বিচিত্রা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

         ছিলাম যবে মায়ের কোলে,
         বাঁশি বাজানো শিখাবে ব’লে
চোরাই করে এনেছ মোরে তুমি,
                  বিচিত্রা হে, বিচিত্রা,
যেখানে তব রঙের রঙ্গভূমি।
          আকাশতলে এলায়ে কেশ
                   বাজালে বাঁশি চুপে,
          সে মায়াসুরে স্বপ্নছবি
                  জাগিল কত রূপে;
          লক্ষ্যহারা মিলিল তারা
                  রূপকথার বাটে,
         পারায়ে গেল ধূলির সীমা
                   তেপান্তরী মাঠে।
         নারিকেলের ডালের আগে
         দুপুরবেলা কাঁপন লাগে,
ইশারা তারি লাগিত মোর প্রাণে,
                    বিচিত্রা হে, বিচিত্রা,
কী বলে তারা কে বলো তাহা জানে।
          অর্থহারা সুরের দেশে
                    ফিরালে দিনে দিনে,
          ঝলিত মনে অবাক বাণী,
                    শিশির যেন তৃণে।
          প্রভাত-আলো উঠিত কেঁপে
                    পুলকে কাঁপা বুকে,
          বারণহীন নাচিত হিয়া
                     কারণহীন সুখে।

          জীবনধারা অকূলে ছোটে,
          দুঃখে সুখে তুফান ওঠে,
আমারে নিয়ে দিয়েছ তাহে খেয়া,
          বিচিত্রা হে, বিচিত্রা,
কালো গগনে ডেকেছে ঘন দেয়া।
          প্রাণের সেই ঢেউয়ের তালে
                    বাজালে তুমি বীণ,
          ব্যথায় মোর জাগায়ে নিয়ে
                    তারের রিনিরিন।
          পালের ‘পরে দিয়েছ বেগে
                   সুরের হাওয়া তুলে,
          সহসা বেয়ে নিয়েছ তরী
                   অপূর্বেরি কূলে।

          চৈত্রমাসে শুক্ল নিশা
          জুঁহিবেলির গন্ধে মিশা;
জলের ধ্বনি তটের কোলে কোলে
          বিচিত্রা হে, বিচিত্রা,
অনিদ্রারে আকুল করি তোলে।
         যৌবনে সে উতল রাতে
         করুণ কার চোখে
সোহিনী রাগে মিলাতে মিড়
      চাঁদের ক্ষীণালোকে।
কাহার ভীরু হাসির ‘পরে
          মধুর দ্বিধা ভরি
শরমে-ছোঁওয়া নয়নজল
         কাঁপাতে থরথরি।
         হঠাৎ কভু জাগিয়া উঠি
         ছিন্ন করি ফেলেছে টুটি
নিশীথিনীর মৌন যবনিকা,
          বিচিত্রা হে, বিচিত্রা,
হেনেছ তারে বজ্রানলশিখা।
     গভীর রবে হাঁকিয়া গেছ,
                 “অলস থেকো না গো।’
      নিবিড় রাতে দিয়েছ নাড়া,
                 বলেছ, “জাগো জাগো।’
    বাসরঘরে নিবালে দীপ,
           ঘুচালে ফুলহার,
    ধূলি-আঁচল দুলায়ে ধরা
           করিল হাহাকার।
          বুকের শিরা ছিন্ন করে
          ভীষণ পূজা করেছি তোরে,
কখনো পূজা শোভন শতদলে,-
                    বিচিত্রা হে, বিচিত্রা,
          হাসিতে কভু, কখনো আঁখিজলে।
          ফসল যত উঠেছে ফলি
                   বক্ষ বিভেদিয়া
          কণাকণায় তোমারি পায়
                   দিয়েছি নিবেদিয়া।
          তবুও কেন এনেছ ডালি
                   দিনের অবসানে;
          নিঃশেষিয়া নিবে কি ভরি
                   নিঃস্ব-করা দানে।

সকল অধ্যায়

১. প্রশ্ন
২. প্রণাম
৩. বিচিত্রা
৪. জন্মদিন
৫. পান্থ
৬. অপূর্ণ
৭. আমি
৮. তুমি
৯. আছি
১০. বালক
১১. বর্ষশেষ
১২. মুক্তি
১৩. আহ্বান
১৪. দুয়ার
১৫. দীপিকা
১৬. লেখা
১৭. নূতন শ্রোতা
১৮. আশীর্বাদ
১৯. মোহানা
২০. বক্‌সাদুর্গস্থ রাজবন্দীদের প্রতি
২১. দুর্দিনে
২২. ধর্মমোহ
২৩. ভিক্ষু
২৪. আশীর্বাদী
২৫. অবুঝ মন
২৬. পরিণয়
২৭. চিরন্তন
২৮. কণ্টিকারি
২৯. আরেক দিন
৩০. তে হি নো দিবসাঃ
৩১. দীপশিল্পী
৩২. মানী
৩৩. রাজপুত্র
৩৪. অগ্রদূত
৩৫. প্রতীক্ষা
৩৬. নির্বাক্‌
৩৭. প্রণাম
৩৮. শূন্যঘর
৩৯. দিনাবসান
৪০. পথসঙ্গী
৪১. অন্তর্হিতা
৪২. আশ্রমবালিকা
৪৩. বধূ
৪৪. মিলন
৪৫. স্পাই
৪৬. ধাবমান
৪৭. ভীরু
৪৮. বিচার
৪৯. পুরানো বই
৫০. বিস্ময়
৫১. অগোচর
৫২. সান্ত্বনা
৫৩. ছোটো প্রাণ
৫৪. নিরাবৃত
৫৫. মৃত্যুঞ্জয়
৫৬. অবাধ
৫৭. যাত্রী
৫৮. মিলন
৫৯. আগন্তুক
৬০. জরতী
৬১. প্রাণ
৬২. সাথী
৬৩. বোবার বাণী
৬৪. আঘাত
৬৫. শান্ত
৬৬. জলপাত্র
৬৭. আতঙ্ক
৬৮. আলেখ্য
৬৯. সান্ত্বনা
৭০. শ্রীবিজয়লক্ষ্মী
৭১. বোরোবুদুর
৭২. সিয়াম – ১
৭৩. সিয়াম – ২
৭৪. বুদ্ধদেবের প্রতি
৭৫. পারস্যে জন্মদিনে
৭৬. প্রাচী
৭৭. আশীর্বাদ
৭৮. আশীর্বাদ – ২
৭৯. লক্ষ্যশূন্য
৮০. প্রবাসী
৮১. বুদ্ধজন্মোৎসব
৮২. প্রথম পাতায়
৮৩. নূতন
৮৪. শুকসারী
৮৫. সুসময়
৮৬. নূতন কাল
৮৭. পরিণয়মঙ্গল
৮৮. জীবনমরণ
৮৯. গৃহলক্ষ্মী
৯০. রঙিন
৯১. আশীর্বাদী – ২
৯২. বসন্ত উৎসব
৯৩. আশীর্বাদ – ৩
৯৪. আশীর্বাদ – ৪
৯৫. উত্তিষ্ঠত নিবোধত
৯৬. প্রার্থনা
৯৭. অতুলপ্রসাদ সেন

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন