বেলী – বুলবুল চৌধুরী

ইমদাদুল হক মিলন

বেলী – বুলবুল চৌধুরী

লেখার টেবিলে বসি রাতের বেলায়। ঘর আলাদা। সবদিনেই যে বিশেষ গতি পাই, তা নয়। কখনও কখনও কাটাকুটি হয় প্রবল। আবার পাতার পর পাতা ভরেও ওঠে কোন কোন দিন। আজ বেশ টানা চলছিল কলম। গল্পের একটা বিশেষ বাঁকে পৌঁছে হঠাৎ থামতে হয়। ঘাড়ের কাছটায় জমে উঠছে গভীর নিশ্বাস। এগারো বছরের সংসার। টের পাই ওকে। এই গন্ধও বহু চেনা আর আপন আমার।

মুখ ফেরাই। পরমুহূর্তেই টেবিলের কোণে নিজেকে ঠেক দিতে দিতে স্ত্রী জবাব দেয়, যা ভেবেছি তাই। জানো, মেয়েটা না খারাপ! আমার সন্দেহটাই ঠিক। তাই বলি, রোজ রোজ যায় কই।

কোন মেয়েটা?

ভুলে গেলে? ওই যে, রাস্তার ওই পাশের দোতলা ফ্ল্যাটে গত মাসে নতুন ভাড়াটে উঠেছে না?

এতক্ষণে খেয়াল করতে পারি। আমরাও দ্বিতলবাসী। আর ঠিক উলটো দিকে মেয়েটির বাস। ফলে উভয়েই বেশ মুখোমুখি। তাকালে ভেতরকার অনেকটাই দেখতে পাই। মাঝখানে শুধু একটা গলির ব্যবধান। অন্যের ঘরের জানালা। আড়ি পাতা উচিত নয় ভাবি। তাও একদিন উঁকি দিয়েছিলাম। মেয়েটির ছিপছিপে গড়ন। দীর্ঘাঙ্গিনী। শ্যামলা। বয়স একুশ-বাইশ হবে। পিঠময় চুল ছড়িয়ে সারা ঘর চঞ্চল ঘুরে বেড়ায়। ব্যস। এই অবধিই। তারপর সবটা ভুলে যাই। মানুষের জীবনাচরণ কত রকম। এই শহর দিনে দিনে আলো-অন্ধকারে কত হাবুডুবু। পত্রিকায় চাকরি আমার। অসংখ্য ধারার লোক চারপাশে। কত রকম আলাপ হয়। অনেক কিছুই টের পাই এই শহরের। স্ত্রী অত অতল জানবে কোত্থেকে? সহানুভূতি নিয়ে বলি, এরা সত্যি দুঃখী। কত ধরাও পড়ে পুলিশের হাতে। হোটেলে মেয়ে, বাসায় মেয়ে। কখনও কখনও ওদের সাথে সাথে দালাল ও কাস্টমারের ছবিও ছেপে দেয় পত্রপত্রিকা।

না, না। ব্যাপারটা কিন্তু অন্যরকম।

কি রকম?

পত্রিকা পড়া আর নিজের চোখে সামনাসামনি দেখতে পাওয়া, দু’টো দু’রকমের।

যুক্তির সামনে মাথা নত করে জবাবদিই, তাও ঠিক। কিন্তু তুমি নিশ্চিত হলে কি করে যে মেয়েটি খারাপ?

রোজ সন্ধ্যা বেলায় সেজেগুঁজে বের হয় যে!

তাতে কি। জন্মেই তো মেয়েদের সাজ সাজ ভাব।

স্ত্রীকে চিন্তিত দেখায়। ঐ কুঁচকায় একবার। তারপর জবাব দেয়, না–না। ব্যাপারটা কিন্তু সে রকম নয়।

কি রকম তাহলে?

মেয়েটা সন্ধ্যায় বেরোয়, ফেরে সকালে।

গার্মেন্টসের চাকরি হবে। বাইরে তো যাও, দেখবে দিন-রাত এমন কত চাকুরিতে যায় মেয়েরা।

না, না। প্রতি রাতে হোটেলে থাকে।

অবাক প্রশ্ন করি, অত খবর কই পেলে?

মিশু ভাবীর কাছে।

তারপর এ নিয়ে অন্য কথা ওঠেনি। প্রসঙ্গ বদলে গিয়েছিল হবে। মাঝখানে দিনও কেটে যায় অনেকগুলো। ফের একরাতে টেবিলে স্ত্রীর আবির্ভাব। এদিকে লেখাটাকে তেমন বাগাতেও পারছিলাম না। ভাবনা নিয়েই বসেছিলাম অনেকক্ষণ। ওকে পেয়ে একটু মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি। হেসে বলি, কলম থাক। এসো আজ কথায় কথায় দু’জনে সকাল করে দিই।

শোন, সব সময়ে তোমার ওই প্রেম প্রেম ভাল লাগে না। একটা খবর জানিয়ে চলে যাব।

দাও তাহলে।

মেয়েটার না একটা ভাল বিয়ে হয়েছে।

কি করে জানলে? এইমাত্র মিশু ভাবী ফোনে জানালেন।

আমার দায়িত্ব কিছু না থাক, যেভাবেই হোক, মেয়েটির মিলেছে তো ঘর। সেটাই আসল কথা। খুশি হই। নিশ্ৰুপ প্রার্থনা জানাই, ও সুখী হোক। জীবনের কোন বিড়ম্বনাই যেন স্পর্শ করতে না পারে মেয়েটিকে। অতীতের নানা পারিপার্শ্বিকতায় হয়ত ওকে ঠেলে দিয়েছে অন্ধকারে। সময়েরই ঘুরপাক আসলে। আবার সময়ই তো ওকে দিয়ে গেল ঠাই। মঙ্গল হোক। ওর মঙ্গল হোক।

তারপর ব্যাপারটা ভুলেই থাকি। বেঁচে থাকার নানা তাগাদা। যেখানে যা-ই ঘটুক না কেন, মানুষ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে বেশি। স্ত্রীর মুখেও এ নিয়ে কোনো আলাপ শুনি না। হঠাৎ একদিন চলতি পথে রিকশায় মেয়েটির সাক্ষাৎ পাই। সাথে স্বামী। বেশ পুরুষ। স্ত্রী তুলনায় খানিক বেঁটে অবশ্য। স্বাস্থ্য চমৎকার, রঙ ফর্সা,খুবই তরুণ। সদাহাশ্য মুখশ্রী। আবার পাশাপাশি ওর বরণ কিছুটা ময়লা হলেও লক্ষ্য করতে পারি ডাগর ডাগর চোখ দুটি। দৃষ্টি চকিতে চকিতে ঘুরে মরে। হয়ত আপনাতে আপনি বিভোরও অনেকক্ষন। কল্পনা করি, এই সুন্দর চোখের সম্মোহন দিয়েই ও ছেলেটিকে প্রথম আকৃষ্ট করে। ক্রমে ক্রমে জমে যায় প্রেম। মেয়েটি আজ দয়িতের কাছে সমর্পিতা। হয়ত আপন পুরুষের ছোঁয়া পেয়ে অতীতের সব গ্লানি ধুয়ে ও হয়েছে নির্মল। তারপর ঠাহর করি, ঘটনা অন্য কোনো রকমও হতে পারে। প্রেমিক-প্রেমিকার বাঁধন যে কোথা হতে কেমন রূপ নেবে তা কি আগে থেকে জানা যায়? ঘটনা যেমনই হোক, বুঝি সুখী দম্পতি। সেটাই প্রকৃত পাওয়া।

পরমুহূর্তেই দুয়ের রিকশা ভিড়ে কোথায় হারিয়ে যায়। তারপর সেই পুরনো নিয়ম। কাজের কত রকম তাগাদা থাকে। ছুটতে হয় মানুষকে। কিছুকাল পর রাতের বিছানায় ঘুমোতে গেলে স্ত্রী আমাকে চমকে দিয়ে মেয়েটির প্রসঙ্গ তোলে। বলে, মেয়েটার খবর কিছু জান?

কেন, কি হয়েছে?

ও কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে জায়গা পায়নি।

কেন? কি অপরাধ?

প্রেমের বিয়ে তো! আত্মীয়-স্বজন কারো পছন্দ নয়। ছেলে চাকুরি করে। তাই রাগারাগি করে বউ নিয়ে আলাদা বাসায় উঠে গেছে। হয়ত ঐ টাকায় চলে যাবে সংসার। যাক, যেমনি ছিল, বাঁচলো তো মেয়েটা।

এখন আমার বিছানার সময়। তার আগে স্ত্রীসান্নিধ্য কামনা থাকায় শুই পাশাপাশি। ওকে কাছে টানার জন্যে ডাকি, এই!

সাড়া আসে কই! ও আছে নিজের বলয়ে। জবাব দেয়, ভাগ্যিস ছেলেটার একটা চাকুরি ছিল। তাই বউ নিয়ে আলাদা হতে পেরেছে। নইলে মেয়েটাকে নির্ঘাৎ ঐ হোটেলের দরজায় দরজায় ঘুরতে হত।

আমার স্নায়ুতে তখন চেনা ঘ্রাণ। স্ত্রীকে পেতে চাই। ফলে খানিকটা বিরক্তি নিয়েই জবাব দেই, অন্যকে নিয়ে তোমার ভাবাভাবিটা দয়া করে কমাও দেখি। সারা পৃথিবীতে নিরন্তর কত কি ঘটে। এর চাইতেও চমকে ওঠা কাহিনী আছে। হাতড়াতে যাও, দেখবে ভেতর কত জটিল, জটিল। গিয়ে দেখ, একই মানুষ অন্তরে হাজারো রূপ। আমরা সেই খবরের কে? চাইলেও কি জানতে পারি?

স্ত্রী জবাব দেয়, দুর, তুমি কিসের লেখক! কি অদ্ভুত কাহিনী। আমি লিখতে পারলে কবেই একটা গল্প লিখে পত্রিকায় ছেপে দিতাম।

তাও তো কথা। ওর জবাব বেশ যুক্তির ধার গড়ায়। কিন্তু তখন আমার নেশা অন্যত্র। ওর গায়ে হাত রাখি। সত্যিই, পরশ পেয়ে ও ছেড়ে দেয় তাবৎ আবরণ। এও যেন লেখায় কাটাকুটি শেষে রূপ পায় শিল্পে এমন! গতি আমি পাই বহুক্ষণ। ধুয়েই জাগি দুজন। তারপর পাশাপাশি, গায়ে গায়ে শুয়ে থাকা আমাদের। সেখানে সঙ্গীতের মতো নিশ্বাসের সঘন ওঠা-নামা টের পাই। আর হঠাৎ করেই মেয়েটির মুখ মনে পড়ে যায়। স্ত্রী যে বলে, ওকে দিয়ে কি সত্যি লেখা যায়? গল্প কি অতই সহজ? সরল পথ এর নয়। লেখালেখির আরও আলাদা মোচড়। সত্যের পাশাপাশি আরও আরও খেয়ালচারিতা লাগে। ওকে নিয়ে একদিন হয়েও যেতে পারে আমার কাহিনী। গল্পের ভার ব্যাপারটা অন্তরে বেশ রেখাপাত করে। জান, পৃথিবীর শব্দ, দৃশ্য, কোনটাই ফেলনা নয়। একটা সূত্র অন্যকে যুক্ত করে। শেষে গায়ে গায়ে হয়ত বেশির ভাগটাই লেপটে যায়। কি জানি, এগুলো কি বলে-কয়ে হয় কোনোকালে?

পরদিন হঠাৎ নোটিশে পাড়ি জমাই শহরের বাইরে। পত্রিকার প্রয়োজনে একটা কভারস্টোরি তৈরি করতে হবে। সেই কাজে কাজে কেটে যায় পাঁচদিন। দীর্ঘ পথ ছিল। ভ্রমণের ক্লান্তি নিয়ে ফিরি ঘরে। স্নান সারি। স্ত্রী খাবার নিয়ে বসে সামনে। পাতে নানারকম তুলে দিতে দিতে বলে তোমাকে একটা খবর শোনাব।

এরকম কথায় কৌতূহল জাগা স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু যেন অনুমান করতে পারি। জানতে চাই, কি? আবার কি বাঁক নিল কাহিনী?

স্ত্রী জবাব দেয়, ঠিক ধরেছ। ও না বড় পোড়াকপালি। সত্যিই, কি ভেবেছিলাম আর কি হল শেষে।

মুখের খাবার সরে। বিষণ্ণ হয়ে যাই। সেদিন না দেখলাম দু’জনকে রিক্সায়। কেমন উড়তে উড়তে যাচ্ছিল দম্পতি। সুখী ছিল নিশ্চয়। তাহলে কি নতুন বিপদের সূচনা কাহিনীতে? জিজ্ঞেস করি, কেন? বেশ তো সুন্দর ছিল। দেখেছিও দু’জনকে পথে একদিন। কি হল আবার ওদের?

তুমি যেদিন সিলেট চলে গেলে সেদিনই জানতে পারলাম বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে। বৌ ছেড়ে দিয়ে ঘরের ছেলে নাকি ফিরে গেছে বাবা-মায়ের কাছে।

এবার সত্যি সত্যিই উত্তেজিত হই। আমার অসহিষ্ণু কণ্ঠ, বলি, কেন? ওদের ছাড়াছাড়ি হল কোন কারণে?

তা তো জানি না। মিশু ভাবীর কাছ থেকে যা শুনি সেটুকুই তো শোনাই তোমাকে। হবে হয়ত কিছু। নইলে কি আর ছাড়াছাড়ি হয়? কে জানে বাবা! ভাবতে গেলে আমার তো মাথা গুলিয়ে আসে।

ভাবনা এখন আমার মধ্যে। কত কি কল্পনা করি। আচ্ছা, ছেলেটির সাথে মেয়েটির কবে প্রথম পরিচয়। হয়ত কোন এক কেনাকাটার সময়ে পরস্পরের চোখাচোখি। অথবা আর কি হতে পারে? দুর, অনুমান দিয়ে কি আর কারণ আবিষ্কার করা যায়। তাও গল্পের কারণে গোপনে গোপনে অনুসন্ধান চলে। হয়ত মেয়েটিরই দোষ হবে। একবার স্বভাব হয়ে গেলে তা বোধহয় নিবারণ প্রায় অসম্ভব। স্বামীর অজান্তে পরপুরুষের সাথে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়তেও পারে মেয়েটি। কিন্তু পরমুহূর্তেই খানিকটা কাটাকুটি সারি। হতে পারে স্বামীর কাছে মেয়েটির অতীত পরিচয় ফাঁস হয়ে গেছে। সেই ক্ষেত্রে ওকে কি দোষ দিতে পারি আমি?

নতুন রহস্য খুঁজে পাই। গল্পের বাঁক দরকার। কিন্তু মেয়েটির নামই তো জানা হল না আজ অবধি। ফের ভাবি, কি হবে জিজ্ঞেস করে? স্বামীর সাথে ওর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। দুঃখটুকুই আমার মধ্যে একটা নাম হয়ে জেগে থাকে। কিন্তু এও তো অন্যায়, প্রতিবেশি যেমনই হোক মানুষ, নাম জানার সৌজন্য থাকতে হবে। প্রশ্ন করি, ওর নামটা যেন কি? জানাই হল না।

স্ত্রী রেগে যায়। বলে, তুমি খুব লেখক তো! সব তোমার ভান। তবে না শুনি, মানব দরদি না হলে সে কখনো বড় শিল্পী হয় না। মানুষকে ভালোবাসাটালোবাসা আসলে তোমার ফাঁকা বুলি। কচু লেখক তুমি। আচ্ছা, কি ধরন তোমার? চেনা একটা মেয়ের জীবনে কত কি ঘটে গেল চোখের সামনা দিয়ে, আর তুমি নামটা পর্যন্ত একবার খোঁজ নিলে না? বাহ! বেশ তো।

গম্ভীর উচ্চারণ করি, ক্ষমা চাই।

উত্তর আসে, থাক। হয়েছে। পারো যদি ওর কথাটা গল্পে গল্পে লিখে রেখো। না যদি পারো তাহলে নেই।

সবিনয়ে জানাই, তুমি খুশি হও আমি তাই চাই। কথা দিচ্ছি লিখবো। ওকে নিয়ে লিখবো। আজ না হয় দাগ কাটবো কলমে।

সত্যিই তো?

ঠিক ভাবনা শুরু করতে পেরেছি। আগে তো আবছা আবছা হলেও মুখটা দরকার সেটুকুও পেয়ে গেছি। দেখবে যে কোন সময়ে হয়ে যাবে লেখা। সত্যিই তো, ওর জন্যে আমরা কি করতে পারি আর? দয়া করে এবার ওর নামটা শোনাও।

স্ত্রীর জবাব, বেলী। বেলী গো। ফুলের নামে নাম। হলে কি হবে! এমন সুন্দর মেয়ে, ভাগ্য কেমন দেখলে?

দিন বয়ে যায়। মাঝে মধ্যে উঁকি দিই মেয়েটির ঘরে। ওকে দেখি কখনো কখনো। বাইরে থেকে কি এর বেশি আঁচ করা যায়? গল্পের বিচ্ছিন্ন দু’একটি অংশও আঁকি মাথায় মাথায়। তা হলেই তা সাথে সাথে পাতা ভরানো যায় না। অপেক্ষা করতে হয়। গভীর দৃষ্টিতে কারণ খুঁজে বেড়াই। মেঘের ঘনঘটার মতো কোন সূত্র এসে বিচ্ছেদ ঘটায় মেয়েটির জীবনে। কোন সত্য লুকিয়ে আছে পেছনে?

দিন কয়েক পরের কাহিনী। অফিসে বসে আছি। স্ত্রীর ফোন। বলি, হ্যালো।

শোন, নতুন খবর আছে।

কি?

বেলী চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল।

তারপর?

ক্লিনিকে গিয়ে বাচ্চা ফেলে এসেছে। অন্য কি উপায়? বাপের পরিচয় লাগবে না? মারাত্মক খবরটা তাহলে শোন। জানো, কদিন থেকে নাকি শুধু ব্লিডিং হচ্ছে। দেখলাম কি ফ্যাকাসে মুখ মেয়ের। আচ্ছা, এম. আর. করালে কি এমন বিপদের ভয় থাকে মেয়েদের?

কথা বন্ধ হয়ে যায়। সারা দেশ জুড়ে এ ধরনের ক্লিনিক কম নয়। পত্রপত্রিকায় এসব নিয়ে নানা লেখাও পড়েছি। নানা দুর্ঘটনার তথ্য সেখানে। অপটু ডাক্তারকে। মেয়েদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ঢাকায় এমন গজিয়ে ওঠা ক্লিনিক যথেষ্ট আছে। কিন্তু সব মিলে কেন জানি মাথায় মাথায় বেলী খেলতে শুরু করে। কি হয়েছিল। ওর? হয়ত এক সুন্দর বিকেলে স্বামী-স্ত্রী মিলে বেরিয়েছিল পথে। রিকশাওয়ালা চলতে চলতে থেমেছিল সেই হোটেলের দরজায়। স্বামী ধমকে উঠেছিল, এই থামলে কেন? চালাও।

চেনা রিকশাওয়ালা ছিল বেলীর। আগে-পরেও প্রায় সময়েই ওকে নামিয়ে দিয়ে গেছে হোটেলে। আজও তেমনটা ভেবে দুয়ারে থামায় রিকশাওয়ালা। ঠিক এরকম কোন ঘটনাতেও বেলীর বিয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে। আবার আমার এই অদ্ভুত কল্পনাও তো বাস্তব হতে পারে না। অদৃশ্য কত কি ঘটে। সেটুকু কল্পনা দিয়ে মেলাবার চেষ্টা চালাই। কিন্তু কল্পনা সত্য নয় সত্যি। তবে যা কিছু সম্ভব সেটাও তো সত্য এক রকম!

রাতে কাগজকলম টেনে বসেছি। দাগ কাটতে যাব। হঠাৎ কানে কান্নার আওয়াজ। বেলীদের এখানেই ব্যাপারটা। জানালা দিয়ে তাকাই। এগোই বারান্দা ধরে। ওর ঘরের ভেতরে ডিম লাইট। মেয়েটা খাটের এক প্রান্তে হাটুতে মুখ গুঁজে আছে। কান্না ওখানেই।

বারান্দা ঘুরে লেখার টেবিলে ফিরে যাই। দাগ কাটি কাগজে। থামি, তারও একটা প্রশ্ন থেকে যায়। এই এম. আর. কি ওর মাতৃত্বের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে? অতীতে একটা ক্লিনিকে এ রকম ভুল অপারেশনের তথ্য পেয়েছিলাম। রোগী শেষ পর্যন্ত মারা যায়।

মাথা নুয়ে আসে টেবিলের ওপর।

সকল অধ্যায়

১. মণিবালার প্রথম ও পঞ্চম বাবু – শঙ্করলাল ভট্টাচার্য
২. জনৈক কাপুরুষের কাহিনী – প্রেমেন্দ্র মিত্র
৩. নুরবানু – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
৪. আমি একটা মানুষ নই – আশাপূর্ণা দেবী
৫. ঠগের ঘর – সুবোধ ঘোষ
৬. হরপার্বতী সংবাদ – প্রবোধকুমার সান্যাল
৭. চীনেমাটি – সন্তোষকুমার ঘোষ
৮. বালির ঝড় – সমরেশ বসু
৯. আত্মজা – বিমল কর
১০. সন্ধ্যেবেলা রক্তপাত – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১১. কীট – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১২. আর একবার – প্রফুল্ল রায়
১৩. রাগ অনুরাগ – শক্তিপদ রাজগুরু
১৪. পূর্বক্ষণ – ননী ভৌমিক
১৫. রাজার টুপি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
১৬. ফাঁদ – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
১৭. জারিনার প্রেম – তারাপদ রায়
১৮. বলিছে সোনার ঘড়ি – বরেন গঙ্গোপাধ্যায়
১৯. আঁধার ঘর – সঙ্কর্ষণ রায়
২০. টেককা টেককি – কণা বসুমিত্র
২১. মিসেস মেলনির গল্প – সুকুমার ভট্টাচার্য
২২. অঙ্কুর – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
২৩. ছায়া গোধূলি – উত্তম ঘোষ
২৪. রোদ বৃষ্টি কুয়াশা – বামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
২৫. দাম্পত্য – অনিশা দত্ত
২৬. বাতাসের রং নেই – কল্যাণ মৈত্র
২৭. বালির ঘর – দিলীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
২৮. শ্বশুরবাড়ি নয়— ক্লাব হাউস – বৈদ্যনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
২৯. হেনস্থা – তপনকুমার দাস
৩০. লজ্জা – রবিন দে
৩১. দাম্পত্য কলহ ও নেকলেস – শ্রীজয়দেব রায়
৩২. দাম্পত্য স্মৃতি – লক্ষ্মীদেবী চক্রবর্তী
৩৩. সংঘাত প্রশান্ত – বর্মন রায়
৩৪. শেষের সে বিচার – ডাঃ অরুণকুমার দত্ত
৩৫. আলট্রা মডার্ণ – অসীমানন্দ মহারাজ
৩৬. তুমি আমি দুজনেই – আবদুল জব্বার
৩৭. লোকটা – আশিস সান্যাল
৩৮. ক্ষত ও নিরাময় – তৃণাঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়
৩৯. নতুন বইয়ের গন্ধ – শুভমানস ঘোষ
৪০. ভুবন চৌধুরী – অলোককৃষ্ণ চক্রবর্তী
৪১. পদ্মাকাঁটা – গৌর মিত্র
৪২. মালাবৌদি – ডাঃ মহাদেব বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৩. ধূসর কণ্ঠস্বর – শান্তিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
৪৪. দাম্পত্য কলহকথা – স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৫. বাদশা-বেগম ঝমঝমাঝম – সৌমিত্ৰশংকর দাশগুপ্ত
৪৬. দাম্পত্য – সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৭. বন্ধ্যা – তমাল লাহা
৪৮. অণুবীক্ষণ – কুণালকিশোর ঘোষ
৪৯. শিউলি বনে গন্ধরাজ – গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
৫০. বাঁশফুল – শিবতোষ ঘোষ
৫১. ছোটলোক – শচীন দাশ
৫২. পঞ্চম রিপু – শৈলেন রায়
৫৩. শুধু সমুদ্রের চিত্রনাট্য – অরূপরতন ঘোষ
৫৪. আশ্রয় – নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
৫৫. কুমারী মাটি – পুলককুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৬. দাম্পত্য কলহের অন্তরালে – বরুণ মজুমদার
৫৭. জলপরী, সুবিমল ও একটি ধর্ষণের গল্প – জগন্নাথ প্রামাণিক
৫৮. পরকীয়া – প্রণব সেন
৫৯. সম্পর্ক – চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
৬০. কালার টি.ভি. – সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৬১. বন্ধন – ভাগ্যধর হাজারী
৬২. পরকীয়া প্রেম – উজ্জ্বল কুমার দাস
৬৩. অনিকেত – সঞ্জয় ব্রহ্ম
৬৪. ভূমিকা – পঞ্চানন মালাকর
৬৫. বিষাক্ত মদ – পরেশ সরকার
৬৬. দূরের গাড়ি – অগ্নি বসু
৬৭. ধারাবাহিক – মৃণাল বসুচৌধুরী
৬৮. বুমেরাং – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৯. বকম বকম – প্রদীপ আচার্য
৭০. কুয়োতলার কাব্য – অশোককুমার কুণ্ডু
৭১. ধরিত্রী – জীবন সরকার
৭২. পৃথিবী শস্যশালিনী – শৈবাল মিত্র
৭৩. রবিবার ছুটির দিন – আফসার আমেদ (আফসার আহমেদ)
৭৪. চিতা – চণ্ডী মণ্ডল
৭৫. মেঘাবৃত চাঁদ – আবু রুশদ
৭৬. প্রতিষেধক – আবু ইসহাক
৭৭. ফাঁদ – আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
৭৮. পরী – আলাউদ্দিন আল আজাদ
৭৯. প্রেমের গপ্পো – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
৮০. পানকৌড়ির রক্ত – আল মাহমুদ
৮১. অস্থির অশ্বক্ষুর – আবদুল মান্নান সৈয়দ
৮২. ফুলের বাগানে সাপ – ইমদাদুল হক মিলন
৮৩. আজীবন দিন-রাত্রি – জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত
৮৪. পথ, হে পথ – নাসরীন জাহান
৮৫. ধূসর – বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
৮৬. বেলী – বুলবুল চৌধুরী
৮৭. অস্পষ্ট মুখ – মঈনুল আহসান সাবের
৮৮. যৌথ একাকিত্ব – মঞ্জু সরকার
৮৯. লা পেরুজের সূর্যাস্ত – রাবেয়া খাতুন
৯০. হে আনন্দ – রাহাত খান
৯১. খাঁচার ভিতর সুচিন পাখি কমনে বাঁইচে রয় – শওকত আলী
৯২. অষুধ – শহীদ আখন্দ
৯৩. মানব-মানবী – শিহাব সরকার
৯৪. মতিনউদ্দিনের প্রেম – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
৯৫. গন্তব্য, অশোক – সৈয়দ শামসুল হক
৯৬. প্রহসনের মতো – সাইয়িদ আতীকুল্লাহ
৯৭. দুর্নীতি – সেলিনা হোসেন
৯৮. জননী – হাসান আজিজুল হক
৯৯. নিশিকাব্য – হুমায়ূন আহমেদ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন