১.০৫ দেশ বিভাগের পর দুটি নতুন দেশ

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

দেশ বিভাগের পর দুটি নতুন দেশেরই কর্ণধার হয়েছেন দুই বিলেতে শিক্ষিত ব্যারিস্টার। দু’জনেই পাক্কা সাহেব। সাহেব হবার পরীক্ষা শুধু সঠিক উচ্চারণের ইংরিজি ভাষণেই নয়, এক ধরনের আলাদা হাসিও রপ্ত করতে হয়। সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবিগুলি তুলনা করলেই বোঝা যায় যে নেহরু ও জিন্না বেশ কিছুদিন সেই বিলিতি হাসির প্রতিযোগিতা দিয়ে যাচ্ছিলেন। জিন্না অবশ্য নতুন রাষ্ট্রটির কর্তৃত্ব সুখ বেশিদিন ভোগ করতে পারলেন না, অকালে চলে গেলেন, নেহরু রয়ে গেলেন শুধু ভারতের প্রধানমন্ত্রিত্ব করার জন্যই নয়, একজন বিশ্বনেতা হিসেবে স্বীকৃত পাবার আকাঙ্ক্ষায়।

বিলিতি ওয়েস্ট কোটের সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে, ওপরে সর্ট কলার লাগিয়ে জওহরলাল নেহরু একটি নতুন পোষাকের প্রবর্তন করলেন, যার নাম জওহর কোট। ঐ পোষাকটিই হলো নতুন ভারতের শাসন ব্যবস্থার প্রতীক। নামে স্বদেশী, বাকি সবটাই বিদেশের অনুকরণ। এ দেশের আশি ভাগ লোক নিরক্ষর, নিরন্ন, ভাগ্য-তাড়িত, কিন্তু সরকার চলতে লাগলো প্রাক্তন ইংরেজ-পদ্ধতিতে।

লড়াই করেছিল অনেকেই কিন্তু কংগ্রেসই ভারতের স্বাধীনতা এনেছে, এরকম বিদিত হয়ে গেল। গান্ধীজী দু-চারবার ক্ষীণভাবে বলেছিলেন, দেশের স্বাধীনতা আসার পর আর কংগ্রেস পার্টির অস্তিত্বের কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই, ওটা তো ছিল সংগ্রামের জন্য একটি মিলিত প্ল্যাটফর্ম, এখন ঐ দলটি ভেঙে দেওয়া হোক, গড়ে উঠুক আলাদা রাজনৈতিক দল। গান্ধীজীর অন্যান্য আরও উচিত মন্ত্রণার মতন, এ-প্রস্তাবেও কেউ কর্ণপাত করেনি। যারা ক্ষমতায় এসেছে। তারা একখানা সারা দেশব্যাপী তৈরি দল, হাজার হাজার শাখা, কার্যালয়, আসবাবপত্তর ও টাকা পয়সার সুযোগ ছেড়ে দিতে চায়নি। গান্ধীজীর পরামর্শকে তারা বার্ধক্যের এলোমেলোমি বলে উড়িয়ে দিল। এমনকি কংগ্রেস দলের পতাকা ও জাতীয় পতাকার প্রায় হুবহু মিলের যে সুফল আছে অনেকখানি তা টের পাওয়া গেল প্রথম সাধারণ নির্বাচনে। দেশের মানুষ কংগ্রেসকেই চেনে, বিরোধীপক্ষ তো কিছু নেই-ই বলতে গেলে।

পূর্ব ভারতের উদীয়মান কংগ্রেসী নেতা অতুল্য ঘোষ একদিন পার্টির কর্মীদের কাছে উদারভাবে বললেন, আরে বাবা, তোমরা কমুনিস্ট পার্টি ব্যান করার কথা কেন বলছো? সে তো ইচ্ছে করলেই করা যায়। ওরা থাক না! একটা অপোজিশান না থাকলে কী খেলা জমে?

রাজার চার পাশে যেমন মোসাহেবরা ঘিরে থাকে সেই রকমই কংগ্রেসী শাসকদের সঙ্গে জুটতে লাগলো ধনী, সুযোগ-সন্ধানী ও অর্থলোভীর দল। পণ্ডিত নেহরুর এটা পছন্দ নয় কিন্তু তান এদের ঝেড়ে ফেলতেও পারছেন না। যৌবনে তিনি সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকেছিলেন, এক সময় ঘোষণা করেছিলেন যে সময় এলেই তিনি কালোবাজারীদের ল্যাম্পপোস্টে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেবেন। সময় যখন এলো, কালোবাজার যখন সমস্ত আলো বাজারকে গ্রাস করে নিল, তখন তিনি ভাবতে লাগলেন ল্যাম্প পোস্টগুলো বোধহয় যথেষ্ট মজবুত নয়। ওদিকে আগে মনোযোগ দেওয়া দরকার।

পণ্ডিত নেহরু গরিবদের সমব্যথী। হ্যাঁ,গরিব তো আছেই, তারাই দেশ জুড়ে, তাদের কথা চিন্তা করতে হবে, তাদের উন্নতির জন্য পরিকল্পনা বানাতে হবে, জনসভায় তাদের কথা বলতে হবে, সে সব ঠিক আছে, কিন্তু সে সব শুধু দিনের বেলা। কিন্তু সন্ধের পরও গরিবদের চিন্তায় সময় কাটানো কি সম্ভবপর? তখন দু-একটা পার্টি, একটু নাচ, কিছু ফস্টিনস্টি, দু-এক পেগ শেরি পান, বা পারিবারিক পরিবেশে সংস্কৃতি-চর্চা, ঘুমোবার আগে বিখ্যাত কবির দু-চার লাইন কবিতা পাঠ, এসব না হলে স্নায়ু ঠিক থাকবে কী করে?

এত বড় দেশ, এখানে এক বছর খরা, অন্য বছর বন্যা। কিংবা যে বছর অনাবৃষ্টি বা অতি বৃষ্টির ভয় থাকে না, সে বছরও এক অঞ্চলের তুলনায় অন্য অঞ্চল মার খায়। দু-চার লাখ চাষীর ফসল নষ্ট হওয়া নতুন কিছু ঘটনা নয়, বরং তা একঘেয়েমির পর্যায়ে চলে গেছে। প্রত্যেকবার এই সব চাষীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার বদলে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করা অনেক বেশি জরুরি। একদা সমাজতান্ত্রিক আদর্শে দীক্ষিত পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সহানুভূতি সোভিয়েত রাশিয়ার দিকে। আমেরিকা হাইড্রোজেন বোমা বানাচ্ছে জেনে তিনি। খুবই বিক্ষুব্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন দেশ বৃহত্তম খুনী হিসেবে জয়লাভ করেছে। এখন, শান্তির সময়েও কি তারা সারা পৃথিবীটাকে ধ্বংস করার কথা ভাবছে? পণ্ডিত নেহরু তার জোরালো প্রতিবাদ জানালেন, এই নিয়ে ভারতের সংসদে বেশ কয়েক ঘণ্টা কাটলো। চার মাস বাদেই অবশ্য সংবাদ এলো রাশিয়ায় প্রথম আণবিক বোমার পরীক্ষার। সেই বিস্ফোরণে কারাকোরাম মরুভূমির একটা পাহাড় উড়ে গেল। দুঃখিত, উদ্ভ্রান্ত জওহরলাল চুপ করে রইলেন।

অবিরাম উদ্বাস্তু আগমন নেহেরুর বিবেকে আর একটি কাঁটা। দেশ বিভাগের আলোচনার সময় তিনি দ্বিজাতিতত্ত্ব মেনে নেননি। একদিকে সব মুসলমান আর একদিকে হিন্দু, এ আবার হয় নাকি? এই বিংশ শতাব্দীতে! নেহেরু প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছেন যে তিনি অ্যাগনস্টিক, তিনি ঈশ্বর-উদাসীন। সেটাই তো বিশ্বনাগরিকের আধুনিকতা। সামান্য নেটিভদের মতন তিনি পুজো-ফুজো, নামাজ-আরাধনায় ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাসী নন। কিন্তু পুরোনো ব্রিটিশ শাসকদের নীতি অনুসরণ করে তিনিও কোনো ধর্মীয় সংস্কার বা ধর্মনিরপেক্ষতা প্রচারের ব্যাপারে মাথা ঘামালেন না। যে-দেশে শতকরা নব্বই ভাগ লোক কুসংস্কার-তাড়িত, সামান্য বাইরের প্ররোচনাতেই ধর্মের নামে হাতিয়ার তুলে নেয়, কথায় কথায় রক্তের স্রোত বয়ে যায়, যারা ধর্মের কিছুই বোঝে না অথচ তারাই মারে অথবা মরে, সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে রইলেন এমন একজন যিনি ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মচর্যাকে অরুচিকর বিবেচনায় আত্মশ্লাঘা বোধ করেন।

উদ্বাস্তু আগমনের ব্যাপারটাতেও পণ্ডিতজী বড় তিতিবিরক্ত হয়ে আছেন। পঞ্জাবের দিকটায়। প্রথম প্রথম কাটাকাটি, খুনোখুনি যা হবার তা হয়ে গেছে। ওদিক থেকে ট্রেন ভর্তি মৃতদেহ এলে তার প্রত্যুত্তরে এদিক থেকেও ট্রেন ভর্তি শব গেছে। মাউন্টব্যাটেনের আমলেই ওদিক থেকে যারা চলে আসবার এসেছে, এদিক থেকে যারা যাবার, গেছে। কিন্তু বাংলার দিকে যে আগমন-নির্গমন কিছুতেই থামে না। পশ্চিম বাংলার ডাক্তারবাবু মুখ্যমন্ত্রী অনবরত বেশি টাকা চাইছেন উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের ছুতো করে।

এই বাঙালীরা সব সময়েই শিরঃপীড়া। তবু বড় বাঁচোয়া এই যে সুভাষবাবু বিমানের আগুনে পুড়ে মরেছেন কিংবা কোথাও নিরুদ্দেশে গেছেন, তাঁর পরে বাংলায় আর কোনো বড় জননেতা নেই। অগ্নিযুগের বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির চিন্তা ভুলে গিয়ে এখন ফরাসী সাধনসঙ্গিনী নিয়ে পরমার্থ চিন্তায় ব্যাপৃত, যাক নিশ্চিন্ত। সুভাষবাবু বেঁচে থাকলে অথবা চালু থাকলে এই সময় বড় ঝঞ্জাট করতেন। আটচল্লিশ সালের পর গান্ধীজী-বিহীন কংগ্রেসে সুভাষবাবু নিশ্চিত হতেন এক মূর্তিমান উপদ্রব। কে জানে, বাহান্ন সালের নির্বাচনের সময় সুভাষবাবু হঠাৎ উপস্থিত হলে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে হতো কি না। পঞ্জাব ও দক্ষিণ ভারত সুভাষবাবুর বেশ ভক্ত।

এ বছরের গোড়ার দিকে পাকিস্তানের নির্বাচনে ফজলুল হকের বিরাট জয়ের সংবাদে খণ্ডিত ভারতেও অনেকখানি আশা-উদ্দীপনার সঞ্চার হয়েছিল। প্রাচীন বিশ্বাসযোগ্য এই মানুষটি আর যাই হোক সাম্প্রদায়িকতায় উস্কানি দেবেন না। ফজলুল হক মুসলিম লিগের সংস্পর্শে থাকতে, চাননি, বরং মুসলিম লিগকে বাদ দিয়ে কংগ্রেসের সহায়তায় সংযুক্ত বাংলায় মন্ত্রিসভা গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের জাতীয় কংগ্রেস তখন দিল্লির সিংহাসন নিয়ে এতই ব্যস্ত যে, বাংলা নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় নেই। ফজলুল হককে সমর্থন না জানিয়ে তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হল। বিস্ময় বিমূঢ় ফজলুল হক আইরিস নেতা পারনেলের মতন আহত কণ্ঠে বলে উঠেছিলেন, ইউ হ্যাভ থ্রোন মি টু দ্য উত্স! তারই ফলাফল, ছেচল্লিশ সালে। কলকাতার পথে পথে রক্তস্রোত।

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ফাটল ধরেছে, বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে ধূমায়িত হচ্ছে অসন্তোষ। পশ্চিমের জঙ্গী মনোভাব পূর্বের সংস্কৃতি-মনস্ক শিক্ষিত মানুষ মেনে নিতে পারে না। নিবার্চনে জয়লাভ করে ফজলুল হক পূর্ব পাকিস্তানে অ-মুসলিম লিগ মন্ত্রিসভা গঠন করলেন। দেশভাগের নামে বাঙালী জাতির মধ্যেও বিভেদ-রেখা টানায় তাঁর ঘোরতর আপত্তি। ওপারে মুসলমান আর এপারের হিন্দুরা কেন পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যাবে! ফজলুল হক ঘোষণা করলেন, তিনি ভিসা ব্যবস্থা তুলে দেবেন। দুদিকের আত্মীয় বন্ধুদের মধ্যে অবাধ সাক্ষাৎ মোলাকাতের আর কোন অন্তরায় থাকবে না।

কিন্তু মাত্র এক মাস কাটতে না কাটতেই পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক প্রচেষ্টায় আবার খঙ্গাঘাত হলো। গভর্ণর জেনারেল গোলাম মহম্মদ কুদ্ধ হয়ে জানালেন ফজলুল হক দেশের শত্রু, ঐ লোকটা স্বায়ত্ত শাসনের কথা উচ্চারণ করেছে! ভেঙে দেওয়া হলো পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা, ফজলুল হক গৃহবন্দী হলেন। শেখ মুজিবর রহমান নামে এক তরুণ অগ্নিবর্ষী নেতা নিক্ষিপ্ত হলেন কারাগারে। সেনাপতি ইস্কান্দার মির্জার হাতে তুলে দেওয়া হলো সর্বময় কর্তৃত্ব।

বাঙালীর মিলন আরও সুদূর পরাহত হলো। ফজলুল হকের আশ্বাসে যে সাময়িক নিশ্চিন্ততার ভাব এসেছিল তা ঘুচে গিয়ে ছড়িয়ে পড়লো আতঙ্ক। পূর্ব থেকে পশ্চিমে আবার প্রবাহিত হলো উদ্বাস্তুদের স্রোত।

এই লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ শিশু বৃদ্ধের মাথা গোঁজার জায়গা কোথায়? সবাই ধেয়ে আসে কলকাতার দিকে। লণ্ডনের অনুকরণে গড়া প্রাক্তন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এই দ্বিতীয় নগরী, সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও রুচিসম্পন্ন; এর গায়ে আঘাত করতে লাগলো অবাঞ্ছিত অতিথিদের নোংরা হাত। শিয়ালদা স্টেশনের কোনো প্লাটফর্মে পা ফেলার জায়গা নেই। শুয়ে আছে মানুষ। ফুটপাথগুলি হাঁটার অযোগ্য হয়ে উঠলো, সেখানে গড়ে উঠছে মানুষের আস্তানা। তেতাল্লিশের দুর্ভেক্ষের সময় কলকাতা শহর নোংরা হতে শুরু করেছিল, এখন থেকে নোংরামিটাই হলো তার প্রধান চরিত্র। নগর কোতোয়াল বা ক্ষমতাসীন ব্যক্তিগণ কেউ এ ব্যাপারে মাথা ঘামালেন না।

রুশ বিপ্লবের পর ধনীদের প্রাসাদগুলি দখল করে নিয়েছিল প্রলেতারিয়েতরা, এ দেশে বিপ্লব হয়নি। বিপ্লবপন্থী কয়েকটি রাজনৈতিক দল আছে বটে কিন্তু তারাও হঠাৎ এত লক্ষ লক্ষ প্রলেতারিয়েতদের কোন কাজে লাগাবে তা বুঝে উঠতে পারলো না। জেলখাটা, আদর্শবাদী তরুণেরা এই অরাজকতার মধ্যেই একটা খণ্ড প্রলয় বাধিয়ে দিতে উৎসাহী, কিন্তু প্রবীণ পোড়খাওয়া নেতাদের দৃষ্টি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের দিকে। এই লক্ষ লক্ষ মানুষই একদিন ভোটদাতা হবে। তখন এদের কাজে লাগবে। সুতরাং ওদের সুদূর আন্দামান বা দণ্ডকারণ্যে পাঠানো সমর্থন করা যায় না।

গত শতাব্দীর বেনিয়ান মুৎসুদ্দী ও উটকো জমিদারেরা হঠাৎ ধনী হয়ে আড়ম্বর বিলাসিতার অঙ্গ হিসেবে কলকাতার চতুর্দিকে অনেক বাগান বাড়ি নির্মাণ করেছিল। সেইসব প্রমোদ উদ্যানে যেমন ছিল বিলিতি কায়দায় অর্কিড হাউজ, ফার্ণ-গ্রোভ আবার তেমনই ছিল ঝাড়-লণ্ঠন সজ্জিত নাচঘর। সেইসব অনেক বাগানবাড়িরই এখন জীর্ণ দশা, যথার্থভাবে রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা মালিকদের নেই, অধিকাংশ বাড়িই শূন্য পড়ে থাকে। প্রকৃতিই শূন্যতা পছন্দ করে না, মানুষ কী করে পারবে। অরক্ষিত বাড়িগুলিতে নিরাশ্রয় মানুষেরা দল বেঁধে ঢুকে পড়তে শুরু করলো। সবক্ষেত্রে নিজেদের সাহসে কুলোয় নি, রুশ বিপ্লবের ভক্তদের ব্যক্তিগত প্ররোচনা ছিল কোথাও কোথাও।

যে-সব মালিক এখনো প্রভাবশালী ও তৎপর তারা স্থানীয় এম এল এ-দের হাত করে, পুলিশী সাহায্য নিয়ে ঝটিতি ঐ সব জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করে অন্য কোনো পতিত জমি বা মুসলমানদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে ঠেলে দিয়ে এসেছে। কিন্তু বরানগরের সরকারদের সে সামর্থ্যও নেই।

অসিতবরণ তাঁর কাকাদের সঙ্গে যখন কাশীপুরের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছোলেন তখন। সেখানে রক্তপাত শুরু হয়ে গেছে।

প্রায় পাঁচ-সাত বছর এ বাড়ির কোনো ব্যবহার ছিল না, কর্তারা কেউ আসতেন না, সরকার বাড়ির ছেলেপুলেরা দু একবার শুধু পিকনিক করে গেছে। কর্তাদের এই ঔদাসীন্যের সুযোগ। নিয়ে এ বাড়ির দারোয়ান ভেতরের নাচ ঘরটি অন্যদের ভাড়া দিতে শুরু করেছিল। শৌখিন। ফুলবাবুরা চাঁদনী রাতে আসতে সুরা ও সাকীদের সঙ্গে নিয়ে। দারোয়ানকে পাঁচ দশ টাকা বখশিস দিতে তাদের কার্পণ্য হবে কেন? একজন পুলিশ অফিসারও আসতেন মাঝে মাঝে। এ রকম আরও অনেকে।

বাহারী গ্রীল লাগানো, শক্ত তারের জাল দিয়ে ঘেরা অর্কিড হাউজে অনেকদিনই একটিও অর্কিড নেই, সেখানে খড়ের ছাউনি বিছিয়ে একটা বেশ ব্যবহারযোগ্য বড় ঘর করা হয়েছে, সাত আটজন অবিবাহিত কারখানার মজদুর সেখানে থাকে, তারা নিয়মিত ভাড়া দেয়, সেখানে রান্না। করে খায়, অনেকটা মেসবাড়ির মতন। তারা যে ভাড়া দেয় তা বাড়ির মালিক পায় কি পায় না। তা তাদের জানবার কথা নয়, এই ঘরের ওপর তাদের একটা অধিকার বর্তে গেছে।

গতকাল মাঝ রাত্রে হৈ হৈ করে যখন উদ্বাস্তুরা এই বাগানে ঢুকে পড়লো তখন ঐ মজদুরদের জনা চারেক গিয়েছিল নাইট ডিউটিতে। জনা চারেক গাঁজা খেয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছিল। প্রথমে তারা ভেবেছিল বুঝি ডাকাত পড়েছে।

জবর দখলকারীরা হুড়মুড় করে ঘরের মধ্যে ঢুকে তাদের শরীরের ওপরেই দাপাদাপি করতে লাগলো। তাতেই শুরু হলো সংঘর্ষ।

উদ্বাস্তুদের একজন নিজস্ব নেতা তৈরী হয়েছে, তার নাম হারীত মণ্ডল। এই রকম বাগানবাড়ি দখলে তার বেশ অভিজ্ঞতা জন্মে গেছে, সে-ই আগে থেকে গোপনে সন্ধান নিয়ে এক একটি দলকে ডেকে আনে।

রোগা, লম্বা চেহারার হারীত মণ্ডল, মাথায় ব্যাণ্ডেজ বাঁধা, হাতে একটা বেঁটে লাঠি নিয়ে। ঘোরাতে ঘোরাতে আর নাচতে নাচতে চ্যাঁচাতে লাগলো, জাগা ছাড়বি না! জাগা ছাড়বি না! সব মাটিতে শুইয়া পড়! যে-যেখানে শুবি তার সেই জাগা!

অর্কিড হাউজের বাসিন্দা শ্রমিকরাও সহজে তাদের দখল ছাড়তে চায়নি, তাদের জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড হতে দেখে তারাও রুখে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু উদ্বাস্তুদের ঐ উদ্দাম স্রোতের বিরুদ্ধে তাঁরা কতক্ষণ পারবে।

সেই চারজনকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বাইরের রাস্তায়, দুজন গুরুতরভাবে আহত। একজনের বাঁ হাতটা উড়ে গেছে কোনো অস্ত্রের কোপে।

অসিতবরণরা এসে পৌঁছোবার আগেই অনেক কাণ্ড ঘটে গেছে এখানে। শ্রমিকরা অবাঙালী, তাদের নির্যাতনের সংবাদ শুনে স্থানীয় একটি কারখানা থেকে ছুটে এসেছে অন্য অবাঙালী শ্রমিকেরা। তারা সবাই ষণ্ডা পালোয়ান। এদিকে হাড় জিরজিরে, বুভুক্ষু মরীয়া উদ্বারাও লাঠি-সোঁটা, খন্তা-শাবল যে যা পেয়েছে হাতে নিয়ে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে দেয়াল ঘেঁষে। একটা বড় রকমের দাঙ্গা বাধবার উপক্রম।

থানা বেশি দূরে নয়, পুলিশকে তাড়াতাড়ি আসতে হয়েছে বাধ্য হয়েই। বাঙালী-অবাঙালী দাঙ্গা। এর গুরুত্ব অন্যরকম। স্থানীয় এম এল এ-ও এসেছেন, কারণ এ তো সাধারণ জবর দখলের ব্যাপার নয়। তিনি দু পক্ষকেই বোঝাতে চাইছেন, কিন্তু চিৎকার হল্লায় কান পাতা দায়। উদ্বাস্তুরা বাঙাল ভাষায় কত রকম যে গালাগালি দিচ্ছে তা অনেকে বুঝতেই পারছে না।

বেলা বাড়ার আগে কাছাকাছি আর কয়েকটি জবর দখল বাগান বাড়ির বাসিন্দারা ধেয়ে এলো এই উদ্বাস্তুদের সমর্থনে। আবার হাতাহাতি, ইট ছোঁড়াছুঁড়ি হলো এক পর্ব, পুলিশ দুটি টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটালো।

অসিতবরণের সেজো কাকা জলদবরণ বদরাগী ধরনের মানুষ। তাঁর মাথায় বাবরি, গালের জুলপি ও গোঁফ পশ্চিমীদের ধরনে গালপাট্টা করা। জ্যাঠতুতো বোনের বর লক্ষ্মীকান্তও গোঁয়ার ধরনের। কাশীপুরের বাড়িটি বিক্রি করার সম্ভাবনায় তারা কয়েকদিন বেশ উৎফুল্ল ছিল, অকস্মাৎ একি উৎপাত। আসবার পথেই তাঁরা বরানগর থেকে কয়েকজন ষণ্ডামার্কা বাজারের গুণ্ডা সঙ্গে এনেছেন। এখানে এসে দেখলেন সেভাবে কিছু সুবিধে হবে না।

জলদবরণ কংগ্রেসী নেতাটিকে ডেকে নিজেদের পরিচয় দিলেন। মধ্যবয়স্ক, ছোটখাটো চেহারার নেতাটি ভোর রাত থেকে এই ঝঞ্ঝাট সামলাতে সামলাতে নাজেহাল হয়েছেন। তিনি খুবই ক্লান্ত ও বিরক্ত। পুলিশ হুট করে গুলি চালিয়ে দিলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক অবনতি হবে। এই মনে করেই তিনি স্থানত্যাগ করতে পারছেন না।

জলদবরণের দলটিকে দেখে চোখ কপালে তুলে তিনি বললেন, আপনারা আবার এর মধ্যে এসে পড়েছেন কেন? চলে যান, চলে যান!

এমনভাবে কারুর আদেশ শোনায় অভ্যস্ত নন জলদবরণ। কোনোদিন তিনি সকাল দশটার আগে ঘুম থেকে ওঠেন না। আজ তাঁকে সাড়ে সাতটার সময় ডেকে তোলা হয়েছে বলে তখন। থেকেই মেজাজ খারাপ। গত রাত্রির নেশা এখনো সম্পূর্ণ কাটেনি, চক্ষু রক্তাভ। গম্ভীর গলায় তিনি বললেন, সে কি মোয়াই, আমাদের নিজেদের বাড়ি, বাপ-পিতেমো কষ্ট করে বানিয়ে গ্যাছেন, সেখানে আমরা আসতে পারবো না? ঐ ভূতগুলো এসে দখল নেবে আর আমরা নো-হোয়্যার হয়ে যাবো?

কংগ্রেসী নেতাটি তাঁর বাহু ধরে টেনে পুলিশ ভ্যানের আড়ালে এসে দাঁড়ালেন। তারপর নিচু গলায় বললেন, আপনাদের পরিচয় জানতে পারলে আরও হল্লা হবে। থানায় ডায়েরি করুন, তারপর কোর্টে কেস করুন, এখানে জোর খাটাবার চেষ্টা করবেন না।

সব জননেতার পাশেই অন্তত দু’তিনজন দেহরক্ষী থাকে। তাদের একজন বললো, আজকাল এদিকটাতে রিফিউজিদের ওপর হেভি সেন্টিমেন্ট। জোর করে হটাতে গেলে লাশ পড়ে যাবে। আপনাদের ওপরেই ফাস্টে অ্যাটাক হবে।

জলদবরণ বললেন, তা হলে আপনারা আছেন কী করতে? ভোটের সময় ভোট ভিক্ষে করতে আসেন, এদিকে ভিকিরির পাল জোর করে এসে বাড়ি দখল করবে, এ কি মগের মুল্লুক পেয়েছে নাকি?

তর্ক-বিতর্ক চলতে লাগলো কিছুক্ষণ। অন্য এক কাকা চেষ্টা করতে লাগলো পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায় কি না। বাড়ির দুই জামাই সঙ্গে এসেছে। তাদের অভিমত এই যে, যা কিছু করার আজই করতে হবে। একবার ওদের গেড়ে বসতে দিলে আর সরানো যাবে না।

অসিতবরণ প্রথম থেকেই একটাও কথা বলেননি। গম্ভীর, উদাসীন মুখ। আদ্দির পাঞ্জাবী ও কোঁচানো ধুতি পরা অসিতবরণকে দেখলে অনেকেই চলচ্চিত্র অভিনেতা ছবি বিশ্বাস বলে ভুল করে, শরীরের গড়নে ও মুখের আদলে কিছুটা মিল আছে। অসিতবরণ কিছুদিন আগেও বেশ আমুদে, হাসিখুশি স্বভাবের ছিলেন, মাস ছয়েক ধরে কথাবার্তা প্রায় একেবারে বন্ধ করেছেন। তাঁকে আনা হয়েছে একজন প্রধান শরিক হিসেবে, যে-কোনো সিদ্ধান্তে তাঁর। মতামতের একটা মূল্য আছে। অথচ অসিতবরণ কোনো মন্তব্যই করেননি এ পর্যন্ত।

জলদবরণ কথা বলতে বলতে গলা চড়িয়ে ফেলতেই বেশ কিছু লোক এদিকে আকৃষ্ট হলো। নতুন গণ্ডগোলের সম্ভাবনায় পুলিশ নেমে পড়লো লাঠি হাতে। কংগ্রেসী নেতাটি। হাতজোড় করে জলদবরণকে বললেন, আপনারা আর এখানে দাঁড়াবেন না, প্লীজ, অনুরোধ করছি, আরও গোলমাল পাকাবেন না। আপনারা বরং বিধানবাবুর কাছে যান।

একটা ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কি শুরু হতেই জলদবরণকে সদলবলে পশ্চাৎ অপসারণ করতে হলোই। তখুনি তাঁরা যাত্রা করলেন উঁকিল বাড়ির দিকে। অসিতবরণ যে সঙ্গে আসেননি তা। তাঁদের খেয়ালই হলো না।

অসিতবরণ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলেন। তার ঘাড়টা একটু কাৎ হয়ে গেছে, চোখের প্রায় পলক পড়ছে না। এত রকম মানুষের কণ্ঠস্বর, এত উত্তেজনা কিছুই যেন টের পাচ্ছেন না তিনি, শুধু এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন বাড়িটির দিকে।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ একটা ঘোড়ার গাড়ি ডাকা হয়েছে
২. ১.০২ বৈদ্যনাথধাম স্টেশনে দাঁড়িয়ে
৩. ১.০৩ ভবদেব মজুমদারের আমলে
৪. ১.০৪ বাড়ির দারোয়ানের সঙ্গে তুতুলকে
৫. ১.০৫ দেশ বিভাগের পর দুটি নতুন দেশ
৬. ১.০৬ ছাত্র বয়েসে প্রতাপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু
৭. ১.০৭ মেঘনা নদী পার হয়ে দায়ুদকান্দি
৮. ১.০৮ মালখানগরে প্রতাপদের বাড়ির সামনে
৯. ১.০৯ সত্যেন ভাদুড়ীর গায়ের পাঞ্জাবী
১০. ১.১০ দুটো সাইকেল ভাড়া করা হয়েছে
১১. ১.১২ জেল থেকে ফেরার পর
১২. ১.১১ দুপুরবেলা নানা গল্পের মধ্যে
১৩. ১.১৩ বাগানে নতুন গোলাপ চারা
১৪. ১.১৪ ওপরতলায় নিজেদের অংশটায়
১৫. ১.১৫ ঐ ছেলেটা মুসলমান বুঝি
১৬. ১.১৬ বন্যা হবার দরকার হয় না
১৭. ১.১৮ বিমানবিহারীদের আদি বাড়ি
১৮. ১.১৭ কলকাতার তালতলা অঞ্চল
১৯. ১.১৯ পিকলু আর বাবলু এক স্কুলে পড়তো
২০. ১.২০ তুতুল বাগবাজারের একটি স্কুলে
২১. ১.৪৩ পাড়ার কয়েকটি ছেলে ধরাধরি করে
২২. ১.৪৪ আর্মানিটোলার পিকচার প্যালেস
২৩. ১.৪৫ পাড়াটির নাম বাগবাজার
২৪. ১.৪৬ একটা নড়বড়ে কাঠের টেবিল
২৫. ১.৪৭ আগের দিনই খবর দিয়ে
২৬. ১.৪৮ নতুন বাড়ি ঠিক হলো কালীঘাটে
২৭. ১.২১ সরকারি কর্মচারির চাকরি
২৮. ১.২২ বঙ্কুবিহারীর স্ত্রী এলিজাবেথ
২৯. ১.২৩ একটা মোটরবাইক চেপে হাজির
৩০. ১.২৪ হারীত মণ্ডলকে নিয়ে ত্রিদিব
৩১. ১.২৫ বাড়িতে অসময়ে কোনো অতিথি এসে
৩২. ১.২৬ প্রতাপ সিগারেট খেতে খেতে
৩৩. ১.২৭ ভোর রাতে ঘুম ভেঙে গেল প্রতাপের
৩৪. ১.২৮ কলকাতার ভদ্রলোকদের বাড়িতে ঝি-চাকর
৩৫. ১.২৯ প্রীতিলতার হাঁপানির টান বেড়েছে
৩৬. ১.৩০ ট্রেনে আসবার সময়ে
৩৭. ১.৩১ স্বাধীনতার কয়েক বছর পর
৩৮. ১.৩২ ঢাকার সেগুনবাগানে মামুনের এক দিদির বাড়ি
৩৯. ১.৩৩ বেশ তাড়াতাড়িই শীত পড়ে গেছে
৪০. ১.৩৪ দেওঘরে প্রতাপকে থেকে যেতে হলো
৪১. ১.৩৫ মোহনবাগান লেনে চন্দ্রাদের বাড়ি
৪২. ১.৩৬ মোটর বাইকের গর্জনে পাড়া কাঁপিয়ে
৪৩. ১.৩৭ অল ওয়েভ রেডিও
৪৪. ১.৩৮ কানু যে ব্যাঙ্কে কাজ করে
৪৫. ১.৩৯ কলেজের গেট দিয়ে বেরিয়ে
৪৬. ১.৪০ দেওঘরে এসে উপস্থিত হলেন সত্যেন
৪৭. ১.৪১ পাতিপুকুরের বাড়ির ভিত তৈরির কাজ
৪৮. ১.৪২ কানুর বাড়ির ছাদের আলসেতে
৪৯. ২.০২ শেষ পরীক্ষার শেষ ঘণ্টা
৫০. ২.০৩ দুপুরবেলা প্রবল ঝড় হয়ে গেছে
৫১. ২.০৪ বাড়ির সামনে যে গেট ছিল
৫২. ২.০৬ খবরের কাগজ পড়ে যাচ্ছেন প্রতাপ
৫৩. ২.০৫ বাবুল বুঝতে পারেনি
৫৪. ২.০৭ পাতিপুকুর স্টপে বাস থেকে নেমে
৫৫. ২.০৮ গাড়ি ভাড়া করেছে আলতাফ
৫৬. ২.০৯ প্রেসিডেন্সি কলেজের গেট দিয়ে
৫৭. ২.১০ কেমিস্ট্রিতে ফার্স্ট ক্লাস
৫৮. ২.১১ রেল লাইনের ধারে
৫৯. ২.১২ টেলিফোনটা নামিয়ে রেখে
৬০. ২.১৩ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে
৬১. ২.১৪ কয়েকদিন এড়িয়ে এড়িয়ে চলার পর
৬২. ২.১৫ মুড়ি ও তেলেভাজা খাওয়া
৬৩. ২.১৭ টেবিলের ওপর জোর একটা চাপড় মেরে
৬৪. ২.১৬ অসুখ-বিসুখের ব্যাপার
৬৫. ২.১৮ কফি হাউসে ঢোকার মুখে
৬৬. ২.১৯ তিন তিনটে সাধারণ নির্বাচন
৬৭. ২.২০ ভিত নেই তবু বাসস্থান গড়ে উঠেছে
৬৮. ২.২১ বৃষ্টির ছাঁট আসছে খুব
৬৯. ২.২২ আদালতে প্রতাপ
৭০. ২.২৩ সীট রিজার্ভেশানের সুযোগ
৭১. ২.২৪ লোদি গার্ডেনসে ত্রিদিব আর সুলেখা
৭২. ২.২৫ পত্রিকার নাম নিয়ে আলাপ-আলোচনা
৭৩. ২.২৬ নোয়াখালিতে বসিরের বাড়ি
৭৪. ২.২৭ থার্ড ইয়ার থেকে ফোর্থ ইয়ারে
৭৫. ২.২৮ কবি জসিমউদ্দিনের বাড়িতে
৭৬. ২.২৯ অতীনদের স্টাডি সার্কল
৭৭. ২.৩০ আজকালকার যুদ্ধে
৭৮. ২.৩১ রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
৭৯. ২.৩২ কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস
৮০. ২.৩৩ টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে
৮১. ২.৩৫ নোয়াখালিতে সিরাজুল
৮২. ২.৩৪ মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাড়ি
৮৩. ২.৩৬ স্টাডি সার্কল থেকে
৮৪. ২.৩৭ তিনতলার এই ঘরখানি
৮৫. ২.৩৮ আলপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
৮৬. ২.৩৯ কয়েকদিনের জ্বরেই একেবারে কাবু
৮৭. ২.৪০ একটা ভিড়ের বাসে চেপে
৮৮. ২.৪১ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ এলাকা ছাড়িয়ে
৮৯. ২.৪২ মামুনের মেজাজ খারাপ
৯০. ২.৪৩ তুতুল একা একা
৯১. ২.৪৪ ঝোঁকের মাথায় প্রতাপ
৯২. ২.৪৫ সন্ধ্যারতির সময় ভক্ত ও দর্শক
৯৩. ২.৪৬ দোতলা থেকে কল্যাণী ডাকছেন
৯৪. ২.৪৭ অ্যালুমিনিয়ামের বাটি
৯৫. ২.৪৮ বড় তেঁতুল গাছ
৯৬. ২.৪৯ স্টাডি সার্কেল শেষ হয়ে যাওয়ার পর
৯৭. ২.৫০ জানলায় পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে
৯৮. ২.৫২ আকাশে জোরে বিদ্যুৎ চমকালে
৯৯. ২.৫১ চায়ের কাপ তুলে একটা চুমুক
১০০. ২.৫৩ দিনের পর দিন কেটে যায়
১০১. ২.৫৪ করোনেশান ব্রীজের কাছে
১০২. ২.৫৫ তিনবার সিটি দিয়ে থেমে গেল ট্রেনটা
১০৩. ২.৫৬ সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে
১০৪. ২.৫৭ তুতুলের খুব অস্বস্তি হয়
১০৫. ২.৫৮ বছরের প্রথম দিনটি
১০৬. ২.৫৯ পুরোনো গাড়িটার বদলে
১০৭. ২.৬০ অকস্মাৎ মামুনকে গ্রেফতার
১০৮. ২.৬২ সারারাত ঘুমোতে পারেনি তুতুল
১০৯. ২.৬১ লণ্ডন শহরে পা দিয়ে
১১০. ২.৬৩ ট্রাম ধর্মঘট মিটলো
১১১. ২.৬৪ ট্রেন সাড়ে চার ঘণ্টা লেট
১১২. ২.৬৫ শহরের সমস্ত লোক
১১৩. ২.৬৬ সিঁড়ির মুখে ল্যান্ডলেডি
১১৪. ২.৬৭ তুতুল যে সার্জারিতে কাজ করে
১১৫. ২.৬৮ পমপম একটা রেডিও রেখে গেছে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন