আশাপূর্ণা দেবী
ঘটনাটা ঘটুক বা না ঘটুক, মেয়েমানুষ এসব দুর্ঘটনার আঘ্রাণ পায়। মনোরমা মণ্ডলও পেয়েছে। এবং পেয়ে অবধিই ছুতোয় নাতার তুলসীর ব্যাপার কমপ্লেন করছে।
আজও করল।
গম্ভীর গলায় বলল, ‘ওসব পার্ট টাইম ফাট টাইম দেখাতে চাও তো বড় মিসকে বলগে। তবে তোমার এবার এখানের চাকরীটি যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’ তুলসী দাঁড়িয়ে ওঠে।
অগ্রাহ্যের সুরে বলে, ‘আমারও তাই মনে হচ্ছে।’
‘তোমারও তাই মনে হচ্ছে?’
নার্স মনোরমা মণ্ডল ভুরু কুঁচকে কপালে নানা কাটা দাগ বসিয়ে বলেন, ‘তোমার নিজেরও তাই মনে হচ্ছে?’
‘হচ্ছে বৈকি!’
তুলসী মৃদু হেসে বলে, ‘আপনি যখন চাকরীটা নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছেন!’
‘তার মানে, বলতে চাও আমি তোমার চাকরী খেয়ে দেব?’
তুলসী মৃদু হেসে বলে, ‘তা দিতে পারেন। আশ্চর্য কী?’
‘হুঁ।’
মনোরমা মণ্ডল আগুনের মত ফেটে পড়ে বলে ওঠে, ‘যা শুনতে পাচ্ছি, তা তাহলে ঠিকই? তা নইলে এত দুঃসাহস হয়? আচ্ছা চাকরী যখন পারি তখন খাবো।…তোমার এই গাফিলতি এবং তোমার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে যা শুনেছি ‘সব রিপোর্ট করে দিচ্ছি।’
তুলসী খুব অমায়িক গলায় বলে, ‘ওটাও রিপোর্ট করা যায় মণ্ডলদি? ওমা তা তো জানতাম না। তা হলে আরও চারটি নাম আপনার লিস্টিতে পুরে দেব, লিখে নেবেন।’
‘ও! তুমি আমার সঙ্গে মস্করা করতে এসেছ?’
মনোরমা মণ্ডল পা ঠুকে বলে, ‘আজই তোমার ডিসমিস করিয়ে দিচ্ছি দেখো।’
তুলসী করিডোর পার হয়ে যেতে যেতে বলে, ‘আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না মণ্ডলদি, আপনার খাটুনি আমি বাঁচিয়ে রেখেছি। চাকরী ছেড়ে দেওয়ার নোটিস দিয়েছি।’
‘নোটিস দিয়েছ? ওঃ। কার কাছে শুনি? ডাক্তার ঘোষের কাছে বোধ হয়?’
‘আ ছিছি, এ কী বলছেন মণ্ডলদি? আমাদের মতন তুচ্ছ মানুষের কি ওনাদের কাছে যাওয়া সাজে। আপনাদের সে সাহস আছে। আমি বড় নার্স দিদিমণিকে বলে দিয়েছি।’
মনোরমা মণ্ডল এই নির্ভয় মূর্তির দিকে তাকিয়ে রাগে থরথর করতে করতে বলে, ‘বড় নার্সকে! ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া, তা শুনে তিনি বোধহয় তোমায় সন্দেশ খাওয়ালেন!’
তুলসী হেসে উঠে বলে, ‘খাওয়াননি, বরং খেতে চাইলেন।’ বললেন, ‘দেখো তুলসী, বিয়েতে আমাদের যেন বাদ দিও না, নেমন্তন্ন চাই।’
‘বিয়ে!’
মিস মনোরমা মণ্ডল স্খলিত স্বরে বলে, ‘ওঃ বিয়ে! তাই এত অহঙ্কার। পাত্রটি কে শুনতে পাই না?’
তুলসী এবার ওর অভ্যাসসিদ্ধ হাসিতে গড়িয়ে পড়ে, ‘সে আর শোনাব কি মণ্ডলদি! নিজেই জানি না। একগণ্ডা বর দুবেলা হেঁটে হেঁটে পায়ের জুতো ক্ষইয়ে ফেলছে। কোনটার গলায় যে মালা দেব শেষ অবধি, তাই জানি না।’
তুলসী এখন তার সেই রেল কোয়ার্টারের বৌদির ‘ননদে’র সেবার ভারপ্রাপ্তা। তুলসী ঘরে ঢুকতেই সে বলে ওঠে, ‘আমার বৌদির মুখে তোমার কত প্রশংসা শুনেছিলাম তুলসী, আর আমার বেলাতেই তুমি এই করলে!’
তুলসী ওর বিছানা ঝেড়ে দিতে দিতে হেসে বলে, ‘আপনাকে তুলে না দিয়ে তো যাচ্ছি না দিদি!’
‘তা তো দিচ্ছ। ভেবেছিলাম বাড়ি ফিরে তোমায় স্পেশাল করে রাখব কিছুদিন, তা হল কই!’
তুলসী হাতজোড় করে বলে, ‘ওই অপরাধটি রয়ে গেল দিদি, আর হবে না। তবু এই এখান থেকে আপনাকে তুলে দিয়ে তবে যাব।’
‘বর কেমন হচ্ছে রে তুলসী?’
‘সে কী আর আপনার কাছে বলা যায় দিদি! তবে নাকি এ জগতে একটা কথা আছে, রাজার জন্যে রাণী আর কানার জন্যে কানী। সেটাই আর কী।’
‘তা তোমার তো তিনকুলে কেউ নেই, বিয়েটা কে দেবে?’
তুলসী ওর চুল আঁচড়ে দিতে দিতে বলে, ‘বন্ধুবান্ধবরা দিয়ে দেবে।’
ননী চৌকিটার উপর বসে ছিল চুপচাপ।
তুলসী হাসপাতাল—ফেরত এসে দাঁড়াল, বলে উঠল, ‘একী গো ননীদা, এই ভাবে বসে আছ? ছেলেদের নতুন জামা—প্যাণ্ট দুটো কেনা হয়েছে?’
ননী আস্তে আস্তে মাথা নাড়ে।
তুলসী মাথায় হাত দিয়ে বলে, ‘তা সেটা কবে হবে?’
‘তাড়াতাড়ির কী আছে?’ ননী গম্ভীর ভাবে বলে, ‘ওরা তো আর বরযাত্রী যাচ্ছে না?’
‘আহা তা নাই বা গেল। তা বলে নতুন জামা—জুতো হবে না?’
‘কেন, ওদের কী খুব সুখের দিন পড়েছে?’
তুলসী কড়া গলায় বলে, ‘দেখো ননীদা, তুমি আমায় রাগিও না বলছি। কেন, কী দুঃখের দিনই বা হচ্ছে? তবু তো দুবেলা নিয়ম করে দুটো খেতে পাবে, পাতা বিছানাটা পাবে, হাতের কাছে জামা জুতোটা পাবে।’
‘হুঁ!’
ননী একটু ব্যঙ্গহাসি হেসে বলে, ‘আর তার সঙ্গে একটি সৎমা পাবে।’
‘ঠিক কথাই বলেছ ননীদা!’ দৃঢ়স্বরে বলে তুলসী, ‘সৎ’ মা—ই পাবে।’
‘তা, তুই এখনো আমায় ননীদা ননীদা করে মরছিস যে?’
তুলসী হেসে ফেলে বলে, ‘অভ্যেস বলে কথা। আজকের অভ্যেস তো নয়!’
‘আমি এখনো ভেবে পাচ্ছি না তুলসী, তুই এসব কী করলি! ছোঁড়াগুলোর কাছে আর মুখ দেখাতে পারছি না—’
তুলসী হি হি করে হাসে।
‘তা পারবে কী করে? চিরকেলে মুখচোরা তো! কেন, আমি তো বেশ পারছি!’
‘বেশ পারছিস?’
‘বাঃ, না পারলে চলবে? আমার আর তিনকুলে কে আছে? ওরা ছাড়া কাজকর্ম করবে কে? তোমার আত্মজন বলতেও ওরা, আমার বন্ধুজন বলতেও ওরা।’
‘তবে তুই যা, বিদেয় হ এখান থেকে। এখনো এখানে ঘুর ঘুর করছিস কেন? অনেক চুনকালি তো লাগালাম মুখে, আরো বাড়িয়ে দিয়ে তোর কী চতুর্বর্গ লাভ হবে শুনি?’
‘তা হবে হয়তো কিছু। কিন্তু আমার তো এক্ষুনি চলে গেলে চলবে না! তোমার এই হাড়ির হাল সংসারে, বৌ এসে দাঁড়াবে কোথায়? সেটা তো ব্যবস্থা করে যেতে হবে। সেটা কিছু আর বেটাছেলের কাজ নয়।’
‘তোকে আর অত গিন্নেপনা করতে হবে না, এখান থেকে বিদেয় হ বলছি।’
‘আচ্ছা।’
তুলসী একটি তীক্ষ্ন ভ্রূভঙ্গী করে বলে, ‘আজ পর্যন্ত বলে নাও। আর দুদিন পর থেকে দেখব কেমন বিদেয় হ বলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে পার।’
চলে যায় মুখ টিপে হেসে।
ননী অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবে, কী করে এমন সহজ স্বচ্ছন্দ হতে পারে তুলসী!
তা ননীর মত সরল সাবধানী আর সভ্যলোকের পক্ষে অবাক হবারই কথা। অনেকদিন হয়ে গেল তবু সেদিনের সেই কথাগুলো যেন এখনো পরিপাক করে উঠতে পারছে না। অথচ তুলসী অবলীলায় এসে বলে উঠেছিল, ‘দেখো ননীদা, দুঃখে—ধান্দায় পড়ে একটা বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, তা বলে তিনটে বিয়ে করতে চাইনি’।
ননী হাঁ হয়ে গিয়ে বলেছিল, ‘তার মানে?’
‘মানে তিনটে ছোঁড়াই আমায় বিয়ে করবার জন্যে ক্ষেপে উঠেছে। এখন তুমি কি চাও আমি দ্রোপদী হই?’
ননী খিঁচিয়ে উঠেছিল, ‘তা তুমি যেমন কুলকাঠের আঙরাতে বাতাস দিতে গিয়েছিলে?’
‘বাঃ, আমি কি জানি ছাই! ভেবেছিলাম কেউই হয়তো গা করবে না। এতটুকু বয়েস থেকে ঝি খাটতে দেখেছে, আর এখন হাসপাতালের আয়াগিরি করতে দেখেছে। তাছাড়া পাড়া মজিয়ে আড্ডা দিয়ে বেড়াই, বিড়ি—সিগ্রেট ওড়াই, কার রুচি হবে এ মেয়েকে বিয়ে করতে! ওমা! এ একেবারে উল্টো উৎপত্তি! এখন দেখছি যদি জোর করে একটার গলায় মালা দিয়ে বসি, বাকী দুটো তার জন্মের শোধ শত্রু হয়ে যাবে। এখন ওদেরও এ বিপদ থেকে রক্ষে করতে হবে, আমাকেও ওই তিনটে বরের হাত থেকে বাঁচাতে হবে।’
‘তা’ আমি কী করব? আমার কী করার আছে?’ রেগে মেগে বলেছিল ননী।
আর তুলসী দিব্যি সহজ ভাবে, যেন কথাটা মোটেই লজ্জার কথা নয়, এইভাবে বলে উঠেছিল, ‘করলে তোমারই ‘করার’ আছে। তুমি যদি আমায় বিয়ে করে ফেলো, সব ল্যাঠা চুকে যায়।’
ননী অবিশ্যি একথা শুনে বাচাল বেহায়াটাকে মারতে উঠেছিল। কিন্তু কে পারবে ওর সঙ্গে। ওর হি হি তো বন্ধ হয় না। বলে কিনা কথা আদায় না করে যাবই না।
আজ রাজেনের বাসায় বিশেষ ঘটাপটা।
উঠোনে ইঁট সাজিয়ে উনুন পাতা হয়েছে তার মাথায় ছোট শামিয়ানা। সরু দালানের এক কোণে বড় বারকোশে কিছু কিছু কুটনো কোটা, ওদিকে দু তিনটে হাঁড়িতে দই—মিষ্টি।
সুখেন একরাশ কাঠচাঁপা ফুল একটা মাদুরের ওপর ফেলে হাতে ছুঁচ ফুটিয়ে ফুটিয়ে দুগাছা মালা গাঁথছে, রাজেনের হাতে পিটুলিগোলা। তেল দিয়ে একটা পঁ#ড়িতে মোটা মোটা দাগায় আলপনা দিচ্ছে রাজেন।
আর জগাই বসে বসে চারটি মাটির খুরি গেলাস ধুচ্ছে।
কারুর মুখে কোন কথা নেই, মেঘাচ্ছন্ন মুখ।
হঠাৎ একসময় সুখেন বলে ওঠে, ‘ধেৎতেরি নিকুচি করেছে! লক্ষ্মীছাড়ি যেন আমাদের নিয়ে বাঁদরনাচ নাচাচ্ছে। ওনার বাসরের মালা গাঁথছে বসে বসে শালা সুখেন!’
রাজেন বলে, ‘আর আমি তার পীড়ি ঘোরাবার পীড়ি আলপনা দিচ্ছি।’
‘শখের প্রাণ গড়ের মাঠ!’
জগাই ওপাশ থেকে বলে ওঠে, ‘সব হওয়া চাই। বলা হয় কিনা তোরা বেটাছেলে, জীবনে পাঁচ—দশবারও বিয়ে করতে পারবি, ভেবে দেখ তুলসী হতচ্ছাড়ির তো এই জম্মের মধ্যে কম্ম—তা এসব সাধ একটু আধটু হবে না? কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে—’
রাজেন বলে, ‘এই পীড়ি আলপনা সেরে আমায় এখন একটা রাঁধুনীঠাকুর ধরে আনতে হবে।’
‘আর আমি এই মালা সেরে যাব বাসরের বিছানার ব্যবস্থা করতে!’
‘ওদিকে তো আবার ননীদার ওখানেও অনেক কাজ। বরযাত্রীদের নিয়ে গুছিয়ে গাছিয়ে আসা—’
‘বরযাত্রী আবার এত পাচ্ছিস কোথায় তুই?’
‘জানি না, কোথা থেকে না কোথা থেকে দু পাঁচটা জুটিয়েছে।’
হঠাৎ জগাই জেগে ওঠে, ‘আমাদের তো বিয়েতে একটা প্রেজেনটেশান দেওয়া উচিত ছিল।’
সুখেন কড়া গলায় বলে, ‘উচিত ছিল, দিয়েছি। নিজের মান সম্ভ্রমটাই প্রেজেণ্ট দিচ্ছি।’
‘আহা তা বললে কী হবে! একখানা কাপড় টাপড়—’
সুখেন তেমনি ভাবেই বলে, ‘তোর পরামর্শর পিত্যেশে বসে নেই জগা! লাল চেলি কিনে রেখেছি একখানা।’
‘অ্যাঁ, তোর ওকাজ হয়ে গেছে?’
জগাই কাতর গলায় বলে, ‘রাজেন, চল তোতে আমাতে দোকানে যাই!’
রাজেন আলপনাটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বলে, ‘আমি ওসব কাপড়—টাপড়ের মধ্যে নেই, একখানা কানপুরী ছিটের বিছানার চাদর এনে রেখেছি।’
‘ওঃ! সবাইয়ের সব হয়ে গেছে, তা আমায় একবার বলবি তো? ঠিক আছে, আমি একাই যাচ্ছি। তখন যেন আবার জগা জগা রব না ওঠে।’
দরজার কাছে সহসা একটি চাঁচাছোলা কণ্ঠস্বর ঝলসে ওঠে—’সে তো উঠবেই। জগা ভিন্ন ওঁচা কাজগুলো করবে কে? এই যে পীড়ি চিত্তির হয়ে গেছে? বাঃ! আর বলছিলি কিনা পারব না। পারব না কথার কোন মানে নেই, বুঝলি?…কুটনোটা আমি একবার দেখে যাব। ক’জন খাবে বুঝি। টোপর এনেছিস?’
সুখেন মালা দুটো ঠেলে ফেলে রেখে বলে ওঠে, ‘যা যা হুকুম হয়েছিল তার কিছু বেতিক্রম হয় নি।’
‘তা হবে কেন?’ বুঝে সুঝে ঠিক লোকদেরই কাজের ভার দিয়েছি। রান্নার মশলাপাতি সব এসে গেছে?’
‘এসেছে।’
‘তোদের ফর্সা জামাকাপড় মজুত আছে তো?’
‘আমাদের আবার কী দরকার? রাজেন ভারী গলায় বলে।
তুলসী উচ্চকিত গলায় বলে, ‘তার মানে? তোদের দরকার নেই? ননীদার বিয়ের বরযাত্রী হবি না সেজে—গুজে? হ্যাঁ ভাল কথা, গাড়িটার ব্যবস্থা ঠিক আছে তো? আমার দু তিনটে বান্ধবী আসবে, দেখিস যেন তারা আবার অব্যবস্থা দেখে না হাসে। অবিশ্যি বলেছি আমি তাদের—’ভারী তো বিয়ে! তার দুপায়ে আলতা।’ আচ্ছা আর দেখ—’
তুলসী গাঢ়স্বরে বলে, ছেলেমেয়ে দুটোকে একটু সকাল সকাল করে ডেকে এনে খাইয়ে নিয়ে যেতে হবে। সে ভারটা জগাই তুই নে ভাই!’
সুখেন মালায় পাতা চাপা দিয়ে বলে ওঠে, ‘খুব বাঁদরনাচটা নাচালি বটে!’
তুলসী ঘরের মধ্যে ঢুকে আসে।
তুলসী ওদের কাছাকাছি বসে পড়ে আহত গলায় বলে, ‘ওকথা কেন বলছিস রে? যা করছি অনেক ভেবে—চিন্তেই করেছি।…দেখলাম তোরা তিনজনেই আমায় প্রাণ সমর্পণ করে বসে আছিস। সবাই তুল্য—মূল্য। কেউ কম যায় না। তখন ভেবে দেখ সত্যি তো আর তিনজনের গলাতেই মালা দিতে পারি না।…একজনকেই দিতে হবে। বাকি দুজনের ওপর তখন দারুণ অবিচার হবে কিনা?’
ওরা অবশ্য কথা বলে না।
গোঁজ হয়ে বসে থাকে।
তুলসী তেমনি নরম গলায় আস্তে আস্তে বলে, ‘আর সত্যি বলতে, ননীদার দুঃখুটাও চোখে সহ্য হচ্ছিল না রে! একা দাঁড়িয়ে ছিল যেন বাজ—পড়া তালগাছ। পদ্মদির ব্যবহারে বড় দুঃখু পেয়েছে। মেয়েমানুষ জাতটার ওপরেই ঘেন্না ধরিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া ওই বাচ্চাদুটোর কথাও চিন্তা কর।’
সুখেন বলে, ‘করা হয়েছে চিন্তা।’
‘সেই তো, তোরা বুঝমান বলেই এত সাহস! তা আমাকেই কি সোজা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে নাকি?’
তুলসী হাসে—’ননীদার পরিবারের ‘ধোঁয়া’ খাওয়া চলবে না। হাসপাতালে কাজ করা চলবে না। রাস্তায় টো টো করা চলবে না। এইসব সত্যবদ্ধ করিয়ে নিয়ে তবে কেতাত্থ করে বিয়েতে রাজী হয়েছেন বাবু। আর তোদের সঙ্গে যে কড়ার হয়েছে মনে আছে তো? যেমন তাসের আসর চলত চলবে। যেমন আড্ডা গল্প চলত চলবে।…যেমন ননীদার সাহায্য করা হত চলবে।…আর তখন বৌদি সেজে লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন তিনটেকে একে একে ধরে ধরে হিল্লে করে বিদেয় করে দেওয়া হবে, কথাটি কওয়া চলবে না। মনে আছে তো? ঠিক? এসব নইলে তো আমার সুখ হবে না। তোদের কাছেই আমার জীবনের সুখ—শান্তি ভিক্ষে করছি।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন