ভুবন চৌধুরী – অলোককৃষ্ণ চক্রবর্তী

ইমদাদুল হক মিলন

ভুবন চৌধুরী – অলোককৃষ্ণ চক্রবর্তী

সেদিন থেকে ভুবন চৌধুরীর নিজের ভুবনটা চিরদিনের মতন অন্ধকারে ডুবে গেল। তারপর সত্যি সেই সদানন্দ মানুষটির মুখে আর কোনদিন কেউ হাসি দেখতে পায়নি। দেখতে পায়নি তাকে আনন্দে-খুশিতে ভরা তার সেই সাধের অফিসেও। এমন কি দেখা যেত না কোন অনুষ্ঠানে পর্যন্ত। ব্যাপারটা সত্যি অদ্ভুত।

ম্যারেজ-রেজিস্ট্রার ভুবন চৌধুরীর খুবই নামডাক। জনপ্রিয়তাও কম নয়। সবার মুখেই তার দরাজ ও দরদি মনের প্রশংসা।

নিয়মিত স্নান সেরে বেলা দশটায় একতলার ড্রইংরুমে এসে বসেন ভুবনবাবু। থাকেন রাত আটটা পর্যন্ত। মাঝে দুঘন্টার বিরতি। বেলা একটা থেকে দুটো লাঞ্চ। আর সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে ছটা সান্ধ্যভ্রমণ। ভ্রমণের সময় অবশ্য স্ত্রী বিজয়া থাকেন সঙ্গে। বাঁধা রুটিন। কোন পরিবর্তন নেই। এমন কি ছুটিছাটার দিনেও এই রুটিন বাঁধা নিয়মে চলেন ভুবনবাবু। বিয়ের বছর পাঁচেক পর থেকে এই নিয়ম চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

নিজের বাড়ির ড্রইংরুমটাই ভুবনবাবুর অফিস। অর্থাৎ ম্যারেজ রেজেস্ট্রি অফিস। বেশ বড় ঘর। ঝকঝকে, তকতকে। সুন্দর আসবাবপত্রে সাজানো। কার্পেট, পর্দা, টেলিফোন, টাইপ মেসিন—সবই আছে। সবই রুচিসম্মত। এককথায় ঘরটি শোভন এবং শৌখিন, দুই-ই। বাড়িটিও দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত অঞ্চলে।

ঘরের পুব দিকের জানলার ধারে বসেন ভুবনবাবু নিজে। অফিসকর্মীরা বসে পশ্চিম দিকে। অফিসকর্মীরা মানে একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে। উত্তর দিকের দরজার পাশে পরপর তিনটে আলমারিতে সারি সারি বই। কিছু আইনের বই। বাকি সব গল্প-উপন্যাসধর্মগ্রন্থ। দক্ষিণ দিকে চারটে জানলা আর একটা দরজা। ঐ দিকটা পুরো খালি ও খোলা। সামনে শুধু বারান্দা।

ভুবনবাবুর কাছে অফিস-ঘরের আকর্ষণই আলাদা। এটাই তার নিজস্ব জগৎ। হাসিখুশিতে টইটম্বুর হয়ে থাকেন তিনি এখানে। এই জগতের মধ্যেই ডুবে আছেন গত পচিশ বছর ধরে। আহারে-বিহারে, শয়নে-স্বপনে প্রতিক্ষণই এই জগতের কথা তার মনে। কত বিচিত্র মানুষের আনাগোনা এখানে। এই সব মানুষ নিয়েই ভুবনবাবুর কারবার।

এদের মধ্যে কেউ আসে চুপিসাড়ে দুরুদুরু বক্ষে অভিভাবকের চোখে ধুলো দেয়—আবার কেউ আসে রীতিমত ঘটা করে। এরা সবাই আসে ঘর বাঁধতে। অনেকে আবার আসে বিয়ের পরও। কেউ আসে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করতে। কেউ কেউ আবার দ্বািদ-বিরোধ মেটাবার জন্য।

বাদ-বিসংবাদ মেটানো ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাজ না হলেও ভুনববাবু কিন্তু সেটা খুশি মনে করেন স্বেচ্ছায়, বিনা পয়সায়। তাঁর মতে এর চেয়ে মহৎ কাজ এ দুনিয়ায় আর কি হতে পারে। বিচ্ছেদের মুখে দুটি জীবনকে মিলে সহায়তা করা, একটা সুন্দর সংসারকে ভাঙ্গার মুখে রক্ষা ভুবনবাবুর কাছে বড় পুণ্যের কাজ। বিয়েতে দুটি জীবনকে এক ছন্দে গেঁথে দিয়ে তিনি যে আনন্দ পান, তার চেয়ে ঢের বেশি তৃপ্তি পান ছন্দ হারানো জীবনকে আবার নতুন ছন্দে সাজিয়ে দিতে। তাই ম্যারেজ রেজিস্ট্রার ভুবন চৌধুরী মক্কেলদের কাছে যেমন প্রিয় তেমনি তাদের আপনজন।

বিয়ের সময় ভুবনবাবুর আন্তরিকতার স্পর্শে মুগ্ধ হয় নব দম্পতি থেকে উপস্থিত সবাই। ঠিক যেন একজন অভিভাবক—নব দম্পতির এবং উপস্থিত সকলের। নানা উপদেশ দেন তিনি সবাইকে। মন্ত্রমুগ্ধের মত শোনে সবাই। বিশেষ করে নব দম্পতির মনে গেঁথে থাকে তার উপদেশবাণী। সুখে-দুঃখে, সম্পদে-বিপদে তিনি যে তাদের পাশে আছেন—এ কথাটা বুঝতে কারো অসুবিধে হয় না। তাই তো তারা কোন সমস্যায় পড়লেই চট করে ছুটে আসে ভুবনবাবুর কাছে।

প্রায় সব সময়ই ভুবনবাবু মক্কেলদের নিয়ে আমেজে আবেগে আনন্দে ভরপুর হয়ে থাকেন। সকলের আনন্দে-হাসিতে অফিস ঘরখানাও যেন হেসে থাকে সারাক্ষণ।

এই নিজস্ব জগৎটা নিয়ে দিব্যি ছিলেন ভুবনবাবু। সংসারের কোন সাতে-পাঁচে থাকলে না। সেদিকের সব দায়িত্ব স্ত্রী বিজয়ার ওপর। কিন্তু হঠাৎ সেদিন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত অপ্রত্যাশিত ঘটনায় সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল। সে এক করুণ কাহিনী। সেকথা এখানে নয়, যথাস্থানে। এখন ভুবন চৌধুরীর সংসারের দিকে আসা যাক।

ভারি চমৎকার একটি সংসার। বছর খানেক হল মেয়ে রত্নার বিয়ে হয়েছে। ঘর বর দুই-ই ভাল। সত্যি গর্ব করার মত জামাই। বড় বংশের স্বাস্থ্যবান শিক্ষিত সুদর্শন ছেলে। রূপে-গুণে তার জুড়ি মেলা ভার। বিদেশের ডিগ্রিপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। বড় পোস্ট, মোটা মাইনে। মেয়েও অবশ্য কম যায়না। ফিলজফিতে এম.এ.। স্পষ্টভাষিণী, আদর্শবাদী। প্রফেসারি করছে কলকাতার একটা নামকরা কলেজে। আর তার রূপ। তিলোত্তমাও বুঝি হার মেনে যায়। ছেলে পার্থ এখনো পড়াশোনা করছে। পড়ছে প্রেসিডেন্সি কলেজে। যেমন মেধাবী তেমনি ভদ্র। আজকালকার ছেলেদের মত নয়। আর স্ত্রী বিজয়া! ঘরে লক্ষ্মী বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও দারুণ। কিন্তু হঠাৎই সেদিন অম্লমধুর বাক্য বিনিময় হয়ে গেল দুজনের মধ্যে। অতীতের যে কথা কাটাকাটি হয়নি তা নয়, কিন্তু সেটা ঠিক এই পর্যায়ে পৌঁছায়নি কখননা। সত্যি, সংসারে কখন যে কি থেকে কি হয় বলা মুশকিল।

সেদিন রাতে শোবার সময় স্ত্রীকে কাছে ডাকলেন ভুবনবাবু–রোজ যেমন ডাকেন।

বিজয়া বিরক্ত হলেন।–এভাবে আর কতকাল চলবে, বলতে পার?

স্ত্রীর এই অপ্রত্যাশিত আচরণে ভুবনবাবু অবাক। সবাক যখন হলেন তখন তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল বিস্মিত জিজ্ঞাসা—কেন, কি হল আবার?

—চমৎকার! তোমার ভাবখানা এমন যেন কিছুই জান না।

–সত্যিই তো কিছুই জানি না। খুলে বলো না ব্যাপারটা।

–কতবার আর বলব? তুমি কি আমার কথা কানে তোল?

–আর একবার বলেই দ্যাখো না। ভুবনবাবুর মুখে মৃদু হাসির রেখা।

—আহা, মুখে হাসি আর ধরে না! ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজয়া।

–এই সময় হাসব না তো কি কাঁদব? বলেই বিজয়ার হত ধনের ভুবনবাবু।

—ঢং। এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নেন বিজয়া।

-তুমি হঠাৎ এইভাবে ক্ষেপে উঠলে কেন? আর ব্যাপার কি তাও তো খুলে বলছ না।

—পুরুতের কাজ বিয়ে দেওয়া, জ্ঞান বিতরণ করা।

-ওঃ, এই কথা! হেসে উঠলেন ভুবনবাবু, এর জন্যে এত গোঁসা! আচ্ছা, তুমি এটা বোঝ না কেন যে পরোপকারের চেয়ে মহৎ কাজ এ দুনিয়ায় আর কিছু নেই।

–আগে নিজের উপকার কর। তারপর পরের উপকার করবে।

—তার মানে?

—মানে আবার কি! হাজার বার বলেছি সংসারের দিকে একটু নজর দাও। তুমি কি সে কথা কানে তোল? বেদনা ও অভিমানের ব্লেন্ড করা আওয়াজ ঝরে পড়ে বিজয়ার কণ্ঠ থেকে।

-না তুললে সংসারটা কি হাওয়ায় চলছে?

—শুধু টাকা-পয়সা দিলেই কি সংসারের সব দায়িত্ব পালন করা হয়ে যায়? বিজয়ার স্বরে উত্তেজনা।

—ঐ বস্তুটির মূল্যই তো সংসারে সবচেয়ে বেশি। আর চাওয়ার আগেই তা তুমি পেয়ে যাও। এবার ভুবনবাবুর কথায় বিরক্তির আভাস।

–ব্যস, তাতেই সব হয়ে গেল? আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, ছেলেমেয়ে এরা কেউ নয়?

–কি অদ্ভুত কথা বলছো তুমি! আমি কি বলেছি এরা কেউ নয়?

—তুমি কি এদের সাথে ঠিকমত যোগাযোগ রাখো? কতটুকু সময় ব্যয় করো এদের জন্যে? ছেলেমেয়েকে নিয়ে কি কোনদিনও বসেছো? আজ পর্যন্ত একদিনও কি গিয়েছে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি?

—তুমি তো জান বিজয়া, আমার সময়ের কত অভাব।

—সময়ের অভাব। আগেই তো বলেছি পুরুত্রে কাজ বিয়ে দেওয়া, জ্ঞান দেওয়া নয়। সময়ের এত অভাব হলে সেদিন ঐ ছোঁড়াছুঁড়ি ঢলে পড়তে তুমিও গলে গিয়ে ছুটলে কেন তাদের বাড়ি ফিরলে তো তিনঘন্টা পরে। রীতিমত চিৎকার করে উঠলেন বিজয়া।

—কি বকছো যা-তা! ওরা তো তোমাকেও নেমন্তন্ন করেছিল। তুমি যাওনি বলে কি মাঝরাতে চিৎকার করে সিন্ ক্রিয়েট করবে? ভুবনবাবুর স্বরও বেশ ক্ষুব্ধ শোনাল।

–আমার আর খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই, কোথাকার কে নেমন্তন্ন করল আর অমনি ল্যাং ল্যাং করে ছুটি।

—কোথাকার কে নয়, ওরা শিক্ষিত এবং ভদ্র। আমারই মক্কেল। আমার কাছেই ওদের বিয়ে হয়েছিল। সাধারণ স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া নয়, লড়াইটা নীতি ও আদর্শের। আর তাই নিয়েই মতভেদ। ব্যাপারটা মারাত্মক হয়ে দাঁড়াতে পারত। সময়মত ওরা এসে পড়েছিল বলেই রক্ষে। আর আমার হস্তক্ষেপেই ব্যাপারটা মিটমাট হয়ে গেল। আমার প্রতি ওদের অগাধ ভক্তি আর বিশ্বাস ছিল বলেই এটা সম্ভব হল। ওরা দুজনেই দারুণ খুশি। তাই কি করে এই খুশির নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করি?

—ওদের বেলায় প্রত্যাখ্যান করা যায় না, কিন্তু নিজের মেয়ের বেলায় তো প্রত্যাখ্যান করতে পার। কতবার রত্না তোমাকে যেতে বলেছে, তুমি কি একবছরের মধ্যে একদিনও গিয়েছে তার ওখানে?, এতে শ্বশুরবাড়িতে ওর অসুবিধের কথা একবারও ভেবে দেখেছো?

—ঠিকই বলেছো। যাওয়া উচিত ছিল।

—উচিত ছিল বললেই কি সব মিটে গেল? জামাইও তো সেদিন দুঃখ করে কত কথা বলে গেল।

—ওঃ, এইজন্যেই বুঝি তোমার মাথা গরম।

-তোমার কোন কাজে আজ পর্যন্ত আমি বাধা দিইনি। জানি তুমি বাজে কাজ করো না এবং করবেও না। সে বিশ্বাস আমার আছে। আমার কথা বাদ দাও। ছেলেমেয়ের দিকটা তো তোমার দেখা উচিত। রত্নার জেদ আর অভিমানের কথা তোমার অজানা নয়। ভয় হয়, কিছু একটা করে না বসে! ধরা গলায় কথাগুলো বললেন বিজয়া।

-কেন?

—মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়ি পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে এসে গেলেন। তবু তুমি একবারের জন্যেও তাদের ওখানে গেলে না। অথচ বার বার তারা তোমাকে অনুরোধ করে গেছেন। তারা কি এরপর রত্নাকে কথা শোনাবেন না?

–সময়ের অভাবে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। সত্যি যাওয়া দরকার। এবার একদিন নিশ্চয় যাব।

–সময়ের অভাব, সময়ের অভাব। ঐ একই বস্তাপচা কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেল।

কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়। তাই ভুবনবাবু আর কথা বাড়ালেন না। চুপ করে রইলেন।

বিজয়াই আবার বললেন-সংসারে ছেলেমেয়েও বাবাকে কাছে পেতে চায়। তাদের সাথেও বসা দরকার। যা দিনকাল! বিপথে যেতে কতক্ষণ। বাপের উপদেশ সন্তানের কাছে খুবই মূল্যবান।

মনে মনে ভাবলেন ভুবনবাবু বিজয়ার কথা যোলআনাই ঠিক। তাই স্ত্রীর মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন তিনি। কোন কথাই আর সরলো না তার মুখ থেকে। সব কথা, সব ভাষা বুঝি হারিয়ে গেল মৌন রাতের অন্ধকারে।

সেদিন অফিসে বসে স্ত্রীর এই কথাগুলো ভাবছিলেন ভুবনবাবু। সত্যিই তো একবছরের মধ্যে একটি দিনের জন্যেও তিনি মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যাননি। পরের কথার সঙ্গে ঘরের কথাও তার ভাবা উচিত ছিল। তা কিন্তু তিনি ভাবেননি। এমন কি আত্মীয়-স্বজন এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবের অনেক অনুষ্ঠানেও যোগদান করতে পারেননি তিনি ঠিকমত। এ নিয়ে বহ্বার বিজয়ার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। ‘পরোপকার’ এই মহান শব্দটি উচ্চারণ করে তিনি খণ্ডন করেছেন বিজয়ার যুক্তি। পরোপকার সত্যি মহৎ কাজ। কিন্তু সংসার-জীবনে পরের সাথে ঘরের দিকেও নজর দিতে হয়। কথায় আছে ‘লিভ অ্যান্ড লেট লিভ’। অর্থাৎ পরকে বাঁচাতে গেলে আগে নিজেকে বাঁচতে হবে।

এইসব কত কথাই না ভেসে উঠছে ভুবনবাবুর মনের পর্দায়। তাই কাজে আর তেমন মন বসছে না। দিনটাও ভারি বিশ্রি। সকাল থেকেই আকাশের বুকে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ। মাসটা আশ্বিন হলেও দিনটার মতিগতি বর্ষার দুরন্ত ঢলের দিকে। তাই আবছা অন্ধকার গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে আছে গোটা কলকাতা। কোথায় দেখা যাবে এখন শরতের ঝকঝকে রোদের চকচকে হাসি, তা না আবছা আলোর ঝাঁপসা একটা দিন যেন গুমরামুখো হয়ে আছে সেই সকাল থেকে। যে কোন মুহূর্তে আকাশের চৌবাচ্চাটা ফুটো হয়ে হড়হড় করে জল পড়তে পারে। তাছাড়া অফিসও ফাঁকা। না আছে মক্কেল, না আছে ফোনের চিৎকার।

ভুবনবাবুর ভাল লাগছে না। একেবারে না। এত বছরের মধ্যে এমনি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়নি তাকে কোনদিনও। তাই মনে মনে ঠিক করেন লাঞ্চের পর আর অফিসে আসবেন না। বিকেলের দিকে স্ত্রীকে নিয়ে সোজা চলে যাবেন মেয়ের বাড়ি। ওখানে মেয়েকে সারপ্রাইজ দেবেন। সারপ্রাইজ আর দিতে পারেননি ভুনববাবু। তার আগেই রত্না চলে এসেছিল তার কাছে। যাক সে কথা। রত্নার কথা রত্না আসার পরে হবে। এখনকার কথা এখন হোক।

আলমারিতে সাজানো বইগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করছিলেন ভুবনবাবু। বেলা একটা বাজলেই উঠে পড়বেন এমন সময় আলমারি থেকে একটি বই টেনে বের করলেন। নাম কর্তব্য। বইটির পাতা ওল্টাচ্ছেন আর কি যেন ভাবছে। হঠাৎ সেই সময় অফিসে উপস্থিত হল এক নব দম্পতি। কিছুদিন আগে ওদের বিয়ে হয়েছে। বিয়েটা হয়েছিল ভুবনবাবুর কাছেই।

ওরা দুজনে এসে দাঁড়াল ভুবনবাবুর সামনে। দুজনেরই মুখ ভার।

—কি খবর? দুজন এত গম্ভীর কেন?

—আপনার সাথে কিছু কথা আছে মেলোমশাই। ছেলেটি বলল।

হাতের বইটা টেবিলে রেখে ওদের বসতে বললেন ভুবনবাবু। ক্ষণিকের নীরবতা। নীরবতা ভাঙ্গে ভুবনবাবুর কথায়।

—আজ আমি একটু ব্যস্ত আছি। আমার অন্য একটা জরুরি কাজ আছে। তোমরা বরং কাল এসো। আজ আমাকে একবার বেরোতেই হবে।

–প্লিজ মেলোমশাই, প্লিজ। আমাদের জন্যে একটু টাইম দিন। দুজনেই অনুরোধ জানাল একসঙ্গে।

—বেশ। এখন বারোটা বাজে। একটা পর্যন্ত আমি আছি। একঘন্টার মধ্যে হলে ভাল। না হলে কাল আসবে, কেমন? বলল এবার তোমাদের প্রেম-বিরহের কথা। দরদভরা কণ্ঠে বললেন ভুবনবাবু।

–ঝর্ণা ভীষণ অবুঝ। চট করে বলে উঠল ছেলেটি।

—অবুঝ তুমিও কম না হিরণ। ঝর্ণার স্বরেও উত্তেজনা।

—আহা, উত্তেজিত হচ্ছ কেন? আসল কথাটাই তো এখনো বললে না কেউ। উত্তেজনায় কি সমস্যার সমাধান হয়? ঠাণ্ডা মাথায় বল। আমি তো তোমাদের বাবার

—আপনি তো সবই জানেন মেলোমশাই। আমার প্রতি ঝর্ণার মা-বাবার আচরণের কথা, বিয়ের সময় আপনাকে আমরা দুজনেই বলেছি।

—তা তো শুনেছি। কিন্তু এখন কি হল?

—তা নিয়েই তো অশান্তি। ঝর্ণা এখন প্রায়ই বাবা-মার কাছে যায় অথচ আজ পর্যন্ত একদিনও তারা আমাদের বাড়িতে আসেননি। তাই আমি ঝর্ণাকে বলেছি তারা যখন আসেন না তুমিও সেখানে যাবে না। ব্যস, আর যায় কোথায়? সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি। এবার আপনি বলুন মেসোমশাই, আমার দোষটা কোথায়।

–এছাড়া আর কিছু বলোনি? ঝর্ণা আবার উত্তেজিত।

—কি বলেছি, বলো না?

—তুমি আমরা বাবা-মা সম্বন্ধে কোন মন্তব্য করোনি?

–করেছি।

–তবে?

–তবে কি?

—শুনুন মেসোমশাই। ভুবনবাবুর মুখের দিকে তাকাল ঝর্ণা।

—কি বলেছে হিরণ? ভুবনবাবু শুধালেন।

—যা সত্যি তাই বলেছি।

–ঠিক আছে। তবে সত্যি কথাটা তো আমার জানা দরকার।

—সেটাই আপনাকে বলছি। বিয়ের আগে ঝর্ণা নিজেই বলেছিল ওর বাবা-মা যদি আমার যথাযথ মর্যাদা না দেন তাহলে ও আর কোনদিন তাদের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। আমি কি তাঁদের কাছ থেকে সেই মর্যাদা পেয়েছি? ও কি সম্পর্ক ছিন্ন করেছে? আর সে কথা বলতে গেলেই ওর বাবা-মার বিরুদ্ধে…..

—নিশ্চয়ই। হিরণের কথা শেষ হরাবর আগেই আবার ঝর্ণার রণং দেহি মূর্তি।

এদের কথাবার্তা শুনতে শুনতে কেমন যেন আনমনা হয়ে পড়ছিলেন ভুবনবাবু। দৃষ্টি তার দূর দিগন্তের পানে। যেন কোন গম্ভীর চিন্তায় মগ্ন তিনি। কোন কথা নেই তার মুখে। কথা নেই ঝর্ণা-হিরণের মুখেও। সবাই চুপচাপ। সারা ঘরে বিরাজ করছে একটা অখণ্ড নীরবতা। নীরবতা ভেঙ্গে ভুবনবাবুই প্রথমে বললেন ঝর্ণা, তুমি তোমার বাবা-মাকে একটু বোঝাও। হাজার হোক এখন তো হিরণ তাদের জামাই।

–বিশ্বাস করুন মেসোমশাই, আমি বলি।

—তো তোমার কথা যখন তার কানে তোলেন না তখন তুমিই বা সেখানে যাও কেন? এবার বিরক্তি এবং উত্তেজনা দেখা গেল হিরণের কথায়।

–কথায় কথায় তোমরা এতে উত্তেজিত হলে চলবে কি করে! একটু ধৈর্য ধরো। সব ঠিক হয়ে যাবে। সামান্য ব্যাপার নিয়ে এত উত্তেজিত হলে একসাথে। থাকবে কি করে?

—এভাবে একসাথে থাকা আর সম্ভব নয়। দুজনেই সমস্বরে বলে উঠল।

—তাহলে কি বলছো, আলাদা থাকবে? ভুবনবাবু শুধালেন।

–তাছাড়া উপায় কি? বেদনাহত কণ্ঠে বলল হিরণ।

—চমৎকার! সামান্য ব্যাপারটাকে দেখছি অসামান্য করে তুললে তোমরা। ভালবাসার চেয়ে জেদই বড় হল। ধমকের সুরে বলে উঠলেন ভুবনবাবু।

দুজনে নীরব। দুজনের মুখেই বেদনার ছাপ। দুজনেই মাথা নিচু করে বসে আছে ভুবনবাবুর সামনে।

এবার উপদেশের সুরে বললেন ভুবনবাবু—তোমরা দুজনেই শিক্ষিত। ঠিক ঠিক শিক্ষা পেলে, কি না হয় মানুষে। সত্যিকারের শিক্ষাই মানুষের মনে উদারতা আনে। তোমরা সে শিক্ষা পেয়েছো। তোমাদের মধ্যে আমি তা দেখেছি। আজ সামান্য অ্যাডজাস্টমেন্টের অভাবে এরকম হবে কেন? তাছাড়া তোমাদের ভালবাসার কথাও তো আমার অজানা নয়। কি গভীর সেই ভালবাসা মনে করো অতীরে সেই সব দিনগুলোর কথা। মনে পড়ে, একটা দিনও কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারতে না? মনে পড়ে, সেই অভিসারের জন্যে ঝড়-জল মাথায় নিয়ে ছুটে গেছ যত্রতত্র? মনে পড়ে, শুনশান জায়গায় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছো একে অপরের জন্যে? মনে করো, সেইসব দিনের কথা। পুরনো সেই দিনের কথা, প্রাণের কথা কি এত সহজে ভোলা যায়!

কথাগুলো বলে ভুবনবাবু আড়চোখে তাকালেন ঝর্ণা-হিরণের মুখের দিকে। ওষুধে কাজ হয়েছে। দুজনের চোখই জলে ভরে গেছে।

ভুবনবাবু আবার কি যেন বলতে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই দেওয়াল ঘড়িতে শোনা গেল একটা বাজার শব্দ।

—এবার উঠি। কাল তোমাদের সাথে আবার বসবো। ঠিক বেলা এগারোটায় চলে এসো।

—মেলোমশাই, আজ আর একটু সময় দিন। অনুরোধ জানাল হিরণ। সঙ্গে সঙ্গে ঝর্ণাও ঐ একই কথার পুনরাবৃত্তি করল।

-মনে কিছু করো না। আমাকে আজ বেরোতেই হবে। লাঞ্চের পরই আমি মেয়ের বাড়ি যাব। সুতরাং আজ আর আমায় কোন অনুরোধ করো না।

—আপনি খেয়ে আসুন। আমরা অপেক্ষা করছি। খুব তাড়াতাড়ি আপনাকে ছেড়ে দেব। হাতজোড় করে বললে ঝর্ণা। হিরণও সাথে সাথে হাতজোড় করে অনুরোধ জানাল।

ওদের সকরুণ মুখের দিকে তাকিয়ে ভুবনবাবু আর ‘না’ বলতে পারলেন না।

—ঠিক আছে। বসো। তবে আমি কিন্তু আর একঘন্টার বেশি সময় দিতে পারবো না।

চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন ভুবনবাবু। যেতে যেতে বললেন-কফি পাঠিয়ে দিচ্ছি। কফি খেতে খেতে দুজনে গল্প করো। বাট নো একসাইটমেন্ট। আই ওয়ান্ট অ্যাডজাস্টমেন্ট।

লাঞ্চ সেরে অফিসে এসে ঝর্ণা-হিরণকে শুধালেন ভুবনবাবু—কি, দুজনে কথা কাটাকটি হয় নি তো আবার?

–না। দুজনের মুখেই সলজ্জ হাসি।

–ভেরি গুড। এই তো চাই। এই তো হওয়া উচিত। আসলে রাগ আর জেদই মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। এর জন্যেই যত অশান্তি। যতটা সম্ভব এ দুটোকে এড়িয়ে চলবে। আর ভুল-ভ্রান্তি তো মানুষ মাত্রেই হয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে চাই উভয়ের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং। চাই অ্যাজ্জাস্টমেন্ট। ঝর্ণা, তোমার বাবা মাকে…

কথার মাঝখানেই ঘরে ঢুকল রত্না। আলুথালু চুল। চোখে মুখে উত্তেজনার ছাপ।

–কি রে, কখন এলি? মেয়েকে শুধালেন ভুবনবাবু।

—এক্ষুণি।

—ওপরে যাসনি?

-না

—কিছু বলবি?

—হ্যাঁ।

—আজ তো তোর বাড়ি যাব বলে ঠিক করেছি।

আমার কিছু জরুরি কথা আছে বাবা।

—চল। ঝর্ণা-হিরণকে একটু অপেক্ষা করতে বলে রত্নাকে নিয়ে ঘর-সংলগ্ন বারান্দায় এলে

—একি চেহারা হয়েছে তোর? ব্যাপার কি? সব খুলে বল তো মা! সদা শান্ত ভুবনবাবুকে বেশ অশান্ত দেখাল।

—আমি ঐ বাড়ি থেকে চলে এসেছি বাবা। আর কোনদিনও ওখানে যাব না। বাবাকে জড়িয়ে ধরে মেয়ের সে কি কান্না! ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে রত্না। ঠোঁট কামড়ে ধরে।

প্রচণ্ড আঘাত আর ব্যথায় সারাটা বুক মোচড় দিয়ে উঠল ভুবনবাবুর। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না তিনি। জলে ভরে উঠল তার দুচোখ। মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে ধরা গলায় বললেন—এভাবে কাঁদিস না মা! চল, ওপরে চল। লোকে দেখলে কি বলবে!

—লোকের কথায় আর কি হবে বাবা! যা হবার তো হয়েই গেছে। আজ হোক আর কাল হোক, জানাজানি তো হয়েই যাবে।

–চল আমার সাথে। আমি যাবি তোর শ্বশুরবাড়ি।

—এতদিনে যখন যাবার সময় পাওনি, এখন আর গিয়ে কি হবে!

—আমি ওঁদের বুঝিয়ে বলবো। সব ঠিক হয়ে যাবে।

—কোন লাভ নেই। ওখনে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়।

—কি বলছিস তুই!

—ঠিকই বলছি বাবা।

—মাথা ঠাণ্ডা হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। সামান্য জেদের জন্য এমন কাজ করিস না মা।

—আমি ঠাণ্ডা মাথায় বলছি বাবা। ওদের সাথে অ্যাডজাস্ট করা আর সম্ভব নয়। চোখ মুছতে মুছতে বলল রত্না।

—এটাই কি তোর শেষ কথা? অসহায়ের মত মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন ভুবনবাবু।

—হ্যাঁ, এটাই আমার শেষ কথা। কালই আমি ডিভোর্স স্যুট ফাইল করব।

হঠাৎ তখন মেঘের গর্জনের সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকে উঠল আকাশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত।

ভুবনবাবু বুঝলেন রত্নার মত আর পাল্টাবার নয়। মেয়েকে তো তিনি জানেন। তবু আর একবার বললেন–ভাল করে ভেবে দ্যাখ মা।

—সব ভেবে-চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাবা।

ভুবনবাবু আর কথা বললেন না। গুণ-ছেঁড়া ধনুকের মত তিনি যেন প্রাণেমনে ছিঁড়ে গেলেন। মুহূর্তে পাল্টে গেল মুখের চেহারা। কে যেন কালি ঢেলে দিল সারামুখে। উদভ্রান্তের মত মেয়ের দিকে তাকালেন একবার। তারপর অস্ফুটে বললেন—আমার সারাজীবনের সাধনা আজ শেষ হয়ে গেল।

উদ্দাম বাতাসের দাপটের পাশে নিমগাছটা থেকে তখনি ভেঙ্গে পড়ল পাখির বাসা? ঝড় উঠেছে। দুরন্ত ঝড়।

আবার একবার মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন ভুবনবাবু। তাকালেন শরতের মসীবরণ আকাশের দিকে। অসাড় অচৈতন্য তার সর্বাঙ্গ। ঘুরছে মাথাও। গোটা পৃথিবীটাই মনে হচ্ছে যেন শূন্য। কেউ নেই, কিছু নেই। আস্তে আস্তে বারান্দা থেকে ঘরের দিকে পা বাড়ালেন ভুবনবাবু। ঘরে ঢুকে তাকালেন ঝর্ণা-হিরণের দিকে। তাকালেন অফিসের ছেলেমেয়েটির দিকেও। তারপর সকরুণ চোখে তাকালেন নিজের চেয়ার, টেবিল, বইপত্রের দিকে। বাইরে তখন শুরু হয়েছে উন্মত্ত হাওয়ার মাতামাতি। খোলা জানালা-দরজা দিয়ে দুরন্ত বাতাস আছড়ে পড়ছে ঘরের মধ্যে। ঝড়ের দাপটে উড়ে যাচ্ছে টেবিলের সব কাগজপত্র। খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়ল জানলার কাচ। জোরে জোরে দুলছে ঝাড়বাতিটাও। দেখতে দেখতে সেই উদ্দাম হাওয়ার সাথে হাত মেলাল প্রবল বর্ষণ। জল ঝড়ের সেকি তাণ্ডব! ভেঙ্গে-ভিজে ঘরের সব জিনিস লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে ভুবনবাবুর চোখের সামনে। সব শেষ, সব শেষ। বাইরে বৃষ্টির জল, ভেতরে ভুবনবাবুর চোখে জল। হঠাৎ সেই জলভরা চোখে আর একবার তাকালেন তিনি ঝর্ণা-হিরণের দিকে। না, না—আর কোন কথা নয়-কোন উপদেশও না। আর এক মুহূর্তও এখানে নয়। এ ঘরের আর কোন আকর্ষণ নেই তার কাছে। থাকবেও না কোনদিন। এখানকার সব স্মৃতি ভুলে যেতে চান তিনি।

তাই আর কোনদিকে দৃকপাত না করে টলতে টলতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন ভুবনবাবু চিরদিনের মতন। পেছন পেছন গেল রত্না। বিস্ময়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ঝর্ণা-হিরণ আর অফিসের ছেলেমেয়ে দুটি।

সারাক্ষণ যে ঘর হাসি-খুশিতে ভরে থাকে হঠাৎ সেখানে নেমে এল বেদনার ছায়া। কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এতদিনে বোধহয় জীবনসত্যকে উপলব্ধি করতে পারলেন ভুবনবাবু।

সকল অধ্যায়

১. মণিবালার প্রথম ও পঞ্চম বাবু – শঙ্করলাল ভট্টাচার্য
২. জনৈক কাপুরুষের কাহিনী – প্রেমেন্দ্র মিত্র
৩. নুরবানু – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
৪. আমি একটা মানুষ নই – আশাপূর্ণা দেবী
৫. ঠগের ঘর – সুবোধ ঘোষ
৬. হরপার্বতী সংবাদ – প্রবোধকুমার সান্যাল
৭. চীনেমাটি – সন্তোষকুমার ঘোষ
৮. বালির ঝড় – সমরেশ বসু
৯. আত্মজা – বিমল কর
১০. সন্ধ্যেবেলা রক্তপাত – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১১. কীট – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১২. আর একবার – প্রফুল্ল রায়
১৩. রাগ অনুরাগ – শক্তিপদ রাজগুরু
১৪. পূর্বক্ষণ – ননী ভৌমিক
১৫. রাজার টুপি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
১৬. ফাঁদ – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
১৭. জারিনার প্রেম – তারাপদ রায়
১৮. বলিছে সোনার ঘড়ি – বরেন গঙ্গোপাধ্যায়
১৯. আঁধার ঘর – সঙ্কর্ষণ রায়
২০. টেককা টেককি – কণা বসুমিত্র
২১. মিসেস মেলনির গল্প – সুকুমার ভট্টাচার্য
২২. অঙ্কুর – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
২৩. ছায়া গোধূলি – উত্তম ঘোষ
২৪. রোদ বৃষ্টি কুয়াশা – বামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
২৫. দাম্পত্য – অনিশা দত্ত
২৬. বাতাসের রং নেই – কল্যাণ মৈত্র
২৭. বালির ঘর – দিলীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
২৮. শ্বশুরবাড়ি নয়— ক্লাব হাউস – বৈদ্যনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
২৯. হেনস্থা – তপনকুমার দাস
৩০. লজ্জা – রবিন দে
৩১. দাম্পত্য কলহ ও নেকলেস – শ্রীজয়দেব রায়
৩২. দাম্পত্য স্মৃতি – লক্ষ্মীদেবী চক্রবর্তী
৩৩. সংঘাত প্রশান্ত – বর্মন রায়
৩৪. শেষের সে বিচার – ডাঃ অরুণকুমার দত্ত
৩৫. আলট্রা মডার্ণ – অসীমানন্দ মহারাজ
৩৬. তুমি আমি দুজনেই – আবদুল জব্বার
৩৭. লোকটা – আশিস সান্যাল
৩৮. ক্ষত ও নিরাময় – তৃণাঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়
৩৯. নতুন বইয়ের গন্ধ – শুভমানস ঘোষ
৪০. ভুবন চৌধুরী – অলোককৃষ্ণ চক্রবর্তী
৪১. পদ্মাকাঁটা – গৌর মিত্র
৪২. মালাবৌদি – ডাঃ মহাদেব বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৩. ধূসর কণ্ঠস্বর – শান্তিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
৪৪. দাম্পত্য কলহকথা – স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৫. বাদশা-বেগম ঝমঝমাঝম – সৌমিত্ৰশংকর দাশগুপ্ত
৪৬. দাম্পত্য – সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৭. বন্ধ্যা – তমাল লাহা
৪৮. অণুবীক্ষণ – কুণালকিশোর ঘোষ
৪৯. শিউলি বনে গন্ধরাজ – গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
৫০. বাঁশফুল – শিবতোষ ঘোষ
৫১. ছোটলোক – শচীন দাশ
৫২. পঞ্চম রিপু – শৈলেন রায়
৫৩. শুধু সমুদ্রের চিত্রনাট্য – অরূপরতন ঘোষ
৫৪. আশ্রয় – নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
৫৫. কুমারী মাটি – পুলককুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৬. দাম্পত্য কলহের অন্তরালে – বরুণ মজুমদার
৫৭. জলপরী, সুবিমল ও একটি ধর্ষণের গল্প – জগন্নাথ প্রামাণিক
৫৮. পরকীয়া – প্রণব সেন
৫৯. সম্পর্ক – চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
৬০. কালার টি.ভি. – সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৬১. বন্ধন – ভাগ্যধর হাজারী
৬২. পরকীয়া প্রেম – উজ্জ্বল কুমার দাস
৬৩. অনিকেত – সঞ্জয় ব্রহ্ম
৬৪. ভূমিকা – পঞ্চানন মালাকর
৬৫. বিষাক্ত মদ – পরেশ সরকার
৬৬. দূরের গাড়ি – অগ্নি বসু
৬৭. ধারাবাহিক – মৃণাল বসুচৌধুরী
৬৮. বুমেরাং – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৯. বকম বকম – প্রদীপ আচার্য
৭০. কুয়োতলার কাব্য – অশোককুমার কুণ্ডু
৭১. ধরিত্রী – জীবন সরকার
৭২. পৃথিবী শস্যশালিনী – শৈবাল মিত্র
৭৩. রবিবার ছুটির দিন – আফসার আমেদ (আফসার আহমেদ)
৭৪. চিতা – চণ্ডী মণ্ডল
৭৫. মেঘাবৃত চাঁদ – আবু রুশদ
৭৬. প্রতিষেধক – আবু ইসহাক
৭৭. ফাঁদ – আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
৭৮. পরী – আলাউদ্দিন আল আজাদ
৭৯. প্রেমের গপ্পো – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
৮০. পানকৌড়ির রক্ত – আল মাহমুদ
৮১. অস্থির অশ্বক্ষুর – আবদুল মান্নান সৈয়দ
৮২. ফুলের বাগানে সাপ – ইমদাদুল হক মিলন
৮৩. আজীবন দিন-রাত্রি – জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত
৮৪. পথ, হে পথ – নাসরীন জাহান
৮৫. ধূসর – বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
৮৬. বেলী – বুলবুল চৌধুরী
৮৭. অস্পষ্ট মুখ – মঈনুল আহসান সাবের
৮৮. যৌথ একাকিত্ব – মঞ্জু সরকার
৮৯. লা পেরুজের সূর্যাস্ত – রাবেয়া খাতুন
৯০. হে আনন্দ – রাহাত খান
৯১. খাঁচার ভিতর সুচিন পাখি কমনে বাঁইচে রয় – শওকত আলী
৯২. অষুধ – শহীদ আখন্দ
৯৩. মানব-মানবী – শিহাব সরকার
৯৪. মতিনউদ্দিনের প্রেম – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
৯৫. গন্তব্য, অশোক – সৈয়দ শামসুল হক
৯৬. প্রহসনের মতো – সাইয়িদ আতীকুল্লাহ
৯৭. দুর্নীতি – সেলিনা হোসেন
৯৮. জননী – হাসান আজিজুল হক
৯৯. নিশিকাব্য – হুমায়ূন আহমেদ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন