দাম্পত্য স্মৃতি – লক্ষ্মীদেবী চক্রবর্তী

ইমদাদুল হক মিলন

দাম্পত্য স্মৃতি – লক্ষ্মীদেবী চক্রবর্তী

হাতের নোয়াটা কাপড় দিয়ে বারবার ঘষছিল মাধুরী, খুব করুণভাবে তাকিয়েছিল নোয়াটির দিকে। “আর এইটুকু স্মৃতি না রাখলে কী আসে, যায়। যার জন্য পরা, সে তো মন থেকে বিস্মৃতি।“ মা বলে, “মানুষতো বেঁচে আছে, তুই দাম্পত্য স্মৃতি মুছে ফেলবি কেন? “লাভ কী মা।” মাধুরীর গলায় বেদনাজড়িত সুর। “লাভ আছে। তোর তো একটি পুত্র সন্তান আছে। তার পিতৃ পরিচয়ের জন্য তোর এই স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে হবে।” “সন্তানের দায়িত্ব কী সে পালন করছে। পিতামাতার উভয়ের দায়িত্ব, কর্তব্য সন্তানকে প্রতিপালন করা। তাকে বাঁচিয়ে রাখা, মানুষ করে তোলা। পিতামাতা উভয়েই ছোট্ট শিশুটিকে পৃথিবীতে এনেছে। পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছে।”

মাধুরীর কতই বা বয়স জোর ত্রিশ। বছর তিনেক আগে স্বামীর ঘর থেকে শেষ বারের মতো চলে আসা। বিয়ের সানাইয়ের রাগিণী যে সুরে বাজলো। জীবনের রাগিণী সেই সুরে বাজলো না। কিসের অভাব ছিল মাধুরীর দেহে মনে। মাধুরী নামের সঙ্গে মাধুর্যের বিন্দুমাত্র ঘাটতি ছিল না। শিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বিত্তবান ঘরের মেয়ে। স্বামী রণধীর ও বিত্তবান ঘরের ছেলে।

বিয়ের যৌতুকপত্রে সবেমাত্র মাধুরী ঘর-সংসার সাজিয়েছিল। হাসি ঠাট্টায়, গল্প গুজবে, মাতিয়ে রাখতো রণধীর। আভিজাত্যের গরিমায় রণধীরের ভেতরে চেহারাটা তখন বোঝা যায়নি। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলো স্বামী রণধীর অপ্রকৃতিস্থ। অর্থাৎ পর নারীত্বে আসক্ত। যা, অভিজাত বংশের অলংকার অথবা গর্ব। “তবে, বিয়ে করেছিলে। কেন? এত রাতেই যদি বাড়ি ফিরবে। আমি তো স্বেচ্ছায় তোমাদের বাড়ি আসিনি। রীতিমতো কনে দেখে, পুত্রকে বিয়ে দিয়ে বধূমাতাকে বরণ করে গৃহে অধিকার দিয়েছে। আমি সেই অধিকারের থেকে বঞ্চিত হবে কেন?

“তুমি যখন খুশি অফিস থেকে বাড়ি ফিরবে। আর আমি সেই খুশিটা মেনে নেবো। তুমি ভাবলে কেমন করে? রুখে দাঁড়াল পিতামাতার আদরের একমাত্র কন্যা। মাধুরী।” “তুমি কী করতে চাও।” রণধীরের মুখে অনুচ্চারিত অস্ফুট, বেহাল, কথাবার্তা। “যা, করলে সংসারে শান্তি ফিরে আসে তাই করবে।” “কি অশান্তিতে তুমি এই সংসারে আছো।” “যে, মানুষটিকে নিয়ে আমার সংসার তাকে না পেলে তো অশাস্তি হবেই।” “অহ। বুঝেছি, সেই মানুষটি আমি।” জিভে জড়ানো কথা।

‘তুমি যে, পরনারীর প্রতি আসক্ত, মদ খাও সেই কথাগুলো বিয়ের আগে জানাওনি কেন?” “যদি জানতে তবে কী করতে। পুরুষরা পরনারীর প্রতি আসক্ত হবে না। মদ ছোঁবে না। তবে, এইগুলোর প্রতি আসক্ত কী তোমাদের মতো মাধুরীরা হবে আমার সঙ্গে থাকতে গেলে। এইভাবেই থাকতে হবে। আমি সুন্দরী বউর আঁচল ধরে থাকতে পারবো না। এবং সময়মতো বাড়িও ফিরতে পারবে না। অধিকরাতে বাড়ি ফেরা আমার বহুদিনের অভ্যাস। এই নিয়ে আমার বাড়িতে আমাকে কেউ কোনোদিন উপদেশ দিতে আসে না।

একবার মা আমাকে বলেছিল, “রণ’ এতরাতে বাড়ি ফিরিস এইটা কিন্তু ভালো। সংসারধর্ম করতে গেলে, বউতো এবং ব্যাপারটা মেনে নেবে না। স্বভাবটা একটু পরিবর্তন কর।” মাকে বলেছিলাম, “আমি তোমার দুগ্ধপোষ্য শিশু না। বালক থেকে, কিশোরে। কিশোর থেকে, যুবকে। যুবক থেকে পুরুষে। তুমি তোমার ভাবি বউমার চিন্তায়, আমাকে কখনো কোন উপদেশ দিতে আসবে না।” স্নেহলতা জলভরা চোখ নিয়ে ফিরে গেল। মায়ের কাছে ছেলে নাকি পুরুষ। তবুও মায়ের মন, ছেলেকে ঘর

সংসার করাতে হবে।

সব শুনে মাধুরী: ”তোমার অশালীন আচরণ আমি কিছুতেই মেনে নেব না। কেন তুমি আমার এত বড় সর্বনাশ করলে। যদি তুমি মেনে নিতে না পারো, তবে, যেখান থেকে এসেছে, সেখানে চলে যাও।” “কি, বললে,” মাধুরী শিকারহারা বাঘিনীর মতো রণধীরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমাকে চলে যেতে বললে, “আমার গর্ভের আগত সন্তান। তার পিতৃ-পরিচয় কী হবে।” রণধীর অনেক কষ্টে মাধুরীর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে, বাইয়ের নেশার ডাকে চলে গেল। মাধুরী কতক্ষণ এইভাবে পড়েছিল সে জানে না। তার, মনে হলো, কোথাও ভূমিকম্প হয়েছে, জীবন, সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংস হয়নি শুধু যার, যা নেশা। “আবার নতুন করে সব সাজাতে হবে।”

সকল অধ্যায়

১. মণিবালার প্রথম ও পঞ্চম বাবু – শঙ্করলাল ভট্টাচার্য
২. জনৈক কাপুরুষের কাহিনী – প্রেমেন্দ্র মিত্র
৩. নুরবানু – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
৪. আমি একটা মানুষ নই – আশাপূর্ণা দেবী
৫. ঠগের ঘর – সুবোধ ঘোষ
৬. হরপার্বতী সংবাদ – প্রবোধকুমার সান্যাল
৭. চীনেমাটি – সন্তোষকুমার ঘোষ
৮. বালির ঝড় – সমরেশ বসু
৯. আত্মজা – বিমল কর
১০. সন্ধ্যেবেলা রক্তপাত – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১১. কীট – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১২. আর একবার – প্রফুল্ল রায়
১৩. রাগ অনুরাগ – শক্তিপদ রাজগুরু
১৪. পূর্বক্ষণ – ননী ভৌমিক
১৫. রাজার টুপি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
১৬. ফাঁদ – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
১৭. জারিনার প্রেম – তারাপদ রায়
১৮. বলিছে সোনার ঘড়ি – বরেন গঙ্গোপাধ্যায়
১৯. আঁধার ঘর – সঙ্কর্ষণ রায়
২০. টেককা টেককি – কণা বসুমিত্র
২১. মিসেস মেলনির গল্প – সুকুমার ভট্টাচার্য
২২. অঙ্কুর – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
২৩. ছায়া গোধূলি – উত্তম ঘোষ
২৪. রোদ বৃষ্টি কুয়াশা – বামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
২৫. দাম্পত্য – অনিশা দত্ত
২৬. বাতাসের রং নেই – কল্যাণ মৈত্র
২৭. বালির ঘর – দিলীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
২৮. শ্বশুরবাড়ি নয়— ক্লাব হাউস – বৈদ্যনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
২৯. হেনস্থা – তপনকুমার দাস
৩০. লজ্জা – রবিন দে
৩১. দাম্পত্য কলহ ও নেকলেস – শ্রীজয়দেব রায়
৩২. দাম্পত্য স্মৃতি – লক্ষ্মীদেবী চক্রবর্তী
৩৩. সংঘাত প্রশান্ত – বর্মন রায়
৩৪. শেষের সে বিচার – ডাঃ অরুণকুমার দত্ত
৩৫. আলট্রা মডার্ণ – অসীমানন্দ মহারাজ
৩৬. তুমি আমি দুজনেই – আবদুল জব্বার
৩৭. লোকটা – আশিস সান্যাল
৩৮. ক্ষত ও নিরাময় – তৃণাঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়
৩৯. নতুন বইয়ের গন্ধ – শুভমানস ঘোষ
৪০. ভুবন চৌধুরী – অলোককৃষ্ণ চক্রবর্তী
৪১. পদ্মাকাঁটা – গৌর মিত্র
৪২. মালাবৌদি – ডাঃ মহাদেব বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৩. ধূসর কণ্ঠস্বর – শান্তিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
৪৪. দাম্পত্য কলহকথা – স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৫. বাদশা-বেগম ঝমঝমাঝম – সৌমিত্ৰশংকর দাশগুপ্ত
৪৬. দাম্পত্য – সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৭. বন্ধ্যা – তমাল লাহা
৪৮. অণুবীক্ষণ – কুণালকিশোর ঘোষ
৪৯. শিউলি বনে গন্ধরাজ – গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
৫০. বাঁশফুল – শিবতোষ ঘোষ
৫১. ছোটলোক – শচীন দাশ
৫২. পঞ্চম রিপু – শৈলেন রায়
৫৩. শুধু সমুদ্রের চিত্রনাট্য – অরূপরতন ঘোষ
৫৪. আশ্রয় – নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
৫৫. কুমারী মাটি – পুলককুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৬. দাম্পত্য কলহের অন্তরালে – বরুণ মজুমদার
৫৭. জলপরী, সুবিমল ও একটি ধর্ষণের গল্প – জগন্নাথ প্রামাণিক
৫৮. পরকীয়া – প্রণব সেন
৫৯. সম্পর্ক – চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
৬০. কালার টি.ভি. – সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৬১. বন্ধন – ভাগ্যধর হাজারী
৬২. পরকীয়া প্রেম – উজ্জ্বল কুমার দাস
৬৩. অনিকেত – সঞ্জয় ব্রহ্ম
৬৪. ভূমিকা – পঞ্চানন মালাকর
৬৫. বিষাক্ত মদ – পরেশ সরকার
৬৬. দূরের গাড়ি – অগ্নি বসু
৬৭. ধারাবাহিক – মৃণাল বসুচৌধুরী
৬৮. বুমেরাং – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৯. বকম বকম – প্রদীপ আচার্য
৭০. কুয়োতলার কাব্য – অশোককুমার কুণ্ডু
৭১. ধরিত্রী – জীবন সরকার
৭২. পৃথিবী শস্যশালিনী – শৈবাল মিত্র
৭৩. রবিবার ছুটির দিন – আফসার আমেদ (আফসার আহমেদ)
৭৪. চিতা – চণ্ডী মণ্ডল
৭৫. মেঘাবৃত চাঁদ – আবু রুশদ
৭৬. প্রতিষেধক – আবু ইসহাক
৭৭. ফাঁদ – আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
৭৮. পরী – আলাউদ্দিন আল আজাদ
৭৯. প্রেমের গপ্পো – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
৮০. পানকৌড়ির রক্ত – আল মাহমুদ
৮১. অস্থির অশ্বক্ষুর – আবদুল মান্নান সৈয়দ
৮২. ফুলের বাগানে সাপ – ইমদাদুল হক মিলন
৮৩. আজীবন দিন-রাত্রি – জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত
৮৪. পথ, হে পথ – নাসরীন জাহান
৮৫. ধূসর – বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
৮৬. বেলী – বুলবুল চৌধুরী
৮৭. অস্পষ্ট মুখ – মঈনুল আহসান সাবের
৮৮. যৌথ একাকিত্ব – মঞ্জু সরকার
৮৯. লা পেরুজের সূর্যাস্ত – রাবেয়া খাতুন
৯০. হে আনন্দ – রাহাত খান
৯১. খাঁচার ভিতর সুচিন পাখি কমনে বাঁইচে রয় – শওকত আলী
৯২. অষুধ – শহীদ আখন্দ
৯৩. মানব-মানবী – শিহাব সরকার
৯৪. মতিনউদ্দিনের প্রেম – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
৯৫. গন্তব্য, অশোক – সৈয়দ শামসুল হক
৯৬. প্রহসনের মতো – সাইয়িদ আতীকুল্লাহ
৯৭. দুর্নীতি – সেলিনা হোসেন
৯৮. জননী – হাসান আজিজুল হক
৯৯. নিশিকাব্য – হুমায়ূন আহমেদ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন