২৪. জিনদের রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ

জিনদের রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ

মুহাম্মদ ইবন ইসহাক এ ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন, ঘটনাটি ঘটেছিল রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর তাইফ থেকে ফিরে আসার সময়। নাখলা নামক স্থানে রাত্রি যাপনের পর সাহাবীগণসহ তিনি

ফজরের নামায আদায় করছিলেন। সেখানে জিনেরা তার কুরআন তিলাওয়াত শুনেছিল। ইবন ইসহাক বলেন, ওই জিনদের সংখ্যা ছিল সাত। ওদের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তা’আলা। নাযিল করলেন :

واذ صرفنا اليك نفر من الجنস্মরণ কর, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম একদল জিনকে, যারা কুরআন পাঠ শুনছিল (৪৬ : ২৯)।

তাফসীর গ্রন্থে আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তার কিছুটা এই গ্রন্থে ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ্ই ভাল জানেন।

তাইফ থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে রাসূলুল্লাহ (সা) মুতসীম ইবন আব্দীর দায়িত্বে মক্কায় প্রবেশ করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সম্প্রদায়ের লোকজন। এবার আরো কঠোর ভাবে তাঁর প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ, শক্রিতা ও বিদ্রোহ শুরু করে দিল। মহান আল্লাহই সাহায্যকারী এবং তার উপরই

ভরসা।

উমাবী তার মাগাষী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) মক্কায় তাকে আশ্রয় দেয়ার প্ৰস্তাব সহকারে আরীকান্ত নামের এক ব্যক্তিকে পাঠিয়েছিলেন আখন্যাস ইবন শুরায়কের নিকট। সে বলল, আমরা কুরায়শ গোত্রের মিত্ৰ! কুরায়শ বংশে বিপর্যয় ও অশান্তি সৃষ্টিকারী কোন লোককে আমরা আশ্রয় দিতে পারি না। এরপর আশ্রয় কামনা করে তিনি দূত পাঠালেন। সুহায়ল ইবন আমরের নিকট। সে বলল, আমরা আমির ইবন লুওয়াই-এর বংশধর। ইবন লুওয়াই-এর বিরুদ্ধাচরণকারী কাউকে আমরা আশ্রয় দিতে পারব না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) প্রস্তাব পাঠালেন মুতসীম ইবন আব্দীর নিকট। মুতঙ্গম বললেন, তাই হবে তাকে আসতে বল! রাসূলুল্লাহ্ (সা) তার নিকট গেলেন এবং সেখানে রাত্রি যাপন করলেন। সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে সাথে নিয়ে মুতঙ্গম বের হলেন। মুতঙ্গমের সংগী হল তার পুত্ররা। ওরা ছয়জন কি সাতজন। সবাই তরবারি সজ্জিত। তারা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উদ্দেশ্যে মুতঙ্গম বললেন, যান তাওয়াফ করুন। ওরা সকলে তরবারি উঠিয়ে তাওয়াফের এলাকায় পাহারা দিচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে আবু সুফিয়ান এলেন মুতঙ্গমের নিকট। তিনি বললেন, আপনি কি ওর আশ্রয়দাতা, নাকি তার অনুসারী? মুতঙ্গম বললেন, আমি ওর আশ্রয়-দাতা। আবু সুফিয়ান বললেন, তবে আপনার আশ্রয়দানকে অবমাননা করা হবে না। আবু সুফিয়ান কিছুক্ষণ মুতঙ্গমের নিকট বসলেন। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাওয়াফ, শেষ করলেন। তিনি ঘরে ফিরে এলেন। ওরাও ফিরে এল। আবু সৃফিয়ান চলে গেলেন তাঁর সাথীদের নিকট। রাসূলুল্লাহ (সা) কয়েক দিন ওখানে অবস্থান করলেন; এরপর মদীনায় হিজরত করার অনুমতি এল। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর মদীনায় হিজরতের অল্প কিছু দিন পর মুতঙ্গম ইবন আব্দীর ওফাত হয়। তখন কবি হাস্সান ইবন ছাবিত বললেন, আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তার শোকগাথা গাইব।

فلو كان مجد مخالد اليوم واحد – من الناس، نحى مجدة اليوم مطعما

SN)–

মানব জাতির কোন ব্যক্তি যদি এককভাবে চিরদিনের জন্যে মর্যাদাবান হয়, তবে সেই একক ব্যক্তি হল মুতসীম। সে তার মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে।

آجرت رسول اللّه منذنهم فأصبحوا– عبادك ما لیتی محلِ واحر ما (হে মুতঙ্গম! শক্ৰদের হাত থেকে আপনি আল্লাহর রাসূলকে আশ্রয় দিয়েছেন। ফলে শত্রুরা সবাই চিরদিনের জন্যে তথা যতদিন হাজী সাহেবান ইহরাম বাধা ও খোলার জন্যে তালবিয়া পাঠ করবেন, ততদিনের জন্যে আপনার গোলামে পরিণত হল।

فلو ستلت عنه معد بأسرها – وقحطان أو باقى بقية جرهماমা’দ গোত্র, কাহতান গোত্র এবং জুরহুম গোত্রের অবশিষ্ট লোকদেরকে যদি তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়।–

لقالوا هو الموفى بخفرة جارم – وذمته يوما اذا ما تجشما– তবে তারা সকলে বলবে যে, তিনি প্রতিবেশীর নিরাপত্তা বিধানকারী, দায়িত্ব পালনকারী এবং অঙ্গীকার রক্ষাকারী।

وما تطلع الشمس المنيرة فوقهم – على مثلم فيهم أعز وأكرماযাদের উপর সূর্য উদিত হয় তাদের মধ্যে তার মত সম্মানী ও মর্যাদাবান দ্বিতীয়টি নেই।

اباء اذا يأبى والين شيمة – و آنتومعن جارہ اذا الليل أظلما– তিনি যখন কিছু প্ৰত্যাখ্যান করেন তখন প্রত্যাখ্যান করেনই। স্বভাব চরিত্রে তিনি নম্র ও ভদ্র। অন্ধকার রাতে তিনি প্রতিবেশীর নির্বিঘ্ন ঘুমের নিশ্চয়তা দানকারী।

আমি বলি, মুতঙ্গম ইবন আব্দীর এই অবদানের প্রেক্ষিতে বদর যুদ্ধের বন্দীদের সম্পর্কে

রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন যে, এখন যদি মুতঙ্গম ইবন আব্দী জীবিত থাকতেন এবং এই নেতাদের মুক্তির আবেদন করতেন, তবে তাঁর সম্মানে আমি এদের সবাইকে মুক্তি দিয়ে দিতাম।

সকল অধ্যায়

১. ০১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ওহী নাযিলের সূচনা এবং প্রথম ওহী
২. ০২. ওহী প্ৰাপ্তিকালে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বয়স এবং ওহী নাযিলের তারিখ
৩. ০৩. কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে
৪. ০৪. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ওহী আসতো কেমন করে?
৫. ০৫. সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী সাহাবায়ে কিরাম
৬. ০৬. যিমাদ-এর ইসলাম গ্ৰহণ
৭. ০৭. প্ৰকাশ্যে প্রচারের নির্দেশ
৮. ০৮. ইরাশী-এর বর্ণনা
৯. ০৯. দুর্বল ও অসহায় মুসলমানদের প্রতি বিধর্মীদের সীমাহীন নির্যাতনের বিবরণ
১০. ১০. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জব্দ করার উদ্দেশ্যে মুশরিকরা যে সব নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শনের দাবী জানিয়েছিল
১১. ১১. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিরুদ্ধে মুশরিকদের তর্ক-বিতর্ক
১২. ১২. সাহাবায়ে কিরাম (রা)-এর আবিসিনিয়ায় হিজরত
১৩. ১৩. কুরায়শদের বয়কট
১৪. ১৪. আবিসিনিয়ায় হিজরতের জন্যে হযরত আবু বকর (রা)-এর সিদ্ধান্ত
১৫. ১৫. চুক্তিনামা বিনষ্টকরণ
১৬. ১৬. আ’শা ইবন কায়সের ঘটনা
১৭. ১৭. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সঙ্গে রুকানার কুস্তি এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আহবানে বৃক্ষের আগমন
১৮. ১৮. মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদাস পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর রাত্রিভ্রমণ
১৯. ১৯. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যামানায় চন্দ্ৰ বিদীর্ণ হওয়া
২০. ২০. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চাচা আবু তালিবের ইনতিকাল
২১. ২১. হযরত খাদীজা (রা) বিনত খুওয়াইলিদ-এর ওফাত
২২. ২২. হযরত খাদীজা (রা)-এর মৃত্যু-উত্তর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিবাহ
২৩. ২৩. দীনের দাওয়াত দেয়ার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর তাইফ গমন
২৪. ২৪. জিনদের রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ
২৫. ২৫. দীনের দাওয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)–এর আরব গোত্ৰসমূহ গমন
২৬. ২৬. আকাবার দ্বিতীয় শপথ
২৭. ২৭. মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত
২৮. ২৮. নবী (সা)-এর মদীনায় প্রবেশ ও তাঁর অবস্থান-স্থল
২৯. ২৯. মদীনা মুনাওওয়ারায় প্রথম জুমুআর নামায
৩০. ৩০. ইবন ইসহাকের আরো একটা বৰ্ণনা
৩১. ৩১. আনসারদের শ্রেষ্ঠত্ব
৩২. ৩২. মক্কা-মদীনার ফযীলত
৩৩. ৩৩. হিজরী প্ৰথম সনের ঘটনাবলী
৩৪. ৩৪. কুবায় অবস্থানের বিবরণ
৩৫. ৩৫. আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রা)-এর ইসলাম গ্ৰহণ
৩৬. ৩৬. প্রথম জুমুআর নামায
৩৭. ৩৭. মসজিদে নববী নির্মাণ এবং আবু আইউবের গৃহে অবস্থানকাল
৩৮. ৩৮. মুহাজির-আনসারগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন এবং ইয়াহুদীদের সাথে চুক্তি
৩৯. ৩৯. মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্ৰ ইয়াহুদীরাও এ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত
৪০. ৪০. মুহাজির এবং আনসারদের মধ্যে নবী (সা)-এর ভ্রাতৃত্ব স্থাপন
৪১. ৪১. আবু উমামা আসআদ ইবন যুরারার ইনতিকাল
৪২. ৪২. হিজরী সনের শাওয়াল মাসে আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র (রা)-এর জন্ম প্রসঙ্গে
৪৩. ৪৩. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হযরত আইশা (রা)-কে ঘরে তোলা প্রসঙ্গে
৪৪. ৪৪. আযান ও আযানের বিধিবদ্ধতা প্রসঙ্গে
৪৫. ৪৫. হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা)-এর অভিযান
৪৬. ৪৬. উবায়দা ইবন হারিছ ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা)-এর অভিযান
৪৭. ৪৭. সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা)-এর অভিযান
৪৮. ৪৮. দ্বিতীয় সনে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার আলোচনা
৪৯. ৪৯. কিতাবুল মাগাযী
৫০. ৫০. কোন কোন ইয়াহুদী আলিমের মুনাফিকসুলভ ইসলামগ্ৰহণ প্রসঙ্গে
৫১. ৫১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রথম যুদ্ধাভিযান
৫২. ৫২. উবায়দা ইবন হারিছের অভিযান
৫৩. ৫৩. সারিয়্যা হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব প্রসঙ্গে
৫৪. ৫৪. বুওয়াতের যুদ্ধ
৫৫. ৫৫. আশীরার যুদ্ধ
৫৬. ৫৬. প্রথম বদর যুদ্ধ
৫৭. ৫৭. আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ-এর সারিয়া
৫৮. ৫৮. হিজরী দ্বিতীয় সনে বদর যুদ্ধের পূর্বে কিবলা পরিবর্তন প্রসঙ্গে
৫৯. ৫৯. দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধের পূর্বে রমাযান মাসের রোযা ফরয হওয়া প্রসঙ্গে
৬০. ৬০. ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ
৬১. ৬১. আবুল বুখতারী ইবন হিশামের হত্যার ঘটনা
৬২. ৬২. উমাইয়া ইবন খালফের হত্যার ঘটনা
৬৩. ৬৩. অভিশপ্ত আবু জাহলের হত্যার ঘটনা
৬৪. ৬৪. কাতাদার চক্ষু ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা
৬৫. ৬৫. অনুরূপ আরেকটি ঘটনা
৬৬. ৬৬. বদর কুয়ায় কাফির সর্দারদের লাশ নিক্ষেপ
৬৭. ৬৭. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বদর থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন
৬৮. ৬৮. বদরের ঘটনায় নাজাশীর আনন্দ প্ৰকাশ
৬৯. ৬৯. বদরের বিপর্যয়ের সংবাদ মক্কায় পৌঁছল
৭০. ৭০. কুরায়শ যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ আদায়
৭১. ৭১. বদরী সাহাবীদের নাম
৭২. ৭২. কুনিয়াত বিশিষ্ট বদরী সাহাবীগণের নাম
৭৩. ৭৩. বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা
৭৪. ৭৪. যারা বদর যুদ্ধে না গিয়েও গনীমত পেয়েছিলেন
৭৫. ৭৫. বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন
৭৬. ৭৬. কুরায়শদের সৈন্য, নিহত, বন্দী সংখ্যা ও মুক্তিপণ
৭৭. ৭৭. বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের মর্যাদা
৭৮. ৭৮. মক্কা থেকে হযরত যয়নবের মদীনায় হিজরত
৭৯. ৭৯. বদর যুদ্ধ সম্পর্কে রচিত বিভিন্ন কবিতা
৮০. ৮০. বনু সুলায়মের যুদ্ধ
৮১. ৮১. সাবীক যুদ্ধ বা ছাতুর যুদ্ধ
৮২. ৮২. হযরত আলী ও ফাতিমার বিবাহ
৮৩. ৮৩. হিজরী দ্বিতীয় সালে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন