পদ্মাবতী – প্রথমাঙ্ক

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

পদ্মাবতী নাটক

প্রথমাঙ্ক

বিন্ধ‍্যগিরি;—দেব-উপবন।

(ধনুর্ব্বাণ-হস্তে রাজা ইন্দ্রনীলের বেগে প্রবেশ।)

 রাজা। (চতুর্দ্দিক্ অবলোকন করিয়া স্বগত) হরিণটা দেখ্তে দেখ্তে কোন্ দিকে গেল হে? কি আশ্চর্য্য! আমি কি নিদ্রায় আবৃত হয়ে স্বপ্ন দেখ্ছি? আর তাই বা কেমন করে বলি। এই ত ভগবান্ বিন্ধ্যাচল অচল হয়ে আমার সম্মুখে রয়েছেন। (চিন্তা করিয়া) এই পর্ব্বতময় প্রদেশে রথের গতির রোধ হয় বল‍্যে, আমি পদব্রজে হরিণটার অনুসরণ ক্লেশ স্বীকার কর‍্যে অবশেষে কি আমার এই ফল লাভ হলো যে আমি একলা একটা নির্জ্জন বনে এসে পড়লেম? মরুভূমিতে মরীচিকা বারিরূপে দর্শন দেয়; তা এ স্থলে কি সে মায়ামৃগ হয়ে আমাকে এত বৃথা দুঃখ দিলে! সে যা হৌক, এখন এখানে কিঞ্চিৎকাল বিশ্রাম কর‍্যে এ ক্লান্তি দূর করা আবশ্যক। (পরিক্রমণ করিয়া) আহা! স্থানটি কি রমণীয়! বোধ করি এ কোন যক্ষ কিম্বা গন্ধর্ব্বের উপবন হবে। প্রকৃতি, মানব জাতির লোচনানন্দের নিমিত্তে, এমন অপরূপ রূপ কোথাও ধারণ করেন না। আমি এই উৎসের নিকটে শিলাতলে বসি। এ যেন কলকল রবে আমাকে আহ্বান কচ্যে। (উপবেশন করিয়া সচকিতে) এ কি? এ উদ্যান যে সহসা অপূর্ব্ব সুগন্ধে পরিপূর্ণ হতে লাগলো? (আকাশে কোমল বাদ‍্য) আহা! কি মধুর ধ্বনি। কি—? (সহসা নিদ্রাবৃত হইয়া শিলাতলে পতন।)

(শচী এবং রতির প্রবেশ।)

 শচী। সখি, সুরপতির কথা আর কেন জিজ্ঞাসা কর। তিনি দুষ্ট দৈত্যবংশ কিসে সমূলে ধ্বংস হবে এই ভাবনায় সদা সর্ব্বদাই ব্যস্ত থাকেন। তাঁর কি আর সুখভোগে মন আছে? রতিদেবি, তুমি কি ভাগ্যবতী। দেখ, তোমার মন্মথ তিলার্দ্ধের জন্মেও তোমার কাছ ছাড়া হন না। আহা! যেমন পারিজাত পুষ্পের আলিঙ্গন পাশে সৌরভমধু চিরকাল বাঁধা থাকে, তোমার মদনও তেমনি তোমার বশীভূত।

 রতি। সখি, তা সত্য বটে। বিরহ-অনল যে কাকে বলে তা আমি প্রায় বিস্তৃত হয়েছি। (উভয়ের পরিক্রণ) কি আশ্চর্য‍্য! শচীদেবি, ঐ দেখ তোমার মালতী মলয়মারুতের আগমনে যেন বিরক্ত হয়ে তাকে নিকটে আস্‌তে ইঙ্গিতে নিষেধ কচ‍্যে।

 শচী। কর্‌বে না কেন? দেখ, ইনি সমস্ত দিন ঐ নির্ম্মল সরোবরে নলিনীর সঙ্গে কেলি করে কেবল এই এখানে আস্চেন। এতে কি মালতীর অভিমান হয় না? আর আপনার গায়ের গন্ধেই ইনি আপনি ধরা পড়ছেন।

(মুরজা দেবীর প্রবেশ।)

কি গো, সখি মুরজা যে? এস, এস। আজ তোমার এত বিরস বদন কেন?

 মুর। (দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া) সখি, আমার দুঃখের কথা আর কাকে বল্‌বো?

 রতি। কেন, কেন? কি হয়েছে?

 মুর। প্রায় পনের বৎসর হলো পার্ব্বতী আমার কন‍্যা বিজয়াকে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ কত‍্যে অভিশাপ দেন; তা সেই অবধি তার আর কোন অনুসন্ধান পাই নাই।

 শচী। সে কি? ভগবতী পৃথিবী না তাকে স্বগর্ভে ধারণ কত্যে স্বীকার পেয়েছিলেন?

 মুর। হাঁ—পেয়েছিলেন আর ধরেও ছিলেন বটে। কিন্তু তার জন্ম হল‍্যে তাকে যে লালন পালনের জন্যে কার হাতে দিয়েছেন এ কথাটি তিনি কোনমতেই আমাকে বল্তে চান না। আমি আজ তাঁর পায়ে ধরে যে কত কেঁদেছি, তা আর কি বল্‌বো?

 রতি। তা ভগবতী তোমাকে কি বল্‌লেন?

 মুর। তিনি বললেন—“বৎসে, সময়ে তুমি আপনিই সকল জান্‌তে পারবে। এখন তুমি রোদন সম্বরণ কর‍্যে অলকায় যাও। তোমার বিজয়া পরম সুখে আছে।”

 শচী। তবে, সখি, তোমার এ বিষয়ে চঞ্চল হওয়া কোনমতেই উচিত হয় না। আর বিবেচনা করে দেখ, পৃথিবীতে মানুষের জীবনলীলা জলবিম্বের মতন অতি শীঘ্রই শেষ হয়।

 মুর। সখি, বিজয়ার বিরহে আমার মন থেকে থেকে যেন কেঁদে উঠে! হায়! জগদীশ্বর আমাদের অমর করেও দুঃখের অধীন কল‍্যেন্।

 শচী। সখি, বিধাতার এ বিপুল সৃষ্টিতে এমন কোন্ ফুল আছে যে তাতে কীট প্রবেশ কত‍্যে না পারে?

(দূরে নারদের প্রবেশ।)

 নার। (স্বগত) আমি মহর্ষি পুলস্তের আশ্রমে শূন্যপথ দিয়ে গমন কর্‌তেছিলেম। অকস্মাৎ এই দেব-উপবনে এই তিনটি দেবনারীকে দেখে ইচ্ছা হলো যে যেমন কর‍্যে পারি এদের মধ্যে কোন কলহ উপস্থিত করাই—এই জন্যেই আমি এই পর্ব্বত-সানুতে অবতীর্ণ হয়েছি। তা আমার এ মনস্কামনাটি কি সুযোগে সুসিদ্ধ করি? (চিন্তা করিয়া) হাঁ, হয়েছে। এই যে সুবর্ণ-পদ্মটি আমি মানস সরোবর থেকে অবচয়ন করে এনেছি, এর দ্বারাই আমার কার্য্য সফল হবে। (অগ্রসর হইয়া) আপনাদের কল্যাণ হউক!

 সকলে। দেবর্ষি, আমরা সকলে আপনাকে অভিবাদন করি। (প্রণাম।)

 শচী। (স্বগত) এ হতভাগা ত সর্ব্বত্রেই বিবাদের মূল, তা এ আবার কোত্থেকে এখানে এসে উপস্থিত হলো?—ও মা! আমি এ কি কচ্চি? ও যে অন্তর্যামী। ও আমার এ সকল মনের কথা টের পেলে কি আর রক্ষা আছে। (প্রকাশে) ভগবন্, আজ আমাদের কি শুভ দিন! আমরা আপনার শ্রীচরণ দর্শন করে চরিতার্থ হলেম। তবে আপনার কোথায় গমন হচ‍্যে?

 নার। (স্বগত) এ দুষ্টা স্ত্রীটার কি কিছুমাত্র লজ্জা নাই। এ কি? এর যে উদরে বিষ, মুখে মধু। এ যে মাকালফল। বর্ণ দেখ্লে চক্ষুঃ শীতল হয়, কিন্তু ভিতরে—ভস্ম। তা আমার যে পর্য্যন্ত সাধ্য থাকে একে যথোচিত দণ্ড না দিয়ে এ স্থান হত্যে কোনমতেই প্রস্থান করা হবে না। (প্রকাশে) আপনাদের চন্দ্রানন দর্শন করায় আমি পরম সুখী হলেম। আমার কথা আর কেন জিজ্ঞাসা করেন? আমি এক ঘোরতর বিপদে পড়ে এই ত্রিভুবন পর্য‍্যটন করে বেড়াচ্চি।

 রতি। বলেন কি?

 নার। আর বলবো কি? কয়েক দিন হলো আমি কৈলাসপুরীতে হরগৌরী দর্শন কর‍্যে আপন আশ্রমে প্রত্যাগমন কচ্ছিলেম, এমন সময়ে দৈবমায়ায় তৃষ্ণাতুর হয়ে মানস সরোবরের নিকট উপস্থিত হলেম—

 শচী। তার পর, মহাশয়?

 নার। সরোবর-ভীরে উপস্থিত হয়ে দেখ্লেম যে তার সলিলে একটি কনকপদ্ম ফুটে রয়েছে।

 রতি। দেবর্ষি, তার পর কি হলো?

 নার। আমি পদ্মটির সৌন্দর্য্য দেখে তৃষ্ণা-পীড়া বিস্তৃত হয়ে অতি যত্ন করে তুললেম।

 সকলে। তার পর। তার পর?

 নার। তৎক্ষণাৎ আকাশমার্গে এই দৈববাণী হলো—“হে নারদ, এ ভগবতী পার্ব্বতীর পদ্ম; একে অবচয়ন করা তোমার উচিত কর্ম্ম হয় নাই । এক্ষণে এ ত্রিভুবন মধ্যে যে নারী সর্ব্বাপেক্ষা পরমসুন্দরী তাকে এ পুষ্প না দিলে তুমি গিরিজার ক্রোধানলে দগ্ধ হবে।” হায়! এ কি সামান্য বিপদ্!—  শচী। (সহাস্য বদনে) ভগবন্, আপনি এ বিষয়ে আর উদ্বিগ্ন হবেন না। আপনি এ পদ্মটি আমাকেই প্রদান করুন না কেন?

 মুর। কেন, তোমাকে প্রদান কর্‌বেন কেন? দেবর্ষি, আপনি এ পদ্মটি আমাকে দিউন্।

 রতি। মুনিবর, আপনিই বিবেচনা করুন। এ দেবনির্ম্মিত কনকপদ্মের উপযুক্ত পাত্রী আমাপেক্ষা ত্রিভুবনে আর কে আছে?

 নার। (স্বগত) এই ত আমার মনস্কামনা সিদ্ধ হলো। তা এ ঝড় আরম্ভের আগেই আমার এখান থেকে প্রস্থান করা শ্রেয়ঃ। (প্রকাশে) আপনাদের এ বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করা উচিত হয় না। দেখুন, আমি বৃদ্ধ, বনচারী তপস্বী—আপনারা সকলেই দেবনারী। আপনাদের মধ্যে যে কে সর্ব্বাপেক্ষা সুন্দরী, এ কথার নির্ঘণ্ট করা আমার সাধ্য নয়। অতএব আমি এই কনকপদ্ম এই ভগবান্ বিন্ধ্যাচলের শৃঙ্গের উপর রাখলেম, আপনাদের মধ্যে যিনি পরমসুন্দরী, তিনি ব্যতীত আর কেউ এ পুষ্প স্পর্শ করবা মাত্রেই তাঁকে পাষাণ-মূর্ত্তি ধর‍্যে এই উপবনে সহস্র বৎসর থাক্‌তে হবে। আমি এক্ষণে বিদায় হলেম।[ প্রস্থান।

 শচী। (ঈষৎ কোপে) তোমাদের মতন বেহায়া স্ত্রী কি আর আছে?

 উভয়ে । কেন? বেহায়া আবার কিসে দেখ্লে?

 শচী। কেন, তা আবার জিজ্ঞাসা কর? তোমাদের অহঙ্কার দেখ্লে ভয় হয়! আই মা! কি লজ্জার কথা! তোমাদের কি আমার কাছে এত দর্প করা সাজে?

 উভয়ে। কেন, কেন? আমরা কি দর্প করেছি 1

 শচী। তোমরা কি জান না যে আমি ইন্দ্রের ইন্দ্রাণী?

 মুর। ইঃ, তা হলেই বা। তুমি কি জান না যে আমি যক্ষেশ্বরের প্রণয়িনী মুরজা।

 রতি। তোমাদের কথা শুনলে হাসি পায়। তোমরা কি ভুল্‌লে যে, যে অনঙ্গদেব সমস্ত জগতের মন: মোহন করেন, আমি তাঁর মনোমোহিনী রতি ।

 শচী। আঃ, তোমার মন্মথের কথা আর কইও না। হরের কোপানলে দগ্ধ হওয়া অবধি তাঁর আর কি আছে?

 রতি। কেন, কি না আছে? তুমি যদি আমাকে আমার মন্মথের কথা কইতে বারণ কর, তবে তুমিও তোমার ইন্দ্রের নাম আর মুখে এনো না। তোমার প্রতি যে সুরপতির কত অনুরাগ তা সকলেই জানে। তা তোমার প্রতি এত অনুরাগ না থাক্‌লে কি তিনি আর সহস্রলোচন হতেন?

 শচী। (সরোষে) তোর এত বড় যোগ্যতা? তুই সুরেন্দ্রের নিন্দা করিস! তোর মুখ দেখ্লে পাপ হয়।

(অদৃশ্যভাবে নারদের পুনঃপ্রবেশ।)

 নারদ। (স্বগত) আহা! কি কন্দলই বাধিয়েছি। ইচ্ছা করে যে বীণাধ্বনি কর‍্যে একবার আহ্লাদে হাত তুলে নৃত্য করি। (চিন্তা করিয়া) যা হউক, এ দুর্জ্জয় কোপাগ্নি এখন নির্ব্বাণ করা উচিত।

[ প্রস্থান।

 মুর। আঃ, মিছে ঝগড়া কর কেন?

 আকাশে। হে দেবনারীগণ! তোমরা কেন এ বৃথা বিবাদ কর‍্যে দেবসমাজে নিন্দনীয়া হবে? দেখ, ঐ উৎসের সমীপে শিলাতলে বিদর্ভনগরের রাজা ইন্দ্রনীল রায় সুপ্তভাবে আছেন। তোমরা এ বিষয়ে এঁকে মধ্যস্থ মান ।

 মুর। ঐ শুন্লে ত? আর দ্বন্দ্বে কাজ কি? এস, রাজা ইন্দ্রনীল রায়কে জাগান যাক্গে।

 শচী। রাজা ইন্দ্রনীল আমার মায়ায় নিদ্রাবৃত হয়ে রয়েছে। এস, আমরা ঐ শিখরের কাছে দাঁড়ায়ে মহারাজকে মায়াজাল হতে মুক্ত করি।

[ সকলের প্রস্থান, আকাশে কোমল বাদ‍্য

 রাজা। (গাত্রোত্থান করিয়া স্বগত) আহা! কি চমৎকার স্বপ্নটাই দেখতেছিলেম। (দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া) হে নিদ্রাদেবি, আমি কি অপরাধ করেছি যে তুমি এ সময়ে আমার প্রতি এত প্রতিকূল হল‍্যে? হায়। আমি সশরীরে স্বর্গভোগ কত্যে আরম্ভ করবামাত্রেই তুমি আমাকে আবার এ দুর্জ্জয় সংসারজালে টেনে এনে ফেল্‌লে? জননি, এ কি মায়ের ধর্ম্ম!—আহা! কি চমৎকার স্বপ্নটাই দেখ্ছিলেম। বোধ হলো যেন আমি দেবসভায় বসে অপ্সরীগণের মনোহর সঙ্গীত শ্রবণ কর্‌তেছিলাম, আর চতুর্দ্দিক্ থেকে যে কত সৌরভসুধা বৃষ্টি হতেছিল, তা বর্ণনা করা মনুষ্যের অসাধ্য কর্ম্ম। (সচকিতে) এ আবার কি? এঁরা সকল কে?—দেবী কি মানবী!

(শচী, মুরজা এবং রতির পুনঃপ্রবেশ।)

তা এঁদের অনিমেষ চক্ষু আর ছায়াহীন দেহ এঁদের দেবত্ব-সন্দেহ দূর না কল্যেও এঁদের অপরূপ রূপ লাবণ্যে আমার সে সংশয় ভঞ্জন হতো।

নলিনীর আঘ্রান পেলে অন্ধ ব্যক্তিও জান্‌তে পারে যে নলিনীই তার নিকটে ফুটে রয়েছে। এমন অপরূপ রূপ লাবণ্য কি ভূমণ্ডলে সম্ভবে?

 শচী। মহারাজের জয় হউক।

 মুর। মহারাজ দীর্ঘায়ুঃ হউন।

 রতি। মহারাজের সর্ব্বত্র মঙ্গল হউক।

 শচী। হে মহীপতে, আমি ইন্দ্রাণী শচী।

 মুর। মহারাজ, আমি যক্ষরাজপত্নী মুরজা

 রতি। নরেশ্বর, আমি মম্মথপ্রণয়িনী রতি।

 শচী। (জনান্তিকে মুরজা এবং রতির প্রতি) এক জনকে কথা কইতে দাও—এত গোল কর কেন? এমন কল্যে কি কর্ম্ম সিদ্ধ হবে?

 রাজা। (প্রণাম করিয়া) আপনাদের শ্রীচরণ দর্শন করে আমার জন্ম সার্থক হলো। তা আপনারা এ দাসের প্রতি কি আজ্ঞা করেন?

 শচী। মহারাজ, ঐ যে পর্ব্বতশৃঙ্গের উপর কনকপদ্মটি দেখ্তে পাচ্যেন, ঐটি আমাদের তিন জনের মধ্যে আপনি যাকে সর্ব্বাপেক্ষা পরমসুন্দরী বিবেচনা করেন, তাকেই প্রদান করুন ।

 রতি। মহারাজ, শচী দেবী যা বল্‌লেন, আপনি তা ভাল করে বুঝলেন ত?—যে সর্ব্বাপেক্ষা পরমসুন্দরী—

 শচী। আরে এত গোল কর কেন?

 রাজা। (স্বগত) এ কি বিষম বিভ্রাট! এঁরা সকলেই ত দেবনারী দেখ্ছি, তা এঁদের মধ্যে কাকে তুষ্ট কাকেই বা রুষ্ট করবো। (প্রকাশে) আপনারা এ বিষয়ে এ দাসকে মার্জ্জনা করুন।

 শচী। তা কখনই হবে না। আপনি পৃথিবীতে ধর্ম্মঅবতার। আপনাকে অবশ্যই এ বিচার কত‍্যে হবে।

 মুর। এ মীমাংসা আপনি না কল্যে আর কে করবে?

 রতি। তা এতে আপনার ভয় কি? আপনি একবার আমাদের দিকে চেয়ে দেখ্লেই ত হয়।

 রাজা। (স্বগত) কি সর্ব্বনাশ! আজ যে আমি কি কুলগ্নেই যাত্রা করেছিলেম, তা আর কাকে বল্‌বো।

 শচী। নরনাথ, আপনি যে চুপ করে রইলেন? এ বিষয়ে কি আপনার মনে কোন সংশয় হয়। দেখুন, আমি সুরেন্দ্রের মহিষী, আমি ইচ্ছা কল্যে আপনাকে এই মুহূর্ত্তেই সসাগরা পৃথিবীর ইন্দ্রত্বপদে নিযুক্ত কত‍্যে পারি।

 মুর। শচী দেবি, এ, সখি, তোমার বৃথা গর্ব্ব। দেখ, তোমরা প্রবল দৈত্যকুলের ভয়ে অমরাবতীতে দিবা রাত্রি যেন মরে থাক। তা তুমি আবার সসাগরা পৃথিবীর ইন্দ্রত্ব কোত্থেকে দেবে গা? (রাজার প্রতি) হে নরেশ্বর, আপনি বিবেচনা করুন, আমি ধনেশ্বরের ধর্ম্মপত্নী; এ বসুমতী আমারই রত্নাগার, এতে যত অমূল্য রত্নরাজি আছে, আমিই সে সকলের অধিকারিণী।

 রতি। (স্বগত) বাঃ, এঁরা যে দুজনেই দেখ্ছি বিচারকর্ত্তাকে ঘুষ খাওয়াতে উদ্যত হলেন, তবে আমি আর চুপ করে থাকি কেন? (প্রকাশে) মহারাজ, ইন্দ্রত্বপদের যে কি সুখ তা সুরপতিই জানেন। পক্ষিরাজ বাজ সদর্পে উন্নত পর্ব্বতশৃঙ্গে বাস করে বটে; কিন্তু ঝড় আরম্ভ হল্যে সকলের আগে তারই সর্ব্বনাশ হয়। আর ধনের কথা কি বল্‌বো? যে ফণীর মস্তকে মণি জন্মে, সে সর্ব্বদাই বিবরে লুক্‌য়ে থাকে। আর যদি কখন ক্ষুধাতুর হয়ে ঘোরতর অন্ধকার রাত্রেও বাইরে আসে, তবে তার মণির কান্তি দেখে কে তার প্রাণ নষ্ট কত‍্যে চেষ্টা না করে? আরও দেখুন, ধন উপার্জ্জনে যার মন, তার অবশেষে তুত্পোকার দশা ঘটে। এই নির্ব্বোধ কীট অনেক পরিশ্রমে একখানি উত্তম গৃহ নির্ম্মাণ কর‍্যে, তার মধ্যে বদ্ধ হয়ে, ক্ষুধাতৃষ্ণায় প্রাণ হারায়, পরে পট্টবস্ত্র অন‍্য লোকে পরে।

 শচী। আহা! রতি দেবীর কি সূক্ষ্ম বুদ্ধি গা! তবে এ পৃথিবীতে সুখী কে?

 রতি। তা তুমি কেমন করে জানবে? আমার বিবেচনায় মধুকর সর্ব্বাপেক্ষা সুখী। পুষ্পকুলের মধুপান ভিন্ন তার আর কোন কর্ম্মই নাই। তা মহারাজ, এ পৃথিবীতে যত পুষ্পস্বরূপ অঙ্গনা বিকশিতা হয়, তারা সকলেই আমার সেবিকা।

 রাজা। (স্বগত) এখন আমার কি করা কর্ত্তব্য। এ বিপদ্ হত্যে কিসে পরিত্রাণ পাই?

 শচী। হে নরনাথ, আপনার আর এ বিষয়ে বিলম্ব করা উচিত হয় না।

 রাজা। যে আজ্ঞা। (কনকপদ্ম গ্রহণ করিয়া) আপনারা স্বেচ্ছাক্রমে আমাকে এ বিষয়ে মধ্যস্থ মেনেছেন, তা এতে আমার বিবেচনায় যা যথার্থ বোধ হয়, আমি তা কল্যে ত আপনাদের মধ্যে কেউ আমার প্রতি বিরক্ত হবেন না?

 সকলে। তা কেন হবো?

 রাজা। তবে আমি এ কনকপদ্ম রতি দেবীকে প্রদান করি। আমার বিবেচনায় মম্মথমনোমোহিনী রতি দেবীই বামাদলের ঈশ্বরী। (রতিকে পদ্ম প্রদান।)

 শচী। (সরোষে) রে দুষ্ট মানব, তুই কামের বশ হয়ে ধর্ম্ম নষ্ট কর্‌লি? তা তোকে আমি এ নিমিত্তে যথোচিত দণ্ড দিতে কোন মতেই ত্রুটি কর্‌বো না।

[ প্রস্থান।

 মুর। (সরোষে) তুই রাজকুলে জন্মগ্রহণ কর‍্যে, স্ত্রীলোভে চণ্ডালের কর্ম্ম কর্‌লি? তা তুই যে কালক্রমে এর সমুচিত শাস্তি পাবি, তার কোন সংশয় নাই।

[ প্রস্থান।

 রতি। (প্রফুল্ল বদনে) মহারাজ, আপনি এ বিষয়ে কোনমতেই শঙ্কিত হবেন না। আমি আপনাকে রক্ষা কর্‌বো, আর আপনার যথাবিধি পুরস্কার কত্যেও ভুল্‌বো না। আপনি আমার আশীর্ব্বাদে পরম সুখভোগী হবেন। এখন আমি বিদায় হই।

 রাজা। (স্বগত) বিধাতার নির্ব্বন্ধ কে খণ্ডন কত‍্যে পারে? তা পরে আমার অদৃষ্টে যা থাকে তাই হবে; এখন যে ঝঞ্ঝটটা মিটে গেল, এতেই বাঁচলেম। শচী আর মুরজা যে আমাকে ক্রোধানলে ভস্ম কর‍্যে যায় নাই, এই আমার পরম লাভ।

(সারথির প্রবেশ।)

 সার। মহারাজের জয় হউক। দেব, আপনার রথ প্রস্তুত।

 রাজা। সে কি? তুমি এ পর্ব্বত-প্রদেশে রথ কি প্রকারে আন্লে?

 সার। (কৃতাঞ্জলিপুটে) মহারাজ, আপনার প্রসাদে এ দাসের পক্ষে এ অতি সামান্য কর্ম্ম।

 রাজা। তা রথ এখানে এনে ভালই করেছ। আমি এই ভগবান্ বিন্ধ্যাচলের মতন প্রায় অচল হয়ে পড়েছি। আর্য্য মানবক কোথায়?

 সার। আজ্ঞা—তিনি মহারাজের অন্বেষণে ইতস্ততঃ ভ্রমণ করে বেড়াচ‍্যেন।

 নেপথ্যে। ও—হো!—হৈ!—হৈ!

 রাজা। সারথি, তুমি রথের নিকটে আমার অপেক্ষা কর। আমি মানবককে সঙ্গে করে আনি।

 সার! যে আজ্ঞা, মহারাজ।

[ প্রস্থান।

 রাজা। (স্বগত) দেখি মানবক এখানে একলা এসে কি করে। এমন নিভৃত স্থলে ওর মতন ভীরু মনুষ্যকে ভয় দেখান অতি সহজ কর্ম্ম। (পর্ব্বতান্তরালে অবস্থিতি।)

(বিদূষকের প্রবেশ।)

 বিদূ। (স্বগত) দূর কর মেনে! এ কি সামান‍্য যন্ত্রণা। ওরে নিষ্ঠুর পেট, তুই এ অনর্থের মূল। আমি যে এই হাবাতে রাজাটার পাছে পাছে ওর হায়ার মতন ফিরে বেড়াই, সে কেবল তোর জ্বালায় বৈ ত নয়। এই দেখ, এই পাহাড়ের দেশে হেঁটে হেঁটে আমি খোঁড়া হয়ে গেলেম। (ভূতলে উপবেশন করিয়া) হায়, এই যে ব্রাহ্মণের পাদপদ্ম, এর চিহ্ন স্বয়ং পুরুষোত্তম কত প্রযত্নে আপনার বক্ষঃস্থলে ধারণ করেন। তা দেখ, এ পাথরের চোটে একেবারে যেন ছিঁড়ে গেছে। উঃ, একবার রক্তের স্রোতের দিকে চেয়ে দেখ, যেন প্রবালের বৃষ্টিই হচ্যে। রে দুষ্ট বিন্ধ্যাচল, তোর কি দয়ার লেশমাত্রও নাই। আর কোত্থেকেই বা থাকবে। তোর শরীর যেমন পাষাণ, তোর হৃদয়ও তেমনি কঠিন। ওরে অধম, তোর কি ব্রহ্মহত্যা পাপের ভয় নাই?

 নেপথ্যে। (তর্জ্জন গর্জ্জন শব্দ।)

 বিষ্ণু। ও বাবা! এ আবার কি? পর্ব্বতটা রেগে উঠলো না কি?

 নেপথ্যে। (তর্জ্জন গর্জ্জন শব্দ।)

 বিদূ। (সত্রাসে) কি সর্ব্বনাশ। (ভূতলে জানুদ্বয় নিক্ষেপ করিয়া প্রকাশে) হে ভগবন্ বিন্ধ্যাচল, তুমি আমার দোষ এবার ক্ষমা কর। প্রভু, আমি তোমার পায়ে পড়ি। আমি এই নাক কান মলে বল্ছি, আমি তোমাকে আর এ জন্মেও নিন্দা কর্‌বো না। হিমাদ্রিকে অচলেন্দ্র কে বলে? তুমিই পর্ব্বতকুলের শিরোমণি। (গাত্রোত্থান এবং চিন্তা করিয়া স্বগত) দূর, আমার আজ কি হয়েছে। আমি একটুতে এত ডরালেম যে? বোধ করি, ও শব্দটা কেবল প্রতিধ্বনি মাত্র।

 নেপথ্যে। ধ্বনি মাত্র।

 বিদূ। (সচকিতে) এ আবার কি? এ যে যথার্থই প্রতিধ্বনি। তা পর্ব্বত-প্রদেশই ত প্রতিধ্বনির জন্মস্থান। দেখি এর সঙ্গে কেন কিঞ্চিৎ আলাপই করি না। (উচ্চস্বরে) গুলো প্রতিধ্বনি।

 নেপথ্যে।—পীরিতের ধনী।

 বিদূ। ওলো তুই আবার কোত্‌থেকে লো?

 নেপথ্যে।—কে লো?

 বিদূ। তুই লো।

 নেপথ্যে।—তুই লো।

 বিদূ। মর, তোর মুখে ছাই।

 নেপথ্যে।—মুখে ছাই।

 বিদূ। কার মুখে লো? আমার মুখে কি তোর মুখে?

 নেপথ্যে।—তোর মুখে।

 বিদূ। বাহবা! বাহবা!

 নেপথ্যে। বোবা।

 বিদূ। মর্ গস্তানি, তুই আমাকে গাল দিস্।

 নেপথ্যে।—ইস্।

 বিদূ। যা, এখন যা।

 নেপথ্যে। আঃ।

 বিদূ। ও কি লো? তোর কি আমাকে ছেড়ে যেতে মন চায় না লো?

 নেপথ্যে।—না লো।

 বিদূ। দূর মাগি, তুই এখন গেলে বাঁচি।

 নেপথ্যে।—অ্যাঁ―ছি।

 বিদূ। মাগীকে তাড়াবার কোন উপায়ই দেখি না।

 নেপথ্যে।—না।

 বিদূ। বটে? তবে এই দেখ। (মুখাবৃত করিয়া শিলাতলে উপবেশন।)

(রাজার পুনঃপ্রবেশ।)

 রাজা। (স্বগত) আমাকে যে আজ কত বেশ ধরতে হচ্যে, তা বলা দুষ্কর। আমি এই উপবনে নিষাদরূপে প্রবেশ করে, প্রথমতঃ দেবদেবীর মধ্যস্থ হলেম; তার পরে আবার প্রতিধ্বনিও হলেম; দেখি, আরও কি হতে হয়। (পর্ব্বতান্তরালে অবস্থিতি।)

 বিদূ। (মুখ মোচন করিয়া স্বগত) মাগী গেছে ত। ওলো প্রতিধ্বনি, তুই কোথায় লো? রাম বলো, আপদ্ গেছে। (চতুর্দিক্ অবলোকন করিয়া) আহা! ফোয়ারাটি কি সুন্দর দেখ! কি সুন্দর দেখ! এমন জল দেখলে শীতকালেও তৃষ্ণা পায়। তা আমার যে এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আছে যে কিছু আহার না করে কখনই জল খাব না। কি আশ্চর্য্য! ঐ যে একটা উত্তম পাকা দাড়িম্ দেখ্তে পাচ্ছি। তা এ নির্জ্জন স্থানে এক জন সদ্বংশজাত ব্রাহ্মণকে কিছু ফলাহারই করাই নে কেন? (দাড়িম্ব গ্রহণ।)

 নেপথ্যে। রে দুষ্ট তস্কর, তুই কি জানিস্ না যে এ দেব-উপবন যক্ষরাজের রক্ষিত?

 বিদূ। (সত্রাসে স্বগত) ও বাবা! এ আবার মাটি খেয়ে কি করে বস্‌লেম।

 নেপথ্যে। ওরে পাষণ্ড, আমি এই তোর মস্তকচ্ছেদন কত্যে আস্ছি। (হুহুঙ্কার ধ্বনি।)

 বিদূ। (সত্রাসে ভূতলে জাদ্বয় নিক্ষেপ করিয়া প্রকাশে) হে যক্ষরাজ, আপনি এবার আমাকে রক্ষা করুন। আমি একজন অতি দরিদ্র ব্রাহ্মণ, পেটের দায়েই এ কর্ম্মটা করেছি।

 নেপথ্যে। হা মিথ্যাবাদিন্, যার ব্রাহ্মণকুলে জন্ম, সে মহাত্মা কি কখন পরধন অপহরণ করে?

 বিদূ। (সত্রাসে) হে যক্ষরাজ, আমি আপনার মাথা খাই যদি মিথ্যা কথা কই। আমি যথার্থই ব্রাহ্মণ। তা আমি আপনার নিকটে এই শপথ কচ‍্যি যে, যদি আর কখন পরের দ্রব্য চুরি করি, তবে যেন আমি সাত পুরুষের হাড় খাই। আমি এই নাকে খ‍ দিয়ে বল্চ—ি  নেপথ্যে। দে, খৎ দে।

 বিদূ। (খৎ দিয়া) আর কি কত্যে আজ্ঞা করেন, বলুন।

 নেপথ্যে। তুই এ স্থলে কি নিমিত্তে এসেছিল।

 বিদূ। (স্বগত) বাঁচলেম। আর যে কত ফল চুরি আর যে কত ফল চুরি করে খেয়েছি, তা জিজ্ঞাসা কল‍্যে না। (প্রকাশে) যক্ষরাজ, আর দুঃখের কথা কি বল্‌বো। আমি বিদর্ভনগরের রাজা ইন্দ্রনীলের সঙ্গে আপনার উপবনে এসেছি।

 নেপথ্যে। সে কি? বিদর্ভনগরের ইন্দ্রনীল রায় যে অতি নিষ্ঠুর ব্যক্তি। সে না তার প্রজাদের অত্যন্ত পীড়ন করে?

 বিদূ। আপনি দেখ্ছি সকলই জানেন, তা আপনাকে আমি আর অধিক কি বলবো। রাজা বেটা রেয়েতের কাছে যখন যা দেখে, তখনই তাই লুটে পুটে ন্যায়।

 নেপথ্যে। বটে? সে না বড় অসৎ?

 বিদূ। মহাশয়, ও কথা আর বলবেন না,—এর রাজ্যে বাস করা ভার। বেটা রাবণের পিতামহ।

 নেপথ্যে। বটে? রাজার কয় সংসার?

 বিদূ। আজ্ঞা, বেটা এখনও বিয়ে করে নি।

 নেপথ্যে। কেন?

 বিদূ। মহাশয়, বেটা কৃপণের শেষ। পয়সা খরচ হবে বল্যে বিয়ে করে না।

(রাজার পুনঃপ্রবেশ।)

 রাজা। কি হে দ্বিজবর, এ সকল কি সত্য কথা? আমি কি প্রজাপীড়ন করি? আমি কি দশানন অপেক্ষাও দুরাচার। আমি কি অর্থ ব্যয় হবে বল্যে বিবাহ করি না?

 বিদূ। (স্বগত) কি সর্ব্বনাশ। এ ত যক্ষরাজ নয়, এ যে রাজা ইন্দ্রনীল! তা এখন কি করি? একে যে গালাগালি দিছি, বোধ করি, মেরে হাড় ভেঙ্গে দেবে এখন।

 রাজা। কি হে সখে মানবক, তুমি যে চুপ্ করে রইলে! এখন আমার উচিত যে আমিই তোমার মস্তকচ্ছেদ করি।

 বিদূ। হাঃ! হাঃ! হাঃ! (উচ্চহাস্য।)

 রাজা। ও কি ও, হেসে উড়িয়ে দিতে চাও না কি?

 বিদূ। হাঃ! হাঃ! হাঃ! (উচ্চহাস্য।)

 রাজা। মর্ মূর্খ। তুই পাগল হলি না কি?

 বিদূ। হাঃ! হাঃ! হাঃ! বয়স্য, আপনি কি বিবেচনা করেন যে আমি আপনাকে চিন্‌তে পেরেছিলেম না। হাঃ! হাঃ! হাঃ।

 রাজা। বল্‌ দেখি, কিসে চিন্‌তে পেরেছিলি?

 বিদূ। মহারাজ, হাতীর গর্জ্জন শুনে কি কেউ মনে করে যে কোলা ব্যাঙ ডাক্‌চে। সিংহের হুহুঙ্কার শব্দ কি গলাভাঙ্গা গাধার চীৎকার বোধ হয়। হাঃ! হাঃ! হাঃ। (উচ্চহাস্য।)

 রাজা। ভাল, তবে তুমি আমাকে এত নিন্দা কলো কেন?

 বিদূ। বয়স্য, পাপকর্ম্ম কল্যে তার ফল এ জন্মেও ভোগ কত্যে হয়। দেখুন, আপনি একজন সদ্‌ব্রাহ্মণকে ভয় দেখিয়ে তাকে কষ্ট দিতে উদ্যত হয়েছিলেন, তার জন্যেই আপনাকে নিন্দাস্বরূপ কিঞ্চিৎ তিক্ত বারি পান কত‍্যে হলো।


 রাজা। (সহাস্য বদনে) সখে, তোমার কি অগাধ বুদ্ধি। সে যা হউক, আমি যে আজ এ উপবনে কত অদ্ভুত ব্যাপার দেখেছি, তা তুমি শুন্লে অবাক্ হবে।

 বিদূ। কেন মহারাজ? কি হয়েছিল, বলুন্ দেখি?

 রাজা। সে সকল কথা এ স্থলে বক্তব্য নয়। চল, এখন দেশে যাই। সে সব কথা এর পরে বল্‌বো।

 বিদূ। তবে চলুন। (কিঞ্চিৎ পরিক্রমণ করিয়া অবস্থিতি।)

 রাজা। ও আবার কি? দাঁড়ালে কেন?

 বিদূ। বয়স্য, ভাব্চি কি—বলি যদি এখানে রক্ষরাজ নাই, তবে ও পাকা দাড়িমটা ফেলে যাব কেন?

 রাজা। (সহাস্য বদনে) কে ফেলে যেতে বল্চে? নাও না কেন?

 বিদু। যে আজ্ঞা। (দাড়িম্ব গ্রহণ।)

 রাজা। চল, এখন যাই। যদি যক্ষরাজ যথার্থ ই এসে উপস্থিত হন, তবে কি হবে?

 বিধু। আজ্ঞা হাঁ—এ বড় মন্দ কথা নয়; তবে শীঘ্রই চলুন।

[ উভয়ের প্রস্থান।

ইতি প্রথমাস্ক।

অধ্যায় ১ / ১০

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন