সোনার কৌটো – ২

আশাপূর্ণা দেবী

অনাথ এদেশের ছেলে নয়, তবে আছে অনেক বছর, মাস্টারী করে মাথার চুল পাকিয়ে ফেলল। তাহলেও পিসিমাই বলে। নচেৎ অনাথ মাষ্টারের বয়সী অনেকেই ঠাকুমাও বলে, বাপ কাকা ‘পিসি’ বলে ডাকে।

শশীঠাকুরুণ নাড়ু বোসের উঠোনের ধারে দাঁড়ান, বৌ উঠেছিস নাকি?

বোসের বৌ ব্যস্তসমস্ত হয়ে বেরিয়ে আসে!

আলগোছে একটা প্রণাম করে বলে, ঠাকরুণ!

আহা থাক থাক, রোজ পেন্নাম কিসের লা?

নাড়ু বোসের বৌ বড় ভক্তিমতী, সে বলে, আপনাকে চারবেলা পেন্নাম করতে পেলেও মানুষ ধন্যি ঠাকরুণ!

দূর বাবা, যতো আলাত পালাত কথা! নাড়ু উঠেছে?

বৌ সভয়ে একবার শোবার ঘরের দিকে দৃষ্টিপাত করে মাথা নাড়ে।

জানি। ওই আয়েসেই ওর মাথাটা খেয়েছে। নচেৎ একবার চাকরী গেলে আর চাকরী হয় না মানুষের? সেই কোন জন্মে চাকরী খুইয়ে সংসারের হাড়ির হাল করে বসে আছে। ছেলেটা ইস্কুলে যায় নিয়ম করে?

নাড়ুর বৌ বলে, হ্যাঁ।

অনাথ মাষ্টারকে বলে শশীঠাকরুণ নাড়ুর ছেলেটাকে ফ্রী করে দিয়েছেন, আর ভাইপোদের বলে নিজের বাড়ির দু তিনটে ছোট ছোট ছেলেমেয়ের জন্যে নাড়ুকে প্রাইভেট টিউটার রাখিয়ে দিয়েছেন।

অবশ্য ভাইপোদের ওই আলসে কুড়ে নাড়ুটার ওপর তেমন ছেদ্দা ভক্তি ছিল না, কিন্তু পিসির কথার ওপর তো কথা চলে না?

শশী ঠাকরুণ বলেছিলেন, তোমরা যদি তোমাদের আপিস কাচারীতে ছোঁড়ার একটা কাজ কম্ম করে দিতে পারতে, তাহলে এ প্রস্তাব আমি করতাম না। পড়াবে যে কতো তা জানতে বাকি নেই আমার, খানিক আটকে রাখবে এই মাত্তর। তবে ও বুদ্ধিহীন বলে ওর বৌটা ছেলেটা ভেসে যাবে, এটা তো ন্যায্য নীতি নয় বাবা? মানুষের সমাজে যখন বাস করছো, তখন মানুষের পরিচয়টা তো রাখতে হবে। তোমরা যদি মাসে মাসে ওকে সাহায্য না করো, তাহলে ওকে ভিকিরিতে পরিণত করা হবে। ওকে একটা কাজ দিয়ে উভয় পক্ষের মান রাখো।

তা নাড়ু বোস ওর ওই শিক্ষকতা রূপ চাকরীটির মাইনে যাই হোক, জিনিসটাকে খুব দামী ভাবে। সসম্ভ্রমে এবং নিষ্ঠার সঙ্গেই কাজটা করে।

নাড়ুর বৌও কিছু কিছু রোজগার করে।

যেমন কেউ এক গামলা ডাল ভিজিয়ে খবর দিয়ে গেল, ও চরণের মা, চারটি বড়ি দিয়ে দেবে?

নাড়ুর বৌ ঘাড় নেড়ে সায় দেয়। তারপরে সেই ডালের কাঁড়ি বেটে বড়ি নিয়ে আসে। তারা ‘তোমার চরণকে মিষ্টি কিনে দিও’ বলে টাকাটা আধুলিটা দেয়। তা এমন অফার প্রায়ই পায় নাড়ুর বৌ। এছাড়া আবার আমসত্বও করে দেয় মাঝে মাঝে।

শশীঠাকরুণ বলেন, ছোট লোকের মেয়েরাই প্রকৃত সুখী। তাদের কোনো কাজে মান অপমান নেই। লোকের বাসন মাজুক, ক্ষার কাচুক, গোয়ালে গোবর দিক, নিন্দে নেই। ভদ্দর লোকের মেয়েদেরই হাত পা বাঁধা, স্বামীর পয়সা থাকলো তো সুখ করো, না থাকলো তো হাড়ে দুব্বো গজাও। এই তোর হয়েছে সেই জ্বালা।

তা’ কার হাড়ে যে দুব্বো গজাচ্ছে, সেটা শশীঠাকরুণ কেমন এক দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পান। কারুর নজরে পড়ে না—ওঁর নজরে পড়ে যায়।

নাড়ুর বৌকে নির্দেশ দিয়ে যান শশীঠাকরুণ, দুপুরবেলা একটা বাটি হাতে যাস দিকিন, চরণের জন্য একটু দুধ আমসত্ত্ব মাখা ভাত দেব। ছেলেটা বড় ভালবাসে।

এটাও অবশ্য সাহায্যেরই আর এক রকম ফের। কোনোদিন চরণের নাম করে দুধ আমসত্ব, কোনোদিন চরণের মার নাম করে ওদের আমিষ ঘর থেকে একটু মাছের ল্যাজা, আর সেই ছুতোয় এক কাঁসি ভাত, কোনো দিন বা চরণের বাপের নাম করে মোচার ঘণ্ট, শাকের ঘণ্ট, যাতে ওদের কিছু খানিকটা সাশ্রয় হয়।

গ্রামে ওরকম অনুগত পরিবার শশীঠাকরুণের বেশ কিছু আছে।

ওদের ওখান থেকে শশীঠাকরুণ বিপিন কোবরেজের বাড়ির দরজায় আসেন। বিপিন কোবরেজ হয়তো তখন বাইরের দাওয়ায় বসে দাঁতন করছে।

শশীঠাকরুণ বলেন, আয়ুর্বেদও একটা বেদ বুঝলি রে বিপিন! শাস্ত্রজ্ঞ হয়ে সদরে দাঁতন করছিস? মা লক্ষ্মী ঢুকবেন কোন দরজা দিয়ে?

বিপিন নিমের কাঠি দাঁতে চেপেই বলে, মা লক্ষ্মী আর এবাড়ির চৌকাঠ মাড়াতে আসছেন না পিসি, ভয় নেই।

আসবেন আর কোথা থেকে, যতো সব লক্ষ্মীছাড়ার আচরণ। তা মা কেমন আছে?

ওই একরকম! কেমন আর থাকা থাকি!

বলি ও আবার কেমন কথা বিপিন?

শশীঠাকরুণ রেগে ওঠেন, গর্ভধারিণী মাকে হেলাফেলা করলে কোনো মাই দোর মাড়াবেন না বিপিন! বদ্যির বেটা হয়ে মায়ের ওই সামান্য আমাশাটা ভালো করতে পারছিস না?

রোগটা সামান্য নয় পিসি!

তোকে বলেছে। একটি টোটকায় এক্ষুনি তোর মাকে বিছানা থেকে ওঠাতে পারা যায় বিপিন! তবে তুই কোবরেজ ব্যাটা থাকতে তোর মা টোটকায় সারবে এটা দিষ্টান্ত খারাপ, তাই দিই না।

বিপিন বলে, তা দেবেন তো দিন না পিসি! তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

ও, আপত্তি নেই! খুব যে বড়ো বড়ো কথা! বলি তোর আপত্তির ধার কে ধারছে রে? আপত্তি আমারই। তাতে তোর যেটুকু বাপসার আছে, ঘুচবে। ভাল দেখে ওষুধ দে।

বিপিন কোবরেজ তথাপি অনমনীয় গলায় বলে, এ বয়সে আর ভাল ওষুধ!

শশীঠাকরুণ জ্বলে যান, বলেন বয়েস তোরও একদিন হবে বিপিন! বয়েস দেখিয়ে অবহেলা করিসনে। তোর মা আমার থেকে বয়সে কম করে সাত আট মাসের ছোটো।

তা’ আপনার মতন তো আর স্বাস্থ্যটি বজায় রাখতে পারেননি?

শশীঠাকরুণ কিন্তু নিজের এই পারগতার উল্লেখে হৃষ্ট হন না। বরং রুষ্ট হয়ে বলেন, আমার কথা বাদ দে বিপিন! বড়ো মানুষের মেয়ে হয়ে জন্মেছি, চিরটাকাল ঘী দুধে আছি। তোর মার তাই? না না, মাকে অবহেলা করবি না, নরকেও ঠাঁই হবে না।

এইভাবেই প্রাতঃভ্রমণটা চালিয়ে যান শশীঠাকরুণ।

পুরুত ভট্টাচার্য থেকে দিনু গোয়ালা পর্যন্ত সব বাড়ির তত্ত্ব নেওয়া চাই।

তবে ওই চাষীভূষোদের প্রতিই যেন বেশী কৃপাময়ী শশীঠাকরুণ। পথে চলতে চলতে বলেন, মাখন তোলা ঘীটা দিয়ে এলি দিনু, দাম নিতে যাবার ফুরসৎ নেই? কী এমন নবাব সিরাজউদ্দৌলা হয়েছিল রে? যাবি, আজই যাবি।

আবার বলেন, হারাণ, এবার বিষ্টির গতিক কেমন মনে হচ্ছে? ধান ভাল উঠবে? …তোর চাক আজ ক’দিন বন্ধ কেন রে, পঞ্চু? কুমোরের চাক, কামারের হাপর, তাঁতির তাঁত, এসব বন্ধ দিতে নেই বুঝলি? আমার ঠাকুরর্দা বলতেন, ওতে ওদের উপোস লাগে! আর উপোস লাগলেই নিশ্বাস পড়ে। একবার করে ছুঁতেও হয়। আর কাজই লক্ষ্মী—বুঝলি পঞ্চু। তুই যতো খাটবি, মা লক্ষ্মী ততো সদয় হবেন। কাল বিস্যুদবার আছে। আমার দুখানা লক্ষ্মীর সরা দিয়ে আসিস দিকিন। এও সাহায্য। তবু যদি পঞ্চু ওতে একটু চাঙ্গা হয়। কাজকর্ম নেই বলেই না—

এতো কাণ্ড করেও কিন্তু শশীঠাকরুণ ভাইপো আর নাতিদের টাইমের ভাতের সময় এসে হাজির হন।

সকলের আপ্রাণ প্রার্থনাতেও রদ হয় না এটি।

প্রার্থনা এই জন্যে, পুরুষ ছেলেদের ফাঁকি দেওয়ার তাল জেনে ফেলা শশীতারা তাদের এক ছটাক মাপের পাকস্থলীর মধ্যে একসের মাল চালান দেবার জন্যে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেন তা রীতিমত কষ্টদায়ক।

কারণ প্রথমেই এসে বলে বসেন, রাত্তিরে যে আনাজ তরকারিগুলো কুটে মলাম বড় বৌমা, সে কি ভূত ভোজন করাতে? কই—এঁচড়ের ডালনা কই? মোচার ঘণ্ট কই? মাছই বা মোটে একখানা কেন? সকাল থেকে ওই সামান্য রান্নাও হয়ে ওঠেনি? তা না যদি হয়ে থাকে, দুখানা পুরের ভাজা করে দিতে পারতে। আসল মানুষদের খাওয়াতেই অবহেলা।

আসল মানুষরা এতে মরমে মরে গিয়ে হাঁ হা করে বলে, না—না, ওসব রান্না টান্না বোধহয় হয়ে গেছে। আমরাই বারণ করেছি।

কেন, বারণ করেছো কেন? বাহাদুরী দেখানো, না বৌদের কুলোবে না এই ভয়ে? সংসারে অভাব?

এ অপবাদে ছেলেরা ঘাড় হেঁট করে, বিবাহিত নাতিরা বলে, আচ্ছা ঠাকুমা, তুমি উকিল হলে না কেন? অপর পক্ষকে কোনঠাসা করতে তোমার তো দেখি জুড়ি নেই। এই সক্কাল বেলা এতো খাওয়া যায়?

বলি এতো দিনেও অভ্যেস হলো না? চিরকাল যখন এই কর্মই করতে হবে তো খাবি কবে তবে?

কেউ খায় না বাবা এতো।

খায় না, তেমনি তাদের চল্লিশের আগেই চালসে ধরে, পঞ্চাশে শিরদাঁড়ায় ঘুণ ধরে। খাওয়ার জোরেই বল শক্তি। খাবি না তো সারাটা দিন যুঝবি কিসের জোরে? বড় বৌমা, রাতের তৈরী ক্ষীর নেই? তাই দাওতো একটু। মাছ খানা শুধু কাঁটা বাছা করে ফেলে দিল। ওরা খেতে চায়না বলে তোমরাও ওদের গোড়ে গোড় দেবে? মাছ না খেলে চোখের জ্যোতি থাকে?

মেজ নাতিটা দুষ্টু হেসে বলে, তোমায় দেখে তো সেকথা বিশ্বাস করা যায় না ঠাকুমা! তোমার যা চোখের জ্যোতি, এখনো একশো বছর আমাদের পাহারা দিয়ে বেড়াতে পারবে।

শশীঠাকরুণ রাগ করেন না, বলেন, তা সেটা মন্দ কি? চোখ কান খুইয়ে হাত পা পড়ে দলা পাকিয়ে বসে থাকাই বুঝি ভাল?

কথা কথা!

অজস্র কথা।

শশী ঠাকরুণের কথার ভাঁড়ারে যেন অনবরত খই ভাজার খোলা চড়ানই আছে। সবাই ভাবে এতো জীবনী শক্তি কোথা থেকে সংগ্রহ করলেন শশীঠাকরুণ?

শশীঠাকরুণের কথায় কেউ রেগে ওঠে না, এই এক আশ্চর্য।

বৌদের কি কম হ্যানস্থা করে কথা বলেন? বুড়ো বুড়ো ছেলেদের কম শাসন করেন? কেউ চোপা করার কথা ভাবতেই পারে না।

শশীঠাকরুণ শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন। এ খবর তাই অনেকের কাছেই দুর্ভাবনার। ফুলপুরের পেরাণ পুতুলটি নে যাচ্ছো পিসি ঠাকরুণ! ফিরতে দেরী কোরোনি। যুগীবৌ বলে।

শশীতারা বলেন, কেন রে আমায় কি মরতে হবে না? ফুলপুরের পেরাণ বললে চলবে কেন?

না চললে কি করবো বলেন? যা হক কথা তাই বলছি। তুমি সেবার ছিক্ষেত্তর গেলে মাত্তর সাতটি দিনের জন্যে, তাতেই গেরাম সুদ্ধু লোক হেঁপিয়ে মরছিল। ফিরে এলে বাঁচা গেল।

শশীঠাকরুণ হাসেন। অতো ভক্তি তুচ্ছ একটা মানুষকে না করে ভগবানকে কর যুগী বৌ!

ওসব জানিনে বাবা! তুমিই আমাদের ভগবান। কবে আসবে বলে যাও।

এই রে বাবা, যাই আগে।

আরো অনেকেই কথাটা যাচাই করে নিতে চাইছে।

কবে আসবেন? কবে আসবেন? আপনি না থাকলে ফুলপুর অন্ধকার।

হয়তো যতটা ভাবে, বলে তার থেকে বেশী, সেটাই সৌজন্য। আর ভাবে না, তাও নর। সবাই বলে শশীঠাকরুণ আছেন না পর্বতের আড়ালে আছি। বলে, দেশসুদ্ধু লোকের উনি গার্জেন। উনি গত হলেই দেখবে সব বেচাল হয়ে উঠবে। ঝি বৌ ওনার ভয়ে ঢীট।

শশীঠাকরুণ বলেন, নাঃ আমাকে দেখছি মরে আবার পেত্নী হয়েই এই ফুলপুরেই এসে বাঁশ বনে টনে আশ্রয় নিতে হবে।

এই শশীঠাকরুণ শ্বশুরবাড়ি চললেন।

সাইকেল রিকশয়—স্টেশনে যেতে হবে।

মদন রিকশাওলা এসে বলে যায়, ঠিক সময় আসবো ঠাকরুণ। সেজবাবু বলে রেখেছে।

সেজ ভাইপো সঙ্গে যাবে।

সাইকেল রিকশ নিয়ে চলে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়িয়ে মদন প্রশ্ন করে, কবে ফিরছেন ঠাকরুণ?

শশীঠাকরুণ জানেন দিন সাতেকের বেশী থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। তবে এই সাতটা দিন মরে পিটে থাকতেই হবে। যে উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন, তাতে ওর কমে হবে না। তবে পষ্ট করে তারিখটা কাউকে বলেন না। যদি গিয়ে না টিকতে পারেন? যদি পরদিনই পালিয়ে আসতে হয়? তাই বলেন, মন হলেই চলে আসবো।

কিন্তু কেন যাচ্ছেন?

তার উত্তর দিয়েছেন, কেন, শ্বশুরবাড়িতে একবার যেতে নেই? ধরে নে তীর্থ দর্শনে যাচ্ছি।

যদিচ সারাজীবনে কেউ কোনদিন শশীতারার এই তীর্থ ভক্তির পরিচয় পায়নি।

তবে যাওয়ার আসল কারণটি জানে শশীতারার সেজ ভাইপো অজিত চাটুয্যে। সে উকিল বলেই জানে অথবা ঠিক বলতে গেলে সেই শশীতারাকে জানিয়েছে।

শশীতারার শ্বশুরবাড়ি বীরনগরে তাদের গুষ্ঠির আর কে কোথায় আছে জানা না থাকলেও—শশীতারার সৎ শাশুড়ী বুড়ি যে আকন্দরডাল মুড়ি দিয়ে এ যাবৎ ইহ সংসারে টিঁকে ছিল, ওটা অজিতই শশীতারাকে জানিয়েছিল এবং এও জানিয়েছিল জমি জমা যা আছে তা নেহাৎ কম নয়। এখন বীরনগর প্রায় টাউন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এখন ওখানের জমি বিঘের দামে কাঠা। বুড়ি তো এযাবৎ সব ভোগ করেছে, সে থাকতে উকি মারতে যাওয়াও অসম্ভব তা জানা ছিল। সম্প্রতি সেই বুড়ি গত হয়েছে, এখন অজিত চুপি চুপি প্ররোচনা পরামর্শ দিচ্ছে, এসময় গিয়ে পড়া দরকার। সৎ শাশুড়ীর ছেলে পিলে যাই থাকুক, শশীতারার তো অর্ধেক হিস্যা?

অতএব?

অতএব ভিটে বাড়ির ভাগ না হোক—বিশ বাইশ বিঘে জমিও অন্ততঃ শশীতারা আইনসঙ্গত ভাবেই পাবেন। যার অর্থ হচ্ছে, বেচলে এখনই বিশ বাইশ হাজার টাকা আর ফেলে রাখলে তো আরো বাড়বার আশা।

ভাইপোর মুখে খবরটা জেনে শশীঠাকরুণ মনে মনে পুলকিত হয়ে উঠলেও, মুখে গাম্ভীর্য রেখে সৎ শাশুড়ীর মরণ স্মরণ করে সবস্ত্রে ডুব দিয়ে এলেন।

পরদিন নোখ কেটে চান করে ভুজ্যিদান করলেন। আর কিছু করার নেই। মরেছেন তিনি মাস দুই আগে।

রেল গাড়িতে যেতে যেতে অজিত হিতকথা শেখাতে থাকে, জ্ঞাতি গুষ্ঠিই তো খাচ্ছে। তারা হঠাৎ তোমায় দেখে পাত্তা দিতে চাইবে বলে মনে হয় না। তুমি কিন্তু শক্ত থেকো পিসি!

শশীতারা বলেন, তুই থাম অজা, তোকে আর আমায় বুদ্ধি দিতে হবে না। নেহাৎ শ্বশুরবাড়ি বলে কথা, তাই তোকে সঙ্গে নিচ্ছি। তা’ছাড়া বিষয় সম্পত্তি নিয়ে ফেরেববাজি করতে হবে, নচেৎ শশীতারা বামনী তোর তক্কা রাখতো নাকি?

তবু অজিত ভুলে ভুলে আর একবার বললো, কেউ যদি খোসামোদ করে মন ভেজাতে আসে, তাহলে ভিজো না।

শশীতারা বললেন, তুই বলবি, তবে আমি ভিজবোনা? নচেৎ ভিজবো?

উকিলের প্যাঁচ নিয়ে অজিত বললো, কেউ তো তোমার যাওয়াটা সুচক্ষা দেখবে না? জ্ঞাতি ট্যাঁতিরা কিছু খেতে দিতে এলে খেও না। কি জানি কোন মতলবে—

শশীতারা বললেন, তুই কি এই মাত্র মায়ের পেট থেকে পড়লি নাকি অজা? কবে কোন জন্মে আমি কারুর কাছে খেয়েছি? বলে—কখনো কোনো বাড়িতে মা দুগগার ভোগের পেসাদই গ্রহণ করি না, মাথায় ঠেকাই, মুখে ঢোকাই না। আমায় এলো সাবধান করতে—খেও না! লোকের বাড়ি খেও না! হুঃ।

তদবধি ভাইপো মুখে তালা চাবি এঁটেছে।

শশীতারা যখন বীরনগরে পৌঁছলেন, তখন বেলা দুটো। বুঝে সুজে একাদশীর দিন বেরিয়েছেন, যাতে সেদিনটায় নিশ্চিন্দি।

সঙ্গে আছে নিজের মতো সামান্য কিছু বিছানা বাসন অবশ্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস পত্র এবং কাপড় চাদর, আর অতি আবশ্যকীয় বস্তুটি বেশ মোটা অঙ্কে। অভয় চাটুয্যে মেয়ের নামে একটা বড় জমি লিখে গিয়েছিলেন, তার আদায় উসুল থেকে শশীতারার হাত খরচাটা হয়, তীর্থ ধর্ম হয়।

এও তো তীর্থেই এসেছেন।

অজিত ভাত খেয়ে এসেছে, সন্ধ্যের গাড়িতে ফিরে যাবে। স্টেশনে চা জল খাবার খেয়ে নেবে।

অজিত আগে এসে লুকিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে গিয়েছিল, তাই সাইকেল রিকশকে বাড়ি চেনাতে অসুবিধে হলো না।

শশীতারা নেমে পড়লেন, অজিত বললো, আমি আসছি। সেটেলমেণ্ট অফিসটা একবার ঘুরে আসি। তুমি কিছু ঘাবড়াবে না, নিজের ডাঁটে ঢুকবে।

শশীতারা বললেন, তোর বাকবিন্যেস দেখে মনে হচ্ছে অজা, তুই যেন একটা খুকীকে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছতে এসেছিস।

অজিত হেসে চলে গেল।

পিসির ওপর তার যথেষ্টই আস্থা, তবু বলা স্বভাব তা’ই বলছে।

শশীতারা তাকিয়ে দেখলেন, বাইরের অংশটা প্রায় পড়েই গেছে। ইট পাটকেল ঠেলে ঢুকতে হয়। ভিতরের উঠানের দরজাটা বন্ধ।

কিন্তু বেশীক্ষণ বন্ধ থাকলো না, সাইকেল রিকশর শব্দ শুনেই দুটো ছোট ছেলে মেয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এসে দেখেই ছুটে ভিতরে চলে গেল।

একটু পরেই গায়ে মাথায় কাপড় টেনে এক প্রৌঢ়া এসে দাঁড়ালেন।

চোখে অসীম কৌতূহল, অনন্ত জিজ্ঞাসা।

শশীতারা তাকিয়ে দেখে অনুমানে নির্ভর করে বলে উঠলেন, যিনি মারা গেলেন সম্প্রতি, তাঁর বেটার বৌ বোধ হয়?

প্রৌঢ়া মাথাটা উঁচু নীচু করে বললেন, আপনি? আপনাকে তো—

না কখনো দেখনি। দেখবে কোথা থেকে? সম্পর্ক রাখলে তো? আমি ওনার সতীন—পো বৌ।

মহিলাটির মুখখানি যদি এতে পাংশুবর্ণ হয়ে যায়, দোষ দেওয়া যায় না তাঁকে।

তাঁরও প্রায় ষাটের কাছে বয়েস, তবু এযাবৎকাল দজ্জাল শাশুড়ীর বৌ হয়েই কাটিয়ে আসতে হয়েছে। এতোদিনে যদি বা ভগবান মুখ তুলে চাইলেন, হঠাৎ একী দুর্গ্রহের আবির্ভাব?

ওনার সতীন—পো বৌ!

তার মানে একজন ভাগের ভাগীদার।

শাশুড়ী মরার খবর পেয়েই কামড়া কামড়ি করতে ছুটে এসেছেন। বলা নেই কওয়া নেই, একেবারে জিনিসপত্র নিয়ে বসবাস করতে এলেন। অথচ জন্মেও দেখা সাক্ষাৎ নেই।

বিনা বাক্যে পাথর মূর্তিতে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি, একটা যে প্রণাম করা উচিত, তাও ভুলে গিয়ে।

শশীতারা অবশ্য অবস্থাটা বোঝেন।

মনে মনে বেশ একটি দিব্য কৌতুক অনুভব করে বলেন, সম্পর্কে গুরুজন হই গো, পেন্নাম একটা করলে জাত যেতো না। যাক তা যেচে মান কেঁদে সোহাগ দরকার নেই আমার। এখন কর্তব্য কর্ম্মটুকু করো দিকি। রিকশওলাকে নিয়ে গিয়ে একটু পরিষ্কার দেখে জায়গা দেখিয়ে দাও, জিনিসটা নামিয়ে আসুক। ও তো আর দাঁড়িয়ে থাকতে আসেনি!

এও একটি বাক্যবাণ।

মহিলাটি দাঁড়িয়েই আছেন।

এতোক্ষণে তিনি একটি প্রণামের ভঙ্গী করে অস্ফুটে বলেন, আপনি ভেতরে যাবেন না?

শোনো কথা। যাবো না তো কি ধূলো পায়ে বিদেয় হবো? দেখতেই তো পাচ্ছো ধূলো পায়ে বিদেয় হতে আসিনি। বাক্স বিছানা নিয়ে এসেছি। ও আগে মালগুলো পার করে আসুক, ভাড়া মিটিয়ে বিদেয় করে তবে ঢুকছি। শাশুড়ী মলেন, তা’ একটা খবর পর্যন্ত দেওয়া নেই! বলি হলেও সৎ শাশুড়ী, খোদ শ্বশুরের পরিবার তো? মরলে হবিষ্যি করতে হয় না? ওমা, সম্পর্কটা স্বীকার পর্যন্ত করা নেই। পাছে দেশের লোক জেনে ফেলে, বুড়ির আরও একটা বৌ আছে। ভাগের ভাগীদার আছে।

মহিলাটি অসন্তুষ্ট স্বরে বলেন, তা আমার বলছেন কেন? আমি তো আপনাকে চোখেই দেখিনি। জানিও না—

দেখনি ঠিকই—শশীতারা তেমনি মনে মনে দিব্য কৌতুকের হাসি হেসে বলেন, তবে জানো না একথা হতেই পারে না। নাও যাও, লোকটা যে সঙের মতন দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ি তো দেখছি পেল্লায়, ঘরদোর ঢের, বাড়ি ভর্তি লোক আছে এমন তো মনে হচ্ছে না। জায়গায় অকুলোন হবে না।

শশীতারা আঁচল ঘুরিয়ে বাতাস খেতে খেতে বললেন, আর হলেও নাচার। এসেছি যখন যুগ যুগান্তর পরে, পত্রপাঠ বিদের হবো এ মনে কোরো না।

বাঃ তা কেন মনে করতে যাবো।

কেন যাবে? শোনো কথা! এই মাত্তর পৃথিবীতে পড়লে নাকি? ভাগের ভাগীদারকে দেখলে আর কার মনে হয়, ওকে আমার বুকের মধ্যে ভরি। আসলে আমি তোমার শত্রুই, বুঝলে গো?

মহিলাটি এবার পরিষ্কার গলায় বলেন, কেন শত্রুই বা হতে যাবেন কেন?

তা যা বলো না, হলে উত্তম। এখন বলো বাড়িতে আর আছে কে? যে রকম ভোঁ ভাঁ দেখছি, বেশী কেউ আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। তা’ আমার দ্যাওর কোথায়? দেখি সেই বেআক্কলে মানুষটিকে।

প্রৌঢ়ার ভুরুটা কুঁচকে উঠলো, কোনো উত্তর না দিয়ে রিকশওয়ালার সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে ঢুকে গেলেন।

শশীতারা অধস্তনকে হুকুম করার ভঙ্গীতে ডেকে বলেন, মেজেটা একটু মুছে তবে নামিও।

প্রৌঢ়া চলে গেলে শশীতারা বাইরে থেকেই মুখ উঁচু করে দেখেন। দোতলার ছাতের কার্নিশটা যেন ঝুলে রয়েছে। সর্বনাশ! যে কোনো সময় তো হুড়মুড়িয়ে পড়ে যেতে পারে। সেকালের বাড়ি, কার্নিশেই কতো ইট। ওই ভেঙে পড় পড় অবস্থার কারণও সামনেই দেদীপ্যমান। একটা পুষ্ট অশ্বত্থগাছ সতেজ বাহু মেলে দাঁড়িয়ে আছে সেই ফাটলের খাঁজে।

বাড়িতে কী কুচোকাঁচা কিছু নেই?

তাই বুড়ো বুড়ির ভয় নেই প্রাণে?

কিন্তু কচিকাঁচা নেই তা বলা যায় কী করে? প্রথমে তো দুটো ছোট ছেলে মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল। …ওই বুড়ির ছেলে মেয়ে বলে মনে হয় না। বোধহয় ওই গিন্নীর দ্যাওরপো হবে। ওর তো বয়স হয়েছে। এতোটুকু ছেলে মেয়ে হবার কথা নয়। তা—এই একটি গিন্নীকেই তো দেখছি। আর কেউ আছে না নেই?

রিকশাওলা ফিরে আসে।

তাকে পাওনার অতিরিক্ত বখশীস দিয়ে বিদেয় করেন শশীতারা।

প্রৌঢ়াও ফিরে এসেছিলেন আবার। শশীতারা বলেন, নাও এখন পথ দেখিয়ে নিয়ে যাও। একেই বলে অদৃষ্টের পরিহাস। কে কাকে পথ দেখায়। এ বাড়িতে আগে ঢুকেছিল কে?

মহিলাটি বলেন, হাত মুখ ধোবেন তো?

হবে! হবে! মুখ হাত ধুয়ে তো আর আজ জলখাবারের থালা নিয়ে বসবো না।

মহিলাটির মনে পড়লো, ও আজ একাদশী। সত্যি বলতে তিনি যেন একটু স্বস্তিই পেলেন। এক্ষুনি আদর আপ্যায়নের ব্যবস্থা নিয়ে বসতে হবে না!

শশীতারার তীক্ষ্ন সন্ধানী দৃষ্টির কাছে ব্যাপারটা ধরা না পড়ে পারে না। শশীতারা ভারী একটা মজা অনুভব করেন। মনে করেন, তা বাপু হঠাৎ এমন জুড়ে বসবার তাল করে উড়ে আসছি আমি। ভাল লাগবে কেন? মুখে বলেন, আমার খাবার জন্যে ভাববার কিছু নেই। সব আমার আছে।

মহিলাটি একটু বোধহয় চমকান। বলেন, কি আছে?

সবই আছে। এখানে কে আছে কেমন ধারা লোক তার কিছুই যখন জানি না, তখন নিজের ব্যবস্থা তো করে আসতে হবে। তা ছাড়া—শশীতারা ভিতরে কৌতুকের হাসি চেপে বলেন, তাছাড়া আমার ভাইপো বলে দিয়েছে, যেখানে সেখানে কেউ কিছু বললেই যেন খেয়ো টেয়ো না পিসি। সম্পর্ক তো ভালো নয়। কার মনে কি আছে!

মহিলাটির শুধু ভুরুই নয়, মুখ চোখ সবই কুঁচকে ওঠে।

তাঁর বোধকরি বুঝতে বাকী থাকে না, কেমন সাংঘাতিক একখানি চীজ এসে ঢুকলেন।

তবু তিনি বেজায় গলায় বলেন, আপনার ভাইপো খুব বুদ্ধিমান দেখছি।

তা বুদ্ধিমান বৈকি। উকিল তো! বলে মহিলাকে একেবারে দমিয়ে দিয়ে ভিতরে যান ওর পিছনে পিছনে। আর ঢুকে এসে যেন অবাকই হয়ে যান।

আশ্চর্য তো! মনে হচ্ছে বাড়িটা যেন কতো চেনা, কতোবার দেখেছেন। অথচ সেই তো কোন পূর্বজন্মে বিয়ে নামক ঠাট্টার নাটকটায় অষ্টমঙ্গলার আটদিন মাত্র। তা সে তো ঘোমটার মধ্যেই কেটেছে! তবু যেন কতো পরিচিত!

কী অদ্ভুত!

কী অদ্ভুত!

নিজেকে প্রায় জাতিস্মর মনে হচ্ছে শশীতারার।

তা পূর্বজন্ম ছাড়া আর কী? দেখবামাত্র মনে হচ্ছে আমি এখানের চিরকালের।

এতোকালের মধ্যে এরা বাড়ির কোনো পরিবর্তন সাধন করেনি। এও এক আশ্চর্য! ফুলপুরের চাটুয্যে বাড়ির ইমারতখানা এই শশীতারা কতো রং বদল করালো, কতো রূপ বদল করালো।

কতো জানলা ভেঙ্গে দরজা, কতো দরজা বুজিয়ে জানলা করা হয়েছে সেখানে। উঠানে ঘর উঠেছে দেয়াল ফেলে। রান্নাঘরের কতো ছিরি ফেরানো হয়েছে। আর বীরনগরের এই বাড়িখানা যেন যাদুঘরের তাকে বসে আছে অবিকল প্রাচীন চেহারা নিয়ে।

যেমন উঠোনের চারধার ঘিরে ঘর ছিল, তার একপাশের ঘরগুলো রান্নাঘর—ভাঁড়ার ঘর, খাবার ঘর ইত্যাদি, বাকি তিন পাশেরগুলো শোবার। সব আছে। কতো লোক ছিল তখন?

শশীতারার মনে হলো তিনি যেন দেখতে পেলেন, সমস্ত বাড়িটা মানুষে ঠাসা। তখন সে বাড়িটা বিয়ে বাড়ি ছিল, আর সেই জন্যেই অতো লোক ছিল, সেটা মনে পড়লো না শশীতারার।

শশীতারা যেন সেই মানুষগুলোর জন্যে হাহাকার অনুভব করলেন। কিন্তু এই সব যে শশীতারার মনে ছিল, সেটাই তো শশীতারা নিজে জানতেন না।

অথচ এখন দেখছেন, কী অবাক কাণ্ড, যা দেখেছিলাম অবিকল তাই রয়েছে। সেই—উঠোনের ওই পাশের একটু সরু প্যাসেজ দিয়ে বেরিয়ে গেলেই খিড়কি দরজা, সেই দালানের ওপরকার দরজাটার দু’পাশে আধা থামের মতো বাহার। দরজার পাল্লা দুখানা পিতলের গুলো মারা।

সব ঠিক আছে, শুধু সেই সাবেক কালের ঝকঝকে আঁটসাঁট চেহারাটা ঝুলে পড়েছে, দেওয়ালের বালি ঝরে পড়ে ইঁট বেরিয়ে গেছে। আর দেয়াল বেয়ে শ্যাওলার দরানি গড়াচ্ছে।

কিন্তু তবু সেই দরজা, সেই জানলা সেই সিঁড়ি, সেই ঘর দালান।

শশীতারার কোন স্মৃতির সিন্ধুকে জমা ছিল এরা? শশীতারা তো সম্পূর্ণ এক অজানা অচেনা জায়গায় আসছেন এমন মনোভাব নিয়েই এসেছিলেন। সত্যি বলতে, বাড়িটা সম্পর্কে কোনো ধারণাও ছিল না। মনের জগতে ছিল অনেকখানি জমি। যা নাকি এখন বিঘের দামে কাঠা। আর সেই অনেকখানির অর্ধেকটার মালিক হচ্ছেন শশীতারা দেবী।

এখানে এসে জমিটা কেমন ধূসর হয়ে গেল। বাড়িটাই প্রবল বেগে মনের মধ্যে ঢুকে পড়তে চাইছে।

এটা হলো বোধহয় স্টেশন থেকে গ্রামে ঢোকার পথটার অনেক বদল দেখে। ঢোকার সময় অজিতকে সেকথা বলেছেন, জানিস অজিত, মনে অবিশ্যি বেশী কিছু নেই, তবু মনে পড়ছে, সেই যে থাড়ক্লাশ ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে ঘোমটায় মুখ ঢেকে গ্রামে ঢুকেছিলাম, তখন যেন চারিদিকে ঝোপ জঙ্গল, বুনো বুনো গন্ধ। কিন্তু এ তো দেখছি দিব্যি শহর বাজার! আবার ইষ্টিশনের ধারে বাইসকোপ।

অজিত বলেছিল, হাল চাল বদলে গেছে পিসি। এখন এখানকার ছেলেরাও চোঙা প্যাণ্ট পরে, দেয়ালে ধূয়ো লেখে। তোমার শ্বশুর বাড়ির দেশটা অনেক প্রগতিশীল হয়ে গেছে।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন