২.২৫ পত্রিকার নাম নিয়ে আলাপ-আলোচনা

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

পত্রিকার নাম নিয়ে আলাপ-আলোচনা চললো বেশ কয়েকদিন। নাম ঠিক করা সহজ নয়, নানারকম মত বিভেদ। আলতাফের ইচ্ছে নবারুণ বা নবার্ক, এই জাতীয় নাম দেওয়া, শাখাওয়াত হোসেনের আবার ঐ ধরনের সংস্কৃত-ঘেঁষা শব্দ অপছন্দ। তিনি প্রস্তাব নিলেন, নাম রাখা হোক ‘জেহাদ’।

এই নামটি অবশ্য তরুণদের পছন্দ হয় না, কিন্তু শাখাওয়াত হোসেন পত্রিকার মালিক, তাঁর ইচ্ছেটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না এককথায়। পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক যতই চলুক, হোসেন সাহেব নিজের পছন্দটি আঁকড়ে ধরে রইলেন। নামটি ছোট, তিন অক্ষরের, শুনতে ভালো, বেশ একটা তেজের ভাবও আছে।

ঐ নামটি যেদিন প্রায় ঠিক হবার উপক্রম, তার পরদিন পল্টন তার কাঁধের ঝোলায় একটি বাংলা অভিধান নিয়ে এলো। কথা শুরু হবার পর সে হোসেন সাহেবকে জিজ্ঞেস করলো, চাচা, জেহাদ কথাটার মানে আপনি কী ভেবেছেন?

হোসেন সাহেব বললেন, কেন? এ সহজ কথার মানে সবাই জানে। জেহাদ মানে লড়াই!

পল্টন বললো, ডিকশনারিটা একবার কনসাল্ট করা যাক। বর্গের জ, জে জে জে, এই জেহাদ। লিখেছে, জিহাদ দেখো। আসল কথাটা হলো জিহাদ, আমরা মুখে বলি জেহাদ। নাম রাখতে গেলে জিহাদই রাখতে হয়। জিহাদ মানে লিখেছে, “মুসলমানগণের ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর বিরুদ্ধে একযোগে ধর্মযুদ্ধ”।

বসির, আলতাফরা এক সঙ্গে বলে উঠলো, না, না, এ নাম রাখা চলবে না।

হোসেন সাহেব একটুখানি দমে গেলেন। কুর্তার পকেট থেকে রুমাল বার করে কপাল মুছতেই তাঁর আর একটা নাম মনে পড়ে গেল। তিনি উজ্জ্বল মুখে বললেন, তা হলে নাম দাও ‘আজান’। এ নাম অতি সুন্দর!

পল্টন অভিধানের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বললো, এর মানেটা দেখেনি।

আলতাফরা হেসে উঠলো। আজানের মানে সবাই জানে।

পল্টন বললো, আজমীর…আজল… আজা…আজাড়…এই যে আজান! মানে হলো, “আহ্বান, মুসলমানদিগকে নমাজ পড়িবার নিমিত্ত উচ্চৈঃস্বরে আহ্বান। বৈদেশিক।”

হোসেন সাহেব বললেন, এতে আপত্তির কোনো কারণ আছে? আমরা তো সকল মানুষরে ডাক দিতেই চাই।

অন্যরা কেউ চট করে কিছু মন্তব্য করলো না। যদিও এই নামটিও সকলের ঠিক পছন্দ। হয়নি। বসির আর বাবুল চোখাচোখি করলো, এরা তলে তলে মার্ক্সবাদে দীক্ষা নিয়েছে, পত্রিকার নামে ধর্মীয় গন্ধ রাখা এদের মনঃপূত নয়।

আলতাফ বললো, আমি একটা কথা কই, চাচা। মামুন ভাইরে আমরা নিচ্ছি, এডিটর হিসাবে আপনার নাম থাকলেও ভারচুয়ালি তিনিই সব দেখাশুনা করবেন। মামুনভাই কবি মানুষ, পত্রপত্রিকার সাথে অনেকদিন ধইরা কানেকটেড, নামের ব্যাপারে তাঁর একটা মতামত নেওয়া দরকার।

হোসেন সাহেব ঈষৎ অসন্তোষের সঙ্গে বললেন, ঠিক আছে, লও হ্যাঁর মতামত, কিন্তু আমার মন-পসন্দ না হইলে আমি ভেটো দিমু!

বাবুল তার বড় ভাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ছোট করে কাশলো। পত্রিকার নামের ব্যাপারে মামুনভাই-এর সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে আগেই। মামুনভাই তার বাসায় প্রায়ই আসেন মঞ্জু আর তার সন্তানের খোঁজ-খবর নিতে। মামুনভাই বলেছেন যে তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি একটি নামই বলবেন এবং সেটাই গ্রহণ করতে হবে। তিনি ঠিক করে রেখেছেন, ‘ভবিষ্যৎ’। আমরা তো সবাই ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে আছি। বাবুল বলেছিল, কিন্তু য-ফলা দিয়ে নাম কি প্র্যাকটিকাল হবে? মামুন উত্তর দিয়েছিলেন, কেন? তয় ত দিয়ে ‘ইত্তেকাফ’ যদি ভালোভাবে চলতে পারে, তা হলে য-ফলা দিয়ে ভবিষ্যৎ’ কেন চলবে না।

আলতাফ মুখ ফেরাতেই বাবুল বললো, মামুনভাই তাঁর পছন্দের কথা আমাকে জানিয়েছেন। উনি নাম রাখতে চান ভবিষ্যৎ।

হোসেন সাহেব সঙ্গে সঙ্গে ভেটো প্রয়োগ করে বললেন, ও চলবে না, আর কিছু সাজেস্ট করতে বলো!

শেষ পর্যন্ত কাগজের নাম হলো ‘দিন-কাল’। আগে ঠিক ছিল আগামী ঈদের দিন থেকে পত্রিকার যাত্রা শুরু হবে, কিন্তু এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান নির্বাচনের কথা ঘোষণা করলেন। অমনি সাজ সাজ রব পড়ে গেল। নির্বাচনের মুখেই তো কাগজ চালাবার প্রকৃষ্ট সময়।

আইয়ুব যে নির্বাচন চাইলেন, তাতে দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। ভোট দেবে পাকিস্তানের দুই ডানা থেকে মাত্র আশী হাজার মানুষ, এদের নাম হলো বেসিক ডেমোক্রাটস, যাদের নির্বাচন আগেই হয়ে গেছে। এই বেসিক ডেমোক্রাটসরা সমাজের উচ্চশ্রেণীর মানুষ, নব্য ধনী সম্প্রদায়, ব্যবসায়ী, কন্ট্রাক্টর ইত্যাদি, আইয়ুবের আমলে এদের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধিই হচ্ছে। এই বেসিক ডেমোক্রাটসরা নির্বাচিত করবে শুধু মাত্র প্রেসিডেন্টকে। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট আইয়ুব আবার সেই পদের প্রার্থী।

এটা কি নির্বাচন, না নির্বাচনের প্রহসন? বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রথমেই এই নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতিবাদ জানালো। এই নির্বাচন বয়কট করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

রমনা পার্কের কাছে বাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘দিন-কাল’ কার্যালয়। সম্পাদক হিসেবে শাখাওয়াত হোসেন-এর নাম ছাপা হবে, নামের জন্যই তিনি কাগজ করছেন। তাঁর আলাদা ঘর, সেখানে তিনি যখন ইচ্ছে আসবেন। মামুন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, তাঁর নাম ছাপাবার আকাঙ্ক্ষা নেই, তিনি চান গণতন্ত্রের উদ্ধার, প্রথম দিন থেকেই তিনি খাটতে লাগলেন দারুণ ভাবে।

তিনি আলতাফ বসির পল্টনদের নিজের ঘরে ডেকে বললেন, আমরা কিন্তু এই নির্বাচন সমর্থন করবো। আমরা গণতন্ত্র চাই, নির্বাচন চাই, যে-কোনো নির্বাচন থেকেই দূরে সরে থাকা কোনো কাজের কথা নয়। ধরো, এই ইলেকশানে যদি আমরা আইয়ুবকে ফেলে দিতে পারি, তা হলে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের ওপর জেনারাল ইলেকশান কল্ করার জন্য চাপ দেওয়া যাবে।

পল্টন জিজ্ঞেস করলো, আইয়ুবের সঙ্গে কনটেস্ট করবে কে? সে রকম ন্যাশনাল ফিগার কে আছে?

সেটা ভেবে দেখতে হবে। তোমরা অপোজিশান পার্টির লিডারদের ইন্টারভিউ করো!

আলতাফ বললো, মামুনভাই, একটা কথা বলবো। কাগজের পলিসি আপনিই ঠিক করবেন। কিন্তু সেটা আমার হোসেন চাচারে দিয়ে একটু অ্যাপ্রুভ করায়ে নিতে হবে। একটু কায়দা করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আসল ব্যাপার কী জানেন, আপনার মুখের কথাটাই ওনার মুখ দিয়ে বলায়ে নিতে হবে আর কি!

মামুন বললেন, সেটা কী ভাবে সম্ভব? অলতাফ, তুমি জানো, আমি পয়সার জন্য এই চাকরি করতে আসি নাই। এসেছি তোমাদের কথাতে। তোমার চাচা যদি কোনো প্রতিক্রিয়াশীল মতামত চাপায়ে দিতে চান, আমি তৎক্ষণাৎ রিজাইন করবো। আবার তোমার বন্ধুরা যদি প্রো-চাইনিজ লাইন নিতে চায়, আমি তার মইধ্যেও নাই। আমি পাকিস্তানের সব মানুষের সমান অধিকারে বিশ্বাসী। আমি বিচ্ছিন্নতাবাদ ঘৃণা করি। পাকিস্তানরে যারা ভাঙতে চায় আমি তাদের দুশমন মনে করি। আমি ন্যাশানালিস্ট। এই আমার সোজা কথা!

পল্টন বললো, আমরা এক একটা ইস্যু ধরে আপনার সাথে আলোচনা করবো। আমার ধারণা, আপনার সাথে আমাদের মতবিরোধ হবে না।

আলতাফ বললো, আগে আমার কথাটা কইতে দাও! সব কাগজেই মালিকের স্বার্থ দ্যাখতে হয়। আমার চাচা…

মামুন বললেন, কাগজ লসে রান করলে বেশিদিন চলবে না সে আমি জানি। সার্কুলেশান যাতে বাড়ে সে দায়িত্ব আমার।

আলতাফ বললো, আমার চাচা শুধু প্রফিট চান না, তিনি সমাজে নাম কেনতে চান। মাঝে মাঝে তেনার দুই একটা ছবি ছাপাইতে হবে, এই আমার অনুরোধ। আর এমন একটা ভাব দেখাতে হবে, যেন ওনার মতামতেই সব কিছু চলতেছে। কায়দাটা আমি বলে দিই। বিচক্ষণ কথাটার ওপর আমার চাচার খুব দুর্বলতা আছে। মাঝে মাঝে ঐ শব্দটা ব্যবহার করবেন। যেমন ধরেন, আপনি যদি বলেন, হোসেন সাহেব, আপনার মতন বিচক্ষণ মানুষ নিশ্চয়ই বুঝবেন যে এখন এই ইলেকশন আমাদের সাপোর্ট করা দরকার। দ্যাখবেন যে আমার চাচা সঙ্গে সঙ্গে মাথা নেড়ে বলবেন, হা, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই!

পল্টন হেসে বললো, ঠিক, এটা আমিও লক্ষ করেছি বটে!

মামুন ভুরু কুঁচকে বললেন, ছবি ছাপাতে হবে!

আলতাফ বললো, এমনি এমনি কী আর ছবি ছাপাবেন? ধরেন, উনি মোনেম খাঁর সাথে আলাপ করতে গেলেন, তখন দুইজনের ছবি ছাপাবেন। সেটা একটা নিউজও হইলো!

কাগজ চলতে লাগলো মন্দ না। মামুন প্রেসে পাঠাবার আগে প্রত্যেকটা কপি নিজে দেখে দিতে লাগলেন, ভাষার শুদ্ধতার প্রতি নজর রাখলেন, সরকারের প্রতি প্রত্যক্ষ আক্রমণের বদলে সম্পাদকীয় কলমে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ প্রয়োগ করতে লাগলেন প্রচুর। বিভিন্ন জায়গায় রিপোর্টার পাঠিয়ে প্রকাশ করতে লাগলেন নানান দুর্নীতির কাহিনী। পাঠকরা এই সব পছন্দ করে।

বিরোধী দলগুলিও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিল। আইয়ুব-বিরোধী সব দলগুলি একত্র হয়ে নাম নিল কম্বাইনড অপোজিশন পার্টি বা কপ। এখন প্রশ্ন হলো, আইয়ুবের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হবে কাকে? এমন কোন নেতা আছেন, যিনি পূর্ব ও পশ্চিম দুই পাকিস্তানেই সমানভাবে স্বীকৃত? সোহরাওয়ার্দি বেঁচে থাকলেও না হয় কথা ছিল…।

শেষ পর্যন্ত একটা নামই সবার মনে এলো। জিন্নার নামে পাকিস্তানের মানুষ এখনও মাথা অবনত করে। তিনি পাকিস্তানের স্রষ্টা, নতুন রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হবার পর তিনি বেশিদিন বাঁচেননি, তাই তাঁকে কোনো বদনাম কুড়োতে হয়নি। সেই জিন্নার নামের ম্যাজিকটা কাজে লাগানো দরকার। জিন্না সাহেবের বোন ফতিমা জিন্না এখনো বেঁচে আছেন। তিনি আগে বিশেষ রাজনীতি করেননি, তাতে কী আসে যায়, তাঁর হয়ে প্রচার চালাবেন অন্যরা।

ফতিমা জিন্না এই নির্বাচনী দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হতে রাজি হয়ে গেলেন।

কিন্তু মামুন বিপদে পড়লেন শাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে। একজন স্ত্রীলোক পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হবে, এই চিন্তাটাই তাঁর কাছে অসহ্য। স্ত্রীলোক দেবে মাঠে-ময়দানে বক্তৃতা? ‘দিন-কাল’ অফিসে ঢুকতে ঢুকতে তিনি চিৎকার করতে লাগলেন, ইমপসিবল। আমাগো কাগজ ফতিমারে সাপোর্ট করবে না! ইমপসিবল! পাকিস্তানে আর কোনো পুরুষ নাই? মাইয়া মানুষের এই মদ্দাপনা ইসলাম-বিরোধী।

মামুন নিজের ঘরে গুম হয়ে বসে রইলেন। হোসেন সাহেব তাঁকে ডেকে পাঠালেও তিনি দেখা করতে গেলেন না। বিকেলবেলা আলতাফ এলে তিনি গম্ভীরভাবে এক টুকরো কাগজ তুলে বললেন, এই নাও আমার রেজিগনেশান লেটার। দিয়া আসো তোমার চাচারে। তিনিই এডিটারি করুন।

আলতাফ হালকাভাবে বললো, আরে মামুনভাই, আপনে মাথা গরম করেন ক্যান! কী হইছে শুনি!

মিতভাষী, নম্র-স্বভাব মামুন হঠাৎ রাগে ফেটে পড়ে বললেন, তুমি বলতে চাও আমি ফতিমা জিন্নাকে ছেড়ে আইয়ুবকে সমর্থন করবো? যদি এক বাপের সন্তান হয়ে থাকি…

আলতাফ বললো, হায় আল্লা! আপনে দেখি বড় চটা চটছেন! দ্যাখেন না, সব ম্যানেজ কইরা দিতেছি। আচ্ছা মামুনভাই, আগে একটা কথা জেনেনি, হিস্ট্রিতে যেন পড়ছিলাম, দিল্লির মসনদে একবার এক সুলতানা বসে ছিল না? কী যেন নামটা?

–রাজিয়া!

–তিনি তো ভালোই রাজ্য চালিয়েছিলেন, তাই না? ব্যাস, তবে তো কেল্লা ফতে!

এর পর আলতাফ কিছুক্ষণ মামুনের সঙ্গে শলা পরামর্শ করলো। তারপর দু’জনে একসঙ্গে গেল হোসেন সাহেবের ঘরে।

হোসেন সাহেব প্রথমেই বললেন, আমি নোট দিয়া দিছি আমার কাগজ ফতিমার এগেইনস্টে।

আলতাফ বললো, চাচা, আগে দু’ একটা কথা শুইনা লন। খুব প্রাইভেট। দরজা বন্ধ করি? চা-পানি কিছু লাগবে?

হোসেন সাহেব অস্থিরভাবে বললেন, না। আগে কাজের কথা কও! মাইয়ালোকে রাষ্ট্রপতি হইতে চায়, তোবা, তোবা, এমন কথা শোনাও হারাম।

আলতাফ বললো, চাচা, মামুনভাই আপনের মতামতগুলিরে খুব মূল্য দ্যান। আজ সকালেই কইতেছিলেন, ওহে, তোমার চাচার মতন বিচক্ষণ মানুষকে যদি প্রশ্ন করা যায়, আইয়ুব না। জিন্না, আইয়ুব না জিন্না। এই দুইটা নামের মধ্যে আপনি কোন্টা বেছে নেবেন, তা হলে নির্ঘাৎ তিনি বলবেন, জিন্না, জিন্না!

হোসেনসাহেব বললেন, আলবাৎ! একশো বার। জিন্নার সাথে আইয়ুবের কোনো তুলনা চলে? কায়েদ এ- আজম হলেন জাতির পিতা।

জিন্নারে ইন্ডিয়ার লোক পছন্দ করে না, একথা আপনি স্বীকার করবেন নিশ্চয়ই।

অরা জিন্না সাহেবের মর্যদা কী বোঝে। অগো গান্ধীর থিকা, জওহরলালের থিকা আমাগো জিন্না অনেক বড়, তিনি অনেক বেশি বুদ্ধি ধরতেন!

ঠিক, আপনি ঠিক বলেছেন চাচা। পাকিস্তানরে স্ট্রং করার জন্য এখন আর একজন জিন্নার দরকার কি না?

হক কথা! যদি জিন্না সাহেবের একজন ভাই থাকতো কিংবা পোলা থাকতো, আমি তারেই সালাম জানাতাম। তার বদলে তোমরা একজন মাইয়া মানুষেরে…

শোনেন চাচা, শোনেন। মামুনভাই বলছিলেন, শাখাওয়াত হোসেনের মতন বিচক্ষণ মানুষ নিশ্চয়ই বুঝবেন যে ফতিমা জিন্না আসলে আর একজন রাজিয়া সুলতানা।

হেডায় আবার কেডা?

আলতাফ মামুনের দিকে ফিরে বসলো, মামুনভাই, এবারে আপনিই বলেন।

মামুন একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললেন, আপনি একটা নতুন পত্রিকার সম্পাদক, আপনার পত্রিকা থেকেই পাঠকরা জানবে যে একদা দিল্লির মসনদে বসেছিল এক মুসলমান কুমারী। তিনি দক্ষতার সঙ্গে রাজ্য শাসন করেছেন, নিজে যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে সৈন্য পরিচালনা করেছেন। ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই-সিরাজ লিখে গেছেন যে নারী হয়েও রাজকার্যে তিনি ছিলেন বড় বড় বাদশাদের সমকক্ষ, ন্যায়পরায়ণ, বিদ্যোৎসাহিনী, যুদ্ধবিদ্যায় দক্ষ।

হোসেন সাহেবের ভুরু উঁচুতে উঠতে লাগলো আস্তে আস্তে। গভীর বিস্ময়ের সঙ্গে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সত্যিই এরকম কেউ দিল্লির সিংহাসনে বসেছিল? স্ত্রীলোক? মুসলমান?

মামুন বললেন, সুলতান ইলতুৎমিসের কন্যা রাজিয়া মসনদে বসেছিলেন বারো শো ছত্রিশ খ্রীষ্টাব্দে। অযোগ্য রুকনউদ্দীনকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাজিয়া মসনদে বসে প্রজাদের…

আলতাফ এর মধ্যে মাথা গলিয়ে বললো, ঐ রুকনউদ্দীন হইলো আমাদের আইয়ুব। বোঝলেন চাচা। রাজিয়াও কুমারী ছিলেন,ফতিমা জিন্নাও কুমারী। এই সব মিলের কথা কোনো কাগজে এখনও ছাপা হয় নাই। আমাগো দিনকালে যদি প্রথম বাইরায়…সেইজন্যই তো মামুনভাই বলছিলেন, আপনার মতন বিচক্ষণ ব্যক্তিকে এটা বেশি বুঝাতেই হবে না।

হোসেন সাহেব টেবিলে কিল মেরে বললেন, আরে, আমি তো তোমাগো টেস্ট করতেছিলাম! আমি রাজিয়ার কথা জানি না? তিনিই যে নব রূপে এসেছেন…কাইলকের কাগজে ব্যানার হেড লাইন দাও, ফতিমা জিন্না নব রূপে রাজিয়া সুলতানা…।

নির্বাচনী প্রচার তুঙ্গে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কাগজের বিক্রিও বাড়তে লাগলো। মামুন কাজের নেশায় মেতে উঠলেন। তিনি রিপোর্টার পাঠাতে লাগলেন গ্রামে গ্রামে।

বাবুল চৌধুরী দিনকাল পত্রিকায় কাজ নেয়নি, তার কলেজের চাকরিটা সে রেখে দিয়েছে, তবে এখানে সে প্রতি সন্ধেবেলাতেই আসে, আড্ডার এক কোণে চুপ করে বসে থাকে। বন্ধুদের চাপে পড়ে সে দু’একটা প্রবন্ধও লিখেছে, তাও ছদ্মনামে। সে একটু আড়ালে আড়ালে থাকতে। চায়।

বেশি আড্ডা জমে নিউজ রুমে। রিপোর্টাররা একটু রাতের দিকে নানা রকম খবর ও বহু অসমর্থিত গুজব নিয়ে আসে ঝুড়ি ভরে, সেই সব নিয়ে হাসি-মস্করা হয়। বাবুল পারতপক্ষে মামুন বা শাখাওয়াত হোসেনের ঘরে যায় না, ঐ দুই কক্ষে পত্রিকার নীতি নির্ধারক আলোচনায় সে অংশ নিতে চায় না। আলতাফ অনেক চেষ্টা করেও তার ছোটভাইকে এই কাগজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়াতে পারেনি।

মামুনের সঙ্গে বাবুলের দেখা হয় তার নিজের বাড়িতে। বাবুলের ছেলে সুখু এখন হামগুড়ি দেওয়া ছেড়ে টলটলে ভাবে হাঁটতে শিখেছে, দু একটা কথাও বলে। মামুন সুখুকে না দেখে থাকতে পারেন না, সপ্তাহে অন্তত দু তিনটি সন্ধেবেলা আসবেনই। পত্রিকা শুরু হবার আগে প্রতিদিন সন্ধেবেলা আসতেন। ঠিক সাতটা বাজার দু’ এক মিনিট পরেও সিঁড়িতে ডাক শোনা যেত, মঞ্জু, মঞ্জু! মামুনমামাকে দেখলে মঞ্জুরও চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মামুন মামা আসতে পারেন বলে সে কোনো সন্ধেবেলাই পারতপক্ষে বাড়ির বাইরে যেতে চায় না। মামুন এসেই সুখুকে কোলে তুলে নিয়ে এমন আদর করতে থাকেন যে মনে হয় তিনি নিজেও শিশু হয়ে গেছেন। সুখু কখনো কখনো তার মায়ের কোলে যেতে চাইলেও মামুন একটু পরেই। আবার মঞ্জুর কোল থেকে সুখুকে তুলে আনেন নিজের বুকে। মামুনের এখন কোনো পুত্র সন্তান নেই বলেই হয়তো তিনি মঞ্জুর ছেলের ওপর তাঁর সমস্ত স্নেহ-ভালবাসা-আদর উজাড় করে দিতে চান।

একদিন একটু বেশি রাত করে বাড়ি ফিরে বাবুল মঞ্জুকে বললো, শোনো, আমি কয়েকটা দিন একটু মফস্বল থেকে ঘুরে আসবো ভাবছি।

সুখুকে সদ্য ঘুম পাড়িয়ে মঞ্জু তখন দেয়াল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। পাশের ঘরের টেবিলে ঢাকা আছে রাতের খাবার। বাবুলের ফিরতে যতই দেরি হোক, সে কোনোদিনই আগে খেয়ে নেয় না। বাবুলের ফিরতে দেরি হলে সে বকাবকিও করে না। পাশের বাড়িতেই থাকে মঞ্জুর ফুফাতো বোন জুনিপার, তার স্বামী শোভান একটি অতি বদ মাতাল, প্রতি রাতে সে বাড়ি ফেরে চিৎকার করতে করতে এবং স্ত্রীকে সে অকথ্য ভাষায় যে-সব গালিগালাজ দেয় তা পাড়া-প্রতিবেশী সবাই শুনতে পায়। সেই তুলনায় বাবুল তো প্রায় ফেরেস্তা। সে মদ স্পর্শ করে না, সিগারেট ছেড়ে দিয়েছে, স্ত্রীর প্রতি এ পর্যন্ত একবারও দুর্ব্যবহার করেনি। যে-সব দিন বাবুল পুরোপুরি বাড়ি থাকে, সেইসব দিনেই যেন মঞ্জুর একটু একটু ভয় করে। কোনো মানুষ, বই নিয়ে এমন পাগল হতে পারে? সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পরই বাবুল চোখের সামনে বই খুলে বসে, তারপর সারা দুপুর বিকেল সন্ধে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত সে বই থেকে চোখ সরায় না। মামুন এলে সে অন্য ঘরে বসে থাকে। শুধু মামুন কেন, মঞ্জুর বাপের বাড়ির কোনো লোকের সঙ্গেই সে ভালো করে কথা বলে না। এইটা মঞ্জুর একটা গোপন দুঃখ।

মঞ্জু জিজ্ঞেস করলো, তুমি কোথায় যাবে।

একটা লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরে নিয়ে বাবুল বললো, কয়েকটা জায়গায় একটু ঘুরবো ভাবছি। ইলেকশানের মিটিংগুলো নিজের চোখে দেখে আসতে চাই। শুনছি তো মিস জিন্নার মিটিং-এ ভিড় হচ্ছে খুব। মঞ্জু, তুমি কাকে সাপোর্ট করো?

মঞ্জু বললো, আমার সাপোর্ট করা না করায় কী আসে যায়? আমার কি ভোট আছে?

তবু মনে মনে তো তোমার একজনের প্রতি সমর্থন থাকবে।

আমি চাই ফতেমা জিন্না জিতুন। মামুনমামা বলেছেন, ফতেমা জিন্না জিতলে আমাদের বাঙালীদের অনেক সুবিধা হবে!

বাবুল জানলার কাছে গিয়ে চুপ করে রইলো। মঞ্জু তার পাশে গিয়ে কাঠের ওপর হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কার সাথে যাবে?

বাবুল তার কোনো উত্তর না দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে মঞ্জুর গালে ছোট একটা টোকা মেরে বললো, মোনেম খাঁর লোকজনরা কী বলে জানো? বেগম ফতেমা জিন্না পূর্ব পাকিস্তানের সমর্থনে কখনো কোন কথা বলেছেন কী? এইযে আমাদের এদিকে পর পর দু’বার এত বড় ঝড় আর সাইক্লোন হয়ে গেল, তাতে তিনি টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করা তো দূরের কথা, একটু ঠোঁটের দরদও দেখাননি।

মঞ্জু এস্তভাবে বললো, এ কী, তুমি কি আইয়ুব খানকে সাপোর্ট করো নাকি? বাবুল বললো, চলো। খানা লাগাও। ক্ষুদা পেয়েছে খুব।

কী যেন একটা অজানা আশঙ্কায় কাঁপছে মঞ্জুর বুক। সে তার স্বামীর চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি ইলেকশন মিটিং-এ কেন যেতে চাও বলো তো? তুমি যে বলেছিলে আর কোনোদিন তুমি পলিটিকসের সাথে নিজেকে জড়াবে না?

বাবুল সহাস্যে স্ত্রীকে বুকে টেনে নিয়ে বললো, এত ভয় কিসের, বিলকিসবানু? আমি নিজেকে পলিটিকসে জড়াচ্ছি না, শুধু একটু দেখতে যাচ্ছি। আমি যেকদিন থাকবো না, মামুনভাইকে বলে যাবো, যাতে তিনি প্রত্যেকদিন এসে তোমার খোঁজ-খবর নিয়ে যান।

মঞ্জুর তবু ভয় লাগে, সে বাবুলের বুকের কাছ থেকে সরতে চায় না।

ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে, ওপরতলায় আর কেউ নেই। বাবুল হঠাৎ দু হাতে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয় মঞ্জুকে, চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেয় তার শরীর। কৃত্রিম লজ্জায় ছটফট করতে থাকে মঞ্জু, জানলা খোলা, পর্দা সরে গেলেই সব দেখা যায় পাশের বাড়ি থেকে। জুনিপার মাঝে মাঝেই এই বেডরুমের দিকে চেয়ে থাকে।

বাবুল তখুনি মঞ্জুকে বিছানায় নিয়ে যেতে চাইলে মঞ্জু আগে দুটো জানলাই বন্ধ করে দিয়ে এলো। জুনিপারের জন্য তার মায়া হয়। আহা, সে বেচারা স্বামীর সোহাগ পায় না!

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ একটা ঘোড়ার গাড়ি ডাকা হয়েছে
২. ১.০২ বৈদ্যনাথধাম স্টেশনে দাঁড়িয়ে
৩. ১.০৩ ভবদেব মজুমদারের আমলে
৪. ১.০৪ বাড়ির দারোয়ানের সঙ্গে তুতুলকে
৫. ১.০৫ দেশ বিভাগের পর দুটি নতুন দেশ
৬. ১.০৬ ছাত্র বয়েসে প্রতাপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু
৭. ১.০৭ মেঘনা নদী পার হয়ে দায়ুদকান্দি
৮. ১.০৮ মালখানগরে প্রতাপদের বাড়ির সামনে
৯. ১.০৯ সত্যেন ভাদুড়ীর গায়ের পাঞ্জাবী
১০. ১.১০ দুটো সাইকেল ভাড়া করা হয়েছে
১১. ১.১২ জেল থেকে ফেরার পর
১২. ১.১১ দুপুরবেলা নানা গল্পের মধ্যে
১৩. ১.১৩ বাগানে নতুন গোলাপ চারা
১৪. ১.১৪ ওপরতলায় নিজেদের অংশটায়
১৫. ১.১৫ ঐ ছেলেটা মুসলমান বুঝি
১৬. ১.১৬ বন্যা হবার দরকার হয় না
১৭. ১.১৮ বিমানবিহারীদের আদি বাড়ি
১৮. ১.১৭ কলকাতার তালতলা অঞ্চল
১৯. ১.১৯ পিকলু আর বাবলু এক স্কুলে পড়তো
২০. ১.২০ তুতুল বাগবাজারের একটি স্কুলে
২১. ১.৪৩ পাড়ার কয়েকটি ছেলে ধরাধরি করে
২২. ১.৪৪ আর্মানিটোলার পিকচার প্যালেস
২৩. ১.৪৫ পাড়াটির নাম বাগবাজার
২৪. ১.৪৬ একটা নড়বড়ে কাঠের টেবিল
২৫. ১.৪৭ আগের দিনই খবর দিয়ে
২৬. ১.৪৮ নতুন বাড়ি ঠিক হলো কালীঘাটে
২৭. ১.২১ সরকারি কর্মচারির চাকরি
২৮. ১.২২ বঙ্কুবিহারীর স্ত্রী এলিজাবেথ
২৯. ১.২৩ একটা মোটরবাইক চেপে হাজির
৩০. ১.২৪ হারীত মণ্ডলকে নিয়ে ত্রিদিব
৩১. ১.২৫ বাড়িতে অসময়ে কোনো অতিথি এসে
৩২. ১.২৬ প্রতাপ সিগারেট খেতে খেতে
৩৩. ১.২৭ ভোর রাতে ঘুম ভেঙে গেল প্রতাপের
৩৪. ১.২৮ কলকাতার ভদ্রলোকদের বাড়িতে ঝি-চাকর
৩৫. ১.২৯ প্রীতিলতার হাঁপানির টান বেড়েছে
৩৬. ১.৩০ ট্রেনে আসবার সময়ে
৩৭. ১.৩১ স্বাধীনতার কয়েক বছর পর
৩৮. ১.৩২ ঢাকার সেগুনবাগানে মামুনের এক দিদির বাড়ি
৩৯. ১.৩৩ বেশ তাড়াতাড়িই শীত পড়ে গেছে
৪০. ১.৩৪ দেওঘরে প্রতাপকে থেকে যেতে হলো
৪১. ১.৩৫ মোহনবাগান লেনে চন্দ্রাদের বাড়ি
৪২. ১.৩৬ মোটর বাইকের গর্জনে পাড়া কাঁপিয়ে
৪৩. ১.৩৭ অল ওয়েভ রেডিও
৪৪. ১.৩৮ কানু যে ব্যাঙ্কে কাজ করে
৪৫. ১.৩৯ কলেজের গেট দিয়ে বেরিয়ে
৪৬. ১.৪০ দেওঘরে এসে উপস্থিত হলেন সত্যেন
৪৭. ১.৪১ পাতিপুকুরের বাড়ির ভিত তৈরির কাজ
৪৮. ১.৪২ কানুর বাড়ির ছাদের আলসেতে
৪৯. ২.০২ শেষ পরীক্ষার শেষ ঘণ্টা
৫০. ২.০৩ দুপুরবেলা প্রবল ঝড় হয়ে গেছে
৫১. ২.০৪ বাড়ির সামনে যে গেট ছিল
৫২. ২.০৬ খবরের কাগজ পড়ে যাচ্ছেন প্রতাপ
৫৩. ২.০৫ বাবুল বুঝতে পারেনি
৫৪. ২.০৭ পাতিপুকুর স্টপে বাস থেকে নেমে
৫৫. ২.০৮ গাড়ি ভাড়া করেছে আলতাফ
৫৬. ২.০৯ প্রেসিডেন্সি কলেজের গেট দিয়ে
৫৭. ২.১০ কেমিস্ট্রিতে ফার্স্ট ক্লাস
৫৮. ২.১১ রেল লাইনের ধারে
৫৯. ২.১২ টেলিফোনটা নামিয়ে রেখে
৬০. ২.১৩ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে
৬১. ২.১৪ কয়েকদিন এড়িয়ে এড়িয়ে চলার পর
৬২. ২.১৫ মুড়ি ও তেলেভাজা খাওয়া
৬৩. ২.১৭ টেবিলের ওপর জোর একটা চাপড় মেরে
৬৪. ২.১৬ অসুখ-বিসুখের ব্যাপার
৬৫. ২.১৮ কফি হাউসে ঢোকার মুখে
৬৬. ২.১৯ তিন তিনটে সাধারণ নির্বাচন
৬৭. ২.২০ ভিত নেই তবু বাসস্থান গড়ে উঠেছে
৬৮. ২.২১ বৃষ্টির ছাঁট আসছে খুব
৬৯. ২.২২ আদালতে প্রতাপ
৭০. ২.২৩ সীট রিজার্ভেশানের সুযোগ
৭১. ২.২৪ লোদি গার্ডেনসে ত্রিদিব আর সুলেখা
৭২. ২.২৫ পত্রিকার নাম নিয়ে আলাপ-আলোচনা
৭৩. ২.২৬ নোয়াখালিতে বসিরের বাড়ি
৭৪. ২.২৭ থার্ড ইয়ার থেকে ফোর্থ ইয়ারে
৭৫. ২.২৮ কবি জসিমউদ্দিনের বাড়িতে
৭৬. ২.২৯ অতীনদের স্টাডি সার্কল
৭৭. ২.৩০ আজকালকার যুদ্ধে
৭৮. ২.৩১ রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
৭৯. ২.৩২ কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস
৮০. ২.৩৩ টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে
৮১. ২.৩৫ নোয়াখালিতে সিরাজুল
৮২. ২.৩৪ মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাড়ি
৮৩. ২.৩৬ স্টাডি সার্কল থেকে
৮৪. ২.৩৭ তিনতলার এই ঘরখানি
৮৫. ২.৩৮ আলপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
৮৬. ২.৩৯ কয়েকদিনের জ্বরেই একেবারে কাবু
৮৭. ২.৪০ একটা ভিড়ের বাসে চেপে
৮৮. ২.৪১ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ এলাকা ছাড়িয়ে
৮৯. ২.৪২ মামুনের মেজাজ খারাপ
৯০. ২.৪৩ তুতুল একা একা
৯১. ২.৪৪ ঝোঁকের মাথায় প্রতাপ
৯২. ২.৪৫ সন্ধ্যারতির সময় ভক্ত ও দর্শক
৯৩. ২.৪৬ দোতলা থেকে কল্যাণী ডাকছেন
৯৪. ২.৪৭ অ্যালুমিনিয়ামের বাটি
৯৫. ২.৪৮ বড় তেঁতুল গাছ
৯৬. ২.৪৯ স্টাডি সার্কেল শেষ হয়ে যাওয়ার পর
৯৭. ২.৫০ জানলায় পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে
৯৮. ২.৫২ আকাশে জোরে বিদ্যুৎ চমকালে
৯৯. ২.৫১ চায়ের কাপ তুলে একটা চুমুক
১০০. ২.৫৩ দিনের পর দিন কেটে যায়
১০১. ২.৫৪ করোনেশান ব্রীজের কাছে
১০২. ২.৫৫ তিনবার সিটি দিয়ে থেমে গেল ট্রেনটা
১০৩. ২.৫৬ সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে
১০৪. ২.৫৭ তুতুলের খুব অস্বস্তি হয়
১০৫. ২.৫৮ বছরের প্রথম দিনটি
১০৬. ২.৫৯ পুরোনো গাড়িটার বদলে
১০৭. ২.৬০ অকস্মাৎ মামুনকে গ্রেফতার
১০৮. ২.৬২ সারারাত ঘুমোতে পারেনি তুতুল
১০৯. ২.৬১ লণ্ডন শহরে পা দিয়ে
১১০. ২.৬৩ ট্রাম ধর্মঘট মিটলো
১১১. ২.৬৪ ট্রেন সাড়ে চার ঘণ্টা লেট
১১২. ২.৬৫ শহরের সমস্ত লোক
১১৩. ২.৬৬ সিঁড়ির মুখে ল্যান্ডলেডি
১১৪. ২.৬৭ তুতুল যে সার্জারিতে কাজ করে
১১৫. ২.৬৮ পমপম একটা রেডিও রেখে গেছে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন