২.০৩ দুপুরবেলা প্রবল ঝড় হয়ে গেছে

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

দুপুরবেলা প্রবল ঝড় হয়ে গেছে, তারপর বাতাসের বেগ কমলে শুরু হয়েছে বৃষ্টি অশ্রান্ত, একটানা। আস্তে আস্তে জল জমছে রাস্তায়। অলি জানলায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে অনেকক্ষণ ধরে। খুব জোর ছাঁট, ভেতরে জল আসছে। ভিজে যাচ্ছে অলির শাড়ি, তবু তার ভূক্ষেপ নেই। বৃষ্টির সময় ঘরের সব জানলা বন্ধ করে রাখতে তার ভালো লাগে না। এমনকি কাঁচের পাল্লার মধ্য দিয়েও বাইরের বৃষ্টি দেখলে সাধ মেটে না। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ, গায়ে তার স্পর্শ পাওয়া চাই।

অলির ঠোঁট নড়ছে না, গুনগুন স্বরও শোনা যাচ্ছে না। শুধু তার মাথাটা দুলছে। অর্থাৎ তার শরীরের মধ্যে ঘুরছে একটা গান। গত দু’ বছরে হঠাৎ লম্বা হয়ে উঠেছে সে। আগে শাড়ি পরতেই চাইতো না। এখন মায়ের বকুনিতে শাড়ি পরতেই হয়। আজ বিকেলে সে চুল বাঁধেনি, তার নীলরঙের শাড়ির আঁচলটা কাঁধের কাছে মাঝে মাঝে উড়ছে, যেন সেটা জীবন্ত।

রাস্তায় মানুষজন খুবই কম, যারা বাধ্য হয়ে বেরিয়েছে, তারা ছাতা চেপে ধরে গোড়ালি-ডোবা জলে পা ফেলছে শালিকের মতন। মোড়ের মাথায় একটা ষাঁড় অনেকক্ষণ থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ভিজছে। সাইকেল চেপে গায়ে বর্ষাতি জড়ানো একজন মানুষ মোড় দিয়ে বেঁকে আসতে লাগলো এই বাড়ির দিকে অলির মাথার দুলুনি বন্ধ হয়ে গেল। মুখ দেখা যাচ্ছে না, তবু অলি চিনতে পেরেছে।

সাইকেলটা তাদের গেটের সামনে থামতেই অলি সরে এলো জানলার কাছ থেকে।

অলি বুলির গানের মাস্টারমশাই গগন ঘোষ ঝড়বৃষ্টি-ভূমিকম্প হলেও একদিনও কামাই করেন না। গেটের ভেতরে ঢুকে সাইকেলে তালা লাগিয়ে তিনি বর্ষাতিটা গা থেকে খুলে ভাঁজ করলেন। তারপর উঠে এলেন দোতলায়। লাইব্রেরি ঘরের পাশের ঘরটি এখন মেয়েদের পড়বার ঘর। সিঁড়িতে বিমানবিহারীর নিজস্ব ভৃত্য জগদীশ তাঁকে দেখতে পেয়ে সে-ঘরের দরজা খুলে দিল। তিনতলার দিকে মুখ করে চেঁচিয়ে বললো, অ দিদিমুনি, তোমাদের ম্যাস্টারবাবু এয়েচেন।

লাইব্রেরি ঘরে বিমানবিহারী একটি আইনের বই-এর পাণ্ডুলিপি সংশোধন করছিলেন জগদীশের গলা শুনে তিনি ভুরু কোঁচকালেন। কতবার তিনি জগদীশকে বলেছেন, এভাবে চ্যাঁচামেচি না করে ওপরে গিয়ে খবর দিতে, তা ও কিছুতে মনে রাখবে না। জগদীশ আর একবার গলা ছাড়তেই তিনি ধমক দিলেন, অ্যাই জগদীশ!

অলির ঘরের দরজা বন্ধ। সে ঠোঁট কামড়ে ধরে মনের জোর আনতে চাইছে। বাইরে থেকে জগদীশ ডাকতেই সে বলে উঠলো, আজ আমি শিখবো না। আমার শরীর ভালো নেই, তুই মাস্টারমশাইকে বলে দে!

বলে ফেলেই সে অনেকটা স্বচ্ছন্দ বোধ করলো। একবার যখন বলা হয়ে গেছে, তখন এটাকেই আঁকড়ে থাকতে হবে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই সে একথা ভাবছিল, বাবার ভয়ে বলতে পারেনি।

জগদীশ তবু দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললো, নেকাপড়ার মাস্টার নয় গো, গানের ম্যাস্টার এয়েচে।

–হ্যাঁ বুঝেছি। তুই গিয়ে বল, আজ আমি যাবো না।

–তা হলে ছোটদিদিমুনি?

–মায়ের ঘরে গিয়ে দ্যাখ! জগদীশ চলে গেলেও অলি জানে, এবার তার মা আসবেন। আজ অলির মন ভালো নেই! কারুর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। এমনকি মায়ের সঙ্গেও না।

দরজার খিলটা খুলে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

এই ঘরটা তার নিজস্ব। এই ঘরটা তার বড় প্রিয়। কিছুদিন আগেও তার ছোট বোন বুলি এই ঘরে তার সঙ্গে শুতো, এখন বুলিরও আলাদা ঘর হয়েছে। পড়ার টেবিলটা ঘরের এক কোণে। আগে বারান্দার দিকে জানলার পাশে ছিল। কিন্তু তাতে যখন তখন হাওয়ায় বই-পত্র উড়ে যায়। এঘরে জামাকাপড় রাখা হয় না। সেসব মায়ের ঘরে। এ-ঘরে একটা আলনাও নেই। সব কটা দেওয়ালে অনেক রকম ছবি, সবই প্রাকৃতিক দৃশ্য। বিলতি ক্যালেণ্ডারের পাতা থেকে কেটে নিয়ে সেলো টেপ দিয়ে আঁটা। নতুন একটা ভালো ছবি পেলেই অলি পুরোনো ছবি বদলে দেয়।

একটু পরেই বুলি এসে বললো, এই দিদি, গানের স্যার এসেছেন, তুই যাবি না?

বুলি এখনো লম্বা হবার বয়েসটায় পৌঁছোয়নি। এখনো তার চেহারাটা ফর্সা, গোলগাল পুতুলের মতন। মাথার চুল কোঁকড়া।

অলি মুখ তুলে বললো, না। আমি গান শিখবো না। আর কোনোদিন গান শিখবো না। বুলি অনেকখানি চোখ মেলে বললো, আর গান শিখবিই না! কেন? এতক্ষণ মনে পড়েনি। এইমাত্র অলির একটি কথা মনে এসে গেল। চমৎকার যুক্তি। এর পর আর বাবা-মাও আপত্তি করতে পারবেন না।

–আমার গান হবে না। আমি সেতার শিখবো।

–এই মাস্টার মশাই কি সেতার জানেন?

–অন্য মাস্টার মশাইয়ের কাছে শিখবো।

বুলি একটু চিন্তার মধ্যে পড়ে গেল। দিদি কি তার চেয়ে বেশি বেশি কিছু পেয়ে যাচ্ছে? গান ভালো না সেতার ভালো? দিদি যখন চাইছে, তখন সেতারই নিশ্চয়ই ভালো। সুতরাং সে ঘোষণা করলো, আমিও সেতার শিখবো!

–তুই তা হলে বাবাকে বল সে কথা।

–এই মাস্টার মশাই-এর কী হবে?

–জগদীশকে দিয়ে চা-বিস্কুট পাঠিয়ে দে!

একটা কিছু নতুনত্ব হবে এই ভেবে বুলি দৌড়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। অলির আবার ইচ্ছে হলো, উঠে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিতে। সে এখন শুধু বৃষ্টির শব্দ শুনবে।

কিন্তু মনে মনে সে জানে, এত সহজে গগন ঘোষকে বিদায় করা যাবে না। এরকম দুর্যোগের মধ্যেও তিনি এসেছেন। শুধু এই কারণেই তিনি বিমানবিহারীর কাছ থেকে সহানুভূতি আদায় করে নেবেন।

গানের মাস্টারটিকে অলির পছন্দ হয়নি। কেন যে তার অপছন্দ তার কোনো কারণ সে নিজেকেই বোঝাতে পারে না। কিছুদিন আগে একজন প্রাইভেট টিউটর অলিকে ইংরিজি পড়াতেন, তিনি নস্যি নিতেন। তার আঙুলে সব সময় নস্যি লেগে থাকতো, নস্যির গন্ধ নাকে এলেই অলির গা গুলিয়ে উঠতো। গগন ঘোষ নস্যি নেন না। গগন ঘোষের চেহারাও খারাপ নয়। গরমকালেও তিনি সিল্কের জামা পরেন। গান শেখান, খুব মন দিয়ে, অলি বা বুলি বারবার ভুল করলেও তিনি রাগ করেন না। হারমোনিয়াম বাজান খুব ভালো। বাবার অফিসের কভার ডিজাইনার সুকুমারবাবুর মতন গগন ঘোষ কোনোদিন অলির কাঁধ ধরে স্নেহ দেখাবার ছলে বুকের কাছে টেনে আনার চেষ্টা করেননি। সেরকম কোনো দোষই নেই, তবু অলির কিছুতেই ইচ্ছে করে না এই গানের স্যারের কাছে গান শিখতে। এর সামনে বসে থাকতেই তার ভালো লাগে না। তবে কি গগন ঘোষের চোখের দৃষ্টিতে কোনো দোষ আছে?

অলির এরকম হয়। এক একজন মানুষকে সে হঠাৎ অপছন্দ করতে শুরু করে। কোনো যুক্তি সে দেখাতে পারবে না। স্রেফ তার শরীরের মধ্যে একটা অস্বস্তি হতে শুরু করে।

বৃষ্টির শব্দ যেন সেতারের ঝালার বাজনা। এখন চুপ করে শুয়ে শুয়ে যদি সেই শব্দ শোনা যেত!

একটু বাদেই বুলি ফিরে এসে বললো, দিদি, ওঠ, তোকে বাবা ডাকছে নিচে।

বাবাকে মেয়েরা ঠিক ভয় পায় না। বিমানবিহারী সন্তানদের উগ্রভাবে কখনো বকেন না। বাইরের লোকদের কাছে রাসভারি হলেও বিমানবিহারী বাড়িতে পারিবারিক গল্পের সময়, কিংবা খাওয়ার টেবিলে অনেক রকম ঠাট্টা ইয়ার্কি করেন। বাবার কাছে মেয়েরা সরাসরি আব্দার জানাতেও পারে।

কিন্তু বাবা ডেকে পাঠালে না-যাওয়া চলে না। অলির’ যে এখন কিছুতেই যেতে ইচ্ছে করছে না? এখন দোতলায় নামতে ইচ্ছে করছে না। গগন ঘোষের সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না? কেন সে গানের বদলে সেতার শিখতে চায় সে কথা বাবাকে বোঝাতেও ইচ্ছে করছে না।

তার এই অনিচ্ছেগুলোর কেউ মূল্য দেবে না? এখন অলি নিচে গিয়ে ঐ সব কাজগুলো করলে সারা সন্ধে তার মন খারাপ থাকবে।

অলি উঠে দাঁড়িয়ে শাড়িটা গুছিয়ে নিল গায়ে। চুলে চিরুনি বুলিয়ে নিয়ে বললো, চল্। যেন সে একটা খুব নোংরা জল ভরা পুকুরে নামতে যাচ্ছে এইভাবে অলি নামতে লাগলো সিঁড়ি দিয়ে।

বাবা কী বলবেন তা অলি আগে থেকেই আন্দাজ করতে পারছে। বাবা বলবেন, আজ যখন মাস্টারমশাই এসে পড়েছেন, আজ তোরা গান শেখ, এর পরে আমি ওঁর সঙ্গে সেতার বিষয়ে আলোচনা করবো।

পাশের ঘরে গগন ঘোষ হারমোনিয়াম খুলে প্যাঁ পো শুরু করে দিয়েছেন। অলি প্রথমে গেল লাইব্রেরি ঘরে। বাবার কাছে।

বিমানবিহারী মুখ তুলে অলিকে দেখলেন, এক লহমায় তিনি বুঝে গেলেন মেয়ের আজ মেজাজটি ঠিক নেই। তিনি হাল্কা গলায় জিজ্ঞেস করলেন, তুই নাকি গানের বদলে সেতার শিখবি বলেছিস?

অলি দৃঢ়ভাবে বললো, হ্যাঁ। গান আমার হবে না।

–বেশ তো। সেতারই শুরু কর তা হলে। শোন, তুই এখন কোনো কাজ করছিস?

–না।

–তুই আমার একটা কাজ করে দিতে পারবি? এই ম্যানসক্রিপটা বসে বসে পড়। অনেক বানান ভুল আছে। দ্যাখ সেগুলো ঠিক করতে পারিস কি না! আমার আজ কাজ করতে ভালো লাগছে না। আমি গগনবাবুর কাছে একটা গান তুলে নিই বরং।

অলি প্রথমে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না। বাবা গান শিখবে? বাবাকে সে আগে কখনো গুনগুন করতে শুনেছে বটে, কিন্তু মাস্টারমশাইয়ের কাছে গিয়ে বাবা গান তুলবে? এই বৃষ্টি বাদলার মধ্যে গগন ঘোষ এসেছেন তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া ভালো দেখায় না, শুধু এই জন্য?

বিমানবিহারী উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, তুই আমার জায়গাটায় বোস। আস্তে আস্তে তোকেও তো কাজ শিখতে হবে। যে বানানটা সন্দেহ হবে, ডিকশনারি দেখে নিবি!

সবেমাত্র আই-এ পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে। অলি সাতষট্টি পারসেন্ট নম্বর পেয়েছে। ইংরিজিতে সে খুবই ভালো। পাণ্ডুলিপির বানান সংশোধন করার যোগ্যতা সে অর্জন করেছে।

গগন ঘোষের সামনে যাওয়ার চেয়ে এই কাজটা তার ঢের বেশি পছন্দ হলো। কিন্তু বাবা গান শিখতে বসবেন ভেবেই হেসে ফেললো সে।

বিমানবিহারীও মুচকি হেসে বললেন, দ্যাখ না, এরপর তোর মাকে কী রকম চমকে দেবো।

বিমানবিহারী পাশের ঘরে চলে গেলেন, একটু পরে অলি সত্যিই শুনতে পেল গগন ঘোষের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বাবা গাইছেন, জগতে আনন্দ যজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ!

অলি পাণ্ডুলিপি পাঠে মন দিল। তার মন-খারাপ ভাবটা যেন একটা কালো বাদুড়ের মতন বুকের মধ্যে ঘাপটি মেরে ছিল। হঠাৎ উড়ে গেল ঝটপটিয়ে।

বিমানবিহারীর টেবিলের ওপর একটা বেল আছে। জগদীশকে ডাকবার জন্য তিনি ঐ বেল বাজান। অলি যখন তার বাবার টেবিলে বসেছে, সে-ও ঐ বেল ব্যবহার করবে।

জগদীশ আসতেই অলি পাণ্ডুলিপি থেকে চোখ না সরিয়ে বললো, আমার জন্য এককাপ কফি নিয়ে আয়!

জগদীশ অবাক হয়ে বললো, কফি? বিকেল হয়েছে, এখন তো দুধ খাবে তুমি!

অলি ধমক দিয়ে বললো, না দুধ খাবো না। তোকে কফি আনতে বলছি না।

তখনই অলি ঠিক করলো, এখন থেকে সে আর কোনোদিনই বিকেলে দুধ খাবে না।

এ ঘরের সব জানলা বন্ধ। চতুর্দিকে বইয়ের আলমারি, তা ছাড়া মেঝেতেও এখানে সেখানে অনেক বই প করা আছে। বৃষ্টির ছাঁট এলে বই নষ্ট হয়ে যাবে। তবু অলির ইচ্ছে করলো একটা জানলা খুলতে। সে উঠে দাঁড়াতেই দরজার কাছ থেকে প্রশ্ন এলো, এই, কাকাবাবু কোথায়?

অলি ফিরে তাকিয়ে দেখলো, সর্বাঙ্গ জবজবে অবস্থায় ভিজে এসে দাঁড়িয়েছে অতীন। তার মুখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। গেঞ্জির মধ্যে হাত ঢুকিয়ে সে একটা খবরের কাগজে মোড়া বড় প্যাকেট বার করলো। কয়েক পরত ভিজে কাগজ ছাড়িয়ে দেখে নিল ভেতরের মোড়কটি শুকই রয়েছে।

শুধু ভিজে পায়ের ছাপ নয়, ঘরের মধ্যে একটা জলরেখা টেনে এগিয়ে এলো অতীন। অলি তাকে মৃদু ধমক দিয়ে বললো, এই, কী হচ্ছে। সব ভিজে যাবে না? যাও, বাথরুমে যাও। মাথা মুছে এসো।

এই ঘর-সংলগ্ন একটা ছোট বাথরুম আছে। অতীন হাতের প্যাকেটটা টেবিলের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেল সেখানে।

অলির মুখে পাতলা হাসি ছড়িয়ে পড়েছে। এরকম বৃষ্টিভেজা মানুষ দেখতে তার ভালো লাগে। যারা ছাতা কিংবা রেইন কোটও ব্যবহার করে না। গত বর্ষায় কৃষ্ণনগরে গিয়ে অলি এই রকম প্রাণ ভরে ভিজেছিল। তাদের কৃষ্ণনগরের বাড়ির পেছনে বাগান রয়েছে একটা। ছোট পুকুরও আছে। সেখানে যা খুশী করা যায়। কলকাতায় এই রকম বৃষ্টির মধ্যে সে রাস্তায় বেরুবার অনুমতি পাবে না। এমনকি ছাদে উঠে যে ভিজবে তারও উপায় নেই। তাদের বাড়ির পাশেই আর একটা উঁচু বাড়ি উঠেছে। সে বাড়ি থেকে তাদের ছাদটা একেবারে নগ্নভাবে দেখা যায়।

অতীন যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেখানকার জমা জলটুকুর দিকে সে তাকিয়ে রইলো। সে বাইরে যায়নি। বৃষ্টিই যেন সশরীরে চলে এসেছে ঘরের মধ্যে।

বাথরুমে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে অতীন তার জামাটাও খুলে নিঙরে নিল। তারপর জামাটা টাঙিয়ে দিল দরজার ছিটকানিতে। গেঞ্জিটা চলনসই অবস্থায় আছে। প্যান্টটা খোলবার তো কোনো উপায় নেই। সেই অবস্থায় বেরিয়ে এসে সে বললো, এই অলি, এক কাপ চা খাওয়াতে পারবি? পাশের ঘরে গাঁক গাঁক করে কে চ্যাঁচাচ্ছে রে?

অলি বললো, চুপ, চুপ!

–কেন, কী হয়েছে?

–ওরকম অসভ্যের মতন কথা বলল না। বাবা গান শিখছে।

অতীন অট্টহাস্য করে উঠলো। তারপর মাথার ওপর একটা আঙুল ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কাকাবাবু গান শিখছেন? হেড অফিসে গণ্ডগোল হয়েছে নাকি?

–চুপ করো বলছি না!

টেবিলের ওপর রাখা প্যাকেটটার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে অতীন বললো, বাবা ঐটা পাঠিয়েছে। কাকাবাবুর সঙ্গে একটু দরকার ছিলো, কতক্ষণ ঐ রকম চ্যাঁচামেচি চলবে?

অলি চেয়ারে মাথা হেলান দিয়ে বললো, কী দরকার আমাকে বলতে পারো। আমি এখন বাবার হয়ে অফিশিয়েট করছি।

অতীন একথা শুনে বিস্ময় বা অবজ্ঞা না দেখিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বললো, ঠিক আছে। সাতশো পঞ্চাশ টাকার একটা ভাউচার পেমেন্ট বাকি আছে। সেটা দিয়ে দে!

টাকার কথা শুনে অলি একটু ঘাবড়ে গেলেও হার মানলো না। গলার আওয়াজ এক রকম রেগে বললো, সে টাকা তো তোমাকে দেওয়া যাবে না। প্রতাপকাকার সই লাগবে। তাছাড়া তোমাকে টাকা দিলে তুমি হারিয়ে ফেলবে।

জগদীশ এই সময় কফি নিয়ে ঢুকতেই অলি বলল, ওটা বাবলুদাকে দে। আমার জন্যে আর এক কাপ কফি নিয়ে আয়।

জগদীশ ঝাঁঝালো আপত্তি জানিয়ে বললো, একসঙ্গে বলো না কেন? আবার জল গরম করতে হবে।

অতীন কাপটা তুলে নিয়ে বললো, তোদের বাড়িতে বুঝি শুধু চা কফি দেওয়া হয়? বিস্কুট-ফিস্কুট রাখিস না?

অলি হুকুমের সুরে বললো, জগদীশ, আর এক কাপ কফি নিয়ে আয়, বিস্কুট নিয়ে আয়। বাবলুদা, ওমলেট খাবে?

অতীন চোখ বড় বড় করে বললো, তোদের বাড়ির ওমলেট? জগদীশ তা হলে এখন জগুবাবুর বাজারে গিয়ে হাঁস কিনবে, সেই হাঁস ডিম পাড়বে, তারপর সেই ডিমে ওমলেট ভাজা হবে। এসেই এক কাপ গরম কফি পেয়ে গেছি, এই আমার বাপের ভাগ্যি!

জগদীশ বললো, বাড়িতে ডিম নেই, মামলেট হবেনিকো!

অতীন মাথা হেলিয়ে বললো, দেখলি তো? আজব বাড়ি ভাই তোদের! একদিন এসে দেখি সদর দরজা খোলা, সেখানে কেউ নেই। দোতলায় এসে দেখি কেউ নেই, তিনতলায় উঠে ডাকাডাকি করলুম। তাও কারুর সাড়া শব্দ পাই না। চোরেরা এসে তোদের সব কিছু চুরি করে নিয়ে যায় না কেন?

জগদীশ দাঁত বার করে বললো, গত হপ্তাতেই তো একদিন চুরি হয়ে গেল। একতলার গুদাম থেকে ছাপা ফর্মা…

অলি বললো, বাবাকে বলবো, এবারে কৃষ্ণনগরে গেলে জগদীশটাকে রেখে আসতে। এই গাঁইয়াটাকে দিয়ে কোনো কাজই হয় না! তুই কফি আনবি আমার জন্য। না দাঁড়িয়ে থাকবি?

অতীন ধোঁয়া-ওঠা কফি শেষ করে দিল কয়েক চুমুকে। তার শরীর শির শির করছে। অনেকখানি রাস্তা দৌড়ে এসেছে সে। বাবা তাকে পাঠিয়েছিলেন সকালবেলা। এক বন্ধুর বাড়িতে সে কাটিয়ে এসেছে সারা দুপুর।

কাপটা নামিয়ে রেখেই সে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, চলি! ওটা দিয়ে দিস কাকাবাবুকে।

–তুমি বাবার সঙ্গে দেখা করে যাবে না?

–কোনো দরকার নেই। উনি দেখলেই বুঝবেন।

–তুমি এই বৃষ্টির মধ্যে আবার যাচ্ছো? গেঞ্জি পরেই চলে যাবে নাকি?

-–কেন, গেঞ্জি পরে রাস্তায় বেরুতে অসুবিধের কী আছে?

–কী তোমার এমন জরুরি কাজ যে এক্ষুনি যেতেই হবে?

অতীন ঘুরে অলির দিকে তাকালো। সত্যিই তার এমন কিছু ব্যস্ততা নেই। কিন্তু পাশের ঘরের হারমোনিয়ামের আওয়াজ ও পুরুষ কণ্ঠ তার কানকে পীড়া দিচ্ছে। কাকাবাবুর মাথাটা খারাপ হয়ে গেল নাকি? তার বাবা এই রকম চেঁচিয়ে গান গাইছে, এটা অতীন কল্পনাই করতে পারে না।

–ঐ গানের মাস্টারটা তোকে আজ ছেড়ে দিয়েছে যে? তুই গান শিখছিস না?

–না, আমি আর ওঁর কাছে কোনোদিন গান শিখবো না!

অতীন খুশী হয়ে হাসলো। ঐ গানের মাস্টারটাকে সে দু’চক্ষে দেখতে পারে না। অলি এতদিনে তা বুঝেছে?

অলি বললো, আমার বাবার একটা জামা দেবো? তোমার গায়ে লেগে যেতে পারে।

–চল, অলি, তোর ওপরের ঘরটায় যাই। এই ঘরে বই-এর ভ্যাপসা গন্ধ আমার বিচ্ছিরি লাগে। সব সময় চোখের সামনে বই দেখলে আমার গা জ্বলে যায়।

–ঠিক আছে, চলো, ওপরে চলো।

অলির ঘরে খোলা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো অতীন। খুব নরম হয়ে এসেছে বিকেলের আলো। জমা-জলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বলে রাস্তার গাড়িগুলির আওয়াজও বেশ মন্থর। কিন্তু অতীনের মাথার মধ্যে ছটফট করছে একটা গোপন বাসনা।

অলি একটা জামা নিয়ে এলো তার বাবার।

অতীন সেটা হাতে নিয়েই বললো, খুব পুরোনো, ছেঁড়া খোঁড়া একটা জামা এনেছিস, তাই না? দোল খেলার জন্য তুলে রাখা হয়েছিল?

অলি বললো, কী অসভ্য! মোটেই ঘেঁড়া নয়। আলমারি খুলে সামনে যেটা পেয়েছি, সেটাই নিয়ে এসেছি।

–তোর বাবার জামা আমি পরবো না। তোর কাছ থেকে আর কিচ্ছু আমি নেবো না।

অতীন আবার দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই অলি তার হাত চেপে ধরে বললো, কেন, কী হয়েছে? আমি কী দোষ করলুম।

অতীন রাগ রাগ চোখে তাকালো অলির দিকে। অলির শরীরে ও স্বভাবে যে স্নিগ্ধতা ও সারল্য আছে এখন সে তা ভাঙতে চাইছে। এরকম ইচ্ছে তার আগে কখনো হয়নি।

সে বললো, তুই কী ক্ষতি করেছিস জানিস? আমাকে একটা কলম দিয়েছিলি, একটা বিচ্ছিরি কলম, কালি বেরোয় না, সেটা দিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে…

বিস্ময়ে, ব্যথায়, অপমানে অলির মুখখানা নীল হয়ে গেল। একটা কলম সে অতীনকে দিয়েছিল ঠিকই, তবে নিজে থেকে দিতে চায়নি। অতীনই জোর করে নিয়েছিল বলতে গেলে।

অলি একদিন অতীনকে দুটি জিনিস দেখিয়েছিল। একটি কলম আর একটা হাতঘড়ি। কমলটা দিয়েছিলেন তার বাবা আর ঘড়িটা ব্যাঙ্গালোর থেকে তার এক মামা এনেছিলেন। অতীনকে সেই ঘড়ি আর কলমটা দেখিয়ে গর্বের সঙ্গে অলি বলেছিল, দ্যাখো বাবলুদা, আমাদের দেশে এখন কত ভালো ভালো জিনিস তৈরি হচ্ছে। এই ঘড়িটাও দিশি, কলমটাও দিশি! বিলিতি ঘড়ির চেয়ে এই ঘড়িটা কোনো অংশে খারাপ নয়। আর কলমটা দিয়ে লিখে দ্যাখো–

অতীন কলমটা খুলে একটা কাগজে ঘষতে ঘষতে বলেছিল, মন্দ না। আমি একটা জাপানি কলম কিনবো ভাবছিলাম, এটার দাম কত রে?

অলি বলেছিল, তুমি এটা নিয়ে কয়েকদিন লিখে দেখতে পারো।

অতীন অমনি কলমটা পকেটে ভরে বলেছিল, তুই আমাকে দিয়ে দিলি? তা হলে এটা দিয়েই আমি পরীক্ষা দেবো!

অলি এখন চরম দুঃখিত স্বরে বললো, আমার জন্য তোমার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে?

অতীন হুংকার দিয়ে বললো, হ্যাঁ।

তারপরেই এরকম ধমকের সঙ্গে কোনো রকম মিল না রেখে সে অলিকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বললো, আমি তোকে খেয়ে ফেলবো! আমি তোকে একদম খেয়ে ফেলবো আজ!

অলি প্রথমে দারুণ অবাক হয়ে গেল। বাবলুদা তো এরকম কক্ষনো করেনি আগে। বরং বাবলুদা দু’চারটে চড়-চাপড় মারে মাঝে মাঝে, মাথার চুল টেনে এলো করে দেয়, আদর তো করে না। বি এস-সি পরীক্ষা দিয়েই বদলে গেল?

বিস্ময়ের সঙ্গে মিশে থাকে লজ্জা। হুড়মুড়িয়ে এসে পড়লো ভয়। বাবলুদা তাকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করছে। না, না, না, এ ভাবে নয়, এ ভাবে হতে পারে না। জীবনের প্রথম চুম্বনের কথা অলি কল্পনা করেছে মাঝে মাঝে। নদীর ধারে, জ্যোৎস্না রাতে, কথা বলতে বলতে হঠাৎ কথা থেমে যাবে, বাবলুদা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে অনেকক্ষণ, তারপর…। তার বদলে এই রকম?

দারুণ ভয় পেয়ে অলি কান্না কান্না গলায় বললো, এ কী বাবলুদা, না, না, আমায় ছেড়ে দাও, একটা কথা শোনো–

অতীন বললো, চুপ, কোনো কথা নয়!

অলি প্রাণপণে তার ঠোঁট সরিয়ে নেবার চেষ্টা করতে করতে বললো, ছাড়ো, ছাড়ো, কী হচ্ছে। কী পাগলামি করছো, দরজা খোলা আছে, এক্ষুনি জগদীশ কফি নিয়ে আসবে…

অতীনের বুকের ভেতরটা খুশীতে হা-হা করে উঠলো। দরজা খোলা, শুধু এই জন্যই অলির আপত্তি? কেউ আসবে না, কেউ আসবে না, পৃথিবীতে কারুর সাহস নেই এখন তাকে বাধা দেওয়ার।

সে অলিকে দেওয়ালের কাছে টেনে এনে তার নরম, তুলোর মতন ওষ্ঠ নিয়ে মাতামাতি করতে লাগলো। তার একটা হাত ঘুরতে লাগলো ঘুঘু পাখির মতন অলির বুকে। অলির তীব্র, কান্নামেশানো না, না, সে শুনতে পাচ্ছে না। এক সময় সে দু হাতে অলির কোমর জড়িয়ে উঁচুতে তুলে তার নগ্ন নাভিতে চেপে ধরলো তার গরম জিভ।

সে ভাঙছে। সে অলির স্নিগ্ধতা ও সারল্য ভাঙছে, সে চাইছে ঝড় ও অগ্নিবৃষ্টি।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ একটা ঘোড়ার গাড়ি ডাকা হয়েছে
২. ১.০২ বৈদ্যনাথধাম স্টেশনে দাঁড়িয়ে
৩. ১.০৩ ভবদেব মজুমদারের আমলে
৪. ১.০৪ বাড়ির দারোয়ানের সঙ্গে তুতুলকে
৫. ১.০৫ দেশ বিভাগের পর দুটি নতুন দেশ
৬. ১.০৬ ছাত্র বয়েসে প্রতাপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু
৭. ১.০৭ মেঘনা নদী পার হয়ে দায়ুদকান্দি
৮. ১.০৮ মালখানগরে প্রতাপদের বাড়ির সামনে
৯. ১.০৯ সত্যেন ভাদুড়ীর গায়ের পাঞ্জাবী
১০. ১.১০ দুটো সাইকেল ভাড়া করা হয়েছে
১১. ১.১২ জেল থেকে ফেরার পর
১২. ১.১১ দুপুরবেলা নানা গল্পের মধ্যে
১৩. ১.১৩ বাগানে নতুন গোলাপ চারা
১৪. ১.১৪ ওপরতলায় নিজেদের অংশটায়
১৫. ১.১৫ ঐ ছেলেটা মুসলমান বুঝি
১৬. ১.১৬ বন্যা হবার দরকার হয় না
১৭. ১.১৮ বিমানবিহারীদের আদি বাড়ি
১৮. ১.১৭ কলকাতার তালতলা অঞ্চল
১৯. ১.১৯ পিকলু আর বাবলু এক স্কুলে পড়তো
২০. ১.২০ তুতুল বাগবাজারের একটি স্কুলে
২১. ১.৪৩ পাড়ার কয়েকটি ছেলে ধরাধরি করে
২২. ১.৪৪ আর্মানিটোলার পিকচার প্যালেস
২৩. ১.৪৫ পাড়াটির নাম বাগবাজার
২৪. ১.৪৬ একটা নড়বড়ে কাঠের টেবিল
২৫. ১.৪৭ আগের দিনই খবর দিয়ে
২৬. ১.৪৮ নতুন বাড়ি ঠিক হলো কালীঘাটে
২৭. ১.২১ সরকারি কর্মচারির চাকরি
২৮. ১.২২ বঙ্কুবিহারীর স্ত্রী এলিজাবেথ
২৯. ১.২৩ একটা মোটরবাইক চেপে হাজির
৩০. ১.২৪ হারীত মণ্ডলকে নিয়ে ত্রিদিব
৩১. ১.২৫ বাড়িতে অসময়ে কোনো অতিথি এসে
৩২. ১.২৬ প্রতাপ সিগারেট খেতে খেতে
৩৩. ১.২৭ ভোর রাতে ঘুম ভেঙে গেল প্রতাপের
৩৪. ১.২৮ কলকাতার ভদ্রলোকদের বাড়িতে ঝি-চাকর
৩৫. ১.২৯ প্রীতিলতার হাঁপানির টান বেড়েছে
৩৬. ১.৩০ ট্রেনে আসবার সময়ে
৩৭. ১.৩১ স্বাধীনতার কয়েক বছর পর
৩৮. ১.৩২ ঢাকার সেগুনবাগানে মামুনের এক দিদির বাড়ি
৩৯. ১.৩৩ বেশ তাড়াতাড়িই শীত পড়ে গেছে
৪০. ১.৩৪ দেওঘরে প্রতাপকে থেকে যেতে হলো
৪১. ১.৩৫ মোহনবাগান লেনে চন্দ্রাদের বাড়ি
৪২. ১.৩৬ মোটর বাইকের গর্জনে পাড়া কাঁপিয়ে
৪৩. ১.৩৭ অল ওয়েভ রেডিও
৪৪. ১.৩৮ কানু যে ব্যাঙ্কে কাজ করে
৪৫. ১.৩৯ কলেজের গেট দিয়ে বেরিয়ে
৪৬. ১.৪০ দেওঘরে এসে উপস্থিত হলেন সত্যেন
৪৭. ১.৪১ পাতিপুকুরের বাড়ির ভিত তৈরির কাজ
৪৮. ১.৪২ কানুর বাড়ির ছাদের আলসেতে
৪৯. ২.০২ শেষ পরীক্ষার শেষ ঘণ্টা
৫০. ২.০৩ দুপুরবেলা প্রবল ঝড় হয়ে গেছে
৫১. ২.০৪ বাড়ির সামনে যে গেট ছিল
৫২. ২.০৬ খবরের কাগজ পড়ে যাচ্ছেন প্রতাপ
৫৩. ২.০৫ বাবুল বুঝতে পারেনি
৫৪. ২.০৭ পাতিপুকুর স্টপে বাস থেকে নেমে
৫৫. ২.০৮ গাড়ি ভাড়া করেছে আলতাফ
৫৬. ২.০৯ প্রেসিডেন্সি কলেজের গেট দিয়ে
৫৭. ২.১০ কেমিস্ট্রিতে ফার্স্ট ক্লাস
৫৮. ২.১১ রেল লাইনের ধারে
৫৯. ২.১২ টেলিফোনটা নামিয়ে রেখে
৬০. ২.১৩ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে
৬১. ২.১৪ কয়েকদিন এড়িয়ে এড়িয়ে চলার পর
৬২. ২.১৫ মুড়ি ও তেলেভাজা খাওয়া
৬৩. ২.১৭ টেবিলের ওপর জোর একটা চাপড় মেরে
৬৪. ২.১৬ অসুখ-বিসুখের ব্যাপার
৬৫. ২.১৮ কফি হাউসে ঢোকার মুখে
৬৬. ২.১৯ তিন তিনটে সাধারণ নির্বাচন
৬৭. ২.২০ ভিত নেই তবু বাসস্থান গড়ে উঠেছে
৬৮. ২.২১ বৃষ্টির ছাঁট আসছে খুব
৬৯. ২.২২ আদালতে প্রতাপ
৭০. ২.২৩ সীট রিজার্ভেশানের সুযোগ
৭১. ২.২৪ লোদি গার্ডেনসে ত্রিদিব আর সুলেখা
৭২. ২.২৫ পত্রিকার নাম নিয়ে আলাপ-আলোচনা
৭৩. ২.২৬ নোয়াখালিতে বসিরের বাড়ি
৭৪. ২.২৭ থার্ড ইয়ার থেকে ফোর্থ ইয়ারে
৭৫. ২.২৮ কবি জসিমউদ্দিনের বাড়িতে
৭৬. ২.২৯ অতীনদের স্টাডি সার্কল
৭৭. ২.৩০ আজকালকার যুদ্ধে
৭৮. ২.৩১ রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
৭৯. ২.৩২ কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস
৮০. ২.৩৩ টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে
৮১. ২.৩৫ নোয়াখালিতে সিরাজুল
৮২. ২.৩৪ মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাড়ি
৮৩. ২.৩৬ স্টাডি সার্কল থেকে
৮৪. ২.৩৭ তিনতলার এই ঘরখানি
৮৫. ২.৩৮ আলপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
৮৬. ২.৩৯ কয়েকদিনের জ্বরেই একেবারে কাবু
৮৭. ২.৪০ একটা ভিড়ের বাসে চেপে
৮৮. ২.৪১ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ এলাকা ছাড়িয়ে
৮৯. ২.৪২ মামুনের মেজাজ খারাপ
৯০. ২.৪৩ তুতুল একা একা
৯১. ২.৪৪ ঝোঁকের মাথায় প্রতাপ
৯২. ২.৪৫ সন্ধ্যারতির সময় ভক্ত ও দর্শক
৯৩. ২.৪৬ দোতলা থেকে কল্যাণী ডাকছেন
৯৪. ২.৪৭ অ্যালুমিনিয়ামের বাটি
৯৫. ২.৪৮ বড় তেঁতুল গাছ
৯৬. ২.৪৯ স্টাডি সার্কেল শেষ হয়ে যাওয়ার পর
৯৭. ২.৫০ জানলায় পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে
৯৮. ২.৫২ আকাশে জোরে বিদ্যুৎ চমকালে
৯৯. ২.৫১ চায়ের কাপ তুলে একটা চুমুক
১০০. ২.৫৩ দিনের পর দিন কেটে যায়
১০১. ২.৫৪ করোনেশান ব্রীজের কাছে
১০২. ২.৫৫ তিনবার সিটি দিয়ে থেমে গেল ট্রেনটা
১০৩. ২.৫৬ সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে
১০৪. ২.৫৭ তুতুলের খুব অস্বস্তি হয়
১০৫. ২.৫৮ বছরের প্রথম দিনটি
১০৬. ২.৫৯ পুরোনো গাড়িটার বদলে
১০৭. ২.৬০ অকস্মাৎ মামুনকে গ্রেফতার
১০৮. ২.৬২ সারারাত ঘুমোতে পারেনি তুতুল
১০৯. ২.৬১ লণ্ডন শহরে পা দিয়ে
১১০. ২.৬৩ ট্রাম ধর্মঘট মিটলো
১১১. ২.৬৪ ট্রেন সাড়ে চার ঘণ্টা লেট
১১২. ২.৬৫ শহরের সমস্ত লোক
১১৩. ২.৬৬ সিঁড়ির মুখে ল্যান্ডলেডি
১১৪. ২.৬৭ তুতুল যে সার্জারিতে কাজ করে
১১৫. ২.৬৮ পমপম একটা রেডিও রেখে গেছে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন