২.৩৫ নোয়াখালিতে সিরাজুল

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

নোয়াখালিতে সিরাজুল নামে একটি ছেলেকে ঝোঁকের মাথায় একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছিল বাবুল, পরে সেকথা তার মনে ছিল না, সিরাজুলও সেই সময় ঢাকায় আসেনি। এক শীতের সকালে বৈঠকখানা ঘরে বসে কাগজ পড়তে পড়তে হঠাৎ একজন আগন্তুককে দেখে . বাবুল চিনতে পারলো না। লম্বা, কালো চেহারা যুবকটির দুই কাঁধে দুটি ক্যাম্বিশের ব্যাগ ঝুলছে, গালে অল্প অল্প দাড়ি, ময়লা কুর্তা-পাজামা পরা, মুখে গ্রাম্য অপ্রস্তুত হাসি। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে বললো, আদাব, বাবুলভাই, আমি আইস্যা পড়ছি।

বাবুলের মেজাজটি ভালো নেই, ঘুম থেকে উঠেই মঞ্জুর সঙ্গে কিছু কথা কাটাকাটি হয়েছে। এখন সে খবরের কাগজ চোখের সামনে মেলে নিজের সঙ্গেই বোঝাঁপড়া করছিল, এই সময় এক মূর্তিমান ব্যাঘাতকে দেখে সে হঠাৎ বিরক্তভাবে জিজ্ঞেস করলো, কী ব্যাপার?

যুবকটি বললো, বাবুলভাই, আমি সিরাজুল ইসলাম, সেই যে নয়াডাঙ্গায় আপনে গেছিলেন…আমার বউরেও সাথে নিয়া আসতে হইলো।

নাম শুনেও বাবুলের কিছু মনে এলো না। যুবকটি পেছন ফিরে তার স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে এলো ভেতরে, সেই মেয়েটির হাতে গোলাপ ফুল ছাপ মারা একটি টিনের সুটকেস। সিরাজুলকে দেখে চিনতে না পারলেও তার পত্নী মনিরার মুখের দিকে এক নজর তাকাতেই বাবুলের সব মনে পড়ে গেল। জয়নাল আবেদিনের আঁকা একটি ছবিতে অবিকল এই রকম একটি নারীর মুখ আছে, সেইজন্যই ভোলা যায় না।

মনের মধ্যে একটা প্রবল অস্বস্তি ও দ্বন্দ্ব থাকলেও বাবুল উঠে দাঁড়িয়ে বললো, এসো, এসো!

সিরাজুল সবিস্তারে তার কাহিনী শোনালো। আইয়ুব খাঁ বনাম ফতিমা জিন্নার ভোট যুদ্ধের সময় গ্রামের অবস্থা দেখতে গিয়ে বাবুল চৌধুরী এই সিরাজুলের বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে বলেছিল, সিরাজুল যদি ঢাকায় এসে পড়াশুনো করতে চায় তা হলে বাবুল তাকে সবরকম সাহায্য করবে। সিরাজুল তখনই সে সুযোগ নিতে পারেনি কারণ তাদের গ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা ইরফান আলীর সঙ্গে সে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়েছিল। বড়লোকদের সঙ্গে মামলা করে কোনোদিনই জেতা যায় না, তাই রাগের চোটে ইরফান আলীকে খুন করতে গিয়েছিল সিরাজুল। ইরফান আলীর মতন মানুষকে খুন করাও সহজ নয়, তারা সব সময় চ্যালাচামুণ্ডা পরিবৃত হয়ে থাকে, ইরফান আলীর ঘাড়ে কুড়ুলের কোপ মারতে গিয়ে সে ধরা পড়ে যায়, তার ফলে সে নিজেই যে খুন হয়ে যায়নি, সেটাই তার সাত পুরুষের ভাগ্য। তবে মার খেয়ে সে তিন মাস শয্যাশায়ী হয়ে ছিল, এখন তার ঘা শুকিয়েছে বটে, কিন্তু ঐ গ্রামে বসবাস করা আর সম্ভব নয় তার পক্ষে। ইতিমধ্যে তার মায়েরও মৃত্যু হয়েছে। ভিটেমাটি সব ইরফান আলীর হাতে সঁপে দিয়ে সে এখন বাবুলের কাছে আশ্রয় প্রার্থী। দুনিয়ায় আর কোথাও তার যাবার জায়গা নেই।

বাবুল ভেতরে ভেতরে বেশ খানিকটা দমে গেল। একটি গ্রাম্য যুবকের পড়াশুনোর প্রতি খুব আগ্রহ দেখে সে তাকে ঢাকার কলেজে পড়ার ব্যাপারে সাহায্য করতে চেয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতি সে ফিরিয়ে নিতে পারে না। কিন্তু তাকে সপরিবারে আশ্রয় দেওয়া কি তার পক্ষে সম্ভব? ঢাকার এই বাড়িখানা তো বাবুলের নিজস্ব নয়। তার বাবা-মা এখন অধিকাংশ ময় টাঙ্গাইলের বাড়িতে থাকলেও মাঝে মধ্যে এখানে এসে ওঠেন। তার বড় ভাই আলতাফ হোটেলেই বেশির ভাগ রাত কাটালেও এ বাড়িতে তার জন্য দুখানি ঘর রাখা আছে। এখানে কোনো বাইরের লোককে আশ্রয় দিতে গেলে তার বাবা মা ও আলতাফের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন।

কিন্তু সুটকেস ও বোঁচকা কুঁচকি সমেত এসে উপস্থিত হয়েছে যে তরুণ দম্পতি, তাদের সে এখন ফেরাবে কী করে?

একতলার গোটা তিনেক ঘরই তাদের পারিবারিক মালপত্রে ঠাসা, তারই কোণে একটা ঘর। পরিষ্কার করে এদের জায়গা দিতে হবে আপাতত। তার আগে মঞ্জুকে ডেকে সব কথা বুঝিয়ে বলা দরকার। মঞ্জু সকাল থেকেই রেগে আছে, সেই রাগের ঝাল যদি এদের ওপরে পড়ে? এখুনি মঞ্জুকে ডাকতে বাবুলের সাহস হচ্ছে না।

সে সিরাজুল ও মনিরার মুখের ওপর চোখ বোলালো। কী অসহায় দুটি মুখ। লজ্জিত, ভীত ব্যাকুল। মানুষই মানুষকে এরকম অসহায় অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেয়। ইরফান আলীর মতন লোকেরা এখন ক্ষমতা পেয়েছে, গ্রামে তারা যা খুশি করতে পারে, গরিবের ধন-প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেললেও তাদের বাধা দেবার কেউ নেই। থানা-পুলিস, সরকারি প্রশাসন সবই এখন ওদের কজায়। ইরফান আলীর কথা ভেবে বাবুল নিষ্ফল ক্রোধে জ্বলে উঠলো। তার ফর্সা মুখোনি লালচে হয়ে গেল, সে কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে পারলো না।

সিরাজুল হুমড়ি খেয়ে বাবুলের হাঁটু ধরে বসে পড়ে কাতর গলায় বললো, সাহেব, আমাগো পায়ে ঠ্যালবেন না। আমাগো যেকোন কাম করতে কন. আমার বউ বাসন মাজবে, ঘর সাফ করবে, আর, আমি…আপনে আমারে…

বাবুল মৃদু ধমক দিয়ে বললো, ও কী করছো, উঠে বসো!

প্রথমে সম্বোধন করেছিল বাবুলভাই, এখন বলছে সাঁহেব। আগে চেয়েছিল লেখাপড়া শেখার সুযোগ, এখন চাইছে চাকর-দাসী হিসেবে কোনো ক্রমে আশ্রয়। এইভাবেই নৈতিক অধঃপতন শুরু হয়।

কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ, বাবুলের বাইরে বেরুবার তাড়া নেই। এখনও ব্রেকফাস্ট খাওয়া হয়নি। বাবুল মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো এ বাড়িতে দু’জন নতুন মানুষকে আশ্রয় দিতে গেলে পুরোপুরি দায়িত্ব সে একা নিতে পারবে না, মঞ্জু আর আলতাফের সঙ্গে পরামর্শ করতেই হবে। আলতাফ প্রায় নিশাচর, কোনোদিনই রাত দুটো আড়াইটের আগে শুতে যায় না। সকাল দশটার আগে বিছানা ছেড়ে ওঠে না। সকালের দিকে তার হোটেলে কিংবা খবরের কাগজের অফিসে কাজও থাকে না বিশেষ। টেলিফোন করলেও এখন জাগানো যাবে না আলতাফকে। মঞ্জু খুব সম্ভবত এখন গোসলখানায়। এদের সঙ্গে পরিচয় করাবার আগে মঞ্জুর সঙ্গে নিভৃতে কথা বলতে হবে।

একটি নতুন মেয়েকে রাখা হয়েছে বাড়ির কাজের জন্য,বাবুল তার উদ্দেশে হাঁক দিল, সেফু, সেফু! তারপর সিরাজুলকে বললো, অনেক দূর থেকে এসেছো, আগে নাস্তা পানি খেয়ে নাও, তারপর তোমাদের ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।

সিরাজুল আর মনিরার মুখ থেকে সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেগের কালো ছায়াটা সরে গেল। এই প্রথম তাদের আশ্রয় দেবার স্বীকৃতি জানালো বাবুল। এতক্ষণ তারা বাবুলের আচরণে ভরসা পায়নি।

সিরাজুল আবার নেমে এসে পা জড়িয়ে ধরলো বাবুলের। ছটফটিয়ে উঠে দাঁড়ালো বাবুল। দাতা কিংবা পরোপকারীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা সে কখনো নেয়নি, যেকোনো কারণে কেউ তাকে কৃতজ্ঞতা জানালে কিংবা সামনা সামনি প্রশংসা করলে সে খুব অস্বস্তি বোধ করে।

সেফু নামে মেয়েটি এই সময় ঘরে ঢুকতেই সে ঝাঁঝের সঙ্গে বলে উঠলো, কিছু খেতে টেতে দিবি না? পরোটা ভেজেছিস? নিয়ে আয়। বাড়িতে মেহমান এসেছে, কয়েকখানা বেশি করে নিয়ে আয়। আর দ্যাখ, ভাবী গোসলখানা থেকে বেরিয়েছে কিনা!

মনিরা ভীতু ভীতু গলায় জিজ্ঞেস করলো, আমি একটু ওর সাথে যাবো?

বাবুল কয়েক মুহূর্ত দ্বিধা করলো। মঞ্জুকে আগে কিছু বলার আগেই যদি মেয়েটিকে সে দেখতে পায়, তা হলে তার প্রতিক্রিয়া কী রকম হবে?

সে সেফুর দিকে চোখের ইঙ্গিত করে বললো, ওনারে নিচের বাথরুমটা দেখায়ে দে।

ওপরে মঞ্জুর গলা শোনা গেল। তবু ওপরে যেতে বাবুল সময় নিচ্ছে, সে কি মঞ্জুর সঙ্গে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে? মঞ্জুর মতন সরল আর নরম স্বভাবের মেয়ে, কিছুদিন আগে পর্যন্তও যে কক্ষনো গলা চড়িয়ে কথা বলতো না, তাকেও ভয়? ইদানীং মঞ্জুর সঙ্গে প্রায়ই খিটিমিটি বাঁধছে, সেইজন্যই বাড়িতে বেশিক্ষণ বাবুলের মন টেকে না।

হঠাৎ বাড়ির সামনে একটা গাড়ি থামলো, তার থেকে নেমে এলো আলতাফ। পুরোদস্তুর সুট পরা, সদ্যস্নাত মাথার চুল, মুখে চোখে ব্যস্ত ভাব। আলতাফ শুধু যে আজ সকাল সকাল জেগে উঠেছে তাইই নয়, সে কোথাও যাবার জন্য তৈরি। গট গট করে ভেতরে এসে সে বাবুলের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই ওপরে উঠে যাচ্ছিল, বাবুল তাকে ডেকে বললো, ভাইয়া, তোমার সাথে একটা কথা আছে!

আলতাফ থেমে গিয়ে মুখ ফেরালো। ছোট ভাইটিকে সে এক সময় খুবই ভালোবাসতো। এখন তার প্রতি খানিকটা বিরক্তি মেশানো অবজ্ঞা জমেছে। তার ধারণা হয়েছে, বাবুল নিতান্তই কুঁড়ে এবং অপদার্থ। কোনো কাজে তার সাহায্য পাওয়া যায় না। দিনকাল পত্রিকার কাজে তাকে জুড়ে দেবার অনেক চেষ্টা করা হলো, সে কিছুতেই মন লাগালো না, দুএকটা লেখা দিয়ে এখন একেবারে সরে পড়েছে। হোটেল ম্যানেজমেন্টের ভারও দিতে চাওয়া হয়েছিল তাকে, সে নেয়নি। নিজের ভবিষ্যৎ বা দেশের ভবিষ্যৎ কোনো কিছু সম্পর্কেই যেন বাবুলের মাথাব্যথা নেই।

বাবুল আলতাফকে একপাশে নিয়ে গিয়ে সংক্ষেপে সিরাজুলদের বৃত্তান্তটি জানালো। সিদ্ধান্ত নিতে একটুও দেরি হলো না আলতাফের। এই পরিবারের দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে সে বললো, অরা থাকুক এখানে। একটা ঘর খালি কইরা দে। আমাকে আইজই করাচী যেতে হবে, এগারোটার ফ্লাইট, আমি ফিরে আসি, তারপর দেখা যাবে ওদের জন্য কোনো কাজকর্ম জোটানো যায় কিনা!

তারপর সে ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, কী নাম বললি? ইরফান আলী। ইনসেকটিসাইড, ফার্টিলাইজারের ব্যবসা করে? বেসিক ডেমোক্র্যাট?

সিরাজুল মাথা নেড়ে বললো, জী!

আলতাফ বললো, সে লোকটারে তো আমি চিনি। আমাদের হোটেলে এসে রেগুলার ওঠে। সে এমন অমানুষ নাকি?

বাবুল বললো, আমি নিজের চোখেই তার বাঁদরামির খানিকটা নমুনা দেখেছি।

আলতাফ বললো, আমি ফিরে আসি, তারপর আমাদের কাগজে ওরে টাইট দেবো। ইনভেস্টিগেটিং রিপোর্টিং করে ওর বাপের নাম ভুলাবো।

মনিরার চোখে চোখ রেখে আলতাফ আশ্বাস দিয়ে বললো, ভয় নাই, আমরা তো আছি। এখন আমার হাতে সময় নাই, পরে আলাপ করবো। কেমন?

বাবুল একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আলতাফ দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। আলতাফ ওপরে উঠে যেতেই সে একতলার পেছন দিকের একটা ভাঁড়ার ঘর খালি করতে লেগে গেল। প্রচুর ধুলো ও মাকড়সার জাল, শৌখিন স্বভাবের বাবুল, সেই ধুলোজাল মাখতে দ্বিধা করলো না। একটা কিছু কাজ সে করছে, এই অনুভূতি তার মন থেকে কিছুক্ষণ আগের বিরাগ ভাবটা মুছে দিতে লাগলো। এর আগে বাড়ির কোনো দেয়ালে নিজের হাতে একটা পেরেকও পোঁতেনি সে।

একটা পুরোনো আলমারির মাথায় নানান আকারের অনেকগুলি কাঁচ রাখা ছিল, কে কবে কোন্ উদ্দেশ্যে ওখানে ঐ কাঁচগুলি রেখেছে তা বাবুল জানে না। আলমারিটি ঠেলে ঘরের বার করে দিতে গিয়ে সেই কাঁচ কয়েকটা খসে পড়ে গেল, তাতে এমন ঝন্ ঝন্ শব্দ হলো যাতে গোটা বাড়ির বাসিন্দারা সচকিত হবেই।

সেই শব্দে বাবুলেরও চড়াৎ করে একটা কথা মনে পড়ে গেল। আলতাফের সম্মতি পেয়েই সে অতি উৎসাহে সিরাজুলদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু মঞ্জুকে এখনো কিছু জানায়নি। এটা স্পষ্টতই মঞ্জুর প্রতি অবহেলা।

হাত মুছতে মুছতে সে সিরাজুলকে বললো, তুমি একটু অপেক্ষা করো, আমি উপর থেকে আসছি।

বেরিয়েই সে দেখলো সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে আছে মঞ্জ। একটা কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি পরা। তার একটু পেছনে সুখু মিঞাকে কোলে নিয়ে আছে মনিরা। মঞ্জু জিজ্ঞেস করলো, কী ভাঙলো?

বাবুল বললো, এমন কিছু না, কয়েকটা পুরোনো কাঁচ। আর শোনো, ইসে মানে, এই এরা এসে পড়েছে, এরা কয়েকদিন এখানে থাকবে।

মঞ্জু বললো, মনিরার কাছে সব শোনলাম। জানো, ঐ সিরাজুলের নাকি এখনও বুকে খুব ব্যথা হয়, ভালো করে সারে নাই, ওরে খাজুরের ডাল দিয়ে পিটায়েছিল, একবার ডাক্তার আশরাফ সাহেবের কাছে দেখাবার বন্দোবস্ত করো।

বাবুল ভেতরে ভেতরে বিরাট এক স্বস্তি বোধ করলো। তাকে বিশেষ ব্যাখ্যা করতে হলো, আলতাফের মতনই মঞ্জুও এই নবাগতদের এক কথায় মেনে নিয়েছে। চাপা অশান্তি সে একেবারে সহ্য করতে পারে না।

মঞ্জু আবার বললো, মামুন মামারে বলে ঐ শয়তান লোকটারে শাস্তি দেওন যায় না?

বাবুল একটু হাসলো। মঞ্জুর চোখে তার মামুনমামা এক মহা শক্তিমান পুরুষ। আসলে মামুনভাই একটি মাঝারি গোছের দৈনিকের সম্পাদক, দুর্বল ও মিনমিনে স্বভাবের মানুষ, তার কতটুকু ক্ষমতা আছে? আলতাফও আস্ফালন করে গেল, কিন্তু ঐ কাগজে সরকার পক্ষের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি সম্পর্কে কী, ছাপা হলো বা না হলো, তাতে কিছুই যায় আসে না।

সে বললো, মামুনমামা এলে তেনাকে বলে দেখো!

সিরাজুল-মনিরাকে এ গৃহে প্রতিষ্ঠার ভার মঞ্জুর ওপর সঁপে দিয়ে এক সময় আড্ডা দিতে বেরিয়ে পড়লো বাবুল। তার মনটা বেশ ভালো আছে, মঞ্জুর কাছে সে কৃতজ্ঞ বোধ করছে। মঞ্জু তো সত্যিই খুব ভালো, তার ওপর রাগ করার কোনো মানে হয় না।

বাবুল নিজে সাংবাদিকতা না করলেও সে তার বন্ধু জহিরের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরতে যায় প্রায়ই। এখন সেটা তার নেশা হয়ে গেছে। মোটামোটা বই পড়ে, তত্ত্ব মুখস্ত করে, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে সে অর্থনীতি শিখেছে, এখন গ্রামের মানুষদের দেখে সে অনুভব করে যে পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিতদের তত্ত্বের ওপর নির্ভর করে স্বদেশের মানুষকে চেনা যায় না।

পল্টনদের বাসায় ঢোকার রাস্তায় কামালের সঙ্গে দেখা। যুদ্ধের মধ্যে সে লাহোরে আটকা পড়ে গিয়েছিল, একটা ফিলমের শুটিংয়ের জন্য গিয়েছিল সে, তার জন্য দুশ্চিন্তা ছিল সকলের।

বাবুল জিজ্ঞেস করলো, তুই তাহলে বেঁচে আছিস?

কামালের মুখে এখন চাপ দাড়ি, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। বেশ মোটা হয়েছে, তাকে দেখলে এখন কল্পনা করাই শক্ত যে ছাত্রজীবনে সে অগ্নিবর্ষী বক্তৃতা দিয়ে অনেক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে।

কামাল বললো, শহীদ হবার চান্সটা মিস করলাম। তোরা বোধহয় শুনেছিলি যে লাহোর শহর ইন্ডিয়ার হাতে চলে গেছিলো? সে সব কিছু না। লড়াই হয়েছে ইছোগিল খালের আশেপাশে, ওরা অনেকখানি এগিয়ে এসেছিল ঠিকই কিন্তু লাহোর শহরে একটাও গোলা পড়ে নাই।

বাবুল বললো, শহর দখল করলে শহরের লোকদের খাওয়াতে হতো।

কামাল বললো, অনেকে অবশ্য ভয়ে পালিয়েছিল…শোন বাবুল, ইসে, তুই আর একটা খবর শুনেছিস?

কী?

নীলা ভাবীর বোন দিলারা, তার হ্যাঁজব্যান্ড তো আর্মিতে ছিল, সেই ইউসুফ মারা গেছে, যুদ্ধের একেবারে শেষ দিনে, যুদ্ধ বিরতির মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে।

বাবুল গম্ভীর ভাবে বললো, হ্যাঁ, এ খবর শুনেছি। এই যুদ্ধে আমাদের চেনাশুনাদের মধ্যে ইউসুফই একমাত্র ভিকটিম। গ্রেট ট্রাজেডি, মাত্র আড়াই বছর আগে বিয়ে হয়েছিল, ওরকম ইউথফুল এনারজেটিক ছেলে…।

–দিলারা লাহোরে গিয়েছিল বডি আইডেন্টিফাই করতে।

–জানি। দিলারা কিছুতেই বিশ্বাস করে নাই। তাকে কিছুতেই বুঝানো যায় নাই। জোর করে সে লাহোরে চলে গেল পল্টনের ছোট ভাইয়ের সাথে।

–সে সময় আমি ছিলাম লাহোরে। আমার সাথে ওদের দেখা হয়েছিল কিন্তু সে বডি একেবারে মিউটিলেটেড, আইডেন্টিফাই করার কোনো উপায় নাই, ঐ দিককার একজন লেফটেনান্ট কর্নেল আমাদের খুব সাহায্য করেছিল, সমস্ত প্রমাণ পত্তর দেখিয়েছিল, দিলারা অবশ্য তাতে কনভিন্সড হয় নাই, তার কান্না থামানোর জন্য সেই লেফটেনান্ট কর্নেল নিজের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেল সকলকে। আমাকেও নিয়ে গেল, আমাকে তার বেশ পছন্দ হয়েছিল, আমাকে প্রথম দেখেই সে কী বলেছিল জানিস? “আপ বাঙালী হোনেসে কেয়া হ্যায়, আপকো তো সাচ্চা মুসলমান মালুম হোতা হ্যায়।”

দাড়ি চুমড়ে হেসে ফেললো কামাল। বাবুল হাসতে পারে না, দিলারার মুখোনি মনে পড়ে তার। কলকাতার মেয়ে, তার মুখে সপ্রতিভ ছাপ, অনেক বইপত্র পড়েছে সে, তার দুলাভাই-এর বন্ধুদের সঙ্গে কখনো কখনো তর্ক করতেও সে দ্বিধা করেনি। এই মেয়েটির একটি সুন্দর জীবন প্রাপ্য ছিল।

পল্টনের বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কামাল বললো, ভিতরে গিয়ে তুই আরও দু একটা নতুন খবর শুনবি। তার আগে তোকে ব্যাক গ্রাউন্ডটা বলে দিই। ওয়েস্ট পাকিস্তানের সেই সহৃদয় লেফটেনান্ট কর্নেলের নাম মীর মহম্মদ খান। বেশ সরল, ধর্মপ্রাণ, জেদী ধরনের মানুষ, বাঙালীদের সম্পর্কে তার মনে বেশ খানিকটা অবিশ্বাসের ভাব আছে, আবার কিছুটা অনুকম্পাও আছে। না হলে দিলারার অমন কান্নাকাটি শুনে তার এত দয়া হবে কেন? নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে তার আব্বা-আম্মার সাথে পরিচয় করায়ে দিয়েছে, আমাদের তিনদিন ধরে খাইয়েছে। আর জানিস তো, মায়েরা সব দেশেই এক, ঐ কর্নেল সাহেবের মা দিলারাকে নিজের কন্যার মতন স্নেহ করেছেন। পরিবারটি সত্যিই ভালো। আমি ওদের খুশি করবার জন্য দৈনিক সব নামাজ পড়েছি, উর্দু সিনেমা দেখে যতখানি উর্দু শিখেছি, তার সবটা ফলিয়ে কথা বার্তা বলেছি উর্দুতে, আমার বাবা যে একজন মৌলবী তাও জানিয়েছি।

বাবুল ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, এসব কিসের ব্যাকগ্রাউন্ড?

কামাল মৃদু হেসে বললো, দিলারাকে ওরা এত যত্ন করেছে, তার কান্না থামিয়ে সুস্থ করেছে, এইজন্য অনেক ধন্যবাদ ওদের প্রাপ্য। ঠিক কিনা? কিন্তু তারপর…

পল্টন দরজা খুলে দিল এই সময়। তার মুখ থমথমে। কোঁচকানো ভুরুটা ওদের দেখে খানিকটা সোজা করে সে বললো, আয়।

বাবুল কিছুই বুঝতে পারলো না। পল্টন রঙ্গরস প্রিয় মানুষ, বন্ধুদের দেখে সে হাসলো না পর্যন্ত। বাড়িতে আবার কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে?

অন্দরমহলে একটা চাপা কান্নার আওয়াজ! দুতিনজন মহিলা যেন একসঙ্গে কাকে কিছু বোঝাবার চেষ্টা করছেন।

বাবুল জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে?

পল্টন কামালের দিকে তাকিয়ে বললো, এই কামালটাই তো যত নষ্টের গোড়া।

কামাল চোখ বড় বড় করে বললো, আরে, আমি কী করলাম?

পল্টন ধমক দিয়ে বললো, তুই কেন দিলারাকে সাথে নিয়ে এলি না? লাহোরে রেখে এলি কেন?

–বাঃ, আমি কী করতে পারতাম। মীর মহম্মদের মা দিলারাকে আরও কয়েকটা দিন রেখে দেবার জন্য পিড়াপিড়ি করতে লাগলেন, দিলারাও দেখলাম অরাজি না, আমি কি তারে জোর করে নিয়া আসতে পারি? সে তো ওখানে ভালোই ছিল!

পল্টন নিচু গলায় বললো, সেই মীর মহম্মদ এখন ঢাকায়। গতকাল সে আমাদের বাসায় এসেছিল, আজ সকালেও এসেছিল।

কামাল বললো, সে রোজই আসবে।

পল্টন বললো, সে কী প্রস্তাব দিয়েছে জানিস? সে দিলারাকে শাদী করতে চায়। লোকটার প্রথম বউ মরেছে দুবছর আগে।

কামাল বললো, আমি জানতাম এ রকম হবেই। আমরা সিনেমার গল্প লিখি তো, তখন দেখেই বুঝেছিলাম।

পল্টন আবার তাকে ধমক দিয়ে বললো, তুই চুপ কর। এখন কী করা যায়, বল তো বাবুল?

–দিলারার কী মত? এত তাড়াতাড়ি ইউসুফের সাথে তার সুন্দর সম্পর্ক ছিল।

–ততটা সুন্দর ছিল না বোধ হয়। বাইরের থেকে বোঝা যায় না। ইউসুফের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সে অত কান্নাকাটি করেছিল, কিন্তু এখন মীর মহম্মদের প্রস্তাবে সে অরাজি নয়…মেয়েমানুষের চরিত্র বোঝা দায়…আসলে মীর মহম্মদের মাকে নাকি তার খুব পছন্দ হয়েছে।

তিন বন্ধু কথা বলছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে, এক সময় দিলারা ছুটে এলো ভেতর থেকে, তার চুল এলোমেলো, তার পোশাক আলুথালু দুই গালে কান্নার রেখা, সে বাবুলদের দেখলো না, সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেল ওপরে।

বাবুল ধীর স্বরে বললো, ও যদি রাজি থাকে, তাহলে আর আপত্তির কী আছে? বিধবা হয়ে শুধু শুধু কষ্ট, পাওয়া…ওর যখন কোনো বাচ্চা কাচ্চা নাই…।

পল্টন বললো, নীলার একেবারে পছন্দ নয়। আর কিছুদিন বাদে এখানকারই কোনো ভালো ছেলের সঙ্গে দিলারার আবার বিয়ে দেওয়া যায়। আমাদের সংসারে একটা পশ্চিম পাস্তিানী এসে ঢুকবে?।

কামাল বাবুলের বুকে হাত রেখে বললো, সেটা যেমনভাবেই তোক আটকাতেই হবে। ভারতের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়েছে, এবারে আমাদের আসল লড়াই হবে পশ্চিম পাকিস্তানীদের সঙ্গে। লাহোরে থাকতে থাকতেই আমি সেটা বুঝে গেছি। আমাদের মেয়েদের ওরা পছন্দ করতে পারে বটে, বাঙালী পুরুষদের ওরা মানুষ বলেই গণ্য করে না।

পল্টন বললো, তুই একটু চেষ্টা করে দ্যাখ। তুই বুঝিয়ে বললে…

বাবুল বললল, আমি কী করতে পারি? আমার কথা শুনবে কেন?

পল্টন বললো, তোর কথা শুনবে। তোর ওপর দিলারার দুর্বলতা ছিল, তোকে এখনও খুব পছন্দ করে, তুই যদি একটু ভালো করে বলিস, অন্তত একটু প্রেমের ভান করিস…

মুখটা কুঁকড়ে গেল বাবুলের। মাটির দিকে তাকিয়ে সে ক্লিষ্ট গলায় বললো, ওভাবে বলিস না, ওভাবে বলিস না…

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ একটা ঘোড়ার গাড়ি ডাকা হয়েছে
২. ১.০২ বৈদ্যনাথধাম স্টেশনে দাঁড়িয়ে
৩. ১.০৩ ভবদেব মজুমদারের আমলে
৪. ১.০৪ বাড়ির দারোয়ানের সঙ্গে তুতুলকে
৫. ১.০৫ দেশ বিভাগের পর দুটি নতুন দেশ
৬. ১.০৬ ছাত্র বয়েসে প্রতাপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু
৭. ১.০৭ মেঘনা নদী পার হয়ে দায়ুদকান্দি
৮. ১.০৮ মালখানগরে প্রতাপদের বাড়ির সামনে
৯. ১.০৯ সত্যেন ভাদুড়ীর গায়ের পাঞ্জাবী
১০. ১.১০ দুটো সাইকেল ভাড়া করা হয়েছে
১১. ১.১২ জেল থেকে ফেরার পর
১২. ১.১১ দুপুরবেলা নানা গল্পের মধ্যে
১৩. ১.১৩ বাগানে নতুন গোলাপ চারা
১৪. ১.১৪ ওপরতলায় নিজেদের অংশটায়
১৫. ১.১৫ ঐ ছেলেটা মুসলমান বুঝি
১৬. ১.১৬ বন্যা হবার দরকার হয় না
১৭. ১.১৮ বিমানবিহারীদের আদি বাড়ি
১৮. ১.১৭ কলকাতার তালতলা অঞ্চল
১৯. ১.১৯ পিকলু আর বাবলু এক স্কুলে পড়তো
২০. ১.২০ তুতুল বাগবাজারের একটি স্কুলে
২১. ১.৪৩ পাড়ার কয়েকটি ছেলে ধরাধরি করে
২২. ১.৪৪ আর্মানিটোলার পিকচার প্যালেস
২৩. ১.৪৫ পাড়াটির নাম বাগবাজার
২৪. ১.৪৬ একটা নড়বড়ে কাঠের টেবিল
২৫. ১.৪৭ আগের দিনই খবর দিয়ে
২৬. ১.৪৮ নতুন বাড়ি ঠিক হলো কালীঘাটে
২৭. ১.২১ সরকারি কর্মচারির চাকরি
২৮. ১.২২ বঙ্কুবিহারীর স্ত্রী এলিজাবেথ
২৯. ১.২৩ একটা মোটরবাইক চেপে হাজির
৩০. ১.২৪ হারীত মণ্ডলকে নিয়ে ত্রিদিব
৩১. ১.২৫ বাড়িতে অসময়ে কোনো অতিথি এসে
৩২. ১.২৬ প্রতাপ সিগারেট খেতে খেতে
৩৩. ১.২৭ ভোর রাতে ঘুম ভেঙে গেল প্রতাপের
৩৪. ১.২৮ কলকাতার ভদ্রলোকদের বাড়িতে ঝি-চাকর
৩৫. ১.২৯ প্রীতিলতার হাঁপানির টান বেড়েছে
৩৬. ১.৩০ ট্রেনে আসবার সময়ে
৩৭. ১.৩১ স্বাধীনতার কয়েক বছর পর
৩৮. ১.৩২ ঢাকার সেগুনবাগানে মামুনের এক দিদির বাড়ি
৩৯. ১.৩৩ বেশ তাড়াতাড়িই শীত পড়ে গেছে
৪০. ১.৩৪ দেওঘরে প্রতাপকে থেকে যেতে হলো
৪১. ১.৩৫ মোহনবাগান লেনে চন্দ্রাদের বাড়ি
৪২. ১.৩৬ মোটর বাইকের গর্জনে পাড়া কাঁপিয়ে
৪৩. ১.৩৭ অল ওয়েভ রেডিও
৪৪. ১.৩৮ কানু যে ব্যাঙ্কে কাজ করে
৪৫. ১.৩৯ কলেজের গেট দিয়ে বেরিয়ে
৪৬. ১.৪০ দেওঘরে এসে উপস্থিত হলেন সত্যেন
৪৭. ১.৪১ পাতিপুকুরের বাড়ির ভিত তৈরির কাজ
৪৮. ১.৪২ কানুর বাড়ির ছাদের আলসেতে
৪৯. ২.০২ শেষ পরীক্ষার শেষ ঘণ্টা
৫০. ২.০৩ দুপুরবেলা প্রবল ঝড় হয়ে গেছে
৫১. ২.০৪ বাড়ির সামনে যে গেট ছিল
৫২. ২.০৬ খবরের কাগজ পড়ে যাচ্ছেন প্রতাপ
৫৩. ২.০৫ বাবুল বুঝতে পারেনি
৫৪. ২.০৭ পাতিপুকুর স্টপে বাস থেকে নেমে
৫৫. ২.০৮ গাড়ি ভাড়া করেছে আলতাফ
৫৬. ২.০৯ প্রেসিডেন্সি কলেজের গেট দিয়ে
৫৭. ২.১০ কেমিস্ট্রিতে ফার্স্ট ক্লাস
৫৮. ২.১১ রেল লাইনের ধারে
৫৯. ২.১২ টেলিফোনটা নামিয়ে রেখে
৬০. ২.১৩ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে
৬১. ২.১৪ কয়েকদিন এড়িয়ে এড়িয়ে চলার পর
৬২. ২.১৫ মুড়ি ও তেলেভাজা খাওয়া
৬৩. ২.১৭ টেবিলের ওপর জোর একটা চাপড় মেরে
৬৪. ২.১৬ অসুখ-বিসুখের ব্যাপার
৬৫. ২.১৮ কফি হাউসে ঢোকার মুখে
৬৬. ২.১৯ তিন তিনটে সাধারণ নির্বাচন
৬৭. ২.২০ ভিত নেই তবু বাসস্থান গড়ে উঠেছে
৬৮. ২.২১ বৃষ্টির ছাঁট আসছে খুব
৬৯. ২.২২ আদালতে প্রতাপ
৭০. ২.২৩ সীট রিজার্ভেশানের সুযোগ
৭১. ২.২৪ লোদি গার্ডেনসে ত্রিদিব আর সুলেখা
৭২. ২.২৫ পত্রিকার নাম নিয়ে আলাপ-আলোচনা
৭৩. ২.২৬ নোয়াখালিতে বসিরের বাড়ি
৭৪. ২.২৭ থার্ড ইয়ার থেকে ফোর্থ ইয়ারে
৭৫. ২.২৮ কবি জসিমউদ্দিনের বাড়িতে
৭৬. ২.২৯ অতীনদের স্টাডি সার্কল
৭৭. ২.৩০ আজকালকার যুদ্ধে
৭৮. ২.৩১ রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
৭৯. ২.৩২ কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস
৮০. ২.৩৩ টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে
৮১. ২.৩৫ নোয়াখালিতে সিরাজুল
৮২. ২.৩৪ মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাড়ি
৮৩. ২.৩৬ স্টাডি সার্কল থেকে
৮৪. ২.৩৭ তিনতলার এই ঘরখানি
৮৫. ২.৩৮ আলপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
৮৬. ২.৩৯ কয়েকদিনের জ্বরেই একেবারে কাবু
৮৭. ২.৪০ একটা ভিড়ের বাসে চেপে
৮৮. ২.৪১ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ এলাকা ছাড়িয়ে
৮৯. ২.৪২ মামুনের মেজাজ খারাপ
৯০. ২.৪৩ তুতুল একা একা
৯১. ২.৪৪ ঝোঁকের মাথায় প্রতাপ
৯২. ২.৪৫ সন্ধ্যারতির সময় ভক্ত ও দর্শক
৯৩. ২.৪৬ দোতলা থেকে কল্যাণী ডাকছেন
৯৪. ২.৪৭ অ্যালুমিনিয়ামের বাটি
৯৫. ২.৪৮ বড় তেঁতুল গাছ
৯৬. ২.৪৯ স্টাডি সার্কেল শেষ হয়ে যাওয়ার পর
৯৭. ২.৫০ জানলায় পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে
৯৮. ২.৫২ আকাশে জোরে বিদ্যুৎ চমকালে
৯৯. ২.৫১ চায়ের কাপ তুলে একটা চুমুক
১০০. ২.৫৩ দিনের পর দিন কেটে যায়
১০১. ২.৫৪ করোনেশান ব্রীজের কাছে
১০২. ২.৫৫ তিনবার সিটি দিয়ে থেমে গেল ট্রেনটা
১০৩. ২.৫৬ সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে
১০৪. ২.৫৭ তুতুলের খুব অস্বস্তি হয়
১০৫. ২.৫৮ বছরের প্রথম দিনটি
১০৬. ২.৫৯ পুরোনো গাড়িটার বদলে
১০৭. ২.৬০ অকস্মাৎ মামুনকে গ্রেফতার
১০৮. ২.৬২ সারারাত ঘুমোতে পারেনি তুতুল
১০৯. ২.৬১ লণ্ডন শহরে পা দিয়ে
১১০. ২.৬৩ ট্রাম ধর্মঘট মিটলো
১১১. ২.৬৪ ট্রেন সাড়ে চার ঘণ্টা লেট
১১২. ২.৬৫ শহরের সমস্ত লোক
১১৩. ২.৬৬ সিঁড়ির মুখে ল্যান্ডলেডি
১১৪. ২.৬৭ তুতুল যে সার্জারিতে কাজ করে
১১৫. ২.৬৮ পমপম একটা রেডিও রেখে গেছে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন