা দে

জন্ম মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে। পিতার কর্মসূত্রে স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে কান্দীতে। ছোট থেকেই সাহিত্যানুরাগী, ডায়েরি লেখার অভ্যাস, টুকটাক লেখালিখি, বই পড়ার নেশা জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হয়েও সাহিত্যের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ হেতু স্নাতক স্তরে বাংলা সাহিত্যে পদার্পণ এবং পরবর্তীকালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে এম.এ। বর্তমানে গৃহবধূ ও সাহিত্যচর্চারত। বহু পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত। গত দুই বছর ধরে বেশ কয়েকটি সংকলনেও স্থান পেয়েছে তাঁর লেখা কবিতা ও গল্প। একক গল্প সংকলন – ‘নাগরিক প্রেতাত্মারা’। লেখিকা আবেগপ্রবণ, কল্পনাবিলাসী ও ব্যক্তিত্বময়ী। জীবনে সর্বাধিক বিশ্বাস ও ভালোবাসা ঈশ্বরের প্রতি।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন