২.৫০ জানলায় পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

জানলায় পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে বিমানবিহারী বললেন, তোমরা একটা টকটক গন্ধ পাচ্ছো না? আমি পাচ্ছি। কী দারুণ কথা লিখে গেছেন সুকুমার রায় মশাই, “শুনেছো কী বলে গেল। সীতানাথ বন্দ্যোঃ/আকাশের গায়ে নাকি টকটক গন্ধ!” সত্যি, এখন আকাশের দিকে তাকালেই এই টকটক গন্ধটা পাওয়া যায়।

পরেশ গুহ রুমাল দিয়ে কপাল মুছতে মুছতে বললেন, এক্সেলেন্ট! এই টকটক গন্ধটা কী রকম জানো? মনে করো আজকের রান্না ডাল কালকে খাবে বলে রেখে দিলে, কিন্তু সেটা পচে গেল, সেই ডালে যেমন টকটক গন্ধ হয়।

প্রতাপ একটু হেসে বললেন, আপনার উপমাটা বোধহয় সঠিক হলো না মিঃ গুহ। পচা ডালের টক গন্ধ খুব খারাপ নয়। আমাদের দেশে ডাল পচে গেলেও সেটাকে জ্বাল দিয়ে ঘন করে একেবারে শুকিয়ে খাওয়া হতো, মন্দ লাগতো না।

বিমানবিহারী বললেন, আমার তো ঘামে ভেজা মানুষের গায়ের টকটক গন্ধটাই মনে পড়ে। আমার গায়ে এখন যেমন হয়েছে, পাখার হাওয়াতে ঘামছি।

পরেশ গুহ বললেন, সত্যি আর পারা যাচ্ছে না। এত গরম বহুকাল পড়েনি। ক্লাউড বাস্ট করিয়ে বৃষ্টি নামাবার টেকনোলজি কতদিনে বেরিয়ে যাওয়া উচিত ছিল, মানুষ এখন চাঁদে যেতে চলেছে–আর আমাদের এখানে উড়িষ্যায় বৃষ্টির জন্য যাগযজ্ঞ হচ্ছে।

বিমানবিহারী বললেন, উড়িষ্যার অবস্থা খুব খারাপ, ভয়াবহ খরা, মানুষ না খেয়ে মরছে।

প্রতাপ বললেন, আমাদের ওয়েস্ট বেঙ্গলের অবস্থাই বা কী ভালো? গত বছরের চেয়ে আরও বেশি ফুড শর্টেজ।

কয়েকদিন ধরে দিনে ও রাতে সমান গরম চলছে। সাধারণত বিকেলের দিকে বঙ্গোপসাগর থেকে যে উদাত্ত হাওয়া আসে, সেটাও বন্ধ। এইরকম গুমোট গরমে কলকাতা শহরটা বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠে। যে-কোনো আড্ডাতেই এখন উত্তাপ প্রসঙ্গ।

বিমানবিহারী আবার জানলা দিয়ে আকাশ দেখে বললেন, জুনের মাঝামাঝি হয়ে গেল, এই সময় তো মনসুন এসে পড়ার কথা। সমুদ্রের মেঘেরা কী এবারে এদিকের রাস্তা ভুলে গেল?

পরেশ গুহ বললেন, উড়িষ্যার সম্বলপুরে যজ্ঞ করার পরেই নাকি খানিকটা বৃষ্টি হয়েছে। এক বাংলা কাগজের নিজস্ব সংবাদদাতা তো তাই লিখেছে। আসুন এখানেও আমরা একটা যজ্ঞটজ্ঞ শুরু করে দিই। ঋক বেদে মেঘের এক দেবতা আছে, তার নাম পর্জন্য। সেই পর্জন্যের নামে একটি শ্লোক হচ্ছে এইরকম :
“পর্জন্যায় প্রগায়ত পুত্ৰায়মীড় পৃষে
স নো যবসমিচ্ছতু।”

প্রতাপ বিস্মিতভাবে পরেশ গুহর দিকে তাকালেন। ইনি ইংরেজির অধ্যাপক, অক্সফোর্ডে পড়েছেন, এর মুখে হঠাৎ এরকম সংস্কৃত শুনবেন আশা করেননি। তিনি বললেন, বাঃ, আপনার সংস্কৃত উচ্চারণ বেশ ভালো তো।

পরেশ গুহ বললেন, আমাদের কালে তো সংস্কৃত কমপালসারি ছিল, আমি বি এ পর্যন্ত সংস্কৃত পড়েছি। আপনারা পড়েননি?

প্রতাপ বললেন, ইস্কুলে পড়েছি একটু-আধটু, সে সব ভুলে গেছি। আপনি যে শ্লোকটা বললেন, তার মানে কী?

এর মানে হলো…”অন্তরীক্ষের পুত্র সেচনসমর্থ পর্জন্যদেবের উদ্দেশ্যে স্তোত্র উচ্চারণ করো। তিনি আমাদের অন্য ইচ্ছা করুন।” এই পর্জন্যদেব বৃষ্টিপাতে শুধু ফসলই ফলান না, আর একটা শ্লোকে আছে, “যো গর্ভ…অর্থাৎ যে পর্জন্যদেব ওষধিসমূহের, গো-সমূত্রে, অশ্বসমূহের ও নারীগণের গর্ভ উৎপাদন করেন …”

বিমানবিহারী বললেন, পরেশ, তুই কায়স্থর ছেলে হয়ে খুব বেদ আউড়ে যাচ্ছিস তো! আমরা সংস্কৃত জানি না, তুই ভুলটুল বললেও ধরতে পারবো না।

পরেশ গুহ বললেন, আমি মাঝে মাঝে বেদের অনুবাদ পড়ি, সত্যিকারের কাব্য আছে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মশাই কী বলেছিলেন জানিস, বেদ হচ্ছে পলগ্রেভ সাহেবের গোল্ডেন ট্রেজারির মতন একখানা কবিতার সংকলন, ধর্মগ্রন্থ-ট্রন্থ কিছু না। আর বামুন কায়েতের কথা বলছিস? বেদ-এর প্রথম বাংলা অনুবাদ কে করেছিল জানিস, সেও এক কায়স্থ, রমেশ দত্ত নামে এক সিভিলিয়ান। ঐ রমেশ দত্তর ফ্যামিলির সঙ্গে আমাদের খানিকটা আত্মীয়তা আছে।

বিমানবিহারী বললেন, আমরা ছাত্র বয়েসে শুনেছিলুম, ডঃ শহীদুল্লা, যিনি ইস্ট পাকিস্তানের একজন নামকরা স্কলার, এক সময় ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলেন, মুসলমান বলে তাকে বেদ পড়তে দেওয়া হয়নি।

–ওসব হলো ভাই তোমাদের হিন্দু অথোডক্সির হিপোক্রিসি। বাড়িতে সংস্কৃত শিখে যে খুশী পড়তে পারে। সৈয়দ মুজতবা আলী নামে একজন বাংলার রাইটার আছেন না, রেডিও স্টেশানে বড় চাকরি করেন, একবার রেডিওতে একটা টক দিতে গিয়ে আলাপ হয়েছিল,খুব গপ্পে মানুষটি, উনি আমায় বলেছিলেন, উনি হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ছেলে বিনয়তোষ ভট্টাচার্যির বাড়িতে গিয়ে টানা সাত-আট বছর বেদ পাঠ নিয়েছেন।

বিমানবিহারী বললেন, মুজতবা আলী আমার খুব ফেবারিট রাইটার। উনি ইস্ট পাকিস্তানে চলে গিয়েও টিকতে পারেননি, এদেশেই আবার চলে এসেছিলেন। এখন বোধহয় শান্তিনিকেতনে থাকেন। একদিন ডাকবো আমার বাড়িতে।

গরম, সুকুমার রায়, বেদ, ইস্ট পাকিস্তান, মুজতবা আলীর গদ্য, চালের চোলাচালান এইরকম এক প্রসঙ্গ থেকে দ্রুত অন্য প্রসঙ্গে চলে যায় আড্ডা। পরেশ গুহই প্রধান বক্তা, অধ্যাপকরা বোধহয় চুপ করে থাকতে পারেন না। প্রতাপ প্রায় নীরব শ্রোতা, কারণ হাকিমদের লম্বা লম্বা উঁকিলী বক্তৃতা শুনতে শুনতে চুপ করে থাকাই অভ্যেস হয়ে গেছে। বিমানবিহারী মাঝে মাঝে দু একটা মন্তব্য ছুঁড়ে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সুবক্তা হলেও পরেশ গুহর ভাষার রাশ কিছুটা আলগা। উত্তেজনার মুহূর্তে তিনি শালা, শুয়ারের বাচ্চা ইত্যাদি ব্যবহার করে যান অবলীলাক্রমে। তাঁর বাড়ি চন্দননগরে, প্রতিদিন ট্রেনে যাতায়াত করার সময় তিনি চালের চোরাকারবারিদের দেখতে পান। এখন গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, বুড়ো বড়িরাও এই কাজে নেমে গেছে। করডনিং ব্যবস্থাকে কাঁচকলা দেখিয়ে মফঃস্বল থেকে কলকাতা শহরে চাল আসছে অনবরত। গ্রামের সাধারণ নারী পুরুষ বেআইনী কাজ করতে লেগে গেল দ্রুত, পুলিসকে তারা ঘুষ দেয়, যুবতী মেয়েদের পুলিসরা প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি করে প্ল্যাটফর্মের ওপর। এই সামাজিক অবক্ষয়ের জন্যই পরেশ গুহ বেশি ক্ষুব্ধ।

তিনি এক সময় বলে উঠলেন, সেন্টারে একটা নভিস প্রাইম মিনিস্টার, নেহরুর মেয়ে ইন্দিরা দিল্লি অ্যাডমিনিস্ট্রেশান চালাতেই হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। স্টেটগুলোর দিকে নজর নেই, আর আমাদের ওয়েস্ট বেঙ্গলে একটা অপদার্থ সরকার, যতসব শুয়ারের বাচ্চারা।

প্রতাপ প্রতিবাদমূলক খুক খুক করে কাশি দিলেন দুবার।

বিমানবিহারী বললেন, ওরে পরেশ, তুই গভর্ণমেন্ট সম্পর্কে যে সব অ্যাডজেকটিভ প্রয়োগ করছিস তাতে আমাদের জুডিশিয়ারির একজন প্রতিনিধির আপত্তি আছে। আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে কনটেমট অফ কোর্ট করে দেবে।

পরেশ গুহ সঙ্গে সঙ্গে জিভ কেটে বললেন, ইয়োর অনার, অপরাধ করে ফেলেছি।

প্রতাপ বললেন, আপনি বেদ-এর শ্লোকও মুখস্থ বলতে পারেন, আবার ঐ যে কী যেন বলে, অতি দেশজ শব্দও অনায়াসে উচ্চারণ করেন …

বিমানবিহারী জিজ্ঞেস করলেন, প্রতাপ, তোমার আদালতে কখনো কোনো ইস্কুল কলেজের মাস্টারকে আসামী হিসেবে পাও না?

প্রতাপ বললেন, অ্যাঁ? হ্যাঁ হয়তো কখনো আসে, তবে ঠিক খেয়াল করতে পারছি না।

–এ বিষয়ে একটা চমৎকার জোক আছে, শোনো। এটা আমি শুনেছিলুম আমার আর এক বন্ধু, তুমি তাকে চেনো, সিগনেট প্রেসের দিলীপ গুপ্তর কাছে। আমেরিকার একটি আদালতে একবার একজন স্কুলের শিক্ষয়িত্রীকে আনা হয়েছে। সে মহিলা ট্রাফিকের লাল বাতির মধ্যেও গাড়ি চালিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, এই অপরাধে।

পরেশ গুহ বললেন, আমাদের দেশে ওরকম কত লোক যায়!

–আরে গল্পটা শোনো না! পুলিস র্থেকে ভদ্রমহিলাকে কোর্টে প্রোডিউস করার পর জাজকে অনুরোধ করা হলো, কেসটা একটু তাড়াতাড়ি বিচার করতে, কারণ ওর ক্লাসের ছেলেমেয়েরা অপেক্ষা করে আছে। জাজ হঠাৎ আহ্লাদে ডগোমগো হয়ে উঠে মহিলার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি স্কুল টিচার? আজ আমার জীবনের একটা মস্ত বড় আশা পূর্ণ হবে। আমি এত বছর ধরে অপেক্ষা করেছি, কবে আমার এজলাসে একজন স্কুল টিচার আসবে …যান, ঐ বেঞ্চিটায় বসে কাগজ কলম নিয়ে পাঁচশোবার লিখুন। আমি আর কোনোদিন লালবাতি দেখেও গাড়ি চালাবো না …

পরেশ গুহ এত জোরে জোরে হাসতে লাগলেন যে তাঁর নাক দিয়ে শিকনিবেরিয়ে গেল। রুমাল দিয়ে মুখটুক মুছে তিনি বললেন, তাহলে আমি জজ সাহেবদের সম্পর্কে দু একটা গল্প শোনাই।

এমন সময় দড়াম দড়াম শব্দে দরজা-জানলা আছড়াবার শব্দ হলো। ঝড় উঠেছে। তিনজনেই দ্রুত চলে এলেন জানলার কাছে। শনিবারের সন্ধ্যায় রাস্তায় অনেক মানুষ, আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে সবাই চোখমুখ ঢেকে ছুটছে। কোনো একটা দোকানের টিনের সাইনবোর্ড খসে পড়লো ঝনঝন শব্দে। এই সময় জানলা বন্ধ করে দেওয়াই সঙ্গত, তবু তিন প্রৌঢ় দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন বাইরের দৃশ্য।

একটু পরেই শিল পড়তে শুরু করলো। ঠিক এক ঝাঁক অশ্বারোহীর মতন খটাখট শব্দ। গাড়ি বারান্দাটার দরজা খুলে বাইরে এসে প্রতাপ ছেলেমানুষের মতন শিল কুড়োতে লাগলেন। বিমানবিহারী দুখানা কুড়িয়ে তা চেপে ধরলেন পরেশ গুহর মাথায়। তিন প্রৌঢ় এখন যেন তিন কিশোর।

প্রতাপ বললেন, ঐ যে অলি আর বুলি আসছে।

সঙ্গে সঙ্গে সংযত হয়ে গেলেন অন্য দু’জন। একটা বাস থেকে নেমে অলি আর বুলি ছুটছে বাড়ির দিকে। অলি শক্ত করে চেপে ধরে আছে দুহাতে তার আঁচল আর শাড়ির তলার দিকটা।

বিমানবিহারী বললেন, যাক, মেয়ে দুটো ঠিক সময় ফিরেছে।

এ বাড়ির সদর দরজা এমনিতে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টাই হাট করে খোলা থাকে। কিন্তু কী কারণে যেন আজই এখন বন্ধ। ঝড়ের তাড়া খাওয়া দুটি পাখির মতন অলি আর বুলি সেই দরজার ওপর এসে পড়ে দুমদুম করে ধাক্কা মারতে লাগলো।

ওপর থেকে বিমানবিহারী বললেন, আঃ, ধীরাজটা গেল কোথায়? দাঁড়া, আমি ডেকে দিচ্ছি।

ধীরাজ যতক্ষণ না আসে ততক্ষণ দু বোন ঝড়ের ঝাঁপটা খাবে, সেইজন্য প্রতাপ নিজেই নেমে গেলেন নিচে। দরজার ছিটকিনি খুলেই যেন একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর দেবার মতন সুরে বললেন, জানিস, শিল পড়ছিল একটু আগে।

অলি বললো, জানি। এত ধুলো ঢুকে গেছে আমার চোখে।

একতলার উঠোনটাও শিল পড়ে প্রায় সাদা হয়ে গেছে। প্রতাপ একটুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলেন। প্রত্যেক বছরই বোধহয় দু’একদিন এরকম ঝড়ের সময় শিলাপাত হয়, প্রতাপ অনেকদিন দেখেন নি। এই শিল পড়ার সঙ্গে যেন বাল্যস্মৃতি জড়িয়ে আছে। সেই মালখানগরে এরকম ঝড় উঠলেই ছেলেমেয়েরা আমবাগানে ছুটতো। জুন মাস নয় অবশ্য, মার্চ-এপ্রিলের ঝড়ে অনেক কাঁচা আম ঝরে পড়ে। শিললাগা আমগুলোতে একটা তামাটে দাগ হয়ে যায়। প্রতাপদের বাড়ির পুকুরের ওপারের বাগানে এখন কী সেই বাগানটা আছে? ছোট ছেলেমেয়েরা আজও সেখানে আম কুড়োতে যায়?

দেখতে দেখতে বৃষ্টি নেমে গেল।

আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে অলি বললো, প্রতাপকাকা, এখন যাবেন না! এই বৃষ্টি চট করে থামবে না। আমরা এসপ্ল্যানেডে দেখে এলুম, আকাশ একেবারে কালো হয়ে গেছে।

–কোথায় গিয়েছিলি রে, তোরা।

–লাইটহাউসে একটা সিনেমা দেখতে।

–অলি, তুই বাবলুর খবর কিছু জানিস?

অলি সচকিত হয়ে প্রতাপের মুখের দিকে তাকালো। অকারণেই যেন রক্তাভ হলো তার কানের দুই লতি। আমতা আমতা করে বললো, আমি? কেন, কী হয়েছে বাবলুদার?

প্রতাপ বললেন, ছেলেটা ওর বন্ধুদের সঙ্গে দার্জিলিং বেড়াতে গেল। গিয়ে একটা চিঠি লেখেনি এ পর্যন্ত। দশবারোদিন তো হয়ে গেল, ওর মা চিন্তা করে।

অলির বুক ঢিপঢিপ করছে। বাবলুদার কাছ থেকে সে একটা চিঠি পেয়েছে দু’দিন আগে। বাবলুদার প্রথম চিঠি। সে চিঠিও অতীন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লেখেনি, সে যাবার আগে অলির সঙ্গে যখন দেখা করতে এসেছিল, তখন অলি বলেছিল, বাবলুদা, তুমি যদি চিঠি না লেখো, তোমার সঙ্গে জীবনে আর আমি কথা বলবো না।

অলি কিছুতেই প্রতাপের সামনে সেই চিঠির কথা উচ্চারণ করতে পারলো না। আর কোনো কারণে নয়, যদি প্রতাপ হঠাৎ চিঠিটা একবার দেখতে চান! কোনো কিছু গোপন করার অভ্যেস নেই অলির, কিন্তু বাবলুদার চিঠিটা অন্য কারুকেই দেখানো যায় না।

উত্তর দেবার দায় থেকে অব্যাহতি পেয়ে গেল অলি, এরকম বৃষ্টির মধ্যেও দরজার কাছে একটা গাড়ি থামলো। সেই গাড়ি থেকে নামলেন বিখ্যাত প্রকাশক দিলীপকুমার গুপ্ত।

একটু আগেই এর কথা হচ্ছিল, বিমানবিহারী এর কাছ থেকে শোনা একটা গল্প বলছিলেন। এই বাড়িতেই দিলীপকুমারের সঙ্গে আলাপ হয়েছে প্রতাপের। প্রতাপ হাত তুলে নমস্কার জানিয়ে বললেন, আরে, আসুন, আসুন!

সুবিশালদেহী দিলীপকুমার গুপ্তর ঠোঁটে সব সময়েই একটা পাতলা হাসি মাখা থাকে। এতবড় চেহারা সত্ত্বেও তাঁর স্বভাবের মধ্যে যেন একটি শিশু লুকিয়ে আছে!

গমগমে গলায় তিনি ব্যস্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন, বিমান কোথায়?

প্রতাপ বললেন, ওপরের ঘরে। চলুন—

দিলীপকুমার অনেকখানি ভুরু তুলে মহাবিস্ময়ের সঙ্গে বললেন, ঘরে বসে আছে? ওর কী মাথা খারাপ! এইরকম সময়ে–

প্রতাপ ভাবলেন, কোথাও নিশ্চয়ই সাঙ্ঘাতিক কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। বিশেষ প্রয়োজন না হলে এইরকম ঝড়-জল মাথায় করে দিলীপকুমার নিশ্চয়ই ছুটে আসতেন না।

তিনি অলিকে বললেন, বাবাকে ডাক তো।

ডাকতে হলো না, ওপর থেকে নিশ্চয়ই দিলীপকুমারের গাড়ি দেখতে পেয়েছেন, তাই বিমানবিহারী নিজেই নেমে আসতে লাগলেন নিচে। রেলিং ধরে ঝুঁকে বললেন, কী ব্যাপার, ডি কে, এসো, ওপরে এসো!

দিলীপকুমার বললেন, তুমি নেমে এসো। এক্ষুণি বেরুতে হবে।

সিঁড়ির আরও কয়েক ধাপ নামতে নামতে বিমানবিহারী উদ্বিগ্নভাবে জিজ্ঞেস করলেন, কেন, কী ব্যাপার? কী হয়েছে!

দিলীপকুমার আবার বিস্ময়ের ভঙ্গি করে বললেন, বাঃ, তুমি জিজ্ঞেস করছো কী ব্যাপার? কেন, তোমার চোখ নেই। শোনো বিমান, চক্ষু কর্ণ-নাসিকা এগুলোর ঠিকঠাক ব্যবহার করার জন্য তোমাকে দেওয়া হয়েছে, এগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য নয়!

–ডি কে, প্রহেলিকা ছেড়ে একটু খুলে বলল। কী হয়েছে কী!

–কী আবার হবে, কতদিন পর এরকম ঝড় উঠলো, এটা সেলিব্রেট করা হবে না? আমি দেখে এলুম, ময়দানের কটা গাছ ভেঙে পড়েছে, আরও ভাঙবে, তুমি চোখের সামনে কখনো গাছ ভেঙে পড়তে দেখেছো? চলো, চলো, আর দেরি করলে কিছুই দেখা যাবে না!

প্রতাপ চমৎকৃত হলেন। দিলীপকুমার একে তো প্রখ্যাত প্রকাশক, তাছাড়া এখন বাটা কম্পানীর মস্ত অফিসার, সদাব্যস্ত মানুষ। এইরকম মানুষেরও ঝড় বৃষ্টি ও গাছ ভেঙে পড়ার দৃশ্য দেখার জন্য ময়দানে যাওয়ার এত ব্যাকুলতা!

বিমানবিহারী বললেন, এখন বেরুতে হবে, তাহলে পা-জামাটা ছেড়ে ধুতি পড়ে আসি–

–কিসসু দরকার নেই। গাড়িতে যাবে তো, ঝড় দেখতে যাওয়া হবে, কোনো স্বয়ম্বর সভায় তো যাচ্ছো না!

–আমার দু’জন বন্ধু রয়েছেন, তাহলে এদেরও …

–হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, তবে দেরি করো না।

প্রতাপের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, এই যে, ইয়ে, চন্দ্রশেখরবাবু, চলুন, ঘুরে আসা যাক।

প্রতাপ হাসলেন। দিলীপকুমার প্রায়ই তাঁর নাম ভুল করেন। তবে এই ভুলের মধ্যেও একটা প্যাটার্ন আছে। বঙ্কিমচন্দ্রের একটি উপন্যাসের দুটি চরিত্রের নাম বদলাবদলি করে ফেলেন তিনি। আর একদিন তিনি প্রতাপকে ডেকেছিলেন শিবনাথ বলে। সেটাও ব্রাহ্ম সমাজের দুই নেতার নাম পরিবর্তন।

প্রতাপের সঙ্গে দিলীপকুমারের বেশ কয়েকবার দেখা হলেও, প্রতাপ বুঝতে পারেন, দিলীপকুমার তাঁর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে কথা বলেন না। সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রকাশক, ছাপাখামাওয়ালা এদের নিয়েই তিনি সব সময় মত্ত।

দিলীপকুমারের গাড়ির ড্রাইভার আছে, কিন্তু ড্রাইভারকে পাশে বসিয়ে গাড়ি চালাবেন তিনি নিজে। পেছনের সীটে বিমানবিহারী, পরেশ গুহ ও প্রতাপ। ঝড় এখন অনেকটাই প্রশমিত, বৃষ্টি পড়ছে প্রবল তোড়ে। এ বছরের প্রথম মনসুন।

ময়দানে কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে আছে, নতুন কোনো গাছের ভেঙে পড়ার দৃশ্য দেখা গেল না। দিলীপকুমার রেড রোডের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত, রেসকোর্সের প্রান্ত ধরে আলিপুরের দিকে অনেকখানি গিয়ে বেলবেডিয়ারের পাশ দিয়ে ঘুরলেন কয়েকবার। এ যেন কলকাতা নয়, কোনো অচেনা সুন্দর শহর। জনমানবহীন রাস্তা, অন্য গাড়িগুলির ছুটে যাওয়ার দারুণ ব্যস্ততা, দুটি পাশাপাশি শিশু গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা একপাল গোবেচারার মতন গোরু।

খানিক বাদে দিলীপকুমার বললেন, বিমান, তুমি তো মিষ্টি খেতে ভালবাসো, চলো, শ্যামবাজারের সেনমশাইয়ের দোকানে তোমায় …

পরেশ গুহ বাড়ি ফেরার তাড়ায় নেমে গেলেন ধর্মতলায়। ওঁদেরও আর শ্যামবাজার পর্যন্ত যাওয়া হলো না। ওদিকে রাস্তায় প্রচুর জল জমেছে।

এদিকেও, এলগিন রোড পর্যন্ত মোটামুটি ঠিক থাকলেও তারপর ভবানীপুরের দিকে এক হাঁটুর বেশি জল। দিলীপকুমার সেই জল ঠেলেই বিমানবিহারী ও প্রতাপকে বাড়ি পৌঁছাবার প্রস্তাব দিলেও ওঁরা দু’জনে রাজি হলেন না! এত জলে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। জোর করে নেমে পড়লেন দু’জনে।

দিলীপকুমার এতক্ষণ গাড়িতে নানারকম রঙ্গ রসিকতা করছিলেন। এবারেও বললেন, বিড়লা মরার পর এক চান্সেই স্বর্গে যাবেন কেন জানো তো; অন্যের অ্যাকাউন্টে বিড়লার অনেক পূণ্য জমে যাচ্ছে। বিড়লার এই অ্যামবাসেডর গাড়ি, এই গাড়িতে প্রত্যেকদিন বাড়ি পৌঁছোবার পর লোকে বলে, থ্যাঙ্ক গড, আজ গাড়ির কোনো গোলমাল হয়নি। বিড়লার জন্য এত লোক ভগবানের নাম নিচ্ছে …

বিমানবিহারী ও প্রতাপ একটি রিক্সা নিলেন। কলকাতার বর্ষায় রিক্সাওয়ালারাই অতি বিশ্বস্ত ভরসা। রাস্তার বাতিগুলো কী কারণে যেন নিবে গেছে। দোকানপাটও সব বন্ধ। অন্ধকার পথটাকে নদী বলে মনে হতে পারে। প্রতাপ একটা খালের কথা ভাবছেন, এই রিক্সাটা যেন নৌকো। মালখানগরে যেতে হলে নদী ছেড়ে একটা খালে ঢুকতে হতো।

বিমানবিহারীকে আগে নামতে হলো। তারপর প্রতাপ একটি নিজস্ব সিগারেট ধরালেন। দিলীপকুমার তাঁর গাড়ি সফরের সময় অকৃপণভাবে সিগারেট বিলিয়েছেন। মানুষটার স্বভাবের মধ্যে একটা অতি ভদ্র কিন্তু দিলদরিয়া ভাব আছে। প্রতাপ ভাবছিলেন, এই লোক কী করে অফিস টফিসে চাকরি করে, ব্যবসা চালায়? এইসব মানুষের হাতে অফুরন্ত টাকা খরচ করার স্বাধীনতা দিলে সেই টাকার সদ্ব্যবহার হতে পারে। অবশ্য সেজন্য একটা অন্য দেশ কিংবা অন্য শতাব্দীও দেওয়া দরকার।

প্রতাপের মনটা এখন বেশ ভালো লাগছে। রুটিনের বাইরের জীবন, রুটিনের বাইরের মানুষ তাঁর বিশেষ পছন্দ, যদিও নিজের দৈনন্দিন জীবনে সে রকম বিশেষ কিছু ঘটে না।

বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে প্রতাপ দেখলেন, তাঁদের বাড়ির দরজার সামনে আর একটি রিক্সা থেমেছে। রাত প্রায় নটা, অন্ধকারে ভালো করে দেখা যায় না, তবু মনে হলো, একজন বৃদ্ধ, সঙ্গে একজন স্ত্রীলোক, নামলো সেই রিক্সা থেকে, তারপর রিক্সাওয়ালার সঙ্গে দরদাম করতে শুরু করেছে।

এরকম সময়ে হঠাৎ কেউ দেখা করতে আসবে না। প্রতাপ বুঝলেন, এই বৃষ্টি-বাদলার রাতে তার বাড়িতে অতিথি এসেছে।

আগেকার দিন আর নেই, এখন বাড়িতে অতিথি এলে মনটা ভারী খুশী হয় না। মনে হয় অবাঞ্ছিত উপদ্রব। অতিথি আসা মানেই ব্যয় বৃদ্ধি। সবসময় অর্থ চিন্তা। অর্থের জন্য কি দয়া-মায়া সৌজন্য সব বিসর্জন দিতে হবে? মমতা কিছুদিন অসুখে ভুগলেন, সে জন্য এ-মাসে অতিরিক্ত খরচ হয়ে গেছে। বিমানবিহারীর কাছে আবার হাত পাততে হবে। এই দৈন্য, এই গ্লানি, এ সবের জন্য প্রতাপের হঠাৎ হঠাৎ ঘর সংসার ছেড়ে নিরুদ্দেশে চলে যেতে ইচ্ছে করে।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ একটা ঘোড়ার গাড়ি ডাকা হয়েছে
২. ১.০২ বৈদ্যনাথধাম স্টেশনে দাঁড়িয়ে
৩. ১.০৩ ভবদেব মজুমদারের আমলে
৪. ১.০৪ বাড়ির দারোয়ানের সঙ্গে তুতুলকে
৫. ১.০৫ দেশ বিভাগের পর দুটি নতুন দেশ
৬. ১.০৬ ছাত্র বয়েসে প্রতাপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু
৭. ১.০৭ মেঘনা নদী পার হয়ে দায়ুদকান্দি
৮. ১.০৮ মালখানগরে প্রতাপদের বাড়ির সামনে
৯. ১.০৯ সত্যেন ভাদুড়ীর গায়ের পাঞ্জাবী
১০. ১.১০ দুটো সাইকেল ভাড়া করা হয়েছে
১১. ১.১২ জেল থেকে ফেরার পর
১২. ১.১১ দুপুরবেলা নানা গল্পের মধ্যে
১৩. ১.১৩ বাগানে নতুন গোলাপ চারা
১৪. ১.১৪ ওপরতলায় নিজেদের অংশটায়
১৫. ১.১৫ ঐ ছেলেটা মুসলমান বুঝি
১৬. ১.১৬ বন্যা হবার দরকার হয় না
১৭. ১.১৮ বিমানবিহারীদের আদি বাড়ি
১৮. ১.১৭ কলকাতার তালতলা অঞ্চল
১৯. ১.১৯ পিকলু আর বাবলু এক স্কুলে পড়তো
২০. ১.২০ তুতুল বাগবাজারের একটি স্কুলে
২১. ১.৪৩ পাড়ার কয়েকটি ছেলে ধরাধরি করে
২২. ১.৪৪ আর্মানিটোলার পিকচার প্যালেস
২৩. ১.৪৫ পাড়াটির নাম বাগবাজার
২৪. ১.৪৬ একটা নড়বড়ে কাঠের টেবিল
২৫. ১.৪৭ আগের দিনই খবর দিয়ে
২৬. ১.৪৮ নতুন বাড়ি ঠিক হলো কালীঘাটে
২৭. ১.২১ সরকারি কর্মচারির চাকরি
২৮. ১.২২ বঙ্কুবিহারীর স্ত্রী এলিজাবেথ
২৯. ১.২৩ একটা মোটরবাইক চেপে হাজির
৩০. ১.২৪ হারীত মণ্ডলকে নিয়ে ত্রিদিব
৩১. ১.২৫ বাড়িতে অসময়ে কোনো অতিথি এসে
৩২. ১.২৬ প্রতাপ সিগারেট খেতে খেতে
৩৩. ১.২৭ ভোর রাতে ঘুম ভেঙে গেল প্রতাপের
৩৪. ১.২৮ কলকাতার ভদ্রলোকদের বাড়িতে ঝি-চাকর
৩৫. ১.২৯ প্রীতিলতার হাঁপানির টান বেড়েছে
৩৬. ১.৩০ ট্রেনে আসবার সময়ে
৩৭. ১.৩১ স্বাধীনতার কয়েক বছর পর
৩৮. ১.৩২ ঢাকার সেগুনবাগানে মামুনের এক দিদির বাড়ি
৩৯. ১.৩৩ বেশ তাড়াতাড়িই শীত পড়ে গেছে
৪০. ১.৩৪ দেওঘরে প্রতাপকে থেকে যেতে হলো
৪১. ১.৩৫ মোহনবাগান লেনে চন্দ্রাদের বাড়ি
৪২. ১.৩৬ মোটর বাইকের গর্জনে পাড়া কাঁপিয়ে
৪৩. ১.৩৭ অল ওয়েভ রেডিও
৪৪. ১.৩৮ কানু যে ব্যাঙ্কে কাজ করে
৪৫. ১.৩৯ কলেজের গেট দিয়ে বেরিয়ে
৪৬. ১.৪০ দেওঘরে এসে উপস্থিত হলেন সত্যেন
৪৭. ১.৪১ পাতিপুকুরের বাড়ির ভিত তৈরির কাজ
৪৮. ১.৪২ কানুর বাড়ির ছাদের আলসেতে
৪৯. ২.০২ শেষ পরীক্ষার শেষ ঘণ্টা
৫০. ২.০৩ দুপুরবেলা প্রবল ঝড় হয়ে গেছে
৫১. ২.০৪ বাড়ির সামনে যে গেট ছিল
৫২. ২.০৬ খবরের কাগজ পড়ে যাচ্ছেন প্রতাপ
৫৩. ২.০৫ বাবুল বুঝতে পারেনি
৫৪. ২.০৭ পাতিপুকুর স্টপে বাস থেকে নেমে
৫৫. ২.০৮ গাড়ি ভাড়া করেছে আলতাফ
৫৬. ২.০৯ প্রেসিডেন্সি কলেজের গেট দিয়ে
৫৭. ২.১০ কেমিস্ট্রিতে ফার্স্ট ক্লাস
৫৮. ২.১১ রেল লাইনের ধারে
৫৯. ২.১২ টেলিফোনটা নামিয়ে রেখে
৬০. ২.১৩ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে
৬১. ২.১৪ কয়েকদিন এড়িয়ে এড়িয়ে চলার পর
৬২. ২.১৫ মুড়ি ও তেলেভাজা খাওয়া
৬৩. ২.১৭ টেবিলের ওপর জোর একটা চাপড় মেরে
৬৪. ২.১৬ অসুখ-বিসুখের ব্যাপার
৬৫. ২.১৮ কফি হাউসে ঢোকার মুখে
৬৬. ২.১৯ তিন তিনটে সাধারণ নির্বাচন
৬৭. ২.২০ ভিত নেই তবু বাসস্থান গড়ে উঠেছে
৬৮. ২.২১ বৃষ্টির ছাঁট আসছে খুব
৬৯. ২.২২ আদালতে প্রতাপ
৭০. ২.২৩ সীট রিজার্ভেশানের সুযোগ
৭১. ২.২৪ লোদি গার্ডেনসে ত্রিদিব আর সুলেখা
৭২. ২.২৫ পত্রিকার নাম নিয়ে আলাপ-আলোচনা
৭৩. ২.২৬ নোয়াখালিতে বসিরের বাড়ি
৭৪. ২.২৭ থার্ড ইয়ার থেকে ফোর্থ ইয়ারে
৭৫. ২.২৮ কবি জসিমউদ্দিনের বাড়িতে
৭৬. ২.২৯ অতীনদের স্টাডি সার্কল
৭৭. ২.৩০ আজকালকার যুদ্ধে
৭৮. ২.৩১ রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
৭৯. ২.৩২ কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস
৮০. ২.৩৩ টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে
৮১. ২.৩৫ নোয়াখালিতে সিরাজুল
৮২. ২.৩৪ মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাড়ি
৮৩. ২.৩৬ স্টাডি সার্কল থেকে
৮৪. ২.৩৭ তিনতলার এই ঘরখানি
৮৫. ২.৩৮ আলপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
৮৬. ২.৩৯ কয়েকদিনের জ্বরেই একেবারে কাবু
৮৭. ২.৪০ একটা ভিড়ের বাসে চেপে
৮৮. ২.৪১ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ এলাকা ছাড়িয়ে
৮৯. ২.৪২ মামুনের মেজাজ খারাপ
৯০. ২.৪৩ তুতুল একা একা
৯১. ২.৪৪ ঝোঁকের মাথায় প্রতাপ
৯২. ২.৪৫ সন্ধ্যারতির সময় ভক্ত ও দর্শক
৯৩. ২.৪৬ দোতলা থেকে কল্যাণী ডাকছেন
৯৪. ২.৪৭ অ্যালুমিনিয়ামের বাটি
৯৫. ২.৪৮ বড় তেঁতুল গাছ
৯৬. ২.৪৯ স্টাডি সার্কেল শেষ হয়ে যাওয়ার পর
৯৭. ২.৫০ জানলায় পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে
৯৮. ২.৫২ আকাশে জোরে বিদ্যুৎ চমকালে
৯৯. ২.৫১ চায়ের কাপ তুলে একটা চুমুক
১০০. ২.৫৩ দিনের পর দিন কেটে যায়
১০১. ২.৫৪ করোনেশান ব্রীজের কাছে
১০২. ২.৫৫ তিনবার সিটি দিয়ে থেমে গেল ট্রেনটা
১০৩. ২.৫৬ সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে
১০৪. ২.৫৭ তুতুলের খুব অস্বস্তি হয়
১০৫. ২.৫৮ বছরের প্রথম দিনটি
১০৬. ২.৫৯ পুরোনো গাড়িটার বদলে
১০৭. ২.৬০ অকস্মাৎ মামুনকে গ্রেফতার
১০৮. ২.৬২ সারারাত ঘুমোতে পারেনি তুতুল
১০৯. ২.৬১ লণ্ডন শহরে পা দিয়ে
১১০. ২.৬৩ ট্রাম ধর্মঘট মিটলো
১১১. ২.৬৪ ট্রেন সাড়ে চার ঘণ্টা লেট
১১২. ২.৬৫ শহরের সমস্ত লোক
১১৩. ২.৬৬ সিঁড়ির মুখে ল্যান্ডলেডি
১১৪. ২.৬৭ তুতুল যে সার্জারিতে কাজ করে
১১৫. ২.৬৮ পমপম একটা রেডিও রেখে গেছে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন