সংস্কৃতির সমাজতত্ত্ব : বিনয় ঘোষ

প্রদীপ বসু

সংস্কৃতির সমাজতত্ত্ব : বিনয় ঘোষ

১. মার্কসবাদ ও সমাজতত্ত্ব

‘সমাজতাত্ত্বিক বিনয় ঘোষ’ সম্বন্ধীয় এই বর্তমান আলোচনায় আমি নতুন করে বিনয় ঘোষের লেখার সংক্ষিপ্তসার পেশ করতে যাব না অথবা কোন কোন লেখায় উনি কী বলেছেন, সেটাও সহজ করে বোঝানো আমার উদ্দেশ্য নয়। বিনয় ঘোষ খুব সুস্পষ্টভাবে তাঁর নির্দিষ্ট বক্তব্যগুলি বিভিন্ন রচনায় বিবৃত করে গেছেন এবং এটা ভাবা নিশ্চয়ই অযৌক্তিক হবে না যে অনেকেই কমবেশি সেই রচনাসমূহের সঙ্গে পরিচিত। আমি এই আলোচনায় বিনয় ঘোষ কী কী পদ্ধতির অবলম্বনে এবং কোন কোন তাত্ত্বিক কাঠামোর মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন দিক বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন এবং তার ফলস্বরূপ নতুন কী কী ধরনের প্রশ্ন উঠতে পারে অথবা আরও নতুন কী ধরনের গবেষণার ক্ষেত্র উন্মুক্ত হয়েছে, তারই একটা সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেবার চেষ্টা করব।

বিনয় ঘোষ যে মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন এটা আমরা জানি। কিন্তু বিনয় ঘোষের প্রথম দিকের মার্কসবাদের প্রয়োগ এবং পরবর্তীকালের মার্কসবাদের প্রয়োগের মধ্যে আমার মনে হয় যথেষ্ট পার্থক্য আছে। চল্লিশের দশকে সংস্কৃতির দুর্দিন (১৯৪৫), শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ (১৯৪০) ইত্যাদি গ্রন্থে উনি মার্কসবাদকে যেভাবে গ্রহণ করেছিলেন তার সঙ্গে ষাট-সত্তর দশকে তাঁর মার্কসীয় চিন্তাভাবনার যথেষ্ট তফাত দেখতে পাওয়া যায়। বিনয় ঘোষ প্রায় সময়ই এটা বলতেন, পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি-র জন্য সরেজমিনে অনুসন্ধান কাজকর্মে ব্যাপৃত হবার সময় থেকেই তিনি বইপড়া ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থেকে দূরে সরে আসতে আরম্ভ করেন। অবশ্য মার্কসীয় সমাজবিজ্ঞানে তাঁর আস্থা ছিল চিরদিন। আমি বিনয় ঘোষের লেখা থেকে একটি মাত্র উদাহরণ দেব এবং এই একটি উদাহরণই আমার মনে হয় যথেষ্ট। ‘সামন্ততান্ত্রিক জীবনধারা, সামন্ততান্ত্রিক চিন্তাভাবনা, মানসতা আজও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে বেশ দৃঢ়মূল রয়েছে, এমনকি কবচমাদুলিধারী (গ্রহরত্ন তো বটেই) বাঙালী বায়োকেমিস্ট ফিজিসিস্টদের মধ্যেও। তাই কলকারখানার চৌহিদ্দির মধ্যে অথবা ময়দানে যে বাঙালী হিন্দু মজুর মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে মার্ক্স-লেনিনের নামে বিপ্লবের স্লোগান দেয়, সেই বাঙালী মজুর ঘরে ফিরে এসে (মজুরদের কোয়ার্টারে নয়) হাতজোড় করে নারায়ণশিলার পূজো করে, গ্রামে লক্ষ্মীজনার্দনের মন্দিরে গিয়ে মজুরিবৃদ্ধির জন্য মানত করে। এটা কিন্তু মার্ক্সীয় অর্থে মোটেই contradiction নয়, কারণ এরকম আচরণ হল ঘরে ফিরে এসে আফিসের পোষাক ছেড়ে ফেলার মতো, অর্থাৎ মার্ক্স-লেনিন, ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি, এগুলি আজও আমাদের কাছে আফিসের পোষাকের মতো ঘরোয়া পরিবেশে অস্বস্তিকর, তাই পরিত্যাজ্য। আদতে এটা হল সংস্কৃতিবৃত্তের পূর্ণগ্রাস জীবনবৃত্তকে। সংস্কৃতিবৃত্তকে “ideological superstructure” এবং জীবনবৃত্তকে “material base” বলা যায়। সংস্কৃতিবৃত্তের প্রাধান্য পশ্চিমবঙ্গে অত্যধিক এবং জনসাধারণের জীবনবৃত্তকে তা যে প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে তাতে আমার অন্তত কোনো সন্দেহ নেই। গোড়াতে যেটুকু সন্দেহ ছিল তা গত পঁচিশ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গ্রামে ঘুরে, একই গ্রামে একই অঞ্চলে একাধিকবার গিয়ে, একই উৎসব একই মেলা একই অনুষ্ঠানকর্ম আচার-বিশ্বাস-দেবদেবী-মন্দির দেখে দেখে একেবারে দূর হয়ে গিয়েছে। সংস্কৃতিবৃত্ত নিয়ন্ত্রণ (control) করছে জীবনবৃত্তকে এবং জীবনবৃত্তের অর্থনীতিকেও। . . . মার্ক্সইজমকে যাঁরা “dogma” বা বদ্ধ-সংস্কার মনে করেন, বিজ্ঞান মনে করেন না, তাঁদের কাছে এরকম কথা বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। যদি হয় তো নাচার।’

২. পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি

যদিও উপরের এই উদ্ধৃতিটি আমি ব্যবহার করেছি বিনয় ঘোষের মার্কসবাদ সম্বন্ধে দৃষ্টিভঙ্গি বোঝাবার জন্য; কিন্তু একই সঙ্গে এও বলা যায় যে উপরে বিনয় ঘোষ যা বলেছেন তা পড়ে আমাদের উঠে-বসে আবার চিন্তা আরম্ভ করা উচিত। ভারতে মার্কসীয় সমাজবিজ্ঞানীর কাছে আমার মনে হয় এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আর কিছু নেই। বিনয় ঘোষের সমাজতাত্ত্বিক রচনার সম্বন্ধেও বলা যায় যে, তিনি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বা নৃবিজ্ঞানীদের রচনার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এটা সাধারণভাবে মার্কসীয় সমাজবিজ্ঞানী বা নৃবিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন মার্কসবাদীরা একসময় বিবর্তনবাদকে (evolutionism) গ্রহণ করেছেন, আবার লেভি-স্ত্রোস প্রমুখ নৃবিজ্ঞানীরা বিবর্তনবাদকে পরিত্যাগ করেছেন। বিস্তারবাদ (diffusionsim), গঠনবাদ (structuralism) সম্বন্ধেও ওই একই কথা খাটে। ভারতবর্ষে মার্কসবাদী সমাজতাত্ত্বিক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত যখন মর্গানকে আক্রমণ করেন সেই সময় (১৯৫২ সালে) বিনয় ঘোষ মর্গানের বিবর্তনবাদকে সমর্থন করেন, কিন্তু ১৯৫৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি-র তত্ত্বগত কাঠামো হিসেবে মূলত বিস্তারবাদকে গ্রহণ করেন। ওই সময়ে এই গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি লেখেন : ‘বিভিন্ন সংস্কৃতির সংঘাত ও সংস্পর্শের ফলে আঞ্চলিক সংস্কৃতির কিভাবে পরিবর্তন ঘটে, ঘাত-প্রতিঘাতের ভিতর নিয়ে নতুন সমন্বয় (integration) হয়, সে সম্বন্ধে “গ্রাম প্রদক্ষিণ” ও ‘সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গ’ বিভাগের একাধিক প্রবন্ধে আলোচনা করেছি’।

তত্ত্বগতভাবে বিনয় ঘোষ সাংস্কৃতিক (cultural trait), সমন্বয় (integration), একাত্মীকরণ (assimilation) প্রভৃতি বিস্তারবাদীদের বিভিন্ন ‘কনসেপ্ট’ গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৭৬-এ এই তত্ত্ব তিনি পরিত্যাগ করেন, যদিও সম্পূর্ণভাবে নয়। একটু লম্বা উদ্ধৃতি দিয়ে বিনয় ঘোষের ভাষাতেই বিষয়টি বোঝাবার চেষ্টা করছি : ‘বিস্তারবাদীরা . . .  বললেন বর্বর ও অসভ্যদের “সংস্কৃতি” বলে কিছু ছিল না কোনকালে। পৃথিবীর কয়েকটি বিশেষ কিছু বিশিষ্ট ভাগ্যবান জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংস্কৃতির বিকাশ হয় এককালে, তারপর তাদের সেই সংস্কৃতির উপাদানগুলির বর্বর-অসভ্যদের অঞ্চলগুলিতে প্রবেশ করে (কতকটা খ্রীষ্টান মিশনারিদের মতো) এবং তাদের “সভ্য” ও “সংস্কৃতিবান” করে তোলে। . . . এ-হেন সাংস্কৃতিক তত্ত্ব সাম্রাজ্যবাদের প্রসারকালে অর্থাৎ উনিশ শতকের শেষে এবং বিশ শতকের গোড়ায়, কতটা যে তার সহায় হতে পারে তা যে-কোনো বালকও বুঝতে পারে। ইংলণ্ড ও ইউরোপের কোনো দেশে সংস্কৃতির সূর্যোদয় হয় এবং সেই সংস্কৃতির এক একটি রশ্মিতুল্য উপাদান বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছুরিত হয়, যে-সমস্ত স্থানে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা “উপনিবেশ” স্থাপন করে, যেমন আফ্রিকায় এশিয়ায় লাটিন আমেরিকায় ভারতবর্ষে চীনে।’

মূলত বিস্তারবাদী তত্ত্বের এই অন্তনির্হিত ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধেই লেভি-স্ত্রোস ঘোষণা করেন, কোনো সংস্কৃতিই অন্য কোনো সংস্কৃতির চেয়ে উৎকৃষ্টতর নয়। লেভি-স্ত্রোস বিভিন্ন আদিম সমাজের ‘মিথ’-এর বিশ্লেষণ থেকে এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, আদিম মানুষ এবং আধুনিক মানুষের চিন্তার ধরন একইরকম : ‘পাথরের কুড়ুলের চেয়ে স্টিলের কুড়ুল এইজন্য উন্নত নয় যে দ্বিতীয়টি আরও ভালভাবে তৈরি, কিন্তু স্টিল পাথর থেকে আলাদা। ঠিক একইভাবে আমরা দেখতে পারি যে একই যৌক্তিক প্রক্রিয়া মিথ বিজ্ঞানে কাজ করে, এবং মানুষ সব সময়েই একইভাবে চিন্তা করে আসছে। তথাকথিত উন্নতি মানুষের মনে হয়নি, হয়েছে নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কারে যেখানে মানুষ তার পরিবর্তনহীন ও অপরিবর্তনীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।’ বিস্তারবাদীদের প্রতি বিবর্তনবাদীদের প্রধান সমালোচনা ছিল, বিস্তারবাদ-তত্ত্ব দিয়ে ইতিহাস বোঝা সম্ভব নয়। কারণ, এই তত্ত্ব অনুযায়ী যেকোনো সমাজের ইতিহাস- সাংস্কৃতিক সংস্পর্শ, আকস্মিক ঘটনা অথবা দুর্ঘটনার উপর নির্ভর। যেমন, ঝুম চাষ করে এইরকম এক জনগোষ্ঠী যদি অপর একটি জনগোষ্ঠীর সংস্পর্শে এসে জানতে পারে কী করে স্থায়ীভাবে চাষ করতে হয়, তাহলে এই প্রথম গোষ্ঠীর সামাজিক গঠন ও ইতিহাস বদলে যাবে। কিন্তু তারা এই দ্বিতীয় গোষ্ঠীর সংস্পর্শে না-ও আসতে পারত। অর্থাৎ কোনো সমাজ, গোষ্ঠী বা সংস্কৃতি সম্বন্ধে ঠিকভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়, কারণ সব কিছুই এই ধরনের আকস্মিকতার উপর নির্ভর করছে। বিবর্তনবাদীরা মনে করতেন প্রকৃতির নিয়মের মতো সমাজেরও একটা নিজস্ব নিয়ম আছে এবং এই নিজস্ব নিয়মের গতিতেই সমাজ এগিয়ে চলে। পরবর্তীকালে ম্যালিনোস্কি, র‍্যাডক্লিফ ব্রাউন, ইভান্স প্রিচার্ড প্রমুখ উপযোগবাদী (functionalist) নৃবিজ্ঞানীরা এই দুই মতবাদের বিরুদ্ধেই প্রচণ্ড আপত্তি তোলেন মূলত এই কারণে যে এঁরা ‘মিথ’ বা ‘রিচ্যুয়াল’-এর উপর নির্ভর করে সমাজের যে ইতিহাস তৈরি করেছেন তা অনুমান-নির্ভর, প্রমাণিত সত্য নয়। এমনকী অনেক ক্ষেত্রে এই অনুমানকে মিথ্যাও প্রমাণিত করা যায়। ফলে, উপযোগবাদীরা তাঁদের অনুসন্ধানের রীতি থেকে ইতিহাসকে একদম বাদ দিলেন এবং বস্তুত গঠন ও উপযোগিতার (structure and function) ভিত্তিতে সমাজকে বিচার করতে বসলেন। অর্থাৎ ‘মিথ’, ‘রিচ্যুয়াল’ ইত্যাদির সমস্ত-কিছুরই সমাজে উপযোগিতা আছে এবং এটা আছে বলেই সমাজের গঠন এইরকম বা অন্যরকম নয়। উপযোগবাদীরা এই তত্ত্বের ফলে নানাবিধ অসুবিধার মুখোমুখি হন। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা যা তাঁরা আর অতিক্রম করতে পারেননি তা হল, এই তত্ত্ব সামাজিক পরিবর্তন ব্যাখ্যার পক্ষে অনুপযোগী। ইদানীং মরিস গোডেলিয়ার, ইম্যান্যুয়েল টেরে, ক্লদ মিঁয়াসু প্রমুখ মার্কসবাদী নৃবিজ্ঞানীরা উপরের তিনটি মতকেই পরিত্যাগ করেছেন। সাম্প্রতিক এক রচনায় টেরে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, মর্গান আদৌ বিবর্তনবাদী ছিলেন না, বরং মর্গানের ধারণা গঠনবাদীদের কাছাকাছি ছিল। গোডেলিয়ার অর্থনৈতিক নৃবিজ্ঞানের (economic authropology) উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন, যেমন মিঁয়াসু আদিম সমাজের শ্রম-বিভাগ এবং উৎপাদন সম্পর্কের আরও গভীরতর বিশ্লেষণে গেছেন।

বিনয় ঘোষ যে এইসব তত্ত্বের সঙ্গে অপরিচিত ছিলেন তা নয়। তথাপি আগেই বলেছি, পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি-র ১৯৭৬-এর ভূমিকায় তিনি বিস্তারবাদকে সম্পূর্ণভাবে বর্জন করেননি। কারণ হিসাবে তিনি লিখেছেন : ‘পশ্চিমবঙ্গের সংকীর্ণ সীমানার মধ্যে সংস্কৃতির বৈচিত্র্য-বৈশিষ্ট্যের সন্ধানে . . . বিবর্তনের স্তর এবং বিকিরণের দৃষ্টান্ত একাধিক ক্ষেত্রে লক্ষ্য করেছি। এমন অনেক অতিকথা লোকগাথা আছে যা বিভিন্ন জেলায় গ্রামে গ্রামে বিহার করে দেখেছি, অনেক উৎসব-অনুষ্ঠান আছে এক একটি ভৌগোলিক অঞ্চলে যার সাদৃশ্য চোখে পড়ে অথচ সেই একই উৎসবের রূপ অন্যত্র অন্যরকম (যেমন গাজন-উৎসবের), একই লোকশিল্প একই জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে বিভিন্নরূপে দেখা যায় (যেমন বাঁকুড়ার মৃৎশিল্প) . . . এই ধরনের আরও অনেক বিষয় আছে যার মধ্যে বিবর্তনবাদী ও বিকিরণবাদীদের অনেক কথা সত্য প্রমাণিত হয়’। তিনি মনে করতেন একটা স্তর অবধি এই তত্ত্ব ঠিক আছে, কিন্তু তার বেশি টেনে নিয়ে গেলে এই তত্ত্ব একদিকে-‘উপনিবেশিকতার পোষক হয়ে ওঠে, অন্যদিকে অস্বাভাবিক বাতিকে পরিণত হয়’।

আমার ধারণায় বিনয় ঘোষ দু-টি কারণে এই তত্ত্ব পরিত্যাগ করেননি। প্রথম কারণ, তিনি লিখেছেন : বিভিন্ন অঞ্চলের উৎসব-অনুষ্ঠানের সাদৃশ্য, কিন্তু এই সাদৃশ্য দেখার পরও কয়েকটি প্রশ্ন থেকে যায়। যেমন, বিকিরণের সম্ভাবনা এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে, এক জনগোষ্ঠী থেকে অন্য জনগোষ্ঠীতে, এক ভৌগোলিক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সবসময়েই থাকে, কিন্তু সমাজ জনগোষ্ঠী বা আর একটি ভৌগোলিক অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক উপাদানের সব কিছুই নির্বিচারে গ্রহণ করে না, বরং নিজের উপযোগিতা-অনুপযোগিতা, প্রয়োজনীয়তা-অপ্রয়োজনীয়তা অনুসারে অথবা অন্যান্য নানাবিধ কারণে গ্রহণ করে বা বর্জন করে। তাই যদি হয়, তাহলে নৃবিজ্ঞানীদের আরও কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। কেন এই সাদৃশ্য/অসাদৃশ্য? কেনই-বা বিশেষ বিশেষ উৎসব-অনুষ্ঠান-শিল্পের বিস্তার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায় এবং আরও অনেক উৎসব-অনুষ্ঠান-শিল্প একটি মাত্র গোষ্ঠী সমাজ ও অঞ্চলে সীমিত থাকে? শুধু এই নয়, আরও একটি জরুরি প্রশ্ন হল : বিস্তারবাদী তত্ত্বের ভিত্তিতে যে প্রকল্পগুলি আমরা পাচ্ছি সেগুলিকে কতটা ঠিকভাবে প্রমাণ করা যায়? একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝাবার চেষ্টা করছি। বীরভূমের ধর্মপূজা সম্বন্ধে আলোচনা প্রসঙ্গে বিনয় ঘোষ লিখেছেন : ‘সর্বপ্রথম অনুসন্ধান করা প্রয়োজন, ধর্মঠাকুরের উৎসব কোনখান থেকে কতদূর পর্যন্ত প্রচলিত (distribution)। উৎসবের পদ্ধতি ও অনুষ্ঠানাদি সবিস্তারে অনুধাবন করাও প্রয়োজন। তারপর তার উৎপত্তি (origin) বিকাশ ও বিস্তার (diffusion) সম্বন্ধে ধারণা সম্ভবপর।’ বিনয় ঘোষের নিজের বিবরণসহ ধর্মপূজার যেসব বিভিন্ন বিবরণ পাওয়া যায় তার থেকে ধর্মঠাকুরের উৎপত্তি কি সত্যি সন্ধান করা সম্ভব, যদি আমরা ধরে নিই ধর্মঠাকুরের উৎপত্তি একটি বিশেষ জায়গায় বা গোষ্ঠীর মধ্যে হয়েছিল? আজকে ধর্মঠাকুরের কয়েক হাজার নাম, গ্রাম থেকে গ্রামে ধর্মঠাকুরকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়, উৎসবের পদ্ধতি বা অনুষ্ঠানাদি বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন, তার মধ্যে হিন্দু, বৌদ্ধ এমনকী আদিবাসী ধর্মের প্রভাব রয়েছে-এর থেকে যদি আমরা ধর্মঠাকুরের উৎপত্তি অনুমান করতে সমর্থ হই, তাহলে তার ঐতিহাসিক ভিত্তি কতখানি?

উপরের প্রশ্নগুলি বিস্তারবাদী তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা দেখাবার জন্যই উত্থাপন করলাম। এর থেকে বিনয় ঘোষ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদানের বিস্তার সম্বন্ধে যা বলেছেন তা ভুল প্রমাণিত হয় না। কিন্তু তা ঠিক প্রমাণিত করাও শ্রমসাধ্য এবং অনেকক্ষেত্রেই বুনোহাঁস তাড়া করবার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। অবশ্য বিনয় ঘোষ তাঁর পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি গ্রন্থে বহু তথ্য আমাদের দিয়ে গেছেন এবং সেই তথ্য বিশ্লেষণের কয়েকটি সূত্রও আমাদের দেখিয়ে গেছেন। আমরা সেই সূত্র ধরে এগিয়ে গিয়ে বিনয় ঘোষের বিভিন্ন প্রকল্পগুলিকে সত্য প্রমাণিত করতে পারি, আবার মিথ্যাও প্রমাণিত করতে পারি। আমরা অন্য কোনো নতুন তাত্ত্বিক কাঠামোয় এই সকল তথ্যের বিচার করতে পারি; তবে যেভাবেই বিচার করি তার জন্য সরজমিনে অনুসন্ধান প্রয়োজন। এই প্রয়োজনীয়তা বিনয় ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি-র কাজ হাতে নেওয়ার সময় উপলব্ধি করেছিলেন। এবং একই সঙ্গে বুঝেছিলেন : ‘কেবল একটি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান নিয়ে অনুসন্ধান করলে, তা ব্যর্থ হবার সম্ভাবনাই বেশি, কারণ বিভিন্ন জাতি-বিদ্যার (allied disciplines) আলোকে নানাকোণ থেকে প্রসৃত করতে না পারলে, জনমানসের জটিলতা ভেদ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে।’১০

আজকে আমরা বিভিন্ন গবেষণায় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে নানাবিধ বিদ্যার সমন্বয়ের (inter-disciplinary approach) কথা শুনতে পাই। সেই দিক দিয়ে পশ্চিবঙ্গের সংস্কৃতি অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত হবে। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান বা সমাজবিজ্ঞানের বই নয়। এইসব বিষয় ছাড়াও এতে পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল, ইতিহাস এবং পুরাতত্ত্ব নিয়ে বিশদ আলোচনা রয়েছে এবং এইজন্যই আমার মনে হয় বিস্তারবাদ সম্বন্ধে বিনয় ঘোষের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও উনি শেষ অবধি যে তা বর্জন করেননি তার অন্য আর একটি কারণ হল : তাহলে বইটিকে পুরোপুরিভাবেই ঢেলে সাজাতে হত বা পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির উপর অন্য একটি বই লিখতে হত। যেহেতু বইটি শুধুমাত্র নৃবিজ্ঞানের বই নয় বা শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক উপাদানের বিশ্লেষণ নয়, তাই তিনি আমাদের এই তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে সচেতন করে দিয়ে সীমিত অর্থে এই তত্ত্বের ব্যবহার করেছেন। তা ছাড়া আমাদের ভুললে চলবে না যে, এই কাজ তিনি হাতে নিয়েছিলেন তার অন্যতম একটি কারণ ছিল যে, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে দ্রুত রূপান্তরের ফলে যেহেতু আচার অনুষ্ঠানের আর ধ্যানধারণার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন ঘটেছিল এবং তিনি ঠিকই অনুমান করেছিলেন : ‘ভবিষ্যতে আমাদের সংস্কৃতির অনেক নিদর্শন ইতিহাস রচনার জন্য আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেটুকু যাবে তার মধ্যে কৃত্রিম ও বিকৃত নিদর্শনই থাকবে বেশি। এই অনুসন্ধান ও অনুশীলনের আশু আবশ্যকতা তাই এত বেশি’। একথা স্বীকার না করে উপায় নেই যে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি-তে এমন অনেক সংস্কৃতির নিদর্শনের বিবরণ রয়েছে যা আজকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না এবং যার জন্য আমাদের ওই গ্রন্থেই বার বার ফিরে যেতে হবে।৩. ঐতিহাসিক সমাজতত্ত্ব

পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি-র কাজ শেষ হবার পর বিনয় ঘোষ যে বিষয়ে অধিকতর মনোনিবেশ করেন তাকে ঐতিহাসিক সমাজতত্ত্ব (historical sociology) বলা যেতে পারে। ঐতিহাসিক সমাজতত্ত্বে কাজ করার জন্য বিনয় ঘোষের চেয়ে উপযুক্ত গবেষক ওইসময় আর কেউ ছিলেন বলে আমার মনে হয় না। ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে উনিশ শতকের বাংলার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বিনয় ঘোষ বিভিন্নভাবে করেছেন এবং বিভিন্ন পদ্ধতির সাহায্যে করেছেন। যে-কোনো সমাজতাত্ত্বিক যখন সমাজের বিশ্লেষণ করেন তখন স্বাভাবিকভাবে সেই সমাজের পরিবর্তনের প্রশ্নও এসে যায়। অথচ গ্রাম বা অঞ্চলে সরজমিনে অনুসন্ধান করে সেই পরিবর্তনের চেহারা সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করা অসম্ভব। কারণ আমরা গ্রাম বা অন্য কোনো সামাজিক বস্তু কিছু সময়ের জন্য অনুসন্ধান করি, যার থেকে গত পাঁচ-দশ-পনেরো বছরের পরিবর্তনের ধারা বোঝা হয়তো সম্ভব, কিন্তু একশো বছর আগের নয়। অথচ আজকের ভারতবর্ষের সমাজকে বুঝতে আঠারো বা উনিশ শতকের সমাজের চেহারা শুধুমাত্র ঐতিহাসিকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেই চলবে না বরং ওই ঐতিহাসিক তথ্যের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। এই ধরনের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের উদাহরণ আমাদের দেশে খুব বেশি নেই১১ এবং বিনয় ঘোষ এই বিষয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন।

আগেই বলেছি, বিনয় ঘোষ বিভিন্ন পদ্ধতির সাহায্যে বিভিন্নভাবে উনিশ শতকের বাংলার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করতে আরম্ভ করেছিলেন এবং স্বাভাবিকভাবেই তিনি সব বিষয়েই বিস্তারিত তথ্য হয়তো সংগ্রহ করতে পারেননি অথবা খুব গভীর বিশ্লেষণে যেতে পারেননি। অনেক লেখা পড়ে মনে হয় কয়েকটি সরু-মোটা আঁচড়ে ভবিষ্যৎ গবেষকদের জন্য একটা খসড়া করে দিয়ে গেছেন যেন। অবশ্য তাতে কোনো ক্ষতি নেই, যদি সেই খসড়া ভবিষ্যতে গবেষকদের উৎসাহিত করে। আমি কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝাবার চেষ্টা করেছি। কুলপঞ্জির সাহায্য ঐতিহাসিকরা অনেক সময়ই নিয়ে থাকেন এবং ইতিহাস রচনায় কুলপঞ্জি ব্যবহারের নিদর্শন আছে অনেক। কিন্তু ওই একই কুলপঞ্জি সমাজতাত্ত্বিকরা আবার ভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারেন। এই বিষয়ে বাংলাদেশে পথিকৃৎ ছিলেন দীনেশচন্দ্র ভট্টাচার্য এবং বিনয় ঘোষ তাঁর কাছ থেকেই কুলপঞ্জির সামাজিক উপকরণগুলি সংগ্রহ করেছিলেন।১২ কুলপঞ্জি যেমন আমাদের জানাতে পারে কুলের ভাঙা-গড়া, নতুন-কুলের উদ্ভব, এক কুলের সামাজিক এবং বৈবাহিক সম্পর্কের রকমফের, ঠিক একই সঙ্গে সমাজের ভাঙা-গড়ার একটা ইঙ্গিতও আমাদের দিতে পারে। বিনয় ঘোষ যেমন লিখেছেন : ‘কুলের অন্ত নেই, দোষেরও অন্ত নেই। ‘এরিথমেটিক্যাল’ গতিতে কুলবন্ধনের ফলে কতকটা যেন ‘জিওমেট্রিকাল’ গতিতে দোষবৃদ্ধি হতে পারে। কলু দোষ, কোচ দোষ, হলান্তক দোষ, হেড়া দোষ, রজক দোষ, বেড়ুয়া হাড়িদোষ, যবন দোষ, বিপর্যয় দোষ, বলাৎকর দোষ, ত্যাজ্যপুত্র দোষ, অন্যপূর্বা দোষ, কন্যাবহির্গম দোষ ইত্যাদি সামাজিক দোষের তালিকা যা কুলগ্রন্থে পাওয়া যায়, তা থেকে সামাজিক ভাঙনের চিত্র চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।’১৩

ওই একই কুলপঞ্জি থেকে আমরা তেরোদিনের-বালিকা বিবাহ, ‘অন্যপূর্বা’ বিবাহ অথবা বিমাতা বিবাহ, এমনকী বিধবা বিবাহের নিদর্শন পাই। বিভিন্ন কুলগ্রন্থ ঠিকমতো অনুধাবন করলে পরিবার, তার গঠন ও পরিবর্তন সম্বন্ধে আমাদের ধারণা আরও সুস্পষ্ট হতে পারে। বিনয় ঘোষ সমাজের ভাঙনের প্রকৃতি দেখাতে কুলগ্রন্থের ব্যবহার করেছেন, কিন্তু আমরা বিভিন্নভাবে এই গ্রন্থগুলির ব্যবহার করতে পারি। আমরা যদি শুধু বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন দোষের একটা তালিকা প্রস্তুত করতে পারি বা বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম দোষ কী ছিল তার একটা তালিকা করতে পারি তাহলেও একটা মূল্যবান কাজ হয়। এই কুলগ্রন্থের সাহায্যে আমরা সমাজের জাতিগত স্তরবিন্যাস, বিনিময় (exchange), বিবাহ পদ্ধতির পরিবর্তন এবং সাধারণ পরিবর্তনের ধারা সম্বন্ধে অনেক মূল্যবান তথ্য পেতে পারি। কুলপঞ্জি থেকে সাহায্য নেবার কারণ হিসেবে বিনয় ঘোষ লিখেছেন : ‘সামাজিক ইতিহাসবিদরা বলেন যে পারিবারিক ইতিহাসই সামাজিক ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপকরণ এবং এই দিক দিয়ে বিচার করলে, বহু মিথ্যা অভিভাষণ কল্পনা ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও, আমাদের কুলগ্রন্থের মধ্যে যাচাই করে গ্রহণ করতে পারলে, বাংলা সামাজিক ইতিহাসের বিচিত্র উপকরণের সন্ধান পাওয়া যায়’।১৪ শুধুমাত্র সামাজিক ইতিহাসের উপকরণ হিসাবে নয়, সমাজবিজ্ঞানের নানাবিধ তত্ত্বের সাহায্যে আমরা যে এই কুলগ্রন্থগুলি বিচার করতে পারি তার ইঙ্গিতও বিনয় ঘোষের লেখায় পাওয়া যায়।

কুলগ্রন্থ ছাড়া ঐতিহাসিক সমাজতাত্ত্বিকরা ব্যবহার করতে পারেন আত্মজীবনী, স্মৃতিচারণ, জীবনবৃত্তান্ত, চিঠিপত্র, সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর এইসব। এবং বিনয় ঘোষ সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের জন্য এই সব ক-টি উপাদানই ব্যবহার করেছেন। অনেক সময় শুধুমাত্র তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার চেয়ে এই ধরনের উপাদান আরও বেশি সার্থকভাবে অবস্থা বোঝাতে সক্ষম হয়। বিনয় ঘোষের বিভিন্ন রচনায় এইরকম অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। আমি একটিমাত্র এখানে উদ্ধৃত করছি। বহুবিবাহের অন্যতম একটি কারণ ছিল অর্থনৈতিক এবং সেটা বোঝাতে নীচে উদ্ধৃত অংশটির চেয়ে সার্থক উদ্ধৃতি বোধহয় আর নেই : ‘৺পিতাঠাকুর মহাশয়, আমাকে অতি শৈশবাবস্থায় রাখিয়া স্বর্গারোহণ করেন। তখন পিতৃব্য . . . মহাশয়ই আমার অভিভাবক ছিলেন-দরিদ্রতাবশতঃ আমাকে অতি অল্পকাল মধ্যেই তিনি ৮টি বিবাহ করান। আমি বাল্যকাল হইতেই বহুবিবাহের প্রতি বিদ্বেষী ছিলাম, সুতরাং সম্বন্ধ নিয়া ঘটক আসিলেই নানাস্থানে পলাইয়া যাইতাম। বহুবিবাহে সম্মতি থাকিলে আমাকে বোধহয় শতাধিক রমণীর পাণিগ্রহণ করিতে হইত। অভিভাবক মহাশয়, প্রতিকূলমতি দেখিয়া, প্রায় তিনশত টাকা ঋণভার অর্পণপূর্ব্বক আমাকে পৃথগন্ন করিয়া দেন। তখন আমার বিদ্যাবুদ্ধির অথবা এরূপ কোন ক্ষমতা ছিল না যে ঐ ঋণ পরিশোধ বা পরিজন সকলের ভরণপোষণ করিতে পারি। সুতরাং অনন্যোপায় হইয়া আরও ছয়টি পরিণয় স্বীকার করিতে হইল।’১৫ সমাজতাত্ত্বিকদের জন্য এই ধরনের উপাদানের অভাব নেই, অথচ এগুলোর সার্থক ব্যবহার করেছেন মাত্র বিনয় ঘোষ তাঁর বিশেষ সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য। মৃত্যুর আগেও তিনি বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ব্যক্তির রচিত আত্মচরিত সংগ্রহ করেছিলেন মুসলমান বিদ্বৎসমাজ সম্বন্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনার জন্য। ঠিক এই একইভাবে আমরা যদি একটি বিশেষ শ্রেণির বা সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের পারিবারিক ইতিহাস সংগ্রহ করতে পারি তাহলে তার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সমাজতাত্ত্বিক কাজ করা যেতে পারে। উনিশ শতকের বাংলায় কুলকৌলীন্যের চেয়ে বিত্তকৌলীন্য যে সমাজে বড়ো হয়ে উঠল তা দেখাতে গিয়ে তিনি কলকাতায় কিছু পরিবারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন। ওই একই সঙ্গে উনি লিখেছেন : ‘পাশ্চাত্ত্য সমাজবিজ্ঞানীরা যেরকম social register তৈরি করেছেন, আমাদের দেশের প্রত্যেক পরিবারের ইতিহাস অনুসন্ধান করে যদি সেরকম কোনো রেজিস্টার তৈরি করা যেত . . . তাহলে এই সমাজচিত্র আরও অনেক পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠতো চোখের সামনে।’১৬

বিনয় ঘোষ নিজেই ঠিক এই ধরনের একটি কাজ আরম্ভ করেছিলেন। কলিকাতার পারিবারিক ইতিহাস শীর্ষক একটি গ্রন্থে মল্লিক-লাহা-ঠাকুর-দেব ইত্যাদি প্রাচীন পারিবারিক সামাজিক পটভূমিতে ইতিহাস রচনার তাঁর একটি পরিকল্পনা ছিল। শুধুমাত্র কুলপঞ্জি বা জীবনী নয়, বিভিন্ন সভাসমিতির ইতিহাসও সমাজতাত্ত্বিকদের সেই সমাজের গঠন ও গতি বুঝতে সাহায্য করে। এই প্রসঙ্গে বিনয় ঘোষের ‘বাংলার বিদ্বৎসভা ও বাঙালী বুদ্ধিজীবী’১৭ প্রবন্ধটি খুবই মূল্যবান। বর্তমান যুগে সভাসমিতির সমাজতত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, যেকোনো সমাজে সভাসমিতি হঠাৎ গজিয়ে ওঠার পেছনে সামাজিক ও ঐতিহাসিক কারণ থাকে। বিভিন্ন গোষ্ঠী বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সভাসমিতি স্থাপন করে, যেমন ব্যবসায়িক গোষ্ঠী, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক, কলাকুশলী গোষ্ঠী ইত্যাদি। কিছু সভাসমিতির জীবন অনেকদিন, কিছু সভাসমিতি আবার যেমন হঠাৎ গজিয়ে ওঠে তেমনি আবার হঠাৎ মিলিয়ে যায়। এই সবকিছুরই নানাবিধ সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আছে। তবে তা বিদেশে আধুনিক সভাসমিতির অনুসন্ধানের ভিত্তিতে রচিত। আমাদের দেশে সভাসমিতির সমাজতত্ত্ব নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি। বিনয় ঘোষ কেবলমাত্র উনিশ শতকের কলকাতার বিদ্বৎসভার ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে সভাসমিতির সমাজতত্ত্বের এই কাজের সূত্রপাত করে দিয়ে গেছেন। এই কাজকে আমরা নানাভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। যেমন, ১) শুধুমাত্র বিদ্বৎসভা নয়, উনিশ শতকে অন্যান্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর কী ধরনের সভাসমিতি ছিল, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল, কারা এই সভাসমিতির সদস্য ছিলেন, কোন সামাজিক-অর্থনৈতিক শ্রেণির সদস্য ছিলেন তাঁরা, নেতৃস্থানীয় কারা ছিলেন, কত বছর ধরে এইসব সভাসমিতি কার্যকরী ছিল এবং পরে তাদের কী হল-এইসব তথ্যের ভিত্তিতে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ সমাজচিত্র আঁকতে পারি। ২) আজকের দিনের সভাসমিতির উপর যদি ওই একই ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারি তাহলে সমাজের বিশেষ কয়েকটি গোষ্ঠীর পরিবর্তনের ধারা আমরা আরও ভালো বুঝতে পারি। ৩) আমরা একটি বা দু-টি সভাসমিতির প্রথম থেকে শেষ অবধি কী হল তার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করতে পারি। আমি ঐতিহাসিক সমাজতত্ত্বের তথ্য অনুসন্ধানের বিভিন্ন পদ্ধতির আলাদা আলাদাভাবে বিবরণ দিয়েছি, যদিও সমাজতাত্ত্বিকরা এইসমস্ত ধরনের তথ্য একসঙ্গে নিয়েই সাধারণত তাঁদের বিশ্লেষণ করে থাকেন। যেমন বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ গ্রন্থে বিনয় ঘোষ করেছেন। এই ধরনের জীবনীগ্রন্থ আমাদের দেশে খুব বেশি নেই অথচ সত্যিকারের সমাজতত্ত্বের জন্য এই ধরনের গ্রন্থের প্রয়োজনীয়তাই বেশি।

নাগরিক সমাজতত্ত্ব সম্বন্ধীয় বিনয় ঘোষের বেশ কিছু রচনা মেট্রোপলিটন মন মধ্যবিত্ত বিদ্রোহ গ্রন্থে আছে। যদিও এই গ্রন্থের বিভিন্ন প্রবন্ধে বিনয় ঘোষ কলকাতার বিভিন্ন নাগরিক সমস্যার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন, কিন্তু এইসব প্রবন্ধগুলি মূলত প্রতিবাদের প্রবন্ধ। উনি নিজেই লিখেছেন, এই প্রবন্ধগুলি যে সময় লেখা (১৯৬৪–৭১) তখন ‘লেখকের মন ও চিন্তাধারাও অনেক প্রশ্ন ও সমস্যার আঘাতে আলোড়িত। যেমন “আলিয়েনেশনে”র বা আত্মবিচ্ছিন্নতাবোধের সমস্যা, যা আমাদের সমাজেও আজ নিষ্ঠুর বাস্তব সত্য ও সমস্যা এবং যার প্রতিক্রিয়ার ধর্মীয় বিকৃতি, সাংস্কৃতিক বিকৃতি, ব্যক্তিচরিত্রের বিকৃতি আজ অতীব বিস্ময়কর। যেমন মধ্যবিত্তের সমস্যা, বিদ্রোহ ও বিপ্লবের প্রশ্ন ইত্যাদি। এবং কনজিউমারিজম-এর সমস্যা, যা সমাজের সুবিস্তৃত দরিদ্রের স্তরের উপরে স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত ও ধনিকদের ভোগবিলাসের এক পরমাশ্চর্য দৃশ্য। কোনো সমস্যার সমাধান অথবা কোনো প্রশ্নের উত্তর অথবা কোনো সারগর্ভ জ্ঞান দান করার জন্য লেখাগুলি লিখিনি।’১৮ প্রবন্ধগুলি পড়লেই বোঝা যায় এই বিভিন্ন বিকৃতি-ভোগবিলাস, এইসবের বিরুদ্ধে উনি তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। কথাটা পুনরাবৃত্তির মতো দাঁড়িয়ে গেলেও বলতে হয় ‘কলকাতার স্ট্রীট কর্ণার গ্যাং’, ‘কলকাতার মন’, ‘কলকাতার সমাজ’, ‘বিজ্ঞাপন ও মন’ প্রভৃতি প্রবন্ধে উনি নানারকম নতুন বিষয়ের সূত্রপাত করে দিয়ে গেছেন। এই গ্রন্থের বিভিন্ন দিক নিয়ে কিন্তু তথ্যের জন্য তাঁকে নির্ভর করতে হয়েছে বিদেশি গবেষণার উপর। দোষ বিনয় ঘোষের নয়। দোষ আমাদের দেশের সমাজবিজ্ঞানীদের, যাঁদের এইসব বিষয়ে কাজ করার উপায় থাকলেও কোনো ইচ্ছা নেই। এই সত্যটি বিনয় ঘোষ বহুদিন আগেই উপলব্ধি করেছিলেন। আজ থেকে সাঁইত্রিশ বছর আগে তিনি যখন উড়িষ্যার গ্রামাঞ্চলে ঘুরছিলেন তখন ওইখানে কিছু নতুন ধরনের বসতিবিন্যাস এবং সাংস্কৃতিক নিদর্শন লক্ষ করেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল ‘বেশ কিছুদিন উড়িষ্যার গ্রামে গ্রামে থাকি ও ঘুরি, লোকজনের সঙ্গে মিশি, আলাপ করি-এইসব মূল্যবান নিদর্শনগুলির বিস্তৃত বিবরণ সংগ্রহ করি, মনের আনন্দে কাজ করি। কিন্তু আগেই বলেছি, যাদের ইচ্ছা আছে তাদের উপায় নেই, আর যাদের উপায় আছে তাদের ইচ্ছা নেই। . . . সাধারণত মানুষের এত ইচ্ছা থাকাও অপরাধ’।১৯ আমাদের মনে রাখতে হবে বিনয় ঘোষের যতটা উপায় ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ তিনি করে গেছেন। এটাও মনে রাখতে হবে, ভারতে পঞ্চাশ-দশকে যখন লুই ডুমো, ডেভিড পোকোক২০ প্রভৃতি সমাজতাত্ত্বিকরা শুধু মুখেই ইতিহাস ও সমাজতত্ত্বের সংমিশ্রণের কথা বলছিলেন, তার আগেই বিনয় ঘোষ স্বাধীনভাবে এই বিষয়ে কাজ করে গিয়েছেন। এখনও বিনয় ঘোষের মতো ‘অপরাধী’ যাঁরা আছেন তাঁরা এই কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন বিভিন্ন দিকে। বিষয় আমাদের চোখের সামনেই ছড়িয়ে আছে।

টীকা ও সূত্রনির্দেশ

 ১. বিনয় ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, প্রথম খণ্ড (কলকাতা : প্রকাশ ভবন, দ্বিতীয় সংস্করণ : পরিবর্ধিত ও পরিবর্তিত, ১৯৭৬), পৃ. ৩৯–৪০।

 ২. বিনয় ঘোষ, অটোমেটিক জীবন ও সমাজ (কলকাতা : অয়ন, ১৯৭৮), পৃ. ২১–৩৯।

 ৩. পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, প্রথম খণ্ড, পৃ. ২।

 ৪. ওই, পৃ. ২৯–৩০।

 ৫. Claude Lévi-Strauss, Structural Anthropology (Harmondsworth : Penguin Books, 1968), পৃ. ২৩০।

 ৬. উৎসাহী পাঠকরা এই কয়েকটি বই দেখতে পারেন : Emmanuel Terray, Marxism and ‘Primitive’ Societies (New York : Monthly Review, 1972); এই বইটিতে দু-টি প্রবন্ধ আছে, প্রথমটি হল ‘Morgan and Contemporary Anthropology’, যাতে টেরে দেখাতে চেষ্টা করেছেন যে মর্গান-এর তত্ত্ব গঠনবাদীদের কাছাকাছি ছিল। দ্বিতীয় প্রবন্ধে-‘Historical Materialism and Segmentary Lineage Bared Societies’-টেরে গুরো-সমাজের উপর Claude Meillassoux যে গবেষণা করেছেন (Economic Anthropology of the Gouros) তার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। অন্য বইটি হল : Maurice Godelier, Perspectives in Marxist Anthropology (Cambridge : Cambridge University Press, 1977); এ ছাড়া গোডেলিয়ার-এর ‘Infrastructures, Societies and History’, Current Anthropology, 19(4), 1978, লেখা প্রবন্ধটি দেখতে পারেন; যাঁরা সংক্ষেপে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিকদের, এবং বিশেষ করে আধুনিক ব্রিটিশ নৃতাত্ত্বিকদের, তত্ত্ব সম্বন্ধে জানতে চান তাঁরা এই বইটি দেখতে পারেন : Adam Kuper, Anthropology and Anthropology : The British School, 1922–72 (Harmondsworth : Penguin Books, 1973).

 ৭. পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, প্রথম খণ্ড, পৃ. ৩১।

 ৮. ওই, পৃ. ৩১৫–১৬।

 ৯. অমলেন্দু মিত্র, রাঢ়ের সংস্কৃতি ও ধর্মঠাকুর (কলিকাতা : ফার্মা কে এল, ১৯৭২); এই বইয়ে লেখক বীরভূমের বিভিন্ন গ্রামের ধর্মপূজার বিবরণ সংগ্রহ করেছেন। শুধু বীরভূমেই যে কত ভিন্ন ভিন্ন নামে ধর্মঠাকুরকে ডাকা হয় এবং কত ভিন্ন ভিন্নভাবে পুজো করা হয় তার বিবরণ আছে এই বইয়ে। এ ছাড়া যাঁরা সংক্ষেপে ধর্মঠাকুরের উৎপত্তি ইত্যাদির ঐতিহাসিক বিবরণ পড়তে চান তাঁরা এই প্রবন্ধটি দেখতে পারেন : N N Bhattacharya, ‘The Cult and Rituals of Dharmathakur’, in D P Chattopadhyay (ed.), History and Society : Essays in Honour of Professor Niharranjan Roy (Calcutta : K P Bagchi, 1978).

 ১০. পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, প্রথম খণ্ড, পৃ. ৫০; আমরা দেখেছি যে নির্মলকুমার বসুও এই একইভাবে সামাজিক অনুসন্ধানের কাজ করেছিলেন। বিশেষ করে তাঁর হিন্দুসমাজের গড়ন (কলকাতা : বিশ্বভারতী গ্রন্থালয়, ১৯৫৬) বইয়ে তিনি ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব এইসব দিক থেকেই হিন্দু সমাজের আলোচনা করেছেন, সঙ্গে যোগ করেছেন নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার তথ্য।

 ১১. বিনয় ঘোষ তাঁর কলকাতা-বিষয়ক বইগুলিতেও ঐতিহাসিক সমাজতত্ত্বের ব্যবহার করেছেন, যেমন, কলকাতা কালচার (১৯৫৩), টাউন কলকাতার কড়চা (১৯৬১), সুতানটি সমাচার (১৯৬২) প্রভৃতি। এই তিনটি বই একত্রে পরবর্তী সময়ে কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত (কলকাতা : বাকসাহিত্য, ১৯৭৫) নামে প্রকাশিত হয়।

 ১২. বিনয় ঘোষ, ‘ভূমিকা’, বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ, প্রথম খণ্ড (কলিকাতা : বেঙ্গল পাবলিশার্স, ১৩৬৪), পৃ. ৯৭। এই গ্রন্থের পরিবর্তিত সংস্করণ : প্রথম খণ্ড, ১৩৭১; দ্বিতীয় খণ্ড একত্রে : (কলিকাতা : ওরিয়েন্ট লংম্যান, ১৯৭৩)।

 ১৩. ওই, পৃ. ৯২–৯৩।

 ১৪. ওই, পৃ. ৯৪–৯৫।

 ১৫. ওই, পৃ. ৯৯। শ্রীযুক্ত রাসবিহারী মুখোপাধ্যায় সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত (কলিকাতা : ১৮৮১), পৃ. ৪–৫।

 ১৬. বিনয় ঘোষ, বাংলার বিদ্বৎসমাজ (কলকাতা : প্রকাশ ভবন, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৭৮), পৃ. ১৫।

 ১৭. ওই, পৃ. ৫৭–১২৮।

 ১৮. বিনয় ঘোষ, মেট্রোপলিটান মন মধ্যবিত্ত বিদ্রোহ (কলিকাতা : ওরিয়েন্ট লংম্যান, ১৯৭৩), পৃ. ২২৯।

 ১৯. বিনয় ঘোষ, বাংলার লোকসংস্কৃতির সমাজতত্ত্ব (কলকাতা : অরুণা প্রকাশনী, ১৯৮৬), পৃ. ১৬৯।

 ২০. Louis Dumont and David Pocock, ‘For a Sociology of India’, Contributions to Indian Sociology, 1(1), 1957; এবং এই পত্রিকার অন্য প্রাসঙ্গিক সংখ্যাগুলি হল : নম্বর ৩, ১৯৫৯; নম্বর ৫, ১৯৬১; নম্বর ৯, ১৯৬৬।

***

বিনয় ঘোষের মৃত্যুর ঠিক পরেই লেখা এই প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল লোকলৌকিক, ১(৪), ১৯৮০-র এক বিশেষ সংখ্যায়। সেই সময়কার ভাবনাচিন্তার নিদর্শন হিসেবে প্রবন্ধটিতে আর কোনো পরিবর্তন না করে সেইরকমই রেখে দিলাম।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন