অদূরভাষ

তারাপদ রায়

অদূরভাষ

অনেকদিন পরে দুই বাল্যবন্ধুর দেখা। অনেকদিন মানে প্রায় চল্লিশ বছর।

এক ভদ্রলোক দুজনের পরিচয় করিয়ে দিলেন ইনি হচ্ছেন মি. এস চাকলাদার, বিখ্যাত সলিসিটর। আর ইনি মি. এম হালদার, হালদার এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান।

এতক্ষণ দুজন দুজনকে লক্ষ করছিলেন, কেমন যেন চেনা চেনা হাজার হলেও বাল্যবন্ধু তো। এবার পরিচিত হতে দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরলেন, আরে তুই ভ্যাবল না? আরে তুই ক্যাবল না?

সেই কবেকার প্রাণের বন্ধু, তদুপরি এই এতকাল পরে দেখা এবং সেই সঙ্গে কিঞ্চিৎ সুরাপানের ফলে আলিঙ্গন খুবই দীর্ঘ হল।

 আনন্দ-উচ্ছ্বাস কমার পর দুজনে কথাবার্তা হল। এতকাল দেখা না হলেও পুরনো বন্ধুবান্ধবদের সূত্রে ভ্যাবল ক্যাবলের সম্পর্কে এবং ক্যাবল ভ্যাবলের সম্পর্কে খোঁজখবর রাখে।

ভ্যাবলরা কলকাতার পুরনো লোক। তাদের চার পুরুষের ওকালতি ব্যবসা, সলিসিটর ফার্ম। ক্যাবলের বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরে, সে যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে সেই সময় তার বাবা বদলি হয়ে দিল্লি চলে যান। সেই থেকে ভ্যাবল ক্যাবলের ছাড়াছাড়ি।

ভ্যাবল পৈতৃক সলিসিটর ফার্মে ঢুকেছে। ক্যাবল লেখাপড়া শেষ করে এক্সপোর্ট ইমপোর্টের ব্যবসায় ঢুকেছে, কলকাতাতেই কর্মস্থল। দুজনেই মোটামুটি সফল।

কিছুক্ষণ হাসি-গল্প, স্মৃতি রোমন্থনের পর যথারীতি পরস্পর কার্ড বিনিময় হল। স্থির হল, আবার দেখা হবে। সামনের শুক্রবার সন্ধ্যায় ক্যাবলের বাড়িতে ভ্যাবল আসবে।

আজ শুক্রবার। তখন বেলা তিনটে। নিজের অফিসে বসে কাজ করতে করতে ক্যাবলের মনে হল, আজ সন্ধ্যাবেলায় আসার ব্যাপারটা ভ্যাবলকে একবার মনে করিয়ে দেওয়া ভাল।

সেদিনের সেই কার্ডটা মানিব্যাগের মধ্যে ছিল। সেটা বের করল সে। এস চাকলাদার, চাকলাদার, চাকলাদার অ্যান্ড চাকলাদার কোং এই কার্ডটাই কি ভ্যাবলের? একটু চিন্তা করতে ক্যাবলের মনে পড়ল, সেদিন যিনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, চাকলাদারই বলেছিলেন এবং ভ্যাবলদের পদবি যেন চাকলাদারই ছিল, এরকম পদবি শেষ পর্যন্ত মনে থাকে। কিন্তু এস চাকলাদারের এস-টা যে কী, কিছুতেই মনে পড়ল না। আবছা আবছা খেয়াল হচ্ছে মহাভারতের একটা চরিত্রের নাম।

ভাবতে ভাবতে ক্যাবল টেলিফোনের ডায়াল ঘুরিয়েছেন:

-হ্যালো।

–হ্যালো।

–হ্যালো, এটা কি চাকলাদার, চাকলাদার অ্যান্ড চাকলাদার কোম্পানির অফিস?

 –কটা চাকলাদার বললেন?

–সে আবার কী?

–যদি তিনটে চাকলাদার হয়, তবে এটা সেই অফিস। আর যদি চারটে চাকলাদার হয় তবে সেটা এখানকার সাহেবদের জ্ঞাতিভাইদের অফিস, এ বাড়ির ওপাশে।

–মানে?

(নিচু গলায়) মানে আর কী? জ্ঞাতিশত্ৰু, কর্তারা ভিন্ন হয়ে গেছেন? দুই কোম্পানির দারুণ ঝগড়া।

–তা বুঝলাম। আমি কার্ডে গুনে দেখছি ঠিকানায় তিনটে চাকলাদার লেখা আছে। এই অফিসই হবে, আপনি মিস্টার চাকলাদারকে একটু লাইনটা দেবেন?

–কোন চাকলাদার? সাহেবরা তো সবাই চাকলাদার।

মিস্টার এস চাকলাদার।

সুবিধে হচ্ছে না। এ বাড়িতে সবাই তো এস চাকলাদার, পুরো নাম বলতে পারেন?

–দেখুন, ঠিক মনে করতে পারছি না। চার অক্ষরে নাম, মহাভারতের একটা চরিত্রের নামে নাম।

–আরে মশায় এটা সলিসিটর অফিস। ওসব হেঁয়ালি ধাঁধা করবেন না।

প্রায় স্বগতোক্তি) কী করা যায়।

–আচ্ছা, শুনুন। আমি আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। আপনি কাকে চাইছেন, সিনিয়র পার্টনার বা জুনিয়র পার্টনার, ওয়ার্কিং পার্টনার না স্লিপিং পার্টনার, কাকে?

–তা আপনাদের সিনিয়র পার্টনারের বয়েস কত হবে?

–ঠিক বলতে পারব না। সত্তর-পঁচাত্তর তো হবেই।

জুনিয়র পার্টনার?

 –পঞ্চাশ।

কী নাম ওঁর?

–এস চাকলাদার।

–আপনি তো বললেন শুধু এস বললে হবে না। পুরো এস-টা কী?

সহদেব। মি. সহদেব চাকলাদার।

-ইউরেকা। ইউরেকা। ওই সহদেবই তো মহাভারতের চরিত্র। জুনিয়র পার্টনার সাহেবকে দয়া করে লাইনটা দিন।

–স্যারকে কী বলব?

বলুন হালদার এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্টের চেয়ারম্যান কথা বলবেন।

–(একটু পরে) স্যার বলছেন, উনি আপনাকে ঠিক চিনতে পারছেন না।

বলুন, এম. হালদার।

একটু পরে) না উনি তো চিনতে পারলেন না। আচ্ছা আপনি সরাসরি সাহেবের সঙ্গে কথা বলুন।

–হ্যালো, আমি চাকলাদার, চাকলাদার অ্যান্ড চাকলাদার কোম্পানির জুনিয়র…

–আরে তুই তো ভ্যাবলা।

–আরে তুই তো ক্যাবলা।

সন্ধ্যাবেলায় তোর বাড়িতে যাচ্ছি তো। ফোন কেন?

–ঠিক আসছিস তো?

নিশ্চয়।

–দেখা হবে।

সকল অধ্যায়

১. পঞ্চতন্ত্রের শেষ গল্প
২. খেজুরে গুড়ের সন্দেশ
৩. রেলবাজার স্টেশন
৪. চলন্তিকা
৫. জারিনা বিবি
৬. আরম্ভ
৭. মূল কাহিনি
৮. ব্লটিং পেপার
৯. ছোটসাহেব
১০. হন্তদন্ত
১১. ভাল খবর, খারাপ খবর
১২. হাস্যকর
১৩. সর্বাঙ্গসুন্দরের কবিতা
১৪. চেয়ার
১৫. মার্জার পুরাণ
১৬. কাঁঠালহাটির গল্প
১৭. গয়া-গঙ্গা ভ্যারাইটি
১৮. লালমোহনের বিপদ
১৯. পটললালের বিপদ
২০. চর্মন্তুদ অথবা জুতো ও পটললাল
২১. বিবাহঘটিত
২২. একদা প্রভাতকালে
২৩. ফুটবল
২৪. রাঁধি মাছ না ছুঁই তেল
২৫. ছত্র বর্ধন
২৬. বিপদ ও তারাপদ
২৭. পটললাল, চলচ্চিত্র ও লেখক
২৮. অদূরভাষ
২৯. ধর্মাধর্ম
৩০. চাষির মুখে হাসি
৩১. বেশ-বেশ
৩২. ২৫০%
৩৩. একটি গল্পের নবজন্ম
৩৪. এখনই
৩৫. বইমেলায় পটলবাবু
৩৬. একটি পুস্তক সমালোচনা
৩৭. লক্ষ্মীর প্রত্যাবর্তন
৩৮. জটিলেশ্বর
৩৯. ডবল পটললাল
৪০. রোশনচৌকি
৪১. সুধানাথবাবু মন্ত্রী হলেন
৪২. ভাগলপুরের পাঞ্জাবি
৪৩. শেষ অশ্বারোহী
৪৪. স্বর্গের চাবি
৪৫. আরশোলা এবং নিদারুণ বার্তা
৪৬. একটি অখাদ্য গল্প
৪৭. একটি আদ্যোপান্ত দুর্ঘটনা
৪৮. গোরুর গল্প
৪৯. ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের চিঠি
৫০. আবহাওয়া
৫১. ঘুঘু কাহিনি
৫২. সাক্ষাৎকার
৫৩. ভজহরি চাকলাদার
৫৪. জয়াবতী ও জয়গোপালের কাহিনি
৫৫. নিরুদ্দেশ জানলা
৫৬. খদ্দের
৫৭. ভ্রমণকাহিনি
৫৮. লাথ্যৌষধি
৫৯. বাণেশ্বরের রোগমুক্তি
৬০. জীবনবাবুর পায়রা
৬১. মনোজ সান্যালের গল্প
৬২. ভজগোবিন্দ ভোজনালয়
৬৩. নবারুণবাবু সুখে থাকুন
৬৪. কণ্টকাকীর্ণ
৬৫. বেঁচে আছি
৬৬. সঞ্চয়িতা
৬৭. পুরনো পল্টন
৬৮. রেটটা একটু কমান
৬৯. গেঞ্জি
৭০. ভিখারি বিষয়ে
৭১. বইমেলা
৭২. পাদুকার বদলে
৭৩. নামাবলী
৭৪. পাপি সুইমিং স্কুল
৭৫. টমাটো সস
৭৬. গয়া ১৯২৪
৭৭. টাইপ-রাইটার
৭৮. দুই মাতালের গল্প
৭৯. মহামহিম
৮০. জয়দেবের জীবনযাত্রা
৮১. একদিন রাত্রে
৮২. কালমেঘ
৮৩. চশমা
৮৪. সার্জন সাহেবের বাড়িতে
৮৫. কবিতা ও ফুটবল
৮৬. এন-আর-আই
৮৭. গুপ্তপ্রসঙ্গ
৮৮. দাঁত
৮৯. একশো টাকার ভাঙানি
৯০. সান্যাল স্লিমিং
৯১. হাতে খড়ি
৯২. অন্য এক মাতালের গল্প
৯৩. অবসরের দিনলিপি
৯৪. বিমান কাহিনি
৯৫. শালিক ও শ্যালিকা
৯৬. তরমুজের বীজ
৯৭. টালিগঞ্জে পটললাল
৯৮. পটললাল ও মধুবালা
৯৯. নীল আলো
১০০. পাঁচ-পাঁচ
১০১. বেগুন, মোচা এবং কাফকা
১০২. হৃদয় ঘটিত
১০৩. অবিচ্ছিন্ন
১০৪. চিকিৎসা
১০৫. কে মারা যাচ্ছে?
১০৬. পটললাল ও মিস জুলেখা
১০৭. নিজেকে জানো
১০৮. ভাল-খারাপ
১০৯. ব্যাঙ
১১০. বরাহমিহিরের উপাখ্যান
১১১. বিবি এগারো বারো
১১২. হুঁকো
১১৩. ফুঃ
১১৪. স্বর্গের গল্প
১১৫. হরিনাথ ও হরিমতী
১১৬. জীবনযাপন
১১৭. ফুলকুমারী
১১৮. জতুগৃহ
১১৯. বিষ
১২০. বাঁচার মতো বাঁচা
১২১. নস্যি
১২২. ডিম
১২৩. এক প্রধানের গল্প
১২৪. আবগারীশ্বরী
১২৫. কাণ্ড-কারখানা
১২৬. আধকপালে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন