সাগর উত্থিতা (সবুজ সমুদ্রে ওঠে অগণন ঢেউ)

বিষ্ণু দে

সবুজ সমুদ্রে ওঠে অগণন ঢেউ
অগণন শ্বেত অশ্বারোহী—
বালুকাবেলাকে দেয় চূর্ণ চূর্ণ চুম্বনের ফেনা—
বিরাট বালুকাবেলা চলে যায় স্ফটিক-আকাশে
স্থিরদৃষ্টি, মৌন, উদাসীন।

আমি একা চলি লঘুগতি,
সমুদ্রের শ্বাস টেনে বাক্যহীন চলেছি একেলা।

নির্মেঘ পৌষের প্রখর রৌদ্রের
মুঠি মুঠি হীরক কণায়
অন্তহীন বেলাভূমি কেঁপে চলে যায়
উদাসীন রহস্যের শেষ কিনারায়।
সবুজ সমুদ্র আর স্ফটিক আকাশ
ঢেউদের উল্লাসের মত্ত অট্টহাস—
বৈরাগিণী বালুকার বুকে শুধু
একমাত্র আমার নিঃশ্বাস।

ছায়া চলে প্রতি পদক্ষেপে
চলেছি একেলা
সমুদ্রের শ্বাস টেনে বাক্যহীন চলে যাই একা।
বালিয়াড়ি কেঁপে ওঠে নির্নিমেষ নয়নে রৌদ্রের,
সমুদ্র আকাশ মেশে আবেশের ফিরোজা রেখায়,
শাণিত বাতাসে পাই নিঃশ্বাসের প্রবল বিস্তার,
লবণাক্ত স্বাদ মুখে—বলিষ্ঠতা নিঃসঙ্গ চলার!

বালিয়াড়ি পার হয়ে অকস্মাৎ আবির্ভূত চোখে
রৌদ্রে ও সুবর্ণে মেশা পরিপূর্ণ তনু বলীয়ান্!
উলঙ্গ শরীরে ঝরে সমুদ্রের লবণাক্ত জল
রৌদ্রের হীরকচূর্ণ সর্বঅঙ্গে স্ফুলিঙ্গ ছড়ায়,
চোখের কালোতে স্নিগ্ধ জলতৃপ্ত দীর্ঘ কালো চুল
দুলিছে সুঠাম তার নিতম্বের তটদেশ বেয়ে,
ধরে আছে আলো
কঠিন উদ্ধত শ্যাম স্তনাগ্রচূড়ায়।

নীলাভ সমুদ্র’পরে শুভ্র মূর্তি দেখি দুই চোখে
স্ফটিক আকাশতলে সীমাহীন বালুকাবেলায়
লবণাক্ত বায়ুস্নিগ্ধ খররৌদ্রালোকে
নিভৃতির তপোভঙ্গ ক’রে
সুদীর্ঘ সুঠাম নগ্ন তনু বলীয়ান
শুনি তার প্রাণের স্পন্দন,
আদিম ও অন্তহীন সংগীতের
চেয়ে দেখি উচ্ছল ইঙ্গিত।

অগুণ্ঠিত নারী—
শরতের সূর্য সে যে—সে তো নয় কোজাগরী শশী,
কুণ্ঠাহীন দৃষ্টি তার আমাকে সে দিলে দৃষ্টি ভরে,
আমি তাই একা তটে বসি,
আর ভাবি রৌদ্রময়
ভাষা তার কী-বা বলে—ডায়ানা? উর্বশী?

১৯২৯

সকল অধ্যায়

১. পলায়ন (শফরী চোখের সরল চাহনি)
২. কাব্যপ্রেম (তোমাকেই ঘিরে চলে রক্তস্রোত)
৩. উদ্যাপন (স্বপ্নে আজ দেখেছি তোমাকে)
৪. প্রেম (ফিরাও তোমার দৃষ্টি ফিরাও আমার চোখ হতে)
৫. “অর্ধেক কল্পনা” (যেদিন জাগেনি বিশ্বে প্রাণস্পন্দে আদিম উৎসব)
৬. প্রত্যক্ষ (সেইদিন দেখেছি তোমাকে)
৭. বজ্রপাণি (কাল রজনীতে এসেছিল যবে বৈশাখী পূর্ণিমা)
৮. অভীপ্সা (এ আকাশ মুছে দাও আজ)
৯. অর্ধনারীশ্বর (সম্মুখে দুঃস্বপ্নরুক্ষ অসিধার কঠিন আকাশ)
১০. সমুদ্র (ভাসিয়েছি প্রেম আজ নীলিমার অন্ধকার জলে)
১১. সাগর উত্থিতা (সবুজ সমুদ্রে ওঠে অগণন ঢেউ)
১২. উর্বশী (আমি নহি পুরূরবা)
১৩. পর্যাপ্তি (যাক, আজ দূরে যাক তারা)
১৪. সন্ধ্যা (বামদিকে গিরিশৃঙ্গ আকাশকে করেছে আহত)
১৫. উর্বশী ও আর্টেমিস (সন্ধ্যার বর্ণের ছটা রয়েছে তো তবু)
১৬. ছেদ (আমার হৃদয় হিম-অবজ্ঞায় করেছি বিকল)
১৭. রাত্রিশেষে (আকাশের দুর্গে নেই পলাতকা অমাবস্যা আজ)
১৮. অতিক্রম (রাত্রির বিশাল মুখ বাতায়নে উঁকি দেয় কালো)
১৯. প্রত্যাবর্তন (আহা ষড়ঋতু! বনভবন!)
২০. প্রজ্ঞাপারমিতা তাকে করে আশীর্বাদ
২১. ভয় (বট আর অশথের ছায়াঘন কালো ভয়গুলি)
২২. এপ্রিল (শুভ্রকেশ ঢেউ ছেড়ে, সমুদ্রের আলিঙ্গন ছিঁড়ে)
২৩. গ্রীষ্ম (ঘন গ্রীষ্মতাপ)
২৪. আলোক ছড়াও (শীতের উন্মুক্ত রৌদ্র কালো তার কেশে)
২৫. সোহবিভেত্তস্মাদেকাকী বিভেতি

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন