৭৬. কুরায়শদের সৈন্য, নিহত, বন্দী সংখ্যা ও মুক্তিপণ

কুরায়শদের সৈন্য, নিহত, বন্দী সংখ্যা ও মুক্তিপণ

কুরায়শ বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা ছিল সংখ্যায় নয়শী’ পঞ্চাশ জন। উরওয়া ও কাতাদা সুনির্দিষ্টভাবে এই সংখ্যা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য ওয়াকিদী বলেছেন যে, তাদের সংখ্যা ছিল নয়শ’ ত্ৰিশ জন। তবে এরূপ সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ প্রমাণ সাপেক্ষ। পূর্বে এক হাদীছের উদধূতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, কুরায়শদের সংখ্যা ছিল এক হাযারের বেশী। সম্ভবত সৈন্যদের সাথে আগত বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদেরকেও এই সংখ্যার মধ্যে ধরা হয়েছে। সহীহ বুখারী গ্রন্থে হযরত বারা ইবন আযিবা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীছ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বদর যুদ্ধে কুরায়শদের সত্তর জন নিহত ও সত্তর জন বন্দী হয়। এটাই অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মত। কাআব ইবন মালিক তার কাসীদায় বলেন, : (কবিতা) এরপর উট বাধার দুৰ্গন্ধময় স্থানে পড়ে থাকল। তাদের সত্তর জন লোক, যাদের মধ্যে উতবা ও আসওয়াদ রয়েছে।

ওয়াকিদী বলেন, এই সংখ্যার উপর ঐতিহাসিকদের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ওয়াকিদীর এই দাবী বিতর্কাতীত নয়। কেননা, মূসা ইবন উকবা ও উরওয়া এই সংখ্যা স্বীকার করেন না। তারা বলেছেন, ভিন্ন সংখ্যা। এরা উভয়েই ইতিহাসের ইমাম। সুতরাং তাদের মতামত ব্যতীত ঐকমত্যের দাবী সঠিক নয়। যদিও সহীহ হাদীছের মুকাবিলায় তাদের মতামত দুর্বল। ইবন ইসহাক ও অন্যরা বদর যুদ্ধে কুরায়শদের নিহত ও বন্দীদের নাম ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করেছেন। হাফিয যিয়া’ তাঁর ‘আহকাম’ গ্রন্থে চমৎকারভাবে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করেছেন। বদর যুদ্ধের শুরুতেই বলা হয়েছে যে, কুরায়শদের মধ্যে সর্বপ্রথম নিহত হয় আসওয়াদ ইবন আবদুল আসাদ মািখযুমী এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রথম পলায়ন করে খালিদ ইবন আলাম খুযাঈ বা উকায়লী। সে ছিল বনু মািখযুমের মিত্র। কিন্তু পালায়ন করে তার লাভ হয়নি। কেননা, অচিরেই সে ধরা পড়ে ও বন্দী হয়। সে তার কবিতায় বলেছে :

(কবিতা) আমরা পশ্চাৎ দিকে যখম হয়ে রক্ত ঝরাইনি; বরং রক্ত ঝরেছে আমাদের দেহের সম্মুখ দিক হতে। m

কিন্তু তার এ দাবী মিথ্যা। কুরায়শদের মধ্যে সর্বপ্রথম বন্দী হয়। উকবা ইবন আবী মুআয়ত ও নযর ইবন হারিছ। এ দু’জনকেই বন্দী অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সম্মুখে হত্যা করা হয়। তবে কাকে প্রথমে হত্যা করা হয়েছিল, সে বিষয়ে দু’ধরনের বক্তব্য আছে। রাসূলুল্লাহ (সা) কয়েকজন বন্দীকে বিনা মুক্তিপণে ছেড়ে দেন। তাঁরা হচ্ছেন : ১. আবুল ‘আস ইবন রবী” উমাবী। ২. মুত্তালিব ইবন হানতাব ইবন হারিছ মািখযুমী। ৩. সােয়কী ইবন আবু রিফাআ। :. কবি আবু ইযযা। ৫. ওয়াহাব ইবন উমায়ার উমায়ার ইবন ওয়াহাব আল-জুমাহী।

এ কয়জন ব্যতীত অবশিষ্ট সকল বন্দী থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছিল। এমনকি রাসূলুল্লাহর চাচা আব্বাসের নিকট থেকে সবচেয়ে বেশী মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছিল। অন্য কোন বন্দীর নিকট থেকে এতো অধিক মুক্তিপণ আদায় করা হয়নি। এরূপ করা হয় যাতে রাসূলুল্লাহর চাচা বলে নমনীয়তা অবলম্বন করা হয়েছে। এরূপ সন্দেহের কোন অবকাশ না থাকে। অথচ যে আনসাররা তাকে বন্দী করেছিলেন, তারাই রাসূলুল্লাহকে তার মুক্তিপণ না

নিয়ে ছেড়ে দেয়ার জন্যে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন, তার ধার্যকৃত মুক্তিপণ হতে এক দিরহামও কম নিও না। বদর যুদ্ধের বন্দীদের মুক্তিপণের পরিমাণ সবার জন্যে এক রকম ছিল না, বরং তারতম্য ছিল। সর্বনিম্ন পরিমাণ ছিল চারশ’ দিরহাম। কারও থেকে নেয়া হয় চল্লিশ উকিয়া স্বর্ণ। মূসা ইবন উকবা বলেন, আব্বাসের নিকট থেকে মুক্তিপণ নেয়া হয় একশ’ উকিয়া স্বর্ণ। কতিপয় বন্দী মুক্তিপণ আদায়ে ব্যর্থ হলে তাদেরকে মুক্তিপণের পরিমাণ অনুযায়ী কাজে লাগান হয়। এ সম্পর্কে ইমাম আহমদ (র) আলী ইবন আসিম সূত্রে. ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে, বদর যুদ্ধে আটককৃত কিছু সংখ্যক বন্দীর দেয়ার মত মুক্তিপণ ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সা) তাদেরকে মুক্তিপণের বিনিময়ে আনসার শিশুদের লেখা শিক্ষা দেয়ার কাজে নিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, একদিন এক শিশু কাঁদতে কাঁদতে তার মায়ের কাছে আসে। মা তার কাদার কারণ জিজ্ঞেস করলে শিশুটি বলল, আমার শিক্ষক আমাকে মেরেছে। তখন মা বলল, সে দুরাচার বদরের খুনের প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে। আর কখনও তার কাছে শিখতে যেও না। এ হাদীছটি শুধু ইমাম আহমদ বর্ণনা করেছেন, তবে এটি সুনানের শর্ত অনুযায়ী বৰ্ণিত। পূর্বে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সকল অধ্যায়

১. ০১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ওহী নাযিলের সূচনা এবং প্রথম ওহী
২. ০২. ওহী প্ৰাপ্তিকালে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বয়স এবং ওহী নাযিলের তারিখ
৩. ০৩. কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে
৪. ০৪. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ওহী আসতো কেমন করে?
৫. ০৫. সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী সাহাবায়ে কিরাম
৬. ০৬. যিমাদ-এর ইসলাম গ্ৰহণ
৭. ০৭. প্ৰকাশ্যে প্রচারের নির্দেশ
৮. ০৮. ইরাশী-এর বর্ণনা
৯. ০৯. দুর্বল ও অসহায় মুসলমানদের প্রতি বিধর্মীদের সীমাহীন নির্যাতনের বিবরণ
১০. ১০. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জব্দ করার উদ্দেশ্যে মুশরিকরা যে সব নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শনের দাবী জানিয়েছিল
১১. ১১. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিরুদ্ধে মুশরিকদের তর্ক-বিতর্ক
১২. ১২. সাহাবায়ে কিরাম (রা)-এর আবিসিনিয়ায় হিজরত
১৩. ১৩. কুরায়শদের বয়কট
১৪. ১৪. আবিসিনিয়ায় হিজরতের জন্যে হযরত আবু বকর (রা)-এর সিদ্ধান্ত
১৫. ১৫. চুক্তিনামা বিনষ্টকরণ
১৬. ১৬. আ’শা ইবন কায়সের ঘটনা
১৭. ১৭. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সঙ্গে রুকানার কুস্তি এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আহবানে বৃক্ষের আগমন
১৮. ১৮. মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদাস পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর রাত্রিভ্রমণ
১৯. ১৯. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যামানায় চন্দ্ৰ বিদীর্ণ হওয়া
২০. ২০. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চাচা আবু তালিবের ইনতিকাল
২১. ২১. হযরত খাদীজা (রা) বিনত খুওয়াইলিদ-এর ওফাত
২২. ২২. হযরত খাদীজা (রা)-এর মৃত্যু-উত্তর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিবাহ
২৩. ২৩. দীনের দাওয়াত দেয়ার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর তাইফ গমন
২৪. ২৪. জিনদের রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ
২৫. ২৫. দীনের দাওয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)–এর আরব গোত্ৰসমূহ গমন
২৬. ২৬. আকাবার দ্বিতীয় শপথ
২৭. ২৭. মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত
২৮. ২৮. নবী (সা)-এর মদীনায় প্রবেশ ও তাঁর অবস্থান-স্থল
২৯. ২৯. মদীনা মুনাওওয়ারায় প্রথম জুমুআর নামায
৩০. ৩০. ইবন ইসহাকের আরো একটা বৰ্ণনা
৩১. ৩১. আনসারদের শ্রেষ্ঠত্ব
৩২. ৩২. মক্কা-মদীনার ফযীলত
৩৩. ৩৩. হিজরী প্ৰথম সনের ঘটনাবলী
৩৪. ৩৪. কুবায় অবস্থানের বিবরণ
৩৫. ৩৫. আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রা)-এর ইসলাম গ্ৰহণ
৩৬. ৩৬. প্রথম জুমুআর নামায
৩৭. ৩৭. মসজিদে নববী নির্মাণ এবং আবু আইউবের গৃহে অবস্থানকাল
৩৮. ৩৮. মুহাজির-আনসারগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন এবং ইয়াহুদীদের সাথে চুক্তি
৩৯. ৩৯. মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্ৰ ইয়াহুদীরাও এ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত
৪০. ৪০. মুহাজির এবং আনসারদের মধ্যে নবী (সা)-এর ভ্রাতৃত্ব স্থাপন
৪১. ৪১. আবু উমামা আসআদ ইবন যুরারার ইনতিকাল
৪২. ৪২. হিজরী সনের শাওয়াল মাসে আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র (রা)-এর জন্ম প্রসঙ্গে
৪৩. ৪৩. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হযরত আইশা (রা)-কে ঘরে তোলা প্রসঙ্গে
৪৪. ৪৪. আযান ও আযানের বিধিবদ্ধতা প্রসঙ্গে
৪৫. ৪৫. হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা)-এর অভিযান
৪৬. ৪৬. উবায়দা ইবন হারিছ ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা)-এর অভিযান
৪৭. ৪৭. সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা)-এর অভিযান
৪৮. ৪৮. দ্বিতীয় সনে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার আলোচনা
৪৯. ৪৯. কিতাবুল মাগাযী
৫০. ৫০. কোন কোন ইয়াহুদী আলিমের মুনাফিকসুলভ ইসলামগ্ৰহণ প্রসঙ্গে
৫১. ৫১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রথম যুদ্ধাভিযান
৫২. ৫২. উবায়দা ইবন হারিছের অভিযান
৫৩. ৫৩. সারিয়্যা হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব প্রসঙ্গে
৫৪. ৫৪. বুওয়াতের যুদ্ধ
৫৫. ৫৫. আশীরার যুদ্ধ
৫৬. ৫৬. প্রথম বদর যুদ্ধ
৫৭. ৫৭. আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ-এর সারিয়া
৫৮. ৫৮. হিজরী দ্বিতীয় সনে বদর যুদ্ধের পূর্বে কিবলা পরিবর্তন প্রসঙ্গে
৫৯. ৫৯. দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধের পূর্বে রমাযান মাসের রোযা ফরয হওয়া প্রসঙ্গে
৬০. ৬০. ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ
৬১. ৬১. আবুল বুখতারী ইবন হিশামের হত্যার ঘটনা
৬২. ৬২. উমাইয়া ইবন খালফের হত্যার ঘটনা
৬৩. ৬৩. অভিশপ্ত আবু জাহলের হত্যার ঘটনা
৬৪. ৬৪. কাতাদার চক্ষু ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা
৬৫. ৬৫. অনুরূপ আরেকটি ঘটনা
৬৬. ৬৬. বদর কুয়ায় কাফির সর্দারদের লাশ নিক্ষেপ
৬৭. ৬৭. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বদর থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন
৬৮. ৬৮. বদরের ঘটনায় নাজাশীর আনন্দ প্ৰকাশ
৬৯. ৬৯. বদরের বিপর্যয়ের সংবাদ মক্কায় পৌঁছল
৭০. ৭০. কুরায়শ যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ আদায়
৭১. ৭১. বদরী সাহাবীদের নাম
৭২. ৭২. কুনিয়াত বিশিষ্ট বদরী সাহাবীগণের নাম
৭৩. ৭৩. বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা
৭৪. ৭৪. যারা বদর যুদ্ধে না গিয়েও গনীমত পেয়েছিলেন
৭৫. ৭৫. বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন
৭৬. ৭৬. কুরায়শদের সৈন্য, নিহত, বন্দী সংখ্যা ও মুক্তিপণ
৭৭. ৭৭. বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের মর্যাদা
৭৮. ৭৮. মক্কা থেকে হযরত যয়নবের মদীনায় হিজরত
৭৯. ৭৯. বদর যুদ্ধ সম্পর্কে রচিত বিভিন্ন কবিতা
৮০. ৮০. বনু সুলায়মের যুদ্ধ
৮১. ৮১. সাবীক যুদ্ধ বা ছাতুর যুদ্ধ
৮২. ৮২. হযরত আলী ও ফাতিমার বিবাহ
৮৩. ৮৩. হিজরী দ্বিতীয় সালে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন