ছেদ (আমার হৃদয় হিম-অবজ্ঞায় করেছি বিকল)

বিষ্ণু দে

আমার হৃদয় হিম-অবজ্ঞায় করেছি বিকল।
কানে করে হাহাকার দেউলিয়া উত্তরের হাওয়া।
বনের কিনারে মোর বাংলোর দুইখানি ঘরে
বানপ্রস্থ বরিয়াছি—ছিঁড়িয়াছি তোমার শিকল।
দুর্ভিক্ষ করেছি দূর—শরীর ও হৃদয়ের চাওয়া।
আমার হৃদয়ে আজ বনানীর নিস্তব্ধতা ঝরে।

হেথা নাই অপমান ব্যর্থতার জ্বালা মূর্খতার।
হেথা নাই গান্ধীজির নাটকীয় জয়অভিযান,
হেথা নাই সুশোভন রূপদক্ষ রবীন্দ্র ঠাকুর।
এখানে আকাশ আর শত শত শালতরু-সার।
এখানে কলকাতা কানে কটুকণ্ঠে করে নাকো গান।
অন্ধকারে মূর্তি তব কক্ষ হতে করিয়াছি দূর।

প্রভাতের আলো নামে স্নানশুভ্র কুমারীর মতো,
সঙ্গীহীন দিন মোর—সঙ্গী শুধু বনানী বন্ধুর,
সঙ্গীহীন রাত্রি মোর—প্রেম আর সাথী মোর নয়।
মুছেছি তোমারে—(তিক্ত ঘৃণ্যতায় করিনি আহত,
সম্পূর্ণ ছেড়েছি— চিত্র একেবারে করিয়াছি দূর)।
আকাশ ঘনিষ্ঠ হেথা— সূর্য শূন্যে অগুণ্ঠিত রয়।
পৃথিবীর স্তব্ধতায় ডুবে গেছে পূর্বরাগ-সুর।

১৯৩১

সকল অধ্যায়

১. পলায়ন (শফরী চোখের সরল চাহনি)
২. কাব্যপ্রেম (তোমাকেই ঘিরে চলে রক্তস্রোত)
৩. উদ্যাপন (স্বপ্নে আজ দেখেছি তোমাকে)
৪. প্রেম (ফিরাও তোমার দৃষ্টি ফিরাও আমার চোখ হতে)
৫. “অর্ধেক কল্পনা” (যেদিন জাগেনি বিশ্বে প্রাণস্পন্দে আদিম উৎসব)
৬. প্রত্যক্ষ (সেইদিন দেখেছি তোমাকে)
৭. বজ্রপাণি (কাল রজনীতে এসেছিল যবে বৈশাখী পূর্ণিমা)
৮. অভীপ্সা (এ আকাশ মুছে দাও আজ)
৯. অর্ধনারীশ্বর (সম্মুখে দুঃস্বপ্নরুক্ষ অসিধার কঠিন আকাশ)
১০. সমুদ্র (ভাসিয়েছি প্রেম আজ নীলিমার অন্ধকার জলে)
১১. সাগর উত্থিতা (সবুজ সমুদ্রে ওঠে অগণন ঢেউ)
১২. উর্বশী (আমি নহি পুরূরবা)
১৩. পর্যাপ্তি (যাক, আজ দূরে যাক তারা)
১৪. সন্ধ্যা (বামদিকে গিরিশৃঙ্গ আকাশকে করেছে আহত)
১৫. উর্বশী ও আর্টেমিস (সন্ধ্যার বর্ণের ছটা রয়েছে তো তবু)
১৬. ছেদ (আমার হৃদয় হিম-অবজ্ঞায় করেছি বিকল)
১৭. রাত্রিশেষে (আকাশের দুর্গে নেই পলাতকা অমাবস্যা আজ)
১৮. অতিক্রম (রাত্রির বিশাল মুখ বাতায়নে উঁকি দেয় কালো)
১৯. প্রত্যাবর্তন (আহা ষড়ঋতু! বনভবন!)
২০. প্রজ্ঞাপারমিতা তাকে করে আশীর্বাদ
২১. ভয় (বট আর অশথের ছায়াঘন কালো ভয়গুলি)
২২. এপ্রিল (শুভ্রকেশ ঢেউ ছেড়ে, সমুদ্রের আলিঙ্গন ছিঁড়ে)
২৩. গ্রীষ্ম (ঘন গ্রীষ্মতাপ)
২৪. আলোক ছড়াও (শীতের উন্মুক্ত রৌদ্র কালো তার কেশে)
২৫. সোহবিভেত্তস্মাদেকাকী বিভেতি

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন