স্পাই

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শক্ত হল রোগ,
হপ্তা-পাঁচেক ছিল আমার ভোগ।
      একটুকু যেই সুস্থ হলেম পরে
           লোক ধরে না ঘরে,
ব্যামোর চেয়ে অনেক বেশি ঘটাল দুর্যোগ।
      এল ভবেশ, এল পালিত, এল বন্ধু ঈশান,
           এল পোলিটিশান,
      এল গোকুল সংবাদপত্রের,
খবর রাখে সকল পাড়ার নাড়ীনক্ষত্রের।
      কেউ-বা বলে “বদল করো হাওয়া’,
কেউ-বা বলে “ভালো ক’রে করবে খাওয়াদাওয়া’।
      কেউ-বা বলে “মহেন্দ্র ডাক্তার
এই ব্যামোতে তার মতো কেউ ওস্তাদ নেই আর’।
           দেয়াল ঘেঁষে ওই যে সবার পাছে
                 সতীশ বসে আছে।
           থাকে সে এই পাড়ায়,
      চুলগুলো তার ঊর্ধ্বে তোলা পাঁচ আঙুলের নাড়ায়।
           চোখে চশমা আঁটা,
      এক কোণে তার ফেটে গেছে বাঁয়ের পরকলাটা।
           গলার বোতাম খোলা
         প্রশান্ত তার চাউনি ভাবে-ভোলা।
      সর্বদা তার হাতে থাকে বাঁধানো এক খাতা,
                 হঠাৎ খুলে পাতা
      লুকিয়ে লুকিয়ে কী-যে লেখে, হয়তো বা সে কবি,
                 কিম্বা আঁকে ছবি।
      নবীন আমায় শোনায় কানে-কানে,
         ওই ছেলেটার গোপন খবর নিশ্চিত সেই জানে —
            যাকে বলে “স্পাই’,
                 সন্দেহ তার নাই।
      আমি বলি, হবেও বা, ভক্তিসম নিরীহ ওই মুখে
               খাতার কোণে রিপোর্ট করার খোরাক নিচ্ছে টুকে।
            ও মানুষটা সত্যি যদি তেমনি হেয় হয়,
                 ঘৃণা করব, কেন করব ভয়।
এই বছরে বছরখানেক বেড়িয়ে নিলেম পাঞ্জাবে কাশ্মীরে।
           এলেম যখন ফিরে;
এল গণেশ পলটু এল, এল নবীন পাল,
                 এল মাখনলাল।
হাতে একটা মোড়ক নিয়ে প্রণাম করলে পাঁচু,
                 মুখটা কাঁচুমাচু।
      “মনিব কোথায়’ শুধাই আমি তারে,
                 “সতীশ কোথায় হাঁ রে।’
      নবীন বললে, “খবর পান নি তবে
                 দিন-পনেরো হবে
      উপোস করে মারা গেল সোনার-টুকরো ছেলে
নন্‌-ভায়োলেন্‌স প্রচার করে গেল যখন আলিপুরের জেলে।’
   পাঁচু আমার হাতে দিল খাতা,
           খুলে দেখি পাতার পরে পাতা–
দেশের কথা কী বলেছি তাই লিখেছে গভীর অনুরাগে,
           পাঠিয়ে দিল জেলে যাবার আগে।
আজকে বসে বসে ভাবি, মুখের কথাগুলো
           ঝরা পাতার মতোই তারা ধুলোয় হত ধুলো।
           সেইগুলোকে সত্য করে বাঁচিয়ে রাখবে কি এ
                       মৃত্যুসুধার নিত্যপরশ দিয়ে।

সকল অধ্যায়

১. প্রশ্ন
২. প্রণাম
৩. বিচিত্রা
৪. জন্মদিন
৫. পান্থ
৬. অপূর্ণ
৭. আমি
৮. তুমি
৯. আছি
১০. বালক
১১. বর্ষশেষ
১২. মুক্তি
১৩. আহ্বান
১৪. দুয়ার
১৫. দীপিকা
১৬. লেখা
১৭. নূতন শ্রোতা
১৮. আশীর্বাদ
১৯. মোহানা
২০. বক্‌সাদুর্গস্থ রাজবন্দীদের প্রতি
২১. দুর্দিনে
২২. ধর্মমোহ
২৩. ভিক্ষু
২৪. আশীর্বাদী
২৫. অবুঝ মন
২৬. পরিণয়
২৭. চিরন্তন
২৮. কণ্টিকারি
২৯. আরেক দিন
৩০. তে হি নো দিবসাঃ
৩১. দীপশিল্পী
৩২. মানী
৩৩. রাজপুত্র
৩৪. অগ্রদূত
৩৫. প্রতীক্ষা
৩৬. নির্বাক্‌
৩৭. প্রণাম
৩৮. শূন্যঘর
৩৯. দিনাবসান
৪০. পথসঙ্গী
৪১. অন্তর্হিতা
৪২. আশ্রমবালিকা
৪৩. বধূ
৪৪. মিলন
৪৫. স্পাই
৪৬. ধাবমান
৪৭. ভীরু
৪৮. বিচার
৪৯. পুরানো বই
৫০. বিস্ময়
৫১. অগোচর
৫২. সান্ত্বনা
৫৩. ছোটো প্রাণ
৫৪. নিরাবৃত
৫৫. মৃত্যুঞ্জয়
৫৬. অবাধ
৫৭. যাত্রী
৫৮. মিলন
৫৯. আগন্তুক
৬০. জরতী
৬১. প্রাণ
৬২. সাথী
৬৩. বোবার বাণী
৬৪. আঘাত
৬৫. শান্ত
৬৬. জলপাত্র
৬৭. আতঙ্ক
৬৮. আলেখ্য
৬৯. সান্ত্বনা
৭০. শ্রীবিজয়লক্ষ্মী
৭১. বোরোবুদুর
৭২. সিয়াম – ১
৭৩. সিয়াম – ২
৭৪. বুদ্ধদেবের প্রতি
৭৫. পারস্যে জন্মদিনে
৭৬. প্রাচী
৭৭. আশীর্বাদ
৭৮. আশীর্বাদ – ২
৭৯. লক্ষ্যশূন্য
৮০. প্রবাসী
৮১. বুদ্ধজন্মোৎসব
৮২. প্রথম পাতায়
৮৩. নূতন
৮৪. শুকসারী
৮৫. সুসময়
৮৬. নূতন কাল
৮৭. পরিণয়মঙ্গল
৮৮. জীবনমরণ
৮৯. গৃহলক্ষ্মী
৯০. রঙিন
৯১. আশীর্বাদী – ২
৯২. বসন্ত উৎসব
৯৩. আশীর্বাদ – ৩
৯৪. আশীর্বাদ – ৪
৯৫. উত্তিষ্ঠত নিবোধত
৯৬. প্রার্থনা
৯৭. অতুলপ্রসাদ সেন

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন