আলোচিত লেখকদের পরিচিতি

প্রদীপ বসু

জীবনী ও রচনাপঞ্জি আলোচিত লেখকদের পরিচিতি

ভূদেব মুখোপাধ্যায় (১৮২৭–১৮৯৪)

ভূদেব মুখোপাধ্যায় জন্মেছিলেন কলকাতায়। সেই সময় তাঁর পিতা বিশ্বনাথ তর্কভূষণ কলকাতার হরিতকীবাগান লেনে বাস করেছিলেন। ভূদেবের জন্ম তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি আছে, সাল নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে। প্রচলিত সংক্ষিপ্ত ভূদেব জীবনী এবং ভূদেব চরিত অনুযায়ী ভূদেব জন্মেছিলেন ১২ ফেব্রুয়ারি ১৮২৫ সালে (বাংলা মতে ৩ ফাল্গুন ১২৩১)। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন এই ইংরেজি ও বাংলা তারিখে মিল নেই, সালেও ভুল আছে। তিনি ভূদেবের কোষ্ঠী পরীক্ষা করে তাঁর জন্মতারিখ স্থির করেছেন ২২ ফেব্রুয়ারি ১৮২৭। সাধারণভাবে এটাই এখন স্বীকৃত। ভূদেবের আদি নিবাস হুগলি জেলার খানাকুল থানার অন্তর্গত নতিবপুর গ্রাম। বিশ্বনাথ ব্যাকরণ, স্মৃতি, জ্যোতিষ, কাব্য ছাড়াও পুরাণ, তন্ত্র ও দর্শনশাস্ত্রে পণ্ডিত ছিলেন। তিনি বাল্মীকি রামায়ণ-এর আদিকাণ্ডের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে যে গ্রন্থ রচনা করেন, তা বিশ্বনাথ রামায়ণ নামে ১২৯৭ সালে প্রকাশিত হয়। প্রথমে ভূদেব নয় বছর বয়সে সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন এবং এখানে দু-বছর পড়ার পর তিনি স্থির করেন ইংরেজি পড়বেন। তাঁর এই ইচ্ছায় বিশ্বনাথ বাধা দেননি। এরপর তিনি দু-তিনটি বিদ্যালয় পরিবর্তন করেন, শেষে বিশ্বনাথ ঠিক করলেন তাঁকে হিন্দু কলেজে ভর্তি করাবেন। সেইমতো ১৮৩৯ সালে তেরো বছর বয়সে ভূদেব হিন্দু কলেজ জুনিয়র স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই শ্রেণিতে ভূদেব মধুসূদন দত্তকে সহপাঠীরূপে পেয়েছিলেন। মোট ছ-বছর পাঁচ মাস হিন্দু কলেজে পড়ার পর তিনি কলেজ ত্যাগ করেন। হিন্দু কলেজে পড়ার সময়ই ষোলো বছর বয়সে তাঁর এলোকেশীর সঙ্গে বিবাহ হয়।

চাকুরিজীবনে প্রথমে কলকাতার হিন্দু হিতার্থী বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু এখানে তিনি এক বছরের বেশি কাজ করতে পারেননি। অতঃপর নিজেই ১৮৪৭ সালে চন্দননগরে ‘চন্দননগরে সেমিনারি’ নামে একটি ইংরেজি স্কুল স্থাপন করেন। কিন্তু অর্থাভাবে এই সেমিনারি চালাতে পারলেন না। তাঁকে আবার চাকরির অন্বেষণ করতে হল এবং কলকাতা মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগে দ্বিতীয় শিক্ষকের পদ পেলেন। এরপর থেকে জীবনের শেষভাগ পর্যন্ত সরকারি শিক্ষা বিভাগের কাজে নিযুক্ত ছিলেন এবং নিজের যোগ্যতাবলে উন্নতির শেষধাপ অবধি পৌঁছেছিলেন। হাওড়া স্কুলের হেডমাস্টার হন ১৮৪৯ সালে, হুগলি নরমাল স্কুলের হেডমাস্টার হন ১৮৫৬ সালে। ১৮৬৩ সালে অতিরিক্ত বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদ প্রাপ্ত হন। নিজের দক্ষতা প্রমাণ করে ১৮৬৯ সালে ইনস্পেকটরের পদে উন্নীত হন। ভূদেব দীর্ঘকাল বিদ্যালয় পরিদর্শন কাজে লিপ্ত ছিলেন, ২৩ জুলাই ১৮৮৩ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৮৭৭ সালে তিনি সি আই ই (CIE) উপাধি পান এবং ১৮৮২ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সভ্য হন।

ভূদেবের পরিচালনে ১৮৬৪ সালের এপ্রিল মাসে (বৈশাখ ১২৭১) শিক্ষাদর্পণ ও সংবাদসার নামে মাসিকপত্রের জন্ম হয়। পরে এই পত্রিকা বর্দ্ধমান মাসিক পত্রিকা-র সঙ্গে সম্মিলিত হয়ে নাম পরিবর্তন করে। ১২৭৪ সালের পৌষ সংখ্যা (৪র্থ ভাগ, ৯ম সংখ্যা) থেকে এই পত্রিকার নামকরণ হয় শিক্ষাদর্পণ ও মাসিক পত্রিকা। ১৮৬৮ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে ভূদেব Education Gazette পত্রের সম্পাদনভার গ্রহণ করেন। নতুন পত্রিকা দিয়েই শিক্ষাদর্পণ-এর প্রচার রহিত করেন। মাঘ ১২৭৫ সালে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। এডুকেশন গেজেট ও সাপ্তাহিক বার্ত্তাবহ নামে সাপ্তাহিক পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ৪ জুলাই ১৮৫৬ সালে, সম্পাদক ছিলেন রেভারেন্ড ওব্রায়ান স্মিথ। ১৮৬৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই পত্রিকাটিকে সরকারি মুখপত্রে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং পত্রিকা-পরিচালনার সমস্ত দায়িত্ব সম্পাদকের উপর ন্যস্ত হয়, সরকার এর সঙ্গে কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রাখেনি। ওব্রায়ান স্মিথ ১৮৬৬ সালে স্বাস্থ্যহানির জন্য সম্পাদনার কাজ ছেড়ে দিলে, ব্রহ্মমোহন মল্লিক দু-মাস পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ব্রহ্মমোহন লিখেছেন : ‘তখন কলিকাতায় “এডুকেশন গেজেট” ওব্রায়ান স্মিথ সাহেবের সম্পাদকতায় প্রকাশিত হইত। কাগজখানি শিক্ষিত সমাজের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিয়াছিল। . . . হুগলিতে অবস্থানকালে ভূদেববাবু কলিকাতার এডুকেশন গেজেট আপিসে প্রায়ই আসিতেন। পত্রিকাখানি আমার হাত হইতে প্যারীচরণ সরকারের হাতে গেল; তিনি ছাড়িয়া দিলে ভূদেববাবু ইহার সম্পাদক হইলেন। . . . বঙ্কিমবাবুর সঙ্গেও আমার প্রথম আলাপ হয় ভূদেববাবুর বাড়ীতে। বঙ্কিমবাবু তখন সবে মাত্র লিখিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন; মাঝে মাঝে এডুকেশন গেজেটে লিখিতেন।’ ভূদেব ১৮৬৮ সালের ডিসেম্বর মাসে Education Gazette-এর সম্পাদক নিযুক্ত হন। সরকার ভূদেবকে পত্রিকাটির সর্বস্বত্ব দান করেছিলেন। Education Gazette ভূদেবের বৌদ্ধিক জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ভূদেব নিজে এই পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন এবং তাঁর পারিবারিক প্রবন্ধ, সামাজিক প্রবন্ধ, আচার প্রবন্ধ, স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস, বাঙ্গালার ইতিহাস তৃতীয় ভাগের শেষাংশ এবং বিবিধ প্রবন্ধ প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগের প্রকাশিত প্রবন্ধের অধিকাংশ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।

ভূদেবের সাহিত্যজীবন অনেকটাই তাঁর শিক্ষকবৃত্তির সম্প্রসারণ। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান (১৮৫৮), পুরাবৃত্ত সার (১৮৫৮), ইংলণ্ডের ইতিহাস (১৮৬২), ক্ষেত্রতত্ত্ব (১৮৬২), রোমের ইতিহাস (১৮৬৩) প্রভৃতি গ্রন্থ বিদ্যালয়ের জন্য লেখা হয়েছিল। এ ছাড়া তিনি বাঙ্গলার ইতিহাস তৃতীয় ভাগ (১৯০৪) রচনা করেছিলেন। শিক্ষাবিধায়ক প্রস্তাব (১৮৫৬) বইটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য লিখেছিলেন। এতে প্রথমে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং পরে শিক্ষকদের কর্তব্যের কথা বলেছিলেন। ভূদেবের ব্যক্তিত্বের মধ্যে যে সমাজচিন্তক বাস করতেন তার প্রকাশ হয়েছে তাঁর লেখা সমাজ সম্পর্কিত প্রবন্ধাবলীতে। পারিবারিক প্রবন্ধ (১৮৮২), সামাজিক প্রবন্ধ (১৮৯২) ও আচার প্রবন্ধ (১৮৯৫) তাঁর সমাজমনস্কতা ও পরিবর্তমান সমকালের সমস্যা-বিষয়ক চিন্তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাঁর প্রথম সাহিত্য সৃষ্টি ঐতিহাসিক উপন্যাস (১৮৫৭)-এর অন্তর্গত ‘অঙ্গুরী বিনিময়’ ও ‘সফল স্বপ্ন’ বাংলা উপন্যাসের ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইংরেজি রোমান্স অবলম্বনে লেখা হলেও তিনি আখ্যান দু-টিতে স্বকীয়তা দেখিয়েছেন। তাঁর আরেকটি রচনা, স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস (১৮৯৫) তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ অন্যভাবে সমাপ্ত হলে ভারতবর্ষের ইতিহাস যে-ধারা অবলম্বন করতে পারত তারই আনুমানিক আখ্যান। একে আমরা এক কাউন্টার-হিস্টরি (counter-history) বলতে পারি। সাহিত্য বিচারেও ভূদেব প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর বিবিধ প্রবন্ধ (প্রথম ভাগ ১৮৯৫, দ্বিতীয় ভাগ ১৯০৫) তাঁর চিন্তা ও মনীষার উজ্জ্বল নিদর্শন। আর পুষ্পাঞ্জলি (১৮৭৬) বইটিতে ব্যাস মার্কণ্ডেয় সংবাদচ্ছলে হিন্দুধর্মের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন।

ভূদেব দীর্ঘদিন বিহারে স্কুল পরিদর্শক ছিলেন এবং এই অঞ্চলে হিন্দি ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতির জন্য তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন। এই অঞ্চলে হিন্দি ভাষার প্রসারকল্পে তিনি অনেকগুলি আদর্শ হিন্দি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন, ইংরেজি বইয়ের পরিবর্তে অনেক ভালো বাংলা বইয়ের হিন্দি অনুবাদ করেছিলেন। তাঁরই প্রস্তাবে বিহারের আদালতে ফারসি বদলে হিন্দি প্রবর্তিত হয়। ভূদেব মনে করতেন বাংলার দপ্তর থেকে ফারসি উঠে যাওয়ার পরে বাংলা ও বাংলা ভাষার উন্নতি হয়, ফলে বিহারেও সেরকম হবে। তিনি এক চিঠিতে লেখেন : ‘জাতীয় ভাষার বিদ্যালয়গুলি আমার এখানে আসিবার পূর্বে সম্যক অনাদৃত ছিল। আমি সেগুুলির আদর করিয়াছি এবং সেই জন্যই আমার এখানে আসায় বিদ্যালয় সংখ্যা ১০/১৫ গুণ বাড়িয়া উঠিয়াছে। আমার পূর্ব্বে ফারসীর পরিবর্ত্তে নাগরাক্ষর চালাইবার নিমিত্ত গবর্ণমেন্ট অনুমতি দিয়েছিলেন, কিন্তু সর্বসাধারণের মনোমত হয় নাই। নাগরী কায়েথী অক্ষরের প্রচলন হয় এ কথা আমিই বলিয়াছিলাম, ও সেজন্য যত্ন করিয়াছিলাম। ১৮৩৯ ইংরাজী অব্দে বঙ্গদেশ হইতে ফারসী দপ্তর উঠিয়া যায়। সেই অবধি বাঙ্গালার উৎকর্ষ আরম্ভ হয়। সেই অবধি বঙ্গভাষার শ্রীবৃদ্ধির সূত্রপাত হয়। হিন্দী হওয়াতে বিহারে কি সেইরূপ হইবে না? আমার আশা এইরূপ যে বাঙ্গালায় যাহা ৪০ বৎসরে হইয়াছে বিহারে ১৫/১৬ বৎসরের মধ্যে সেইরূপ উন্নতি দেখা দিবে। আমার ক্ষুদ্র জীবনের ক্ষুদ্র কর্ম্মগুলির মধ্যে এই কম্মটির সংস্রব সর্ব্বপেক্ষা বৃহৎ কার্য্য বলিয়া মনে করিতে পারি।’

ভূদেব সরকারি কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন ১৮৮৩ সালের জুলাই মাসে। এরপর কিছুদিন তিনি কাশী গিয়ে বেদান্তশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন। ১৮৮৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি আবার চুঁচুড়ায় ফিরে আসেন এবং নিজের বাড়ির সংলগ্ন এক বাড়িতে পিতার নামে ‘বিশ্বনাথ চতুষ্পাঠী’ স্থাপন করেন। যাতে এদেশে সংস্কৃত শিক্ষার উন্নতি ও বেদান্তচর্চার প্রসার হয়, সেই উদ্দেশ্যেই তিনি ‘বিশ্বনাথ চতুষ্পাঠী’ স্থাপন করেছিলেন। এ ছাড়া এক লক্ষ ষাট হাজার টাকা দান করে ১৮৯৪ সালে ‘বিশ্বনাথ ট্রাস্ট ফান্ড’ স্থাপন করেন। এই ফান্ডটি উচ্চসংস্কৃত বিদ্যার উন্নতির জন্যই প্রধানত স্থাপিত হয়েছিল, কিন্তু এই তহবিলের অর্থে দু-টি দাতব্য ঔষধালয়ও পরিচালিত হত। ঔষধালয়টি তিনি তাঁর মা ব্রহ্মময়ী দেবীর নামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ‘ব্রহ্মময়ী ভেষজালয়’ নামে অবিহিত এই ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠা হয় ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৮৯ সালে। তাঁর দান ও দাতব্য সম্পর্কে সুরেশচন্দ্র সমাজপতি সাহিত্য পত্রিকায় লিখেছিলেন : ‘আজীবন কঠোর পরিশ্রম করিয়া ভূদেব উপার্জ্জন করিয়াছিলেন-এবং তাঁহার “পারিবারিক প্রবন্ধে” “অর্থসঞ্চয়” ও মিতব্যয়িতা সম্বন্ধে যে উপদেশ লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, নিজের জীবনে তাহার অনুশীলন করিয়া যে সফলতা লাভ করিয়াছিলেন-তাহার প্রায় সমুদায়-দেড় লক্ষেরও অধিক টাকা সংস্কৃত ও বঙ্গ ভাষার, হিন্দু শাস্ত্রের ও অধ্যাপকবর্গের উন্নতির জন্য দান করিয়া গিয়াছেন। মনে করিয়া দেখ, গরীব ব্রাহ্মণের সন্তান- চিরজীবনের কঠোরপরিশ্রমলব্ধ অর্থ কিরূপে ব্যয়িত করিলেন। ভূদেব যদি আর কিছুও না করিতেন-কেবল এক সাত্ত্বিক নিষ্কাম দানে তাঁহার নাম বঙ্গদেশে দেদীপ্যমান ও চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিত।’

১৮৯৪ সালের ১৫ মে ভূদেব মুখোপাধ্যায় পরিবার-পরিজন-পরিবৃত অবস্থায় ভাগীরথী-তীরে দেহরক্ষা করেন।

রচনাপঞ্জি

বাংলা বই

 ১. শিক্ষাবিধায়ক প্রস্তাব (হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, [১৮৫৬] চতুর্থ সংস্করণ ১২৮৮)।

 ২. ঐতিহাসিক উপন্যাস (কলিকাতা : কলিকাতা সুচারু যন্ত্রে শ্রী লালচাঁদ বিশ্বাস অ্যান্ড কোং দ্বারা বাহির, মৃজাপুর ১৩ সংখ্যক ভবনে মুদ্রিত, ১৭৭৯ শকাব্দ (১৮৫৭); পরবর্তী সংস্করণ, হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত, ১২৭৯)।

 ৩. প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, ১ম ভাগ (হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, ১৮৫৮)।

 ৪. প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, ২য় ভাগ (হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, ১৮৫৯); এই গ্রন্থটি যন্ত্র-বিজ্ঞান ও বাষ্পীয় যন্ত্রের বিবরণ নামে প্রকাশিত হয়।

 ৫. পুরাবৃত্ত সার, ১ম খণ্ড (হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত, ১৮৫৮)।

 ৬. ইংল্যাণ্ডের ইতিহাস (হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত, ১৮৬২)।

 ৭. ক্ষেত্রতত্ত্ব (হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত, ১৮৬২)।

 ৮. রোমের ইতিহাস (হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত, ১৮৬৩)।

 ৯. পুষ্পাঞ্জলি (হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত, ১৮৭৬)।

 ১০. পারিবারিক প্রবন্ধ (চুঁচুড়া : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, ১২৮৮ (১৮৮২)।

 ১১. সামাজিক প্রবন্ধ (চুঁচুড়া : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, ১২৯৯ (১৮৯২)।

 ১২. আচার প্রবন্ধ (চুঁচুড়া : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, ১৩০১ (১৮৯৫); চতুর্থ সংস্করণ, বুধোদয় যন্ত্রে কুমারদেব মুখোপাধ্যায় কর্ত্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত, ৪৪ মানিকতলা স্ট্রীট কলিকাতা, ১৩৩৪।

 ১৩. বিবিধ প্রবন্ধ, প্রথম ভাগ (হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, ১৩০২ (১৮৯৫)।

 ১৪. স্বপ্নলব্ধ ভারতের ইতিহাস (হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, ১৩০২ (১৮৯৫)।

 ১৫. বাঙ্গালার ইতিহাস, তৃতীয় ভাগ (হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, ১৩১০ (১৯০৪)।

 ১৬. বিবিধ প্রবন্ধ, দ্বিতীয় ভাগ (হুগলী : বুধোদয় যন্ত্রে কাশীনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, ১৩১১ (১৯০৫)।

অন্য সংকলন ও সংস্করণ

 ১. ভূদেব রচনা সম্ভার, প্রমথনাথ বিশী (সম্পা.), (কলিকাতা : মিত্র ও ঘোষ, ১৩৬৪ (১৯৫৭); তৃতীয় পরিবর্ধিত সংস্করণ, (১৩৭৫)।

 ২. সামাজিক প্রবন্ধ, জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী (সম্পা.), (কলিকাতা : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, (১৯৮১)।

 ৩. প্রবন্ধ সমগ্র, মনস্বিতা সান্যাল ও রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় (সম্পা.), (কলিকাতা : চর্চাপদ, (২০১০)।

সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৪–১৮৮৯)

এই গ্রন্থে সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে বিশেষ সম্মানের আসন পেয়েছেন তার কারণ হল তাঁর পালামৌ ভ্রমণকাহিনি, যে ভ্রমণবৃত্তান্ত দেখিয়েছে যে বাংলা ভাষায় নৃতত্ত্বচর্চার একজন পূর্বসূরি ছিলেন সঞ্জীবচন্দ্র, এইজন্য যে প্রথমদিকে ভ্রমণসাহিত্য ও নৃতত্ত্বের সীমারেখা ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। তা ছাড়া সঞ্জীবচন্দ্র নিজে নৃতত্ত্ব বিষয়ে যে অজ্ঞ ছিলেন না, তার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে পালামৌ গ্রন্থে। নৈহাটির কাছে কাঁটালপাড়া গ্রামে ১৮৩৪ সালের বৈশাখ মাসে সঞ্জীবচন্দ্রের জন্ম। পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৭৯৫–১৮৮১) এবং মাতা দুর্গাসুন্দরী দেবী (?–১৮৭০)। ডেপুটি কলেক্টর পিতা যাদবচন্দ্রের অন্য সন্তান বঙ্কিমচন্দ্রের অগ্রজ ছিলেন সঞ্জীবচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন সঞ্জীবচন্দ্রের চেয়ে চার বছরের ছোটো।

সেইসময় পিতার কর্মস্থল মেদিনীপুরে সঞ্জীবচন্দ্রের স্কুলের শিক্ষা শুরু। কিন্তু সঞ্জীবচন্দ্রের স্কুলশিক্ষা খুব মসৃণ হয়নি বরং নানা স্কুল বদলের মধ্যে দিয়ে হোঁচট খেতে খেতে তাঁর শিক্ষা এগোতে থাকে। বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন এ ছিল এক গুরুতর শিক্ষাবিভ্রাট। যাঁরা সরকারের উচ্চপদে চাকরি করতেন তাঁদের সন্তানদের সচরাচর এইরকম শিক্ষাবিভ্রাটে পড়তে হত। ১৮৪৯ সাল নাগাদ হুগলি কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় সঞ্জীবচন্দ্র ছিলেন কার্যত স্ব-অভিভাবক। বাবা থাকতেন মেদিনীপুরে, দাদাও কাজের জন্য প্রবাসে। স্বভাবতই বাড়িতে বড়ো বলতে সঞ্জীবচন্দ্র। তাঁকে শাসন করার আর কেউ নেই। ফলে তিনি তখন যেন মুক্ত-বিহঙ্গ। ওই সময় তাঁর চেয়ে বয়সে বড়ো স্থানীয় কিছু বখাটে ছেলের সঙ্গে তাঁর সখ্য হয়। তাদের সঙ্গে দিনরাত আড্ডা, রঙ্গকৌতুকে কাটতে লাগল। হুগলি কলেজের প্রথম পরীক্ষাটি তিনি দিলেন না। উঠতে পারলেন না পরের ক্লাসে। আর তাতে এমনই ভেঙে পড়লেন যে পড়াশোনাই তিনি ছেড়ে দিলেন। আর কোনো বিদ্যালয়ে গেলেন না।

পিতা তখন সঞ্জীবচন্দ্রকে বর্ধমান কমিশনের অফিসে কেরানির চাকরি পাইয়ে দিলেন, কিন্তু এটা বঙ্কিমচন্দ্রের পছন্দ হল না। তিনি সঞ্জীবচন্দ্রকে ১৮৫৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে ল-ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দিলেন। তখন প্রেসিডেন্সি কলেজ নতুন খুলেছিল, ফলে এটা সম্ভব ছিল। তিনি শেষ পর্যন্ত এখানে রইলেন কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা এখানেই শেষ। কাঁটালপাড়ায় ফিরে এসে উদ্যানচর্চায় মেতে উঠলেন। পিতা তাঁকে ১৮৬০ সালে হুগলি জেলার ইনকাম ট্যাক্স অ্যাসেসরের চাকরি পাইয়ে দেন। কয়েক বছর সঞ্জীবচন্দ্র চাকরি করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পদটাই বিলুপ্ত হয়ে যায়। সঞ্জীবচন্দ্র ফিরে এসে আবার পুষ্পোদ্যান রচনায় মনোযোগ দিলেন। সেই সময় জ্যেষ্ঠভ্রাতা শ্যামাচরণের পরামর্শে পিতা সেই পুষ্পোদ্যানে শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন। দুঃখে তিনি Bengal Ryots Their Rights and Liabilities (১৮৬৪) গ্রন্থটি রচনায় মন দিলেন। গ্রন্থটি প্রভূত সমাদর পায়। সরকার তাঁকে অস্থায়ী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট-ডেপুটি কলেক্টর পদে নিযুক্ত করেন। ১৮৬৪ সালে কৃষ্ণনগরে কাজে যোগ দিলেন। দীনবন্ধু মিত্র তখন কৃষ্ণনগরে বাস করতেন। এখানেই দু-জনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয়। দীনবন্ধু ও সঞ্জীবচন্দ্র দু-জনেই কথোপকথনে অত্যন্ত সুরসিক ছিলেন। সরস কথোপকথনে মজলিশ খুব জমে উঠত। বস্তুত কৃষ্ণনগর বাসকাল সঞ্জীবচন্দ্রের জীবনে অত্যন্ত সুখের সময় ছিল।

দুই বছর এইরকম কৃষ্ণনগরে কাটল। তারপর সরকার তাঁকে পালামৌ পাঠাল। পালামৌ তখন অনেক দূরে অবস্থিত এক অরণ্যপ্রদেশ। বন্ধুপ্রিয় সঞ্জীবচন্দ্র সেই বিজনবনে একা থাকতে পারলেন না, শীঘ্রই ফিরে আসলেন। সময় ফুরোলে আবার যেতে হল, কিন্তু যেদিন পালামৌ পৌঁছোলেন সেদিনই বিনা বিদায়ে চলে আসলেন। তখনকার দিনে এরকম কাজ করলে চাকরি থাকত না, কিন্তু তাঁর চাকরি রয়ে গেল। আবার বিদায় পেলেন, কিন্তু আর পালামৌ গেলেন না। তবে তাঁর পালামৌ থাকার চিহ্ন স্থায়ীভাবে বাংলা সাহিত্যে রয়ে গেল। প্র.না.ব (প্রমথনাথ বসু) ছদ্মনামে সঞ্জীবচন্দ্র বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ‘পালামৌ’ লিখেছিলেন, যা প্রকাশিত হয় ১২৮৭ থেকে ১২৮৯ সালের মধ্যে। সঞ্জীবচন্দ্রের জীবিতকালে পালামৌ বই হিসেবে প্রকাশিত হয়নি। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে আলাদা করে পালামৌ পূর্ণাঙ্গ বই হিসেবে প্রকাশিত হয় ১৩৫১ বঙ্গাব্দে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাসের সম্পাদনায়।

যাই হোক, সেই সময় ডেপুটিগিরিতে দু-টি পরীক্ষা দিতে হত, সঞ্জীবচন্দ্র সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ফলে কর্ম গেল। কিন্তু সরকার তাঁকে তুল্য বেতনের বারাসাত সাবরেজিস্ট্রারের চাকরি দিলেন। এটা হল ১৮৬৮ সাল। ১৮৭০ সালে হুগলিতে বদলি। হুগলিতে থাকতেই ১৮৭২-এর এপ্রিল মাসে আদমসুমারির কাজে কলকাতায় রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিসে যোগ দেন এবং ডিসেম্বর অবধি এক হাজার অস্থায়ী কেরানির সাহায্যে সঞ্জীবচন্দ্র বাংলায় প্রথম সেন্সাসের কাজ করেন। ১৮৭৩ সালে বর্ধমান বদলি হন। বর্ধমানে সঞ্জীবচন্দ্র খুব সুখে ছিলেন। এখানে থাকার সময় বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর প্রকাশ্য সম্পর্ক জন্মায়।

১২৭৯ (১৮৭২) সালের পয়লা বৈশাখ বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গদর্শন সৃষ্টি করলেন। ওই বছর ভবানীপুরে বঙ্গদর্শন মুদ্রিত ও প্রকাশিত হতে লাগল। ১৮৭৩ সালে সঞ্জীবচন্দ্র কাঁটালপাড়ার বাড়িতে ‘বঙ্গদর্শন যন্ত্রালয়’ নামে প্রেস স্থাপন করেন। পিতা যাদবচন্দ্রকে সভাপতি করে বাড়ির সকলকে নিয়েই বঙ্কিমচন্দ্র ছাপাখানা উদ্বোধনের ব্যবস্থা করেন। সঞ্জীবচন্দ্র যে এই উদ্যোগের সঙ্গে অন্তরের দিক থেকে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তাই ব্যবসায়িক বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও বঙ্গদর্শন প্রকাশের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কাঁটালপাড়ায় ছাপাখানা স্থাপন করলেন এবং এর পেছনে বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পূর্ণ সমর্থন ছিল বলেই মনে হয়। শুধু তাই নয়, ব্যাবসায় অনভিজ্ঞ সঞ্জীবচন্দ্রকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন পিতা যাদবচন্দ্র। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন ছাপাখানার তত্ত্ববধায়ক।

এইসময় বঙ্কিমচন্দ্র স্থির করেন আরও একখানা ক্ষুদ্রতর মাসিকপত্র বঙ্গদর্শন-এর সঙ্গে প্রকাশিত হওয়া ভালো। যাঁরা বঙ্গদর্শন-কে কঠিন বলে ভাবেন তাদের উপযোগী মাসিকপত্র ভ্রমর ১৮৭৪ সাল থেকে সঞ্জীবচন্দ্র প্রকাশ করতে থাকলেন। এই পত্রিকায় সঞ্জীবচন্দ্রের ‘রামেশ্বরের অদৃষ্ট’ (১৮৭৭), ‘দামিনী’ (১৮৭৪) নামক গল্প, ‘কন্ঠমালা’ (১৮৭৭) প্রভৃতি প্রকাশিত হয়েছিল। সঞ্জীবচন্দ্র এক কাজ বেশিদিন করতে ভালোবাসতেন না। ভ্রমর দ্বিতীয় বর্ষের তৃতীয় সংখ্যা, আষাঢ় ১২৮২ (১৮৭৫) পর্যন্ত চলবার পর বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্কিমচন্দ্রও ১২৮২ সালে বঙ্গদর্শন বন্ধ করে দেন। সঞ্জীবচন্দ্র বঙ্কিমচন্দ্রের থেকে বঙ্গদর্শন-এর স্বত্বাধিকার চেয়ে নেন এবং ১২৮৪ (১৮৭৭) সাল থেকে ১২৮৯ (১৮৮৩) সাল পর্যন্ত সঞ্জীবচন্দ্রের সম্পাদনায় বঙ্গদর্শন প্রকাশিত হয়। বঙ্কিমচন্দ্রের কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮), রাজসিংহ (১৮৮২), আনন্দমঠ (১৮৮২), দেবীচৌধুরাণী (১৮৮৪) সঞ্জীবচন্দ্রের সম্পাদনার কালেই বঙ্গদর্শন-এ প্রকাশিত হয়েছিল। এইসময় তিনি জাল প্রতাপচাঁদ, ‘বৈজিকতত্ত্ব’ প্রভৃতি লেখা লিখতে লাগলেন। কিন্তু বঙ্গদর্শন-এর আর সেরকম প্রতিপত্তি হল না, কারণ অনিয়মিত প্রকাশ, সম্পাদকের অমনোযোগ ও কার্যদক্ষতার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা। ১৮৭৬ সালে মার্চ মাসে বঙ্গদর্শন বন্ধ হয়ে যায়।

সঞ্জীবচন্দ্র যে প্রকৃতই প্রতিভাবান ছিলেন এ সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্রের ছিল দৃঢ় বিশ্বাস। তিনি মনে করতেন মানসিক গঠন, স্বভাবগত আলস্য এবং কিছুটা মেজাজি জীবনবোধ থেকে সঞ্জীবচন্দ্র নিজের প্রতিভা অনুযায়ী কাজ করলেন না। সঞ্জীবচন্দ্রের রচনায় ছিল এক ধরনের স্বঃতস্ফূর্ততা। পালামৌ পড়লেই একথা বেশ বোঝা যায়। আপন খেয়ালে নিজের সরস মনের ছোঁয়ায় তিনি তাঁর সৃষ্টিকে এমন আকর্ষণীয় করে তুলতেন যে পাঠক স্বাভাবিকভাবেই তাতে আকৃষ্ট হত। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি বিচরণ করেছেন অনায়াসে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক ধরনের সাফল্যের দীপ্তি যেন ক্ষণেকের জন্য ঝিলিক মারত আবার যেন নিঃশেষও হয়ে যেত। বঙ্গদর্শন বন্ধ হয়ে যাবার পর সঞ্জীবচন্দ্র কাঁটালপাড়ার বাড়িতে বসে রইলেন। কেউ তাঁকে কোনো কাজে প্রবৃত্ত করতে পারল না। সেই জ্বালাময়ী প্রতিভা আর জ্বলল না। ১৮ এপ্রিল ১৮৮৯ (৪ বৈশাখ ১২৯৬) সালে তাঁর মৃত্যু হল।

রচনাপঞ্জি

ইংরেজি বই

 ১. Bengal Ryots Their Rights and Liabilities (Calcutta : D Rozario and Co., 1864).

বাংলা বই

 ১. যাত্রা সমালোচনা (কাঁটালপাড়া : বঙ্গদর্শন যন্ত্রে হারাণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত, ১৮৭৫)।

 ২. রামেশ্বরের অদৃষ্ট (কাঁটালপাড়া : বঙ্গদর্শন প্রেস, ১৮৭৭)।

 ৩. কন্ঠমালা (কলিকাতা : কালিকা প্রেস, [১৮৭৭] ১৯০১)।

 ৪. সৎকার (কাঁটালপাড়া : রাধানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক বঙ্গদর্শন প্রেসে মুদ্রিত, ১৮৮১)।

 ৫. বাল্যবিবাহ (কলকাতা : রাধানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক জনসন প্রেসে মুদ্রিত, ১৮৮২)।

 ৬. জাল প্রতাপচাঁদ (কলিকাতা : রাধানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক মুদ্রিত, ১৮৮৩)।

 ৭. মাধবীলতা (কলিকাতা : ভবানীচরণ দত্তের গলি হইতে উমাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক প্রকাশিত, ১৮৮৫)।

 ৮. দামিনী, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (সম্পা.), সঞ্জীবনী সুধা (কলিকাতা : হেয়ার প্রেস, ১৮৯৩)।

 ৯. পালামৌ, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস (সম্পা.), (কলিকাতা : বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৩৫১)।

অন্য সংকলন

 ১. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (সম্পা.), সঞ্জীবনী সুধা (কলিকাতা : হেয়ার প্রেস, ১৮৯৩)।

 ২. উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (সম্পা.), সঞ্জীবচন্দ্রের গ্রন্থাবলী (কলিকাতা : বসুমতী সাহিত্য মন্দির, ১৯০৫)।

 ৩. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (সম্পা.), সঞ্জীব রচনাবলী (কলিকাতা : মণ্ডল বুক হাউস, ১৯৭৩)।

বিনয়কুমার সরকার (১৮৮৭–১৯৪৯)

বিনয়কুমারের জন্ম ২৬ ডিসেম্বর ১৮৮৭ সাল। পিতার নাম সুধন্যকুমার সরকার। মালদহের বাসিন্দা ছিলেন যদিও পৈতৃক নিবাস সেনাপতি-বিক্রমপুর, ঢাকা। ১৯০১ সালে মালদহ জেলা স্কুল থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশ করেন। ১৯০৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ঈশান স্কলারশিপ সহ বি এ এবং ১৯০৬ সালে এম এ পাশ করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি মালদহের মুকদুমপুরে জন্মগ্রহণ করেন এবং বাষট্টি বছর বয়সে সুদূর আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ইংরেজি ও বাংলা ছাড়া আরও ছ-টি ভাষা জানতেন। ছাত্রাবস্থায় ১৯০২ সালে তিনি সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ‘ডন সোসাইটি’তে যোগদান করেন। আচার্য সতীশচন্দ্রের প্রভাব তাঁর জীবনে এতই গভীর ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতবিদ্য ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও সরকারি বৃত্তি ও ডেপুটির চাকরি প্রত্যাখ্যান করে মামুলি সেবক হিসেবে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ পরিচালিত, ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ’-এ অবৈতনিক শিক্ষকরূপে যোগদান করেন। ১৯০৭–১১ সালের মধ্যে বঙ্গীয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদে অধ্যাপনাকালে মালদহে অনেকগুলি বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং জাতীয় শিক্ষা-বিষয়ক অনেক গ্রন্থ রচনা করেন।

বাংলা ভাষায় সমাজবিদ্যা প্রচারের জন্য তিনি বাংলা ভাষায় লেখা ছাড়া, বুকার টি ওয়াশিংটন, লিয়ন ট্রটস্কি, পল লাফর্গ, ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস প্রমুখর বই অনুবাদ করেছিলেন। ১৯০৯ সালে এলাহাবাদের পাণিনি কার্যালয়ের গবেষক ছিলেন। এই সময়ে তিনি প্রাচীন ভারত-বিষয়ক গবেষণায় ব্রতী হন। শুক্রাচার্যের নীতিসার, যা সাধারণভাবে শুক্রনীতি নামে পরিচিত, সেই সংস্কৃত গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদে তিনি মনোযোগী হন। ১৯১৪ সালে শুক্রনীতি-র ইংরেজি অনুবাদ বিস্তারিত টীকাটিপ্পনীসহ এলাহাবাদ থেকে মেজর বামনদাস বসুর উদ্যোগে প্রকাশিত হয়। এই বই বিনয়কুমারের চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ১৯১৪ সাল থেকে ১৯২৫ সাল অবধি তিনি বিশ্ব-পর্যটন করেন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯২৬ থেকে ১৯৪৯ সাল অবধি তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক ছিলেন।

দেশে ফেরার পর নরেন্দ্রনাথ লাহা প্রমুখ বন্ধুর সহযোগিতায় ১৯২৬ সালে আর্থিক উন্নতি নামে একটি উচ্চাঙ্গের মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি ‘বঙ্গীয় ধনবিজ্ঞান পরিষদ’ নামে একটি গবেষণা পরিষদ ১৯২৮ সালে স্থাপন করেন। বিনয়কুমার নিজেই আমৃত্যু পত্রিকার সম্পাদক ও পরিষদের পরিচালক ছিলেন (১৯২৬–৪৯)। উভয় প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল বাংলা ভাষায় ধনবিজ্ঞান-সংক্রান্ত তত্ত্ব ও তথ্যের গবেষণা ও বিশ্লেষণ। এ ছাড়া ১৯৩৭ সালে ‘বঙ্গীয় সমাজবিজ্ঞান পরিষদ’ স্থাপন করেন, যার কথা এই বইয়ের প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বিদেশে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবীদের তিনি নানাভাবে সাহায্য করতেন। তাঁর অনুজ ধীরেন সরকার প্রবাসী বিপ্লবীদের অন্যতম ছিলেন। স্বাধীন ভারতের বাণী প্রচারের জন্য আমেরিকা সফরকালে ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।

রচনাপঞ্জি

বিনয়কুমার সরকারের রচিত বইয়ের সংখ্যা অনেক। প্রভূত চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর সব বইয়ের হদিশ পাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই নীচে দেওয়া বইয়ের তালিকা পূর্ণাঙ্গ বলে দাবি করছি না। কিছু বই তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে।

ইংরেজি বই

 ১. The Science of History and the Hope of Mankind (London : Longmans, Green and Co., 1912).

 ২. Introduction to the Science of Education (Michigan : University of Michigan Library, 1913).

 ৩. The Positive Background of Hindu Sociology, vol. 1 (Allahabad : Panini Office, 1914); vol. 2 (Allahabad : Sudhindranath Basu, 1914).

 ৪. Chinese Religion Through Hindu Eyes : A Study in the Tendencies of Asiatic Mentality (Shanghai : Commercial Press, 1916).

 ৫. The Beginning of Hindu Culture as World-Power (ad 300-600) (Shanghai : Commercial Press, 1916).

 ৬. Love in Hindu Literature (Tokyo : Maruzen Co., 1916).

 ৭. Hindu Achievements in Exact Science : A Study in the History of Scientific Development (New York : Longmans, Green and Co., 1918).

 ৮. Hindu Art : Its Humanism and Modernism (New York : B W Huebsch, Inc, 1920).

 ৯. The Futurism of Young Asia and other Essays on the Relations Between East and the West (Berlin : Julius Springer, 1922).

 ১০. The Political Institutions and Theories of the Hindus (Leipzig : Markert and Petters, 1922).

 ১১. The Politics of Boundaries and Tendencies in International Relations (Calcutta : N M Ray Chowdhury and Co., 1926).

 ১২. Economic Development (Madras : B G Paul and Co., 1926).

 ১৩. The Political Philosophies Since 1905 (Madras : B G Paul, 1928).

 ১৪. Indian Currency and Reserve Bank Problems (Calcutta : N C Paul, 1934).

 ১৫. Imperial Preference vis-a-vis World Economy (Calcutta : N M Ray Chowdhury and Co., 1934).

 ১৬. The Sociology of Population with Special Reterence to Optimum Standard of Living and Progress : A Study of Social Relativities (Calcutta : N M Ray Chowdhury and Co., 1936).

 ১৭. Creative India : From Mohenjodaro to the Age of Ramkrishna-Vivekananda (Lahore : Motilal Banarasidas, 1937).

 ১৮. Secular and Social Strata in Buddhist Thought (Calcutta : Mahabodhi Society, 1937).

 ১৯. Studies Applied Economic (Calcutta : Chuckervertty Chatterjee and Co., 1938).

 ২০. The Political Institutions and Theories of the Hindus : A Study of Comparative Politics (Calcutta Chuckervertty Chatterjee and Co., 1939).

 ২১. The Folk Elements in Hindu Culture : A Contribution to Socio-Religions Studies in Hindu Folk-Institutions (Delhi : Munshiram Manoharlal, 1941).

 ২২. Villages and Towns as Social Patterns : A Study in the Process and Forms of Societal Transformation and Progress (Calcutta : Chuckervertty Chatterjee and Co., 1941).

 ২৩. Social Insurnace Legislation and Statistics : A Study in the Labour-Economics and Business Organisation of Neo-Capitalism (Calcutta : Chuckervertty Chatterjee and Co., 1941).

 ২৪. The Equations of World-Economy and Their Bearings on Post-war Reconstruction (Calcutta : Chuckervertty Chatterjee and Co., 1943).

 ২৫. Education for Industrialisation : An Analysis of the Forty Year’s Work of Jadavpur College of Engineering and Technology (Calcutta : Chuckervertty Chatterjee and Co., 1946).

 ২৬. Dominion India in World Perspectives, Economic and Political (Calcutta : Chukervertty Chatterjee ad Co., 1949).

 ২৭. India in America : The Diary of Benoy Sarkar’s Travels and Lecture in the USA, March 7–June 22, 1949 (Michigan : Craft Press, 1949).

 ২৮. Morals and Values in Indian Education (Delhi : Cosmo Publication, 2003, Reprint).

কবিতার বই

 ১. The Bliss of a Movement (Boston : Poet Lore Co., 1918).

অনূদিত বই

 ১. The Sukraniti (New Delhi : Oriental Books Reprint Corporatio, [1913] 1975).

বাংলা বই

 ১. শিক্ষা বিজ্ঞানের ভূমিকা (কলিকাতা : ইন্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, ১৯১০)

 ২. শিক্ষা বিজ্ঞান, প্রথম বিভাগ, শিক্ষা পদ্ধতি, প্রথম খণ্ড : প্রাচীন গ্রিসের জাতীয় শিক্ষা (কলিকাতা : সাহিত্য পরিষদ মন্দির, ১৯০১)

 ৩. শিক্ষা বিজ্ঞান, তৃতীয় বিভাগ, শিক্ষাপ্রণালী, তৃতীয় খণ্ড; ইংরাজি শিক্ষা, প্রথম ভাগ (কলিকাতা : চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এণ্ড কোম্পানি, ১৯১১)।

 ৪. শিক্ষা সমালোচনা (কলিকাতা : চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এণ্ড কোম্পানি, ১৯১২)।

 ৫. বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষা (কলিকাতা : চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এণ্ড কোম্পানি, ১৯১২)।

 ৬. ঐতিহাসিক প্রবন্ধ (কলিকাতা : চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এণ্ড কোম্পানি, ১৯১২)।

 ৭. সাধনা (কলিকাতা : মেটাকাফ প্রিন্টিং ওয়ার্কস, ১৯১৩)।

 ৮. হিন্দু সমাজতত্ত্বের বাস্তব ভিত্তি (কলিকাতা : ১৯১৪)।

 ৯. ইংরেজের জন্মভূমি (কলিকাতা : ১৯১৪)।

 ১০. বিংশ শতাব্দীর কুরুক্ষেত্র (কলিকাতা : ১৯১৪)।

 ১১. বিশ্বশক্তি (কলিকাতা : ১৯১৪)।

 ১২. বর্তমান জগৎ, ১৩ খণ্ড (কলিকাতা : গৃহস্থ পাবলিশিং হাউস, ১৯১৪-১৫)।

 ১৩. হিন্দু চোখে চীনা ধর্ম (কলিকাতা : ১৯১৭)

 ১৪. চীনা সভ্যতার অ আ ক খ (কলিকাতা : বেঙ্গল বুক কোম্পানি, ১৯২২)।

 ১৫. ইয়াংকিস্থান (কলিকাতা : ১৯২৩)।

 ১৬. দুনিয়ার আবহাওয়া (কলিকাতা : ওরিয়েন্ট লাইব্রেরী, ১৯২৫)।

 ১৭. বঙ্গীয় ধনবিজ্ঞান পরিষদ (কলিকাতা : ওরিয়েন্টাল লাইব্রেরী, ১৯২৬)।

 ১৮. নবীন এশিয়ার জন্মদাতা জাপান (কলিকাতা : ১৯২৬)।

 ১৯. যুবক বাংলার অর্থশাস্ত্র (কলিকাতা : ১৯২৭)।

 ২০. ধনদৌলতের রূপান্তর (কলিকাতা : ১৯২৮)।

 ২১. সুইটসার্ল্যাণ্ড (কলিকাতা : ১৯৩০)।

 ২২. বর্তমান যুগে চীন সাম্রাজ্য, হৃষিকেশ সিরিজ ১৩ (কলিকাতা : ১৯৩১)।

 ২৩. ইতালিতে বারকয়েক (কলিকাতা : সিটি লাইব্রেরী, ১৯৩২)।

 ২৪. গ্যেটে সাহিত্য ও জার্মাণ কুল্টুরের এক ছটাক (কলিকাতা : নিউ ওরিয়েন্ট লাইব্রেরী, ১৯৩২)।

 ২৫. নয়া বাঙ্গলার গোড়াপত্তন, প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ (কলিকাতা : চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এণ্ড কোম্পানি, ১৯৩২)।

 ২৬. প্যারিসে দশমাস (কলিকাতা : ক্যালকাটা পাবলিশার্স, ১৯৩২)।

 ২৭. হিন্দু রাষ্ট্রের গঠন, জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গ্রন্থাবলি ২ (কলিকাতা : জাতীয় শিক্ষা পরিষদ, ১৯৩২)।

 ২৮. বাড়তির পথে বাঙালি (কলিকাতা : বি সিনহা এণ্ড কোম্পানি, ১৯৪১)।

 ২৯. পরাজিত জার্মানি (কলিকাতা : ওরিয়েন্ট বুক এজেন্সি, ১৯৩৫)।

 ৩০. একালের ধনদৌলত ও অর্থশাস্ত্র (কলিকাতা : এম এন রায়চৌধুরী এণ্ড কোম্পানি, ১৯৩৭)।

 ৩১. বাংলার ধনবিজ্ঞান, প্রথম খণ্ড (কলিকাতা : চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এণ্ড কোম্পানি, ১৯৩৭)।

অনূদিত বই

 ১. নিগ্রোজাতির কর্মবীর, ১৯১৪; ওয়াশিঙ্গটন টি বুকার-এর Up from Slavery গ্রন্থের অনুবাদ।

 ২. পরিবার, গোষ্ঠী ও রাষ্ট্র, ১৯২৪; ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস-এর The Origin of the Family, Private Property and the State (1902) গ্রন্থের অনুবাদ।

 ৩. ধনদৌলতের রূপান্তর, ১৯৩২; পল লাফর্গ-এর The Evlution of Property from Savagery to Civilisation (1890) গ্রন্থের অনুবাদ।

 ৪. স্বদেশী আন্দোলন ও সংরক্ষণ নীতি, ১৯৩২। ফ্রিডরিখ লিস্ট-এর The National System of Political Economy (1885) গ্রন্থের ঐতিহাসিক অংশের অনুবাদ।

সম্পাদিত গ্রন্থ, পত্রিকা

 ১. আর্থিক উন্নতি, মাসিক পত্রিকা (কলিকাতা : বঙ্গীয় ধনবিজ্ঞান পরিষদ, ১৯২৬-৪৯)।

 ২. সমাজ বিজ্ঞান, প্রথম ভাগ (কলিকাতা : চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এন্ড কোম্পানি, ১৯৩৮)।

অন্য সংকলন

 ১. হরিদাস মুখোপাধ্যায় (সম্পা.), বিনয় সরকারের বৈঠকে (কলিকাতা : চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এন্ড কোম্পানি, ১৯৪১)।

ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (১৮৯৪–১৯৬১)

তাঁর পিতার মামার বাড়ি শ্রীরামপুরের চাতরাতে ধূর্জটিপ্রসাদের জন্ম হয় ৫ অক্টোবর ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে। পিতা ভূপতিনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৬৩–১৯২০) ওকালতি করতেন, প্রথমে হুগলিতে এবং পরবর্তীকালে আলিপুর-বারাসাত আদালতে। তাঁর মাতার নাম এলোকেশী দেবী (১৮৬৯–১৯৪৪)। অনেকগুলি স্কুল-কলেজে ধূর্জটিপ্রসাদের ছাত্রজীবন অতিবাহিত হয়। মাঝে কিছুদিন কলকাতার হেয়ার স্কুলে পড়লেও বারাসাত গভর্নমেন্ট স্কুলেই তিনি বেশিদিন পড়াশুনা করেন। এই স্কুল থেকেই ১৯০৯ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইংরেজি ও সংস্কৃতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। বিজ্ঞান নিয়ে ১৯০৯–১১ সাল অবধি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়েন, কিন্তু অসুস্থতার জন্য পরীক্ষা দিতে পারেননি। ১৯১২ সালে রিপন কলেজ থেকে আই এসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর রিপন কলেজেই ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে বি এ ক্লাসে ভর্তি হন, সঙ্গে নিয়েছিলেন রসায়নশাস্ত্র ও গণিত। দু-বছর পড়লেন কিন্তু পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারলেন না। পরীক্ষার ফলাফল দেখে পিতা ভূপতিনাথ চাইলেন ছেলেকে লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস-এ পড়াতে। ‘সিসিলিয়া’ জাহাজে যথাসময়ে রওনা দিয়ে অসুস্থতার জন্য কলম্বো থেকে ফিরে আসেন। ১৯১৬ সালে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে বি এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে এম এ এবং ল কলেজে আইন পড়বার জন্য ভর্তি হলেন। তাঁর আইন পরীক্ষা দেওয়া হয়নি, ১৯১৮ সালে ইতিহাসে এম এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন দ্বিতীয় বিভাগে। ১৯২০ সালে ধূর্জটিপ্রসাদ অর্থনীতিতে আবার এম এ পরীক্ষা দিলেন (তখন বিষয়টির নাম ছিল ‘Political Economy and Political Philosophy, Group B’)। পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। ওই বছরই তাঁর পিতা ভূপতিনাথের মৃত্যু হয়। এর আগের বছর ১৯১৯ সালে তাঁর সঙ্গে ছায়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবাহ হয়।

নিজের ছাত্রজীবন সম্বন্ধে বলেছেন : ‘ছিলাম এক কথায় “ফাজিল” ছেলে- অর্থাৎ পাঠ্যপুস্তক পড়তাম না, বাজে বই পড়তাম, যা পড়তাম তার চেয়ে বেশি কিনতাম, তারও বেশি ঘাটতাম, ও আরো বেশি “চাল” দিতাম। টাকার ভাবনা এক হিসেবে ছিল না, কেবল বাবা ও মা চা-চপ-কাটলেট, দর্জি ও বই-এর দোকানের বিল শোধ দেবার সময় রাগারাগি করতেন, এইটুকু ছাড়া চাকরি-বাকরির কথা মনে উঠতো না, পড়াশুনার সঙ্গে চাকরির সম্বন্ধ আমার অজ্ঞাত ছিল। ভালো ছেলের সঙ্গে যেমন মিশেছি, বখা ছেলের সঙ্গে তেমনই, বোধহয় একটু বেশি খুলে। একটা গোঁড়ামি ছিল চরিত্র সম্বন্ধে। গান শিখতাম ও ভালোবাসতাম, তবে ধ্রুপদী-তার নীচুতে নামিনি। থিয়েটার, খেলাধুলোর শখ ছিল। মেয়েদের সঙ্গে মিশেছি, তবে আগ্রহ ছিল না, লোভ তো নয়ই। বন্ধুত্ব করেছি প্রাণভরে-সমবয়সীর সঙ্গে। যা কিছু রোমান্স প্রধানত ওদেরই সঙ্গে। অন্যসব ছুটকো-ছাটকা-দু’এক বছরের বেশি তাদের জান ছিল না। কল্পনা-বিলাসী ছিলাম না, তবে কল্পনা ছিল। বাংলা সাহিত্যের প্রতি কোনো প্রকার আসক্তি ছিল না। “বাংলা বই” বলতাম বাংলা সাহিত্য বলতাম না। স্বদেশীযুগে “বন্দেমাতরম” গেয়েছি বটে, কিন্তু যেন মনে ধরেনি। লাঠি খেলা, সাঁতার দেওয়া, গাছে চড়া, স্বেচ্ছাসেবক হওয়া, বন্যা প্রপীড়িতের উদ্ধার, গ্রাম-উদ্ধার, নাইট-স্কুল, ইংরেজীতে বক্তৃতা-কিছু বাদ দিইনি বটে, কিন্তু হুজুকে পড়ে। মোদ্দা কথা পলিটিক্যাল জীব ছিলাম না।’ ছাত্রজীবনে অনেক বিখ্যাত অধ্যাপকদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, প্রমথ চৌধুরী, সতীশ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁর জীবনে সতীশ চট্টোপাধ্যায়ের প্রভাব সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেছেন। সিটি কলেজের অসামান্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন অধ্যাপক সতীশ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলেজের পড়ার সময় থেকে ধূর্জটিপ্রসাদের সম্পর্ক শুরু হয়, ‘যুবা বয়সের দোষগুণ তখন আমার স্বাভাবে ফুটে উঠেছে। একটা ভাবের ঘুরপাকে জীবনটা তখন পড়েছিল। তাঁর আদর্শবাদ আমাকে উদ্ধার করলে। আমার জীবনে আমার পিতার ও সতীশবাবুর আদর্শবাদের ছাপ সুস্পষ্ট।’

অর্থনীতিতে এম এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৯২১ সালে বঙ্গবাসী কলেজে এক বছরের মতো অধ্যাপনা করেন। রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় এই সময় ধূর্জটিপ্রসাদকে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যান এবং সেখানে তিনি ‘ইকনমিকস ও সোসিওলজি’ বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন ১ আগস্ট ১৯২২ সালে। তারপর প্রায় বত্রিশ বছর এই লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৪৫ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রীডার’ পদে নিযুক্ত হন। মাঝে ১৯৩৮-৪০ সালে যুক্তপ্রদেশ গভর্নমেন্টের ‘ডাইরেক্টর অব ইনফর্মেশন’ পদে কাজ করেছেন। এই সময় তিনি গভর্নমেন্টের ‘প্রেস অ্যাডভাইজার’ও ছিলেন। ১৯৪৯ সালে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রফেসর’ পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৫৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। লখনউ-এ তাঁর অধ্যাপনা-জীবন নিয়ে লিখেছেন : ‘বিশ বছর লেকচারার ছিলাম মনেই পড়েনি। আমার ধারণা ছিল যে পৃথিবীর সেরা য়ুনিভার্সিটিতে যে-সব লেকচারার আছেন, আমি যেন তাঁদের দলেই থাকি। I am the minimum lecturer in a first rate University in Europe-এই আমার বিশ্বাস ছিল। লেকচারার হওয়াটা সম্মানের কথা, তার বেশি হতেও চাইতাম না। অন্যে আমার চেয়ে বেশি কর্মশীল তাও বোধহয় জানতাম না, বীরবল সাহানীকে ছাড়া। সামান্য দু-একটি ঘটনা ছাড়া মনেই পড়ে না যে লেকচারার হয়েছি বলে সম্মান কম পেয়েছি। সাহিত্য ও সঙ্গীতে আমি তাঁদের সমানই ছিলাম, হয়ত কখনও বেশি। অতএব আমার তিলমাত্র আপসোস ছিল না। রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চোধুরী, শরৎ চাটুয্যে, অতুলপ্রসাদ প্রভৃতির সঙ্গে তুল্যমূল্য হিসেবে মিশতে পারতাম, কোনো তফাৎ থাকত না। গানের আসরে ত জগন্নাথক্ষেত্র। বাহবা দিয়েই এক হয়ে যেতাম। গানের আসরেই বোধহয় সত্যিকারের ডিমক্রেসি পেয়েছি। লখনৌ-এ সাহিত্য ও গানের আসরে ঐ ডিমক্রেসির জন্যই যা কিছু শ্রেণীবিভাগের ক্ষতিপূরণ হয়েছে। যে লখনৌ-এ মুশায়রা দেখেছে, সেই জানে এই কথা।’

অবসরের ঠিক আগে ১৯৫২ সালে হল্যান্ডের হেগ শহরে যে ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজ স্থাপিত হয় সেখানে প্রায় আট মাসের মতো ‘ভিজিটিং প্রফেসর’ হিসেবে থাকেন, ফিরে এসে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণ করে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ও প্রফেসরের পদ গ্রহণ করেন। সেটা ১ অক্টোবর ১৯৫৪ সাল, লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর অবসরের দিন। এখান থেকেই তিনি অবসর গ্রহণ করেন ১৯৫৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ঠিক ওই দিনই তিনি ঝিলিমিলি-তে লিখছেন : ‘প্রায় চব্বিশ বৎসর লেকচারার ছিলাম, বছর দুই পরে রীডার, তারপরেই প্রফেসর এবং শেষে ডিপার্টমেণ্টের কর্তা। এগুলো লখনৌ-এ। তারপর আরো পাঁচ বছর আলিগড়- সেখানেও কর্তা। তবে লেকচারার ছিলাম, বেশিরভাগ সময়। কিন্তু আমার ওপর তিলমাত্র আঁচ পড়েনি, দু’একদিনের ঘটনা ছাড়া। কর্তা হয়েও কর্তৃত্ব করতে পারিনি। ব্যাপারটা আমার ধাতেই বসেনি।’ ওই একই দিনের ডায়েরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের অধ্যাপনা সম্বন্ধেও লিখেছেন : ‘পড়েছি কিছু নিশ্চয়, এবং সেই সঙ্গে পড়িয়েছি। রোজ দু’ঘণ্টা, তারপর এক (ঘণ্টা) টিউটরিয়াল। প্রফেসর হয়ে অবধি সপ্তাহে ঘন্টা ছয়েক। প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রী আসত। বই-এর কথাই বেশি কইতাম, গল্পগুজোবও রোজই চলত। . . . আর একটা কথা মনে আসে। আমি ঠিক অধ্যাপক নই। অধ্যাপকীয় মনোভাব আমার আছে নিশ্চয়; তার চেয়ে বেশি বুদ্ধিপ্রবণতা; আরো বেশি সন্দেহাকীর্ণতা। শেষে দাঁড়ায় অনধ্যাপকীয়তা। সে বস্তুটা কী ভেবে পাই না। প্রথম কথা অনেকগুলি বিজ্ঞানকে এক সঙ্গে মেলাবার চেষ্টা, যেটা ঠিক অধ্যাপকীয় বিশেষজ্ঞতা নয়। সেজন্য ছেলেদের অত্যন্ত অসুবিধা হয়েছে জানি। নিজের ক্ষতি আরো। গান আমাকে অধ্যাপকীয় মনোভাব থেকে বাঁচিয়েছে। যদিও গানে পাগল ছিলাম তবু যেন সেটা বুদ্ধির দিক থেকেই ফুটে উঠেছে। . . . গান বাজনা শুনে আমার পক্ষে পুরোপুরি প্রফেসর হওয়া অসম্ভব। কেবল গান নয়, ছবি, আকাশবাতাস, নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে আমি অন্যরকম হয়ে যাই। বৃষ্টি এলো ঝমঝম করে, ছেলেদের ছুটি দিয়েছি। কোকিল ডাকলেও তাই, শীতের আমেজেও তাই, গাছের পাতা ঝরলেও তাই-কেবল ছুটি দিতে চাইতাম, কিন্তু বেশি দিতে পারতাম না রাধাকমলবাবু সামান্য বকতেন, বেশি কিছু নয়, নিজের বই নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। . . . অফিসিয়াল লেকচার দিয়েছি, কিন্তু কথাবার্তার ধরনেই আমার লেকচার হতো। তার ফলে আমার অনধ্যাপকীয় মনোভাব প্রকট হয়ে উঠেছিল। যা ইচ্ছা হয় তাই বলতাম, ভালোমন্দ সব কিছুই। অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব, ইতিহাস, সব টেনে আনতাম। দৃষ্টান্ত দিতাম সঙ্গীত, সাহিত্য প্রভৃতি থেকে। যা মনে এলো তাই করেছি, কেউ বাধা দেয়নি। স্বাধীনতা পেয়েছি খুবই বেশি। তার ফলে অনধ্যাপকীয় ভাবটাই বেশি এসেছে। সাধনা কিছু হয়ত করেছি।’১০

রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথের চিন্তা দ্বারা প্রভাবিতও ছিলেন। সবুজ পত্র পত্রিকার জন্মলগ্ন (১৩২১) থেকে প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়। পরে তাঁকে শিক্ষকরূপেও পেয়েছেন। লিখেছেন : ‘আমি কতখানি প্রমথবাবুর কাছ থেকে পেয়েছি? প্রায় সবখানিই, কুঁচিয়ে কাপড় পরা থেকে, সিগারেট খাওয়ার ধরন, চলন-বলন, সবই। রচনারীতি? তাও তাঁর, তবে ঠিক সম্পূর্ণ তাঁর নয়। . . . তবু তাঁর ছাঁচ থেকে গেছে।’১১ পরিচয় পত্রিকা ও তার সম্পাদক সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, এই পত্রিকায় লিখেছেনও তাঁর অনেক লেখা। ইন্ডিয়ান সোশিয়োলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, কার্যনির্বাহী সমিতি ও সম্পাদনা-পরিষদের সভ্য ছিলেন। ১৯৫৫ সালে দেরাদুনে অল ইন্ডিয়ান সোশিয়োলজিক্যাল কংগ্রেসের যে সভা হয়েছিল তিনি তার সভাপতি ছিলেন। তাঁর সভাপতির ভাষণটি ‘Indian Tradition and Social Change’ নামে Diversities গ্রন্থে মুদ্রিত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল সোশিয়োলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে তিনি ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং এই সংস্থার সহ-সভাপতিও ছিলেন। ১৯৫৫ সালের ডিসেম্বর মাসে কন্ঠনালীতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। মনে এলো বইয়ে ২০.১০.৫৫ তারিখে লিখেছেন : ‘এই প্রথম স্বাস্থ্যভঙ্গের ভয় পেলাম। মৃত্যু ভয় নয়। বহু মৃত্যু দেখেছি, রাগই হয়েছে বেশি, দুঃখের চেয়ে।’১২ ৩০.৪.৫৬ তারিখে মনে এলো বইয়ে তাঁর শেষ লেখায় লিখেছেন : ‘খাসা বন্দোবস্ত ডাক্তারদের। কথাবার্তা বন্ধ, চা-সিগারেট বন্ধ, বিদেশ যেতে হবে অস্ত্রোপচারের জন্য জুরিখ’১৩ যান ১৯৫৬ সালের মে মাসে, ওই মাসেই অস্ত্রোপচার হয়। তারপর কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। আলিগড় থেকে অবসর নিয়ে দেরাদুনে বাকি জীবনটা কাটাবেন ঠিক করেন। লিখেছেন : ‘দেরাদুনের বাড়ি থেকে দৃশ্য অপূর্ব। ঠিক পাশেই বেদের ‘ঋষিপর্ণা’ (রিসপান্না) সামনে চারধারে হিমালয় আর শিবালিক। নদীতে জল নেই, কিন্তু বর্ষা পাগলের মত পাহাড় থেকে হুড়মুড় করে চলে আসে। নদীর ওপারে শালের বন, তারই পারে সবুজ পাহাড়, তারও ওপর দু’সার বনহীন পাহাড়। চোখে পড়ে তিনটি পরত-আলো খুললে চারটি, এমনকি পাঁচটি। আজ দুদিন মেঘ ছিল, সামনের পাহাড় ঘন নীল হয়ে গেল, আধ ঘণ্টা পরে আবার সবুজ, ঘন সবুজ, হঠাৎ দেখি পাটল। পর্দার রঙের বাহার-থিয়েটারে দেখেছি। মানুষের দৃষ্টি দিয়েই প্রকৃতি দেখে, প্রকৃতি দিয়ে ছবি দেখে না।’১৪ নিজের বইয়ের যে সংগ্রহ ছিল তার ভার থেকেও যেন মুক্ত হতে চাইলেন : ‘এত বই জমে গেছে, এত নিয়ে কী করব! অথচ ছাড়তেও মন চায় না! দেরাদুনে বসে মাত্র দু’হাজার বই রাখব ভাবছি। আর্ট, সাহিত্য, ইতিহাস এবং সভ্যতা, আর কিছু সামান্য ইকনমিকস ও সমাজতত্ত্ব সম্বন্ধে।’১৫

দেরাদুন থেকে গ্রীষ্মকালে কলকাতায় আসতেন। ১৯৬১ সালে কলকাতা থেকে ফিরে গিয়ে দেরাদুনে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। নভেম্বর মাসে চিকিৎসার জন্য তাঁকে কলকাতায় আনা হল। উঠলেন ৪ নং শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটের বাড়িতে। আর সেরে উঠতে পারলেন না। ১৯৬১ সালে ৫ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হল।

রচনাপঞ্জি

ইংরেজি বই

 ১. Personality and the Social Sciences (Calcutta : Modern Art Press Publishers, 1924).

 ২. Basic Concepts of Sociology (London : Kegan Paul, Trench, Trubner & Co. 1932).

 ৩. Modern Indian Culture : A Sociological Study (Allahabad : 1942; Second Revised and Enlarged Edition, Bombay : Hindu Kitab Ltd. 1948).

 ৪. Tagore–A Study (Bombay : Padma Publishers, 1943).

 ৫. On Indian History : A Study in Method (Bombay : Hind Kitab Publishers, 1945).

 ৬. Indian Music : An Introduction (Poona : Kutub Publishers 1945).

 ৭. Views and Counterviews (London : The Universal Publishers Ltd., 1946).

 ৮. Problems of Indian Youth (Bombay : Hind Kitab, 1946).

 ৯. Diversities : Essays in Economics, Sociology and Other Social Problems (New Delhi : People’s Publishers House, 1958).

বাংলা বই

 ১. আমরা ও তাঁহারা (কলিকাতা : গুপ্ত ফ্রেণ্ডস এণ্ড কোং, ১৯৩১; নূতন সংস্করণ, কলিকাতা : ইণ্ডিয়ান এসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোং প্রাইভেট লিঃ, ১৯৬৩)।

 ২. রিয়ালিস্ট (কলিকাতা : কুন্দভূষণ ভাদুড়ী, ৯ রুস্তমজী স্ট্রীট, ১৩৪০ [১৯৩৩])।

 ৩. চিন্তয়সি (কলিকাতা : কুন্দভূষণ ভাদুড়ী, ৯ রুস্তমজী স্ট্রীট, বালীগঞ্জ, ১৯৩৩)।

 ৪. অন্তঃশীলা (কলিকাতা : সরস্বতী লাইব্রেরী, ১৩৪২, [১৯৩৫]; দ্বিতীয় সংস্করণ, শ্রাবণ ১৩৬৩)।

 ৫. সুর ও সঙ্গতি (কলিকাতা : কুন্দভূষণ ভাদুড়ী, ৯ রুস্তমজী স্ট্রীট, বালীগঞ্জ, ১৯৪২)।

 ৬. আবর্ত (কলিকাতা : ভারতী ভবন, [১৯৩৭])।

 ৭. কথা ও সুর (কলিকাতা : বিশ্বভারতী গ্রন্থালয়, [১৯৩৮])।

 ৮. মোহনা (কলিকাতা : ভারতী ভবন, [১৯৪৩?])।

 ৯. মনে এলো (কলিকাতা : নিউ এজ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৯৬৩)।

 ১০. বক্তব্য (কলিকাতা : বিদ্যোদয় লাইব্রেরী প্রাইভেট লিমিটেড, ১৯৫৭)।

 ১১. ঝিলিমিলি (কলিকাতা : ইণ্ডিয়ান এসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোং প্রাইভেট লিমিটেড [১৯৬৫])।

অন্য সংকলন

 ১. ধূর্জটিপ্রসাদ রচনাবলী, ১-৩ খণ্ড (কলিকাতা : দে’জ পাবলিশিং, ১৯৮৭)।

নির্মলকুমার বসু (১৯০১–১৯৭২)

নির্মলকুমার বসু উত্তর কলকাতায় তাঁর মাতুলালয়ে ২২ জানুয়ারি ১৯০১ সালে জন্মগ্রহণ করেন।১৬ পিতা বিমানবিহারী পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। তিনি প্রাদেশিক সরকারের চিকিৎসা বিভাগে সহকারী ‘সিভিল সার্জেন’-এর পদে চাকরি পান এবং পরে সিভিল সার্জেন পদে উন্নীত হন। তাঁর পিতামহ ভৈরবচন্দ্র বসু ছিলেন হুগলি জেলার দশঘড়া গ্রামের বাসিন্দা। বিমানবিহারীর বিবাহ হয়েছিল বাগবাজারের এক সম্পন্ন পরিবারের কন্যা কৃষ্ণশশীর সঙ্গে। কৃষ্ণশশীর পিতা ছিলেন নবীনকৃষ্ণ সরকার, যিনি সম্পদে ও সামাজিক প্রতিপত্তিতে ছিলেন কুলীন এবং কৃষ্ণশশী নিজে প্রাচুর্য ও স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে মানুষ হলেও জীবন-যাপনে কঠোর নিয়মানুবর্তী ছিলেন। সরকারি চাকুরে হিসেবে বিমানবিহারীকে প্রায়ই বদলি হতে হত বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত বাংলা প্রেসিডেন্সির এলাকাভুক্ত যেকোনো জায়গায়, ফলে ছোটোবেলায় নির্মলকুমারকে নানা স্কুলে পড়তে হয়। তিনি পড়াশুনা করেন পাটনার ইঙ্গ-সংস্কৃত স্কুলে (১৯০৬–১১), পশ্চিমবঙ্গের কামারহাটিতে সাগর দত্ত অবৈতনিক উচ্চ বিদ্যালয়ে (১৯১১–১২), রাঁচি জেলা স্কুলে (১৯১২–১৬) এবং পুরী জেলা স্কুলে (১৯১৬–১৭)। শেষ স্কুল থেকেই তিনি ১৯১৭ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরীক্ষায় পাশ করে তিনি কলকাতায় এসে স্কটিশ চার্চ কলেজে আই এসসি পড়তে শুরু করেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই ১৯১৭ সালে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়, তখন নির্মলকুমারের বয়স সতেরো বছর। ১৯১৯ সালে প্রথম বিভাগে আই এসসি পাস করে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভূতত্ত্বে অনার্স সহ রসায়ন, গণিত নিয়ে বি এসসি পাঠক্রমে ভর্তি হন। ১৯২১ সালে ভূতত্ত্ব অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করে বি এসসি পাস করেন, ওই কলেজেই ভূতত্ত্বে এম এসসি ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে পড়া ছেড়ে আন্দোলনে যোগ দেন।

পুরীতে তাঁর মায়ের কাছে ফিরে গেলেন। এইসময় তিনি ওড়িশার মন্দিরগুলির স্থাপত্য ও শিল্পশৈলীর বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন এবং নিখুঁত মাপজোকের মাধ্যমে স্থাপত্যের মূলগত পরিকল্পনার অন্বেষণে সচেষ্ট হলেন। এই সূত্রে তিনি এক বৃদ্ধ শিল্পী রাম মহারানার কাছ থেকে জীর্ণ প্রাচীন শিল্পশাস্ত্র গ্রন্থের সন্ধান পান এবং তার অধ্যয়ন করেন। পরবর্তী সময়ে এই বইটির অনুবাদ Canons of Orissan Architecture (১৯৩২) নামে প্রকাশিত করেন। এই সময় তিনি স্থির করেন পুরীর দর্শনার্থীদের মন্দিরস্থাপত্য বিষয়ে বক্তৃতা দেবেন। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় একদিন এইরকম বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হন এবং নির্মলকুমারের পরিচয় অবগত হন। তিনি নির্মলকুমারকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নব প্রতিষ্ঠিত নৃতত্ত্ব বিভাগে স্নাতকোত্তর ছাত্ররূপে যোগ দিতে বলেন। তিনি নির্মলকুমারকে বলেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, সুতরাং সেখানে পড়তে নির্মলকুমারের কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়। ফলে, ১৯২৩ সালে নির্মলকুমার আবার ছাত্র হিসেবে ফিরে এলেন, নৃতত্ত্ব বিভাগে এম এসসি ক্লাসে যোগ দিলেন। ১৯২৫ সালে এম এসসি পাশ করলেন, শুধু নৃতত্ত্বে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিষয়ে সব পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান লাভ করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে একটা ফেলোশিপ দেয় এবং তিনি ওড়িশার লালপাহাড় সামন্তরাজ্যের গভীর অরণ্য অঞ্চলের ঝুমচাষি জুয়াঙ্গদের নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন। তিনি ১৯৩৩ সালে প্রবাসী প্রত্রিকায় ‘জুয়াঙ্গ জাতি’ নিয়ে যে প্রবন্ধ লেখেন তার আলোচনা আমরা এই বইয়ে করেছি। নির্মলকুমার খুব বেশিদিন জুয়াঙ্গদের মধ্যে কাজ করতে পারেননি, কিন্তু তাঁর মনে একটা প্রশ্ন জাগতে শুরু করে। তিনি দেখলেন যে, নৃতাত্ত্বিক হিসেবে তিনি জুয়াঙ্গদের সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করছেন, অথচ এরাও অনাহার, অপুষ্টি, অসুস্থতায় কাতর, অশিক্ষায় অনুন্নত। এদের দুর্দশা দূর করার দায়িত্ব কার? নবীন ও প্রাচীন বইয়ে তিনি লিখেছেন : ‘মনে প্রশ্ন উঠিল . . . আমার জ্ঞানের দ্বারা জুয়াঙ্গদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ কি করা যায় না? উদ্ভিদবিজ্ঞানের পণ্ডিতেরা যেমনভাবে গাছের সহিত সম্বন্ধ স্থাপন করেন, তাহাদের কাটেন, কোটেন, অণুবীক্ষণের তলায় পাতিয়া পরীক্ষা করেন আমিও তো মানুষকে তেমনভাবেই পর্যবেক্ষণ করিতেছি। তাহাদের মানুষ বলিয়া গ্রহণ করিতে পারি নাই। উপস্থিত ক্ষেত্রে আমার কর্তব্য কী? এই প্রশ্ন ধীরে ধীরে আমার মনকে আলোড়িত করিতে লাগিল। দুঃখের সহিত বলিতে হইতেছে সেই সময় এই প্রশ্নের মীমাংসা করিতে পারি নাই।’১৭

ইতিমধ্যে তিনি গান্ধীর মত ও পথ সম্পর্কে ক্রমশ আগ্রহী হয়ে পড়েছিলেন, এ ব্যাপারে পড়াশোনাও করেছিলেন। তাঁর মনে হচ্ছিল গান্ধী-প্রদর্শিত পথে মানবকল্যাণ সাধিত হতে পারে। ১৯৩০ সালে তিনি বোলপুরে ‘খাদিসংঘ’ গড়ে তোলেন। যে বস্তিতে তিনি ‘খাদিসংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন সেখানে মুচি, হাড়ি, ডোম প্রভৃতি তথাকথিত অস্পৃশ্য জাতিদের বাস ছিল। এখানে তিনি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ‘শিক্ষাঘর’ নামে একটি নৈশ বিদ্যালয়েরও পত্তন করেন। এই সময় তিনি গান্ধীর আহ্বানে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দেন এবং ১৯৩১ সালে এইজন্য কারাবরণ করেন। সিউড়ি এবং দমদম সেন্ট্রাল জেলে তৃতীয় শ্রেণির বন্দি হিসেবে কারাবাস করেছিলেন। এক বছর পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি গান্ধীর আদর্শ ও কর্মপন্থা বিষয়ে পড়াশোনা ও লেখার কাজ করতে থাকলেন। তিনি ১৯৩৪ সালে গান্ধীর রচনা থেকে নির্বাচিত অংশ Selections from Gandhi প্রকাশ করেন নবজীবন ট্রাস্ট থেকে। তখনও তাঁর সঙ্গে গান্ধীর মুখোমুখি দেখা হয়নি। খান আবদুল গফর খানের মধ্যস্থতায় ১৯৩৪ সালেই নভেম্বর মাসে তাঁর সঙ্গে ওয়ার্ধায় গান্ধীর প্রথম সাক্ষাৎকার ঘটে। গান্ধীর মত ও পথ সম্পর্কে তাঁর মনে যে-সব প্রশ্ন ছিল নির্মলকুমার সেইসব প্রশ্ন গান্ধীর কাছে তুলে ধরেন, গান্ধীও ধৈর্য ধরে শুনে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন, তাঁর কাছে সত্যাগ্রহ, সমাজ পুনর্গঠন, অহিংসা প্রভৃতির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। নির্মলকুমারের ভষিষ্যৎ কর্মপন্থা ও চিন্তাভাবনায় গান্ধীদর্শনের গভীর প্রভাব পড়ে। ১৯৩৫ সাল থেকে তিনি গান্ধীর চিন্তাধারা প্রচারের কাজে প্রবৃত্ত হলেন। গান্ধীর চিন্তাধারার প্রভাব তাঁর নৃতত্ত্বচর্চার ক্ষেত্রেও পড়েছে। তাঁর এই বিশ্বাস দৃঢ় হয় যে, গ্রামের মানুষদের কাছ থেকেই সমাজ পুনর্গঠনের প্রধান শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। নৃতত্ত্বচর্চার পদ্ধতিতেও তিনি এক অন্য ধারা অনুসরণ করেন। সাধারণভাবে নৃতাত্ত্বিকরা একটি গ্রামে বা বসতিতে অনেকদিন একটানা বসবাস করে তার বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। অন্যদিকে নির্মলকুমার পরিব্রাজক ছিলেন, কোনো জায়গায় বেশিদিন একটানা থাকতেন না এবং তাঁর এই ভ্রমণের নমুনা তিনি নবীন ও প্রাচীন (১৩৩৭) ও পরিব্রাজকের ডায়েরী (১৩৪৭) বই দু-টিতে নানাস্তরের মানুষদের ছোটো ছোটো স্কেচের মাধ্যমে এক সামগ্রিক ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের পরিচয় দিতে চেয়েছেন। সম্পর্ক দেখাতে চেয়েছেন প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যের সঙ্গে নবীন ভারতের।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৩৮-এ নির্মলকুমারকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃতত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিতে রাজি করালেন। নির্মলকুমার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বিভাগে প্রগৈতিহাসিক পুরাতত্ত্ব পড়াতে আরম্ভ করলেন। নির্মলকুমার জানতেন যে, শুধু বই পড়া জ্ঞান থাকলেই চলবে না, যোগ করতে হবে বাস্তব ক্ষেত্রের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। সেই সুযোগ তিনি পেলেন ময়ূরভঞ্জের খননকার্যের প্রোজেক্টে যোগদান করে। তিনি ১৯৩৯ থেকে ১৯৪০ সাল এই অঞ্চলে পরিক্রমা করে খননকার্যে যোগদান করেন। ১৯৪২ সালে ১৭ আগস্ট গান্ধীর ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে দ্বিতীয়বার কারাবরণ করলেন। কিছুদিন প্রেসিডেন্সি জেলে থাকার পর প্রথম শ্রেণির রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে দমদম জেলে স্থানান্তরিত হন। ১৯৪৫ সালে তাঁকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হলে তিনি ভূগোল বিভাগে ‘মানবিক ভূগোল’-এর অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগে পরে ১৯৫৪ সালে তিনি রিডার-এর পদে উন্নীত হন। প্রফেসরের পদ কখনো পাননি। ১৯৪৬ সাল থেকে অবিভক্ত বাংলায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকলে, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, উচ্ছেদও বৃদ্ধি পেতে থাকল। এই পরিবেশে গান্ধী নোয়াখালি পরিদর্শন করা স্থির করলেন। নির্মলকুমার গান্ধীর সচিব হয়ে কাজ করেন, ১৯৪৬ নভেম্বর থেকে ১৯৪৭ মার্চ নোয়াখালিতে, এরপর ১৯৪৭ মে থেকে সেপ্টেম্বর কলকাতায়। এই অভিজ্ঞতার কথা নির্মলকুমার তাঁর My Days With Gandhi (১৯৫২) বইটিতে লিখে গেছেন। দ্বিতীয়বার ১৯৪৭ সালে গান্ধী যখন কলকাতায় এলেন তখন নির্মলকুমার তাঁর একান্ত সচিব ও দোভাষীরূপে কাছে ছিলেন। ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্টের কিছুদিন আগে আবার গান্ধী বাংলায় এলেন। সেটা ছিল কলকাতায় দাঙ্গার সময়। গান্ধী স্থির করলেন তিনি মুসলমান এলাকায় বাস করে তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন। ১৫০ বেলেঘাটা মেইন রোডের একটি বাড়িতে গান্ধীর শিবিরের ব্যবস্থা করা হল। নির্মলকুমার এই উত্তেজনাপূর্ণ সময় শান্তিসেনা গঠন করে অঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেন। এইখানেই ৭ সেপ্টেম্বর তাঁর সঙ্গে গান্ধীর শেষ দেখা হয়। সেদিন গান্ধীর কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার কথা, নির্মলকুমার বেলেঘাটায় তাঁর ঘরে ঢুকলে গান্ধী তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি (স্টেশনে) যাবে না?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘ব্যবস্থাপকরা আমার কথা ভুলে গিয়েছেন। ভিড়ের বদলে আপনার কাছ থেকে একলা বিদায় নিতেই আমার ভাল লাগবে।’ তিনি প্রণাম করলে গান্ধী তাঁকে আশীর্বাদ করেন। ‘এইভাবে তাঁর সঙ্গে আমার জীবনের শেষ দেখা হল।’১৮

পরবর্তী সময়ে ১৯৪৯ সালে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে নৃতত্ত্ব ও পুরাতত্ত্ব শাখার সভাপতি হন। ১৯৫১ সালে শরৎচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত ইংরেজি ভাষায় নৃতত্ত্বের জার্নাল Man in India-র সম্পাদক নিযুক্ত হন, আমৃত্যু এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। রবার্ট রেডফিল্ডের উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে শিকাগো ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে নানা বিষয়ে বক্তৃতা করেন। এটাই তাঁর প্রথম বিদেশ যাত্রা। ১৯৫৯ সালে তিনি ‘অ্যানথ্রোপলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’-র ডাইরেক্টর পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৪ সালে এখান থেকে অবসর নেন। ভারতের নৃতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের অধিকর্তা থাকাকলীন তিনি নানাবিধ গবেষণার উদ্যোগ নেন, সর্বভারতীয় স্তরে নানাবিধ তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। এর ফলে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় Peasant Life in India : A Study in Indian Unity and Diversity (১৯৬১), Data on Caste : Orissa  (১৯৬২)। তিনি কলকাতা শহরের এক সামাজিক সমীক্ষা করান ও তার ভিত্তিতে পরে Calcutta : 1964 : A Social Survey (১৯৬৮) বইটি রচনা করেন। তাঁরই উদ্যোগে দুই গবেষক বৈদ্যনাথ সরস্বতী ও নবকৃষ্ণ বেহুরা সর্বভারতীয় স্তরে মৃৎশিল্প ও শিল্পীদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। ফলস্বরূপ Pottery Techniques in Peasant India (১৯৬৬) বইটি প্রকাশিত হয়। ওই সময়েই তিনি ভারতীয় জাদুঘরের নৃতাত্ত্বিক প্রদর্শনী বিভাগটি নতুনভাবে সাজানোর ব্যবস্থা করেন। অবসরের পরে ১৯৬৫ সালে অসমে পার্বত্য জাতিসমূহ সমীক্ষা দলের আমন্ত্রিত সদস্য ছিলেন। এর পরের বছর ১৯৬৬ সালে নেফা (বর্তমান অরুণাচল প্রদেশ) সরকারের আমন্ত্রণে ‘নেফার শিক্ষা সমস্যা’ বিষয়ক একটি রিপোর্ট লেখার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর প্রতিবেদনটি ‘Educational Problems of NEFA’ নামে তপশিলি জাতি ও উপজাতি কমিশনারের ষোড়শ রিপোর্ট (১৯৬৮)-এ প্রকাশিত হয়। ১৯৬৭ সালে তিনি তপশিলি জাতি ও উপজাতি কমিশনার পদে যোগ দেন। এটাই তাঁর শেষ সরকারি চাকরি। এই পদে থেকে তিনি নিজে নানা অঞ্চলে, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পশ্চিম হিমালয় অঞ্চলে ঘুরে দেখতে লাগলেন। সেখানে নেতা, মানুষ, সকলের সঙ্গে উন্নয়নের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলেন, কীভাবে তপশিলী জাতি ও উপজাতিদের সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করা যায় সেই কথা তিনি বিভিন্ন প্রতিবেদনে লিখেছেন। ১৯৭০ সালে অবসর নিয়ে নির্মলকুমার ফিরে এলেন কলকাতায়, বাগবাজারের বোসপাড়া লেনের সেই বাড়িতেই। কাজের কোনো বিরাম ঘটল না। যথারীতি লেখাপড়ার কাজ, Man in India পত্রিকার সম্পাদনা, সবকিছুই আন্তরিকভাবে করতেন। এই সময় তাঁর একটি কাজ ছিল উর্দু শেখা, প্রতিদিন সকালে এক মৌলবির কাছে আধঘণ্টা উর্দু শিখতেন। নিজে ইংরেজি, বাংলা, সংস্কৃত, ওড়িয়া, হিন্দি জানতেন, পেশার সুবাদে সাঁওতালি ভাষা শিখেছিলেন, যুবা বয়সে জুয়াঙ্গদের ভাষা শিখতে চেয়েছিলেন।

আরও অনেক পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁকে পার্ক ভিউ নার্সিং হোমে ভর্তি করা হল। চিকিৎসার সময় ক্যান্সার ধরা পড়ল। তখন তাঁকে জানানো হয়নি। অস্ত্রোপচার হল এবং কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে এলেন। কাজকর্মও করতে লাগলেন। মাসছয়েক সুস্থ থাকার পর আবার অসুস্থ হলেন। তখন আত্মীয়পরিজনরা তাঁকে সব কথা জানাতে তিনি শান্তভাবে সব শুনলেন। বললেন আগে জানলে সময়টাকে ভেবেচিন্তে কাজে লাগাতে পারতেন। তিনি চিকিৎসকদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন কিছুদিনের জন্য তাঁকে আরও একটু সুস্থ করা যায় কি না, যাতে তিনি দক্ষিণ ভারতের মন্দির নিয়ে বাকি কাজটা শেষ করতে পারেন। শেষ অবধি রোগই তাঁকে কাবু করতে থাকে। প্রায় দেড় বছর লড়াই করে ১৫ অক্টোবর ১৯৭২ সালে তাঁর জীবনে পূর্ণচ্ছেদ নেমে এলো।

রচনাপঞ্জি

নির্মলকুমার বসু নানা বিষয় বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। নৃতত্ত্ব ছাড়াও তাঁর রচনার অনেকটা জুড়ে আছে গান্ধীর মত, পথ ও দর্শন নিয়ে তাঁর লেখাপত্র। এই তালিকায় আমি গান্ধী-বিষয়ক রচনাগুলি অন্তর্ভুক্ত করিনি।

ইংরেজি বই

 ১. Cultural Anthropology (Calcutta : Arya Sahitya Bhavan, 1929); Cultural Anthropology And Other Essays (Calcutta : Indian Publishing Co, Second Revised Edition 1953); Cultural Anthropology (Revised Edition, 1963).

 ২. Canons of Orissan Architecture (Calcutta : R. Chatterjee, 1932).

 ৩. Excavation of Mayurbhanj (Calcutta : University of Calcutta, 1948).

 ৪. My Days With Gandhi (Calcutta : Merit Publications, 1952; Calcutta : Nishan, 1953).

 ৫. Modern Bengal (Calcutta : Vidyodaya Library, 1959).

 ৬. Culture and Society in India (Calcutta : Asia Publishing House, 1967).

 ৭. Problems of National Integration (Simla : Indian Institute of Advanced Study, 1967).

 ৮. Calcutta : 1964 : A Social Survey (Bombay : Lalvani Publishing House, 1968).

 ৯. The Problems of Indian Nationalism (Bombay : Allied Publishers, 1969).

 ১০. Assam in the Ahom Age, 1228–1826 (Calcutta : Sanskrit Pustak Bhandar, 1970).

 ১১. Tribal Life in India (New Delhi : National Book Trust, 1971).

 ১২. Anthropology and Some Indian Problems (Calcutta : Institute of Social Research and Applied Anthropology, 1972).

 ১৩. The Structure of Hindu Society (Translated by André Béteille) (New Delhi : Orient Longman, 1975).

 ১৪. Indian Temple Designs (Calcutta : R. N. Bose, 1981).

বাংলা বই

 ১. কণারকের বিবরণ (কলিকাতা : ব্রাহ্মমিশন প্রেস, ১৯৩৩; দ্বিতীয় মুদ্রণ, কলিকাতা : পুরোগামী প্রকাশনী, ১৩৬৭)।

 ২. নবীন ও প্রাচীন (কলিকাতা : আর্য্যা সাহিত্য ভবন, ১৯৩৭; পরিবর্ধিত সংস্করণ, কলিকাতা : বেঙ্গল পাবলিশার্স, ১৩৫৬)।

 ৩. পরিব্রাজকের ডায়েরী (কলিকাতা : ডি এম লাইব্রেরী, ১৩৪৭; দ্বিতীয় সংস্করণ, কলিকাতা : বিদ্যোদয় লাইব্রেরী, ১৩৬৬; পুনশ্চ সংস্করণ, কলকাতা : পুনশ্চ, ২০০৭)।

 ৪. হিন্দুসমাজের গড়ন (কলিকাতা : বিশ্বভারতী, ১৩৫৬)।

 ৫. বিয়াল্লিশের বাংলা (কলিকাতা : সারস্বত লাইব্রেরী, ১৩৭৭)।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রচনা (নির্বাচিত)

 ১. ‘উড়িয়া শিল্পশাস্ত্র’, নব্যভারত, ৪১(৬), আশ্বিন ১৩৩০।

 ২. ‘উড়িয়া মন্দির’, নব্যভারত, ৪২(৮), অগ্রহায়ণ ১৩৩১।

 ৩. ‘হো-দের কথা’, মুকুল, অগ্রহায়ণ ১৩৩২।

 ৪. ‘সেরাইকেলা রাজ্যের হো-জাতি’, উত্তরা, ১(১২), ভাদ্র ১৩৩৩।

 ৫. ‘উড়িষ্যার মন্দির’, প্রবাসী, ৩১(১), ৩য় সংখ্যা, আষাঢ় ১৩৩৮।

 ৬. ‘রাজপুতানার মন্দির’, প্রবাসী, ৩১(৬), ৬ষ্ঠ সংখ্যা, আশ্বিন ১৩৩৮।

 ৭. ‘মধ্যভারতের মন্দির’, প্রবাসী, ৩১(২), ২য় সংখ্যা, অগ্রহায়ণ ১৩৩৮।

 ৮. ‘হিমালয় অঞ্চলের মন্দির’, প্রবাসী, ৩১(২), ৪র্থ সংখ্যা, মাঘ ১৩৩৮।

 ৯. ‘মানভূম জেলার মন্দির’, প্রবাসী, ৩৩(১), ৫ম সংখ্যা, ভাদ্র ১৩৪০।

 ১০. ‘জুয়াঙ্গ জাতি’, প্রবাসী, ৩৩(১), ৬ষ্ঠ সংখ্যা, আশ্বিন ১৩৪০; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ১১. ‘কোণার্কের মন্দির’, প্রবাসী, ৩৩(২), ১ম সংখ্যা, কার্ত্তিক ১৩৪০; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।।

 ১২. ‘ধনিক ও শ্রমিক’, দেশ, ১(১), অগ্রহায়ণ ১৩৪০।

 ১৩. ‘নুলিয়া জাতি’, প্রবাসী, ৩৩(২), ৫ম সংখ্যা, ফাল্গুন ১৩৪০; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ১৪. ‘নুলিয়া সমাজ’, প্রবাসী, ৩৪(১), ৪র্থ সংখ্যা, শ্রাবণ ১৩৪১।

 ১৫. ‘কবি’, শনিবারের চিঠি, ৭(৫), ফাল্গুন ১৩৪১; পূর্বে প্রকাশিত : ‘শ্রীযুক্ত বীরকিশোর মহান্তি’, বাণী, মাঘ ১৩৩৮; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ১৬. ‘সাধু’, শনিবারের চিঠি, ৭(৬), চৈত্র ১৩৪১; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ১৭. ‘শিল্পী’, শনিবারের চিঠি, ৭(৬), চৈত্র ১৩৪১; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ১৮. ‘দেশ সেবক’, শনিবারের চিঠি, ৭(৭), বৈশাখ ১৩৪২।

 ১৯. ‘অধ্যাপক’, শনিবারের চিঠি, ৭(৭), বৈশাখ ১৩৪২; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ২০. ‘ধাওতাল উরাওঁ বনের সংবাদ’, শনিবারের চিঠি, ৭(৯), আষাঢ় ১৩৪২।

 ২১. ‘ভারতের নৃতত্ত্বচর্চার একটি অধ্যায়’, প্রবাসী, ১৩৪২, পঞ্চম জর্জের ২৫ বছর রাজত্বকালের পূর্তি উপলক্ষে রজতজয়ন্তী গ্রন্থে প্রকাশিত।

 ২২. ‘বাঙালীর চরিত্র’, প্রবাসী, ৩৫(১), ৩য় সংখ্যা, আষাঢ় ১৩৪২; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ২৩. ‘বাঙালীর চরিত্র’, দেশ, ২(৩৮), ২৫ শ্রাবণ ১৩৪২; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ২৪. ‘বাঙালীর স্থাপত্য’, প্রবাসী, ৩৫(১), ৬ষ্ঠ সংখ্যা, আশ্বিন ১৩৪২; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ২৫. ‘বাঙালীর সমাজ’, দেশ, ৩(১), ৭ অগ্রহায়ণ ১৩৪২; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ২৬. ‘হিন্দু সোসিয়লিজম?’, প্রবাসী, ৩৫(১), ৩য় সংখ্যা, পৌষ ১৩৪২; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ২৭. ‘অবনত জাতির সামাজিক আন্দোলন’, নূতন পত্রিকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৩৩৬; বর্ধমান বার্ত্তা, ১৪ অক্টোবর ১৩৩৯ সংখ্যায় পুনর্মুদ্রিত; নবীন ও প্রাচীন (১৩৫৬) গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ২৮. ‘বাঙালীর ভূতত্ত্ব’, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় (সম্পা.), বঙ্গপরিচয়, ১ম খণ্ড (কলিকাতা : ১৩৩৬)।

 ২৯. ‘বাঙালীর নৃতত্ত্ব’, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় (সম্পা.), বঙ্গপরিচয়, ১ম খণ্ড (কলিকাতা : ১৩৩৬)।

 ৩০. ‘নৃতত্ত্বের পরিচয়’, দেশ, ৩(২৩), ১২ বৈশাখ ১৩৪৩ (২৫ এপ্রিল ১৯৩৬); কলিকাতা বেতারে প্রদত্ত কথিকা; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৩১. ‘নারী’, শনিবারের চিঠি, ৮(৭), বৈশাখ ১৩৪৩।

 ৩২. ‘চাইতা’, শনিবারের চিঠি, ৮(৮), জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৩; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৩৩. ‘মানুষের আচার ও সমাজ’, দেশ, ৩(২৭), ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৩ (২৩ মে ১৯৩৬); নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৩৪. ‘সন্ন্যাসী’, শনিবারের চিঠি, ৮(৯), আষাঢ় ১৩৪৩; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৩৫. ‘আন্দামান অধিবাসী’, দেশ, ৩(৩০), ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৩ (১৩ জুন ১৯৩৬)।

 ৩৬. ‘বীরভূমে দুর্ভিক্ষ’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১০ শ্রাবণ ১৩৪৩ (জুলাই ১৯৩৬)।

 ৩৭. ‘অজয় নদী’, শনিবারের চিঠি, ৮(১১), ভাদ্র ১৩৪৩; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৩৮. ‘স্বস্তিক’, ‘সন্তোষ সিংহ’, শনিবারের চিঠি, ৮(১২), আশ্বিন ১৩৪৩; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৩৯. ‘চম্বা ভ্রমণ’, দেশ, ৩(৪৮), ৩১ আশ্বিন ১৩৪৩ (১৭ অক্টোবর ১৯৩৬)।

 ৪০. ‘আবদুল গফার খান’, ‘মশরুরের সাধু’, শনিবারের চিঠি, ৯(৬), চৈত্র ১৩৪০।

 ৪১. ‘তুলসীদা’, শনিবারের চিঠি, ৯(৭), বৈশাখ ১৩৪৪; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৪২. ‘শিল্পী যামিনী রায়ের মতবাদ ও তাঁহার উত্তর’, বঙ্গশ্রী, ৫(১), ৪র্থ সংখ্যা, বৈশাখ ১৩৪৪; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৪৩. ‘বুদরো’, শনিবারের চিঠি, ৯(৮), জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৪; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৪৪. ‘রঘুয়া’, শনিবারের চিঠি, ৯(১০), শ্রাবণ ১৩৪৪; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৪৫. ‘উত্তর ভারতের মন্দির’, দেশ, ৪(৪৭), শারদীয় সংখ্যা ১৩৪৪ (৯ অক্টোবর ১৯৩৭)।

 ৪৬. ‘শিল্পী যামিনী রায়ের মতবাদ’, আনন্দবাজার পত্রিকা, শারদীয় সংখ্যা ১৩৪৪; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৪৭. ‘রাঁচী জেলার একটি উৎসব’, প্রবাসী, ৩৭(২), ১ম সংখ্যা, কার্ত্তিক ১৩৪৪; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৪৮. ‘ইতিহাসের গবেষণা’, শনিবারের চিঠি, ১০(২), অগ্রহায়ণ ১৩৪৪; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৪৯. ‘সমুদ্র’, শনিবারের চিঠি, ১০(৪), মাঘ ১৩৪৪; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৫০. ‘প্রাচীন কলিঙ্গের একটি গ্রাম’, প্রবাসী, ৩৮(১), ২য় সংখ্যা, জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৫।

 ৫১. ‘বিহারে বাঙালী’, প্রবাসী, ৩৮(১), ৪র্থ সংখ্যা, শ্রাবণ ১৩৪৫; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৫২. ‘রাজপুত্র’, শনিবারের চিঠি, ১০(১১), ভাদ্র ১৩৪৫; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৫৩. ‘স্বর্গের সংবাদ’, শনিবারের চিঠি, ১০(১২), আশ্বিন ১৩৪৫; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৫৪. ‘সাহিত্য সভা’, শনিবারের চিঠি, ১১(৩), পৌষ ১৩৪৫; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৫৫. ‘উড়িষ্যার প্রাপ্ত একখানি সচিত্র পুঁথি’, প্রবাসী, ৩৮(২), ৪র্থ সংখ্যা, মাঘ ১৩৪৫।

 ৫৬. ‘উড়িষ্যার দেওয়ালে আঁকা ছবি’, অলকা, ১(৫), মাঘ ১৩৪৫।

 ৫৭. ‘কোলদের দেশ’, শনিবারের চিঠি, ১১(৫), ফাল্গুন ১৩৪৫; পরিব্রাজকের ডায়েরী  গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৫৮. ‘সঢ়াইকলা রাজ্যে তৈল-নিষ্কাশন যন্ত্র’, সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা, ৪৫(৩), ১৩৪৫।

 ৫৯. ‘সিংহভূম জেলার প্রাচীনকালের মানব’, প্রবাসী, ৩৯(১), ১ম সংখ্যা, বৈশাখ ১৩৪৬।

 ৬০. ‘বসন্ত’, শনিবারের চিঠি, ১১(৯), আষাঢ় ১৩৪৬; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৬১. ‘মন্দিরের অন্তর’, সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা, ৪৬(২), ১৩৪৬।

 ৬২. ‘শহর’, শনিবারের চিঠি, ১১(১২), আশ্বিন ১৩৪৬; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৬৩. ‘বিদ্যার ব্যবহার’, শনিবারের চিঠি, ১১(৩), পৌষ ১৩৪৬; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানথ্রোপলজিকাল ইনস্টিটিউটে প্রদত্ত বক্তৃতা।

 ৬৪. ‘উৎসব’, শনিবারের চিঠি, ১২(৬), চৈত্র ১৩৪৬; পরিব্রাজকের ডায়েরী গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৬৫. ‘রবীন্দ্রনাথের ছবি’, দেশ, ৭(২৬), ২৮ বৈশাখ ১৩৪৭; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৬৬. ‘তৈল নিষ্কাশনের আরও কয়েকটি উপায়’, সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা, ৪৭(১), ১৩৪৭।

 ৬৭. ‘সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্কোচ’, বর্ধমান বার্ত্তা, ১৫ আশ্বিন ১৩৪৭।

 ৬৮. ‘ময়ূরভঞ্জ-রাজ্যে প্রাচীনকালের মানব’, প্রবাসী, ৪০(১), ১ম সংখ্যা, আশ্বিন ১৩৪৭।

 ৬৯. ‘উড়িষ্যার কয়েকটি অখ্যাত মন্দির’, প্রবাসী, ৪০(২), ১ম সংখ্যা কার্ত্তিক ১৩৪৭।

 ৭০. ‘বাঙালীর প্রতিষ্ঠান’, শনিবারের চিঠি, ১৩(২), অগ্রহায়ণ ১৩৪৭; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৭১. ‘শিল্পীদের কথা’, রূপ ও গীতি, ৩(৬), আশ্বিন ১৩৪৮।

 ৭২. ‘শিক্ষকদের যোগাভ্যাস’, শিক্ষা, ফাল্গুন ১৩৪৮, নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৭৩. ‘রোম্যাঁ রলাঁ’, শনিবারের চিঠি, ১৭(৪), মাঘ ১৩৫১।

 ৭৪. ‘স্বাধীনতার ঘোষণা অন রোম্যাঁ রলাঁ’, শনিবারের চিঠি, ১৭(৫), ফাল্গুন ১৩৫১; নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৭৫. ‘বুডু’, শনিবারের চিঠি, ১৭(৮), জ্যৈষ্ঠ ১৩৫২।

 ৭৬. ‘পুরীতে আবিষ্কৃত একটি মূর্তি’, প্রবাসী, ৪৫(২), ৪র্থ সংখ্যা, মাঘ ১৩৫২।

 ৭৭. ‘দেশের কাজ ও আমাদের শক্তি’, মন্দিরা, শারদীয় সংখ্যা ১৩৫৩; হিন্দুসমাজ ও তাহার ইতিহাস প্রবন্ধমালায় পুনর্মুদ্রিত।

 ৭৮. ‘বিভক্ত বাংলার সীমানা’, সংগঠন, ২ শ্রাবণ ১৩৫৪।

 ৭৯. ‘সাম্প্রদায়িক সমস্যার একদিক’, দেশ, ১৩(২৯), ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৫৩ (২৫ মে ১৯৪৬); নবীন ও প্রাচীন গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত।

 ৮০. ‘মুণ্ডাজাতির ইতিকথা’, শারদীয় দেশ ১৩৫৩।

 ৮১. ‘হিন্দুসমাজ ও তাহার ইতিহাস’, (ধারাবাহিক) দেশ, ১৪ চৈত্র ১৩৫৪–১২ আষাঢ় ১৩৫৫।

 ৮২. ‘আদিবাসীদের সমস্যা ও (তাহার) প্রতিকার’, লোকসেবক, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৩৫৬ (২৯ মে ১৯৪৯)।

 ৮৩. ‘ভারতের রাষ্ট্রভাষা’, জয়শ্রী, ২০(৮–৯), অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৬২।

 ৮৪. ‘ভদ্রতা’, সচিত্র ভারত, ১৪ এপ্রিল ১৯৫০।

 ৮৫. ‘প্রাদেশিকতা’, বসুমতী, শারদীয় সংখ্যা ১৩৫৭; দৈনিক বসুমতী, ৩০ আশ্বিন ১৩৫৭, সংখ্যা পুনর্মুদ্রিত।

 ৮৬. ‘জাতীয় ঐক্য’, শনিবার চিঠি, ২১(১২), আশ্বিন ১৩৫৭।

 ৮৭. ‘অস্পৃশ্যতার সমস্যা’, প্রবাসী, ৫০(২), ১ম সংখ্যা, কার্ত্তিক ১৩৫৭।

 ৮৮. ‘সমাজ বিজ্ঞানের দায়িত্ব’, যুগান্তর, ৬ কার্ত্তিক ১৩৫৭।

 ৮৯. ‘জাতিভেদের উচ্ছেদ’, শনিবারের চিঠি, ২৩(৫), ফাল্গুন ১৩৫৭।

 ৯০. ‘মধ্যবিত্ত জীবনে পারিবারিক সমস্যা’, মাসিক বসুমতী, শারদীয় সংখ্যা ১৩৫৮।

 ৯১. ‘গল্প বল’, শনিবারের চিঠি, ২৫(৮), জ্যৈষ্ঠ ১৩৬০।

 ৯২. ‘স্বাধীনতার ইতিহাস লেখা’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩১ শ্রাবণ ১৩৬১ (১৫ আগস্ট ১৯৫৪)।

 ৯৩. ‘স্বাধীনতা স্বরূপ’, বিপ্লবী বাঙ্গালী, ১৬ আশ্বিন ১৩৬৩ (২ অক্টোবর ১৯৫৬)।

 ৯৪. ‘কালের দাবী’, ‘বিজ্ঞানের সাধনা’, ‘কবি ও সমাজ’, ‘সামাজিক ঐক্যের চেতনা’, ‘কলিকাতায় সমাজ বৈষম্য’, ‘ঐক্যের সাধারণী, ‘ত্রয়ানাং বৃদ্ধানাম সভা’, ‘আর্থিক সংগঠনের মূলসূত্র’, বসুধরা, ১(১–৬), বৈশাখ-কার্ত্তিক ১৩৬৪।

 ৯৫. ‘আমেরিকার চিঠি (১ থেকে ৬), সাধারণী, ৯(৭–১২), কার্ত্তিক-চৈত্র ১৩৫৪।

 ৯৬. ‘কেশবচন্দ্র ও ভারতের জাগরণ’, শনিবারের চিঠি, ৩১(৭), বৈশাখ ১৩৬৬।

 ৯৭. ‘আধুনিক বঙ্গদেশ’, মাসিক বসুমতী, ৩৮, ২য় খণ্ড (৩–৬), পৌষ-চৈত্র ১৩৬৬; ৩৯, ১ম খণ্ড (১–২), বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৬৭।

 ৯৮. ‘জাতিভেদ প্রথার বিষয়ে গবেষণা’, জ্ঞান ও বিজ্ঞান, রাজশেখর বসু সংখ্যা ১৩৬০।

 ৯৯. অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন জেলার বিবরণ, যা পরে বিয়াল্লিশের বাংলা (১৩৭৮) গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত, দর্শক, ২য় খণ্ড (৯–২২), ৩য় খণ্ড (১–২১), ৪র্থ খণ্ড (১–৯), ১৯৬১–১৯৬৩।

 ১০০. ‘কলিকাতার সমাজ জীবন’, শারদীয় যুগান্তর, ১৩৭৩।

 ১০১. ‘রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানের প্রতি অনুরাগ’, শনিবারের চিঠি, ৩৪(৬), চৈত্র ১৩৬৮।

 ১০২. ‘স্বামী বিবেকানন্দ ও সমাজ সংস্কার’, স্বামী বিবেকানন্দ স্মারক গ্রন্থ (কলিকাতা : শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্তমঠ, ১৩৬৩)।

 ১০৩. ‘জাতীয় সংহতির সমস্যা’, কম্পাস, ২১ মে ১৯৬৪-তে বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ অবলম্বনে রচিত।

 ১০৪. ‘কলকাতা’, দেশ, ‘আদিবাসী সমস্যা’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৯ মার্চ ১৯৬৫, ১০ এপ্রিল ১৯৬৬।

১০৫. ‘খাদ্য বণ্টনে সমস্যা’, ‘আদিবাসী সমস্যা’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৯ মার্চ ১৯৬৫, ১০ এপ্রিল ১৯৬৬।

 ১০৬. ‘বাঙ্গালায় বিজ্ঞান’, দেশ, ৩৩(২৩), ২৬ চৈত্র ১৩৭২ (৯ এপ্রিল ১৯৬৬)।

 ১০৭. ‘ঝাড়খণ্ড প্রসঙ্গে’, সবিতা, ২(১০), জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৩।

 ১০৮. ‘রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞান’, যুগান্তর, শারদীয় সংখ্যা ১৩৭৩।

 ১০৯. ‘গণতন্ত্র ও ভারতীয় সমাজ’, জ্ঞান বিজ্ঞান, শারদীয় অক্টোবর ১৯৬৬।

 ১১০. ‘ভাঙা ও গড়া’, দেশ, ২৫ বৈশাখ ১৩৭৮।

 ১১১. ‘মধ্যযুগে গণ আন্দোলন’, তত্ত্বকৌমুদী, ৯৪(৩–৪), জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৮।

 ১১২. ‘কলকাতার সামাজিক সমস্যা’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২১ ফাল্গুন ১৩৭৭ (৬ মার্চ ১৯৭১)।

সম্পাদিত গ্রন্থ

 ১. Peasant Life in India : A Study in Indian Unity and Diversity (Delhi : Manager of Publications : Anthropological Survey of India Memoir No. 8, 1961; Second Edition, 1967).

 ২. The Aryan Occupation of Eastern India (Calcutta : Indian Studies : Past & Present, 1962).

 ৩. Data on Castes : Orissa (Cacutta : Anthropological Survey of India, 1962).

 ৪. Studies in Indian Anthropology (Calcutta : Indian Studies : Past & Present, 1966).

অন্য সংকলন

 ১. Selected Writings : Archaeology Architecture and Art (Kolkata : Cenre for Archaeological Studies and Training, Eastern India, 2006).

 ২. নির্বাচিত রচনা : প্রত্নতত্ত্ব, স্থাপত্য ও শিল্পকলা (কলিকাতা : সেন্টার ফর আর্কিওলজিকাল স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেনিং, ইস্টার্ণ ইন্ডিয়া, ২০০৬)।

 ৩. সাতচল্লিশের ডায়েরি, অভীককুমার দে (সম্পা.), (কলকাতা : পুনশ্চ, ২০০৮)।

বিনয় ঘোষ (১৯১৭–১৯৮০)

বিনয় ঘোষের জন্ম হয় ১৯১৭ সালের ১৪ জুন, কলকাতার মনোহরপুকুর অঞ্চলে।১৯ পিতা বিশ্বেশ্বর ঘোষ প্রথমজীবনে কেরানি ছিলেন, নিজের কর্মকুশলতার গুণে উচ্চতর পদে উন্নীত হন। মায়ের নাম সরসীবালা। তাঁদের আদি নিবাস ছিল যশোহর জেলার বনগাঁ মহকুমার অন্তর্গত গোড়াপাড়া গ্রামে। মায়ের দেশ মালদহ। বিনয় ঘোষের স্ত্রী বীণা ঘোষ লিখেছেন : ‘ভবানীপুরে বিনয় ঘোষের পৈত্রিক বাড়ী। সেখানে হাজরা লেনের এক গলিতে এক নিম্নমধ্যবিত্ত পাড়ায় আমাদের টিনের কুটির। বাড়ীওয়ালা তো বটেই, ভাড়াটেরাও বহুকালের বাসিন্দা। কিছু ছোট ছোট বাড়ী গোলপাতা বা হোগলা পাতার ছাউনি দেওয়া, কোনটা বা টিনের। . . . সকলেই নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর।’২০ সংসারের হাল ধরে রেখেছিলেন ঠাকুমা। তিনি ছিলেন বহুগুণের অধিকারিণী। ‘করিৎকর্মা, রন্ধনে নিপুণা, সূচিশিল্পে পারদর্শিনী- ফুলতোলা কাঁথা থেকে শুরু করে উলবোনার কাজ সবই খুব ভালো জানতেন। তাঁর তৈরী ফুলতোলা কাঁথা বিনয় ঘোষ অনেক সময় বেড-কভার হিসেব পেতে রাখতেন। সংসারটাকে ঠাকুমাই আগলে রেখেছিলেন।’২১ পিতা বিশ্বেশ্বর ছিলেন রাশভারী, সত্যনিষ্ঠ ও নিরলস কর্মী। সেন্ট্রাল টেলিগ্রাফ অফিসে কাজ করতেন, এখানকার ইউনিয়ন সংগঠনের কাজেও তিনি ছিলেন অগ্রণী ও পরম উৎসাহী। ‘রাতের পর রাত জেগে তিনি ইউনিয়নের আদর্শ, কর্মপদ্ধতি ও নিয়মাবলীর খসড়া তৈরী করেছেন। কর্মচারীদের জন্য অল্প খরচে খাঁটি জিনিস তৈরী করার জন্য ক্যানটিন গঠনের ব্যবস্থা করেছেন। . . . ১৯১১ সালে মোহনবাগান ইউরোপীয় দলের সঙ্গে খেলায় জয়লাভ করে। বাবা খেলা দেখার জন্য PMG-র কাছে ছুটির দরখাস্ত করলেন। সাহেব PMG ছুটি মঞ্জুর করলেন না। বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে চাকুরী ছাড়ার দরখাস্ত সাহেবের কাছে দিয়ে বেরিয়ে এলেন। তখন কলকাতার সংসার এবং দেশের একান্নবর্তী সংসারের বিরাট বোঝা তাঁর কাঁধে। সাহেব দরখাস্ত পড়ে চমকে উঠে তাঁকে ডেকে পাঠালেন। ছুটি তো মঞ্জুর হলোই উপরন্তু পেলেন অকুষ্ঠ প্রশংসা। প্রসঙ্গত বলা দরকার বাবা ছোট-বড় নানা কারণে বাহান্নবার (৫২) চাকুরি ছেড়ে ছিলেন।’২২ মা, সরসীবালার স্বভাব ছিল কোমল, তিনি সকলের কাছ থেকে নিজের স্বভাবগুণে ভালোবাসা পেয়েছিলেন। বিনয় ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি বইটি মায়ের স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছিলেন।

বিনয় ঘোষের বিদ্যারম্ভ হয় মনোহরপুকুরের এক পাঠশালায়, স্থানীয় লোকেরা সে পাঠশালাকে বলত ‘নীরদ মাস্টারের পাঠশালা’। পরে ক্যাথিড্রাল মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাশ করেন। আশুতোষ কলেজ থেকে আই এ ও অর্থনীতিতে অনার্স নিয়ে বি এ পাশ করেন। পরবর্তীকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যানসিয়েন্ট ইন্ডিয়ান হিস্টরি অ্যান্ড কালচার (অ্যানথ্রোপলজি গ্রুপ) বিষয়টিতে এম এ পাশ করেন। নিজের পরিচিতি দিতে গিয়ে ১৯৭৬ সালে এক জায়গায় লিখেছেন : ‘বিনয় ঘোষের জন্ম দক্ষিণ কলকাতার মনোহরপুকুর অঞ্চলে যদিও দেশ যশোহর জেলার বনগ্রাম মহকুমার সারসা থানাধীন গোড়াপাড়া গ্রামে বর্তমান বাঙলাদেশ। মা সরসীবালা ঘোষ মৃত বাবা বিশ্বেশ্বর ঘোষ মৃত। শিক্ষারম্ভ বেত্রাঘাতসহ কলকাতার যমের মতো ভয়াবহ খোঁড়া নীরদ মাস্টারের পাঠাশালায় এবং জীবনে চরমশিক্ষা হলেও শিক্ষার শেষ আজও হয়নি হবেও না এবং মৃত্যু সুনিশ্চিত কিন্তু কবে জানা নেই।’২৩ সাংবাদিকতায় তাঁর কর্মজীবনের সূচনা। ফরোয়ার্ড, অরণি, দৈনিক বসুমতী, যুগান্তর প্রভৃতি বহু পত্রপত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করেছেন। অরুণ মিত্র লিখেছেন তাঁর সঙ্গে বিনয় ঘোষের পরিচয় হয় ১৯৩৮–৩৯ সালে এবং তাঁরা অনেকে একটা ঘরোয়া আড্ডায় মিলিত হতেন। ‘তারপর আমাদের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বেরুল। অরণি নামে প্রকাশিত সেই পত্রিকার সঙ্গে আমরা সকলেই যুক্ত হয়ে পড়লাম। আমরা সকলেই অর্থাৎ বিনয় ঘোষ, স্বর্ণকমল ভট্টাচার্য, সরোজ দত্ত প্রত্যেকেই। একসঙ্গে আমরা অরণি-র কাজ করতাম আর কাজের শেষে জবরদস্ত আড্ডা চলত।’২৪ বস্তুত তাঁর লেখার সূত্রপাত ছাত্রজীবন থেকেই। প্রথম বই শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ (১৯৪০) প্রকাশিত হয় যখন তাঁর তেইশ বছর বয়স। অল্পবিস্তর সাংবাদিকতার কাজ করলেও দীর্ঘদিন নিয়মিতভাবে কোথাও চাকরি করেননি। যুগান্তর পত্রিকার সাহিত্য-সম্পাদক ছিলেন ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ অবধি, দৈনিক বসুমতী পত্রিকার সহ-সম্পাদক ছিলেন ১৯৪৬–৪৭ সালে, ইংরেজি সাপ্তাহিক ফরোয়ার্ড ব্লক-এর সহকারী সম্পাদক ছিলেন ১৯৩৯–৪০ সালে। মোটামুটি এই তাঁর চাকরির বিবরণ। স্বাধীনভাবে লেখার উপর নির্ভর করেই তিনি তাঁর জীবন চালিয়েছেন এবং এজন্য তাঁকে যথেষ্ট কষ্টও করতে হয়েছে এক সময়।

তাঁর স্ত্রী বীণা দত্ত (জন্ম ২৫ জানুয়ারি ১৯১৮) শ্রীহট্ট জেলার বাসিন্দা ছিলেন। ছাত্রজীবনে সুরমাভ্যালি ছাত্রী-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। সেই সূত্রেই বিনয় ঘোষ তাঁকে নামে চিনতেন এবং দু-জনের পরিচয় হয় ১৯৪১ সালে। এর পরই তিনি বিয়ে করেন। বীণা ঘোষ লিখেছেন : ‘অপেক্ষাকৃত অল্প বয়সে বিনয় ঘোষ বিয়ে করেছিলেন। সুতরাং রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবী মহলে কিঞ্চিৎ সাড়া পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত “কৌতূহলী জনতা” সরজমিনে তথ্য সংগ্রহের জন্য মুজাফফর আহম্মদের কাছে হাজির হলেন। কাকাবাবু বললেন-‘সীলেটের কমরেড বারীন দত্তের বোন।’ একটি বাক্যে সব প্রশ্নের সমাধান হয়ে গেল। তখন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির যুগ। আমাদের পরিবার শিক্ষায়, রাজনীতিতে ও সামাজিক অগ্রগতিতে ‘লাল পরিবার’ বলে পরিচিত ছিল। আর ভূমিকার প্রয়োজন হল না।’২৫ বীণা ঘোষ অবিচ্ছিন্ন বত্রিশ বছর শিক্ষকতা করেন স্যার নৃপেন্দ্রনাথ গার্লস স্কুলে এবং ১৯৮৪ সালে অবসর নেন।

বিনয় ঘোষ প্রথমে ঠিক করেন পি এইচডি করবেন এবং সেই অনুযায়ী নীহাররঞ্জন রায়ের কাছে কাজও শুরু করেছিলেন। বিষয় ছিল আদিবাসীদের ঘরবাড়ির উদ্ভব, বিকাশ, এবং এইসব ঘরবাড়ি থেকে কীভাবে আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের একচালা দোচালা থেকে আরম্ভ করে আটচালা পর্যন্ত বাড়িগুলোর বিবর্তন ঘটেছে। এই কাজের জন্য ফিল্ড-ওয়ার্কও শুরু করেন, কিন্তু অর্থের প্রয়োজনে এই কাজ আর তাঁর করা হয়নি। পঞ্চাশ দশকের শুরুতে তিনি পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি-র কাজ শুরু করেন। নীহাররঞ্জনের কথায় : ‘তারপর একদিন তার খেয়াল হল। আমায় এসে জানাল “আমি পশ্চিমবাংলার সংস্কৃতি, তার গ্রামীণ সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করবো। ঠিক যে বিষয়টা আপনি দিয়েছেন, এটা নিয়ে আমি “থিসিস” করবো না। যদি করতে হয় তবে ঐটে-ই।”‘২৬ এর জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে ঘুরতে আরম্ভ করেন, বীণা ঘোষের ভাষায়, ‘ক্যামেরা আর ফীল্ডনোট হাতে নিয়ে।’ বীণা ঘোষ লিখেছেন : ‘পাঁচ-দশ মিনিট সময়ও নষ্ট করেননি অযথা। এসেই পরিচ্ছন্ন হয়ে বসেছেন ফীল্ডনোট খুলে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লিখে চলেছেন অনেক রাত পর্যন্ত দুটো-আড়াইটে-তিনটে। এইভাবে চলেছে মাসের পর মাস-বছরের পর বছর। সামনের দরজা সম্পূর্ণ খোলা। পাড়ার লোকে বলত বিনয়বাবুর জন্য পাড়ায় চোর আসে না।’২৭ পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে, এই বইয়ের জন্য তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার পান ওই বছরেই। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালে তাঁকে সরোজিনী বসু মেডেল প্রদান করে, কিন্তু সে পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিদ্যাসাগর বক্তৃতামালা’র তিনিই প্রথম বক্তা। ১৯৬১–৬৪ সালে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রকফেলার রিসার্চ ফেলো ছিলেন, তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘কলকাতার সামাজিক-সংস্কৃতিক ইতিহাস : ১৭০০–১৯০০’।

যেহেতু কোনো নিয়মিত চাকরি ছিল না, লেখাই ছিল তাঁর অর্থোপার্জনের একমাত্র উপায়, তাই কলম কোনোদিন থামাতে পারেননি। কষ্টও করতে হয়েছে অনেক। বীণা ঘোষ লিখেছেন : ‘অনশনে অর্ধাশনে দিন কেটেছে কিন্তু কলম থামেনি। . . . আমাদের টিনের কুটিরে বিজলী পাথা ছিল না। ছোট ছোট ঘর। একখানা ঘরে খাট আর ফোল্ডিং টেবিল পেতে তার আনাচে কানাচে বই-এর তাক আর তাকের উপরে স্তূপীকৃত বই। এতটুকু জায়গা ছিল না। ছোট ছোট দু’টো জানলা। উপরে টিনের ছাউনী। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসে দেখতাম ঘাম ঝরছে অনবরত। লিখে চলেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আরাম নেই বলে কোনো অভিযোগ শুনিনি কোনোদিন। পরে যখন নিজে বাড়ি করলেন তখন দেড়তলা গ্যারেজের উপরের ঘরটা লেখার জন্য ঠিক করলেন। সেটা বাড়ির পশ্চিম দিক। অফিসের মতো সকাল এগারটা থেকে বিকেল চারটা পাঁচটা অবধি একটানা কাজ করেছেন। নীচু ছাদ আর পশ্চিমের রোদ্দুরে সন্ধ্যে অবধি ঘরটা আগুনের মতো গরম হয়ে থাকত। ঢোকা যেত না। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী দৈনিক কাজ তিনি সম্পূর্ণ করতেন।’২৮ কাজের শেষে সন্ধ্যেবেলায় ওই ঘরেই তিনি, তাঁর ভাষায়, ‘আসনে’ বসতেন। নিজের পড়াশুনার ঘর সম্বন্ধে খুব পজিটিভ ছিলেন। প্রথমবার যখন ওই ঘরে আমাকে ‘আসন’-এ বসতে আমন্ত্রণ জানান তখন বলেছিলেন সকলের ওই ঘরে প্রবেশাধিকার নেই, ‘আসন’-এ বসবার অধিকার তো নয়ই। পরে অবশ্য ওই ঘরে বহুবার তাঁর সঙ্গে ‘আসন’-এ বসবার সুযোগ ঘটেছিল। টেবিল-চেয়ারে বসে লিখতেন না। মাটিতে মাদুরের উপর বসতেন। সামনে নীচু মাপের একটা ডেস্ক থাকত, তার উপর নানারঙের কালি-কলম-পেন্সিল সাজানো থাকত, লেখার জায়গায় বাঁ-পাশে সেইরকম এক নীচু লম্বা সেলফ ছিল, তার মধ্যে ছিল নানা রকমের খোপ, কয়েকটায় আবার ঢাকা বা তালা দেওয়া যেত। প্রয়োজনীয় বইপত্র পাশে সাজানো থাকত। ফিল্ড-ওয়ার্ক করার জন্যও অর্ডার দিয়ে একটা চামড়ার ব্যাগ তৈরি করেছিলেন, তার মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যাবার জন্য বিভিন্ন খোপ ছিল, ‘আসন’-এর সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে যাবার বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে একটা স্বাতন্ত্র্য ছিল, নিজস্ব একটা স্টাইলও ছিল। গোড়ালির দিকটা সরু ঘেরের এমন পাজামা পরতেন, ঠিক চুড়িদার নয়, অনেকটা ওই রকমই, আর তার সঙ্গে পছন্দ ছিল বিশেষ ধরনের গোলগলা গেরুয়া পাঞ্জাবি, কাঁধে থাকত শ্রীনিকেতনের ব্যাগ। এই পোশাকেই সকলে তাঁকে দেখতে অভ্যস্ত ছিল।

সেরিব্রাল হেমারেজ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে। ওইখানেই ২৪ জুলাই ১৯৮০ (৭ শ্রাবণ ১৩৮৭) বুধবার রাত্রি ৪-১০ মিনিটে তাঁর জীবনাবসান হয়।

.

রচনাপঞ্জি

ইংরেজি বই

 ১. Traditional Arts and Crafts of West Bengal : A Sociological Study (Calcutta : Papyrus, 1968).

বাংলা বই

 ১. শিল্প সংস্কৃতি সমাজ (কলিকাতা : ১৯৪০; নতুন সংস্করণ, কলকাতা : অরুণা প্রকাশনী, ১৯৮১)।

 ২. নূতন সাহিত্য ও সমালোচনা (কলিকাতা : ১৯৪০; নতুন সংস্করণ, কলকাতা; অরুণা প্রকাশনী, ১৯৮১)।

 ৩. আন্তর্জাতিক রাজনীতি (কলিকাতা : ১৯৪১)।

 ৪. সোভিয়েট সভ্যতা, ১–২ খণ্ড (কলিকাতা : ১৯৪১–৪২)।

 ৫. ফ্যাশিজম ও জনযুদ্ধ (কলিকাতা : ১৯৪২)।

 ৬. বোধন (কলিকাতা : ১৯৪৩)। বিনয় ঘোষের লেখা ১২টি গল্পের সংকলন। নতুন সংস্করণ, ডাস্টবিন (কলিকাতা : সাম্প্রতিক, ১৯৮০) নামে প্রকাশিত।

 ৭. সাংস্কৃতিক দুর্দিন (কলিকাতা : ১৯৪৫?)।

 ৮. ভারত ও সোভিয়েট মধ্য এশিয়া (কলিকাতা : ন্যাশনাল বুক এজেন্সি, ১৯৪৭)।

 ৯. সোভিয়েট-বিরোধী চক্রান্ত (কলিকাতা : ১৯৪৮)।

 ১০. বাঙলার নবজাগৃতি, ১ খণ্ড (কলিকাতা : ১৯৪৮) প্রথমে তিন খণ্ডে পরিকল্পিত, কিন্তু অন্যান্য খণ্ড অপ্রকাশিত থাকে। পরিবর্তিত সংস্করণ, কলকাতা : ওরিয়েন্ট লংম্যান, ১৯৭৯।

 ১১. বরণীয় বাঙালী, ১ম খণ্ড (কলিকাতা : ১৯৫০)। অন্যান্য খণ্ড অপ্রকাশিত।

 ১২. কালপেঁচার নকশা (কলিকাতা : পাঠভবন, ১৯৫১)।

 ১৩. কালপেঁচার দু’কলম (কলিকাতা : পাঠভবন, ১৯৫২)।

 ১৪. কলকাতা কালচার (কলিকাতা : বিহার সাহিত্যভবন, ১৯৫৩)।

 ১৫. মানবসভ্যতার ধারা (কলিকাতা : বুকওয়ার্ল্ড, ১৯৫৪)। বইটি পাঠ্যপুস্তক হিসেবে প্রকাশিত হয়।

 ১৬. পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি (প্রথম সংস্করণ এক খণ্ডে, কলিকাতা : পুস্তক প্রকাশক, ১৯৫৭; দ্বিতীয় সংস্করণ, পরিবর্ধিত ও পরিবর্তিত, কলিকাতা : প্রকাশভবন, প্রথম খণ্ড, ১৯৭৬; দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯৭৮; তৃতীয় খণ্ড ১৯৮০; চতুর্থ খণ্ড, ১৯৮৬)।

 ১৭. কালপেঁচার বৈঠকে (কলিকাতা : বিহার সাহিত্য প্রাইভেট লিমিটেড, ১৯৫৭)।

 ১৮. জনসভার সাহিত্য (কলিকাতা : সত্যব্রত লাইব্রেরী, ১৯৫৭; নতুন সংস্করণ, কলিকাতা : প্যাপিরাস, ১৯৭৮)।

 ১৯. বাদশাহী আমল (কলিকাতা : ১৯৫৭; দ্বিতীয় সংস্করণ, কলিকাতা : অরুণা প্রকাশনী, ১৯৭৮)।

 ২০. বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ (কলিকাতা : বেঙ্গল পাবলিশার্স, প্রথম খণ্ড ১৯৬৪; পরিবর্তিত সংস্করণ (প্রথম খণ্ড), ১৩৭১; দ্বিতীয় খণ্ড, ১৩৬৪; তৃতীয় খণ্ড, ১৩৬৬; ওরিয়েন্ট লংম্যান সংস্করণ ৩ খণ্ড একত্রে : কলিকাতা : ওরিয়েন্ট লংম্যান, ১৯৭৩)।

 ২১. সমাজবিদ্যা, ১–২ খণ্ড (কলিকাতা : ১৯৫৮)। সমাজবিদ্যা-বিষয়ক (Social Studies) বিদ্যালয়পাঠ্য রচনা।

 ২২. যুবকল্যাণ (কলিকাতা : শিশু সাহিত্য সংসদ, ১৯৫৯)। সমাজবিদ্যা বিষয়ভুক্ত যুবকল্যাণ (Youth Welfare) সম্পর্কিত রচনা। ইউনেসকোর পুরস্কারে সম্মানিত।

 ২৩. বিদ্রোহী ডিরোজিও (কলিকাতা : বাকসাহিত্য, ১৯৬১; পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণ, কলকাতা : অয়ন, ১৯৮০)।

 ২৪. ভারতজনের ইতিহাস (কলিকাতা : ১৯৬২)। স্কুলপাঠ্য ভারতের ইতিহাস। একই নামে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, ১৯৬২ নভেম্বর। পরবর্তী ভারতজনকথা (কলিকাতা : ১৯৭৪)।

 ২৫. যুগপুরুষ বিদ্যাসাগর (কলিকাতা : ১৯৬৭)। লেখকের বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ অবলম্বনে রচিত কিশোরপাঠ্য বিদ্যাসাগর-রচিত।

 ২৬. কালপেঁচার রম্যরচনা সংগ্রহ (কলিকাতা : পাঠভবন, ১৯৬৮; বাক সংস্করণ, কলিকাতা : বাক-সাহিত্য, ১৯৯২)। লেখকের পূর্বপ্রকাশিত তিনটি বই একত্রে : কালপেঁচার নকশা (কলিকাতা : ১৯৫১), কালপেঁচার দু’কলম (কলিকাতা : ১৯৫২), কালপেঁচার বৈঠকে (কলিকাতা : ১৯৫৭)।

 ২৭. বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা : ১৮০০-১৯০০ (কলিকাতা : পাঠভবন, ১৯৬৮)। সাময়িকপত্রে বাংলার সমাজচিত্র গ্রন্থমালার পঞ্চম ও শেষ খণ্ড- বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা।

 ২৮. বাংলার বিদ্বৎসমাজ (কলিকাতা : প্রকাশভবন, ১৯৭৩; পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ : ১৯৭৮)।

 ২৯. মেট্রোপলিটান মন মধ্যবিত্ত বিদ্রোহ (কলিকাতা : ওরিয়েন্ট লংম্যান, ১৯৭৩; হায়দ্রাবাদ : ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসোয়ান, ২০০৯)।

 ৩০. কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত (কলিকাতা : বাকসাহিত্য, ১৯৭৫)। লেখকের পূর্ব-প্রকাশিত তিনটি গ্রন্থের পরিবর্ধিত একত্রিত সংস্করণ। গ্রন্থগুলি হল : কলকাতা কালচার (কলিকাতা : ১৯৫৩), টাউন কলকাতার কড়চা (কলিকাতা : বিহার সাহিত্যভবন, ১৯৬১), এবং সুতানটি সমাচার (কলিকাতা : বাকসাহিত্য, ১৯৬২)।

 ৩১. অটোমেটিক জীবন ও সমাজ  : প্রবন্ধ সংকলন/১ (কলিকাতা : অয়ন, ১৯৭৮)।

 ৩২. মেহনত ও প্রতিভা : প্রবন্ধ সংকলন/২ (কলিকাতা : অয়ন, ১৯৭৮)।

 ৩৩. বাংলার লোকসংস্কৃতির সমাজতত্ত্ব (কলিকাতা : অরুণা প্রকাশনী, ১৯৮৬)।

 ৩৪. নববাবুচরিত (কলিকাতা : সাম্প্রতিক, ১৯৭৯)। বইটি এর আগে প্রকাশিত হয় শ্রীবৎসের নানাপ্রসঙ্গ (কলিকাতা : বেঙ্গল পাবলিশার্স, ১৯৪৪) নামে।

সম্পাদনা ও সংকলন

 ১. সাময়িকপত্রে বাংলার সমাজচিত্র, ১৮৬০-১৯৫০, প্রথম খণ্ড (কলিকাতা : বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রাইভেট, ১৯৬২); দ্বিতীয় খণ্ড (কলিকাতা : বীক্ষণ গ্রন্থন ভবন, ১৯৬৩); তৃতীয় খণ্ড (কলিকতা : বীক্ষণ প্রকাশন ভবন, ১৯৬৪); চতুর্থ খণ্ড (কলিকাতা : পাঠভবন, ১৯৬৬)। নতুন পরিকল্পনায় বর্ধিত ও মার্জিত সংস্করণ : সাময়িকপত্রে বাংলার সমাজচিত্র (কলিকাতা : প্যাপিরাস, প্রথম খণ্ড, ১৯৭৮; দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯৭৮; তৃতীয় খণ্ড, ১৯৮০; চতুর্থ খণ্ড, ১৯৮০; পঞ্চম খণ্ড, ১৯৮১; ষষ্ঠ খণ্ড, ১৯৮৩)।

 ২. Selections from English Periodicals of 19th Century Bengal, vols. 1–7 (Calcutta : Papyrus, 1978-81).

অন্য সংকলন

 ১. বিনয় ঘোষের প্রবন্ধ সংগ্রহ (কলিকাতা : প্রকাশ ভবন, ২০০৯)। বিনয় ঘোষের দু-টি বই-অটোমেটিক জীবন ও সমাজ (১৯৭৮) এবং মেহনত ও প্রতিভা (১৯৭৯) একত্রে প্রকাশিত হয়েছে।

টীকা ও সূত্রনির্দেশ

 ১. ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, ভূদেব মুখোপাধ্যায় (কলিকাতা : বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৩৫১), পৃ. ৫–৬। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান (কলিকাতা : সাহিত্য সংসদ, ১৯৯৪) এবং শিশিরকুমার দাশ, সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী (কলিকাতা : সাহিত্য সংসদ, ২০০৩) এই দু-টি বইয়েও ভূদেবের জন্ম তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ১৮২৭ রয়েছে। ভূদেবের এই সংক্ষিপ্ত জীবনী রচনার জন্য ব্রজেন্দ্রনাথের রচনার সাহায্য নিয়েছি।

 ২. বিপিনবিহারী গুপ্ত, পুরাতন প্রসঙ্গ (কলিকাতা : পুস্তক বিপণি, [১৯১৩, ১৯২৩] ১৯৮৯), পৃ. ১৭৯–১৮০।

 ৩. মুকুন্দদেব মুখোপাধ্যায়, ভূদেব চরিত, ১–৩ ভাগ (চুঁচুড়া : কুমারদেব মুখোপাধ্যায়, ১৯১৭–২৭), দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ১৩২–৩৩।

 ৪. সুরেশচন্দ্র সমাজপতি, সাহিত্য, জ্যৈষ্ঠ ১৩০১, পৃ. ১৫৬।

 ৫. ধূর্জটিপ্রসাদের জীবন ও রচনাপঞ্জির জন্য সাহায্য নিয়েছি : অলোক রায়, ধূর্জটিপ্রসাদ : জীবন ও গ্রন্থপঞ্জী (কলিকাতা : বাগর্থ, ১৯৭০) নামক বইটির। অলোকবাবু তাঁর সংগ্রহ থেকে বিনা দ্বিধায় আমাকে বইটি ব্যবহার করতে দেন, এই জন্য তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম।

 ৬. ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ‘বক্তব্য’, ধূর্জটিপ্রসাদ রচনাবলী, ২য় খণ্ড, (কলিকাতা : দে’জ পাবলিশিং, ১৯৮৭), পৃ. ১৭৮–৭৯।

 ৭. বক্তব্য, পৃ. ১৭৯।

 ৮. ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ঝিলিমিলি, ধূর্জটিপ্রসাদ রচনাবলী, ৩য় খণ্ড (কলিকাতা : দে’জ পাবলিশিং, ১৯৮৭), পৃ. ২৫২।

 ৯. ঝিলিমিলি, পৃ. ২৭০।

 ১০. ঝিলিমিলি, পৃ. ২৭১–৭৩।

 ১১. ঝিলিমিলি, পৃ. ২৩৭।

 ১২. ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, মনে এলো, ধূর্জটিপ্রসাদ রচনাবলী, ৩য় খণ্ড (কলিকাতা : দে’জ পাবলিশিং, ১৯৮৭), পৃ. ৭৪।

 ১৩. মনে এলো, পৃ. ১৯৩।

 ১৪. ঝিলিমিলি, পৃ. ২৩৯–৪০।

 ১৫. ঝিলিমিলি, পৃ. ২৩৯।

 ১৬. নির্মলকুমার বসুর জীবনী ও গ্রন্থপঞ্জি রচনায় তিনটি বইয়ের সাহায্য নিয়েছি : অভীককুমার দে (সম্পা.), নির্মাল্য : অধ্যাপক নির্মলকুমার বসু শতবর্ষ-স্মরণ (কলকাতা : লোকসংস্কৃতি গবেষণা পরিষদ, পশ্চিমবঙ্গ, ২০০৩); সুরজিৎ চন্দ্র সিংহ, Nirmal Kumar Bose : Scholar Wanderer (New Delhi : National Book Trust, 1986); পূর্ণিমা সিংহ, নির্মলকুমার বসু (কলকাতা : পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ২০০১)।

 ১৭. নির্মলকুমার বসু, নবীন ও প্রাচীন (কলিকাতা : বেঙ্গল পাবলিশার্স ১৩৫৬), পৃ. ২৮৬।

 ১৮. Nirmal Kumar Bose, My Days With Gandhi (Calcutta : Merit Publishers, 1952), পৃ. ২৮৬।

 ১৯. বিনয় ঘোষের জীবনী রাচনায় সাহায্য নিয়েছি : বীণা ঘোষ, বিনয় ঘোষ : তাঁর মানস ও জীবন (কলিকাতা : প্রকাশ ভবন, ১৯৯২) বইটির।

 ২০. বিনয় ঘোষ : তাঁর মানস ও জীবন, পৃ. ১৬।

 ২১. ওই, পৃ. ১৬।

 ২২. ওই, পৃ. ২০।

 ২৩. অমলেন্দু ঘোষ, বিনয় ঘোষের বই (কলিকাতা : অজয় দাশ পাঠভবন প্রকাশন, ১৯৭৬); বিনয় ঘোষের গ্রন্থপঞ্জি রচনায় এই পুস্তকটির সাহায্য নিয়েছি।

 ২৪. অরুণ মিত্র, ‘আমার দেখা বিনয় ঘোষ’, লোকলৌকিক, ১(৪), ১৯৮০, পৃ. ১৭।

 ২৫. বিনয় ঘোষ : তাঁর মানস ও জীবন, পৃ. ১৩২–১৪।

 ২৬. নীহাররঞ্জন রায়, ‘বিনয় ঘোষ ও বাঙালী সমাজ’, লোকলৌকিক, ১(৪), ১৯৮০, পৃ. ৪৯।

 ২৭. বিনয় ঘোষ : তাঁর মানস ও জীবন, পৃ. ৪২।

 ২৮. ওই, পৃ. ৪০, ৪৩।

অধ্যায় ১০ / ১০

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন