হারবার্ট – ৮

নবারুণ ভট্টাচার্য

আট

“দুরন্ত ঠগীর মত, কণ্ঠ তার চাপি অকস্মাৎ,
মুহূর্তে পাঠায়ে দাও পিপাসীরে মৃত্যুর সাক্ষাৎ।”

-প্রমথনাথ রায়চৌধুরী

সোমবার, ২৫মে, ১৯৯২। হারবার্ট চায়ের দোকানে বলে রেখেছিল যে চা লাগবে কয়েকটা। সকালে একটা লোকও এসেছিল। বর্ধমান থেকে। তাকে বলেছিল যে আজকে হবে না। পরের সপ্তাহে আসতে। তাকগুলো ঝেড়েঝুড়ে বইগুলো সাজিয়ে রেখেছিল। নির্মলাকে বলতে ঘরটা ঝাট দিয়ে দিয়েছিল। মারিক অবশ্য বলে গেছে। যে মাদ্রাজ থেকে ফিরে আসবে। কাজটা তবে এগোচ্ছে। মারিক লোকটা বেশ দিলদরিয়া। কিছু না হতেই মেন মদ-সিগারেট খরচা করে গেল। দিল না থাকলে হয়? হারবার্ট ভাবতেও পারেনি যে দুপুরবেলা কতজন আসবে। তাড়াতাড়ি স্নান খাওয়া সেরে ভেবেছিল একটু গড়িয়ে নেবে। কিন্তু ঘুম এল না। ওদের পাঠানো চিঠিটা নিয়ে আবার পড়েছিল। পড়তে পড়তে মুখে একটা অবজ্ঞার হাসি ফুটেছিল। একটা মাছি ঢুকেছিল ঘরে। শার্সির গায়ে ভভন্ করছে। কয়েক পা হাঁটছে। আবার উড়ে দুপাক খেয়ে ফিরে আসছে। মাছিরা মরলে কী হতে পারে ভাবছিল হারবার্ট। এমন সময় চায়ের দোকানের পাঁচু ওদের নিয়ে এল।

-এইতো ঘরটা। কাকাবাবু, আপনাকে খুঁজচে। নাম বলতে নিয়ে এলাম।

এত লোক! পাঁচ-সাতটা ছেলে। কয়েকজনের চশমা। দাড়ি। কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো। দুটো মেয়ে। বলা কওয়ার তোয়াক্কা না করেই ওরা ঢুকতে থাকে। হারবার্ট দেখল বাইরে ভারি চশমা পরা লম্বা একটা লোক সালোয়ার কামিজ পরা একটা মেয়েকে আঙুল দিয়ে তার সাইনবোর্ডটা দেখাচ্ছে। মেয়েটা কাঁধে ঝোলানো ক্যামেরা তুলে সামনের নলের মতো কালো কাচটা ঘোরাল, ছবি তুলল। একটি ছেলে বলে-আপনিই হারবার্ট সরকার। প্রণবদা ভেতরে আসুন।

ঘরে একটাই চেয়ার। তাতে বসে প্রণব ঘোষ। এই লোকটাই তাহলে চিঠি দিয়েছিল। সালোয়ার কামিজ পরা মেয়েটা ঘরে ঢুকল। ঢুকেই ফ্ল্যাশ জ্বেলে কয়েকটা ছবি তুলল হারবার্টের, ঘরের। হারবার্ট খাটের কোণের দিকে সরে যায়। বালিশ সরায়। ওদের খাটের ওপরেই বসতে বলে। দু-একজন বসে। কেউ দেওয়ালে ঠেশ দিয়ে দাঁড়ায়। জিনস প্যান্ট আর শার্ট পরা যে একটু পরে ঢুকেছিল তাকে প্রথমে ছেলে ভেবেছিল হারবার্ট। সে একটা ক্যাসেট টেপ রেকর্ডার রেকর্ডিং-এর নব টিপে খাটের ওপর রেখেছিল। প্রণব ঘোষ চশমাটা খোলে। হাই পাওয়ার চশমা খুললে চোখটা কেমন ভাবলেশহীন হয়ে থাকে। গলার আওয়াজটা ভারি

-আপনি যখন এলেন না তখন বোঝাই গেল যে আমাদের চ্যালেঞ্জ আপনি অ্যাকসেপ্ট করেছেন।

চ্যালেঞ্জ শব্দটা চিঠিতে ছিল। কিন্তু শব্দটা প্রণব ঘোষের মুখ থেকে এত ধারালোভাবে বেরিয়ে আসে যে হারবার্টের বুকটা কেমন করে ওঠে।

-না মানে, চিঠিফিঠি তো লিকি না অত। আর কোথায় যে আপনাদের দপ্তর। ভাবলুম সে কী আর হবে গিয়ে। আর তাছাড়া কী অন্যায়টা করেছি যে যেতে শরীরটাও ভালো নেই। ডেঙ্গু হয়েছিল। সবে উঠেছি।

-সে না হয় হল। কিন্তু এই যে বললেন অন্যায় করেননি সেটা কিন্তু ডাহা মিথ্যে কথা। সাঙঘাতিক অন্যায় করেছেন আপনি। করে চলেছেন।

-কী অন্যায়টা করেছি, যদি করেই থাকি তো বলুন না। দাঁড়ান, দাঁড়ান, জানলাটা খুলে দি। গরম হচ্চে ঘরে।

-অন্যায় মানে? প্ল্যান করে লোক ঠকিয়ে চলেছেন, কতগুলো আজগুবি ননসেন্স শুনিয়ে টাকা নিচ্ছেন লোকের কাছ থেকে আর বলছেন কিছু করেননি।

-কাকে ঠকিয়েচি? কোনো শালা এসে বুক ঠুকে বলুক না, কাকে ঠকিয়েছি? হারবার্ট রেগে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিল। একটা ছেলে ঠাণ্ডা গলায় বলে-এই, একদম গলা তুলবেন না। স্ল্যাং ইউজ করবেন না। বলেই ছেলেটা ক্যামেরা কাঁধে মেয়েটাকে বলে-এদের এক্সপোজ করলেই দেখবেন গলাবাজি শুরু করে দেয়। ভাবে এইসব মেলোড্রামা করলে পার পাওয়া যাবে।

মেয়েটা বলে–বাট হি সিস টু বি এ ডাড। মিকি, প্রোফাইলটা কিন্তু অনেকটা মন্টি ক্লিফটের মতো না।

মিকি নামক মেয়েটি খিলখিল করে হেসে ওঠে।

-ও, হি ইজ এ সুইট, কিউট স্মল টাইম ক্রুক।

প্রণব ঘোষও হেসে ফেলে-একস্যাক্টলি!

হারবার্ট রেগে যায় আরো।

-ও ইংরিজি করে বলে ভেবেচেন ভেবড়ে দেবেন সেটি হবে না। ইংরিজি মারাচ্চে।

প্রণব ঘোষ একটু গলা তোলে-প্রমাণ দেব? কীভাবে আপনি তোক ঠকিয়েচেন?

-দিন না, ক্ষ্যামতা থাকে তত দিন না।

-আপনার কাছে টিনা বলে একটি বিদেশী মেয়ে এসেছিল না?

সুন্দরী যুবতী বেলজিয়ান অভিনেত্রী টিনা। কী সুন্দর দেখতে। কটা কটা চোখ। খালি খিল খিল করে হাসে। শুধু মা-র কথা বলার সময় মুখটা কেমন ভার হয়ে গিয়েছিল, চোখ দুটো ছলছল করে উঠেছিল–বড় মায়া হয়েছিল হারবার্টের।

-হ্যাঁ, এসেছিল তো। সঙ্গে একটা ডাক্তার ছিল, কী যেন নাম।

-টিনাকে আপনি কী বলেছিলেন। আমার কাছে ক্যাসেট আছে, শুনবেন? হারবার্ট এসবের কোনো থই পায় না। কী যে সব হচ্ছে! কেন হচ্ছে! প্রণব ঘোষ যে ক্যাসেটটা ভরা ছিল সেটা বার করে। অন্য একটা ক্যাসেট বসায়। প্লে করে তার ওপরেই ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে ফলে কিচকিচ প্যাক প্যাক নানারকমের উদ্ভট শব্দ হয়। স্টপ করে চালায়। টিনার হাসি। হারবার্টের গলা-ভেরি গুড! ভেরি গুড! ডাক্তারের হাসি, রাস্তার শব্দ। স্টপ। ফাস্ট ফরোয়ার্ড। ঘ্যার ঘ্যার করে ক্যাসেট ছোটে। স্টপ। প্লে। হারবার্ট নিজের গলার আওয়াজ শোনে-হা, এরকমই সব আজব বন্দোবস্ত। ওর মা তো ভালো আচে দেখচি। পঞ্চম স্তরে, মধ্যমধার্মিকরা যেখানে থাকে। ও ডাক্তারমশাই, ওকে বলো, একেবারে যেন মন খারাপ না করে। ক’জুন যেতে পারে ঐ পাঁচতলায়। বেশির ভাগই তো এক বা দোতলার বাসিন্দা ওর মা তো দেখচি মেরে দিয়েচে গো ডাক্তার। আর একটা তলা উঠলে তো মহা আনন্দ–ওঃ সে তো মুক্ত হয়ে যাবে গো!

ডাক্তারের গলা।

-যা বললেন ওকে একটু বলে দিই।

হারবার্ট–হ্যাঁ ভাই, বলে দাও। শুনে মন প্রফুল্ল হোক।

ডাক্তার-হি ইজ সেয়িং দ্যাট ইওর মাদার ইজ নাউ ইন দ্য ফিফথ প্লেন হুইচ ইজ দা রেল্ম অফ বিংস উইথ মধ্যম ধার্মিক’-বিংস উইথ মডারেট ভারচুস

টিনা–হোয়াট, ও ইয়েস, হাউ এক্সাইটিং, টেল হিম দ্যাট হি ইজ মার্ভেলাস, আ মাস্টার …

ডাক্তার-টিনা বলছে যে আপনি খুব অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী।…

স্টপ। প্রণব ঘোষ ক্যাসেটটা বার করে। যে ক্যাসেটটা চলছিল সেটা ফের বসায়। চশমাটা রুমালে মুছে পরে। তারপরে, রেকর্ডিং-এর নব্‌ টেপে–আপনি জানেন টিনা কে ছিল। ও হচ্ছে জেনিভা বেসড ইন্টারন্যাশনাল র‍্যাশনালিস্ট মুভমেন্টের মেম্বার। লন্ডনের ঐ টিবেটান লামাটা, যেটার কাছে পলিটিশিয়ানগুলো কেনা ছিল, সে এখন ঐ টিনার ফাঁদে পড়ে জেল খাটছে জানেন? মেক্সিকো, ব্রেজিল, ফিলিপাইন যত সব মিরাকল হিলারকতজনকে ও ফ্রড বলে প্রমাণ করেছে জানেন? আমরাই টিনাকে পাঠিয়েছিলাম–এখানকার একটা টিপিক্যাল স্যাম্পল দেখতে।

-সে কী করে হবে? সঙ্গে যে একজন ডাক্তার ছিল, আমার কতার তজজমা করচিল।

-ডাক্তার? হ্যাঁ, অলোক ডাক্তার ঠিকই। ও আমাদের সংগঠনের একজন ফাউণ্ডার মেম্বার।

-তাতে করে হলটা কীরে বাবা!

-কী হল? ধরা পড়ে গেল যে আপনি ঠক। বুজরুক। টিনার মা বহাল তবিয়তে জীবিত। আর আপনি একেবারে ফিফথ প্লেনে পাঠিয়ে দিলেন? অ্যাপার্ট ফ্রম দ্যাট আপনি তো অশিক্ষিত-এগুলো এফিসিয়েন্টলি করতে হলে যে সফিস্টিকেশন লাগে সেটা আপনার নেই। থাকলে ‘স’ দিয়ে শান্তার নাম লিখতেন না। বিমলেন্দু নাম করা একটা থিয়েটার গ্রুপ-এ আছে। যে এসেছিল আর কী আপনার কাছে-হ্যাঁ, হ্যাঁ ঐ ট্রাংকের মধ্যে বোনের বডি ইন সো মেনি পিসেস। ও তো ক্লিয়ারলি মার্ক করেছিল যে আট দা মেনশন অফ লালবাজার আপনি অস্বস্তি বোধ করছিলেন। বলুন। নিজেকে কী বলবেন আপনি। মৃতের সহিত কথোপকথন।

দাড়িওলা একটি ছেলে বলে ওঠে–ঢপ কম্পানির মেজর জেনারেল।

সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। হারবার্ট ঘামছে। লাল হয়ে গেছে। তাক থেকে টেনে ‘পরলোকের কথা’ ও ‘পরলোক রহস্য’ বের করে।

-এগুলোর নাম জন্মে শুনেছেন? ভাবছেন সব জালিয়াতি? পড়ুন, তবে তো বুজবেন কীরকম কাণ্ড, কীরকম বন্দোবস্ত।

-আমাদের ওগুলো পড়ার দরকার নেই।

ক্যামেরাসহ যুবতীটি ‘পরলোকের কথা’ উল্টে দেখে বলেছিল–সেই প্ল্যানচেট আর স্পিরিট। বুলশিট।

হারবার্ট চেঁচায়–বুজবেন না, জানবেন না, বাড়ি বয়ে ঝগড়া করতে বেরোন দুপুরবেলা, লজ্জা করে না।

-লজ্জাটা কার করে সেটা বুঝবেন যখন পুলিশ এসে কোমরে দড়ি দিয়ে নিয়ে যাবে।

-কেন পুলিশে নিয়ে যাবে কেন? নিলেই হল?

-হ্যাঁ, নিলেই হল। কারণ আপনি টিনাকে যেমন বলেছেন সেইসব আগডুম বাগড়ম অন্য লোকেদের কাছে বলে পয়সা কামিয়েছেন। এটাও এক ধরনের চিটিং। চুরি। আমাদের রিপোর্টটা গেলে কী হয় দেখবেন?

-কী হবে?

-পুলিশ আসবে। আপনাকে অ্যারেস্ট করবে।

-না! পুলিশ আসবে না। আমি স্বপ্ন পেয়েছিলুম। বিনুকে পুলিশ মেরেছিল। গুলি করে।

হারবার্ট প্রচণ্ড চেঁচাতে আর কাঁদতে থাকে–পুলিশ আসবে না। আমি মিথ্যে বলিনি। ভূত আচে। ভূত থাকবে।

প্রণব ঘোষ মেয়েটিকে ইঙ্গিত করতে সে এই অবস্থায় একের পর এক ফটো তোলে। মেয়েটা সিগারেট ধরায়। দরজার বাইরে পাড়ার ছেলেদের ভিড়। ওরাও সামনে থাকছে না। পুলিশের কথা শুনে সরে গিয়েছিল।

দেওয়ালের গায়ে ঠেশ দিয়ে যে ছেলেটা দাঁড়িয়েছিল সে বলে-এইসব মালের ওষুধ হল স্ট্যালিন। পড়ত স্ট্যালিনের হাতে। স্ট্রেট ফায়ারিং স্কোয়াড।

হারবার্ট ভয় তো পেয়েইছে, তবু চেঁচায়ও লেলিন-স্ট্যালিন আমরাও নাম করতে পারি। পুলিশ আসবে না। নিদ্দোষকে পুলিশ কিছু করে না। পুলিশ তোদের ধরবে। তোদের গায়ের কাচে যমদূত ঘুরে বেড়াচ্ছে।

-ঠিক আছে, আমরা চললাম। টিনার রিপোর্টটা পেলেই আমরা মুভ করব।

-চোপরাও। ইংরিজি মারাচ্চে। আমিও দেখে নেব। খালি ইংরিজি বলচে। দোবেড়ের চ্যাং দেকেচো? দোবেড়ের চ্যাং দেকবি?

-ওসব করছেন করুন। তবে আমরা জানবেন, শুধু আপনাকে কেন, আপনার মতো একটা জোচ্চোরকেও ছাড়বনা। সব তান্ত্রিক বাবাজীর বারোটা বাজাব আমরা। ছাড়ব না।

-ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমরাও দেখে নেব।

আমরা বলতে কাদের বুঝিয়েছিল হারবার্ট সেটা স্পষ্ট নয়। ওরা যখন বেরিয়ে চলে যাচ্ছিল তখন হারবার্ট নৈচে নেচে বলছিল-হায়, হায়, আমি কী দিনু। ক্যাট, ব্যাট, ওয়াটার, ডগ, ফিশ। ক্যাট, ব্যাট, ওয়াটার ডগ, ফিশ।

নাচতে নাচতে মাথা ঘুরে যায় হারবার্টের। খাটের গায়ে ধাক্কা খায়। মেঝেতে পড়ে যায় হারবার্ট। আবার ওঠে। যত ভয় করে তত দাপাতে থাকে। ঘামছে দরদর করে। হঠাৎ থেমে গিয়ে বিনুর খাট, তোষক, বালিশ দেখে। বিনুকে গুলি করে মেরেছিল পুলিশ। পুলিশ কি তাকেও মারবে। আর টিনা। এইরকম ধৰ্মঘাতক মেয়ে হয় কে জানত? কী পাপিষ্ঠ নারী! এই, এই ছিল তোর মনে।

-ক্যাট, ব্যাট, ওয়াটার, ডগ, ফিশ, ক্যাট, ব্যাট, ওয়াটার, ডগ, ফিশ, ক্যাট, ব্যাট…

রাস্তায় বেরিয়ে প্রণব ঘোষকে মাঝখানে রেখে ওরা হাঁটছিল। মিকি বলল লোকটা কিন্তু ভীষণ ক্রুড প্রণবদা।

-তাতে কী? এ দেশে যতই ক্রুড হোক না কেন ক্লায়েন্টের অভাব নেই।

একটি ছেলে বলল–বারুইপুরের লেভিটেশন-এর সেই কেসটা। কি যেন নাম ছিল লোকটার?

-মোসলেউদ্দিন?

-হ্যাঁ, হ্যাঁ, মোসলেউদ্দিন। ও লোকটা কিন্তু ট্রিমেণ্ডাস চালাক ছিল।

-তা যদি বলল তাহলে রিয়্যালি ক্লেভার প্যাক ছিল ঐগুলো।

-কোনটা প্রণবদা! সেই তারাপীঠ?

-না না, ঐ যে, সাতটা অ্যাস্ট্রোলজার, টিভিতে হল না।

-তবে প্রণবদা, ওরা হচ্ছে টোটালি আরবান। চালু তো হবেই।

-কেন, হারবার্ট আরবান নয়?

ওরা চুপ করে থাকে। প্রণব ঘোষও কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে এক একসময় আই ওয়াণ্ডার যে কেন এগুলো লোকে করে। তোমরা যদি মনে কর প্রত্যেকেই ছক করে এগোয়, লাইক ক্যাসানোভা, ভুল করবে।

মিকি অবাক হয়।

-কোন্ ক্যাসানোভা প্রণবদা?

-যে ক্যাসানোভাকে তুমি চেন, দা গ্রেট লেডি কিলার। সে না হয়, খুব চালাক ছিল। মেয়েদের ইমপ্রেস করার জন্যে অকাটিস্ট বলে নিজেকে চালাত। কিন্তু ক্যাগলিওস্ত্রো কেন করত? রাসপুটিনকে এক্সপ্লেন করা তো সোজা। লোকটা গেটে কেও ইমপ্রেস করেছিল। গ্রেট রাসক্যাল। অথবা দা কাউন্ট অফ সাঁ-জরমে। ফ্যাসিনেটিং। ইন কমপ্যারিজন এই এক্ষুনি যাকে দেখলে তাকে কী বলা যায় বল তো? গোপাল ভাঁড়!

যারা চিঠি দিয়েছিল তারা, তারপর খবরের কাগজের লোক, কলেজের ছেলেমেয়ে–ওরা চলে যাবার পরে কোটন, বড়কা, কোকা, জ্ঞানবান, বুদ্ধিমান, সোমনাথ, অভয়, খোঁড়ারবির ভাই ঝাপি, গোবিন্দ-সব ছেলেরা ঢুকে দেখল হারবার্ট থরথর করে কাঁপছে। হাঁসফাস করছে, ঘামছে।

জামা খুলে ফেলেছে। টেবিলফ্যানটা এমাথা ওমাথা করছিল আর হারবার্ট তার সঙ্গে সরে সরে যাওয়ার সামনে থাকার চেষ্টা করছিল। ওরা ফ্যানটাকে একমুখো করল। হারবার্টের খাটে তাকে বসিয়ে জল খাওয়াল। চা আনল স্পেশাল। আস্তে আস্তে ধাতস্ত হল হারবার্ট। চোখ থেকে ভয় যায়নি। বারবার বলছিল-সব গুগলি হয়ে গেল! সব গুগলি হয়ে গেল! ওফ্‌ ….ধুকপুক করচে, ধুকপুক ধুকপুক করচে। এ কী বন্দোবস্ত রে বাবা!

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন