আমাজনের জঙ্গলে – ৪

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

ছ-দিন বা হয়তো সাতদিন ধরে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছি, যদি কোথাও কাকার দেখা পাই ৷ হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে যাই, যেদিকেই যাই, যেদিকেই চাই, শুধু বন আর বন ৷ সামনে পিছনে ডাইনে বাঁয়ে হাজার হাজার বছরের প্রাচীন অরণ্য ৷

যেভাবেই হোক এক-একটা দিন শেষ হয়, আমিও বোটচালকের দেওয়া হরীতকীর মতো ফল একটা করে ফেলে দিই ৷ মনে মনে ঠিক করেছিলাম এভাবেই আমি দিনের হিসেব রাখব ৷ সব ফল শেষ, কটা দিয়েছিল এখন আর মনে নেই, হয়তো ছ-সাতটা ৷ আটটাও হতে পারে ৷ তাহলে আটদিন ধরে এই জঙ্গলে!

শরীর দুর্বল, চেহারা কীরকম হয়েছে জানি না ৷ শুধু বিরাট বিরাট গাছ, গাছের পাতা, গাছের গুঁড়ি, শেকড় ঝুরি, পাখি প্রজাপতি কীট পতঙ্গ, লতা-পাতা ফুলের ঝাঁঝালো গন্ধ, বিরাট বিরাট মাকড়শার জাল—এইরকম কত কিছুর মধ্যে দিয়ে অন্ধলোকের মতো এগিয়ে চলেছি ৷ মনে ক্ষীণ আশা হঠাৎ যদি কাকাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়!

সামনে ডাইনে বাঁয়ে যেদিকে পারি, যতক্ষণ পারি এগোই ৷ যখন আর পারি না, গাছতলায় শুয়ে পড়ি ৷ একসময় ঘুমিয়েও পড়ি ৷

একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি একটা ছোট ছেলে আমার সামনেই মাটিতে উবু হয়ে বসে আমার দিকে চেয়ে আছে ৷

আমি ধড়মড় করে উঠে বসলাম ৷ হঠাৎ এখানে একটা ছেলেকে দেখে যত না ভয় পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি অবাক হয়ে গেছি ৷

ছেলেটির গায়ে কোনও জামা-প্যান্ট নেই, শুধু কোমরে ঘুনসির মতো কাঠের ছোট্ট ছোট্ট মূর্তির একটা মালা, মালার সঙ্গে আটকানো গাছের টাটকা পাতার তৈরি একটা ঢাকনা নাভির কাছ থেকে ঝুলছে ৷ এই অদ্ভুত পোশাকের চেয়েও বেশি অবাক হলাম তার অদ্ভুত শান্ত চোখ দেখে ৷ বয়সে আমার থেকে অনেক ছোটই মনে হয়, আট-দশ বছর হবে হয়তো ৷

চোখে চোখ রেখে চুপ করে বসে আছি, মনে মনে কথা বলে চলেছি, মুখে কিছুই বলতে পারছি না, কেননা এটা বুঝেছি যে ইংরিজি এখানে এক অক্ষরও চলবে না ৷

ছেলেটা এবার ধীরে ধীরে মাটির ওপর থেকে বহু দিনের জমে থাকা শুকনো পচা পাতা সরিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করল ৷ আমি দেখলাম পাতার জঞ্জাল ঠেলে সরিয়ে দেবার সময় সরু মোটা নানা ধরনের ছোট ছোট কাঠি সে আলাদা করে এক জায়গায় গুছিয়ে রাখছে ৷ গাছের বড় বড় ডালপালা থেকে যেসব ছোট ছোট সরু আঁকা বাঁকা ডাল বেরোয়, ছেলেটার নজর সেগুলির দিকেই ৷ কোমরে ঝোলানো একটা থলে থেকেও সে এরকম কিছু কাঠকুটো বের করল ৷ তারপর নানা আকারের বেশ কয়েকটা কাঠি পাশাপাশি ওপরে নিচে সাজিয়ে ছেলেটা আমার দিকে তাকাল, চোখ দেখে মনে হল আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছে ৷

আমি তো এই কাঠি সাজানোর মানে কিছুই বুঝতে পারছি না ৷ কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর হঠাৎ মনে হল এর মধ্যে একটা সূর্যোদয়ের ছবি আছে নাকি?

ছেলেটা আমার চোখ দেখে কী বুঝল জানি না, একটা হাতখানেক লম্বা কাঠি নরম স্যাঁতসেঁতে মাটিতে পুঁতে তার গায়ে অনেকটা পুঁইমিটুলির মতো কিন্তু তার চেয়ে বড় একটা দানার রস টিপে তা দিয়ে ন’টা দাগ কেটে আবার আমার চোখে শান্তভাবে চোখ রাখল, মনে হয় আমার কাছে কোনও প্রশ্নের উত্তর আশা করছে ৷

আমার এমনিতেই মাথা ঘুরছে, শরীর একেবারে ভেঙে গেছে, দুপায়ে, হাতে, ঘাড়ে পোকার কামড়ে, লতা-পাতার বিষে ঘা হয়ে গেছে, এই অবস্থায়ও সাজানো কাঠিগুলো আর দাগানো বড় কাঠিটার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে মাথায় যেন বিদু্যৎ খেলে গেল! ন’বার সূর্যোদয়ের কথা বলছে ছেলেটি ৷ ন’বার কেন? কেন সূর্যোদয়?

হঠাৎ মনে হল এই বনে আমি ন’বার সূর্য-ওঠা দেখেছি কি না তা-ই জানতে চাইছে না তো? আমার মন বলছে, নিশ্চয়ই তাই ৷ কতদিন এই জঙ্গলে আছি সেকথাই জিজ্ঞেস করছে ৷ আমি তক্ষুনি একটা শক্ত কাঠি দিয়ে নরম ভিজে মাটিতে একটা সূর্যোদয়ের ছবি এঁকে তার পাশেই সতেরোটি দাগ কেটে দিলাম ৷ ঠিক সতেরো দিনই জঙ্গলে ঘুরছি কিনা জানি না, দুয়েকদিন কম-বেশিও হতে পারে, কিন্তু সেকথা বোঝানো আরও শক্ত, তাই সতেরো দিনই আঁকলাম ৷

স্কুলে ড্রয়িং-এ আমি বরাবরই ফার্স্ট হয়েছি, তাছাড়া বসে-আঁকো প্রতিযোগিতায় অনেকবারই ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছি, এখনও ভূগোল বিজ্ঞানের খাতায় স্যারেরা আলাদা করে আমার ড্রয়িংয়ের �প্রশংসা করেন ৷ ছেলেটার শান্ত চোখের আনন্দ দেখেও বুঝলাম এখানেও আমার ছবি আঁকা বৃথা হয়নি ৷ পুরো ছবিটা দেখে সে তার ন’দাগওলা কাঠির পাশে আরেকটা কাঠি পুঁতে তাতে একইভাবে আটটা দাগ এঁকে দিল ৷ তারপরই আমাজনের উলি মাঙ্কির মতো দু-তিনটে লম্বা লাফে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল ৷

ফিরেও এল প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে ৷ হাতে তিনরকম গাছের পাতা ৷ তার মধ্যে গাঢ় হলদে আর বেগুনি রঙের পাতাগুলোর আকারও বেশ অদ্ভুত, প্রত্যেকটা পাতা নলের মতো পাকানো ৷ দেখতে অনেকটা হাতির ওলটানো শুঁড়ের মতো ৷ দুটো পাতার চেহারাই এক, শুধু রংটাই আলাদা ৷ সবুজ রঙের পাতাগুলো অনেকটা মটরশুঁটির পাতার মতো, তবে কিছুটা পুরু, আকারেও একটু বড় ৷

ছেলেটা বেগুনি রঙের পাতা আমার নাকের কাছে ধরতেই একটা তীব্র মধুর ও কষা গন্ধ পেলাম ৷ তারপর চিবোবার ভঙ্গি করে ওই পাতাগুলো আমাকে খেয়ে নিতে বলল ৷ আমি যতই চিবোচ্ছি ততই যেন ঝাঁঝালো মিষ্টি গন্ধটা আমার নাকমুখ দিয়ে আমার ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে, আমার শরীরটাও খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে উঠছে টের পাচ্ছি ৷

ছেলেটা এবার হলদে পাতাগুলো তার হাতের তালুতে ডলে সেই রস আমার ফোঁড়ায়, ঘায়ে লাগিয়ে দিল ৷ তার ইশারায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়তেই সে আমার কপালে, বুকে, দুই কনুইয়ের ভেতর দিকে, দুহাতের নাড়িতে ও দুই হাঁটুতে একটা করে গোল ও মোটা সেই সবুজ পাতা লাগিয়ে দিল ৷ এবার তার নির্দেশ মতো উঠে দাঁড়ালাম ৷ আশ্চর্যের কথা, একটা পাতাও গা থেকে খুলে পড়ল না ৷ এই অচেনা অদ্ভুত ছেলেটা যে আমার পরম উপকারী বন্ধু সে বিষয়ে আমার আর সন্দেহ রইল না ৷ ঘোর বিপদে এরকম বন্ধু পেয়ে অনেক দিন পর আমার মন আনন্দে ভরে গেল ৷ আনন্দ বলে যে কোথাও কিছু আছে তা-ই আমি ভুলে গিয়েছিলাম ৷

এত উপকার পেয়ে চেপে রাখা খিদেটা যেন বহুগুণ বেড়ে গেল ৷ কাঠি দিয়ে খচ খচ খচ করে মাটিতে ছবি এঁকে বোঝালাম যে আমার খুব খিদে পেয়েছে ৷

ছেলেটা দেখছি যে কোনও জিনিস চটপট বুঝে ফেলে ৷ ছবিটা এক মুহূর্ত দেখে, সে আমার ব্যাগটা তুলে নিয়ে আমাকে তার পেছন পেছন আসবার ইঙ্গিত করে ঠিক একটা কাঠবিড়ালির মতো জঙ্গলের মধ্যে এগিয়ে চলল ৷ আমি হেঁটে তাকে ধরতে পারছি না, পাছে আমার চোখের বাইরে চলে যায় তাই মাঝেমাঝেই আমাকে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে দৌড়াতে হচ্ছে ৷

এভাবে কতক্ষণ হাঁটছি কিছুই বুঝতে পারছি না, শরীরে আর আমার ক্লান্তি নেই, ফোঁড়া-ঘায়ের জ্বালা-ব্যথাও মিলিয়ে গেছে ৷ আরেকটা জিনিস লক্ষ করলাম, আমার গায়ে সাঁটা মোটা মোটা সবুজ পাতাগুলো শুকিয়ে পাতলা হয়ে একে একে ঝরে পড়ছে ৷

আধঘণ্টা বা হয়তো এক ঘণ্টা পর ছেলেটা এক জায়গায় খুব বড় বড় গাছের জটলার মধ্যে ঢুকে হাতের ইশারায় আমাকেও সেখানে ডেকে নিল ৷ বিরাট বিরাট গাছের কাণ্ডে বার বার চোখ আটকে গেলেও ভেতরে দেখলাম অনেকটা খোলা জায়গা ৷ এ যেন আমাদের বাংলার গ্রামের নিকানো উঠোন ৷ তফাৎ শুধু, আমাদের দেশের উঠোনে এরকম বড় বড় গাছ থাকে না, থাকলেও উঠোনের শেষে বা এক ধারে দুয়েকটা গাছ থাকতে পারে, এখানে উঠোনের মধ্যেই মস্ত মস্ত গাছ সোজা আকাশে উঠে গেছে ৷ উঠোনটি একেবারে পরিষ্কার তকতকে, জঙ্গলের অন্যান্য জায়গার মতো ভিজে স্যাঁতসেঁতে নয়, কোথাও একটা ঝরা পচা পাতাও চোখে পড়ল না ৷

এক বাক্স প্যাস্টেল বা অন্তত একটুকরো কাঠ কয়লা পেলে এই উঠোন আমি ছবি এঁকে ভরিয়ে দিতাম ৷ আমার বিপদের কথা, দুঃখের কথা সব ছবি এঁকে এঁকে এই শান্ত চোখের অদ্ভুত পোশাকের পরম উপকারী বন্ধুটিকে বলতে পারতাম ৷ মায়ের আই ব্রাও পেনসিল দিয়ে আমি খসখসে পিচবোর্ডের ওপর কত ছবি এঁকেছি, আর এ তো শুকনো নিকোনো মাটি!

মায়ের কথা মনে পড়ে আমার বুকের ভেতরটা ব্যথায় যেন কঁকিয়ে উঠল ৷ বাবাও নিশ্চয়ই এত দিনে আমার কোনও খবর না পেয়ে খুব দুশ্চিন্তা করছেন!

আমার বন্ধু গাছের মস্ত মস্ত গুঁড়ির আড়ালে কোথাও গিয়েছিল, এখন হাতির কানের মতো গর্তওলা পুরু একটা পাতায় নানারকম খাবার এনে আমার সামনে নামিয়ে রাখল ৷

আমাদের দেশে গ্রামের দিকে মানী লোকেরা যেমন উত্তরীয় বা পাট করা চাদর ঘাড়ের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে এনে তার দুটি প্রান্ত বুকের দুদিকে ঝুলিয়ে রাখে, ছেলেটারও তেমনই ঘাড়ের ওপর দিয়ে শক্ত একটা লতার দু-মুখে বাঁধা বাবুই পাখির বাসার মতো দুটো পাত্র ঝুলছিল ৷ পাত্র দুটো দেখতে অনেকটা বাংলা দেশের নলেন গুড়ের কলসির মতো ৷ দুটো পাত্রই সে লতার বাঁধন থেকে খুলে আমার সামনে নিকনো মাটিতে রাখল ৷ আঙুল দিয়ে সে যে পাত্রটা দেখাল, আমি দেখলাম তার ভেতরে জল ৷ সেই পাত্রটা থেকে জল নিয়ে চোখেমুখে ভালো করে ছিটিয়ে দিতে ভারি আরাম বোধ হল ৷ তারপর সেই জলেই হাত ধুয়ে নানা স্বাদের ফল মূল গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম ৷

এবার সে অন্য পাত্রটার দিকে ইঙ্গিত করল ৷ হাতে নিয়ে দেখি দুধ ৷ চুমুক দিয়ে চমকে উঠলাম, এ তো কোনও ফলের রস, দেখতে একদম দুধের মতো, টক-টক স্বাদ ৷ ছেলেটা দেখলাম আমাকে পুরোটা খেয়ে নেবার জন্য বলছে ৷ আমাদের এইসব ছোটখাটো কথা চলছে আকারে ইঙ্গিতে, চোখ মুখের ভাব ভঙ্গিতে, অনেকগুলো ইশারা এখন অনায়াসেই বুঝতে পারছি ৷ ফলের রসটা চুমুক দিতে দিতে ছেলেটির ইশারা ইঙ্গিতে যেমন বুঝলাম, এটা এদের অতি প্রিয় ও প্রয়োজনীয় ফল ৷ হয়তো এখানকার গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়ায় খুবই উপকারী ৷

ছেলেটা এবার গন্ধকের মতো দেখতে এক টুকরো নরম পাথর বা রঙের ঢেলা আমার হাতে দিয়ে তার চোখ দুটি শুধু আমার চোখের ওপর রাখল, আমিও যেন স্পষ্ট শুনলাম, সে বলছে, কী করে এখানে এলে, কেনই বা এসেছ, কোথা থেকে এসেছ, সব কথা এবার বলো তো!

ছেলেটা তখনও তার সেই শান্ত চোখে আমার দিকে চেয়ে আছে দেখে আমার কেমন যেন আনন্দ হল, আমি তার চোখে চোখ রেখেই হেসে ফেললাম ৷ আমাজনে এসে থেকে এই প্রথম আমি হাসলাম ৷

মাটিতে রঙের ঢেলা দিয়ে ছবির পর ছবি এঁকে বন্ধুকে আমি আমার সব কথা জানালাম ৷ আমাদের পশ্চিমবাংলার ছবিটা খুবই ছোট করে আঁকতে হয়েছে বলে সেখানে শুধু কলাগাছ পাটগাছ শিউলি ফুল আর আমগাছ এঁকেছি ৷ বন্ধু সবগুলোতেই চোখ বুলিয়ে কলাগাছ আর আমগাছটা দেখেই সকালের মতো নানা আকারের কাঠি দিয়ে তিনটে চারাগাছ সমেত একটা কলাগাছ আর একটা আমগাছ বানিয়ে ফেলল ৷ তার চোখ-মুখ দেখে বুঝলাম, কলাগাছ আর আমগাছ এরা চেনে, দুটো গাছ এখানেও হয় ৷ আমাদের দেশ থেকে ব্রাজিল পর্যন্ত দূরত্ব বোঝাতে আকাশের অনেক নিচে ছোট্ট ছোট্ট কত যে নদনদী সমুদ্র পাহাড় বনজঙ্গল আঁকতে হল তা লিখে বোঝাতে হলেও অনেক সময় লেগে যেত ৷ এভাবে বায়ুপথে হাজার হাজার মাইল পেরিয়ে রিও ডি জেনেরোর আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকা আর সমুদ্রতীর, আর পাহাড় আঁকলাম ৷ এরপর মানাউস, সেখান থেকে বোটে নিগ্রো, সোলিময়েস, আমাজন নদী, অন্যান্য উপনদী, নদীর মধ্যে অগুনতি দ্বীপ, কাকা, গঞ্জালো, কাকার ব্যাগ নিয়ে হনুমানের পালিয়ে যাওয়া, তাকে ধাওয়া করে কাকাদের জঙ্গলে ঢোকা, বোটচালকের ফিরে যাওয়া, আমার জঙ্গল জীবনের দুঃখ কষ্ট সবই যতটা সম্ভব ছবি এঁকে সংক্ষেপে বোঝালাম ৷ তারপর তাকে পেয়ে আমার কত আনন্দ হয়েছে তাও আঁকলাম ৷

দুজনে কেউ কারও ভাষা জানি না সেকথা যেন ভুলেই গেছি ৷ হলুদ ঢেলা আর কাঠির টুকরো টাকরা দিয়ে ছবি এঁকে আর চোখ মুখের ভাব দিয়ে আমরা কথা চালাচ্ছি ৷ এভাবেই আমার একটা ভুল ধারণা ভেঙে গেল ৷ আমি ভেবেছিলাম আমার বন্ধু বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট, এখন তার কাছে শুনে বুঝলাম সে আমার একেবারেই সমবয়সী ৷ মাথায় বেঁটে আর মুখের চেহারা ছোটদের মতো বলেই আমার ভুল হয়েছিল ৷ আসলে এদের দেশে বা এদের জগতে ৩৬৫ দিনে বছর হয় না ৷ আমার বন্ধু নানা রঙের পাথর দিয়ে আর মুখে শব্দের ধ্বনি শুনিয়ে আমাকে বোঝাল তারা এক সূর্যোদয় থেকে আর একটা সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়টাকে বলে ইমানু আর বছরকে বলে ইদিমানু ৷ তাদের ন’দিনে এক দিমানু, নয় দিমানুতে এক বিদিমানু, নয় বিদিমানুতে এক ইদিমানু ৷ ৯ X ৯ X ৯, তার মানে ৭২৯ দিনে তাদের একবছর ৷ আমাদের প্রায় দুবছরের সমান ৷ আমার বন্ধু বয়স বলল সাত বছর, তার মানে আমাদের হিসেবে চোদ্দ, আমার সমবয়সী ৷ আশ্চর্য সব রঙিন পাথর দিয়ে তারা তাদের ইমানু, দিমানু, বিদিমানু, ইদিমানুর হিসেব রাখে ৷ ইমানু গোনে কচুরিপানা ফুলের মতো হালকা বেগুনি রঙের পাথর দিয়ে ৷ এরকম ন’টি পাথরে এক দিমানু, জোনাকির আলোর যে রং সেই রঙের পাথরে গোনা হয় এক বিদিমানু, আর বেদানার দানার মতো কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি গাঢ় রঙের ন’টি পাথরে গোনা হয় ইদিমানু ৷

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন