নৃতত্ত্ব ও ভ্রমণসাহিত্য : সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

প্রদীপ বসু

নৃতত্ত্ব ও ভ্রমণসাহিত্য : সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

‘তিনি যেন একটি নূতনসৃষ্ট জগতের মধ্যে
একজোড়া নূতন চক্ষু লইয়া ভ্রমণ করিতেছেন।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর১

 ১. পালামৌ  : ফিরে দেখা

সঞ্জীবচন্দ্র রচিত পালামৌ নিয়ে এর আগেও আমি লিখেছি। সেই লেখায় বলতে চেয়েছিলাম বাংলা ভাষায় নৃতত্ত্বচর্চার একজন পূর্বসূরি ছিলেন সঞ্জীবচন্দ্র এবং এর একটি মূল কারণ হল ভ্রমণসাহিত্য ও নৃতত্ত্বের সীমারেখা অত্যন্ত ক্ষীণ। তা ছাড়া সঞ্জীবচন্দ্র যে নৃতত্ত্ব সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ ছিলেন না, তা তাঁর পালামৌ মনোযোগ দিয়ে পড়লেও বোঝা যায়। এই লেখা লিখতে আবার উৎসাহ হল সম্প্রতি সত্যজিৎ চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রকাশিত সঞ্জীবচন্দ্রের পালামৌ বইটি আবার পড়ে। বইটিতে সম্পাদক সঞ্জীবচন্দ্রের মূল রচনা ছাড়া আরও কিছু লেখা সংকলিত করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘সঞ্জীবচন্দ্র : পালামৌ’, বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা সঞ্জীব-জীবনী, চন্দ্রনাথ বসুর এই গ্রন্থ সম্পর্কিত রচনা, সঙ্গে আছে সম্পাদকের এক দীর্ঘ মূল্যবান ভূমিকা। বস্তুত এই বইয়ের সব ক-টি লেখা পড়েই আমার আবার পালামৌ সম্পর্কে নতুন করে আলোচনা করার আগ্রহ জন্মাল। এই লেখার অন্য কারণ হিসেবে সঞ্জীবচন্দ্রের পালামৌ থেকেই বরং একটি উদ্ধৃতি দিই : ‘বহুকাল পর পালামৌ সম্বন্ধে দুইটা কথা লিখিতে বসিয়াছি। লিখিবার একটা ওজর আছে। এক সময়ে একজন বধির ব্রাহ্মণ আমার প্রতিবাসী ছিলেন, অনবরত গল্প করা তাঁহার রোগ ছিল। যেখানে কেহ একা আছে দেখিতেন, সেইখানে গিয়া গল্প আরম্ভ করিতেন; কেহ তাঁহার গল্প শুনিত না; শুনিবারও কিছু তাহাতে থাকিত না। অথচ তাঁহার স্থির বিশ্বাস ছিল যে, সকলেই তাঁহার গল্প শুনিতে আগ্রহ করে। একবার একজন শ্রোতা রাগ করিয়া বলিয়াছিলেন, “আর তোমার গল্প ভাল লাগে না, তুমি চুপ কর।” কালা ঠাকুর উত্তর করিয়াছিলেন, “তা কেমন করিয়া হবে, এখনও যে এ গল্পের অনেক বাকি।” আমারও সেই ওজর। যদি কেহ পালামৌ [সম্পর্কে আমার এই প্রবন্ধ] পড়িতে অনিচ্ছু হন, আমি বলিব যে, “তা কেমন করে হবে, এখনও যে পালামৌর অনেক কথা বাকি।”‘

২. ভ্রমণ : পুরাতন

আজ থেকে প্রায় দু-শো চল্লিশ বছর আগে বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম ভ্রমণমূলক গ্রন্থ তীর্থ-মঙ্গল লেখা হয়েছিল তীর্থ ভ্রমণকে উপলক্ষ্য করে। লিখেছিলেন কবি বিজয়রাম সেন। ইংরেজি ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ যখন লেখাটি বই আকারে প্রকাশিত করে, তখন এই বইয়ের ভূমিকায় নগেন্দ্রনাথ বসু লিখেছিলেন : ‘এখনকার ইংরাজি শিক্ষিত জন-সাধারণের বিশ্বাস যে, ইংরেজি ভ্রমণ-কাহিনী (Travels) পাঠ করিয়া তাহারই আদর্শে বাঙ্গালায় ভ্রমণ-কাহিনী লিখিবার চেষ্টা হইয়াছে। কিন্তু প্রাচীন বাঙ্গালা সাহিত্যের আলোচনায় বুঝিয়াছি যে তাঁহাদের এই বিশ্বাস অমূলক। অবশ্য এখনকার মত রেলে চড়িয়া ১৫ দিনের মধ্যে সমস্ত ভারত ঘুরিয়া আসিয়া লম্বাচৌড়া “ভারত ভ্রমণ” লেখা তখনকার লোকের সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল-এখনকার মত তখনকার লোকে স্বাস্থ্য-রক্ষার মুখ্য উদ্দেশ্যে দেশ-ভ্রমণে বাহির হইতেন না, কিছুকাল পূর্ব্বেও এদেশে হাওয়া-খাওয়ার কথা উঠে নাই। তখনকার লোকে সাধারণতঃ ধর্ম্মভীরু বা ধর্ম্মপ্রাণ ছিলেন তাঁহারা জানিতেন যে কাজে ধর্ম্ম আছে-সেই কাজে শরীর ও মনের উন্নতি বা স্বাস্থ্যরক্ষা হইবে। ধর্ম্মোদ্দেশেই তাঁহারা দেশভ্রমণে বাহির হইতেন। পুণ্যলাভ হইবে ভাবিয়াই তাঁহারা বহুকষ্ট স্বীকার করিয়া বহুদূর তীর্থস্থানে যাইতেন ও তীর্থবাস করিয়া শারীরিক ও মানসিক উভয় উন্নতি লাভ করিয়া ফিরিতেন। . . . আমাদের আলোচ্য তীর্থ-মঙ্গলও সেইরূপ উদ্দেশ্যেই লিখিত হইয়াছে।’ একথা অবশ্য সত্য যে, আমাদের দেশেও এক নিজস্ব ভ্রমণবৃত্তান্ত ছিল, বাংলা ভাষায় লেখা কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যজীবনী কাব্যে ভ্রমণের অনেক কথাই আছে। কিন্তু নগেন্দ্রনাথ আরও একটি কথা বলেছেন, এই ভ্রমণ ছিল ধর্মকে কেন্দ্র করে, এর উদ্দেশ্য ছিল পুণ্যলাভ। পরবর্তী সময়ে ইংরেজি ভ্রমণসাহিত্যের প্রেরণায় বা অনুকরণে যে ভ্রমণবৃত্তান্ত রচিত হয় তার গোত্র ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। এই প্রসঙ্গে বলি ভ্রমণ মানেই কিন্তু গতিশীলতা নয়, বরং গতিহীনতাও হতে পারে। তীর্থ-মঙ্গল রচনাকালে মানুষের সমাজ, জীবন, পরিচিতির কয়েকটি স্থির বিন্দু ছিল, কিছু নির্দিষ্টতা বা স্থায়িত্ব ছিল। গৃহের যে নির্দিষ্ট পরিবেশ থেকে মানুষ পৃথিবীকে দেখে, সেই পৃথিবীর অবস্থান কিন্তু ওই নির্দিষ্ট বিন্দুকে অবলম্বন করেই। অতএব তীর্থ-মঙ্গল-এর পরিভ্রমণ, দৈনন্দিন জীবনের বাইরে পুণ্যস্থানের সন্ধান, একভাবে জীবনের নির্দিষ্টতার দিকেই ইঙ্গিত করতে পারে। তীর্থ ভ্রমণের এই বিশেষ, ব্যতিক্রমী, পৃথক, অভিজ্ঞতা বস্তুত দৈনন্দিনের আইডেন্টিটিকেই বৈধতা দেয়, নির্দিষ্টতাগুলিকেই শক্তিশালী করে।

কর্তা ঘোষাল মশাই ফিরে এলেন, ঘাটে স্ত্রীলোকেরা উলুধ্বনি করল, কর্তা বাড়ি গিয়ে ইষ্টদেবতাকে প্রণাম করলেন, তীর্থ-সামগ্রী সব নজর করে বাড়ির ভেতর পাঠালেন, তারপর ঘোষাল-তনয় ‘গঙ্গার দ্বারে’ অর্থাৎ ভূকৈলাসে নিজের বাড়ির নীচে তীর্থ শ্রাদ্ধা করলেন, স্নান, তর্পণ, পূজা ইত্যাদি করে।

দানোৎসর্গ কর‍্যা ঘোষাল করিলা পার্ব্বণ।
কর্ম্ম সাঙ্গ করি কতো কৈলা বিতরণ।।
মহাশয় চলি গেলা বাটীর ভিতর।
বিদায় হইয়া যাত্রী গেল নিজ ঘর।।
শিবশঙ্কর বিদ্যাবাগীশ সেন বিজয়রাম।
কেবল থাকিলা দুঁহে ভাব্যা পরিণাম।।৭

৩. ভ্রমণ : নূতন

আধুনিক ভ্রমণকাহিনির কিন্তু ধর্ম বা পুণ্যলাভের সঙ্গে কোনো সংশ্রব নেই। এই ভ্রমণকাহিনির একদিকে যেমন আছে নিজের কথা, অন্যদিকে তেমনি স্থান, প্রকৃতি, পরিবেশ, আবহাওয়া, গাছগাছালি, মানুষজন ও তাদের জীবন, সমাজ, সংস্কৃতির বিবরণ। সঞ্জীবচন্দ্র পালামৌ এই গোত্রের ভ্রমণকাহিনি। এই ধরনের ভ্রমণকাহিনির একদম প্রথম দিকের দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা ঈশ্বর গুপ্তের ‘ভ্রমণকারি বন্ধুর পত্র’ রচনাটির উল্লেখ করতে পারি, যা ধারাবাহিকভাবে ১২৬১ বঙ্গাব্দে সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই ভ্রমণবৃত্তান্তে তিনি রাজসাহী, ফরিদপুর, পাবনা, ভুলুয়া, সুধারাম, চট্টগ্রাম, ত্রিপুরা, বিক্রমপুর, বরিশাল প্রভৃতি স্থানগুলিতে তাঁর ভ্রমণের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। যে যে বিষয়ের বিবরণ তাঁর এই ভ্রমণবৃত্তান্তে আছে তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দেখলে পাঠকের মনে হবে তিনি বোধহয় জেলার গেজেটিয়ার পাঠ করছেন। বিষয়গুলি এইরকম : জেলার সীমা, পরগনা ও জমিদারদের পরিচয়, কৃষিকাজ ও কৃষিপণ্য, জেলার ‘ভদ্রগ্রাম’ যেখানে ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য প্রভৃতি জাতির বাস, বাণিজ্য, নদনদী, খালবিল, সদরঘাট, মেলা ও উৎসব, আহার্য দ্রব্য, ভূমিজ দ্রব্য, শিল্পকর্ম, জলবায়ু, দেবালয়, বাজার ইত্যাদি। একই সঙ্গে তিনি বিশেষ বিশেষ অঞ্চলের আচার-ব্যবহার, দেশীয় জমিদারগণের ব্যবহার, রন্ধন ভোজনের ধারা, স্ত্রী-পুরুষের বেশভূষা, বিবাহাদি ক্রিয়া ও আমোদপ্রমোদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন। ভ্রমণকাহিনির সঙ্গে এইখানেই নৃতত্ত্বের এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

ভ্রমণকাহিনির দু-টি ভাগ থাকে, একটি হল ব্যক্তিগত আখ্যান, যেখানে লেখক তাঁর ব্যক্তিগত কাহিনি বলেন, কীভাবে গেলাম, পথে কীরকম বিপদে পড়তে হয়েছিল, কীরকম ভয় পেয়েছিলাম, কীভাবে উদ্ধার পেলাম, ইত্যাদি। অন্য অংশটি হল নৈর্ব্যক্তিক বিবরণ বা বস্তুগত বিবরণ। প্রথম পুরুষের ব্যক্তিগত আখ্যান ও সাধারণীকৃত নৈর্ব্যক্তিক বিবরণ, বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ও নির্বিশেষ বর্ণনা, এর যুগ্ম প্রয়োগেই সৃষ্টি হয় ভ্রমণকাহিনি। প্রথমে পালামৌ থেকে ব্যক্তিগত আখ্যানের নমুনা দিই : ‘যখন পালামৌ আমার যাওয়া একান্ত স্থির হইল, তখন জানি না যে সেস্থান কোন দিকে, কতদূরে। অতএব ম্যাপ দেখিয়া পথ স্থির করিলাম। হাজারিবাগ হইয়া যাইতে হইবে এই বিবেচনায় ইনলান্ড ট্রাঞ্জিট কোম্পানীর . . . ডাকগাড়ী ভাড়া করিয়া রাত্রি দেড়প্রহরের সময় রানীগঞ্জ হইতে যাত্রা করিলাম। প্রাতে বরাকর নদীর পূর্ব্বপারে গাড়ী থামিল। নদী অতি ক্ষুদ্র, তৎকালে অল্পমাত্র জল ছিল, সকলেই হাঁটিয়া পার হইতেছে, গাড়ি ঠেলিয়া পার করিতে হইবে, অতএব গাড়ওয়ান কুলি ডাকিতে গেল।’ এবার নৈর্ব্যক্তিক বর্ণনার একটি দৃষ্টান্ত দিই : কোল যুবতীদের সম্পর্কে লিখতে গিয়ে সঞ্জীবচন্দ্র জানাচ্ছেন যে এরা ‘সকলেই আবলুসের মত কাল, সকলেই যুবতী, সকলের কটিদেশে একখানি করিয়া ক্ষুদ্র কাপড় জড়ান; সকলেরই কক্ষ, বক্ষ আবরণশূন্য। সেই নিরাবৃত বক্ষে পুতির সাতনরী, তাহাতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আরসী ঝুলিতেছে; কর্ণে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বনফুল, মাথায় বড় বড় বনফুল।’১০ ভ্রমণকাহিনিতে এই দু-টি আলাদা ডিসকোর্স পৃথক হিসেবে চেনা যায়, যদিও এখানে আখ্যানভাগেরই প্রাধান্য থাকে। অনেক সময় আখ্যান ও বর্ণনা পরস্পরকে জড়িয়ে চলতে থাকে, যেমন : ‘তাহার পর আবার কতকদূর গিয়া দেখিলাম পথশ্রান্তা যুবতীরা মদের ভাঁটিতে বসিয়া মদ্যপান করিতেছে। গ্রাম-মধ্যে যে যুবতীদের দেখিয়া আসিয়াছি ইহারাও আকারে অলঙ্কারে অবিকল সেইরূপ, যেন তাহারাই আসিয়া বসিয়াছে। যুবতীরা উভয় জানুদ্বারা ভূমিস্পর্শ করিয়া দুই হস্তে শালপত্রের পাত্র ধরিয়া মদ্যপান করিতেছে, আর ঈষৎ হাস্যবদনে সঙ্গীদের দেখিতেছে। জানুস্পর্শ করিয়া উপবেশন করা কোলজাতির স্ত্রীলোকদিগের রীতি; বোধ হয় যেন সাঁওতালদিগেরও এই রীতি দেখিয়াছি। বনের মধ্যে যেখানে সেখানে মদের ভাঁটি দেখিলাম, কিন্তু বাঙ্গালায় ভাঁটিখানায় যেরূপ মাতাল দেখা যায়, পালামৌ পরগণায় কোন ভাঁটিখানায় তাহা দেখিলাম না। আমি পরে তাহাদের আহার ব্যবহার সকলই দেখিতাম, কিছুই তাহারা আমার নিকট গোপন করিত না, কিন্তু কখন স্ত্রীলোকদের মাতাল হইতে দেখি নাই, অথচ তাহারা পানকুন্ঠ নহে।’১১ ভ্রমণকাহিনির এই আখ্যান-বর্ণনার দ্বৈততা আজও খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। প্রথমে আখ্যান, পরে বর্ণনা, এই কিন্তু আজকের ভ্রমণকাহিনিরও রীতি। আধুনিক নৃতত্ত্ব এই পরম্পরার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত, নৃতত্ত্ব রচনায়ও একটি ব্যক্তিগত আখ্যানভাগ থাকে ও আর একটি বর্ণনাভাগ থাকে। তফাত হল নৃতাত্ত্বিক রচনায় বর্ণনা মুখ্য, আখ্যান গৌণ, বর্ণনা এই রচনায় আখ্যানকে তার অধীন রাখে।

এই প্রসঙ্গে নৃতাত্ত্বিক রচনার আরও একটি দাবির কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। নৃতাত্ত্বিক সব সময়েই দাবি করেন যে তাঁর বর্ণনা পক্ষপাতশূন্য, বস্তুগত ও যথার্থ। রবীন্দ্রনাথের যে উদ্ধৃতি দিয়ে এই রচনায় আরম্ভ করেছিলাম, যে উক্তি রবীন্দ্রনাথ পালামৌ সম্পর্কে করেছিলেন, তাই হল একজন নৃতাত্ত্বিকের স্বপ্ন। নৃতাত্ত্বিকও দাবি করেন বা করতে চান, যে তিনি একজোড়া ‘নতুন চোখ’ দিয়েই তাঁর অভীষ্ট মানুষজন, সমাজ-সংস্কৃতি বিচার করেছেন। নতুন চোখ এই কারণে যে, নৃতাত্ত্বিক নিজেও এক নির্দিষ্ট সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে এসেছেন, তাঁর দেখার মধ্যে এই পরিপ্রেক্ষিতের প্রভাব সম্পূর্ণভাবে বিলোপ করা প্রায় অসম্ভব। সেইজন্য অনেকে নৃতত্ত্বকে সংস্কৃতির সংঘাত হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে একদিকে রয়েছে নৃতাত্ত্বিকের নিজের সংস্কৃতি, অন্যদিকে রয়েছে যে-মানুষদের তিনি পর্যবেক্ষণ করছেন তাদের সংস্কৃতি। অথচ নৃতত্ত্বকে বিজ্ঞান হয়ে উঠতে হবে, তার বর্ণনা হবে বিজ্ঞানের বর্ণনার মতো, তাই ‘নূতন সৃষ্টি জগতের মধ্যে একজোড়া নূতন চক্ষু লইয়া ভ্রমণ’ করা যতই ইউটোপিয়া হোক না কেন, নৃতাত্ত্বিককে কিন্তু তাঁর মানস-নিরপেক্ষতার দাবি করে যেতেই হবে।

৪. ভ্রমণ : স্মৃতিচারণ

সাধারণত ভ্রমণ ও ভ্রমণবৃত্তান্ত লেখার মধ্যে সময়ের ব্যবধান খুব কম থাকে। অনেক ভ্রমণবৃত্তান্ত আমরা জানি যা ডায়েরি বা চিঠিপত্রের আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ঈশ্বর গুপ্ত তাঁর ভ্রমণকাহিনি পত্রের আকারে লিখেছেন। ভ্রমণবৃত্তান্তের এই তাৎক্ষণিকতার একটি কারণ হল ভ্রমণসাহিত্য পাঠকের পক্ষে একটা গাইডবুকও বটে। পুরোনো গাইডবুক ভ্রমণরসিকের কোনো কাজে লাগে না। এ ব্যাপারে সঞ্জীবচন্দ্রের পালামৌ কিন্তু পৃথক। পালামৌ ভ্রমণকাহিনি, আবার স্মৃতিচারণও বটে। এই কাহিনির প্রথমেই সঞ্জীবচন্দ্র লিখেছেন : ‘বহুকাল হইল আমি একবার পালামৌ প্রদেশে গিয়েছিলাম, প্রত্যাগমন করিলে পর সেই অঞ্চলের বৃত্তান্ত লিখিবার নিমিত্ত দুই একজন বন্ধুবান্ধব আমাকে পুনঃপুনঃ অনুরোধ করিতেন, আমি তখন তাঁহাদের উপহাস করিতাম। এক্ষণে আমায় কেহ অনুরোধ করে না, অথচ আমি সেই বৃত্তান্ত লিখিতে বসিয়াছি।’১২ পালামৌ-এর মানুষজন, প্রকৃতির মতো যুবা সঞ্জীবচন্দ্রও এই কাহিনির একজন চরিত্র, যাকে নিয়ে লেখক হাস্য পরিহাস করেছেন, অনেক সময় সমালোচনাও করেছেন। উপরোক্ত উদ্ধৃতির ঠিক পরেই তিনি লিখেছেন : ‘অনেকদিনের কথা লিখিতে বসিয়াছি, সকল স্মরণ হয় না। পূর্ব্বে লিখিলে যাহা লিখিতাম, এক্ষণে যে তাহাই লিখিতেছি এমত নহে। পূর্ব্বে সেই সকল নির্জ্জন পর্ব্বত, কুসুমিত কানন প্রভৃতি যে চক্ষে দেখিয়াছিলাম, সে চক্ষু আর নাই।’১৩ বস্তুত যিনি পালামৌ ভ্রমণ করেছিলেন, আর যিনি সেই ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখছেন তাঁরা দু-জনে যেন আলাদা মানুষ। সঞ্জীবচন্দ্র এক নির্বিকার, নির্লিপ্ত দৃষ্টি দিয়ে সেই মানুষটিরও কথা বলছেন যিনি পালামৌ ভ্রমণ করেছিলেন।

এই মানুষটি পাহাড়ের দূরত্ব বুঝতে পারে না। ‘অপরাহ্নে দেখিলাম, একটি সুন্দর পর্ব্বতের নিকট দিয়া গাড়ী যাইতেছে। এত নিকট দিয়া যাইতেছে, যে পর্ব্বতস্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রস্তরের ছায়া পর্য্যন্ত দেখা যাইতেছে। গাড়ওয়ানকে গাড়ী থামাইতে বলিয়া আমি নামিলাম। গাড়ওয়ান জিজ্ঞাসা করিল, “কোথা যাইবেন?” আমি বলিলাম “একবার এই পর্ব্বতে যাইব।” সে হাসিয়া বলিল “পাহাড় এখান হইতে অধিক দূর, আপনি সন্ধ্যার মধ্যে তথায় পৌঁছিতে পারিবেন না।” আমি এ কথা কোনরূপে বিশ্বাস করিলাম না, আমি স্পষ্ট দেখিতেছিলাম, পাহাড় অতি নিকট, তথা যাইতে আমার পাঁচমিনিটও লাগিবে না, অতএব গাড়ওয়ানের নিষেধ না শুনিয়া আমি পর্ব্বতাভিমুখে চলিলাম। পাঁচ মিনিটের স্থলে ১৫ মিনিটকাল দ্রুতপাদবিক্ষেপে গেলাম, তথাপি পর্ব্বত পূর্ব্বমত সেই পাঁচ মিনিটের পথ বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। তখন আমার ভ্রম বুঝিতে পারিয়া গাড়ীতে ফিরিয়া আসিলাম। পর্ব্বতসম্বন্ধে দূরতা স্থির করা বাঙ্গালির পক্ষে বড় কঠিন ইহার প্রমাণ পালামৌ গিয়া আমি পুনঃপুনঃ পাইয়াছিলাম।’১৪ সঞ্জীবচন্দ্র বেঁচে ছিলেন পঞ্চান্ন বছর (১৮৩৪–৮৯) আর বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ১৮৮১–৮২ সালে প্রকাশিত হয় পালামৌ, যখন তাঁর বয়স সাতচল্লিশ। পালামৌ ভ্রমণকালে যুবা বয়সের দম্ভ, অহংকারের কথাও নিঃসঙ্কোচে বলেছেন। কিছুটা ঠাট্টার ঢঙে তিনি লিখেছেন, একদিন সন্ধ্যায় চিকপর্দা ফেলে তাঁবুতে একা একা বসে ‘সাহেবি ঢঙে’ কুকুরী নিয়ে খেলা করছেন, এমন সময় দু-জন সাহায্যপ্রার্থী তাঁকে ‘খাঁ সাহেব’ বলে ডাকাতে তিনি অত্যন্ত রুষ্ট হন, লিখেছেন : ‘হারম্যান কোম্পানি যাহার কাপড় সেলাই করে, ফরাসি দেশে যাহার জুতা সেলাই হয় তাহাকে “বোস মহাশয়” বা “দাস মহাশয়” বলিলে সহ্য হইবে কেন? . . . সেই মুহূর্ত্তে তাহাকে ইহার বিশেষ প্রতিফল পাইতে হইত, কিন্তু “হারামজাদ”, “বদজাত” প্রভৃতি সাহেবস্বভাব সুলভ গালি ব্যতীত তাহাকে কিছুই দিই নাই, এই আমার বাহাদুরি।’ এই সম্বোধনে তাঁর সর্বশরীর জ্বলে উঠেছিল, এই কথা বলে তিনি লিখছেন, ‘এখন হাসি পায়, কিন্তু তখন বড়ই রাগ হইয়াছিল।’১৫

এই প্রসঙ্গে স্মৃতি সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলি। স্মৃতি বিভিন্ন সত্যকে, হয়তো কিছুটা খাপছাড়াভাবে, ধরে রাখতে চেষ্টা করে। স্মরণ বস্তুত সত্যকে খুঁজে পাওয়ার এক ইচ্ছাশক্তি (উইল টু ট্রুথ), এই স্মৃতিচারণের অবস্থান নৈঃশব্দের নেতিবাচকতার বিপরীতে, স্মৃতিচারণ এমন এক কর্ম যা কাজ করে নির্বাচন, আত্ম-বিশ্লেষণ ও দূরত্ব প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে। এখানে নির্বাচন বলতে ঘটনাবলির নির্বাচন বলতে চাইছি। এই নির্বাচন অনেক সময় খাপছাড়া, পরস্পর-বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত, এইভাবেই প্রতিভাত হয়। স্মৃতিনির্ভর কাহিনি হয়ে ওঠে ছোটো ছোটো গল্প, বর্ণনার এক সমন্বয়। এই গল্পগুলি অনেক সময় প্রাসঙ্গিক মনে হয় না, মনে হয় এইসবের কী প্রয়োজন ছিল? কিন্তু স্মৃতিচারণ মানুষের অভিজ্ঞতার অবিন্যস্ততারই প্রতিফলন, এবং এই কাহিনিতে তুচ্ছ তুচ্ছ ঘটনাও অসাধারণ আলোর সন্ধান দেয়, যা মূলস্রোতের কাহিনিতে হয়তো পাওয়া সম্ভব নয়। সঞ্জীবচন্দ্রের এই রচনাশৈলী রবীন্দ্রনাথের পছন্দ হয়নি। তিনি বলেছেন ‘তাঁহার প্রতিভার ঐশ্বর্য ছিল কিন্তু গৃহিণীপনা ছিল না।’১৬ তাঁর প্রতিভা ধনী, কিন্তু গৃহিণী নয়। তিনি লিখেছেন পালামৌ ‘পড়িতে পড়িতে প্রতিপদে মনে হয় লেখক যথোচিত যত্নসহকারে লেখেন নাই। ইহার রচনার মধ্যে অনেকটা পরিমাণ আলস্য ও অবহেলা জড়িত আছে, এবং তাহা রচয়িতারও অগোচর ছিল না।’১৭ রচনা যেখানে দুর্বল, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় সঞ্জীবচন্দ্র সেখানে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন, ‘কিন্তু সেটা কেবল পাঠকদের মুখ বন্ধ করিবার জন্য-তাহার মধ্যে অনুতাপ নাই এবং ভবিষ্যতে যে সতর্ক হইবেন কথার ভাবে তাহাও মনে হয় না। তিনি যেন পাঠকদিগকে বলিয়া রাখিয়াছেন, “দেখো বাপু, আমি আপন ইচ্ছায় যাহা দিতেছি তাহাই গ্রহণ করো, বেশি মাত্রায় কিছু প্রত্যাশা করিয়ো না।'”১৮ রবীন্দ্রনাথ অভিযোগ করেছেন যে, এই ধরনের ভ্রমণবৃত্তান্তে নানারকম কথা আসতে পারে, কিন্তু তার মধ্যে নির্বাচন ও পরিমাণ সামঞ্জস্যের আবশ্যকতা আছে। সঞ্জীবচন্দ্র এই ভ্রমণকাহিনিতে অনেক কিছুই পাশ কাটিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু যাননি, যার ফলে ‘রসের ব্যাঘাত করিয়াছে এবং লেখকও অবশেষে বলিয়াছেন, “এখন এ-সকল কচকচি থাক।”‘১৯ কিন্তু স্মৃতির আখ্যান তো এইরকম আঁকাবাঁকা পথেই নিরুদ্দিষ্টভাবে ঘুরতে থাকে, এর গঠন হয় বিক্ষিপ্ত, ধারাবাহিকতাহীন, সেইজন্য এই আখ্যান তির্যকভাবে বাস্তবকে আমাদের কাছে উপস্থিত করে। আখ্যানভাগের বেশ কিছু অংশ রবীন্দ্রনাথ পাশ কাটিয়ে যেতে অর্থাৎ বাতিল করতে বলেছেন। এই প্রসঙ্গে বলতে পারি যে, অনেক সময় শিল্পীর বাতিল করা, ফেলে দেওয়া স্কেচগুলিই তাঁর মূল ছবির থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। একথা রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব সৃষ্টি সম্পর্কেও প্রযোজ্য।

৫. সৌন্দর্যতত্ত্ব, সৌন্দর্যচর্চা

ভ্রমণের সঙ্গে সৌন্দর্য উপলব্ধি, বিশেষত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রসোপলব্ধির এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। আজকের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের এক অপরিহার্য সঙ্গী হল ক্যামেরা, যেখানে তোলা থাকবে সুন্দর সুন্দর সব দৃশ্য। প্রাক-ক্যামেরা যুগে ভ্রমণসাহিত্যে এই সৌন্দর্যের লিখিত বর্ণনা থাকত। পালামৌ-ও তার ব্যতিক্রম নয়, যদিও সঞ্জীবচন্দ্র শুধুমাত্র সৌন্দর্য বর্ণনা করেননি, আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথাও বলেছেন। কিন্তু মজার কথা হল পালামৌ নিয়ে দু-টি প্রধান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হল সঞ্জীবচন্দ্রের সৌন্দর্যবোধ। চন্দ্রনাথ লিখেছেন সচরাচর লোকে যা দেখে না বা যেভাবে দেখে না সঞ্জীবচন্দ্র তাই দেখতে ভালোবাসতেন এবং সেভাবে দেখার শক্তিও তাঁর যথেষ্ট ছিল। ‘ছোট ছোট সামান্য নিত্য ঘটনা’ তিনি ‘লক্ষ্য করিতে ভাল বাসিতেন, লক্ষ্য করিতে পারিতেন, লক্ষ্য করিতে জানিতেন। এইরূপ দর্শনকাব্যে তাঁহার অসাধারণ আসক্তি ও অভিনিবেশ ছিল।’২০ চন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘তাঁহার সৌন্দর্য্যতত্ত্ব কেবলমাত্র তত্ত্ব নয়, তাঁহার সৌন্দর্য দেখিবার রীতি বা প্রণালীও বটে।’২১ সৌন্দর্য একটি স্বতন্ত্র সত্তা এবং তা বস্তুত দর্শক-নিরপেক্ষভাবেই থাকে। এই সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করতে হয়। লেখক তাঁর দৃষ্টিশক্তির সাহায্যে এই সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করেন। সকলের সেই দৃষ্টিশক্তি থাকে না বলে সৌন্দর্য নেই, এমন নয়। এই বলে চন্দ্রনাথ একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন : ‘সঞ্জীববাবুর সৌন্দর্য্যতত্ত্ব ভাল করিয়া না বুঝিলে তাঁহার লেখাও ভাল করিয়া বুঝা যায় না-ভাল করিয়া সম্ভোগ করা যায় না।’২২

রবীন্দ্রনাথ যে চন্দ্রনাথের একথায় একেবারেই সায় দিতে পারেননি, তা তিনি গোপন করেননি। তিনি বলেছেন বিশেষ সৌন্দর্যতত্ত্ব অবলম্বন না করলে সঞ্জীবচন্দ্রের রচনার সৌন্দর্য বোঝা যায় না একথা যদি সত্য হত তবে তাঁর রচনা সাহিত্যে স্থান পাবার যোগ্য হত না। রীতিমতো প্রতিবাদ করে তিনি লেখেন : ‘নদনদীতেও সৌন্দর্য আছে, পুষ্প নক্ষত্রেও সৌন্দর্য আছে, মনুষ্যে পশুপক্ষীতেও সৌন্দর্য আছে, একথা প্লেটো না পড়িয়াও আমরা জানিতাম-সেই সৌন্দর্য ভূতের মতো বাহির হইতে আসিয়া বস্তুবিশেষে আবির্ভূত হয় অথবা তাহা বস্তুর এবং আমাদের প্রকৃতির বিশেষ ধর্মবশত আমাদের মনের মধ্যে উদিত হয় সে-সমস্ত তত্ত্বের সহিত সৌন্দর্যসম্ভোগের কিছুমাত্র যোগ নাই।’২৩ রবীন্দ্রনাথের মতে সৌন্দর্য কোনো বস্তু-আশ্রিত বিষয়ী-নিরপেক্ষ সত্তা নয়। তত্ত্বের সঙ্গে সৌন্দর্য উপভোগের কোনো সম্পর্কও নেই। লেখকই তাঁর কল্পনাশক্তির মাধ্যমে বিষয়ে বা বস্তুতে সৌন্দর্য অর্পণ করেন। সাহিত্যকে সাহিত্য হিসেবেই উপভোগ করতে হবে, কোনো তত্ত্বের মাধ্যমে নয়, রবীন্দ্রনাথের এই মতকে প্রশ্ন করে সত্যজিৎ চৌধুরী জিজ্ঞাসা করেছেন সৌন্দর্যের কান্টীয় শুদ্ধ ধারণা সম্ভব নয় কেন? তিনি বলেছেন সঞ্জীবচন্দ্র কান্টের তত্ত্বের সঙ্গে একেবারে অপরিচিত ছিলেন না, তাই তাঁর তত্ত্বধারণা দাঁড় করানোয় তিনি যে কান্টের অনুগামী ছিলেন এমন একটা অনুমান হয়তো করা যায়।২৪ রবীন্দ্রনাথের এই তত্ত্ববিরোধী যুক্তির ভ্রান্তি দেখিয়ে শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ও একসময় বলেছিলেন : ‘একটু চিন্তা করিয়া দেখিলে চন্দ্রনাথের মতবাদ অসংগত মনে হয় না। যে লেখকের সৌন্দর্য্যদৃষ্টিতে তাত্ত্বিক উপাদানের সংমিশ্রণ আছে তাঁহাকে বুঝিতে গেলে তাঁহার তত্ত্বের সহিত পরিচয়ের কিছুটা প্রয়োজন আছে বৈ কি।’২৫

বস্তুত সৌন্দর্যতত্ত্বের এই আলোচনায় সঞ্জীবচন্দ্রের বর্ণনার একটি বৈশিষ্ট্য একেবারে ঢাকা পড়ে গেছে। এই বৈশিষ্ট্য বোঝাতে গেলে যে ইংরেজি শব্দটি ব্যবহার করতে হবে তা হল সেনসুয়াসনেস (sensuousness)। এই শব্দটির উপযুক্ত বাংলা প্রতিশব্দ নেই। অথচ সঞ্জীবচন্দ্রের বিবরণে রক্ত মাংসের মানুষের শারীরিক বর্ণনায় ভাষার যে বিস্ফার ঘটে তাকে সেনসুয়াস ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। একটি দৃষ্টান্তই যথেষ্ট : ‘যুবতী সকলে হাত ধরাধরি করিয়া অর্দ্ধচন্দ্রাকৃতি রেখা বিন্যাস করিয়া দাঁড়াইল। দেখিতে বড় চমৎকার হইল। সকলগুলিই সম উচ্চ, সকলগুলিই পাথুরে কাল; সকলেরই অনাবৃত দেহ; সকলের সেই অনাবৃত বক্ষে আরসির ধুকধুকি চন্দ্রকিরণে এক একবার জ্বলিয়া উঠিতেছে। আবার সকলের মাথায় বনপুষ্প, কর্ণে বনপুষ্প, ওষ্ঠে হাসি। সকলেই আহ্লাদে পরিপূর্ণ, আহ্লাদে চঞ্চল, যেন তেজঃপুঞ্জ অশ্বের ন্যায় সকলেই দেহবেগ সংযম করিতেছে। সম্মুখে যুবারা দাঁড়াইয়া, যুবাদের পশ্চাতে মৃণ্ময়মঞ্চোপরি বৃদ্ধেরা এবং তৎসঙ্গে এই নরাধম। বৃদ্ধেরা ইঙ্গিত করিলে যুবাদের দলে মাদল বাজিল, অমনি যুবতীদের দেহ যেন শিহরিয়া উঠিল। যদি দেহের কোলাহল থাকে তবে যুবতীদের দেহে সেই কোলাহল পড়িয়া গেল, পরেই তাহারা নৃত্য আরম্ভ করিল। তাহাদের নৃত্য আমাদের চক্ষে নূতন; তাহারা তালে তালে পা ফেলিতেছে, অথচ কেহ চলে না; দোলে না, টলে না। যে যেখানে দাঁড়াইয়াছিল, সে সেখানেই দাঁড়াইয়া তালে তালে পা ফেলিতে লাগিল, তাহাদের মাথার ফুলগুলি নাচিতে লাগিল, বুকের ধুকধুকি দুলিতে লাগিল।’ এই বর্ণনা শেষ হচ্ছে এইভাবে : ‘শীতকাল নিকটে দুই তিন স্থানে হুহু করিয়া অগ্নি জ্বলিতেছে, অগ্নির আলোকে নর্ত্তকীদের বর্ণ আরও কাল দেখাইতেছে; তাহারা তালে তালে নাচিতেছে, নাচিতে নাচিতে ফুলের পাপড়ির ন্যায় সকলে এক একবার “চিতিয়া” পড়িতেছে; আকাশ হইতে চন্দ্র তাহা দেখিয়া হাসিতেছে, আর বটমূলের অন্ধকারে বসিয়া আমি হাসিতেছি।’২৬ বাংলা সাহিত্যে এ এক বিরল বর্ণনা। আমার মনে হয় সঞ্জীবচন্দ্রের সৌন্দর্যবোধের বির্মূততা নিয়ে এত আলোচনা হয়েছে, তাঁর সৌন্দর্যবর্ণনার পার্থিবতাকে কিছুটা আড়াল করার জন্য। এর সূত্র অবশ্য সঞ্জীবচন্দ্র নিজেই তাঁর পাঠকদের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন এই বলে যে তাঁর কাছে রূপ এক, পাত্র ভেদ হলেও।

৬. ভ্রমণসাহিত্য ও নৃতত্ত্ব

আমি আগে বলেছি ভ্রমণসাহিত্যের সঙ্গে নৃতত্ত্ব-লিখনের একটা জ্ঞাতিসম্পর্ক আছে, এই দুই সাহিত্যই একই গোত্রের রচনাশৈলী, এবং সেইজন্য সঞ্জীবচন্দ্রকে বাংলা ভাষায় নৃতত্ত্বচর্চার একজন পূর্বসুরি হিসেবে গণ্য করতে হবে। আমার পূর্বের প্রবন্ধে আমি সঞ্জীবচন্দ্র বর্ণিত কোলদের বিবাহ ও প্রাক-বিবাহ রীতিনীতির আলোচনা করেছি এবং দেখাবার চেষ্টা করেছি যে তাঁর বর্ণনার সঙ্গে পরবর্তী নৃতাত্ত্বিকদের বর্ণনার খুব একটা তফাত নেই।২৭ তবে মনে রাখতে হবে তিনি যাদের ‘কোল জাতি’ বলেছেন, তারা কোনো বিশেষ আদিবাসী গোষ্ঠী নয়, বরং ‘কোল’ বলতে তখন বোঝাত মুন্ডা, হো, ওরাওঁ এই আদিবাসী গোষ্ঠীগুলি। উনিশ শতকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে এই আদিবাসীদের বিদ্রোহ, কোল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। রিজলি বলেছেন এদের কোল নাম হওয়ার কারণ এরা শূকর বধ করত, সেইজন্য হিন্দুরা এদের কোল বলে ডাকত।২৮ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস দুজনেই কোল শব্দের অর্থ লিখেছেন ‘শূকর’।২৯ জ্ঞানেন্দ্রমোহন লিখেছেন, ‘ছোটনাগপুর ও বীরভূম অঞ্চলে [ইহাদের] অধিকাংশের বাস। ইহারা প্রধানতঃ কোল, দ্রাবিড় ও মঙ্গল এই তিন ভাগে বিভক্ত।’৩০ সঞ্জীবচন্দ্র এদের আর্থিক দুর্দশা ও দুঃখকষ্টের বর্ণনা দিয়েছেন, তাঁর মনে হয়েছিল কোল জাতি ক্রমশ বিলুপ্ত হবে। একদিকে তাদের আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা, অন্যদিকে ইংরেজদের আগমন। তিনি কোল বিদ্রোহের ইতিহাস জানতেন না এমন মনে হয় না, পৃথিবীর অন্যপ্রান্তের আদিবাসীদের যে তিনি খবর রাখতেন তার নিদর্শন তো পালামৌ বইটিতেই রয়েছে। কোলদের সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন : ‘তাহাদের বয়ঃপ্রাপ্ত পুরুষদের গায়ে খড়ি উঠিতেছে, চক্ষে মাছি উড়িতেছে, মুখে হাসি নাই, যেন সকলেরই জীবনীশক্তি কমিয়া আসিয়াছে। আমার বোধহয় কোলজাতির ক্ষয় ধরিয়াছে। ব্যক্তি বিশেষের জীবনীশক্তি যেরূপ কমিয়া যায়, জাতিবিশেষেরও জীবনীশক্তি সেইরূপ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ক্রমে ক্রমে লোপ পায়। মনুষ্যের মৃত্যু আছে, জাতিরও লোপ আছে।’৩১ সঞ্জীবচন্দ্রের এ ধারণা অমূলক ছিল না।

তিনি নিজেই এই প্রসঙ্গে ‘মৌরি’ বা ‘মাওরি’ (Maori) জাতির দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। মাওরিরা নিউজিল্যান্ডের পলিনেশিয়ার অধিবাসী। সঞ্জীবচন্দ্র লিখেছেন : ‘মৌরিনামক আদিম জাতি বলিষ্ঠ, বুদ্ধিমান, কর্ম্মঠ বলিয়া পরিচিত, তাহারাও সাহেবদের অধিকারে ক্রমে লোপ পাইতেছে। ১৮৪৮ সালে তাহাদের সংখ্যা একলক্ষ ছিল, বিশ বৎসর পরে ৩৮ হাজার হইয়া গিয়াছিল . . .।’৩২ সঞ্জীবচন্দ্রের এ তথ্য খুব একটা ভুল নয়। মাওরি সমাজের স্থায়িত্ব ১৮ শতকের শেষ থেকে ভাঙতে শুরু করে, মূলত ইউরোপীয়দের আমদানি করা রোগ ও অস্ত্রশস্ত্রের কারণে। ১৮৪০ সালের পর থেকে তারা অত্যধিক মাত্রায় জমি হারাতে থাকে এবং তাদের সংখ্যা নিম্নগামী হতে থাকে। নিউজিল্যান্ডে প্রকাশিত আধুনিক এনসাইক্লোপিডিয়া অনুযায়ী ১৮৪০ সালে নিউজিল্যান্ডে মাওরিদের সংখ্যা ছিল এক লক্ষ অথচ ১৮৯৬ সালে মাওরিদের সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ৪২,১১৩।৩৩ সুতরাং সঞ্জীবচন্দ্রের দেওয়া তথ্যে কোনো ভুল নেই। সঞ্জীবচন্দ্র লিখেছেন ‘মারকিন ও অন্যান্য দেশে যেখানে সাহেবরা গিয়া রাজ্যস্থাপন করিয়াছেন, সেখানকার আদিমবাসীরা ক্রমে ক্রমে লোপ পাইতেছে’, এরপর অবশ্য তিনি বলছেন, ‘তাহার কারণ কিছুই অনুভব হয় না।’৩৪ তবে তিনি যে একেবারেই অনুভব করতে পারেননি একথাও ঠিক নয়। তার ইঙ্গিতও তিনি রচনায় দিয়ে গেছেন।৭. আত্মনের ভ্রমণ

পালামৌ ভ্রমণকাহিনি, স্মৃতিচারণ, এবং সঞ্জীবচন্দ্রের টুকরো টুকরো চিন্তাভাবনার এক কোলাজ। এই ভ্রমণবৃত্তান্তে যেমন ভৌত জগতের বিবরণ আছে সেইরকম এই ভ্রমণ লেখকের সেল্ফ বা আত্মনের ভ্রমণও বটে। সঞ্জীবচন্দ্র এই ভ্রমণ-কাহিনিতে নিজের আত্মনকে দেখেছেন, বিচার করেছেন একথা আগেই বলেছি। এ যেন নানাভাবে নিজেকে যাচাই করা। সম্প্রতি সঞ্জীবচন্দ্রের ডায়েরি প্রকাশিত হয়েছে, এই ডায়েরিতেও সঞ্জীবচন্দ্র নানাভাবে নিজের আত্মনের সমীক্ষা করেছেন, এমনকী নিজের ‘পাপচিন্তা’র কথাও উল্লেখ করেছেন।৩৫ পালামৌ-এ তিনি বেশিদিন থাকতে পারেননি, সেখানে তিনি গিয়েছিলেন চাকরিসূত্রে। বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন : ‘পালামৌ, তখন ব্যাঘ্র ভল্লুকের আবাস ভূমি, বন্য প্রদেশ মাত্র। সুহৃদপ্রিয় সঞ্জীবচন্দ্র সে বিজন বনে একা তিষ্ঠিতে পারিলেন না। শীঘ্রই বিদায় লইয়া আসিলেন। বিদায় ফুরাইলে আবার যাইতে হইল, কিন্তু যে দিন পালামৌ পৌঁছিলেন, সেই দিনই পালামৌর উপর রাগ করিয়া বিনা বিদায়ে চলিয়া আসিলেন। আজিকার দিনে, এবং সে কালেও এরূপ কাজ করিলে চাকরি থাকে না। কিন্তু তাহার চাকরি রহিয়া গেল, আবার বিদায় পাইলেন। আর পালামৌ গেলেন না।’৩৬ সরকারি চাকুরে ছিলেন, পালামৌ-এ তাঁবু খাটিয়ে থাকতে হত, সেখানে বেশি দিন থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু যতদিন ছিলেন, সেখানকার গাছপালা মানুষের সঙ্গে যে-আত্মীয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন তা মেকি ছিল না, মিথ্যাও ছিল না। সেখানে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর নিজস্ব জগৎ, তাঁর এক একান্ত ‘দুনিয়া’ : ‘এই পাহাড়ের ক্রোড় অতি নির্জ্জন, কোথায়ও ছোট জঙ্গল নাই, সর্ব্বত্র ঘাস। অতি পরিষ্কার, তাহাও বাতাস আসিয়া নিত্য ঝাড়িয়া দেয়। মৌয়া গাছ তথায় বিস্তর। কতকগুলি একত্রে গলাগলি করে বাস করে, আর কতকগুলি বিধবার ন্যায় এখানে সেখানে একাকী থাকে। তাহারই মধ্যে একটিকে আমি বড় ভাল বাসিতাম, তাহার নাম “কুমারী” রাখিয়াছিলাম। তখন তাহার ফল কি ফুল হয় নাই; কিন্তু তাহার ছায়া বড় শীতল ছিল। আমি সেই ছায়ায় বসিয়া “দুনিয়া” দেখিতাম। এই উচ্চ স্থানে বসিলে পাঁচ সাত ক্রোশ পর্য্যন্ত দেখা যাইত। দূরে চারিদিকে পাহাড়ের পরিখা, যেন সেই খানে পৃথিবীর শেষ হইয়া গিয়াছে। সেই পরিখার নিম্নে গাঢ় ছায়া, অল্প অন্ধকার বলিলেও বলা যায়। তাহার পর জঙ্গল। জঙ্গল নামিয়া ক্রমে স্পষ্ট হইয়াছে। জঙ্গলের মধ্যে দুই একটি গ্রাম হইতে ধীরে ধীরে ধূম উঠিতেছে, কোন গ্রাম হইতে হয়ত বিষণ্ণ ভাবে মাদল বাজিতেছে, তাহার পরে আমার তাঁবু, যেন একটি শ্বেত কপোতী জঙ্গলের মধ্যে একাকী বসিয়া কি ভাবিতেছে। আমি অন্যমনস্কে এই সকল দেখিতাম; আর ভাবিতাম এই আমার “দুনিয়া”।’৩৭ এই ‘দুনিয়া’ পালামৌ-এর বহির্জগৎ শুধু নয়, তাঁর নিজস্ব অন্তর্জগৎ বটে। এই বই যেমন পালামৌ-এর মানুষদের বিবরণ, তেমনি এই বই সঞ্জীবচন্দ্রের আত্মনের ভ্রমণ, আত্মনের পরিচয়ও বটে।

টীকা ও সূত্রনির্দেশ

 ১. এই প্রবন্ধে উদ্ধৃত অনেকগুলি রচনার সূত্র যে-বইটি, সেটি হল : সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পালামৌ, সত্যজিৎ চৌধুরী সম্পাদিত, (কলকাতা : দে’জ পাবলিশিং, ২০০৯)। এই সম্পাদিত বইটিতে সংকলিত রচনাগুলি হল : সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ‘পালামৌ’, পৃ. ১–৩৫; বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ‘সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী’, পৃ. ৩৯–৪৭; চন্দ্রনাথ বসু, ‘সমালোচনা : পালামৌ, দামিনী ও রামেশ্বরের অদৃষ্ট’, পৃ. ৪৯–৫১; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘সঞ্জীবচন্দ্র : পালামৌ’, পৃ. ৫৩–৬০; প্রদীপ বসু, ‘বাংলা ভাষায় নৃতত্ত্বচর্চার প্রথম অধ্যায়’, পৃ. ৬১–৭৪; ‘জীবনপঞ্জি’, পৃ. ৭৫–৭৭; এবং সত্যজিৎ চৌধুরী, ‘ভূমিকা’, নয়-চব্বিশ। পরবর্তী টীকাগুলিতে এই রচনাগুলির ক্ষেত্রে লেখকের নাম, লেখার শিরোনাম ও পৃষ্ঠা সংখ্যার উল্লেখ থাকবে, সম্পাদিত এই সংকলনের নামটি বারবার উল্লেখিত হবে না। এই উদ্ধৃতির সূত্র : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘সঞ্জীবচন্দ্র : পালামৌ’, পৃ. ৫৪।

 ২. প্রদীপ বসু, ‘বাংলা ভাষায় নৃতত্ত্বচর্চার প্রথম অধ্যায়’, পৃ. ৬১–৭৪।

 ৩. টীকা ১ দ্রষ্টব্য।

 ৪. সঞ্জীবচন্দ্র, ‘পালামৌ’, পৃ. ৩৩।

 ৫. বিজয়রাম সেন, তীর্থ-মঙ্গল (কলকাতা : পরশপাথর প্রকাশন, ২০০৯; প্রথম সংস্করণ, ১৯১৬)।

 ৬. তীর্থ-মঙ্গল, পৃ. ১৭।

 ৭. তীর্থ-মঙ্গল, পৃ. ১২৪।

 ৮. ঈশ্বর গুপ্ত রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, শান্তিকুমার দাশগুপ্ত ও হরিবন্ধু মুখুটি (সম্পা.), (কলকাতা : দত্তচৌধুরী এণ্ড সন্স, ১৩৮১), পৃ. ২১১–২৮০।

 ৯. সঞ্জীবচন্দ্র, ‘পালামৌ’, পৃ. ১।

 ১০. ওই, পৃ. ১১। ‘পরিব্রাজকের নৃতত্ত্বচর্চা’ অধ্যায়ে এ সম্পর্কিত আরও কিছু দৃষ্টান্ত আছে।

 ১১. ওই, পৃ. ১২।

 ১২. ওই, পৃ. ১।

 ১৩. ওই, পৃ. ১।

 ১৪. ওই, পৃ. ৩।

 ১৫. ওই, পৃ. ২১।

 ১৬. রবীন্দ্রনাথ, ‘সঞ্জীবচন্দ্র : পালামৌ’, পৃ. ৫৩।

 ১৭. ওই, পৃ. ৫৪।

 ১৮. ওই, পৃ. ৫৪।

 ১৯. ওই, পৃ. ৫৪।

 ২০. চন্দ্রনাথ বসু, ‘পালামৌ, দামিনী ও রামেশ্বরের অদৃষ্ট’, পৃ. ৫০।

 ২১. ওই, পৃ. ৫১।

 ২২. ওই, পৃ. ৫১।

 ২৩. রবীন্দ্রনাথ, ‘সঞ্জীবচন্দ্র : পালমৌ’, পৃ. ৫৭–৫৮।

 ২৪. সত্যজিৎ চৌধুরী, ‘ভূমিকা’, পৃ. উনিশ।

 ২৫. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্র-সৃষ্টি সমীক্ষা, প্রথম খণ্ড (কলকাতা : ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, ১৯৭১), পৃ. ২৫৪–৫৫।

 ২৬. সঞ্জীবচন্দ্র, ‘পালামৌ’, পৃ. ২৫।

 ২৭. প্রদীপ বসু, ‘বাংলা ভাষায় নৃতত্ত্বচর্চার প্রথম অধ্যায়’।

 ২৮. H H Risley, Tribes and Castes of Bengal, vol. 1 (Calcutta : Firma Mukhopadhay, [1891] 1981), পৃ. ৫০৫।

 ২৯. হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্গীয় শব্দকোষ, প্রথম খণ্ড (নিউদিল্লি : সাহিত্য অকাদেমি, ১৯৬৬), পৃ. ৬৮৯; জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস, বাঙ্গালা ভাষার অভিধান, প্রথম ভাগ (কলকাতা : সাহিত্য সংসদ, ১৯৭৯), পৃ. ৫৮২।

 ৩০. জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস, বাঙ্গালা ভাষার অভিধান, পৃ. ৫৮২।

 ৩১. সঞ্জীবচন্দ্র, ‘পালামৌ’, পৃ. ১২।

 ৩২. ওই, পৃ. ১৩।

 ৩৩. A H Melinok, An Encyclopaedia of New Zealand, 3 vols, (Wellington : Government of New Zealand, 1966); দ্রষ্টব্য

 ৩৪. সঞ্জীবচন্দ্র, ‘পালামৌ’, পৃ. ১৩।

 ৩৫. ‘সঞ্জীবচন্দ্রের ডায়েরি’ (সম্পাদনা : কৃষ্ণজীবন ভট্টাচার্য), বঙ্গদর্শন, ৪, আষাঢ় ১৪০৯, পৃ. ১৮১–২০৯।

 ৩৬. বঙ্কিমচন্দ্র, ‘সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী’, পৃ. ৪৪–৪৫।

 ৩৭. সঞ্জীবচন্দ্র, ‘পালামৌ’, পৃ. ১৫–১৬।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন