সপ্তম অধ্যায় – নাস্তা জাতীয় খাবার
ঢাকাবাসী নাস্তা বলতে সকালে প্রাতরাশ বা প্রথম খাবার এবং বিকালের হাল্কা নাস্তা জাতীয় খাবারগুলোই উল্লেখযোগ্য। ঢাকার সকালের নাস্তা মোগল আমলে উত্তর ভারত থেকে আগত বসবাসকারীদের প্রভাবে রুটি, পরোটা, কাবার, পনির, শরবত, শির ফালুদা, মাকুতি উচ্চবিত্তের মধ্যেই নাস্তা হিসেবে প্রচলিত ছিল। সাধারণের জন্য ভাত, ভর্তা ও সবজি প্রাত্যহিক খাবারই নাস্তায় প্রচলিত ছিল। তবে এই অভ্যাসের ছেদ পরে ব্রিটিশ আমলের শেষ সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। সমগ্র বাংলায় চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তে ভাতের বিকল্প হিসেবে রুটি গ্রহণ করতে হয়েছিল। ঢাকায় রুটি পরোটা খাওয়া শুরু হয় তরকারি, ভাজি, ডাল, নিরামিষ, হালুয়া ইত্যাদি দিয়ে। নিম্নবিত্তের রুটির সাথে পেঁয়াজ, মরিচ ভর্তা, গুড়, চিনির প্রাধান্য দেখা যেত। চায়ের প্রচলন শুরু হলে তাদের রুটি বা পরোটায় ডুবিয়ে চা পান করতে দেখা যেত। ১৯ শতকের শেষ দশক থেকে ঢাকায় ফেরি করা পোলাওওয়ালাদের কল্যাণে আদি ঢাকাই লোকদের মাঝে সকালে নাস্তায় পোলাও খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে।
সকালের প্রাথমিক নাস্তা হিসেবে মাঠা, শরবত, পিঠা ওয়ালীদের বাড়ি বাড়ি সকালে ফেরি করে বিক্রি করা পিঠা এবং পরবর্তীতে চায়ের অভ্যাস শুরু হওয়া পর থেকে চা দিয়ে ডালপুরিতে সকালের প্রাথমিক নাস্তা অনেকেই সেরে নিতেন। পরে বেলা বাড়লে ভাত, পরোটা, রুটি, বাকরখানি সাথে সবজি, ভাজি, হালুয়া, মাংসের মসলাদার খাবারের সাথে আরও একবার সকালের নাস্তা বা প্রাতরাশ সেরে নিতেন। তবে ঢাকাই লোকদের নাস্তা খাবার জন্য যে কোনো উপলক্ষ্যই যথেষ্ট ছিল। অতিথি বা প্রতিবেশী বন্ধু-বান্ধব দেখা সাক্ষাতেই তারা নাস্তা খাবার উপলক্ষ খুঁজে পেতেন। শীতকালে সকালে নেহারির সাথে তন্দুরি বা নান রুটি তাদের খেতে দেখা যেত। আমেনীয়দের প্রচলিত চা-বিস্কুট এবং ব্রিটিশ প্রভাবে পাউরুটি, মাখন, টোস্ট ঢাকার সকালের নাস্তায় অভিজাতদের প্রাতরাশে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। প্রথমদিকে বিলেত থেকে বিস্কুট আমদানি হলেও পরবর্তীতে ঢাকার আমপট্টি, লক্ষ্মীবাজার, ওয়াইজঘাট এলাকাগুলোতে গড়ে উঠতে থাকে বিস্কুট তৈরির কারখানা বা বেকারি। যোগ হয় কাকচা, নানখাতাই, লাঠি বিস্কুট, ক্রাশ, বাবুল বিস্কুট, গুল্লি বিস্কুট, টোস্ট বিস্কুটসহ উন্নতমানের আরও বিখ্যাত সব বিস্কুট।
অভিজাত মুসলিম সমাজে মূলত তুর্কি, পাঠান, মোগল, ইরানিদের নাস্তা গ্রহণের প্রচলনই বেশি ছিল। ঢাকাও এই প্রভাবের বাইরে ছিল না। মোগল আমলে নিমকি, সমুসা, শকরপারা, লাড্ডু, বরফি ইত্যাদি নাস্তাজাতীয় খাবারের কথা জানা যায়। সকাল, দুপুর আর রাত এই তিন বেলা খাবারে বাঙালি রেওয়াজ বা প্রথা থাকলেও বিকালের খাবার বা নাস্তার খাদ্য অভ্যাসে ব্রিটিশ আমলেই ঢাকার দৈনন্দিন জীবনে যোগ হয়েছিল। হারিকেন, কুপি, মোমবাতির আলোয় সন্ধ্যা ও গভীর রাতের মধ্যের পার্থক্য তৈরি করতে পারত না। দিনের আলো ফুরিয়ে যাবার সময় বা সন্ধ্যা রাতের কিছু পরেই সবাই রাতের খাবার খেয়ে নিতেন। ব্রিটিশ শাসনের শেষ পর্যায়ে ঢাকায় বিদ্যুৎ এর প্রবর্তন ঢাকার দৈনন্দিন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল। বিজলি বাতি সেখানে গভীর রাতকে টেনে নিল আরও গভীরে। এতে দুপুর আর রাতের খাবারের দূরত্ব বাড়ে। যার কারণে নতুন আরেকটি খাবারের সময় স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টি হয়। অনেক কারণের মাঝে এটি একটি মুখ্য কারণ ছিল বলে মনে করা হয়। এই সময়ে নাস্তায় নতুন নতুন অনুসঙ্গ যুক্ত হতে থাকলেও তখন ব্রিটিশ, পর্তুগিজ, আমেনীয় জনগোষ্ঠির প্রচলিত নাস্তা ঢাকার নাস্তার তালিকায় স্থান পেতে থাকে। ঢাকায় রমণীকুল দুপুরের খাবারের পর অবসর সময়ে ঘরে তৈরি করতেন বাহারি ও মুখরোচক সব নাস্তা। নানা রকমের পিঠা পুলি, ডাল রুটি, চাপড়ি, পিঁয়াজু, ডালের ফুলুরি, বুট, দই বড়া, মিষ্টি আলু, বিভিন্ন ডাল, কাঁঠালের বিচি, চিড়া, কুমড়া বিচি ভাজাসহ আলু কাচরি, নিমকপাড়া, ভুট্টা, চীনাবাদাম, চালভাজা, খেজুরি, গাট্টা নানা পদের নাস্তা তারা তৈরি করতেন।
ঢাকার বেকারির কেক, বিস্কুট, পাউরুটি ছাড়াও চায়ের সাথে কাটলেট, আলু পুরি, মোগলাই পরোটা, ফুলুরি, কিমা পুরিসহ বিভিন্ন নাস্তার প্রচলন দেখা যায়। ৬০ দশক থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী ঢাকার নাস্তায় যোগ হতে থাকে সিংগারা, আলুর চপ, পেটিস, বোম্বে টোস্ট, চানাচুর, সেমাই, চটপটি, ফুসকাসহ বিভিন্ন খাবারের পদ। ২০ শতকের ৮০ দশক থেকে ৯০ দশকের শুরু হয় ক্রিম রোল, বাটার বন, স্যান্ডউইচ, রোল, বার্গার, চাইনিজ খাবারে নুডুলস, স্যুপ, চিকেন ফ্রাই, কফি, দোসা, শর্মাসহ দেশি বিদেশি নানা রকম মুখরোচক নাস্তা। তবে নাস্তা হিসেবে আদি ঢাকাই লোকদের কাবাব, পরোটা, পনির হলে তাদের বিশেষ কিছুর প্রয়োজন হয় না।
বিশেষ ধরনের রুটি। সাধারণভাবে আতপ চালের গুঁড়ো রুটির জন্য ব্যবহার হলেও রুটির মধ্যে ছোলার ডাল বাটা, পিঁয়াজ, কাঁচামরিচের মিশ্রিত পুর দিয়ে শুকনো তাওয়ায় রুটি সেঁকা হয়। ঢাকাই পরিবারের বাড়িতে তৈরি হলেও কিছু কিছু রমণী খুবই সুন্দর ও বিশেষ স্বাদযুক্ত ডাল রুটি তৈরি করতে পারতেন। বর্তমানের ঢাকায় তেমন ডাল রুটির প্রচলন দেখা যায় না। তবে বর্তমান পুরান ঢাকার কিছু কিছু এলাকায় এখনও বিশেষভাবে ডাল রুটি তৈরি হয়ে থাকে।
দই বড়া খাবারটি সম্পূর্ণই ভারতীয়। ১২ শতক থেকেই দক্ষিণ ভারতের ঐতিহ্যবাহী খাবার। যা তাদের খাবার তালিকায় ব্যবহার হতে দেখা যায়। ভারতের পাঞ্জাব, তামিল, তেলেগু প্রদেশের একটি বিশেষ খাবার। অঞ্চল ভিত্তিতে নামে পার্থক্য হলেও দই বড়া তৈরির প্রক্রিয়াতে রয়েছে সামান্য ভিন্নতা। দই বড়াতে টক দই ব্যবহার হলেও ভারতের দিল্লিবাসীর কাছে দই বড়াতে মিষ্টি দই ও পুর হিসেবে মাংসের কিমা ব্যবহারে দই বড়া জনপ্রিয় ছিল। ঢাকার দই বড়া বলতে সাধারণত টক মসলাদার দই বড়ার প্রচলন থাকলেও বনেদি ও অভিজাত পরিবারগুলোতে মিষ্টি দই বড়া তৈরির রেওয়াজ দেখা যেত। তৈরির প্রক্রিয়াটি মূলত মাষকলই ডাল ভিজিয়ে বাটার পর তাতে জিরা, ধনে, গোল মরিচসহ অন্যান্য মসলা যোগে তেলে ভেজে বড়া কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখা হতো। তারপর টক দই বা মিষ্টি দইয়ের সাথে বড়া কয়েক ঘণ্টা মিশিয়ে রাখা হতো। পরিবেশনের আগে দই বড়ায় বিভিন্ন মসলা ছিটিয়ে স্বাদ বৃদ্ধি ও দৃষ্টিনন্দন করা হতো।
হালিম আরবীয় খাদ্য। দশম শতকে “হারিস”, “হারিসা” থেকে উপমহাদেশে হালিম শব্দের উৎপত্তি। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন আরবীয় খাদ্যের রেসিপি বই “কিতাব-আল তাবিক” এ হালিম খাদ্যের কথা উল্লেখ আছে। উপমহাদেশে হায়দারাবাদ নিজামের সেনাবাহিনীতে আরবীয় সৈন্যরা যে এলাকায় বাস করত সে অঞ্চলটি “পারকাস” নামে পরিচিত ছিল। তাদের এই খাদ্যকে “হারিস” নামে ডাকা হতো যা কালক্রমে হালিম নামে লোক মুখে প্রচলিত হতে থাকে। ঢাকায় হালিমের আগমন মোগল সমসাময়িক সময়েই। সম্রাট শাহজাহানের আমলে বাচ্চা খাসির মাংস, মসলা, লেবুর রস ও গমের সাহায্যে একধরনের খাবার তৈরি করত মোগলেরা। যা ছিল আধুনিক হালিমের অনুরূপ। ঢাকার রমজান ও মহররম উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে হালিম তৈরির রেওয়াজ রয়েছে। যদিও হালিম নাস্তা জাতীয় খাবার। হালিম তৈরিতে গমের ভাঙা অংশ কুটা পরিমাণ মতো পোলাওর চাল, গরু বা খাসির মাংস এবং নানান পদের মসলার সংমিশ্রণে অল্প আঁচে প্ৰায় ৮-৯০ ঘণ্টায় হালিম তৈরি করা হয়ে থাকে। হালিম একটি উচ্চ ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেড যুক্ত খাবার যে কারণে হালিমের সাথে লেবু, পুদিনা, কাঁচা মরিচ, ধনে পাতা কুচি এবং ভাজা পেঁয়াজের চুর সহযোগে আহার উপাদেয় হয়।
নেহারি ফারসি শব্দ। যার অর্থ সকাল। ঢাকার সকালে বিশেষ করে শীতকালে নেহারি ছাড়া অনেক পরিবারে নাস্তাই শুরু হতো না। নেহারি বলতে খাসির পা বা পায়া থেকে তৈরি এক ধরনের স্যুপ জাতীয় খাবার। যা নান রুটির সাথে খাবার উপাদেয়। খাসির পায়া, কিছু মাংস ও বিশেষ কিছু মসলার সহযোগে একটি হাঁড়িতে দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করা হয় এবং পরবর্তীতে মুখের চারপাশে আটা দিয়ে বন্ধ করে দম পদ্ধতিতে রান্না হয় উত্তম নেহারি। বর্তমানকালে ঢাকায় গরুর পায়া নেহারি দেখা গেলেও নেহারির মূল স্বাদ ও নেহারি বলতে ঢাকাই লোকেরা খাসির নেহারিকেই বোঝে। নেহারি খুবই গরম খাবার তাই শীত কালেই ঢাকায় বেশি নেহারি খাওয়ার ধুম পড়ে। ঝাল নিবারণের জন্য ঢাকার আদিবাসীরা খাবার পরে কমলা লেবু খেয়ে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ও মুখের ঝাল নিবারণ করতেন। মোঘল সময়ে লাখনৌ রসুইঘরে নেহারির প্রচলন দেখা যায়। কথিত আছে মোঘল শ্রমিক শ্রেণিদের নির্মাণ কাজে পারিশ্রমিক ছাড়া সকালে কাজের আগে নেহারির খাবার দেওয়া হতো। যা শ্রমিকদের দুপুর পর্যন্ত ক্ষুধা ও শক্তি ঘাটতি হতো না। অনেকেই তখন একে নিশ্রেণির খাবার হিসেবে দেখতেন।
চাপড়ি এক ধরনের পিঠা যা ঢাকায় শীতকালে নাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। চাল ও মশুরের ডাল মিশিয়ে রাতে ভিজিয়ে পরদিন পিষে পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, ধনে পাতা ইত্যাদির সংমিশ্রণে তাওয়ায় লেপে পাতলা ও মচমচে করে ভাজলে চাপড়ি তৈরি হয়ে যেত। বেশ উপাদেয় নাস্তা হিসেবে ঢাকায় এখনও প্রচলন রয়েছে। চাপড়ির উপর ঘি এর প্রলেপ বা মাংস বা মাংসের ঝুরি দিয়ে চাপড়ি খেতে দেখা যায়।
বৌখুদি ঢাকাবাসীরা সকালে নাস্তা হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। চালের খুদ থেকে তেল দিয়ে এক ধরনের পোলাও তৈরি করা খাবারের নাম বৌখুদি। ঢাকার নিবিত্তের খাবার হিসেবে প্রচলিত হলেও কালক্রমে সব শ্রেণিতেই বৌখুদির জনপ্রিয়তা পায়। বৌখুদি নামের একটি কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। দৰ্জাল শাশুড়ি বউকে পেটপুরে খেতে দিতেন না। তাই বউ চাল ঝাড়ার সময় প্রতিদিন অল্প করে খুদ জমিয়ে রাখত। এই খুদ ও তেল দিয়ে এক ধরনের পোলাও তৈরি করে বউ খেত। তাই এই খাবারের নাম বৌখুদি। বৌখুদির সঙ্গে নানা ভর্তার ব্যবহার থাকলেও ডিম ভাজা, সরিষার তেল, বিশেষভাবে তৈরি রসুন ও লাল মরিচ বাটা বৌদির স্বাদ ও গুণ বাড়িয়ে দেয়।
নানখতাই হলো ফারসি নান অর্থ রুটি আর খতাই আফগানিতে বিস্কুট অর্থাৎ রুটি বিস্কুট। যা আকারে রুটির চেয়ে অনেক ছোট। ধারণা করা হয় নানখতাই এর জন্ম ভারতের সুরাটে। ১৬ শতকে ডাচ বণিকেরা এই বন্দরে মসলার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিল। তাদের নিজেদের প্রয়োজনে সুরাটে বেশ কয়েকটি বেকারি খোলেন তারা। কিন্তু ভারত ত্যাগের সময় ঐ বেকারিগুলো কমদামে স্থানীয় ইরানিদের কাছে বিক্রি করে যান। ভারতীয়রা তাদের এই বেকরির রুটি ও বিস্কুটগুলো পছন্দ করতেন না। ব্যবসায়ের স্বার্থে এর মালিকেরা কমদামে শুকনো রুটিগুলোর উপর পরীক্ষা নিরীক্ষার সময়েই বের হয়ে আসে নানখতাই। ঢাকার ব্রিটিশ আমলের শেষের দিকে কাকচা আর নানখতাই ছিল ঐ সময়ের উত্তম বিস্কুট। যদিও নানখতায়ী মোগলীয় সওগাত তন্দুরেই তৈরি হতো। সম্রাট আকবরের সময়েও বিশেষ ধরনের নানখতাই এর কথা জানা যায়। যা মুখে দিলেই গলে যেত। ঢাকাতে মোগলেরা এই বিস্কুট নিয়ে আসে যা নবাব ওমরাহ্ রইসদের প্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত ছিল। ময়দা, মাখন, মধু ও এলাচ গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হতো মচমচে ও মিষ্টি গন্ধের অদ্বিতীয় নানখতাই। ঢাকার চায়ের সঙ্গে এবং ভ্রমণকারী ও শিকারিরা সঙ্গে রাখত কাকচা ও নানখতাই বিস্কুট। এছাড়াও দূর দূরান্তে উপহার হিসেবে এই বিস্কুট পাঠানো হতো। দুধ যোগে কাকচা বিস্কুট বর্তমানে পাওয়া গেলেও মানের দিক থেকে তা উৎকৃষ্ট নয়। ২০ শতকের ৬০ দশক থেকে ঢাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুলোর উপর টিনের তৈরি ওভেন বসিয়ে নানখতাইসহ অন্যান্য বিস্কুট তৈরি হতে দেখা যেত।
আবুল ফজল বাইয়াক “তারিখ-ই-বাইয়াগী” গ্রন্থে খ্রিষ্টীয় দশম শতকে মধ্যপ্রাচ্যে “সামবোসা” এর কথা উল্লেখ করেছেন। মূল উৎসে পারসিয়ান সানবোসাগ (চাঁদ আকৃতির) বা সানবুসাক আরব বিশ্বে সামুসার সন্ধান মিলে। ভারতের ১৩-১৪ শতকে বণিকদের হাত ধরেই মধ্য এশিয়া থেকে সুলতানি আমলে প্রবেশ করে। পরিব্রাজক ইবনে বতুতা তার ১৪ শতকে ভ্রমণের সময়ও সমুসার কথা উল্লেখ করেছেন। ১৬ শতকে মোঘল দস্তাবেজ আইন-ই-আকবরিতে হিন্দুস্তানে সানবুসার কথা পাওয়া যায়। মাংস, বাদাম, পোস্তা, আখরোট, মসলার সহযোগে সমুসা পরিবেশন করা হতো। এশিয়া, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকায় সামসা, সামবুসা, সামুসি, সিংগাদা বিভিন্ন নামে সমুসার পরিচিতি রয়েছে। সমুসার বিভিন্ন আকৃতি ত্রিকন, চাঁদ, ত্রিকোণ চেপ্টা দেখা গেলেও ঢাকার সমুসা ও সিংগাড়ার একটু পার্থক্য রয়েছে। সিংগাড়া আসামি শব্দ সিং ও রা। উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ডে সমুসাই সিংগারা। মূলত সিংগাড়ায় ময়দার কোণে সিদ্ধ আলু, নারিকেল, ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজি ব্যবহার দেখা যায়। আবার মিষ্টি সিংগাড়াও তৈরি করা হয়। ঢাকার সিংগাড়া বলতে ময়দার কোণে সিদ্ধ আলু, পিঁয়াজ, মসল্লা, চীনা বাদাম ক্ষেত্র বিশেষে কলিজার ব্যবহারে তৈরি হয়ে থাকে। অপরদিকে সমুসা চাঁদ আকৃতি বা ত্রিকোণ চেপ্টা আকৃতির মাংস ও পনিরের সমুসা জনপ্রিয়। সমুসার ময়দা ত্রিকোণ করে বেলে পাতলা পরতে মাংসের কিমা ও অন্যান্য উপকরণে ভরে ত্রিকোণ আকৃতির ভাঁজে তৈরি করে ভাজা হয়। যা মচমচে ও পাতলা পরতের কারণে মাংসের স্বাদ উপভোগ করা যায়। পনিরের সমুসা সাধারণত চাঁদ আকৃতির হয়ে থাকে। সকাল দুপুরের খাবারের মাঝে কিংবা বিকেল বা সন্ধ্যায় নাস্তা হিসেবে ঢাকাবাসীর প্রচলিত খাবার। যা রায়তা বা সসযোগে বেশ উপাদেয়।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন