আশাপূর্ণা দেবী
ননীর কাছে কোনদিন বলে বসতে পারবে না সুখেন, ‘শালার বিয়ে ফিয়ে একটা না হলে আর চলছে না। কোন দিন হয়তো স্বভাব খারাপ করে বসব।’
না, ননীর কাছে বলতে পারে না, অথচ জগাইয়ের কাছে অনায়াসে বলতে পারে, বলতে পারে রাজেনের কাছে।
সুখেনেরই চাঞ্চল্যটা বেশী, কাজেই ইচ্ছেটাও বেশী। কিন্তু হলে কি হবে? ইচ্ছের গাছে ফুল ফুটছে না। তাই ওদের আর ‘জীবন’ বলে কিছু নেই, আছে ‘দিনরাত্রি।’
অতএব ওদের সেই দিনরাত্রিটাই কাটছে। জীবন অদৃশ্য। সেটাও যে কেটে যাচ্ছে টের পাচ্ছে না।
তবু রাজেন আর জগাই সুখেনের মত নয়। ওদের বোধহয় চাঞ্চল্যটা কম। ওরা শুধু আশা করে মাইনেটা আর একটু বাড়লে তবে কিছু একটা করবে। বিয়ে, অথবা ‘স্বভাব খারাপ’।
সুখেনের তবু একটা পিসি আছে ভাত রেঁধে দিতে, একটা বাপ আছে, ‘কিরে তোর আজ এতো দেরী হলো যে?’ বলে মুখ বাড়িয়ে দাঁড়াতে। ওদের তো বলতে গেলে কেউই নেই।
রাজেন ছেলেবেলায় তার জ্যাঠতুতো বোন—ভগ্নিপতির বাড়িতে থাকত। সম্পর্কটা শুনলেই বোঝা শক্ত নয়, স্রেফ ‘গলায় পড়া’র পোস্টেই থাকত। কোন একদিন কোন বচসা অথবা অবজ্ঞার নির্লজ্জ প্রকাশে সে আশ্রয় থেকে খসে পড়েছে রাজেন। আর জগাই? এই কিছুকাল আগেও তার একটা দূর—সম্পর্কের বুড়ো মামা ছিল, রেল কোম্পানীর কোন চাকুরে রিটায়ার করে এখানেই থেকে গিয়েছিল। জগাই তার পোষ্য ছিল। প্রথম জীবনে সে জগাইকে রেঁধে খাওয়াত, শেষজীবনে জগাই তাকে। তারপর তো মরেই গেল বুড়ো। তার দরুন ঘরটাতেই রয়ে গেছে জগাই, তারই অকিঞ্চিৎকর জিনিসপত্রকে পরম পদার্থ ভেবে।
জগাইয়ের এই বাসাটাতেই রাজেন শোয়, আর যেখানে যেমন পারে খেয়ে নেয়। সস্তার হোটেলও যে একেবারে নেই তা নয়।
তবু আশ্চর্য, এই করণপুর রেলস্টেশনের ধারে—কাছেই রয়ে গেছে এরা। ভাগ্য—অন্বেষণে এদিকে সেদিকে চলে যায়নি। অথচ সেই যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। এ রকম বন্ধনহীনেরাই তো ভবঘুরে হয়ে যায়, বৈরাগী হয়ে যায়, বাউণ্ডুলে হয়ে বেড়ায়।
কিসের বন্ধনে যে এই খুঁটিটাতে বাঁধা পড়ে আছে তিনটে ছেলে, বলা বড় শক্ত। ননীর তবু এখানে আটকে থাকার পিছনে একটা যুক্তি আছে, তার দোকান! তার সংসার! বিধবা দিদি, মা—মরা ছেলেমেয়ে, এটা সোজা বন্ধন নয়।
এরা বেকুব। এরা বোধহীন।
বাইরে ছিটকে বেরিয়ে পড়লে এই বৃহৎ বিশ্বে তারা হয়তো ছড়িয়ে পড়ে নিজেরাও বৃহৎ হতে পারত, কিন্তু সে বুদ্ধি মাথায় আসেনি ওদের। ওরা জানে এই করণপুর রেলস্টেশনের আশপাশটাই পৃথিবী, আর এই ননীর দোকানের তাসের আড্ডাটাই তাদের সুখকেন্দ্র।
ওর বেশী সুখের প্রত্যাশা ওদের কাছে ধূসর হয়ে গেছে।
শুধু যেদিন ওই মগডালের ফুলটা হঠাৎ এই ভাঙা চৌকির ওপরে পাতা ছেঁড়া মাদুরটার ওপর আপনা থেকেই এসে টপ করে পড়ে, সেদিন যেন সেই ধূসরতার ওপর একটা আলো—আলো আভা ঝলসে ওঠে।
অথচ চলে গেলে কেউ ছেড়ে কথা কয় না, সবাই সমালোচনায় তৎপর হয়ে ওঠে। সেটা কী আশাভঙ্গে?
না, হীনমন্যতায়?
আচ্ছা ওকে নিজেদের থেকে অত উঁচুই বা মনে হয় কেন এদের? পরিচয়ের মধ্যে তো রেল হাসপাতালের আয়া। প্রয়োজনের সময় হাতে—পায়ে ধরে ডাকলেও ভদ্রলোকেরা তো ওকে নীচু ভেবে ঘেন্না করে। ও বাড়িতে এলে যদি এক পেয়ালা চা দেয় তো দেখে—শুনে ফাটা গেলাসে, যেটা ফেলে দিলে চলবে। তুলসী যদি মাদুরে—বসে তো, তুলসী চলে গেলে গিন্নীরা সেটা কেচে ফেলেন।
তবু রাজেন, সুখেন আর জগাই তুলসীর থেকে নিজেদের নীচু ভেবে জ্বালা পায়। সেই জ্বালাতেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়িয়ে দিয়ে ঠোকা দিয়ে বলে, ‘তুই ভুলে যেতে পারিস সে—সব কথা, আমরা ভুলিনি।’
আর ‘তুই’ বলে কথা বলতে সমীহ আসে বলেই, জোর করে বলে সেটা। তুলসী ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতেই বলে, ‘তা’ ভুলবি কী করে! গোয়ালের গরুর মতন এক খোঁটাতেই বাঁধা রইলি চিরজীবন!’
সুখেন বলে, ‘তুই বা কোন আকাশে উড়লি?’
‘মেয়েমানুষের কথা বাদ দে। ডানা—ভাঙা পাখি। তোদের চেষ্টা থাকলে মানুষ গৎরে যেতে পারতিস।’
‘এখনো কিছু খারাপ নেই’—বলল রাজেন।
‘পাঁকের ব্যাঙও ভাবে এমন কিছু খারাপ নেই, বেশ আছি। যাক গে, সুখেন তোর বিয়ে না?’
সুখেন গম্ভীরভাবে বলে, ‘হুঁ।’
‘কবে?’
‘যবে হবে তুই অন্তত একপাত নেমন্তন্ন পাবি। কিছু না হোক পাইস হোটেলেও নিয়ে গিয়ে খাইয়ে দেব।’
তুলসী দুহাত উল্টে বলে, ‘কি জানি বাবা! তোর পিসি তো বলছিল—’
‘পিসি অমন অনেক দিবাস্বপ্ন দেখে।’
ননী বলে, ‘এই, এ দানটা খেলা হবে, না তাস ভেস্তে গেছে?’
‘না না, ভেস্তাবে কেন?
তাস কুড়িয়ে নেয় সুখেন, রাজেন আর জগাই।
আর ওর মধ্যেই তুলসী ফস করে ননীর কোলের সামনের তাসের গোছাটা টেনে তুলে নিয়ে অম্লান বদনে বলে, ‘আমি দু দান খেলে দিচ্ছি ননীদা, তুমি খেয়ে এসো।’
‘তুই তো এই নাবালকের খেলা খেলিস না।’
‘খেলি একটু। বালকের দলে যখন এসেই পড়েছি। যাও খাওগে। দিদি ফায়ার, হচ্ছে তো বসে বসে।’
‘ফায়ার হতে এখনও ঢের দেরী। এই তো সবে কলির সন্ধ্যে।’
‘তবে তোমার তাস ধরো।’
‘না না, তুই খেল না, আমি একটু দেখি।’
খানিকক্ষণ খেলা চলে, মাঝে মাঝেই উৎসাহবাণী শোনা যায়, এবং বাকি তিন জনের মুখ দেখে মনে হয় এর আগে ওরা শুকনো খড় চিবোচ্ছিল, এতোক্ষণে জিভে রস এলো।
‘তা হলে তোরা বে—থা কেউ করছিস না?’
পিঠ কুড়োতে কুড়োতে বলে ওঠে তুলসী।
‘কাকে বলছিস?’
‘সবাইকেই।’
সুখেন সব সময় প্রধান বক্তা, সুখেন বলে ওঠে, ‘আপনি খেতে ঠাঁই পায় না শঙ্করাকে ডাকে। হুঁ। বিয়ে! তা হঠাৎ আমাদের ভাবনায় মাথা ঘামাচ্ছিস যে?’
‘পুরনো কালের বন্ধু, তাই আর কি। নে খেল। আগে কে ডেকেছে?’
বিয়ে শব্দটাই মুখরোচক।
কথাটা প্রত্যেকের মনেই একটু না একটু প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
তাই খানিকটা খেলতে খেলতে রাজেন হাসির মত স্বরে যেন আপনমনে বলছে এই ভাবে বলে ওঠে, ‘তুলসী কি আজ কাল আয়াগিরির সঙ্গে সঙ্গে ঘটকালিগিরিও ধরেছিস?’
‘ধরলে খারাপ কী?’
‘না খারাপ কিছু না। তা সন্ধানে পাত্রী আছে নাকি?’
‘আছে।’
‘কোথায়? কোথায়?’
‘বলে লাভ? তোরা তো আর বে করছিস না!’
‘করতে কী আর অসাধ রে তুলসী!’ বোকা জগাই চট করে বলে বসে, ‘একটা বৌ বিহনে তো জগৎ শূন্য। কিন্তু আমাদের মতন হতভাগাকে মেয়ে দিচ্ছে কে?’
‘তা’ ইহ পৃথিবীতে যেমন রাজার জন্যে রাণী আছে, তেমনি কানার জন্যে কানী আছে। তোদের উপযুক্ত পাত্রীই হত।…এই দেখো, কথায় কথায় ভুল চাল দিয়ে বসলাম। …কই ননীদা, খেতে গেলে না?’
ননী গম্ভীরভাবে বলে, ‘আমি থাকায় তোর কোন অসুবিধে হচ্ছে?’
‘আমার? আমার আবার কী অসুবিধে হবে! এইটুকুর মধ্যেই পদ্মদি বার তিনেক দরজার আড়াল থেকে উঁকি মেরে গেছে।’
‘তার কারণ অন্য।’
‘তাই বুঝি? পদ্মদির এখনো বেশ এনার্জি আছে বলতে হবে।’
বেশ জোর জোর গলাতেই বলে তুলসী।
বাইরের জগতে কাজ করে করে তুলসী অনেক কথা শিখেছে।
নিজের ব্যাপারেও প্রয়োগ করতে ছাড়ে না সে—সব। এখন আর খেটেখুটে এসে বলে না ‘দুব্বল লাগছে,’ বলে ‘ভারী, টায়ার্ড লাগছে।’ ‘এতে আমার ঝোঁক নেই’ না বলে, ‘ওতে আমার কোনো ইণ্টারেস্ট নেই।’ ‘সারারাত্তির’ না বলে তুলসী বলে ‘হোল নাইট।’ সারাদিনকে ‘হোল ডে।’ হয়তো ওই ডে নাইট ডিউটি দিতে দিতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
‘তুলসী, তোর রাত হয়ে যাচ্ছে না?’
ননী বলে।
ননীর দিদি যে এই মেয়েটাকে দু’চক্ষের বিষ দেখে, এবং এরকম রাত—দুপুরে হঠাৎ হঠাৎ এসে ক’টা দস্যি ছোঁড়ার তাসের আড্ডায় বসে পড়ে তাস খেলে আর সিগারেট খায়, এতে দিদি রাগের চোটে জলে পড়ে কী আগুনে পড়ে, এটা ননীর জানা। তাই হয়ত ননী বাঁধ দিতে চেষ্টা করে।
কিন্তু ওটুকু তো সমুদ্রে বালির বাঁধ।
ননীর এই ভয়ে তুলসী বরং যেন মজা পায়। তুলসী বেশ জোরালো গলায় বলে, ‘হুঁঃ। ভুতের আবার জন্মদিন! তুলসীর আবার রাত!…এই করণপুরের যত ভূত টুত রাক্ষস খোক্কস, সবাই আমার চেনা ননীদা। রাত্তিরে ফিরতে হলে বাড়ি ফেরার সময় ওদের সঙ্গেই গল্প করতে করতে যাই।’
সুখেন ব্যঙ্গের গলায় বলে ওঠে, ‘তোর যাবার পথে ওরা ওৎ পেতে বসে থাকে বুঝি?’
‘তা তো থাকতেই পারে। হাঁউ মাঁউ খাঁউ মনিষ্যির গন্ধ পাঁউ।’
‘আজ তোর নাইট ডিউটি নেই?’
‘আছে। রাত বারোটার পর থেকে। অপারেশন হবে—’
‘তা’ তুই তো আর নার্স নয়?
তুলসী মুখে—চোখে একটি অহঙ্কারের বিদ্যুৎ ঝলসে বলে, ‘ডাক্তারবাবুরা পাশকরা নার্সদের থেকে আমার ওপর বেশী বিশ্বাস রাখে।’
‘তা’ রাখবে বৈ কি!’
রাজেনও বিদ্রূপে গলা শানাতে ছাড়ে না, ‘ইয়াং ডাক্তাররা বোধহয়?’
‘ইয়াং! তুই আর হাসাসনে রাজেন—’
হাসাতে বারণ করেও লহরে লহরে হেসে ওঠে তুলসী, ‘যত পাপে পাপী বুঝি ‘ইয়াংরা’? বরং ওরাই সভ্য। আসল পাজী হচ্ছে বুড়ো বজ্জাতরা।’
‘হু! সেটা তা হলে জানা হয়ে গেছে?’ সুখেন হাতের তাস অসময়ে ফেলে দিয়ে বলে ওঠে, ‘নাইট ডিউটি তাহলে শুধু রুগীর ঘরেই দিতে হয় না।’
‘ছোটলোকের মতন কথা বলিসনে সুখেন! এক এক সময় তোর কথা শুনলে ইচ্ছে হয় খুন করে ফাঁসি যাই। হাতের তাস ফেললি যে?’
‘আর ভাল লাগছে না—’
‘লাগবে, আর একটু ধোঁয়া খা। এই সেরেছে, সিগ্রেট তো ফর্সা!…দে তোদের ওই বিড়ির একটা দে?’
ননী নড়ে চড়ে বসে বলে, ‘তোর তো বিড়ির গন্ধে মাথা ধরে।’
‘ধরে তো। তবে সুখেন পাজীটার কথা শুনে আগেই ধরে উঠেছে চড়াৎ করে। এখন বিষে বিষক্ষয় হোক।’
চার চারটে পুরুষের সঙ্গে বসে বসে অবলীলায় বিড়ি টানতে থাকে তুলসী! ওর ভাব দেখে মনে হয়, ও—ও বুঝি সুখেন—রাজেনদেরই একজন।
‘খেলাটা তা’হলে আর হচ্ছে না?’ ননী ছড়ানো তাসগুলো কুড়োতে কুড়োতে বলে, ‘তখনই জানি।’
‘কখন?’
‘যখন শনির উদয় হয়েছে।’
‘শনির উদয় তো আর তোমাদের জীবনে আজ হয়নি ননীদা! চিরকালই আছে।’
‘তা, তুই এসে বসলেই জমাটি খেলাটা নষ্ট হয়ে যায় কিনা?’
‘সেটা আমার দোষ নয়। আমার যেদিন ছুটিছাটা থাকে, পুরনো বন্ধুদের জন্যে মনটা একটু টানে। তাই চলে আসি। এদিকে তোমরা মনে গেঁথেই রেখেছ তুলসী একটা মেয়েমানুষ।’
‘যা সত্যি, তা আর গেঁথে রাখার কী আছে রে তুলসী? ভগবানের নিয়ম উল্টে দিবি?’
‘ভগবানের নিয়ম?’
তুলসী উদাস গলায় বলে, ‘তা হবে। ভগবান লোকটা যে কেমন, কী তার নিয়ম, জীবনে তো দেখতে পাইনি। চিরজীবন শুধু ভূত—প্রেত দত্যি—দানোই দেখেছি।’
বলে উঠে দাঁড়ায় তুলসী।
আর ঠিক এই সময়ই পদ্মর ভারী ভারী গলার স্বর শোনা যায়, ‘খাওয়া—দাওয়া কি আজ আর হবে না ননী?’
তুলসীর মুখে একটু বিদ্যুৎপ্রবাহ বয়ে যায়। তুলসী গলা তুলে বলে, ‘এতক্ষণে কোনকালে তাসটাস উঠে যেতো পদ্মদি, এই আমিই এসে পড়ে দেরী করিয়ে দিলাম। এবার যাচ্ছি।’
পদ্ম বোধকরি মনে মনে বলে, ‘যাও! আমি বাঁচি।’ তবে মুখে তো অন্য কথা বলতেই হবে। তুলসীকে আর আগের মত কটুকথা বলা চলে না। তুলসীর এখন একটা পোজিশন হয়েছে। তাই সৌজন্যের গলা করে বলে ওঠে পদ্ম, ‘ওমা সে কী! এক্ষুনি যাচ্ছিস বা কেন? পুরনো ইয়ারবন্ধুর সঙ্গে একটু খেলাধুলো করতে এসেছিস—’
‘সেই সঙ্গে তোমার পায়ের ধুলোও একটু নিতে এসেছিলাম পদ্মদি!’
বলে তুলসী এগিয়ে যায়।
পদ্মর শুচিবাইয়ের কথা সর্বজনবিদিত, তাই তুলসীর মুখে—চোখে কৌতুকের ছটা।
‘থাক থাক। আর আমার পায়ের ধুলো নিতে হবে না,’ বলে পদ্ম টপ করে মাঝখানের দরজাটাই বন্ধ করে দেয়। যেটার আড়াল থেকে চোদ্দবার উঁকি মারছিল।
দরজাটা বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে তুলসী হি হি করে হেসে ওঠে।
আর ওই হাসিটা শুনে মনেই হয় না তুলসী আটাশ বছরে গিয়ে পৌঁছেছে।
তুলসীর যখন আট বছর বয়েস, তখন ওই রকম হাসত তুলসী তার কাকীমার মাকে ছুঁয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে।
সে—ও এক শুচিবাই বুড়ি ছিল।
জামাই—বাড়িতে থাকতো বুড়ি, আর জামাইয়ের চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করতো গাল দিয়ে ভূত ভাগিয়ে। কারণ একা তুলসীই নয়, কাকার ছেলে বৃন্দাবনও তুলসীর সঙ্গে থাকতো। ইচ্ছে করে আঁস্তাকুঁড়ে নেমে বুড়িকে ছুঁতে যাওয়া তাদের একটি প্রিয় খেলা ছিল।
যদিও কাকী তুলসীকেই বলতো, ‘নাটের গুরু।’ বলতো, ‘বেন্দা কক্ষণো এতো পাজী হয়ে উঠতো না, যদি ওই হারামজাদী মা—বাপ খেয়ে আমার সংসারে এসে না ঢুকতো।’
কিন্তু তুলসী কী দুঃসাহসী! তুলসী তার সেই অসহায় অবস্থাতেও অনায়াসে বলে উঠতো, ‘ইস! ওনার সংসার! এটা যেন আমাদের বাড়ি নয়? বাড়ি কাকার, বেন্দার, আমার, আর পুঁটুর। তুমি তো অন্যবাড়ির মেয়ে।’
কে যে চিরকাল তুলসীকে এতো দুঃসাহসের যোগান দিয়ে আসছে।
কাকীমা গলাধাক্কা দিয়ে বার করে দিতে আসতো, আর তুলসী হি হি করে হেসে হেসে বলতো, ‘ও দিদিমা, দেখো তোমার মেয়ে আমায় ছুঁতে আসছে। এক্ষুনি তোমার রান্নাঘরে ঢুকবে—আমি আঁস্তাকুড় মাড়িয়েছি।
শাপ—শাপান্ত?
গালি—গালাজ?
সে সবে কিছু এসে যেত না তুলসীর। শেষ পর্যন্ত তুলসীকে ওরা চালান করে দিলো গ্রামের ঘোষালগিন্নীর মেয়ে—জামায়ের সঙ্গে। জামাই এই করণপুরের রেলবাবু ছিল।
তারপরের ইতিহাস তো সকলেরই জানা।
চালান করে দেবার আগে একদিন তার কাকা কাকীর চোখের আড়ালে তুলসীকে পিঠে হাত বুলিয়ে বলেছিল,—’এতে তোর ভালই হবে মা! এখানে তো অশেষ বিশেষ কষ্টের মধ্যেই আছিস! খাওয়া পরার কষ্ট—’
তুলসী কেমন একটা দুরন্ত অভিমানে নীরব হয়ে গিয়েছিল। যদিও ঘোষাল—গিন্নীর মেয়ে তাকে প্রলুব্ধ করতে স্বর্গের ছবি এঁকে ধরেছিল তার সামনে। এমন কি তদ্দণ্ডেই একটা সস্তা ছিটের ফ্রক কিনে এনে তুলসীর হাতে দিয়ে বলেছিল, ‘এইটা পরে পরশু রেলগাড়িতে চাপবি। এরকম আরো অনেক জামা দেবো।’
সেই ফ্রকটাই পিঠের বোতাম হারিয়ে শেষ অবধি তুলসীর গায়ে থেকেছে।
তুলসীর মধ্যেকার যেমন একটা বোবা অভিমান তাকে মূক করে রেখেছিল, তেমনি আবার একটা অজানা জগৎ সম্পর্কে ধীরে ধীরে কৌতূহলীও করে তুলেছিল। রেলগাড়ি…অনেক অনেক দূরের দেশ…রেল কোয়ার্টারের বাড়ি যার ছাত থেকে রেলগাড়ি যাওয়া দেখতে পাওয়া যায়, এঞ্জিনের বাঁশী শোনা যায়, সে সব কোন জগতের? আর এঞ্জিনের বাঁশী?
ওই বাঁশীর ডাকটা কোন দূর থেকে যেন কানে আসছিল। তাই তুলসী চলে এসেছিল।
না এলে কাকীর কী সাধ্য ছিল তুলসী নামের মেয়েটাকে ঘোষালগিন্নীর মেয়ের হাতে সঁপে দেবার। আট বছর বয়স হলে কি হবে, তুলসী তখন অবলীলায় সাঁতরে দীঘির এপার ওপর হতে পারতো, অনায়াসে উঁচু গাছের মগডালে চড়ে বসতে পারতো, দুপাঁচ মাইল হেঁটে অন্য গাঁয়ে পৌঁছে যেতে পারতো।
ইচ্ছে করে ধরা না দিলে তুলসীকে ধরে খাঁচায় পোরার সাধ্য ছিল না ওদের। তুলসী অভিমানেই হোক, আর অন্য এক জগতের পিপাসাতেই হোক, স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছিল।
করণপুরে আসার পর ঘোষালগিন্নীর মেয়ে যখন তার বাপের বাড়ির চিঠি এলে ডেকে ডেকে বলতো, অ তুলসী এই দ্যাখ কেষ্টপুরের চিঠি এসেছে—আমার ভাজ লিখেছে তোর কাকা—কাকী ভাল আছে, পুঁটু বিন্দাবন ভাল আছে, তোকে বলতে বলেছে।’
তুলসী অম্লানবদনে ঘর ছেড়ে চলে যেতে যেতে বলতো, ‘শুনে আমার কী সগগো লাভ হবে?’
‘সর্বনেশে মেয়ে!’
বলতো ঘোষালগিন্নীর জামাই, ‘জেনে—শুনে বাপের বাড়ি থেকে একটি বিচ্ছু ধরে নিয়ে এলে পুষতে?’
তুলসী আড়াল থেকে শুনে ভেংচি কাটতো।
তুলসীর এই বুকের পাটাটা কী দিয়ে তৈরী করেছিল তার সৃষ্টিকর্তা কে জানে! লোহা! পাথর? ইস্পাত?
তুলসীর ওই হাসিটা যেন বাইরের অন্ধকারটাকে খান খান করে কাটে।
ননী বলে, ‘দিদিকে ক্ষেপিয়ে তোর কী সুখ হয় বলতো তুলসী?
তুলসী আরো হেসে বলে, ‘কী জানি। শুধু দিদিকে কেন, যাকে পাই তাকেই। ক্ষেপানোতেই আমার সুখ।’
খেলা ভেঙে গিয়েছিল, সবাই রাস্তায় নেমে পড়েছে।
সুখেন বলে উঠল, ‘অন্ধকারে অত তড়বড়িয়ে হাঁটিসনে তুলসী, একটু আস্তে পা চালা। আমি তোর সঙ্গে যাচ্ছি, পৌঁছে দেব বাড়ি অবধি।’
সুখেনদের বাসা তুলসীর বাড়ির রাস্তায়, আর খানিকটা এগিয়ে গেলেই দিতে পারে পৌঁছে। রাজেন জগাই চলে উল্টোমুখো রাস্তায়।
‘পৌঁছে দিবি?’
তুলসী দাঁড়িয়ে পড়ে বলে, ‘দিলে তিনজনে মিলে দিবি—’
‘তিনজনে! ওদের বাসা কোথায় আর তোর বাসা কোথায়!’
‘তবে থাক। একাই যাচ্ছি, কাউকে পৌঁছতে আসতে হবে না।’
‘কেন? হঠাৎ রাগের কারণটা কী?’
‘রাগ? মোটেই না।’
তুলসী অনুচ্চ একটু হেসে বলে, ‘অবিশ্বাস।’
‘অবিশ্বাস!’
‘তবে আবার কী! তোদের জাতটাই অবিশ্বাসী। পৌঁছতে এসে হয়তো হাত ধরে নিয়ে যেতে চাইবি।’
‘কবে এ রকমটা হয়েছে রে তুলসী?’
‘হবার সুযোগ দিলেই হতো। হয়নি তাই। এই রাজেন জগাই, এদিকে আয় চটপট।’
‘ওদিকে কেন?’
‘আমায় পৌঁছে দিবি।’
‘সুখেন যে বললে দেবে—’
‘একা ওর সঙ্গে যেতে ভয় কাটছে না। দলে ভারী থাকলে সাহস আসে।’
যদিও রাত হয়েছে, যদিও এখন আর অতটা হাঁটার ইচ্ছে নেই, তবু এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করাও শক্ত।
ওরা দুজনে এমুখো ফিরে আসে।
‘ঠিক আছে, তোরাই যা।’
বলে সুখেন হন হন করে এগিয়ে যায়।
রাজেন অবাক হয়ে বলে, ‘এইটুকুর মধ্যে হঠাৎ কী হল রে তুলসী?’
‘কিছু না, একটু ক্ষ্যাপালাম।…যারা ক্ষ্যাপালেই ক্ষ্যাপে তাদের দেখতে বেশ মজা লাগে আমার।’
কিন্তু যারা নিজেরাই ক্ষেপে বসে আছে?
তাদের দেখলে? এমন রাতবিরেতে?
না, তাদের দেখলে মজা লাগে না তুলসীর। তাদের দেখলে ওর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। বুকের রক্ত হিম হয়ে যায়।
রাজেন আর জগাই তুলসীকে তার কাঠের গেট ঠেলে বাসার উঠোনে ঢুকিয়ে দিয়ে চলে গেল। একখানা ঘর হলেও বাসাটি ভাল যোগাড় করেছে তুলসী। তবে কতটুকুই বা থাকতে পায় বাসায়? দিনের পর দিন, অথবা রাতের পর রাত ওই দরজাটায় তো তালাই ঝোলে। তুলসী ডিউটিতে থাকে।
তবু এটা তার নিজস্ব আস্তানা।
এখানে এসে সে নিশ্বাস ফেলে বাঁচতে পায়। এবং যত সংক্ষেপেই হোক, নিজের হাতের রান্নাটা খেয়ে নিতে পারে।
অন্য আয়ারা চায় খাওয়া সমেত কাজ। তার জন্যে মাইনেটা সামান্য কম হয় বটে কিন্তু পুষিয়ে যায় বেশী। তুলসী সেটা চায় না। ওরা বলে, ‘তুলসী কম খায় কিনা, তাই পুরো মাইনেটা হাতে নেয়।’
রাজেন বলতে বলতে আসছিল, ‘তোকে কি আবার এখন রাঁধতে হবে?’
‘কেন? কোন যমের জন্যে?’
তুলসী হেসে রাস্তা সচকিত করেছে, ‘সকালের ভাতে জল ঢেলে রেখেছি, গাছে লেবুপাতা আছে।’
‘শুধু ওই দিয়ে খাবি?’
‘তা নইলে কি পোলাও—কালিয়া রাঁধতে বসবো নিজের জন্যে?’
বোকা জগাই বলেছে, ‘তাহলে আর এতো খেটে মরিস কেন তুলসী? খাওয়ার জন্যেই তো টাকা।’
তুলসী তখন গম্ভীর হয়ে গিয়ে বলেছে, ‘না। খাবার জন্যেই টাকা নয়। মানুষের মতন করে থাকার জন্যে।’
তারপর এসে ঢুকেছে।
দরজায় একটা কুকুর শুয়েছিল তাকে হেই হেই করে তাড়িয়ে দিয়ে গেছে রাজেন। কিন্তু আরো একটা ওই জীব যে তুলসীর দাওয়ার ওপর উঠে বসেছিল, সেটা তো দেখে যায়নি তারা।
দেখতে পায়নি।
তুলসী যখন ওদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে রাস্তা সচকিত করে আসছিল, তখন সে দাওয়ার খুঁটির আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
ওরা চলে যেতেই সামনে এসে দাঁড়ালো।
অন্ধকারে হলেও অবয়বটা চিনতে ভুল হয় না।
তুলসী তীক্ষ্নকণ্ঠে বলে ওঠে, ‘একী? এর মানে?’
অন্ধকার মূর্তির কণ্ঠ থেকে একটি মৃদু সাবধানী স্বর বার হয়, ‘চুপ! আস্তে! খবর নিলাম আজ তোমার নাইট ডিউটি নেই—।’
‘তাই আপনি! ছি ছি! মান অপমান বলে কি কিছু নেই আপনাদের,…ঠিক আছে, ওরা এখনো বেশীদূর যায়নি, ডাকছি ওদের।’
তুলসী দাওয়া থেকে নামতে যায়। পিছন থেকে কেউ হাতটা টেনে ধরে, সেই চাপাকণ্ঠ গর্জনের মত বলে ওঠে, ‘কী? তোমার ওই বডিগার্ডদের? ওই লোফার ছোটলোক পাজীগুলোকে? ওদের তোমার এত পছন্দ?’
তুলসীর হাতটা একজনের বজ্রমুষ্ঠীর মধ্যে। তুলসী টানাটানি করে না। আশ্চর্য শান্ত ভাবে বলে, ‘সত্যিই তাই ডাক্তার বাবু! আমি নিজেও তাই কিনা! ছোটলোক পাজী। তাই ওদের কাছে নির্ভয়ে আর শান্তিতে থাকি, ভদ্দরলোক দেখলেই আমার গা গুলোয়।’
‘বটে! খুব যে কথা! আমি তোর চাকরি খেয়ে দিতে পারি জানিস!’
‘জানি বৈকি ডাক্তারবাবু! মাথাটাই খেয়ে দেবার ক্ষ্যামতা রাখেন, আর চাকরীটা পারবেন না? তবে তাতে আর আপনার কী গৌরব বাড়বে?’
অন্ধকার প্রেতমূর্তি হঠাৎ নরম হয়ে গিয়ে কথা বলে, ‘তা, একটু বসতেও তো দিবি? এতোটা পথ কষ্ট করে এলাম।’
‘কষ্টটা তো আপনার ইচ্ছে করে করা, কী করবো বলুন?’
গলার স্বর খাদে নামে, ‘আচ্ছা তুলসী, তোরই বা এতো ডাঁট কেন? নে, ঘর খোল বসি একটু।’
‘না।’
‘না? অমনি না?’ রাগচাপা একটা হিংস্র গলার স্বরে লোভের কাকুতি যেন এই বৈশাখ রাত্রির উদার নির্মল বাতাস, ওই তারা ঝিকমিক আকাশ, সব কিছুকে ক্লেদাক্ত করে তোলে…’তোকে তো বাবা বলেছি, তোকেই হেড আয়া করে দেব, ওই বুড়ি হাবড়িরা সব তোর আণ্ডারে থাকবে। বুঝলি তো?’
‘হুঁ বুঝলাম। শুধু তার বদলে আমাকে আপনার আণ্ডারে থাকতে হবে, কেমন? এই তো?’
চাপারাগের গলা আরো গর্জন করে ওঠে, ‘তাতে তুই সগগে যাবি, বুঝলি?’
‘বুঝলাম বৈকি ডাক্তারবাবু! তবে সবাইয়ের আবার সগগো সয় না।’
‘তা সইবে কেন? ওই নরকের পোকাগুলোর সঙ্গে আড্ডা ইয়ার্কি সয়। রুচিকেও বাহবা দিই তোর তুলসী। ঘরের দরজাটা একটু খোল বাবা!
একটু না বসে আর থাকতে পাচ্ছি না। ঘর খোল, আলোটা জ্বাল। মানুষের সঙ্গে কথা কইছি না পেত্নির সঙ্গে কথা কইছি বুঝতে পারি।’
তুলসী হঠাৎ হি হি করে হেসে ওঠে। হাসে বেশ গলা ছেড়ে, ‘ডাক্তারবাবু ঠিকই ধরেছেন। পেত্নীই। সরে পড়ুন, নচেৎ—’
‘তা অত গলা ছেড়ে হাসছিস কেন?’…সেই চাপাগলার খোসামোদ। ‘মতলবটা কী তোর? তুই কি আমায় লোকের সামনে অপদস্থ করতে চাস? প্রাণে বাপু মায়া মমতা নেই তোর! মানসম্মান খুইয়ে তোর কাছে দুদণ্ড বসতে এলাম, আর তুই—ওকী, ওখানে কী হাতড়াচ্ছিস? চাবি পড়ে গেল?’
‘না, না। চাবি—তালা ঠিক আছে,’ তুলসী খুব অনায়াসে বলে, ‘হাতের কাছে থানইট জড়ো করা আছে আমার, কুকুর টুকুর মারতে, দেখেননি সেদিন? দেখেছেন বৈকি। সেই একখানা হাতে তুলে মজুত রাখছি পাছে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে ওঠে—’
‘এই কি হচ্ছে? সত্যি সত্যি আমায় থানইট ছুঁড়ে মারবি নাকি?’
ভয়ার্ত প্রৌঢ়ের শিথিল কণ্ঠের উচ্চারণ যেন মাটিতে গড়িয়ে পড়ে যায়, ‘ইট নামা বলছি।’
তুলসী স্থিরগলায় বলে, ‘ভয় পাচ্ছেন কেন ডাক্তারবাবু, আপনাকে মারতে যাবো কেন? কুকুর মারবার জন্যে জড়ো করে রেখেছি। কুকুর দেখলে মারবো।’
‘বটে!’
অন্ধকারে সত্যিই যেন একটা শ্বাপদের নিশ্বাস শোনা যায়। ‘আচ্ছা, আমিও দেখছি। এই করণপুরে তুই কেমন করে ‘করে খাস’ আমি দেখবো। ছোটলোক কোথাকার!’
দাওয়া থেকে নামতে দেখা যায় ছায়ামূর্তিটাকে।
আর সেই হিংস্র শ্বাপদের নিশ্বাসটা মানুষের ভাষায় কথা বলতে বলতে চলে যায়, ‘অহঙ্কার দেখাতে এসেছে! নষ্ট মেয়েমানুষ! গা দিয়ে এখনো বিড়ির গন্ধ বেরোচ্ছে!…সাধে কি আর বলে—’
কী বলে তা আর শোনা যায় না!
‘এই নিয়ে চার দিন হলো।’
হাতের ইঁট খানা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বসে পড়ে তুলসী।
রাগের মাথায় তুলসীকে বাসায় পৌঁছে দেবার ভারটা রাজেন জগাইয়ের ওপর ছেড়ে দিয়ে হনহনিয়ে নিজের বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে আরো রাগে জ্বলছে সুখেন।
এখন রাগটা কার ওপর তা জানে না।
তুলসীর ওপরই কী?
এমন হাড়—জ্বালানো কথা বলে তুলসী! কিন্তু অন্যায় বলে কী? একা তুলসীর সঙ্গে এতখানি পথ যেতে যেতে তুলসীকে একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করতো না সুখেনের? করতো, করেছিল একদিন। অনেকদিন আগের সেই কথাটা নিয়ে খোঁটা দিল তুলসী।
আচ্ছা এতো কিসের অহঙ্কার?
সুখেনের মাথায় আগুন জ্বলছে।
পশ্চাত্তাপের আগুন।
তখন সুখেন ভাবতে চেষ্টা করে, এখনো ও ‘ভালো’ আছে নাকি? হুঁঃ হাসপাতাল বলে জায়গা! আর যত বুড়ো ভামের আড্ডা। ওখানে থেকে তুই ধোওয়া তুলসীপাতাটি আছিস এই বিশ্বাস করবো আমি? রাজেন জগাইয়ের সামনে আমায় ওই ভাবে অপদস্থ করলি তুই! আচ্ছা!
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন