আতঙ্ক

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বটের জটায় বাঁধা ছায়াতলে
                       গোধূলিবেলায়
           বাগানের জীর্ণ পাঁচিলেতে
                       সাদাকালো দাগগুলো
                       দেখা দিত ভয়ংকর মূর্তি ধরে।
           ওইখানে দৈত্যপুরী,
                 অদৃশ্য কুঠুরি থেকে তার
      মনে-মনে শোনা যেত হাঁউমাউখাঁউ।
           লাঠি হাতে কুঁজোপিঠ
      খিলিখিলি হাসত ডাইনিবুড়ী।
                     কাশিরাম দাস
      পয়ারে যা লিখেছিল হিড়িম্বার কথা
           ইট-বের-করা সেই পাঁচিলের ‘পরে
                    ছিল তারি প্রত্যক্ষ কাহিনী।
      তারি সঙ্গে সেইখানে নাককাটা সূর্পণখা
                 কালো কালো দাগে
                       করেছিল কুটুম্বিতা।
      সতেরো বৎসর পরে
           গিয়েছি সে সাবেক বাড়িতে।
                 দাগ বেড়ে গেছে,
      মুগ্ধ নতুনের তুলি পুরোনোকে দিয়েছে প্রশ্রয়।
      ইঁটগুলো মাঝে-মাঝে খসে গিয়ে
                 পড়ে আছে রাশকরা।
           গায়ে গায়ে লেগেছে অনন্তমূল,
                 কালমেঘ লতা,
                 বিছুটির ঝাড়;
           ভাঁটিগাছে হয়েছে জঙ্গল।
                 পুরোনো বটের পাশে
           উঠেছে ভেরেণ্ডাগাছ মস্তবড়ো হয়ে।
      বাইরেতে সূর্পণখা-হিড়িম্বার চিহ্নগুলো আছে,
           মনে তারা কোনোখানে নেই।
      স্টেশনে গেলেম ফিরে একবার খুব হেসে নিয়ে
                 জীবনের ভিত্তিটার গায়ে
                       পড়েছে বিস্তর কালো দাগ,
                 মূঢ় অতীতের মসীলেখা;
                       ভাঙা গাঁথুনিতে
           ভীরু কল্পনার যত জটিল কুটিল চিহ্নগুলো।
                       মাঝে-মাঝে
                 যেদিন বিকেলবেলা
                       বাদলের ছায়া নামে
                 সারি সারি তালগাছে
                       দিঘির পাড়িতে,
                    দূরের আকাশে
                 স্নিগ্ধ সুগম্ভীর
               মেঘের গর্জন ওঠে গুরুগুরু,
           ঝিঁ ঝিঁ ডাকে বুনো খেজুরের ঝোপে,
                 তখন দেশের দিকে চেয়ে
           বাঁকাচোরা আলোহীন পথে
                ভেঙেপড়া দেউলের মূর্তি দেখি;
                 দীর্ণ ছাদে, তার জীর্ণ ভিতে
                 নামহীন অবসাদ,-
           অনির্দিষ্ট শঙ্কাগুলো নিদ্রাহীন পেঁচা,
                 নৈরাশ্যের অলীক অত্যুক্তি যত,
             দুর্বলের স্বরচিত শত্রুর চেহারা।
                 ধিক্‌ রে ভাঙনলাগা মন,
      চিন্তায় চিন্তায় তোর কত মিথ্যা আঁচড় কেটেছে।
           দুষ্টগ্রহ সেজে ভয়
                 কালোচিহ্নে মুখভঙ্গি করে।
           কাঁটা-আগাছার মতো
                 অমঙ্গল নাম নিয়ে
                      আতঙ্কের জঙ্গল উঠেছে।
           চারিদিকে সারি সারি জীর্ণ ভিতে
           ভেঙেপড়া অতীতের বিরূপ বিকৃতি।
                 কাপুরুষে করিছে বিদ্রূপ।

সকল অধ্যায়

১. প্রশ্ন
২. প্রণাম
৩. বিচিত্রা
৪. জন্মদিন
৫. পান্থ
৬. অপূর্ণ
৭. আমি
৮. তুমি
৯. আছি
১০. বালক
১১. বর্ষশেষ
১২. মুক্তি
১৩. আহ্বান
১৪. দুয়ার
১৫. দীপিকা
১৬. লেখা
১৭. নূতন শ্রোতা
১৮. আশীর্বাদ
১৯. মোহানা
২০. বক্‌সাদুর্গস্থ রাজবন্দীদের প্রতি
২১. দুর্দিনে
২২. ধর্মমোহ
২৩. ভিক্ষু
২৪. আশীর্বাদী
২৫. অবুঝ মন
২৬. পরিণয়
২৭. চিরন্তন
২৮. কণ্টিকারি
২৯. আরেক দিন
৩০. তে হি নো দিবসাঃ
৩১. দীপশিল্পী
৩২. মানী
৩৩. রাজপুত্র
৩৪. অগ্রদূত
৩৫. প্রতীক্ষা
৩৬. নির্বাক্‌
৩৭. প্রণাম
৩৮. শূন্যঘর
৩৯. দিনাবসান
৪০. পথসঙ্গী
৪১. অন্তর্হিতা
৪২. আশ্রমবালিকা
৪৩. বধূ
৪৪. মিলন
৪৫. স্পাই
৪৬. ধাবমান
৪৭. ভীরু
৪৮. বিচার
৪৯. পুরানো বই
৫০. বিস্ময়
৫১. অগোচর
৫২. সান্ত্বনা
৫৩. ছোটো প্রাণ
৫৪. নিরাবৃত
৫৫. মৃত্যুঞ্জয়
৫৬. অবাধ
৫৭. যাত্রী
৫৮. মিলন
৫৯. আগন্তুক
৬০. জরতী
৬১. প্রাণ
৬২. সাথী
৬৩. বোবার বাণী
৬৪. আঘাত
৬৫. শান্ত
৬৬. জলপাত্র
৬৭. আতঙ্ক
৬৮. আলেখ্য
৬৯. সান্ত্বনা
৭০. শ্রীবিজয়লক্ষ্মী
৭১. বোরোবুদুর
৭২. সিয়াম – ১
৭৩. সিয়াম – ২
৭৪. বুদ্ধদেবের প্রতি
৭৫. পারস্যে জন্মদিনে
৭৬. প্রাচী
৭৭. আশীর্বাদ
৭৮. আশীর্বাদ – ২
৭৯. লক্ষ্যশূন্য
৮০. প্রবাসী
৮১. বুদ্ধজন্মোৎসব
৮২. প্রথম পাতায়
৮৩. নূতন
৮৪. শুকসারী
৮৫. সুসময়
৮৬. নূতন কাল
৮৭. পরিণয়মঙ্গল
৮৮. জীবনমরণ
৮৯. গৃহলক্ষ্মী
৯০. রঙিন
৯১. আশীর্বাদী – ২
৯২. বসন্ত উৎসব
৯৩. আশীর্বাদ – ৩
৯৪. আশীর্বাদ – ৪
৯৫. উত্তিষ্ঠত নিবোধত
৯৬. প্রার্থনা
৯৭. অতুলপ্রসাদ সেন

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন