অবুঝ মন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অবুঝ শিশুর আবছায়া এই নয়নবাতায়নের ধারে
আপনাভোলা মনখানি তার অধীর হয়ে উঁকি মারে।
        বিনাভাষার ভাবনা নিয়ে কেমন আঁকুবাঁকুর খেলা–
        হঠাৎ ধরা, হঠাৎ ছড়িয়ে ফেলা,
      হঠাৎ অকারণ
কী উৎসাহে বাহু নেড়ে উদ্দাম গর্জন।
      হঠাৎ দুলে দুলে ওঠে,
অর্থবিহীন কোন্‌ দিকে তার লক্ষ ছোটে।
      বাহির-ভুবন হতে
আলোর লীলায় ধ্বনির স্রোতে
      যে বাণী তার আসে প্রাণে
তারি জবাব দিতে গিয়ে কী-যে জানায় কেই তা জানে।
এই যে অবুঝ এই যে বোবা মন
প্রাণের ‘পরে ঢেউ জাগিয়ে কৌতুকে যে অধীর অনুক্ষণ,
       সর্ব দিকেই সর্বদা উন্মুখ,
আপনারি চাঞ্চল্য নিয়ে আপনি সমুৎসুক,-
   নয় বিধাতার নবীন রচনা এ,
       ইহার যাত্রা আদিম যুগের নায়ে।
           বিশ্বকবির মানস-সরোবরে
               প্রাতঃস্নানের পরে
প্রাণের সঙ্গে বাহির হল, তখন অন্ধকার,
       নিয়ে এল ক্ষীণ আলোটি তার।
  তারি প্রথম ভাষাবিহীন কূজনকাকলি যে
বনে বনে শাখায় পাতায় পুষ্পে ফলে বীজে
              অঙ্কুরে অঙ্কুরে
      উঠল জেগে ছন্দে সুরে সুরে।
      সূর্য-পানে অবাক আঁখি মেলি
      মুখরিত উচ্ছল তার কেলি।
নানারূপের খেলনা যে তার নানা বর্ণে আঁকে,
          বারেক খোলে, বারেক তারে ঢাকে।
                  রোদবাদলে করুণ কান্না হাসি
                        সদাই ওঠে আভাসি উচ্ছ্বাসি।
ওই যে শিশুর অবুঝ ভোলা মন
তরীর কোণে বসে বসে দেখছি তারি আকুল আন্দোলন।
       মাঝে-মাঝে সাগর-পানে তাকিয়ে দেখি যত
       মনে ভাবি, ও যেন এই শিশু-আঁখির মতো,
             আকাশ-পানে আবছায়া ওর চাওয়া
                          কোন্‌ স্বপনে-পাওয়া,
      অন্তরে ওর যেন সে কোন্‌ অবুঝ ভোলা মন
এ তীর হতে ও তীর-পানে দুলছে অনুক্ষণ।
               কেমন কলভাষে
প্রলয়কাঁদন কাঁদে ও যে প্রবল হাসি হাসে
      আপ্‌নিও তার অর্থ আছে ভুলে–
               ক্ষণে ক্ষণে শুধুই ফুলে ফুলে
      অকারণে গর্জি উঠে শূন্যে শূন্যে মূঢ় বাহু তুলে।
বিরাট অবুঝ এই সে আদিম মন,
মানব-ইতিহাসের মাঝে আপ্‌নারে তার অধীর অন্বেষণ।
       ঘর হতে ধায় আঙন-পানে, আঙন হতে পথে,
পথ হতে ধায় তেপান্তরের বিঘ্নবিষম অরণ্যে পর্বতে;
               এই সে গড়ে, এই সে ভাঙে, এই সে কী আক্ষেপে
পায়ের তলায় ধরণীতে আঘাত করে ধুলায় আকাশ ব্যেপে;
                  হঠাৎ খেপে উঠে
      রুদ্ধ পাষাণভিত্তি-‘পরে বেড়ায় মাথা কুটে।
                   অনাসৃষ্টি সৃষ্টি আপনগড়া
      তাই নিয়ে সে লড়াই করে, তাই নিয়ে তার কেবল ওঠাপড়া।
                                 হঠাৎ উঠে ঝেঁকে
              যায় সে ছুটে কী রাঙা রঙ দেখে
                          অদৃশ্য কোন্‌ দূর দিগন্ত-পানে;
আবছায়া কোন্‌ সন্ধ্যা-আলোয় শিশুর মতো তাকায় অনুমানে,
                         তাহার ব্যাকুলতা
     স্বপ্নে সত্যে মিশিয়ে রচে বিচিত্র রূপকথা।

সকল অধ্যায়

১. প্রশ্ন
২. প্রণাম
৩. বিচিত্রা
৪. জন্মদিন
৫. পান্থ
৬. অপূর্ণ
৭. আমি
৮. তুমি
৯. আছি
১০. বালক
১১. বর্ষশেষ
১২. মুক্তি
১৩. আহ্বান
১৪. দুয়ার
১৫. দীপিকা
১৬. লেখা
১৭. নূতন শ্রোতা
১৮. আশীর্বাদ
১৯. মোহানা
২০. বক্‌সাদুর্গস্থ রাজবন্দীদের প্রতি
২১. দুর্দিনে
২২. ধর্মমোহ
২৩. ভিক্ষু
২৪. আশীর্বাদী
২৫. অবুঝ মন
২৬. পরিণয়
২৭. চিরন্তন
২৮. কণ্টিকারি
২৯. আরেক দিন
৩০. তে হি নো দিবসাঃ
৩১. দীপশিল্পী
৩২. মানী
৩৩. রাজপুত্র
৩৪. অগ্রদূত
৩৫. প্রতীক্ষা
৩৬. নির্বাক্‌
৩৭. প্রণাম
৩৮. শূন্যঘর
৩৯. দিনাবসান
৪০. পথসঙ্গী
৪১. অন্তর্হিতা
৪২. আশ্রমবালিকা
৪৩. বধূ
৪৪. মিলন
৪৫. স্পাই
৪৬. ধাবমান
৪৭. ভীরু
৪৮. বিচার
৪৯. পুরানো বই
৫০. বিস্ময়
৫১. অগোচর
৫২. সান্ত্বনা
৫৩. ছোটো প্রাণ
৫৪. নিরাবৃত
৫৫. মৃত্যুঞ্জয়
৫৬. অবাধ
৫৭. যাত্রী
৫৮. মিলন
৫৯. আগন্তুক
৬০. জরতী
৬১. প্রাণ
৬২. সাথী
৬৩. বোবার বাণী
৬৪. আঘাত
৬৫. শান্ত
৬৬. জলপাত্র
৬৭. আতঙ্ক
৬৮. আলেখ্য
৬৯. সান্ত্বনা
৭০. শ্রীবিজয়লক্ষ্মী
৭১. বোরোবুদুর
৭২. সিয়াম – ১
৭৩. সিয়াম – ২
৭৪. বুদ্ধদেবের প্রতি
৭৫. পারস্যে জন্মদিনে
৭৬. প্রাচী
৭৭. আশীর্বাদ
৭৮. আশীর্বাদ – ২
৭৯. লক্ষ্যশূন্য
৮০. প্রবাসী
৮১. বুদ্ধজন্মোৎসব
৮২. প্রথম পাতায়
৮৩. নূতন
৮৪. শুকসারী
৮৫. সুসময়
৮৬. নূতন কাল
৮৭. পরিণয়মঙ্গল
৮৮. জীবনমরণ
৮৯. গৃহলক্ষ্মী
৯০. রঙিন
৯১. আশীর্বাদী – ২
৯২. বসন্ত উৎসব
৯৩. আশীর্বাদ – ৩
৯৪. আশীর্বাদ – ৪
৯৫. উত্তিষ্ঠত নিবোধত
৯৬. প্রার্থনা
৯৭. অতুলপ্রসাদ সেন

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন