একদা প্রভাতকালে

তারাপদ রায়

একদা প্রভাতকালে

০১.

শীতের হালকা আমেজ। বাতাসে একটু শিরশিরানি। পৌষ মাসের এই সময়টা কলকাতায় ভারি মধুর। গত বছর এ সময় হাড়কাঁপানো, রক্ত-হিম করা ঠান্ডায় দেশে ছিলাম, সেই জন্যেই বোধ হয়। কিংবা বয়েস বেড়ে যাচ্ছে, আর কতগুলো শীত-বসন্ত এ জীবনে আসবে জানি না, তাই শীতঋতু এবার খুব উপভোগ করছি। সুযোগ পেলেই বাড়ির সামনের চাতালে কিংবা পাশের পার্কে গিয়ে সকালবেলায় রোদে দাঁড়াই।

আমাদের দোতলার শোয়ার ঘরের চিলতে বারান্দাটায় খুব সকালে একটু রোদ আসে। সাড়ে সাতটা বাজার আগেই রোদটা সরে যায়। প্রায় সময়ই তাই সুযোগ হয় না বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ানোর, বাজারে ছুটতে হয়।

আজ খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙেছে। সাতটা এখনও বাজেনি। চোখ মেলে দেখি শিয়রের দিকের জানলা দিয়ে আবছায়া রোদ আমার লেপের ওপরে এসে পড়েছে। অর্ধাঙ্গিনী বিছানার পাশে নেই, নীচতলায় চায়ের বাসনের টুংটাং শব্দে তার সরব উপস্থিতি টের পাচ্ছি।

অন্যদিন আধ-ঘুমে, আধা-জাগরণে এ সময়টায় লেপমুড়ি দিয়ে পড়ে থাকি। বিছানায় হস্তবাহিত এক পেয়ালা ধূমায়িত চা এসে পৌঁছায়, তারপর শয্যাত্যাগ করি।

আজ কী যে মতিভ্রম হল!

লেপটা শরীরের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলাম। যাই, সরকারি চাতালে কিংবা পার্কে নয়, নিজের বাড়ির বারান্দার ক্ষণিক রোদে একটু দাঁড়াই। কিন্তু বারান্দায় পৌঁছতে গেলে বারান্দার দিকের দরজাটা খুলতে হবে। এবং সেটা একটা সমস্যা।

আমাদের এই নতুন বাড়ির কয়েকটা দরজা, বিশেষ করে এই দোতলা ঘরের সামনের দিকের দরজাটা একটু গোলমেলে।

গোলমালের ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলি।

স্কুলপাঠ্য বিজ্ঞান বইতে পদার্থবিদ্যার অধ্যায়ে তাপ বিষয়ে বলা আছে।

তাপে পদার্থ প্রসারিত হয়, বেড়ে যায়। আর শৈত্যে পদার্থ সংকুচিত হয়, ছোট হয়ে যায়।

 একদা এক বিদ্যালয়ের বালিকাকে পদার্থ বিজ্ঞানের তাপের এই প্রসার এবং সংকোচনের বিষয়ে একটি উদাহরণ দিতে বলা হয়েছিল।

সে বলেছিল, দিন।

বিস্মিত দিদিমণি জিজ্ঞাসা করেন, দিন? দিন কেন?

মেয়েটি বলেছিল, গরমের দিনে দিন বড় হয়, আর শীতে দিন ছোট হয়ে যায়।

আমাদের ঘরের সামনের এই দরজাটা উক্ত বালিকার দিন-রাতের হ্রাস-বৃদ্ধির উদাহরণের মতোই গ্রীষ্মে বিশেষ করে বর্ষায় ফুলে-ফেঁপে ওঠে, তখন আর চৌকাঠের মধ্যে গলে না। ছিটকিনি লাগানো সম্ভব হয় না। দুটো কড়া লাগিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখি।

আবার শীতে সংকুচিত হতে থাকে, তখন ধীরে ধীরে চৌকাঠে গলিয়ে যায়। অবশেষে শুকোতে শুকোতে এমন হয় যে দরজা আর চৌকাঠের মধ্যে প্রায় এক-দেড় ইঞ্চি ফাঁক দেখা দেয়। হয়তো কাঠটা কাঁচা ছিল, তাই।

অবশ্য সারা বছরে দিন পনেরো কমাবাড়ার মধ্যবর্তী সময়ে দরজাটা মোটামুটি ফিট করে। বছরের এই সময়টায় সেটা সম্ভব হয়।

এ বছর কাল রাতেই প্রথম দরজাটা চৌকাঠের মধ্যে প্রবেশ করেছে, অবশ্য তার জন্যে কাল রাতে শোয়ার আগে আমাকে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হয়েছিল।

বারান্দায় রোদে দাঁড়াব বলে আজ সকালে দরজাটা খুলতে গিয়ে দেখি বন্ধ করতে যতটা কষ্ট হয়েছিল, দরজাটা খোলা তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্টসাধ্য।

অনেকদিন আগে আমি একটা কবিতায় লিখেছিলাম, অথচ বাসনা ছিল, শীতের রৌদ্রের মতো জনপ্রিয় হব। সেই আমি রৌদ্রস্নাত হওয়ার জন্যে আজ মরিয়া। তালা লাগানোর কড়া ধরে ভেতরদিক থেকে প্রাণপণ টান দিলাম।

ঠিক সেই সময়ে আমাদের কাজের মেয়েটি একতলা থেকে চায়ের পেয়ালা নিয়ে আমার ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। হঠাৎ সজোরে আকর্ষিত দরজা দড়াম শব্দ করে বিদ্যুৎগতিতে খুলে গেল। আমি ঘরের মধ্যে ছিটকিয়ে গিয়ে পড়লাম কাজের মেয়েটির গায়ে। গরম চায়ের পেয়ালাসহ সে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল, ঝনঝন করে পেয়ালা পিরিচ ভাঙল, গরম চায়ে ফোঁসকা পড়ে গেল মেয়েটির হাতে। সে ওরে বাবারে মেরে ফেলল রে বলে আর্তনাদ করতে লাগল। আমার স্ত্রী একতলা থেকে ছুটে এসে আমার দিকে অতিশয় সন্দেহাকুল দৃষ্টিতে তাকাতে লাগলেন। একটু পরে কাজের মেয়েটিকে নিয়ে তিনি পাড়ায় ডাক্তারবাবুর কাছে চলে গেলেন।

০২.

আমি মূৰ্ছাহতের মতো ঘরের মধ্যে খাটের বাজু ধরে ত্রিভঙ্গমুরারি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

সকালবেলায় শুকনো মুখে এখনও জল দেওয়া হয়নি। এককাপ চা পর্যন্ত কপালে জোটেনি। তার ওপরে এই বেকায়দা এবং অপমান।

আমার কিছু হয়েছে কিনা সে বিষয়ে গৃহিণী আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করে পরিচারিকাকে ডাক্তার দেখাতে চলে গেলেন, ব্যাপারটা আমার মোটেই ভাল লাগেনি।

তবে সঠিক কথা এই যে, পরিচারিকার সঙ্গে সংঘর্ষে আমি তেমন বিধ্বস্ত হইনি। একটু বেকুব বনেছি এবং একছলক গরম চা পায়ের পাতায় পড়েছে।

কিছুক্ষণ খাটের বাজু ধরে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর এবার বারান্দার দিকে তাকালাম।

শীতের সকালের মোলায়েম রোদে ঝলমল করছে বারান্দা। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে, সে বাতাসে শীতের তীক্ষ্ণতার চেয়ে বসন্তের আহ্লাদ অনেক বেশি।

মনের দুঃখ মনে রেখে ধীরে ধীরে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। সাড়ে তিনফুট রেলিং দিয়ে ঘেরা ঝুল বারান্দা, ওপরদিকটা খোলা। বারান্দার সামনেটা রাস্তার দিকে, পেছনটা পার্কের দিকে।

এই অনতিদূর বসন্তে পার্কে নানারকম চেনা-অচেনা পাখি। যথারীতি কয়েকটা শালিক হুটোপাটি খাচ্ছে। পার্কের মধ্য দিয়ে পায়ে চলার পথের ধুলোয় ছাতারে পাখিরা গড়াগড়ি খাচ্ছে। কোনও একটা গাছের পাতার আড়ালে বসে চিরদিনের ঘুঘু পাখি থেমে থেমে বিলম্বিত লয়ে ডেকে যাচ্ছে, ঘু-উ-উ-উ-ঘু-ঘু।

এইরকম একটি সকালের জন্যে মানুষ সারাজীবন অপেক্ষা করে দুঃখ-দৈন্য, শোক-গ্লানি উপেক্ষা করে। কাব্য ও দর্শন আমার মনের মধ্যে চুলবুল করতে লাগল। পার্কের দিকে মুখ করে আমি বারান্দার রেলিং ধরে সূর্যমুখো হয়ে আরামে-আবেশে দাঁড়ালাম।

কিন্তু এ আনন্দ ক্ষণস্থায়ী।

হঠাৎ পিছনদিক থেকে কে যেন আমার মাথায় লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করল। কিছু বুঝবার আগেই আমি বারান্দার মেঝেতে গড়িয়ে পড়লাম। রেলিং উপচিয়ে নীচেও পড়তে পারতাম, ভাগ্য ভাল, অপমৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলাম।

ভূলুণ্ঠিত হলাম বটে, কিন্তু জ্ঞান হারালাম না। আমি অবশ্য সহজে জ্ঞান হারানোর পাত্র নই। আমার বন্ধুরা বলেন, তোমার জ্ঞান নেই, হারাবে কী করে?

বারান্দায় শায়িত অবস্থায় আমার কোলের পাশে পেলাম খুব ছোট কোলবালিশের মতো একটি জিনিস। কিন্তু মোটেই নরম নয়, ভারি শক্ত। একটু কসরত করে জিনিসটিকে চোখের সামনে নিয়ে এসে বুঝতে পারলাম, শক্ত করে মুড়িয়ে দড়ি দিয়ে বাঁধা খবরের কাগজের গোল প্যাকেট।

বাসায় চার-পাঁচটা খবরের কাগজ আসে। সবগুলো একসঙ্গে গোল করে বাঁধা হয়েছে। প্রতিদিনই এইভাবে কাগজ বাড়িতে দেওয়া হয়।

কিন্তু এ যে এত মারাত্মক হতে পারে, আগে কখনও ভাবতে পারিনি। আজকাল অধিকাংশ পত্রিকাই প্রায় ষোলো পৃষ্ঠার অথবা তার চেয়ে বেশি। সেইসঙ্গে বিশেষ সংখ্যা, ক্রোড়পত্র ইত্যাদি। সবকয়টি কাগজ মিলিয়ে এক কেজি না হলেও হাফ কেজির বেশি।

হকার কিশোরের ছুঁড়ে দেওয়া ওই ক্ষেপণাস্ত্র আমার ব্রহ্মতালুতে এসে লেগেছে, পিছন দিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম বলে দেখতে বা বুঝতে পারিনি।

তবে চোট-টোট তেমন কিছু লাগেনি। ব্যথাও পাইনি মনে হচ্ছে। আচমকা পড়ে গেছি এই যা।

সত্যি কথা বলতে কি, শীতের সকালের রোদে ভরা বারান্দায় শুয়ে থাকতে ভালই লাগছিল। একটু পরে ধীরে ধীরে বন্ধন মোচন করে খবরের কাগজগুলো পড়তে লাগলাম। বালিশ নেই, চাদর-তোশক নেই, স্রেফ খালি মেঝের ওপরে শুয়ে থাকা। বারান্দার ওপারে খোলা আকাশ দেখা যাচ্ছে। মৃদুমন্দ শীতের হাওয়া।

সেই কতকাল আগে নৌকোর ছইয়ের ওপরে লম্বালম্বি শুয়ে টাঙ্গাইল সিরাজগঞ্জ ধলেশ্বরী যমুনা পারাপার করেছি, সেইসব প্রকৃতি মনের মধ্যে ফিরে এল।

ঘুঘুটা এখনও ডেকে যাচ্ছে, ঘু-উ-উ-ঘু৷

মিনিট পনেরো পরে সহধর্মিণী দোতলায় এলেন। আমাকে এইরকম শায়িত অবস্থায় দেখে একবারও জানতে চাইলেন না কী হয়েছে। শুধু বললেন, যাও আর আদিখ্যেতা করতে হবে না। মুখ। ধুয়ে এসো, চা খাবে।

গুটি গুটি ভূমিশয্যা পরিত্যাগ করলাম।

০৩.

কবে, কতকাল আগে সেই মহাকবি কালিদাস বলেছিলেন, গৃহিণী গৃহমুচ্যতে অর্থাৎ গৃহিণী ঘর মোছেন। আমার গৃহিণী ঘর মোছেন না। কিন্তু চা-জলখাবার, দুবেলার আহারাদি তিনিই দেখাশোনা করেন। আরও অনেক কিছু করেন এবং সেই সঙ্গে যিনি ঘর মোছেন তারও দেখাশোনা করেন।

 আমার গৃহিণী সুবিবেচিকা এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। তিনি যখন পরিচারিকাকে প্রতিবেশী ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, ডাক্তারবাবুকে আমার অধঃপতনের কথাও সবিস্তার বলেছিলেন।

ডাক্তারবাবু সব শুনে কাজের মেয়ের গায়ে ছলকে-পড়া চায়ের আঁকার জন্যে লোশন এবং অ্যাসপিরিন দিয়েছেন। আর আমার নাকি রক্তচাপ বৃদ্ধির জন্যে এমন হয়েছে, তাই রক্তচাপ স্বাভাবিক করার ওষুধ গৃহিণীকে দিয়ে দিয়েছেন।

কিন্তু এর মধ্যে একটা হযবরল আছে।

আমি শোধবোধহীন, ছোট মাপের, হালকা চালের মানুষ। আমার বিশ্বাস আমার কোনও রক্তচাপ নেই। এ ব্যাপারে কোনওদিন ডাক্তারকেও দেখাইনি।

কিন্তু আমার গৃহিণীর অন্য মত। তিনি বলেন সকলেরই রক্তচাপ আছে। মানুষের নিশ্বাস ফেলার মতো, হৃদস্পন্দনের মতো রক্তচাপও জীবনের সাধারণ লক্ষণ। মারা গেলে রক্তচাপ থাকবে না, শূন্য হয়ে থাকে। কিন্তু বেঁচে থাকলে, কম বা বেশি রক্তচাপের মধ্যে থাকতে হবে।

আমার ঘরোয়া ডাক্তার বলেছেন, লক্ষণ শুনে মনে হচ্ছে, হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেছে। আমি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আসছি। আপনি এখনই গিয়ে এই ট্যাবলেটটার অর্ধেক খাইয়ে দিন। ড্রয়ার খুলে একটা ছোট ট্যাবলেট বের করে দিয়ে ডাক্তার বলে দিয়েছেন, খুব কড়া ওষুধ। পুরোটা দেবেন না যেন।

সতীসাধ্বী পত্নী সেই ট্যাবলেট আঁচলে গিট দিয়ে বেঁধে এনেছেন। এবার আঁচল খুলে বার করে আমার সামনে খাওয়ার টেবিলে রেখে বললেন, এটা অর্ধেক করে খেয়ে নাও।

মোড়ক খুলে অতি ক্ষুদ্র আকারের ট্যাবলেটটি বার করতে করতে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটাই কি আজকের ব্রেকফাস্ট?

স্ত্রী বললেন, এখন তো আধখানা ট্যাবলেট খেয়ে নাও। ডাক্তারবাবু এসে তোমাকে দেখে। ডায়েট চার্ট করে দেবেন। আজ থেকে সেই অনুযায়ী খাওয়া-দাওয়া হবে। আপাতত একটা দুধ-চিনি ছাড়া চা করে দিচ্ছি। তুমি ততক্ষণে ওষুধটা ভেঙে অর্ধেক খেয়ে নাও।

সাধারণ বড়ির চেয়েও ছোট আকারের ওষুধ। ব্যাসার্ধ এক সেন্টিমিটারের এক চতুর্থাংশ হবে।

মোড়ক খোলা ট্যাবলেটটি হাতে নিয়ে আমি সেটাকে দ্বিখণ্ড করায় ব্রতী হলাম। বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ এবং তর্জনীর মধ্যে ট্যাবলেটটির সূক্ষ্ম একদিক শক্ত করে ধরে অন্যদিক ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ এবং তর্জনীর মধ্যে চেপে ভাঙবার চেষ্টা করলাম।

পৃথিবীর কঠিনতম কর্মগুলির তালিকার শীর্ষে থাকা উচিত এই ট্যাবলেট দ্বিখণ্ডীকরণের কাজ। প্রভূত বলপ্রয়োগ করেও কোনও সুবিধে হল না।

ইতিমধ্যে গৃহিণী ধূমায়িত লাল চা নিয়ে এসে গেছেন এবং আমি যে এতক্ষণেও সামান্য একটা ওষুধের বড়ি দুটুকরো করতে পারিনি তাতে রীতিমতো উত্তেজিত। আমাকে অকর্মণ্য বলে সম্বোধন করে তিনি ট্যাবলেটটি আমার হাত থেকে কেড়ে নিলেন এবং টেবিলের ওপরে রেখে একটা ফলকাটা ছুরি দিয়ে ভাগ করতে গেলেন। একটু জোরে চাপ দিতেই ছুরিটির ফলা বরাবর বড়িটি টেবিলের ওপর দিয়ে ছিটকিয়ে জানলাপথে বেরিয়ে আসলে আকাশে উঠে গেল। বলা যায়, মহাশূন্যে বিলীন হয়ে গেল। আমি স্পষ্ট দেখলাম ঊর্ধ্বমুখী বড়িটা আকাশপানে উঠে যাচ্ছে। মুখে বললাম, তু চিজ বড়ি হ্যায়…।

হায়! হায়! করতে করতে গৃহিণী রাস্তায় ছুটে গেলেন। কিন্তু কোথাও সেই বড়িটার চিহ্ন পাওয়া গেল না। তিনি আর বাড়ির মধ্যে ঢুকলেন না, আবার ডাক্তারের কাছে ছুটলেন।

.

দুধ-চিনি ছাড়া লাল চা দেখলে চিরদিনই আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। কী করব, সেই চা নিজেকে একা একা বসে গলাধঃকরণ করতে হল।

এদিকে ঘটনার ডামাডোলে শরীর তছনছ হয়ে গেছে, পেট চোঁ চোঁ করছে। এরপরে আবার ডাক্তার এসে হয়তো সব খাওয়াই বন্ধ করে দেবে, তার চেয়ে এই অবসরে যা পারি কিছু খেয়ে নিই।

সামনে ফ্রিজের ওপরে পাউরুটি রয়েছে। এখন আর সেঁকে নেওয়ার সময় নেই, কঁচা চার-পাঁচ পিস বের করে নিলাম। একটু মাখন মাখিয়ে চিনি দিয়ে খাব।

সামনেই টেবিলের ওপরে মুখবন্ধ গোলাকার স্টিলের কৌটো, ওটাই আমাদের মাখনদানি। কৌটোটা হাতে নিয়ে কৌটোর মুখটা ঘোরালাম। সুন্দর, মসৃণভাবে মুখটা ঘুরছে। কিন্তু ওপরদিকে যত টানি কিছুতে খোলে না।

একে স্টিলের কৌটো, তার ওপরে মাখন রাখা হয়। রীতিমতো পিচ্ছিল। টেনে খোলা অসম্ভব। কৌটোটাকে নিয়ে প্রথমে মেঝেতে, তারপরে দেয়ালে কাত করে ঠুকতে লাগলাম। কিন্তু কিছুই হওয়ার নয়। জোরে ঠুকতে গিয়ে দু-জায়গায় টোল খেয়ে গেল।

অবশেষে মাখনের কৌটোটি গোল করে টেবিলের ওপরে শক্ত করে ধরে সেই তরকারি কাটা ছুরি দিয়ে কৌটো আর মুখের জায়গায় খুব শক্ত চাপ দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে কাজ হল। কৌটোর মুখটা খুলে গিয়ে ছিটকিয়ে আমার কাঁধে লেগে ঝনঝন শব্দে মেঝেতে পড়ল এবং মাখনভরতি কৌটো লাফিয়ে উঠে আমার মুখে এসে লাগল। বিলিতি হাসির সিনেমায় যেমন দেখা যায় আমার ঠোঁটে মুখে চিবুকে গালে মাখন লেপটে গেল।

ঠিক এই সময়ে ডাক্তারবাবুকে নিয়ে স্ত্রী ঘরে প্রবেশ করলেন। আমার অবস্থা দেখে দুজনেই স্তম্ভিত। ডাক্তারবাবু বললেন, এ বয়েসে এভাবে মাখন খাবেন না, একটু রয়েসয়ে খান।

সকল অধ্যায়

১. পঞ্চতন্ত্রের শেষ গল্প
২. খেজুরে গুড়ের সন্দেশ
৩. রেলবাজার স্টেশন
৪. চলন্তিকা
৫. জারিনা বিবি
৬. আরম্ভ
৭. মূল কাহিনি
৮. ব্লটিং পেপার
৯. ছোটসাহেব
১০. হন্তদন্ত
১১. ভাল খবর, খারাপ খবর
১২. হাস্যকর
১৩. সর্বাঙ্গসুন্দরের কবিতা
১৪. চেয়ার
১৫. মার্জার পুরাণ
১৬. কাঁঠালহাটির গল্প
১৭. গয়া-গঙ্গা ভ্যারাইটি
১৮. লালমোহনের বিপদ
১৯. পটললালের বিপদ
২০. চর্মন্তুদ অথবা জুতো ও পটললাল
২১. বিবাহঘটিত
২২. একদা প্রভাতকালে
২৩. ফুটবল
২৪. রাঁধি মাছ না ছুঁই তেল
২৫. ছত্র বর্ধন
২৬. বিপদ ও তারাপদ
২৭. পটললাল, চলচ্চিত্র ও লেখক
২৮. অদূরভাষ
২৯. ধর্মাধর্ম
৩০. চাষির মুখে হাসি
৩১. বেশ-বেশ
৩২. ২৫০%
৩৩. একটি গল্পের নবজন্ম
৩৪. এখনই
৩৫. বইমেলায় পটলবাবু
৩৬. একটি পুস্তক সমালোচনা
৩৭. লক্ষ্মীর প্রত্যাবর্তন
৩৮. জটিলেশ্বর
৩৯. ডবল পটললাল
৪০. রোশনচৌকি
৪১. সুধানাথবাবু মন্ত্রী হলেন
৪২. ভাগলপুরের পাঞ্জাবি
৪৩. শেষ অশ্বারোহী
৪৪. স্বর্গের চাবি
৪৫. আরশোলা এবং নিদারুণ বার্তা
৪৬. একটি অখাদ্য গল্প
৪৭. একটি আদ্যোপান্ত দুর্ঘটনা
৪৮. গোরুর গল্প
৪৯. ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের চিঠি
৫০. আবহাওয়া
৫১. ঘুঘু কাহিনি
৫২. সাক্ষাৎকার
৫৩. ভজহরি চাকলাদার
৫৪. জয়াবতী ও জয়গোপালের কাহিনি
৫৫. নিরুদ্দেশ জানলা
৫৬. খদ্দের
৫৭. ভ্রমণকাহিনি
৫৮. লাথ্যৌষধি
৫৯. বাণেশ্বরের রোগমুক্তি
৬০. জীবনবাবুর পায়রা
৬১. মনোজ সান্যালের গল্প
৬২. ভজগোবিন্দ ভোজনালয়
৬৩. নবারুণবাবু সুখে থাকুন
৬৪. কণ্টকাকীর্ণ
৬৫. বেঁচে আছি
৬৬. সঞ্চয়িতা
৬৭. পুরনো পল্টন
৬৮. রেটটা একটু কমান
৬৯. গেঞ্জি
৭০. ভিখারি বিষয়ে
৭১. বইমেলা
৭২. পাদুকার বদলে
৭৩. নামাবলী
৭৪. পাপি সুইমিং স্কুল
৭৫. টমাটো সস
৭৬. গয়া ১৯২৪
৭৭. টাইপ-রাইটার
৭৮. দুই মাতালের গল্প
৭৯. মহামহিম
৮০. জয়দেবের জীবনযাত্রা
৮১. একদিন রাত্রে
৮২. কালমেঘ
৮৩. চশমা
৮৪. সার্জন সাহেবের বাড়িতে
৮৫. কবিতা ও ফুটবল
৮৬. এন-আর-আই
৮৭. গুপ্তপ্রসঙ্গ
৮৮. দাঁত
৮৯. একশো টাকার ভাঙানি
৯০. সান্যাল স্লিমিং
৯১. হাতে খড়ি
৯২. অন্য এক মাতালের গল্প
৯৩. অবসরের দিনলিপি
৯৪. বিমান কাহিনি
৯৫. শালিক ও শ্যালিকা
৯৬. তরমুজের বীজ
৯৭. টালিগঞ্জে পটললাল
৯৮. পটললাল ও মধুবালা
৯৯. নীল আলো
১০০. পাঁচ-পাঁচ
১০১. বেগুন, মোচা এবং কাফকা
১০২. হৃদয় ঘটিত
১০৩. অবিচ্ছিন্ন
১০৪. চিকিৎসা
১০৫. কে মারা যাচ্ছে?
১০৬. পটললাল ও মিস জুলেখা
১০৭. নিজেকে জানো
১০৮. ভাল-খারাপ
১০৯. ব্যাঙ
১১০. বরাহমিহিরের উপাখ্যান
১১১. বিবি এগারো বারো
১১২. হুঁকো
১১৩. ফুঃ
১১৪. স্বর্গের গল্প
১১৫. হরিনাথ ও হরিমতী
১১৬. জীবনযাপন
১১৭. ফুলকুমারী
১১৮. জতুগৃহ
১১৯. বিষ
১২০. বাঁচার মতো বাঁচা
১২১. নস্যি
১২২. ডিম
১২৩. এক প্রধানের গল্প
১২৪. আবগারীশ্বরী
১২৫. কাণ্ড-কারখানা
১২৬. আধকপালে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন