৩২. মক্কা-মদীনার ফযীলত

মক্কা-মদীনার ফযীলত

মদীনায় রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর হিজরতের মাধ্যমে মদীনা নগরী ধন্য হয়। আল্লাহর বন্ধু এবং তার নেক বান্দাদের জন্য তা নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়। মুসলমানদের জন্য তা পরিণত হয় দুর্ভেদ্য দুৰ্গে, আর গোটা বিশ্ববাসীর জন্য তা হয়ে উঠে হিদায়াতের কেন্দ্ৰস্থল। মদীনার ফষীলত সম্পর্কে অনেক অনেক হাদীছ বর্ণিত আছে। বিভিন্ন স্থানে সে সমস্ত হাদীছ আমরা উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ।

বুখারী এবং মুসলিম শরীফে হাবীব। ইবন ইয়াসাফ সূত্রে জাফর ইবন আসিম-এর বরাতে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন :

“নিশ্চয়ই ঈমান মদীনায় আশ্রয় নেবে যেমন সৰ্প আশ্রয় নেয়। তার গর্তে।” ইমাম মুসলিম মুহাম্মদ ইবন রাফি’ সূত্রে ইবন উমর (রা) থেকে আর তিনি নবী করীম (সা) থেকে অনুরূপ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। বুখারী এবং মুসলিম শরীফে মালিক সূত্রে আবু হুরায়রা (রা)-এর বরাতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন :

“এমন একটি জনপদে (হিজরত করার জন্য) আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যে জনপদ সমস্ত জনপদকে গ্ৰাস করবে। লোকেরা সে জনপদকে ইয়াছরিব বলে, (আসলে) তা হল মদীনা বা নবীর নগরী, এ নগরী মানুষকে পরিচ্ছন্ন করে (পাপ-পংকিলতার আবর্ত থেকে) যেমন আগুনের ভাটি লোহার মরিচা দূর করে।” চার ইমামের মধ্যে কেবল ইমাম মালিকই এককভাবে

মক্কার উপর মদীনার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করেন। ইমাম বায়হাকী (র) হাফিয আবু আবদুল্লাহ সূত্রে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন :

“হে আল্লাহ! আমার সবচাইতে প্রিয় নগরী থেকে তুমি আমাকে বের করেছ, কাজেই তোমার নিকট প্ৰিয়তম নগরীতে আমাকে বাসিন্দা কর! ফলে আল্লাহ তাকে মদীনার বাসিন্দা করেন।” এ হাদীছটি অতিশয় গরীব পর্যায়ের। আর জামহুর আলিম সমাজের মতে মক্কা হচ্ছে মদীনা থেকে শ্রেষ্ঠ। তবে সে স্থান ব্যতীত, যাতে রাসূলের পবিত্ৰ দেহ মিশে আছে। জমহুরে উলামা এ ব্যাপারে দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন যার আলোচনা এখানে করতে গেলে অনেক দীর্ঘ হবে। আমরা “L১১। ৩-০ এL.L.II–L-২ গ্রন্থে ইনশাআল্লাহ্ এ প্রসঙ্গ আলোচনা করবো। তবে তাদের প্রসিদ্ধ দলীল, যা ইমাম আহমদ আবুল। ইয়ামান সূত্রে আবদুল্লাহ ইবন আদী ইবন হামরার বরাতে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে মক্কার বাজারে ‘হাযুরা’ নামক স্থানে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন :

و الله ان لک لخیر ارض الله واحب ارض الله الی و لولا انی اخر جت منلد ما

“আল্লাহর শপথ, আল্লাহর দুনিয়ায় তুমি আমার নিকট এবং আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম এবং সবচেয়ে প্রিয় ভূমি। তোমার কোল থেকে আমাকে বহিষ্কার করা না হলে আমি কখনো তা থেকে বের হতাম না”। অনুরূপভাবে ইমাম আহমদ ইয়াযুয। ইবন ইবরাহীম সূত্রে যুহরী থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে তিরমিয়ী, নাসাঈ ও ইবন মাজােহ লােয়ছ সূত্রে যুহরী থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন এবং তিরমিয়ী হাদীছটিকে হাসান-সহীহ বলেছেন। তিরমিয়ী ইউনুস সূত্রে যুহরী থেকেও হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মদ ইবন আমার আবু সালামা সূত্রে আবু হুরায়রা (রা) থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেন। আমার মতে যুহরী বর্ণিত হাদীছটি বিশুদ্ধতর।

ইমাম আহমদ আবদুর রাযযাক সূত্রে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ‘হায়ুরা’ নামক স্থানে দাঁড়িয়ে বলেন :

“আমি জানি যে, তুমি আল্লাহর শ্ৰেষ্ঠ ভূমি এবং আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ভূমি। তোমার অধিবাসীরা আমাকে তোমা থেকে বহিষ্কার না করলে আমি বের হতাম না।” অনুরূপভাবে ইমাম নাসাঈ মামার সূত্রেও হাদীছটি বর্ণনা করেন। হাফিয বায়হাকী (র) বলেন, এটা মামারের ভ্ৰম। কোন কোন মুহাদিছ মুহাম্মদ ইবন আমার সূত্রে আবু হুরায়রা (রা) থেকেও হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। এটিও ভ্ৰম। জামাআত তথা বিপুল সংখ্যক লোকের বর্ণনাই বিশুদ্ধ। ইমাম আহমদ ইবরাহীম ইবন খালিদ সূত্রে আবু সালামা থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করেন।

তাবারানী আহমদ ইবন খালিদ সূত্রে আদী ইবন হামরা থেকেও হাদীছটি বর্ণনা করেন। এগুলো হলো হাদীছটির সূত্র বা সনদ। আর এ সবের মধ্যে যেটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ, সে সম্পর্কে ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন।

সকল অধ্যায়

১. ০১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ওহী নাযিলের সূচনা এবং প্রথম ওহী
২. ০২. ওহী প্ৰাপ্তিকালে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বয়স এবং ওহী নাযিলের তারিখ
৩. ০৩. কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে
৪. ০৪. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ওহী আসতো কেমন করে?
৫. ০৫. সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী সাহাবায়ে কিরাম
৬. ০৬. যিমাদ-এর ইসলাম গ্ৰহণ
৭. ০৭. প্ৰকাশ্যে প্রচারের নির্দেশ
৮. ০৮. ইরাশী-এর বর্ণনা
৯. ০৯. দুর্বল ও অসহায় মুসলমানদের প্রতি বিধর্মীদের সীমাহীন নির্যাতনের বিবরণ
১০. ১০. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জব্দ করার উদ্দেশ্যে মুশরিকরা যে সব নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শনের দাবী জানিয়েছিল
১১. ১১. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিরুদ্ধে মুশরিকদের তর্ক-বিতর্ক
১২. ১২. সাহাবায়ে কিরাম (রা)-এর আবিসিনিয়ায় হিজরত
১৩. ১৩. কুরায়শদের বয়কট
১৪. ১৪. আবিসিনিয়ায় হিজরতের জন্যে হযরত আবু বকর (রা)-এর সিদ্ধান্ত
১৫. ১৫. চুক্তিনামা বিনষ্টকরণ
১৬. ১৬. আ’শা ইবন কায়সের ঘটনা
১৭. ১৭. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সঙ্গে রুকানার কুস্তি এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আহবানে বৃক্ষের আগমন
১৮. ১৮. মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদাস পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর রাত্রিভ্রমণ
১৯. ১৯. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যামানায় চন্দ্ৰ বিদীর্ণ হওয়া
২০. ২০. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চাচা আবু তালিবের ইনতিকাল
২১. ২১. হযরত খাদীজা (রা) বিনত খুওয়াইলিদ-এর ওফাত
২২. ২২. হযরত খাদীজা (রা)-এর মৃত্যু-উত্তর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিবাহ
২৩. ২৩. দীনের দাওয়াত দেয়ার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর তাইফ গমন
২৪. ২৪. জিনদের রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ
২৫. ২৫. দীনের দাওয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)–এর আরব গোত্ৰসমূহ গমন
২৬. ২৬. আকাবার দ্বিতীয় শপথ
২৭. ২৭. মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত
২৮. ২৮. নবী (সা)-এর মদীনায় প্রবেশ ও তাঁর অবস্থান-স্থল
২৯. ২৯. মদীনা মুনাওওয়ারায় প্রথম জুমুআর নামায
৩০. ৩০. ইবন ইসহাকের আরো একটা বৰ্ণনা
৩১. ৩১. আনসারদের শ্রেষ্ঠত্ব
৩২. ৩২. মক্কা-মদীনার ফযীলত
৩৩. ৩৩. হিজরী প্ৰথম সনের ঘটনাবলী
৩৪. ৩৪. কুবায় অবস্থানের বিবরণ
৩৫. ৩৫. আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রা)-এর ইসলাম গ্ৰহণ
৩৬. ৩৬. প্রথম জুমুআর নামায
৩৭. ৩৭. মসজিদে নববী নির্মাণ এবং আবু আইউবের গৃহে অবস্থানকাল
৩৮. ৩৮. মুহাজির-আনসারগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন এবং ইয়াহুদীদের সাথে চুক্তি
৩৯. ৩৯. মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্ৰ ইয়াহুদীরাও এ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত
৪০. ৪০. মুহাজির এবং আনসারদের মধ্যে নবী (সা)-এর ভ্রাতৃত্ব স্থাপন
৪১. ৪১. আবু উমামা আসআদ ইবন যুরারার ইনতিকাল
৪২. ৪২. হিজরী সনের শাওয়াল মাসে আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র (রা)-এর জন্ম প্রসঙ্গে
৪৩. ৪৩. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হযরত আইশা (রা)-কে ঘরে তোলা প্রসঙ্গে
৪৪. ৪৪. আযান ও আযানের বিধিবদ্ধতা প্রসঙ্গে
৪৫. ৪৫. হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা)-এর অভিযান
৪৬. ৪৬. উবায়দা ইবন হারিছ ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা)-এর অভিযান
৪৭. ৪৭. সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা)-এর অভিযান
৪৮. ৪৮. দ্বিতীয় সনে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার আলোচনা
৪৯. ৪৯. কিতাবুল মাগাযী
৫০. ৫০. কোন কোন ইয়াহুদী আলিমের মুনাফিকসুলভ ইসলামগ্ৰহণ প্রসঙ্গে
৫১. ৫১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রথম যুদ্ধাভিযান
৫২. ৫২. উবায়দা ইবন হারিছের অভিযান
৫৩. ৫৩. সারিয়্যা হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব প্রসঙ্গে
৫৪. ৫৪. বুওয়াতের যুদ্ধ
৫৫. ৫৫. আশীরার যুদ্ধ
৫৬. ৫৬. প্রথম বদর যুদ্ধ
৫৭. ৫৭. আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ-এর সারিয়া
৫৮. ৫৮. হিজরী দ্বিতীয় সনে বদর যুদ্ধের পূর্বে কিবলা পরিবর্তন প্রসঙ্গে
৫৯. ৫৯. দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধের পূর্বে রমাযান মাসের রোযা ফরয হওয়া প্রসঙ্গে
৬০. ৬০. ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ
৬১. ৬১. আবুল বুখতারী ইবন হিশামের হত্যার ঘটনা
৬২. ৬২. উমাইয়া ইবন খালফের হত্যার ঘটনা
৬৩. ৬৩. অভিশপ্ত আবু জাহলের হত্যার ঘটনা
৬৪. ৬৪. কাতাদার চক্ষু ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা
৬৫. ৬৫. অনুরূপ আরেকটি ঘটনা
৬৬. ৬৬. বদর কুয়ায় কাফির সর্দারদের লাশ নিক্ষেপ
৬৭. ৬৭. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বদর থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন
৬৮. ৬৮. বদরের ঘটনায় নাজাশীর আনন্দ প্ৰকাশ
৬৯. ৬৯. বদরের বিপর্যয়ের সংবাদ মক্কায় পৌঁছল
৭০. ৭০. কুরায়শ যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ আদায়
৭১. ৭১. বদরী সাহাবীদের নাম
৭২. ৭২. কুনিয়াত বিশিষ্ট বদরী সাহাবীগণের নাম
৭৩. ৭৩. বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা
৭৪. ৭৪. যারা বদর যুদ্ধে না গিয়েও গনীমত পেয়েছিলেন
৭৫. ৭৫. বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন
৭৬. ৭৬. কুরায়শদের সৈন্য, নিহত, বন্দী সংখ্যা ও মুক্তিপণ
৭৭. ৭৭. বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের মর্যাদা
৭৮. ৭৮. মক্কা থেকে হযরত যয়নবের মদীনায় হিজরত
৭৯. ৭৯. বদর যুদ্ধ সম্পর্কে রচিত বিভিন্ন কবিতা
৮০. ৮০. বনু সুলায়মের যুদ্ধ
৮১. ৮১. সাবীক যুদ্ধ বা ছাতুর যুদ্ধ
৮২. ৮২. হযরত আলী ও ফাতিমার বিবাহ
৮৩. ৮৩. হিজরী দ্বিতীয় সালে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন